বিদআত উৎপত্তির কারনসমূহ প্রথম কিস্তি

বিদআত উৎপত্তির কারনসমূহ প্রথম কিস্তি

সংকলনেঃ মোহাম্মাদ ইস্রাফিল হোসাইন

বিদ’আত উৎপত্তির কারণ কি?

আমাদের উপমহাদেশে বিদআত বাদ দিলে মনে হয় আর ধর্ম খুজে পাওয়া যাবেনা। আমরা কেন এত বিদআতে মাঝে হাবুডুবু খাচ্ছি যা বলে বা লিখে শেষ করা যাবে। আমাদের ধর্মের নামে আমল করছি অথচ এটি একটি বিদআন। তাই বিদআত চিনা আমাদের জন্য খুই জরুরী, তারও আগে জানা দরকার কিভাবে আমাদের ধর্মে এই বিদআদ চালু হল বা বিদআতের উত্সই বা কোথায়। যে উত্স থেকে বিদআত আমাদের মাঝে ঢুকেছে তা নির্ণয় করতে পারলে, উৎসের মুখ বন্ধ করে দিতে পাবর। আর বিদআত থেকে সহজে বাচতে পাবর। যে সমস্ত কারণে মুসলিম জাতির ভিতরে বিদআতের উৎপত্তি হয়েছে, সে কারণগুলো সংক্ষিপ্তভাবে নিম্নে আলোচনা করা হলঃ

০১। মহান আল্লাহকে বেশী খুসি করার নিমিত্তেঃ

০২। জান্নাত লাভের আশায় বিদআত আমল করেঃ

০৩। জাহান্নামের ভয়ে মরনপন ইবাদাত করার জন্য বিদআত করাঃ

০৪। দ্বীন সম্পর্কে অজ্ঞতাঃ

০৫। বাপ দাদার অন্ধ অনুসরণঃ

০৫। সুফি দর্শণ গ্রহনের জন্যঃ

০৭। অজ্ঞ লোক কর্তৃক বিদআত মিশ্রিত দ্বীন প্রচারঃ

০৮।  বিদআত মিশ্রিত দ্বীনি কিতাব প্রচারঃ

০৯। বিদআত মিশ্রিত কিচ্ছা কাহিনীর মাধ্যমে ওয়াজ নসিয়ত করাঃ

১০। প্রবৃত্তি পূজা ও আত্মকেন্দ্রিকতা কারনে বিদআতঃ

১১। আধুনিক মিডিয়ার অপপ্রচারঃ

১২। শ্বাসক শ্রেণির দ্বারা শির্কি কাজ করতে বাধ্য করাঃ

১৩। পীরের আস্তানা বা খানকা মাধ্যমে শির্কঃ

১৪। আলেমদের অন্ধ অনুসরণঃ

১৫। কাফির-মুশরিকদের সাদৃশ্য করাঃ

১৬। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সম্পর্কে অতিরঞ্জন বা বাড়াবাড়ির মাধ্যমে বিদআতঃ

১৭। মতবিরোধ পূর্ণ মাসায়েল সুযোগে বিদাআত প্রচন করেঃ

১৮। রাজনৈতিক কারনে বিদআতে প্রসারঃ

১৯। সন্দেহমূলক বস্তুর সাথে জড়িত থাকা ।

২০।  মন্দ লোকদের সংস্পর্শে থাকা ও চলা ।

২১। সহীহ সুন্নাহকে অজ্ঞতা করে মনগড়া বিদআতি আমল করাঃ

১। মহান আল্লাহকে বেশী খুসি করার নিমিত্তেঃ

আমাদের ইবাদাতের প্রধান ও একমাত্র উদ্দেশ্য হল মহান আল্লাহকে খুসি করা। আমাদের সালাত, সিয়াম, দান, সদকা, হজ্জ, জাকাত, জিকির, তাবলীগ, জিহাদ, ভাল ব্যবহান ইত্যাদি সকল প্রকার ইবাদাতের একমাত্র উদ্যেশ্য হল মহান আল্লাহকে খুসি করা। কিভাবে ইবাদাত করলে মহান আল্লাহকে খুশি হবেন তা আমাদের জানিয়ে দেয়া বা করে দেখান একমাত্র অধিকার ছিল আমাদের রাসূলল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের। তিনিই অহীর মাধ্যমে প্রাপ্ত জ্ঞান দ্বারা আমাদের ইবাদতের পদ্ধতি বলে দিয়ছেন। এই পদ্ধতিই ইবাদত কবুলের একমাত্র সর্বশেষ পদ্ধতি। এখান আর বাড়ান বা কমানোর কোন প্রকার সুযোগ নেই। আর এটাই ইসলামের সৌন্দর্য। কিন্তু কিছু আবেদ শ্রেণীর লোক মহান আল্লাহ প্রদত্ত বিধি বিধানে সন্তষ্ট না থাকা আর বেশী করা। মহান আল্লাহকে রাজি খুসি করার জন্য ইসলামের প্রচলতি ইবাদতকে যথেষ্ট মনে না করা আর কিছু ইবাদত করার পদ্ধতি আবিস্কার করেছে। তারা কোন খারাপ উদ্দেশ্য এই কাজ করছেন এ কথা ঠিক নয়। তারা ভাল মনে করে সু্ন্নাহ বর্হিভূত ইবাদত আবিস্কার করছেন। রাসূলল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জামানায়ও সাবাহিদের (রাঃ) এমন চিন্তা এসেছিল কিন্তু এর সাক্ষাতে ছিল এবং তিনি তাদের সংশোধন করে দেন। সহিহ হাদিসে এসেছে।

আয়েশা ও সা’দ (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত, উসমান বিন মাযঊন (রাঃ) আবেগময় ইবাদত শুরু করেছিলেন। সংসার-বিরাগী হয়ে সব ছেড়ে আল্লাহর ইবাদতে মন দিয়েছিলেন। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বলেছিলেন, ‘হে উসমান! আমাকে সন্ন্যাসবাদে আদেশ দেওয়া হয়নি। তুমি কি আমার তরীকা থেকে বিমুখ হয়েছ?’ উসমান বললেন, ‘না হে আল্লাহর রসূল!’ তিনি বললেন, ‘আমার তরীকা হল, আমি (রাতে) নামায পড়ি এবং ঘুমাই, (কোনদিন) রোযা রাখি এবং (কোনদিন) রাখি না, বিবাহ করি ও তালাক দিই। সুতরাং যে ব্যক্তি আমার তরীকা থেকে বিমুখ হবে, সে আমার দলভুক্ত নয়। হে উসমান! নিশ্চয় তোমার উপর তোমার স্ত্রীর হক আছে, তোমার উপর তোমার নিজের হক আছে, তোমার উপর তোমার মেহমানের হক আছে……।(হাদিসের মান সহিহ, আবূ দাঊদ ১৩৭১, দারেমী ২১৬৯, হাদিস সম্ভার ২২৯৩)

আবূ সা‘ঈদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছেন যে, তোমরা সাওমে বেসাল পালন করবে না। তোমাদের কউ সাওমে বেসাল পালন করতে চাইলে সে যেন সাহরির সময় পর্যন্ত করে। লোকেরা বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনি যে সাওমে বেসাল পালন করেন? তিনি বললেনঃ আমি তোমাদের মত নই, আমি রাত্রি যাপন করি এরূপ অবস্থায় যে, আমার জন্য একজন খাদ্য পরিবেশনকারী থাকেন যিনি আমাকে আহার করান এবং একজন পানীয় পরিবেশনকারী আমাকে পান করান। (সহিহ বুখারী ১৮৩৯ ইসলামি ফাউন্ডেশন)

