হজ্জের ভুলভ্রান্তি ও বিদআত দ্বিতীয় কিস্তি : তালবিয়া ও তাওয়াফ

হজ্জের ভুলভ্রান্তি ও বিদআত দ্বিতীয় কিস্তি : তালবিয়া ও তাওয়াফ

সংকলনেঃ মোহাম্মাদ ইস্রাফিল হোসাইন।

১। ভুল পদ্ধতিতে ইযতিবা করাঃ

ইযতিবা অর্থ চাদরের দু’প্রান্ত বাম কাঁধের ওপর রেখে দিয়ে ডান কাঁধ উন্মুক্ত রাখা। ইযতিবা করতে হয় তাওয়াফ করার সময়। সুনানে তিরমিজিতে হাসান সদনে একটি হাদিসে এসেছেঃ

ইয়ালা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, একটি চাদরের মধ্যভাগ ডান বগলের নীচে দিয়ে এবং তার দুই প্রান্ত বাম কাঁধের উপর দিয়ে জড়ানো (ইযতিবা) অবস্থায় (বাহু খোলা রেখে) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বাইতুল্লাহ্ তাওয়াফ করেছেন। (সুনানে তিরমিজি ৮৫৯, আবু দাউদ ১৮৮৩ ইফাঃ)

কেউ কেউ ইহরাম বাধার নিয়ত করার পর থেকে ইযতিবা করে থাকেন। অনেক হজ্জযাত্রী ইহরামের শুরু থেকে হালাল হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত এটি করে থাকেন। আবার কেউ কেউ তাওয়াফ শেষে ইযতিবা অবস্থাতেই দু’রাকা’আত সালাত আদায় করা। অনেক আবার সাফা মারওয়ায় সাঈ করার সময় করে থাকে। এভাবে ইযতিবা করা একটি ভুল পদ্ধতি। ইযতিবা শুধুমাত্র তাওয়াফে কুদুমের মধ্যে করতে হয়, যেমনটি হাদিসে এসেছে। সাঈয়ের মধ্যেও বা তাওয়াফের আগে করা যাবে না।

মন্তব্যঃ হজ্জের ফরজ তাওয়াফে রামল বা ইযতিবা নাই। তাওয়াফের সময় পুরুষের জন্য রামল ইযতিবা করেত হলেও নারীদের রামল ইযতিবা করতে হয় না।

২।  তালবিয়া পাঠ সম্পর্কিত ভুল-ত্রুটিঃ

আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে এভাবে হাজ্জ (হজ্জ) ও উমরা উভয়ের তালবিয়া পাঠ করতে শুনেছিঃ “লাব্বাইকা উমরাতান ও হাজ্জান, লাব্বাইকা উমরাতান ওয়া হাজ্জান” (সহিহ মুসলিম ২৮৯৮ ইফাঃ)

আবূ সাঈদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা উচ্চস্বরে হাজ্জের তালবিয়া পাঠ করতে করতে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে রওনা হলাম। আমরা মক্কায় পৌছলে তিনি আমাদের তা উমরায় পরিণত করার নির্দেশ দিলেন। তালবিয়ার দিন এলে আমরা হাজ্জের (হজ্জ) ইহরাম বেঁধে মিনার দিকে রওনা হলাম। (সহিহ মুসলিম ২৮৯৩ ইফাঃ)

ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুযদালিফায় ফযলকে বাহনে তার পিছনে বসালেন। রাবী বলেন, এরপর ইবনু আব্বাস (রাঃ) আমাকে অবহিত করলেন যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জামরাতুল আকাবায় পাথর নিক্ষেপের পূর্ব পর্যন্ত অনবরত তালবিযা পাঠ করতে থাকেন। (সহিহ মুসলিম ২৯৫৮ ইফাঃ)

৩। তালবিয়ার ভুলসমূহঃ

ইহরাম বাধার সাথে সাথে তালবিয়াহ পাঠ করা সুন্নাহ। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‌এবং তার সাথীগনও ইহরামের প্রাককালে তালবিয়া পাঠ করছেন। সালফে  সালেহীদের আমলও অনুরূপ। কিন্তু অনেক অজ্ঞতার কারনে ইহরাম বাঁধার সাথে সাথে তালবিয়া পড়ে না। অনেক হাজী সাহেব মক্কায় প্রবেশের পূর্বে তালবিয়া পাঠ করতে ভুলে যান। অথচ ইহরাম বাঁধার পরই বেশি বেশি করে তালবিয়া পাঠ করা উচিত। আবার অনেকে মনে করে তালবিয়া মক্কা গিয়ে পড়তে হয়। তাদের এই ধারনা ভুল। আমাদের সকল মুজতাহীদ আলেমগন যারা হজ্জ পালন করেছেন তারাও তালবীয়া পাঠ করেছেন। তারা প্রত্যেকেই ভিন্ন ভিন্নভাবে উচ্চস্বরে তালবিয়া পড়তেন।

 

