সংকলনেঃ মোহাম্মাদ ইস্রাফিল হোসাইন।
ইসলামি শরিয়তে প্রতিটি আমলের মাঝে ফরজ, ওয়াজিব, সুন্নাহ ও নফলের হুকুম থাকে। যদিও ফরজ, ওয়াজিব, সুন্নাহ ও নফলের হুকুম মহান আল্লহ ও তার রসুল (সঃ) ভাগ করে দেননি, তাই সাহাবি (রাঃ) সব আমল দুভাগে ভাগ করেছেন। আর তা হল ফরজ ও সুন্নাহ বা নফল। কিন্তু ইসলামের অতন্ত্র প্রহরী মুহাদ্দিসগন আল্লাহর বিধান উম্মতকে সহজে বুঝার জন্য সকল আমলকে ফরজ, ওয়াজিব, সুন্নাহ ও নফলের হুকুম দান করেছেন। যাতে উম্মত আল্লাহ হুকুমের গুরুত্ব বুঝে আমল করতে পারে। সিয়ামের ব্যাপারেও এর ব্যতিক্রম হয়নি। মুহাদ্দিসগন সিয়াম পাঁচভাগে ভাগ করেছেন। যথাঃ
১। ফরজ সিয়াম
২। ওয়াজির সিয়াম
৩। সুন্নাত বা নফল সিয়াম
৪। মাকরূহ সিয়াম এবং
৫। হারাম সিয়াম
এই পর্বে শুধু ফরজ ও ওয়াজিব সিয়াম সম্পর্কে আলোচনা করা হবে।
১। ফরয সিয়ামঃ
যে সিয়াম পালন করতে মহান আল্লাহ নির্দেশ প্রদান করছেন এবং কোন শরীয়ত সম্মত ওজর ছাড়া পরিত্যাগ করা যাবেনা। যে সিয়াম ত্যাগ করা হারাম এবং অস্বীকার কারি কাফির। যেমনঃ রমজান মাসের সিয়াম। রমজান মাস ব্যাপিয়া সিয়াম পালন করা ফরজ। রমজান মাসর নাম উল্লেখ করে আল্লাহ তা‘আলা সিয়াম পারলেন নির্দেশ প্রদান করেছেন। আল্লাহ তা‘আলা সুরা বাকারায় এরশাদ করেন,
*شَهْرُ رَمَضَانَ الَّذِيَ أُنزِلَ فِيهِ الْقُرْآنُ هُدًى لِّلنَّاسِ وَبَيِّنَاتٍ مِّنَ الْهُدَى وَالْفُرْقَانِ فَمَن شَهِدَ مِنكُمُ الشَّهْرَ فَلْيَصُمْهُ وَمَن كَانَ مَرِيضًا أَوْ عَلَى سَفَرٍ فَعِدَّةٌ مِّنْ أَيَّامٍ أُخَرَ
অর্থঃ রমজান মাসই হল সে মাস, যাতে নাযিল করা হয়েছে কোরআন, যা মানুষের জন্য হেদায়েত এবং সত্যপথ যাত্রীদের জন্য সুষ্পষ্ট পথ নির্দেশ আর ন্যায় ও অন্যায়ের মাঝে পার্থক্য বিধানকারী। কাজেই তোমাদের মধ্যে যে লোক এ মাসটি পাবে, সে এ মাসের রোযা রাখবে। আর যে লোক অসুস্থ কিংবা মুসাফির অবস্থায় থাকবে সে অন্য দিনে গণনা পূরণ করবে। (সুরা বাকারা ২:১৮৫)।
২। ওয়াজির সিয়ামঃ
ফরজ সিয়াম আর ওয়াজির সিয়ামের মাঝে কোন প্রকার পার্থক্য করা কঠিন। কারন ফরজ ও ওয়াজিব একই অর্থ বোধক। এ দুটি শব্দের অর্থ হলঃ আবশ্যক, অপরিহার্য, জরুরি। কেউ যদি ফরজ বা ওয়াজিব পরিত্যাগ করে তাহলে সে গুনাহগার হবে এবং কেউ অস্বীকার করলে কাফের হয়ে যাবে। তবে একদল ফকীহ এ দুটি শব্দের মধ্যে পার্থক্য করেছেন। তাদের মতে, ফরজ থেকে ওয়াজিব তুলনামূলকভাবে কম মর্যাদার। কেউ ফরজ অস্বীকার করলে কাফির হয়ে যাবে কিন্তু ওয়াজিব অস্বীকার করলে কাফির হবে না বরং ফাসিক হবে।
কিন্তু অনেক হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হয়, এ দুটি শব্দের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। কেননা, কখনো কখনো রাসূল (সাঃ) ফরজ বুঝাতে ওয়াজিব শব্দ ব্যবহার করেছেন। এ মর্মে বহু হাদীস রয়েছে। এই জন্য সৌদি আরবের অনেক আলেম কে এ দুটি শব্দে একই অর্থে ব্যবহার করতে দেখা যায়।