মানুষ সাধারনত ভীষণ আবেগ প্রবন। যখন সে জান্নাত-জাহান্নামের কথা শুনে, কবর-হাশের কথা শুনে, কিয়ামত-ফুলসিরাতের কথা শুনে তার অন্তুর ভয়ে কেপে উঠে। অনেক সময় কুরআন সুন্নাহ জ্ঞান না থাকার কারনে জান্নাত লাভের আশায় ও জাহান্নামের ভয়ে মরন পন ইবাদত কর শুরু করে। এমন কি জাহান্নামের ভয়ে দুয়ানি ছেড়ে দিয়ে মনগড়া পন্থায় আল্লাহকে সন্তষ্ট করা চেষ্টা করে থাকে। আস্তে আস্তে সে বৌরাগ্য জীবন জাপন করতে থাকে যদি তার ইসলাম সম্পর্ক সঠিক জ্ঞান থাকত তবে বৌরাগ্যের মত বিদআতকে আল্লাহকে খুশি করার জন্য বেচে নিত না। মহান আল্লাহ বলেনঃ

*وَرَهْبَانِيَّةً ابْتَدَعُوهَا مَا كَتَبْنَاهَا عَلَيْهِمْ إِلَّا ابْتِغَاء رِضْوَانِ اللَّهِ فَمَا رَعَوْهَا حَقَّ رِعَايَتِهَا *

অর্থঃ আর বৈরাগ্য, সে তো তারা নিজেরাই উদ্ভাবন করেছে। আমি এটা তাদের উপর ফরজ করিনি। কিন্তু তারা আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্যে এটা অবলম্বন করেছে। অতঃপর তারা যথাযথভাবে তা পালন করেনি। (সুরা হাদীদ ৫৭:২৭)

মন্তব্যঃ ঈসা আলাইহিস সালাম এর অনুসারী খৃষ্টান সম্প্রদায় মহান আল্লাহকে খুশি করার জন্য বৌরাগ্যদের মত বিদআত আবস্কার করে ছিল। কিন্তু মহান আল্লাহ তাদের এই ইবাদাতে খুশি হন নাই। কারন আল্লাহ খুশি হন তার প্রদত্ত বিধান মত তার আদেশ নিষধ মানলে। শারীরিক ও মানষিক কষ্ট প্রদান করা মহান আল্লাহর ইচ্ছা নয়, বরং তিনি দেখতে চান কে তার আদেশ নিষেধ পালন করেন। কাজেই অজ্ঞতার কারনে মহান আল্লাহ প্রদত্ত বিধি বিধানে সন্তষ্ট না থেকে বেশী আমল করলেই তিনি সন্ত্বষ্ট হবেন এমনটা ভাবাস অবকাশ নাই। এইভাবে মতগড়া পন্থায় আল্লাহকে খুশি করার কারনেই বিদআতে সৃষ্টি হয়। তাই মহান আল্লাহকে রাজি খুসি করার জন্য ইসলামের প্রচলতি ইবাদতকে যথেষ্ট মনে করে ইবাদাত করতে হবে, বেশী আবেগ দেখিয়ে মনগড়া পন্থায় ইবাদাত করলে বিদআত হবে।

২। জান্নাত লাভের আশায় বিদআত আমল করেঃ

মানুষ তার আশার মাধ্যমে বেচে থাকে।  বর্তমান বিপদকে শুধু ভবিষ্যৎ এর আশায় মেনে নেয়।  একজন ছাত্রের কথা ভাবুন কত কষ্ট, কত শ্রম, কত রাত জাগা, কত সবর শুধু মাত্র তার ভবিষ্যৎ এর শাস্তির আশায়। অথচ তার শাস্তি মাত্র ৫০/৬০ বছরের জীবনের জন্য। চির স্থায়ী জান্নাতের আশায় তা হলে কত কষ্ট, কত শ্রম, কত সবর করা উচিৎ। জান্নাত সম্পর্কে আল্লাহ প্রদত্ত প্রতিশ্রুতিগুলি স্বরণ করলে দুনিয়ার সকল নেক কাজ করা সহজ হবে। জান্নাত সম্পর্কে আল্লাহর কিছু বাণী তুলে ধরছি।

আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেনঃ

**وَمَنْ يَأْتِهِ مُؤْمِنًا قَدْ عَمِلَ الصَّالِحَاتِ فَأُولَئِكَ لَهُمُ الدَّرَجَاتُ الْعُلَا*

অর্থঃ আর যারা তাঁর নিকট আসবে মুমিন অবস্থায়, সৎকর্ম করে তাদের জন্যই রয়েছে সুউচ্চ মর্যাদা। (সূরা ত্বহা ২০:৭৫)

আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেনঃ

**يَرْفَعِ اللَّهُ الَّذِينَ آَمَنُوا مِنْكُمْ وَالَّذِينَ أُوتُوا الْعِلْمَ دَرَجَاتٍ وَاللَّهُ بِمَا تَعْمَلُونَ خَبِيرٌ *

অর্থঃ তোমাদের মধ্যে যারা ঈমান এনেছে এবং যাদেরকে জ্ঞান দান করা হয়েছে আল্লাহ তাদেরকে মর্যাদায় সমুন্নত করবেন। আর তোমরা যা কর আল্লাহ সে সম্পর্কে সম্যক অবহিত। (সূরা আল মুজাদালাহ ৫৮:১১)

আল্লাহ তাআলা বলেনঃ

 لَـٰكِنِ ٱلَّذِينَ ٱتَّقَوۡاْ رَبَّہُمۡ لَهُمۡ غُرَفٌ۬ مِّن فَوۡقِهَا غُرَفٌ۬ مَّبۡنِيَّةٌ۬ تَجۡرِى مِن تَحۡتِہَا ٱلۡأَنۡہَـٰرُ‌ۖ وَعۡدَ ٱللَّهِ‌ۖ لَا يُخۡلِفُ ٱللَّهُ ٱلۡمِيعَادَ (٢٠):

অর্থঃ কিন্তু যারা নিজদের রবকে ভয় করে তাদের জন্য রয়েছে কক্ষসমূহ যার উপর নির্মিত আছে আরো কক্ষ। তার নিচ দিয়ে নদী প্রবাহিত। এটি আল্লাহর ওয়াদা; আল্লাহ ওয়াদা খেলাফ করেন না। (সূরা যুমার ৩৯:২০)

আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেনঃ

يَـٰعِبَادِ لَا خَوۡفٌ عَلَيۡكُمُ ٱلۡيَوۡمَ وَلَآ أَنتُمۡ تَحۡزَنُونَ (٦٨) ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ بِـَٔايَـٰتِنَا وَڪَانُواْ مُسۡلِمِينَ (٦٩) ٱدۡخُلُواْ ٱلۡجَنَّةَ أَنتُمۡ وَأَزۡوَٲجُكُمۡ تُحۡبَرُونَ (٧٠) يُطَافُ عَلَيۡہِم بِصِحَافٍ۬ مِّن ذَهَبٍ۬ وَأَكۡوَابٍ۬‌ۖ وَفِيهَا مَا تَشۡتَهِيهِ ٱلۡأَنفُسُ وَتَلَذُّ ٱلۡأَعۡيُنُ‌ۖ وَأَنتُمۡ فِيهَا خَـٰلِدُونَ (٧١) وَتِلۡكَ ٱلۡجَنَّةُ ٱلَّتِىٓ أُورِثۡتُمُوهَا بِمَا كُنتُمۡ تَعۡمَلُونَ (٧٢) لَكُمۡ فِيہَا فَـٰكِهَةٌ۬ كَثِيرَةٌ۬ مِّنۡهَا تَأۡكُلُونَ (٧٣) 

অর্থঃ হে আমার বান্দাগণ, তোমাদের আজ কোন ভয় নেই এবং তোমরা দুঃখিতও হবে না। তোমরা আমার আয়াতসমূহে বিশ্বাস স্থাপন করেছিলে এবং তোমরা আজ্ঞাবহ ছিলে। জান্নাতের প্রবেশ কর তোমরা এবং তোমাদের বিবিগণ সানন্দে। তাদের কাছে পরিবেশন করা হবে স্বর্ণের থালা ও পানপাত্র এবং তথায় রয়েছে মনে যা চায় এবং নয়ন যাতে তৃপ্ত হয়। তোমরা তথায় চিরকাল অবস্থান করবে। এই যে, জান্নাতের উত্তরাধিকারী তোমরা হয়েছ, এটা তোমাদের কর্মের তথায় তোমাদের জন্যে আছে প্রচুর ফল-মূল, তা থেকে তোমরা আহার করবে। [ সুরা যূখরুফ ৪৩:৬৮-৭৩ ]