৪। দলবদ্ধভাবে তালবিয়া পাঠঃ

অনেকে দলবদ্ধভাবে একই স্বরে তালবিয়া পাঠ করে থাকেন। বিশেষ করে ইন্দোনেশীয়ার হাজীগন দলবদ্ধভাবে উচ্চস্বরে তালবিয়া পাঠ করে থাকে। তাদের প্রতি দলে একজন করে লীডার গোছের লোক থাকে যিনি বলার পর সবাই এক থাকে সমস্বরে তারবিয়া বলেন। এরূপ করা ভুল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও সাহাবাগণ এভাবে তালবিয়া পাঠ করেননি। তবে যদি কারও তালবিয়া মুখস্ত না থাকে সে শুধু শিক্ষার জন্য অন্যের সহযোগিতা নিয়ে তালবিয়া পাঠ করতে পারে। তবে সবার উচিত হজ্জ যাত্রার আগেই গুরুত্ব দিয়ে তালবিয়া মুখস্থ করতে হবে ও বিশুদ্ধভাবে পাঠ করা।

 

৫। হারামে প্রবেশের সময় ভুল-ত্রুটিঃ

পবিত্র হারামে প্রবেশের সময় অনেক হাজী এমন কিছু দুআ পাঠ করে থাকেন যা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত হয়নি। অথচ সংগত হলো মাসনূন দু’আ পাঠ করা। অনেকে বলে থাকেন যে, কাবা ঘর কাবা শরীফ দর্শনের দোয়াঃ

কা’বা তথা বাইতুল্লাহ দেখামাত্রই দু’হাত উচ্চ করে এই দোয়াটি পড়বে। যা ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু পড়েছিলেন উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মা আংতাস সালাম ওয়া মিনকাস সালাম, ফাহাইয়্যেনা রাব্বানা বিসসালাম।

অর্থ- হে আল্লাহ! আপনি শান্তি, আপনার থেকেই শান্তি আসে। অতএব হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের কে শান্তির সঙ্গে বাঁচিয়ে রাখুন।

পবিত্র কাবা শরীফে প্রবেশের দোয়াঃ

কা’বা তথা বাইতুল্লায় প্রবেশের সময় প্রথমে ডান পা রেখে এই দোয়া পাঠ করবেঃ-

উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মা ছাল্লি আ’লা মুহাম্মাদিও ওয়াসাল্লিম, আল্লাহুম্মাফ তাহলি আবওয়াবা রাহমাতিকা।
অর্থঃ হে আল্লাহ! আপনি মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর উপর অনুগ্রহ ও শান্তি বর্ষণ করুন। হে আল্লাহ! আপনি আমার জন্য রহমতের দরজা খুলে দিন।

পবিত্র কাবা শরীফে প্রবেশের দ্বিতীয় দোয়াঃ

উচ্চারণঃ- আউজুবিল্লাহিল আযিম ওয়া বি ওয়াঝহিল কারিম ওয়া বিসুলতানিহিল ক্বাদিমি মিনাশ শায়ত্বা নিররাঝিম।
অর্থঃ আমি মহিয়ান গরিয়ান আল্লাহ এবং তাঁর চেহারা ও চিরন্তন কর্তৃত্বের মাধ্যমে আশ্রয় প্রাথর্ণা করছি বিতাড়িত শয়তানের ক্ষতি হতে।

এমনিভাবে বিভিন্ন কিতাবে কাবা ঘর দেখা এবং প্রবেশ করার বহু দোয়া জিকির বর্ণিত হয়েছে। অনেক হাজী সাহেব মক্কায় প্রবেশের জন্য নির্দিষ্ট দোয়া পড়েও থাকেন। কিন্তু কারা বা মক্কা প্রবেশের জন্য নির্দিষ্ট দোয়া বর্ণিত হয় নাই। মসজিদে প্রবেশের কিছু দোয়া সহিহ সনদে বর্ণিত হয়েছে। এই দোয়াই কাবা ঘরে প্রবেশের দোয়া বলে চালিয় দেয়। তবে কাবা ঘরও যেহেতু একটি সমজিদ তাই সেখানে প্রবেশের সময় মসজিদ সম্পর্কিত হাদিসের দোয়া বলা কোন অসুবিধা নেই। যেমনঃ

হায়ওয়াত ইবনু শুরায়হ্ হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি উকবা ইবনু মুসলিমের সাথে সাক্ষাত করে তাঁকে বলি, আমি জানতে পেরেছি যে, আপনার নিকট আবদুল্লাহ্ ইবনু আমর ইবনুল আস (রাঃ) এর মাধ্যমে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হতে হাদীছ বর্ণনা করা হয়েছে যে, তিনি (নাবী) যখন মসজিদে প্রবেশ করতেন তখন বলতেনঃ

أَعُوذُ بِاللَّهِ الْعَظِيمِ وَبِوَجْهِهِ الْكَرِيمِ وَسُلْطَانِهِ الْقَدِيمِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيمِ

“আমি মহান আল্লাহর নিকট তাঁর করুণাসিক্ত জাত ও চির পরাক্রমাশালী শক্তির মাধ্যমে-অনিষ্টকারী শয়তান হতে আত্মরক্ষার জন্য সাহায্য প্রার্থনা করছি।”