ওয়াজির সিয়াম তিন প্রকার। যথাঃ
ক। কাযা সিয়াম
খ। কাযা ও কাফফারাসহ সিয়াম
খ। মানতের সিয়াম
ক। কাযা সিয়ামঃ
যদি কেউ কোন শরীয়ত সম্মত ওজরের কারনে ফরজ সিয়াম পরিত্যাগ করে এবং যখন তার উপর থেকে ঐ শরীয়ত সম্মত ওজর চলে যায় তখন তার উপর ঐ সিয়ামের কাযা করা ওয়াজির হয়ে যায়। কোন কোন ক্ষেতে মহান আল্লাহ তায়ালা সিয়াম কাযা করার অনুমতি প্রদান করেছেন। যেমনঃ মহান আল্লাহ বলেন,
أَيَّامًا مَّعْدُودَاتٍ فَمَن كَانَ مِنكُم مَّرِيضًا أَوْ عَلَى سَفَرٍ فَعِدَّةٌ مِّنْ أَيَّامٍ أُخَرَ وَعَلَى الَّذِينَ يُطِيقُونَهُ فِدْيَةٌ طَعَامُ مِسْكِينٍ فَمَن تَطَوَّعَ خَيْرًا فَهُوَ خَيْرٌ لَّهُ وَأَن تَصُومُواْ خَيْرٌ لَّكُمْ إِن كُنتُمْ تَعْلَمُونَ
অর্থঃ গণনার কয়েকটি দিনের জন্য অতঃপর তোমাদের মধ্যে যে, অসুখ থাকবে অথবা সফরে থাকবে, তার পক্ষে অন্য সময়ে সে রোজা পূরণ করে নিতে হবে। আর এটি যাদের জন্য অত্যন্ত কষ্ট দায়ক হয়, তারা এর পরিবর্তে একজন মিসকীনকে খাদ্যদান করবে। যে ব্যক্তি খুশীর সাথে সৎকর্ম করে, তা তার জন্য কল্যাণ কর হয়। আর যদি রোজা রাখ, তবে তোমাদের জন্যে বিশেষ কল্যাণকর, যদি তোমরা তা বুঝতে পার। (সুরা বাকারা ২:১৮৪)।
মহান আল্লাহ তায়ালার পক্ষ, অসুস্থ ব্যক্তি, সফরে থাকা ব্যক্তি বা মুসাফির, হায়েজ-নেফাস আক্রান্ত নারী, গর্ভবতী ও স্তন্যদানকারী নারী, এবং দুর্ঘটনায় পতিত বা বিপদগ্রস্ত লোককে উদ্ধারকাজে নিয়োজিক ব্যক্তি উপর সিয়াম পালন করা সাময়িকভাবে স্থগিত রেখেছেন।
এই সকল ব্যক্তির যে সকল ওজরের কারনে সিয়াম পালন সাময়িক স্থগিত ছিল, তাদের সে সকল ওজর দুরিভূত হলে ঐ ভাঙ্গা বা বাদপড়া সিয়ামগুলি গননা করে পুনরায় আদায় করতে হবে। অর্থাৎ যখন অসুস্থ ব্যক্তি সুস্থ হবে, সফরে থাকা ব্যক্তি সফর শেষ কবরে অর্থাৎ মুসাফির ব্যক্তি মুকিম হবে, নারীগণ হায়েজ-নেফাস এর সময় অতিক্রান্ত করবে, গর্ভবতী নারী সস্তান প্রষব করবে এবং স্তন্যদানকারী নারীর সন্তান স্তন্য পানের সময় অতিক্রান্ত করবে তখন সে তার ভাঙ্গা সিয়ামগুলি আদায় করা ওয়াজিব। প্রমান উপরের আয়াত।
যদি কেউ শরীয়ত সম্মত কোন প্রকার ওজর ছাড়াই ফরজ সিয়াম পরিত্যাগ করে তবে তাদের দুটি বিধান আছ।
১। কাযা সিয়াম আদায়
২। কাযা ও কাফফারাসহ সিয়াম আদায় করা।