জান্নাতে খাবার দাবার সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা আরো বলেনঃ

وَٱلسَّـٰبِقُونَ ٱلسَّـٰبِقُونَ (١٠) أُوْلَـٰٓٮِٕكَ ٱلۡمُقَرَّبُونَ (١١) فِى جَنَّـٰتِ ٱلنَّعِيمِ (١٢) ثُلَّةٌ۬ مِّنَ ٱلۡأَوَّلِينَ (١٣) وَقَلِيلٌ۬ مِّنَ ٱلۡأَخِرِينَ (١٤) عَلَىٰ سُرُرٍ۬ مَّوۡضُونَةٍ۬ (١٥) مُّتَّكِـِٔينَ عَلَيۡہَا مُتَقَـٰبِلِينَ (١٦) يَطُوفُ عَلَيۡہِمۡ وِلۡدَٲنٌ۬ مُّخَلَّدُونَ (١٧) بِأَكۡوَابٍ۬ وَأَبَارِيقَ وَكَأۡسٍ۬ مِّن مَّعِينٍ۬ (١٨) لَّا يُصَدَّعُونَ عَنۡہَا وَلَا يُنزِفُونَ (١٩) وَفَـٰكِهَةٍ۬ مِّمَّا يَتَخَيَّرُونَ (٢٠) وَلَحۡمِ طَيۡرٍ۬ مِّمَّا يَشۡتَہُونَ (٢١) وَحُورٌ عِينٌ۬ (٢٢) كَأَمۡثَـٰلِ ٱللُّؤۡلُوِٕ ٱلۡمَكۡنُونِ (٢٣) جَزَآءَۢ بِمَا كَانُواْ يَعۡمَلُونَ (٢٤) لَا يَسۡمَعُونَ فِيہَا لَغۡوً۬ا وَلَا تَأۡثِيمًا (٢٥) إِلَّا قِيلاً۬ سَلَـٰمً۬ا سَلَـٰمً۬ا (٢٦) وَأَصۡحَـٰبُ ٱلۡيَمِينِ مَآ أَصۡحَـٰبُ ٱلۡيَمِينِ (٢٧) فِى سِدۡرٍ۬ مَّخۡضُودٍ۬ (٢٨) وَطَلۡحٍ۬ مَّنضُودٍ۬ (٢٩) وَظِلٍّ۬ مَّمۡدُودٍ۬ (٣٠) وَمَآءٍ۬ مَّسۡكُوبٍ۬ (٣١) وَفَـٰكِهَةٍ۬ كَثِيرَةٍ۬ (٣٢) لَّا مَقۡطُوعَةٍ۬ وَلَا مَمۡنُوعَةٍ۬ (٣٣) وَفُرُشٍ۬ مَّرۡفُوعَةٍ (٣٤) إِنَّآ أَنشَأۡنَـٰهُنَّ إِنشَآءً۬ (٣٥) فَجَعَلۡنَـٰهُنَّ أَبۡكَارًا (٣٦) عُرُبًا أَتۡرَابً۬ا (٣٧) لِّأَصۡحَـٰبِ ٱلۡيَمِينِ (٣٨) ثُلَّةٌ۬ مِّنَ ٱلۡأَوَّلِينَ (٣٩) وَثُلَّةٌ۬ مِّنَ ٱلۡأَخِرِينَ (٤٠)

অর্থঃ আর অগ্রগামীরাই অগ্রগামী। তারাই সান্নিধ্যপ্রাপ্ত। তারা থাকবে নিআমতপূর্ণ জান্নাতসমূহে। বহুসংখ্যক হবে পূর্ববর্তীদের মধ্য থেকে, আর অল্পসংখ্যক হবে পরবর্তীদের মধ্য থেকে। স্বর্ন ও দামী পাথর খচিত আসনে! তারা সেখানে হেলান দিয়ে আসীন থাকবে মুখোমুখি অবস্থায়। তাদের আশ-পাশে ঘোরাফেরা  করবে চির কিশোররা, পানপাত্র, জগ ও প্রবাহিত ঝর্ণার শরাবপূর্ণ পেয়ালা নিয়ে। তা পানে না তাদের মাথা ব্যথা করবে, আর না তারা মাতাল হবে। আর (ঘোরাফেরা করবে) তাদের পছন্দমত ফল নিয়েঅ। আর পাখির গোশ‌ত নিয়ে, যা তারা কামনা করবে। আর থাকবে ডাগরচোখা হূর। যেন তারা সুরক্ষিত মুক্তা। এগুলো তারা যে আমল করত তার পুরস্কার। তারা সেখানে শুনতে পাবে না কোন বেহুদা কথা, এবং না পাপের কথা; শুধু এই বাণী ছাড়া, সালাম, সালাম। আর ডান দিকের দল; কত ভাগ্যবান ডান দিকের দল! তারা থাকবে কাঁটাবিহীন কুলগাছের নিচে, আর কাঁদিপূর্ণ কলাগাছের নিচে, আর বিস্তৃত ছায়ায়, আর সদা প্রবাহিত পানির পাশে, আর প্রচুর ফলমূলে, যা শেষ হবে না এবং নিষিদ্ধও হবে না। (তারা থাকবে) সুউচ্চ শয্যাসমূহে; নিশ্চয় আমি হূরদেরকে বিশেষভাবে সৃষ্টি করব। অতঃপর তাদেরকে বানাব কুমারী, সোহাগিনী ও সমবয়সী। ডানদিকের লোকদের জন্য। তাদের অনেকে হবে পূর্ববর্তীদের মধ্য থেকে। আর অনেকে হবে পরবর্তীদের মধ্য থেকে। (সূরা আল ওয়াকিয়া ৫৬:১০-৪০)

আল্লাহ তাআলা বলেনঃ

إِنَّ ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ وَعَمِلُواْ ٱلصَّـٰلِحَـٰتِ إِنَّا لَا نُضِيعُ أَجۡرَ مَنۡ أَحۡسَنَ عَمَلاً (٣٠) أُوْلَـٰٓٮِٕكَ لَهُمۡ جَنَّـٰتُ عَدۡنٍ۬ تَجۡرِى مِن تَحۡتِہِمُ ٱلۡأَنۡہَـٰرُ يُحَلَّوۡنَ فِيہَا مِنۡ أَسَاوِرَ مِن ذَهَبٍ۬ وَيَلۡبَسُونَ ثِيَابًا خُضۡرً۬ا مِّن سُندُسٍ۬ وَإِسۡتَبۡرَقٍ۬ مُّتَّكِـِٔينَ فِيہَا عَلَى ٱلۡأَرَآٮِٕكِ‌ۚ نِعۡمَ ٱلثَّوَابُ وَحَسُنَتۡ مُرۡتَفَقً۬ا (٣١) 

অর্থঃ যারা ঈমান এনেছে এবং সৎকাজ করেছে, নিশ্চয় আমি এমন কারো প্রতিদান নষ্ট করব না, যে সুকর্ম করেছে। এরাই তারা, যাদের জন্য রয়েছে স্থায়ী জান্নাতসমূহ, যার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয় নদীসমূহ। সেখানে তাদেরকে অলংকৃত করা হবে চুড়ি দিয়ে এবং তারা পরিধান করবে মিহি ও পুরু সিল্কের সবুজ পোশাক। তারা সেখানে (থাকবে) আসনে হেলান দিয়ে। কী উত্তম প্রতিদান এবং কী সুন্দর বিশ্রামস্থল। (সূরা আল কাহফ ১৮:৩০-৩১)

আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেনঃ

 مَّثَلُ ٱلۡجَنَّةِ ٱلَّتِى وُعِدَ ٱلۡمُتَّقُونَ‌ۖ فِيہَآ أَنۡہَـٰرٌ۬ مِّن مَّآءٍ غَيۡرِ ءَاسِنٍ۬ وَأَنۡہَـٰرٌ۬ مِّن لَّبَنٍ۬ لَّمۡ يَتَغَيَّرۡ طَعۡمُهُ ۥ وَأَنۡہَـٰرٌ۬ مِّنۡ خَمۡرٍ۬ لَّذَّةٍ۬ لِّلشَّـٰرِبِينَ وَأَنۡہَـٰرٌ۬ مِّنۡ عَسَلٍ۬ مُّصَفًّ۬ى‌ۖ وَلَهُمۡ فِيہَا مِن كُلِّ ٱلثَّمَرَٲتِ وَمَغۡفِرَةٌ۬ مِّن رَّبِّہِمۡ‌ۖ كَمَنۡ هُوَ خَـٰلِدٌ۬ فِى ٱلنَّارِ وَسُقُواْ مَآءً حَمِيمً۬ا فَقَطَّعَ أَمۡعَآءَهُمۡ (١٥)

অর্থঃ পরহেযগারদেরকে যে জান্নাতের ওয়াদা দেয়া হয়েছে, তার অবস্থা নিম্নরূপঃ তাতে আছে পানির নহর, নির্মল দুধের নহর যারা স্বাদ অপরিবর্তনীয়, পানকারীদের জন্যে সুস্বাদু শরাবের নহর এবং পরিশোধিত মধুর নহর। তথায় তাদের জন্যে আছে রকমারি ফল-মূল ও তাদের পালনকর্তার ক্ষমা। পরহেযগাররা কি তাদের সমান, যারা জাহান্নামে অনন্তকাল থাকবে এবং যাদেরকে পান করতে দেয়া হবে ফুটন্ত পানি অতঃপর তা তাদের নাড়িভূঁড়ি ছিন্ন বিচ্ছিন্ন করে দেবে? [ সুরা মুহাম্মাদ ৪৭:১৫ ]

জান্নাতের তার সঙ্গী হবে হুর এ সম্পর্ক আল্লাহ তাআলা বলেনঃ

وَعِندَهُمۡ قَـٰصِرَٲتُ ٱلطَّرۡفِ عِينٌ۬ (٤٨) كَأَنَّہُنَّ بَيۡضٌ۬ مَّكۡنُونٌ۬ (٤٩)

অর্থঃ তাদের কাছে থাকবে আনতনয়না, ডাগরচোখা। তারা যেন আচ্ছাদিত ডিম। (সূরা সাফফাত ৩৭:৪৮-৪৯)।

আল্লাহ তাআলা বলেনঃ

هَـٰذَا ذِكۡرٌ۬‌ۚ وَإِنَّ لِلۡمُتَّقِينَ لَحُسۡنَ مَـَٔابٍ۬ (٤٩) جَنَّـٰتِ عَدۡنٍ۬ مُّفَتَّحَةً۬ لَّهُمُ ٱلۡأَبۡوَٲبُ (٥٠) مُتَّكِـِٔينَ فِيہَا يَدۡعُونَ فِيہَا بِفَـٰكِهَةٍ۬ ڪَثِيرَةٍ۬ وَشَرَابٍ۬ (٥١) ۞ وَعِندَهُمۡ قَـٰصِرَٲتُ ٱلطَّرۡفِ أَتۡرَابٌ (٥٢) هَـٰذَا مَا تُوعَدُونَ لِيَوۡمِ ٱلۡحِسَابِ (٥٣) إِنَّ هَـٰذَا لَرِزۡقُنَا مَا لَهُ ۥ مِن نَّفَادٍ (٥٤)

অর্থঃ এটি এক স্মরণ, আর মুত্তাকীদের জন্য অবশ্যই রয়েছে উত্তম নিবাস- চিরস্থায়ী জান্নাত, যার দরজাসমূহ থাকবে তাদের জন্য উন্মুক্ত। সেখানে তারা হেলান দিয়ে আসীন থাকবে, সেখানে তারা বহু ফলমূল ও পানীয় চাইবে। আর তাদের নিকটে থাকবে আনতনয়না সমবয়সীরা। হিসাব দিবস সম্পর্কে তোমাদেরকে এ ওয়াদাই দেয়া হয়েছিল। নিশ্চয় এটি আমার দেয়া রিয্‌ক, যা নিঃশেষ হবার নয়। (সূরা সাদ ৩৮:৪৯-৫৪)

জান্নাতের সূখ-শান্তি হবে স্থায়ী। আল্লাহ তাআলা বলেনঃ

**وَالَّذِينَ آَمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ سَنُدْخِلُهُمْ جَنَّاتٍ تَجْرِي مِنْ تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ خَالِدِينَ فِيهَا أَبَدًا لَهُمْ فِيهَا أَزْوَاجٌ مُطَهَّرَةٌ وَنُدْخِلُهُمْ ظِلًّا ظَلِيلًا،**

অর্থঃ আর যারা ঈমান এনেছে এবং নেক আমল করেছে, অচিরেই আমি তাদেরকে প্রবেশ করাব জান্নাতসমূহে, যার তলদেশে প্রবাহিত রয়েছে নহরসমূহ। সেখানে তারা হবে স্থায়ী। সেখানে তাদের জন্য রয়েছে পবিত্র সঙ্গীগণ এবং তাদেরকে আমি প্রবেশ করাব বিস্তৃত ঘন ছায়ায়। (সূরা নিসা ৪:৫৭)

 এ সম্পর্কে কয়েকটি হাদীসঃ

১। আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: যে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করবে আর নামাজ কায়েম করবে ও রোযা পালন করবে আল্লাহর উপর দায়িত্ব হলো, তিনি তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। সে ব্যক্তি তার জন্ম ভূমিতে বসে থাকুক বা আল্লাহর পথে জিহাদ করুক (উভয় অবস্থাতে সে জান্নাতের অধিকারী হবে) সাহাবীগণ বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমরা কি এ সুসংবাদটি মানুষকে দেব না? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন: অবশ্যই জান্নাতে একশ স্তর রয়েছে বিভিন্ন মর্যাদার। যা আল্লাহ সে সকল লোকদের জন্য প্রস্তুত রেখেছেন যারা আল্লাহর পথে যুদ্ধ করেছে। এক একটি মর্যাদার ব্যপ্তি হবে আকাশ ও পৃথিবীর মধ্যকার দুরত্বের সম পরিমাণ। যখন তোমরা আল্লাহ তাআলার কাছে প্রার্থনা করবে তখন তোমরা জান্নাতুল ফেরদাউস চাবে। কারণ এটা জান্নাতের মধ্যবর্তী ও সুউচ্চ মর্যাদার স্থান। এর উপর রয়েছে দয়াময় আল্লাহর আরশ। (সহিহ  বুখারী)

২। আবু সায়ীদ আল খুদরী রা. থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: জান্নাতের কক্ষে অবস্থানরত জান্নাতবাসীরা অন্যান্য জান্নাতবাসীদের দেখবে। যেমন তোমরা পূর্ব ও পশ্চিম প্রান্তে অস্তগামী নক্ষত্রসমূহকে দেখতে পাও। তাদের পরস্পরের মর্যাদার ভিন্নতা সত্বেও তোমরা দেখতে পাবে। সাহাবীগণ প্রশ্ন করলেন, ইয়ার রাসূলাল্লাহ! রাসূলদের এই যে মর্যাদা রয়েছে তাতে অন্য কেহ কি অভিষিক্ত হতে পারবে? তিনি বললেন, যার হাতে আমার প্রাণ সেই সত্বার শপথ ঐ সকল মানুষেরা সেই মর্যাদা পাবে যারা আল্লাহ তাআলার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করেছে ও রাসূলদের সত্য বলে স্বীকৃতি দিয়েছে। (বর্ণনায় সহিহ বুখারী ও সহিহ মুসলিম)