উকবা (রাঃ) বলেন, এখানেই কি হাদীছের শেষ? আমি বললাম, হ্যাঁ! তখন উকবা বলেন, যখন কেউ এই দুআ পাঠ করে তখন শয়তান বলে, এই ব্যক্তি আজ সারা দিনের জন্য আমার অনিষ্ট হতে রক্ষা পেল। (সুনানে আবু দাউদ ৪৬৬ ইফাঃ)

মন্তব্যঃ একটি সাধারণ সমজিদে যে সকল আদব কায়দা মান্য করে প্রবেশ করে হয়, মসজিদুল হারামে ঠিক সেই রূপ আদব কায়দা মান্য করে প্রবেশ করতে হবে। অনেক জানে যে, মাসজিদুল হারামের প্রবেশের জন্য নির্দিষ্ট একটি দরজা আছে এবং ঐ দরজা দিয়েই প্রবেশ করেত হবে। কিন্তু বিষয়টি তা নয়, বরং যে কোন দরজা দিয়েই মাসজিদুল হারামে প্রবেশ করা সঙ্গত।

অনেকে মসজিদুল হারামে গিয়ে বসে থাকেন। এই সময় অনেক হাজী সাহেব অপরের সমালোচনা ও দোষ চর্চা করেন। ফ্রি সময়ে, তারা কাবা ঘর তাওয়াব করতে পারেন। সালাত আদায় করেত পারেন। পৃথিবীর এমন কোন মসজিদ বা স্থান নাই যাকে তাওয়াব করা নেকির কাজ। পৃথিবীতে এত বরকতপূর্ণ কোন মসজিদ নাই, যেখানে সালাত আদায় করলে এর কাছাকাছি নেকী পাওয়া যাবে। কাজেই এমন পবিত্র স্থানে গিয়ে ইবাদাত না করে গিবত পরনিন্দা করে নিজের আমল কে ক্ষতিগ্রস্থ করা কতটুকু সমচিন।

৬। হাজরে আওয়াতে কল্যাণ অকল্যাণ মনে করাঃ

উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি হাজরে আসওয়াদের কাছে এসে তা চুম্বন করে বললেন, আমি অবশ্যই জানি যে, তুমি একখানা পাথর মাত্র, তুমি কারো কল্যাণ বা অকল্যাণ করতে পার না। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে তোমায় চুম্বন করতে না দেখলে কখনো আমি তোমাকে চুম্বন করতাম না। (সহিহ বুখারী ১৫০২ ইফাঃ)

মন্তব্যঃ সম্ভব হলে হাজরে আসওয়াদ চুম্বন বা ষ্পর্শ করা সুন্নাহ। সম্ভব না হলে কেবল ইশারা করাই সুন্নত। কিন্তু আমাদের আবেগ এত বেশী যে, অনেকেই মনে করেন, হাজরে আসওয়াদ চুম্বন না করলে হাজ্জ শুদ্ধ হবে না। তাদের ধারনার পুরোটাই ভুল। হজ্জের মৌসমে দেখা যায় হাজরে আসওয়াদ চুম্বর বা ষ্পর্শ করতে গিয়ে অনেকে আঘাত প্রাপ্ত হন। আমরা এই কথা একেবারে ভুলে যাই যে, হাজরে আসওয়াদ চুম্বন বা ষ্পর্শ করা সুন্নাহ, আর কাউকে কষ্ট দেয়া হারাম। বর্তমানে আঘাত দেয়া বা পাওয়া ছাড়া হাজরে আসওয়াদ চুম্বন বা ষ্পর্শ করা কোন ভাবেই সম্ভব নয়। তাই হারাম থেকে বাচতে এই সুন্নাহ আদায় করার জন্য সুযোগের অপেক্ষা করা উচিত।

 

 ৭।    প্রত্যেক তাওয়াফ নির্দিষ্ট দোয়াঃ

মহান আল্লাহ তায়ালান বলেন,

 ثُمَّ لۡيَقۡضُواْ تَفَثَهُمۡ وَلۡيُوفُواْ نُذُورَهُمۡ وَلۡيَطَّوَّفُواْ بِٱلۡبَيۡتِ ٱلۡعَتِيقِ (٢٩)

অর্থ:  তারপর নিজেদের ময়লা দূর করে, নিজেদের মানত পূর্ণ করে এবং প্রাচীন গৃহের তাওয়াফ করে৷  (সুরা হজ্জ্ব ২২:২৯)।

কাবা ঘরের তাওয়াফ একটি ফরজ ইবাদাত। এই ইবাদতে আদায়ের যথাযত পদ্দতি কুরআন সুন্নাহ দ্বারা ষ্পষ্টভাবে বর্ণিত। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও নিজে আমল করে রেখে গেছেন। তাওয়াফের কোথায় কি দোয়া আমল করতে হবে তাও সহিহ হাদিসে বিবৃত হয়েছে। কিন্তু আমাদের দেশের বিভিন্ন বইতে দেখা যায় প্রতি তাওয়াফে আলাদা আলাদ দোয়ার কথা লেখা আছে।