যারা শুধু কাযা সিয়াম আদায় আদায় করবে তাদরের ব্যাপারে উপরে আলোচনা করা হয়েছে। যেখানে বলা হয়েছে, শরীয়ত সম্মত ওজরের কারনে ফরজ সিয়াম পরিত্যাগ করে এবং যখন তার উপর থেকে ঐ শরীয়ত সম্মত ওজর চলে যায় তখন তার উপর ঐ সিয়ামের কাযা করা ওয়াজির হয়ে যায়। কিন্ত ইহা ছাড়াও আর যারা ইচ্ছা করে সিয়াম ভঙ্গ করে তাদের উপর কাযা, নাকি কাযাসহ কাফফারাহ এ সম্পর্কে মতভেদ আছে। কেউ বলে ছেন কাযা ও কাফফারা দুটি ওয়াজিব হবে, আবার কেউ বলেছেন শুধু কাযা ওয়াজিব হবে। তবে অধিকাংশ আলেমদের মত শুধু কাযা ওয়াজিব হবে।
শাইখ বিন বায (রহঃ) কে একবার জিজ্ঞেস করা হয়ঃ “একবার আমি রমযানের কাযা রোযা পালন করছিলাম। জোহরের পরে আমার ক্ষুধা লেগে গেল বিধায় আমি ইচ্ছাকৃতভাবে পানাহার করে ফেললাম; ভুলে নয়, অজ্ঞতাবশতঃ নয়। আমার এ কর্মের হুকুম কী?
জবাবে তিনি বলেনঃ
আপনার কর্তব্য ছিল রোযা পূর্ণ করা। ফরয রোযা (যেমন- রমযানের কাযা রোযা, মানতের রোযা) ভেঙ্গে ফেলা জায়েয নেই। এখন আপনার কর্তব্য হচ্ছে-আপনি যা করেছেন এর থেকে তওবা করা। যে ব্যক্তি তওবা করে আল্লাহ্ তার তওবা কবুল করেন।” (মাজমুউল ফাতাওয়া (১৫/৩৫৫) থেকে)
যদি কেউ ওজরের কারণে কিংবা ওজর ছাড়া রোযা ভেঙ্গে ফেলে তাহলে তার উপর ঐ দিনের বদলে অন্য একদিন রোযা কাযা পালন করা ফরয। তাকে কোন কাফ্ফারা দিতে হবে না। কেননা কাফ্ফারা ফরয হয় শুধুমাত্র রমযান মাসের দিনের বেলায় সহবাস করার কারণে। এর প্রমানে সহিহ বুখারির নিম্মের হাদিসটি দেখুন।
আবূল ইয়ামান (রহঃ) … আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট বসাছিলাম। এমন সময় এক ব্যাক্তি এস বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি ধ্বংস হয়ে গিয়েছি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তোমার কি হয়েছে? সে বলল, আমি সায়িম অবস্থায় আমার স্ত্রীর সাথে মিলিত হয়েছি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আযাদ করার মত কোন ক্রীতদাস তুমি পাবে কি? সে বলল, না। তিনি বললেনঃ তুমি কি একাধারে দু’মাস সিয়াম পালন করতে পারবে? সে বলল, না। এরপর তিনি বললেনঃ ষাটজন মিসকীন খাওয়াতে পারবে কি? সে বলল, না।
রাবী বলেন, তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেমে গেলেন, আমরাও এ অবস্থায় ছিলাম। এ সময় নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এক ‘আরাক পেশ করা হল যাতে খেজুর ছিল। ‘আরাক হল ঝুড়ি। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ প্রশ্নকারী কোথায়? সে বলল, আমি। তিনি বললেনঃ এগুলো নিয়ে সাদকা করে দাও। তখন লোকটি বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমার চাইতেও বেশী অবাবগ্রস্থকে সাদকা করব? আল্লাহর শপথ, মদিনার উভয় লাবা অর্থাৎ উভয় প্রান্তের মধ্যে আমার পরিবারের চাইতে অভাবগ্রস্থ কেউ নেই। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হেসে উঠলেন এবং তাঁর দাঁত (আনইয়াব) দেখা গেল। এরপর তিনি বললেন এগুলো তোমার পরিবারকে খাওয়াও। (সহিহ বুখারি হাদিস নম্বর ১৮১২ ইসলামি ফাউন্ডেশন)।