৩। জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন: জান্নাতবাসীরা জান্নাতে খাবে, পান করবে কিন্তু তারা থুথু ফেলাবে না, প্রসাব করবে না, পায়খানা করবে না, বমি করবে না। এ কথা শুনে সাহাবীগণ প্রশ্ন করলেন, তাহলে খাবার দাবার কোথায় যাবে? তিনি বললেন: ঢেকুর হয়ে মৃগনাভীর সুগন্ধ নিয়ে বের হয়ে যাবে। যেভাবে শাস-প্রশ্বাস নেয়া হয়, এভাবেই জান্নাতবাসীরা আল্লাহ তাআলার তাসবীহ ও তাহমীদ করতে থাকবে।  (বর্ণনায় সহিহ মুসলিম)

৪। আবু সায়ীদ আল খুদরী রা. থেকে বর্ণিত নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: আল্লাহ তাআলা জান্নাতবাসীদের বলবেন: হে জান্নাতবাসীগণ! তারা বলবে, উপস্থিত হে প্রভূ, সৌভাগ্য ও কল্যাণতো আপনারই হাতে। তারা বলবে, তোমরা কি সন্তুষ্ট হয়েছো? তারা বলবে, হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা কেন সন্তুষ্ট হবো না? আপনি আমাদের এমন নেয়ামত ও সূখ-শান্তি দিয়েছেন যা কখনো অন্য কাউকে দেননি। আল্লাহ তাআলা বলবেন, আমি কি তোমাদের এরচেয়ে উত্তম কোন কিছু দেব? তখন তারা বলবে, হে প্রতিপালক! যা দিয়েছেন তার চেয়ে আবার উত্তম কোন জিনিষ আছে কী? আল্লাহ তাআলা বলবেন, আজ থেকে আমার সন্তুষ্টি তোমাদের উপর স্থায়ী হয়ে গেল। আর কোন দিন তোমাদের প্রতি অসন্তুষ্ট হবো না। (বর্ণনায়: বুখারী ও মুসলিম)

মন্তব্যঃ জান্নাতে এমন নাজ নেয়ামত পাওয়ার বাসনা সকলের। তাই মানুষ আবেগ প্ররণ হয় মহান আল্লাহকে খুশি করার জন্য বিভিন্ন পন্থা অবলম্ভন করে। তাই অজ্ঞ লোকেরা সুন্নাহ বর্হিভুত ইবাদত করে আল্লাহকে খুশি করে যায়। উদাহরণ হিসাবে বলা যায়, বাংলার অধিকাংশ মানুষ কোন না কোন পীরের মুরিদ তারা জান্নাতের লোভে  এই সকল পীর দ্বারা অনুপ্রাণীত হয়ে বিদআতি আমল করছে।

৩। জাহান্নামের ভয়ে মরনপন ইবাদাত করার জন্য বিদআত করাঃ

জাহান্নামের শাস্তি হবে চিরস্থায়ী।  দুনিয়া ক্ষনস্থায়ী তার আজাব-গজব, বালা-মুসিরত, বিপদ-আপদ, দুঃখ-কষ্ট সবই ক্ষনস্থায়ী। অপর পক্ষে আখেরাত চিরস্থায়ী তার দুঃখ বেদনা বালা মুসিরত সবই চিরস্থায়ী।  দুনিয়ার কষ্টের তুলনা জাহান্না কতটা ভয়াবহ? এর উত্তর প্রদানে যে উদাহরণ টানা হোকনা কেন। বাস্তবতা কেউ তুলে ধরতে পাবরেনা। তার পরও বুঝার জন্য মহান আল্লাহ ঘোষনা কৃত কয়েকটি আয়াত তুলে ধরছি। আল্লাহ তাআলা বলেনঃ

 وَتَرَى ٱلۡمُجۡرِمِينَ يَوۡمَٮِٕذٍ۬ مُّقَرَّنِينَ فِى ٱلۡأَصۡفَادِ (٤٩) سَرَابِيلُهُم مِّن قَطِرَانٍ۬ وَتَغۡشَىٰ وُجُوهَهُمُ ٱلنَّارُ (٥٠)

অর্থঃ আর সে দিন তুমি অপরাধীদের দেখবে তারা শিকলে বাঁধা। তাদের পোশাক হবে আলকাতরার এবং আগুন তাদের চেহারাসমূহকে ঢেকে ফেলবে। (সূরা ইবরাহীম ১৪: ৪৯-৫০)

আল্লাহ তাআলা বলেনঃ

وَإِن تَعۡجَبۡ فَعَجَبٌ۬ قَوۡلُهُمۡ أَءِذَا كُنَّا تُرَٲبًا أَءِنَّا لَفِى خَلۡقٍ۬ جَدِيدٍ‌ۗ أُوْلَـٰٓٮِٕكَ ٱلَّذِينَ كَفَرُواْ بِرَبِّہِمۡ‌ۖ وَأُوْلَـٰٓٮِٕكَ ٱلۡأَغۡلَـٰلُ فِىٓ أَعۡنَاقِهِمۡ‌ۖ وَأُوْلَـٰٓٮِٕكَ أَصۡحَـٰبُ ٱلنَّارِ‌ۖ هُمۡ فِيہَا خَـٰلِدُونَ (٥)

অর্থঃ আর যদি তুমি আশ্চর্য বোধ কর, তাহলে আশ্চর্যজনক হল তাদের এ বক্তব্য, আমরা যখন মাটি হয়ে যাব, তখন কি আমরা নতুন সৃষ্টিতে পরিণত হব? এরাই তারা, যারা তাদের রবের সাথে কুফরী করেছে,আর ওদের গলায় থাকবে শিকল এবং ওরা অগ্নিবাসী, তারা সেখানে স্থায়ী হবে। (সূরা রাদ১৩:৫)।

জাহান্নামের যাক্কুম বৃক্ষ পাপীদের খাদ্যঃ আল্লাহ তাআলা এ সম্পর্কে বলেন,

 إِنَّ شَجَرَتَ ٱلزَّقُّومِ (٤٣) طَعَامُ ٱلۡأَثِيمِ (٤٤) كَٱلۡمُهۡلِ يَغۡلِى فِى ٱلۡبُطُونِ (٤٥) كَغَلۡىِ ٱلۡحَمِيمِ (٤٦) خُذُوهُ فَٱعۡتِلُوهُ إِلَىٰ سَوَآءِ ٱلۡجَحِيمِ (٤٧) ثُمَّ صُبُّواْ فَوۡقَ رَأۡسِهِۦ مِنۡ عَذَابِ ٱلۡحَمِيمِ (٤٨) ذُقۡ إِنَّكَ أَنتَ ٱلۡعَزِيزُ ٱلۡڪَرِيمُ (٤٩) إِنَّ هَـٰذَا مَا كُنتُم بِهِۦ تَمۡتَرُونَ (٥٠)

অর্থঃ নিশ্চয় যাক্কুম বৃক্ষ পাপীর খাদ্য ; গলিত তামার মত, উদরসমূহে ফুটতে থাকবে। ফুটন্ত পানির মত (বলা হবে) ওকে ধর, অতঃপর তাকে জাহান্নামের মধ্যস্থলে টেনে নিয়ে যাও। তারপর তার মাথার উপর ফুটন্ত পানির আযাব ঢেলে দাও। (বলা হবে) তুমি আস্বাদন কর, নিশ্চয় তুমিই সম্মানিত, অভিজাত। নিশ্চয় এটা তা-ই যে বিষয়ে তোমরা সন্দেহ করতে। (সূরা আদ দুখান ৪৪: ৪৩-৫০)

আল্লাহ তাআলা বলেনঃ

أَذَٲلِكَ خَيۡرٌ۬ نُّزُلاً أَمۡ شَجَرَةُ ٱلزَّقُّومِ (٦٢) إِنَّا جَعَلۡنَـٰهَا فِتۡنَةً۬ لِّلظَّـٰلِمِينَ (٦٣) إِنَّهَا شَجَرَةٌ۬ تَخۡرُجُ فِىٓ أَصۡلِ ٱلۡجَحِيمِ (٦٤) طَلۡعُهَا كَأَنَّهُ ۥ رُءُوسُ ٱلشَّيَـٰطِينِ (٦٥) فَإِنَّہُمۡ لَأَكِلُونَ مِنۡہَا فَمَالِـُٔونَ مِنۡہَا ٱلۡبُطُونَ (٦٦) ثُمَّ إِنَّ لَهُمۡ عَلَيۡہَا لَشَوۡبً۬ا مِّنۡ حَمِيمٍ۬ (٦٧) ثُمَّ إِنَّ مَرۡجِعَهُمۡ لَإِلَى ٱلۡجَحِيمِ (٦٨) إِنَّہُمۡ أَلۡفَوۡاْ ءَابَآءَهُمۡ ضَآلِّينَ (٦٩) فَهُمۡ عَلَىٰٓ ءَاثَـٰرِهِمۡ يُہۡرَعُونَ (٧٠)