অনেক খুব কষ্ট করে এই আবরী দোয়া মুখস্ত করে হজ্জে গমন করেন। দোয়া কষ্ট করে মুখস্ত করলেও তার অর্থ কিন্তু অজানা থেকে যায়। এই দোয়াগুলো অর্থের দিক থেকে ভাল। কিন্তু আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনও এই ধরনের আমল করেন নাই।

মূলত নতুনভাবে আবিষ্কৃত, বেদাত। তাওয়াফের জন্য নির্দিষ্ট কোনো দোয়া নেই। তবে তাওয়াফের এই পুরো সময়টুকু দোয়া কবুলের সময়। তাই যেকোনো ধরনের দোয়া এই সময় আপনি করতে পারেন। সবচেয়ে উত্তম দোয়া হচ্ছে, যেটি আপনার অন্তরের মধ্যে এসেছে, আপনি আপনার ভাষায় আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কাছে পেশ করলেন। এটা হচ্ছে সবচেয়ে উত্তম দোয়া।

দোয়ার জন্য শর্ত হচ্ছে দুটি। প্রথমটি হচ্ছে, আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কাছে চাইতে হবে। অর্থাৎ চাওয়াটা আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কাছে হতে হবে। দ্বিতীয় হচ্ছে, কী চাইছেন, সেটা আপনাকে বুঝতে হবে। আপনি দোয়া করলেন, কিন্তু আপনি সেটা বুঝলেন না। তাহলে তো আপনি আল্লাহতায়ালার কাছে চাইতে পারেননি। এ জন্য আরবিতে কতগুলো দোয়া লিখে নিয়ে গেলেন, আপনি আল্লাহতায়ালার কাছে বললেন। অথচ আপনি জানলেনই না আপনি কী বললেন। এটা আসলে ভুল কাজ। তবে রাসূল (সা.) যে দোয়াগুলো শিক্ষা দিয়েছেন, সেগুলো যদি কেউ জানেন, সেটাও উত্তম। এতে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু জিনিসটা বুঝতে হবে যে আপনি আল্লাহতায়ালার কাছে কী চাইলেন।

তাই যাঁদের কাছে আরবি ভাষার জ্ঞান নেই অথবা যাঁরা মূলত আরবি বুঝতে পারেন না, উত্তম হচ্ছে, তাঁরা বাংলায় অথবা তাঁদের মাতৃভাষায় দোয়া করবেন। কারণ, তিনি সেটা বুঝিয়ে বলতে পারবেন। আপনি যখন জিনিসটা বুঝবেন, তখন আবেগ তৈরি হবে, সেখানে একটু আবেগ আসবে। এই জন্য সেই আবেগের সঙ্গে অত্যন্ত মিনতির সঙ্গে যদি আল্লাহতায়ালার কাছে সেটা তুলে ধরেন, আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আল্লাহর বান্দার সেই দোয়া কবুল করবেন ইনশাআল্লাহ।  

 

৮। জামাতবদ্ধ হয়ে তাওয়াফ করাঃ

হজ্জের সফরে দেখেছি। ইন্দুনেশীয়ার অনেক মুসলীম ভাই বোনেরা জমামাতবদ্ধ হয়ে তাওয়াফ করেন। তাদের সকলের মাথায় এক রকমের রুমাল বা স্ক্রাপ পড়া। আমার ধারনা  তারা হয়ত একে অপর থেকে হারিয়ে যাওয়ার ভয়ে এ কাজটি করে থাকেন। আসলে তাদের উদ্দেশ্য হল জামাতবদ্ধ হয়ে তাওয়াফ করা। তাদের জামাতের কেউ দল ছুট হয়ে গেলে, মাথার রুমালের কালার দেখে তাড়াতাড়ি মাতাফে তাদের অবস্থান বুঝতে পাবরে এবং আবার জামাতবদ্ধ হয়ে তাওয়াফ করতে পারবে। দলের সাথে একত্র হওয়ার জন্য দল ছুট ব্যাক্তি মাতাফে এলোমোলো চলাচল করে ফলে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়।  অপর পক্ষে জামাতবদ্ধ হয়ে তাওয়াফ করার ফলে মাতাফে ভিড় সৃষ্টি হয়। অন্যদের ওপর অস্বাভাবিক চলাচলে চাপ পড়ে। এতে অন্যদের ভীষণ কষ্ট হয়। অপ্রয়োজনীয় কাজের জন্য এ ধরনের পরিস্থিতি সৃষ্টি করা খারাপ। সার কথা হলোঃ  রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সাহাবায়ে কিরাম এমনটি করেননি। উলামায়ে কিরাম এটিকে বিদআত বলেছেন। বিশুদ্ধ হলো একাকী নিজে নিজে তালবিয়াহ পাঠ করা। ।