যদি সে ব্যক্তি কোন ওজর ছাড়া রোযাটি ভেঙ্গে ফেলে তাহলে তার উপর এ গুনাহর কাজ থেকে তওবা করা আবশ্যক। আবদুল হামীদ ফাইযী তার কিতাবে লিখেনঃ
কেউ সেবচ্ছায় পানাহার করবে তার রোযা নষ্ট হয়ে যাবে। সে গোনাহগার হবে, বিধায় তার জন্য তওবা ওয়াজেব এবং কাযাও। অবশ্য এর জন্য কোন কাফ্ফারা নেই। তবে ইচ্ছা করে কেউ রোযা নষ্ট করার পর তা কাযা করলেও তা কবুল হবে কি না -তা নিয়ে মতভেদ আছে। (রমাযানের ফাযায়েল ও রোযার মাসায়েল, নবম অধ্যায়, যাতে রোযা নষ্ট ও বাতিল হয়, আবদুল হামীদ ফাইযী)
খ। কাযা ও কাফফারাসহ সিয়ামঃ
কোন রোজাদার যদি রমযান মাসের দিনের বেলায় সহবাস করে তবে তার ব্যাপারে হাদিসে ষ্পষ্ট ঘোষনা আছে তার উপর কাযা ও কাফফারাহ ওয়াজিব হবে। যেমনঃ
আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট বসাছিলাম। এমন সময় এক ব্যাক্তি এস বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি ধ্বংস হয়ে গিয়েছি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তোমার কি হয়েছে? সে বলল, আমি সায়িম অবস্থায় আমার স্ত্রীর সাথে মিলিত হয়েছি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আযাদ করার মত কোন ক্রীতদাস তুমি পাবে কি? সে বলল, না। তিনি বললেনঃ তুমি কি একাধারে দু’মাস সিয়াম পালন করতে পারবে? সে বলল, না। এরপর তিনি বললেনঃ ষাটজন মিসকীন খাওয়াতে পারবে কি? সে বলল, না।
রাবী বলেন, তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেমে গেলেন, আমরাও এ অবস্থায় ছিলাম। এ সময় নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এক ‘আরাক পেশ করা হল যাতে খেজুর ছিল। ‘আরাক হল ঝুড়ি। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ প্রশ্নকারী কোথায়? সে বলল, আমি। তিনি বললেনঃ এগুলো নিয়ে সাদকা করে দাও। তখন লোকটি বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমার চাইতেও বেশী অবাবগ্রস্থকে সাদকা করব? আল্লাহর শপথ, মদিনার উভয় লাবা অর্থাৎ উভয় প্রান্তের মধ্যে আমার পরিবারের চাইতে অভাবগ্রস্থ কেউ নেই। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হেসে উঠলেন এবং তাঁর দাঁত (আনইয়াব) দেখা গেল। এরপর তিনি বললেন এগুলো তোমার পরিবারকে খাওয়াও। (সহিহ বুখারি হাদিস নম্বর ১৮১২ ইসলামি ফাউন্ডেশন)।
সাধারণত ছয়টি কারনে কাফ্ফারার সিয়াম আদায় করতে হয় বা করা যায়। যথাঃ
১। রমজান মাসে ইচ্ছাকৃতভাবে স্ত্রীসহবাস করে সিয়াম পরিত্যাগ করলে
২। হজ্জের সময় অর্থের অভাবে কুরবানী করতে না পারলে
৩। ভূলক্রমে কোন মুলমানকে হত্যা করলে
৪। অনর্থক শপথের জন্যে সিয়াম
৫। ইহরাম অবস্থায় শিকার করলে
৬। স্ত্রীর সাথে জিহার করলে