অর্থঃ আপ্যায়নের জন্য এগুলো উত্তম না যাক্কুম বৃক্ষ, নিশ্চয় আমি তাকে যালিমদের জন্য করে দিয়েছি পরীক্ষা। নিশ্চয় এ গাছটি জাহান্নামের তলদেশ থেকে বের হয়। এর ফল যেন শয়তানের মাথা, নিশ্চয় তারা তা থেকে খাবে এবং তা দিয়ে পেট ভর্তি করবে। তদুপরি তাদের জন্য থাকবে ফুটন্ত পানির মিশ্রণ। তারপর তাদের প্রত্যাবর্তন হবে জাহান্নামের আগুনে। নিশ্চয় এরা নিজদের পিতৃপুরুষদেরকে পথভ্রষ্ট পেয়েছিল, ফলে তারাও তাদের পদাঙ্ক অনুসরণে দ্রুত ছুটেছে। (সূরা আস সাফফাত ৩৭:৬২-৭০)

গলিত পুঁজ হবে জাহান্নামীদের খাদ্যঃ এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তাআলা বলেনঃ

 وَٱسۡتَفۡتَحُواْ وَخَابَ ڪُلُّ جَبَّارٍ عَنِيدٍ۬ (١٥) مِّن وَرَآٮِٕهِۦ جَهَنَّمُ وَيُسۡقَىٰ مِن مَّآءٍ۬ صَدِيدٍ۬ (١٦) يَتَجَرَّعُهُ ۥ وَلَا يَڪَادُ يُسِيغُهُ ۥ وَيَأۡتِيهِ ٱلۡمَوۡتُ مِن ڪُلِّ مَكَانٍ۬ وَمَا هُوَ بِمَيِّتٍ۬‌ۖ وَمِن وَرَآٮِٕهِۦ عَذَابٌ غَلِيظٌ۬ (١٧)

অর্থঃ আর তারা বিজয় কামনা করল, আর ব্যর্থ হল সকল স্বৈরাচারী হঠকারী। এর সামনে রয়েছে জাহান্নাম, আর তাদের পান করানো হবে গলিত পুঁজ থেকে। সে তা গিলতে চাইবে এবং প্রায় সহজে সে তা গিলতে পারবে না। আর তার কাছে সকল স্থান থেকে  মৃত্যু ধেঁয়ে আসবে, অথচ সে মরবে না। আর  এর পরেও রয়েছে কঠিন আযাব । (সূরা ইবরাহীম১৪: ১৫-১৭)

আল্লাহ তাআলা বলেনঃ

هَـٰذَانِ خَصۡمَانِ ٱخۡتَصَمُواْ فِى رَبِّہِمۡ‌ۖ فَٱلَّذِينَ ڪَفَرُواْ قُطِّعَتۡ لَهُمۡ ثِيَابٌ۬ مِّن نَّارٍ۬ يُصَبُّ مِن فَوۡقِ رُءُوسِہِمُ ٱلۡحَمِيمُ (١٩) يُصۡهَرُ بِهِۦ مَا فِى بُطُونِہِمۡ وَٱلۡجُلُودُ (٢٠) وَلَهُم مَّقَـٰمِعُ مِنۡ حَدِيدٍ۬ (٢١) ڪُلَّمَآ أَرَادُوٓاْ أَن يَخۡرُجُواْ مِنۡہَا مِنۡ غَمٍّ أُعِيدُواْ فِيہَا وَذُوقُواْ عَذَابَ ٱلۡحَرِيقِ (٢٢)إ

অর্থঃ এরা দুটি বিবাদমান পক্ষ, যারা তাদের রব সম্পর্কে বিতর্ক করে। তবে যারা কুফরী করে তাদের জন্য আগুনের পোশাক প্রস্তুত করা হয়েছে। তাদের মাথার উপর থেকে ঢেলে দেয়া হবে ফুটন্ত পানি। যার দ্বারা তাদের পেটের অভ্যন্তরে যা কিছু রয়েছে তা ও তাদের চামড়াসমূহ বিগলিত করা হবে। আর তাদের জন্য থাকবে লোহার হাতুড়ী। যখনই তারা যন্ত্রণাকাতর হয়ে তা থেকে বের হয়ে আসতে চাইবে, তখনই তাদেরকে তাতে ফিরিয়ে দেয়া হবে এবং বলা হবে, দহন-যন্ত্রণা আস্বাদন কর। (সূরা হজ ২২:১৯-২২)।

আল্লাহ তাআলা বলেনঃ

وَبَرَزُواْ لِلَّهِ جَمِيعً۬ا فَقَالَ ٱلضُّعَفَـٰٓؤُاْ لِلَّذِينَ ٱسۡتَكۡبَرُوٓاْ إِنَّا ڪُنَّا لَكُمۡ تَبَعً۬ا فَهَلۡ أَنتُم مُّغۡنُونَ عَنَّا مِنۡ عَذَابِ ٱللَّهِ مِن شَىۡءٍ۬‌ۚ قَالُواْ لَوۡ هَدَٮٰنَا ٱللَّهُ لَهَدَيۡنَـٰڪُمۡ‌ۖ سَوَآءٌ عَلَيۡنَآ أَجَزِعۡنَآ أَمۡ صَبَرۡنَا مَا لَنَا مِن مَّحِيصٍ۬ (٢١)و

অর্থঃ আর তারা সবাই আল্লাহর সামনে হাজির হবে, অতঃপর যারা অহঙ্কার করেছে দুর্বলরা তাদেরকে বলবে, নিশ্চয় আমরা তোমাদের অনুসারী ছিলাম। সুতরাং তোমরা কি আল্লাহর আযাবের মোকাবেলায় আমাদের কোন উপকারে আসবে? তারা বলবে, যদি আল্লাহ আমাদের হেদায়েত করতেন, তাহলে আমরাও তোমাদের হেদায়েত করতাম। এখন আমরা অস্থির হই কিংবা ধৈর্য ধারন করি, উভয় অবস্থাই আমাদের জন্য সমান। আমাদের পালানোর কোন জায়গা নেই। (সূরা ইবরাহীম ১৪:২১)

 إِنَّ ٱللَّهَ لَعَنَ ٱلۡكَـٰفِرِينَ وَأَعَدَّ لَهُمۡ سَعِيرًا (٦٤) خَـٰلِدِينَ فِيہَآ أَبَدً۬اۖ لَّا يَجِدُونَ وَلِيًّ۬ا وَلَا نَصِيرً۬ا (٦٥) يَوۡمَ تُقَلَّبُ وُجُوهُهُمۡ فِى ٱلنَّارِ يَقُولُونَ يَـٰلَيۡتَنَآ أَطَعۡنَا ٱللَّهَ وَأَطَعۡنَا ٱلرَّسُولَا۟ (٦٦) وَقَالُواْ رَبَّنَآ إِنَّآ أَطَعۡنَا سَادَتَنَا وَكُبَرَآءَنَا فَأَضَلُّونَا ٱلسَّبِيلَا۟ (٦٧) رَبَّنَآ ءَاتِہِمۡ ضِعۡفَيۡنِ مِنَ ٱلۡعَذَابِ وَٱلۡعَنۡہُمۡ لَعۡنً۬ا كَبِيرً۬ا (٦٨)