৯। মাতাফে সম্মিলিত ও উচ্চস্বরে দোয়া করাঃ

জমামাতবদ্ধ হয়ে তাওয়াফ করার সময় দেখা যায় এরা জামাতবদ্ধ হয়ে মাতাফে সম্মিলিত ও উচ্চস্বরে দোয়া করে থাকে। জামাতের মধ্যে একজন মুখস্থ বা দেখে দেখে উঁচু আওয়াজে দোয়া পড়ে আর তার সঙ্গে পুরো জামাত সমস্বরে দোয়া পড়তে থাকে। এই কাজটি পরিষ্কার বিদআত। এই ধরনের আমল আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামও তার সাহাবি রাঃ) থেকে প্রমানিত নয়। আমাদের পূর্বসুরি কোন মুজতাহীদ আলেম থেকেও প্রমানিত নয়। দোয়ার করার যে সহজ সরল পদ্দতি আছে তার সাথে এর কোন মিল নাই। মাতাফে সম্মিলিত ও উচ্চস্বরে দোয়া করলে নিজে শুধু গদবাধা কথা মুখে উচ্চারণ করে। এতে নিজের চাহিদা মত দোয়া করা সম্ভব হয়ণা এবং উচ্চস্বরের জন্য অন্যদের একাগ্রতা বিঘ্নিত হয়। যার ফলে নিজের দোয়ার সাথে সাথে মাতাফে অবস্থানরত সকল হাজিদের দোয়া নষ্ট করছি। এই বিদআত ত্যাগ করা খুবই জররী। আশার কথা হল, আরবেদের মত আমাদের উপমহাদেশে হাজিগন এই বিদআত থেকে অনেকটিই মুক্ত।

 

১০।বই দেখে দেখে দোয়া পড়াঃ

হজ্জের সফরে দেখেছি অনকেভাই তাওয়াফ করার সময় এক থাকে বই রেখে দিয়ে বইয়ের দিক তাকিয়ে পড়ছেণ আর হাঁটছেন। দোয়ার দিকে, দোয়ার অর্থের দিকে, তাওয়াফের দিকে এমন কি পাশের লোকের দিকেও কোন খেয়ার নেই। এক দিকে শুধুই খেয়ার কিভাবে দোয়ার রিডিং পড়ে শেষ করবে। এতে কোন তাওয়াফের সময় তার কি ভাব হলে তা বলা কষ্টকর হলে ও এ কথা বলা যায় যে, তার মনযোগ পড়ার প্রতি থাকায় মাতাফে অন্যদের কষ্ট হয়। যদি সকলেই নিজে নিজে চলত এবং দেখে দেখে দোয়া না পড়ত, যা মুখস্থ আছে তা-ই পড়ত তাহলে মাতাফে হঠাৎ যে চাপ সৃষ্টি হয় তা হত না। সকলেই একাগ্রতার সঙ্গে আল্লাহ তায়ালার ধ্যানে নিমগ্ন থেকে দোয়া ও তাওয়াফ করতে পারত।

১১। পুরো তাওয়াফে রমল করাঃ

তাওয়াফের সময় মুজাহিদের মতো বীরদর্পে দুই কাঁধ দুলিয়ে দ্রুতপায়ে চলা। হজ্জের সফরে মক্কার মুশরিকরা সাহবিদের লক্ষ করে বলছিল, ইয়াসরিবের (মদিনার) আবহাওয়া মুসলমানদেরকে দুর্বল ও রুগ্ন করে ফেলেছে। মুশরিকদের এই অপবাদ মিথ্যা প্রমাণিত করার জন্য রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এই নির্দেশ দেন। যেমন হাদিসে এসেছেঃ

ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবাগনকে নিয়ে মক্কায় আগমন করলে মুশরিকরা মন্তব্য করল, এমন একদল লোক আসছে যাদেরকে ইয়াসরিব এর (মদিনার) জ্বর দুর্বল করে দিয়েছে (এ কথা শুনে) নাবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবাগনকে তাওয়াফের প্রথম তিন চক্করে ‘রমল’ করতে এবং উভয় রুকনের মধ্যবর্তী স্থানটুকু স্বাভাবিক গতিতে চলতে নির্দেশ দিলেন, সাহাবাদের প্রতি দয়াবশত সব কয়টি চক্করে রমল করতে আদেশ করেন নি। (সহিহ বুখারী ১৫০৭ ইফাঃ)

মন্তব্যঃ অতপর, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের যুগে এবং পরেও এ বিধান অপরিবর্তিত রয়ে গেছে। কিন্তু নফল তাওয়াফ অর্থাৎ হজ ও ওমরার নিয়্যাতে নয়, বাইতুল্লায় নামাজের সময় বা আগে পরে তাওয়াফ করার সময় রমল বা ইযতিবার প্রয়োজন নেই। কিন্তু অবাক করা বিষয় হলো, অনেককে দেখা যায়, তাওয়াফের ৭ চক্করেই রমল করে থাকে। আবার কেউ কেউ নফল তাওয়াফেও রমল করে। মনে করে, রমল সকল তাওয়াফে এবং তাওয়াফের সব চক্করেই করতে হয়। অথচ এটি ভুল। রমল শুধু ওই তাওয়াফেই করতে হয়, যে তাওয়াফের পর সায়ী আছে। আর এই তাওয়াফেরও সব চক্করে নয়, শুধু প্রথম তিন চক্করে।

 