১। ইচ্ছাকৃতভাবে স্ত্রীসহবাস করে রমজানের সিয়াম পরিত্যাগ করলে, সিয়ামের মাধ্যমে কাফফারা আদায় করতে হয়।
২। হজ্জের সময় অর্থের অভাবে কুরবানী করতে না পারলে, সিয়ামের মাধ্যমে কাফফারা আদায় করতে হয়।
৩। ভূলক্রমে কোন মুলমানকে হত্যা করলে, সিয়ামের মাধ্যমে কাফফারা আদায় করা যায়।
৪। শপথ ভঙ্গের জন্যে, সিয়ামের মাধ্যমে কাফফারা আদায় করা যায়।
৫। এহরাম অবস্থায় শিকার করলে, সিয়ামের মাধ্যমে কাফফারা আদায় করা যায়।
৬। স্ত্রীর সাথে জীহার করলে, সিয়ামের মাধ্যমে কাফফারা আদায় করা যায়।
১। রমজান মাসে ইচ্ছাকৃতভাবে স্ত্রীসহবাস করে সিয়াম পরিত্যাগ করলেঃ
শরীয়ত সম্মত কোন কারন ছাড়া যদি কেউ রমজান মাসে ইচ্ছাকৃতভাবে স্ত্রীসহবাস করে সিয়াম পরিত্যাগ করে তবে এর সিয়ামের পরিবর্তে তাকে একাধানে পূর্ণ দুমাস (৬০ দিন) সিয়াম আদায় করেতে হবে। এই বিধান মান্য করাও প্রত্যেক মুসলীমের উপর ওয়াজিব।
আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক ব্যাক্তি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এসে বললেন, হে আল্লাহর রাসুল! আমি ধ্বংস হয়ে গিয়েছি। তিনি বললেন কিসে তোমাকে ধ্বংস করেছে? সে বলল আমি রমযানে সিয়ামরত অবস্থায় আমার স্ত্রীর সাথে সহবাস করেছি। তিনি বললেন তোমার কি গোলাম আযাদ করার মত সামর্থ্য রয়েছে? সে বলল না। তিনি আবার জিজ্ঞাসা করলেন তুমি কি ক্রমাগত দুই মাস সিয়াম পালন করতে পারবে? সে বলল, না। পূনরায় নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি ষাটজন মিসকীনকে খাওয়াতে পারবে কি? সে বলল, না। তারপর সে বসে গেল। এরপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামএর নিকট এক টুকরি খেজুর আনা হল। তিনি লোকটিকে বললেন এগুলো সদকা করে দাও। তখন সে বলল, আমার চেয়েও অভাবী লোককে সদকা করে দিব? (মদিনার) দুটি কংকরময় ভূমির মধ্যস্থিত স্থানে আমার পরিবারের চেয়ে অভাবী পরিবার আর একটিও নেই। এ কথা শুনে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হেসে দিলেন। এমনকি তাঁর সামনের দাঁতগুলো প্রকাশ হয়ে পড়ল। তখন তিনি বললেন, তাহলে যাও, এগুলো তোমার পরিবারকে খেতে দাও।সহীহ মুসলিম হাদিস নম্বর ২৪৬৬ ইফাঃ)
আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন এক ব্যাক্তি রমযানোর সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) ভেংগে ফেলার কারণে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে নির্দেশ দিলেন, হয় তো সে একটি গোলাম আযাদ করবে অথবা দুই মাস সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করবে অথবা ষাটজন মিসকীনকে খানা খাওয়াবে। (সহীহ মুসলিম হাদিস নম্বর ২৪৭০ইঃ ফাঃ)
২। হজ্জের সময় অর্থের অভাবে কুরবানী করতে না পারলেঃ