অর্থঃ নিশ্চয় আল্লাহ কাফিরদেরকে লানত করেছেন এবং তাদের জন্য জ্বলন্ত আগুন প্রস্তুত রেখেছেন। সেখানে তারা চিরস্থায়ী হবে। তারা না পাবে কোন অভিভাবক এবং না কোন সাহায্যকারী। যেদিন তাদের চেহারাগুলো আগুনে উপুড় করে দেয়া হবে, তারা বলবে, হায়, আমরা যদি আল্লাহর আনুগত্য করতাম এবং রাসূলের আনুগত্য করতাম, তারা আরো বলবে, হে আমাদের রব, আমরা আমাদের নেতৃবর্গ ও বিশিষ্ট লোকদের আনুগত্য করেছিলাম, তখন তারা আমাদেরকে পথভ্রষ্ট করেছিল। হে আমাদের রব, আপনি তাদেরকে দ্বিগুণ আযাব দিন এবং তাদেরকে বেশী করে লানত করুন। (সূরা আল আহযাব ৩৩:৬৪-৬৮)

১।  আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত যে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ আয়াতটি পাঠ করলেন: তোমরা আল্লাহ-কে যথাযথ ভয় করো আর মুসলিম না হয়ে মৃত্যুবরণ করো না। এরপর তিনি বললেন: যদি যাক্কুম বৃক্ষ থেকে একটি ফোটা পৃথিবীতে পতিত হয়, তাহলে তা পৃথিবীবাসীর সব জীবনোপকরণ নষ্ট করে দেবে। অতএব যে তা খাবে তার অবস্থা কী হবে? (বর্ণনায়: তিরমিজী। আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন)

২। উসামা ইবনে যায়েদ থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন: কেয়ামতের দিন এক ব্যক্তিকে উপস্থিত করা হবে, তার পেটের নাড়িভুরিগুলো ঘুরপাক খেতে থাকবে। ফলে সে গাধার মত ঘুরতে থাকবে। গাধা যেমন চরকার পাশে ঘুরে থাকে। জাহান্নামের অধিবাসীরা তাকে দেখার জন্য জড়ো হবে। তারা তাকে বলবে, এই! তোমার এ অবস্থা কেন? তুমি কি সৎ কাজের আদেশ করতে না আর অন্যায় কাজ থেকে নিষেধ করতে না? সে বলবে: হ্যা, আমি সৎ কাজের আদেশ করতাম কিন্তু তা নিজে করতাম না। আর অন্যায় ও অসৎ কাজ থেকে মানুষকে বিরত থাকতে বলতাম কিন্তু নিজে তাতে লিপ্ত হতাম। (বর্ণনায় : বুখারী ও মুসলিম)

৩। সাহাবী নুমান ইবনে বশীর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: জাহান্নামীদের মধ্যে যার সবচেয়ে হাল্কা শাস্তি হবে তার শাস্তির ধরনটা এমন হবে যে, তার পায়ে আগুনের দুটো জুতা থাকবে ও আগুনের দুটো ফিতা থাকবে। এর আগুনের তাপে তার মগজ টগবগ করে ফুটতে থাকবে যেমন ডেগের মধ্যে পানি ফুটতে থাকে। লোকেরা তার অবস্থা দেখে মনে করবে এর চেয়ে বড় শাস্তি আর কিছু নেই। অথচ এ শাস্তিটা হল সবচেয়ে হাল্কা শাস্তি। (বর্ণনায় : মুসলিম)

৪। সামুরা ইবনে জুনদাব রা. থেকে বর্ণিত যে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: জাহান্নামীদের কারো পায়ের গোড়ালী পর্যন্ত আগুনে স্পর্ষ করবে। করো হাটু পর্যন্ত আগুনে স্পর্ষ করবে। কারো কোমর পর্যন্ত আবার কারো কণ্ঠ পর্যন্ত আগুন স্পর্ষ করবে। (বর্ণনায় : মুসলিম)

মন্তব্যঃ জাহান্নামের ভয়ে দুয়ানি ছেড়ে দিয়ে মনগড়া পন্থায় আল্লাহকে সন্তষ্ট করা চেষ্টা থেকে বিদআতের উত্পত্তি হয়। সুফিদের সমাবেশে গেলেই দেখা যায়, অজ্ঞ মুরীদদের জান্নামের ভয় দেখিয়ে ইবাদতে করতে উদ্ভুদ্য করে থাকে। এমনকি তাদের বৌরাগ্য সাজতে বলে। তাদের পূর্বসুরীগন তো জাহান্নামের ভয়ে না খেয়ে থেকেছে দিনের পর দিন। জান্নামে ভয়ে এক চিত্কার করে বনে চলে গেল আর ১২ বছর পর ফিরে আসলেন। দুনিয়ার এই কষ্ট জান্নামের তুলনায় সামান্য। এই ভাবে তারা জান্নামের ভয় দেখিয়ে বিদআতি আমর করতে উদ্ভূদ্য করে থাকে। পরিমানে সমাজ বিদআতে আক্রান্ত হয় আর জাহেল মানুষ বিদআতকে ইবাদাত মনে করে। জাহান্নামের ভয় দেখিয়ে সাধারন মানুষকে বিদআতে আকৃষ্ট করা একটি কৌশল মাত্র।

৪। দ্বীন সম্পর্কে অজ্ঞতাঃ

বিদআত উৎপত্তির মুল কারণ হল কুরআন, সুন্নাহ ও আরবী ভাষা সম্পর্কে অজ্ঞতা। বর্তমানে সমাজের অধিকাংশ মুসলিমের ইসলাম সম্পর্কে জ্ঞানের এতই অভাব যে, ইসলাম, ঈমান, কুফর, নিফাক, মুনাফেকি, ছোট শির্ক, বড় শির্কসহ ইসলামের মৌলিক বিষয় সম্পর্কে কবছুই জানেনা। বিদআত সম্পর্কে তাদের জ্ঞান তো অনেক দুরের কথা। হুদ আলাইহিস সালাম যখন আহক্বাফ বাসিদের আহবান করেছিলন। যখন তারা  নিজেদের অজ্ঞতার কারণে আজাব দাবি করেছিল। মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন,

* قَالَ إِنَّمَا ٱلۡعِلۡمُ عِندَ ٱللَّهِ وَأُبَلِّغُكُم مَّآ أُرۡسِلۡتُ بِهِۦ وَلَـٰكِنِّىٓ أَرَٮٰكُمۡ قَوۡمً۬ا تَجۡهَلُونَ *

অর্থঃ সে বললো, এ ব্যাপারের জ্ঞান শুধু আল্লাহরই আছে৷ যে পয়গাম দিয়ে আমাকে পাঠানো হয়েছে আমি সেই পয়গাম তোমাদের কাছে পৌছিয়ে দিচ্ছি৷ তবে আমি দেখছি, তোমরা অজ্ঞতা প্রদর্শন করছো। (সুরা আহকাফ ৪৬:২৩।

 ইসলাম সম্পর্কে জ্ঞানের অভাবে শুধু বিদআত করবে না আল্লাহর আযাব ও দাবি করতে পারে। এমনকি অসংখ্য অগণিত মুসলিমের অবস্থা এতই নাজুক, তারা কেবলই নামে মাত্র মুসলিম অথবা মুসলিম পরিবারে জন্ম গ্রহণ করছে বলে মুসলিম। যে কোন কাজকেই ইসলাম মনে করছে। বিদআতকে দ্বীন মনে করছে। তার ফলে তাদের আমলে নানা ধরনের বিদআত পরিলক্ষিত হচ্ছে। তাদের যদি বলা হয় ভাই এ কাজ কেন করছ? তারা বলে এত ইসলামি কাজ সবাই করে এবং হুজুরও বলছে। তার যেহেতু এ সম্পর্কে জ্ঞান নেই তাই অন্যের দোহাই দিয়ে বিদআতি আমল চালিয়ে যাচ্ছে। বিদআত সম্পর্কে ধারনা থাকলে সে নিজেই পরিহার করে চলতে পারত। এই জন্য বলা হয় বিদআত উৎপত্তির মুল কারণ হল কুরআন সুন্নাহ সম্পর্কে অজ্ঞতা।

কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় হল, বর্তমানে মুসলিমদের অধিকাংশ আমলই বিদআতি। তারা নামে মাত্র মুসলিমদের কাতারে সামিল। বাস্তবে তাদের অবস্থা খুবই করুণ। সময় যতই অতিবাহিত হয়েছে এবং মানুষ যখনই নবুওয়াতের সংস্পর্শ থেকে দূরে অবস্থান করেছে, তখনই ইসলাম সম্পর্কে মানুষের জ্ঞানের কমতি দেখা দিয়েছে এবং মানুষ অজ্ঞতার অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়েছে।

রাসূল (সাঃ) বলেছেনঃ আল্লাহ মানুষের অন্তর থেকে দ্বীনি ইলমকে টেনে বের করে নিবেন না। কিন্তু ইলমকে উঠিয়ে নিবেন আলেমদেরকে উঠিয়ে নেয়ার মাধ্যমে। শেষ পর্যন্ত যখন কোন আলেম জীবিত থাকবেন না, মানুষেরা তখন মূর্খ লোকদেরকে নিজেদের নেতা নির্বাচন করবে। তাদেরকে দ্বীনের কোন বিষয় সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে বিনা ইলমেই তারা ফতোয়াবাজীতে লিপ্ত হবে। ফলে তারা নিজেরা পথভ্রষ্ট হওয়ার সাথে সাথে মানুষদেরকেও পথভ্রষ্ট করবে।

মন্তব্যঃ দ্বীনের সঠিক জ্ঞান ও জ্ঞানী লোক ব্যতীত বিদআতের মুকাবেলা করার মত কোন শক্তি নেই। যখন জ্ঞান ও জ্ঞানীগণ উঠে যাবেন, তখন বিদআত ও বিদআতীদের পক্ষে সুযোগ সৃষ্টি হবে।


৫। বাপ দাদার অন্ধ অনুসরণঃ

নবজাতক মুসলিম পরিবারে জন্মলাভের পরও মানুষ বাপ দাদার অন্ধ অনুসরণ করে শির্ক বিদআতে ডুবে থাকে। সংশোধনের কোন চেষ্টা করে না। আবার আমল পরিবর্তেন কথা বললে মেনেও নেয় না। আজকের দিনে সমাজে অধিক প্রচলিত কোন বিদআতি আমল সম্পর্কে যদি বলা হয় আপনার আমলটি কুরআন সুন্নাহ মোতাবেক হচ্ছে না। তখন কুরআন সুন্নাহ বিরোধী অনেককে পাবেন যারা ভুযা আমলের পক্ষে কথা বলছেন। তারা উল্টা জবাব দেয়, আমাদের বাপ দাদারা যা করছে আমরা তাই করব। তারা কি ইসলাম কম বুঝেন? আপনি কি অমুকের চেয়ে, তমুকের চেয়ে ইসলাম বেশী বুঝেন ইত্যাদি ইত্যাদি। অথচ তাদের এই খোড়া যুক্তির পিছনে কোন দলিল নাই। তারা শুধুমাত্র আন্দাজের অনুসরণ কর এবং তোমরা শুধু অনুমান করে কথা বল। কোন শির্ক বা বিদআতি কাজ করে নিষেধ করলে আল্লাহর ইচ্ছার দোষ দেন ও বাপ–দাদা অজুহাত দেখায়ঃ   মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন:

بَلۡ قَالُوٓاْ إِنَّا وَجَدۡنَآ ءَابَآءَنَا عَلَىٰٓ أُمَّةٍ۬ وَإِنَّا عَلَىٰٓ ءَاثَـٰرِهِم مُّهۡتَدُونَ (٢٢) وَكَذَٲلِكَ مَآ أَرۡسَلۡنَا مِن قَبۡلِكَ فِى قَرۡيَةٍ۬ مِّن نَّذِيرٍ إِلَّا قَالَ مُتۡرَفُوهَآ إِنَّا وَجَدۡنَآ ءَابَآءَنَا عَلَىٰٓ أُمَّةٍ۬ وَإِنَّا عَلَىٰٓ ءَاثَـٰرِهِم مُّقۡتَدُونَ (٢٣) قَـٰلَ أَوَلَوۡ جِئۡتُكُم بِأَهۡدَىٰ مِمَّا وَجَدتُّمۡ عَلَيۡهِ ءَابَآءَكُمۡ‌ۖ قَالُوٓاْ إِنَّا بِمَآ أُرۡسِلۡتُم بِهِۦ كَـٰفِرُونَ (٢٤)

অর্থঃ বরং এরা বলে, আমরা আমাদের বাপ-দাদাকে একটি পন্থার ওপর পেয়েছি, আমরা তাদেরই পদাঙ্ক অনুসরন করে করছি৷  ভাবে তোমার পূর্বে আমি যে জনপদেই কোন সতর্ককারীকে পাঠিয়েছি, তাদের স্বচ্ছল লোকেরা একথাই বলেছে, আমরা আমাদের বাপ দাদাদেরকে একটি পন্থার করতে দেখেছি৷ আমরাও তাদেরই পদাঙ্ক অনুসরন করছি৷ সে বলত, তোমরা তোমাদের পূর্বপুরুষদেরকে যে বিষয়ের উপর পেয়েছ, আমি যদি তদপেক্ষা উত্তম বিষয় নিয়ে তোমাদের কাছে এসে থাকি, তবুও কি তোমরা তাই বলবে? তারা বলত তোমরা যে বিষয়সহ প্রেরিত হয়েছ, তা আমরা মানব না। (সুরা জুকরুক ৪৩:২২-২৪)।

কোন বিদআতি বা মন্দ কাজ করতে নিষধ করলেও বাপ–দাদা অজুহাত দেখায়ঃ মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন:

 وَإِذَا فَعَلُواْ فَـٰحِشَةً۬ قَالُواْ وَجَدۡنَا عَلَيۡہَآ ءَابَآءَنَا وَٱللَّهُ أَمَرَنَا بِہَا‌ۗ قُلۡ إِنَّ ٱللَّهَ لَا يَأۡمُرُ بِٱلۡفَحۡشَآءِ‌ۖ أَتَقُولُونَ عَلَى ٱللَّهِ مَا لَا تَعۡلَمُونَ (٢٨) 

অর্থঃ তারা যখন কোন মন্দ কাজ করে, তখন বলে আমরা বাপ–দাদাকে এমনি করতে দেখেছি এবং আল্লাহও আমাদেরকে এ নির্দেশই দিয়েছেন। আল্লাহ মন্দকাজের আদেশ দেন না। এমন কথা আল্লাহর প্রতি কেন আরোপ কর, যা তোমরা জান না। (সুরা আরাফ ৭:২৮)।

এ সম্পর্কে জানতে আরও দেখুন : হুদ-১১:৮৭ & ১০৯; ইব্রাহীম- ১৪:১০; মায়েদা-৫:১০৪; বাকারা- ২:১৭০; আম্বিয়া- ২১:৫৩ & ৫৪; ইউসুফ- ১২:৪০;  আরাফ ৭: ৭০ & ১৭৩;  সাবা- ৩৪:৪৩; ইউনুস- ১০:৭৮:।

মন্তব্যঃ যুগে যুগে বাপ দাদার অনুসরণ সম্পর্কে কুরআন বহু আয়াত আছে।  যদিও এই আয়াতগুলোতে বিভিন্ন কওমের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু দুঃখের বিষয় হয় আমাদের সমাজে যে বিদআতগুলো প্রচলিত আছে তার বিরোধীত করলে, বিদআতীগন পূর্ববর্তী নবীদের উম্মতের মত বাপ দাদার দোহাই দেয়। তাই বলা যায়, বাপ দাদার অন্ধ অনুসরণ বিদআত বিস্তারে ভুমিকা রাখে।

সংকলনেঃ মোহাম্মাদ ইস্রাফিল হোসাইন। (বিএ ইন এ্যারাবিক লিটারেচার, ইসলামিক হিস্টরী এন্ড ইসলামিক স্টাডিস)

Leave a comment