১২। অন্যকে কষ্ট দিয়ে রমল করাঃ

রমল করা সুন্নত। মাতাফে কোনো কোনো সময় অস্বাভাবিক ভিড় হয়। বিশেষ করে হজের আগে দু-এক দিন এবং যিলহজের ১০-১১ তারিখে। তখন মাতাফে চলাই মুশকিল হয়। সামান্য নড়াচড়ার প্রভাব পড়ে অনেক দূর পর্যন্ত। কিন্তু আশ্চর্য হলো, ওই কঠিন ভিড়েও কাউকে কাউকে রমল করতে দেখা যায়। এতে নিজেরও প্রচুর কষ্ট হয়। বিশাল জনসমুদ্রকেও কষ্ট দেয়া হয়। তাদের অবস্থা দেখে মনে হয়, রমলটা তাওয়াফের ফরজ অংশ। এজন্যই বুযুর্গগণ বলেন, ‘যথাযথ হজ করতে হলে সামান্য ইলম যথেষ্ট নয়; বরং প্রচুর ইলম এবং তার সঙ্গে অনেক বেশি আকলের প্রয়োজন।’ রমল ছাড়াও তাওয়াফ আদায় হয়ে যায়। তাই প্রচন্ড ভিড়ে অন্যকে কষ্ট দিয়ে রমল করা যাবে না; বরং তখন স্বাভাবিকভাবে চলবে। চলতে চলতে কখনো সামান্য ফাঁকা পেলে এবং অন্যের কষ্ট না হলে স্বাভাবিক গতিতে রমলের চেষ্টা করবে। (সহিহ মুসলিম ৪১০)।

১৩। মহিলাদের রমলঃ

রমল শুধু পুরুষের জন্য। এ বিধানটি মহিলাদের জন্য নয়। কিন্তু কখনো কখনো মহিলাদেরকেও তা করতে দেখা যায়। এটি ভুল। (মুসান্নাফ ইবনে আবী শায়বা হাদিস ১৩১১০)।

১৪। কাবার বিভিন্ন স্থানে চুম্বন বা ষ্পর্শ করাঃ

উবায়দ ইবনু জুরায়জ (রহঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) কে বললেন, হে আবূ আবদুর রহমান! আমি আপনাকে এমন চারটি কাজ করতে দেখছি- যা আপনার সঙ্গী-সাথীদের কাউকে করতে দেখিনি। তিনি বললেন, হে ইবনু জুরায়জ! সেগুলো কি কি? তিনি বললেন, আমি দেখেছি আপনি রুকনে হাজারে আসওয়াদ ও রুকনে ইয়ামানী ব্যতীত আর কোন রুকন স্পর্শ করেন না। আমি আরও লক্ষ্য করেছি যে, আপনি পশমবিহীন চামড়ার স্যাণ্ডেল পরিধান করেন। আমি আরও দেখেছি যে, আপনি হলুদ বর্ণ ব্যবহার করেন। আমি আরও লক্ষ্য করেছি যে, আপনি মক্কায় অবস্থানকালে (যিলহাজ্জ মাসের) আট তারিখে ইহরাম বাধেন। অথচ লোকেরা নতূন চাঁদ দেখার সাথে সাথে ইহরাম বাধে।

আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) বললেন, রুকন সমূহের ব্যাপারে কথা হচ্ছে এই যে, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে রুকনে হাজারে আসওয়াদ ও রুকনে ইয়ামানী ছাড়া অন্য কোন রুকন স্পর্শ করতে দিতে দেখিনি। আর পশমবিহীন স্যাণ্ডেলের ব্যাপার হচ্ছে এই যে, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে পশমবিহীন চামড়ার স্যান্ডেল পরিধান করতে দেখেছি। তিনি তা পায়ে দিয়ে উযুও করতেন। আমিও তাই এ ধরনের স্যাণ্ডেল পছন্দ করি। হলুদ রঙ এর সম্পর্কে কথা হচ্ছে এই যে, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে এই রং ব্যবহার করতে দেখেছি। অতএব আমিও এই রং পছন্দ করি। ইহরাম সম্পর্কে বলতে হয় যে, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে তখনি তালবিয়া পাঠ করতে শুনেছি যখন তাঁর উট যাত্রা শুরু করেছে। (সহিহ মুসলিম ২৬৮৯ ইফঃ)

ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উটের পিঠে আরোহণ করে বায়তুল্লাহ তাওয়াফ করেন, যখনি তিনি হজরে আসওয়াদের কাছে আসতেন তখনই কোন কিছুর দ্বারা তার দিকে ইশারা করতেন এবং তাকবীর বলতেন। (সহহি বুখারী ১৫১৭ ইফাঃ)