হজ্জের সময় অর্থের অভাবে কুরবানী করতে না পারলে সিয়ামের মাধ্যমে কাফফরা আদায় আদায় করা যায়। মহান আল্লাহ বলেন,
وَأَتِمُّواْ الْحَجَّ وَالْعُمْرَةَ لِلّهِ فَإِنْ أُحْصِرْتُمْ فَمَا اسْتَيْسَرَ مِنَ الْهَدْيِ وَلاَ تَحْلِقُواْ رُؤُوسَكُمْ حَتَّى يَبْلُغَ الْهَدْيُ مَحِلَّهُ فَمَن كَانَ مِنكُم مَّرِيضاً أَوْ بِهِ أَذًى مِّن رَّأْسِهِ فَفِدْيَةٌ مِّن صِيَامٍ أَوْ صَدَقَةٍ أَوْ نُسُكٍ فَإِذَا أَمِنتُمْ فَمَن تَمَتَّعَ بِالْعُمْرَةِ إِلَى الْحَجِّ فَمَا اسْتَيْسَرَ مِنَ الْهَدْيِ فَمَن لَّمْ يَجِدْ فَصِيَامُ ثَلاثَةِ أَيَّامٍ فِي الْحَجِّ وَسَبْعَةٍ إِذَا رَجَعْتُمْ تِلْكَ عَشَرَةٌ كَامِلَةٌ ذَلِكَ لِمَن لَّمْ يَكُنْ أَهْلُهُ حَاضِرِي الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ وَاتَّقُواْ اللّهَ وَاعْلَمُواْ أَنَّ اللّهَ شَدِيدُ الْعِقَابِ
অর্থঃ আর তোমরা আল্লাহর উদ্দেশ্যে হজ্জ্ব ওমরাহ পরিপূর্ণ ভাবে পালন কর। যদি তোমরা বাধা প্রাপ্ত হও, তাহলে কোরবানীর জন্য যাকিছু সহজলভ্য, তাই তোমাদের উপর ধার্য। আর তোমরা ততক্ষণ পর্যন্ত মাথা মুন্ডন করবে না, যতক্ষণ না কোরবাণী যথাস্থানে পৌছে যাবে। যারা তোমাদের মধ্যে অসুস্থ হয়ে পড়বে কিংবা মাথায় যদি কোন কষ্ট থাকে, তাহলে তার পরিবর্তে রোজা করবে কিংবা খয়রাত দেবে অথবা কুরবানী করবে। আর তোমাদের মধ্যে যারা হজ্জ্ব ওমরাহ একত্রে একই সাথে পালন করতে চাও, তবে যাকিছু সহজলভ্য, তা দিয়ে কুরবানী করাই তার উপর কর্তব্য। বস্তুতঃ যারা কোরবানীর পশু পাবে না, তারা হজ্জ্বের দিনগুলোর মধ্যে রোজা রাখবে তিনটি আর সাতটি রোযা রাখবে ফিরে যাবার পর। এভাবে দশটি রোযা পূর্ণ হয়ে যাবে। এ নির্দেশটি তাদের জন্য, যাদের পরিবার পরিজন মসজিদুল হারামের আশে-পাশে বসবাস করে না। আর আল্লাহকে ভয় করতে থাক। সন্দেহাতীতভাবে জেনো যে, আল্লাহর আযাব বড়ই কঠিন। (সুরা বাকারা ২:১৯৬)।
৩। ভূলক্রমে কোন মুলমানকে হত্যা করলেঃ
ভূলক্রমে কোন মুলমানকে হত্যা করলে, সিয়ামের মাধ্যমে কাফফারা আদায় করা যায়। মহান আল্লাহ বলেন,
وَمَا كَانَ لِمُؤْمِنٍ أَن يَقْتُلَ مُؤْمِنًا إِلاَّ خَطَئًا وَمَن قَتَلَ مُؤْمِنًا خَطَئًا فَتَحْرِيرُ رَقَبَةٍ مُّؤْمِنَةٍ وَدِيَةٌ مُّسَلَّمَةٌ إِلَى أَهْلِهِ إِلاَّ أَن يَصَّدَّقُواْ فَإِن كَانَ مِن قَوْمٍ عَدُوٍّ لَّكُمْ وَهُوَ مْؤْمِنٌ فَتَحْرِيرُ رَقَبَةٍ مُّؤْمِنَةٍ وَإِن كَانَ مِن قَوْمٍ بَيْنَكُمْ وَبَيْنَهُمْ مِّيثَاقٌ فَدِيَةٌ مُّسَلَّمَةٌ إِلَى أَهْلِهِ وَتَحْرِيرُ رَقَبَةٍ مُّؤْمِنَةً فَمَن لَّمْ يَجِدْ فَصِيَامُ شَهْرَيْنِ مُتَتَابِعَيْنِ تَوْبَةً مِّنَ اللّهِ وَكَانَ اللّهُ عَلِيمًا حَكِيمًا