 মন্তব্যঃ আগেই জেনেছি, সম্ভব হলে হাজরে আসওয়াদকে চুম্বন বা স্পর্শ করা সুন্নত। পক্ষান্তরে সম্ভব না হলে কেবল ইশারা করাই সুন্নত। ঠিক তেমনিভাবে সম্ভব হলে কাউকে কষ্ট না দিয়ে ডান হাত দিয়ে রুকনে ইয়ামেনিকে স্পর্শ করা এবং স্পর্শের পর হাতে চুম্বন না করা সুন্নাহ। কিন্তু অনেকে এই সুন্নাহ বাদ দিয়ে হাজরে আসওয়াদ মতই রুকনে ইয়ামেনিকে চুম্বন করে থাকে। এটা ঠিক নয়, বরং সম্ভব হলে কাউকে কষ্ট না দিয়ে ডান হাত দিয়ে রুকনে ইয়ামেনিকে স্পর্শ করা ও এবং স্পর্শের পর হাতে চুম্বন না করা। স্পর্শ করা সম্ভব না তাকে আর হাজরে আসওয়াদের মত হাতের ইশারায় চুম্বন করার কোন বিধান নেই। তাওয়াফের সময় কেউ কেউ কাবার দেয়াল স্পর্শ করেন, অথচ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাজরে আসওয়াদ ও রুকনে ইয়ামেনি ছাড়া আর কিছু স্পর্শ করেননি। তাই তা থেকে বিরত থাকতে হবে।

সারকথাঃ সম্ভব হলে তাওয়াফ শুরুতে আসওয়াদ চুম্বন অথবা ইশারা করব। অপর পক্ষে প্রতি চক্করে রুকনে ইয়ামেনিকে স্পর্শ করার চেষ্টা করব কিন্তু সম্বব না হলে,  চুম্বন বা ইশারা কোনটাই করব না। তাওয়াফের সময় অনেকেই মাকামে ইবরাহীমকে হাত অথবা রুমাল-টুপি দিয়ে স্পর্শ করে থাকে। আবার কেউ কেউ কাবার দেয়াল স্পর্শ করেন দাড়িয়ে থাকে। এগুলি আবেগী মনের ভাবনা মাত্র। এই সব কোন সুন্নাহ সম্মত কাজ নয়। এক জনের দেখা দেখি অন্য জন করছে। জরুরী মনে কের এই কাজগুলি বিদআত হবে এতে কোন প্রকার সন্দেহ নাই। কারন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও তার সাহাবী (রাঃ) কেউ হাজরে আসওয়াদ ও রুকনে ইয়ামেনি ছাড়া আর কিছু স্পর্শ করেননি। তাই তা থেকে বিরত থাকতে হবে।

 

১৫। কাবার দেয়াল ধরে কান্নাকাটি করাঃ

অনেক আবেগী হাজিকে দেখা যায় কাবার দেয়াল ধরে কান্নাকাটি করছে। মহান আল্লাহ ভয়ে কান্নাকাটি করা নিঃসন্দেহ একটি উত্তম আমল। কিন্তু এই ভয়ের কান্না হবে গোপনে ও নিরবে। আর যে কোন কারনে এ কান্না প্রকাশ্যে হলেও দোষের কিছু নয়। কিন্তু আমাদের রাসুল ও তার সাহাবীগন এইভাবে কাবার দেয়ার ধরে কান্নাকাটি করেনি যেমন আমরা করছি। যদি কেউ ইহাকে ইবাদাত বা আল্লাহকে খুসি করার জন্য করে তবে বিদআত হবে। কাজেই এই ধরনের আবেগ থেকে দুরা থাকি।  

১৬। তাওয়াফের সময় হাতিমে প্রবেশ করাঃ

তাওয়াফের সময় কেউ কেউ হাতীমের ভিতর দিয়ে প্রবেশ করে থাকে। এরূপ করলে তাওয়াফ হবে না। কেননা হাতীম পবিত্র কাবার অংশ হিসেবে বিবেচিত। হাতিমের পুর্ব পাশ দিয়ে ভিতরে প্রবেশ করে পশ্চিম পাশ দিয়ে বাহির হলে তো আর কাবা ঘর সম্পূর্ণ তাওয়াফ হবে না। এর হলে তার তাওয়াফ ছুটে যাবে। ফলে তাকে আবার তওয়াফ করতে হবে।

আবূস্‌ সাফর (রহঃ) বলেন, আমি ইবনু আব্বাস (রাঃ) কে এ কথা বলতে শুনেছি, হে লোক সকল! আমি যা বলছি তা মনোযোগ সহকারে শ্রবণ কর এবং তোমরা যা বলতে চাও আমাকে শোনাও এবং এমন যেন না হয় যে তোমরা এখান থেকে চলে গিয়ে বলবে ইবনু ‘আব্বাস এরূপ বলেছেন। (অতঃপর ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বললেন) যে ব্যাক্তি বাইতুল্লাহ শরীফের তাওয়াফ করতে ইচ্ছা করে সে যেন হিজর এর বাহির থেকে তাওয়াফ করে এবং এ স্থানকে হাতীম বলবেনা কারণ, জাহেলীয়াতের যুগে কোন ব্যাক্তি ঐ জায়গাটিতে তার চাবুক, জুতা তীর ধনু ইত্যাদি নিক্ষেপ করে হলফ করত। (সহিহ বুখারী ৩৫৬৯ ইফাঃ)

বিদায়ী তাওয়াফের শেষ কাবাকে সামনে রেখে পিছনে চলাঃ

বিদায়ী তাওয়াফের পর পবিত্র কাবার সম্মানার্থে উল্টো হেঁটে বের হওয়া সংগত নয়। বরং সাভাবিকভাবেই ফিরে আসতে হবে।

 

১৭। তাওয়াফ শেষে কাবার যে কোন স্থানে দুরাকাত সালাত আদয়ঃ

মহান আল্লাহ বলেন,

وَإِذْ جَعَلْنَا الْبَيْتَ مَثَابَةً لِّلنَّاسِ وَأَمْناً وَاتَّخِذُواْ مِن مَّقَامِ إِبْرَاهِيمَ مُصَلًّى অর্থঃ যখন আমি কা’বা গৃহকে মানুষের জন্যে সম্মিলন স্থল ও শান্তির আলয় করলাম, আর তোমরা ইব্রাহীমের দাঁড়ানোর জায়গাকে নামাযের জায়গা বানাও । ( সুরা বাকারা ২:১২৫)

ইবনু ‘উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কায় উপনীত হয়ে সাত চক্করে (বায়তুল্লাহর) তাওয়াফ সম্পন্ন করে মাকামে ইবরাহীমের পিছনে দু’ রাক’আত সালাত আদায় করলেন। তারপর সাফার দিকে বেরিয়ে গেলেন। [ইবনু ‘উমর (রাঃ) বলেন] মহান আল্লাহ বলেছেনঃ “নিশ্চয়ই তোমাদের জন্য রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ। (সহহি বুখারি ১৫২৮ ইফাঃ )

এ থেকে অনেকের ধারণা মাকামে ইব্রাহীমের পিছনে। এই নির্দিষ্ট স্থান ছাড়া মাসজিদের অন্য কোথাও তাওয়াফের দু’রাকা’আত সালাত আদায় করা যাবে না। এ ধারণাও সঠিক নয়। বরং মাকামে ইবরাহীমে সালাত আদায় করবে সম্ভব না হলে হারামের যে কোন স্থানে পড়ে নিবে। আর কারন বসত হারামের বাহিরেও আদায় করা যায়ঃ প্রমান নিম্মের হাদিসঃ

উম্মু সালামা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট অসুস্থতার কথা জানালাম, অন্য সূত্রে মুহাম্মাদ ইবনু হারব (রহঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সহধর্মিণী উম্মু সালামা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কা থেকে প্রস্থান করার ইচ্ছা করলে উম্মু সালামা (রাঃ)-ও মক্কা ত্যাগের ইচ্ছা ব্যক্ত করেন, অথচ তিনি (অসুস্থতার কারনে) তখনও বায়তুল্লাহ তাওয়াফ করতে পারেন নি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন তাঁকে বললেনঃ যখন ফজরের সালাতের ইকামত দেওয়া হবে আর লোকেরা সালাত আদায় করতে থাকবে, তখন তোমর উটে আরোহণ করে তুমি তাওয়াফ আদায় করে নিবে। তিনি তাই করলেন। এরপর (তাওয়াফের) সালাত আদায় করার পূর্বেই মক্কা ছেড়ে বেরিয়ে গেলেন। (সহহি বুখারি ১৫২৭ ইফাঃ )

১৮। বিদায়ী তাওযাফের ভুলঃ

ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, লোকেরা বিভিন্নভাবে প্রত্যাবর্তন করছিল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ “কেউই যেনপ্রত্যাবর্তন না করে যাবত না তার সর্বশেষ কাজ হবে শেষবারের মত বায়তুল্লাহ তাওয়াফ। (সহহি মুসলীম ৩০৮৯ ইফাঃ)

ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন, লোকদেরকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে (প্রত্যাবর্তনকালে) তাদের সর্বশেষ কাজ যেন হয় বায়তুল্লাহ তাওয়াফ। কিন্তু ঋতুমতী মহিলাদেরকে তা থেকে রেহাই দেয়া হয়েছে। (সহহি মুসলীম ৩০৯০ ইফাঃ )

মন্তব্যঃ বিদায়ী তাওয়াফই হল হজ্জ ও উমরার শেষ ওয়াজিব আমল। তাই বিদয়ী তাওয়াফের পর কোন শরীয়ত সম্মত কারণ বা যাত্রার ব্যস্ততা ব্যতীত বিনা প্রয়োজনে দীর্ঘ সময় মক্কায় অবস্থান করা। অনেক কঙ্কর নিক্ষেপের কাজ শেষ করার পূর্বেই বিদায়ী তাওয়াফ সম্পন্ন করে। যা একটি ভুল কাজ। বিদায়ী তাওয়াফের পর। কাবার দিকে তাকিয়ে হাত নেড়ে বিদায় জানানো একটি বিদাআতি আমল। এমনটি কাবাকে সামনে রেখে উল্টো হেঁটে মাসজিদ থেকে বের হওয়া।

সংকলনেঃ মোহাম্মাদ ইস্রাফিল হোসাইন। (বিএ ইন এ্যারাবিক লিটারেচার, ইসলামিক হিস্টরী এন্ড ইসলামিক স্টাডিস)

 

Leave a comment