অর্থঃ মুসলমানের কাজ নয় যে, মুসলমানকে হত্যা করে; কিন্তু ভুলক্রমে। যে ব্যক্তি মুসলমানকে ভূলক্রমে হত্যা করে, সে একজন মুসলমান ক্রীতদাস মুক্ত করবে এবং রক্ত বিনিময় সমর্পন করবে তার স্বজনদেরকে; কিন্তু যদি তারা ক্ষমা করে দেয়। অতঃপর যদি নিহত ব্যক্তি তোমাদের শত্রু সম্প্রদায়ের অন্তর্গত হয়, তবে মুসলমান ক্রীতদাস মুক্ত করবে এবং যদি সে তোমাদের সাথে চুক্তিবদ্ধ কোন সম্প্রদায়ের অন্তর্গত হয়, তবে রক্ত বিনিময় সমর্পণ করবে তার স্বজনদেরকে এবং একজন মুসলমান ক্রীতদাস মুক্ত করবে। অতঃপর যে ব্যক্তি না পায়, সে আল্লাহর কাছ থেকে গোনাহ মাফ করানোর জন্যে উপর্যুপুরি দুই মাস রোযা রাখবে। আল্লাহ, মহাজ্ঞানী, প্রজ্ঞাময়। [ সুরা নিসা ৪:৯২ ]
৪। অনর্থক শপথের জন্যে সিয়ামঃ
শপথ ভঙ্গের জন্যে, সিয়ামের মাধ্যমে কাফফারা আদায় করা যায়। মহান আল্লাহ বলেন,
لاَ يُؤَاخِذُكُمُ اللّهُ بِاللَّغْوِ فِي أَيْمَانِكُمْ وَلَـكِن يُؤَاخِذُكُم بِمَا عَقَّدتُّمُ الأَيْمَانَ فَكَفَّارَتُهُ إِطْعَامُ عَشَرَةِ مَسَاكِينَ مِنْ أَوْسَطِ مَا تُطْعِمُونَ أَهْلِيكُمْ أَوْ كِسْوَتُهُمْ أَوْ تَحْرِيرُ رَقَبَةٍ فَمَن لَّمْ يَجِدْ فَصِيَامُ ثَلاَثَةِ أَيَّامٍ ذَلِكَ كَفَّارَةُ أَيْمَانِكُمْ إِذَا حَلَفْتُمْ وَاحْفَظُواْ أَيْمَانَكُمْ كَذَلِكَ يُبَيِّنُ اللّهُ لَكُمْ آيَاتِهِ لَعَلَّكُمْ تَشْكُرُونَ
অর্থঃ আল্লাহ তোমাদেরকে পাকড়াও করেন না তোমাদের অনর্থক শপথের জন্যে; কিন্তু পাকড়াও করেন ঐ শপথের জন্যে যা তোমরা মজবুত করে বাধ। অতএব, এর কাফফরা এই যে, দশজন দরিদ্রকে খাদ্য প্রদান করবে; মধ্যম শ্রেনীর খাদ্য যা তোমরা স্বীয় পরিবারকে দিয়ে থাক। অথবা, তাদেরকে বস্তু প্রদান করবে অথবা, একজন ক্রীতদাস কিংবা দাসী মুক্ত করে দিবে। যে ব্যক্তি সামর্থ্য রাখে না, সে তিন দিন রোযা রাখবে। এটা কাফফরা তোমাদের শপথের, যখন শপথ করবে। তোমরা স্বীয় শপথসমূহ রক্ষা কর এমনিভাবে আল্লাহ তোমাদের জন্য স্বীয় নির্দেশ বর্ণনা করেন, যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা স্বীকার কর। (সুরা মায়েদা ৫:৮৯)।
মন্তব্যঃ আল্লাহ্ তাআলার বিশেষ অনুগ্রহ ও দয়ার ফলে কসমের কাফফারা নির্ধারিত হয়েছে। যার ফলে কসম করে যে কাজটি না করার কথা ছিল তা করা বৈধ হয় এবং যা করার কথা ছিল তা না করা জায়েয হয়। কসমের কাফফারা নিম্নরূপঃ (তিনটির যে কোন একটি)
(১) দশজন মিসকীনকে খানা খাওয়ানো। প্রত্যেককে অর্ধসা চাউল ইত্যাদি দেবে।
(২) দশজন মিসকীনকে সালাত আদায় করতে পারে এতটুকু পোশাক দেয়া।
(৩) ত্র“টিমুক্ত একজন মুমিন দাস মুক্ত করে দেয়া।
কাফফারা আদায়কারী তিনটির যে কোন একটি বেছে নিবে। যদি উল্লেখিত কোন একটি না পায় তাহলে একাধারে তিন দিন রোযা রাখবে। (রেফারেন্স ৫:৮৯)
৫। ইহরাম অবস্থায় শিকার করলেঃ
ইহরাম অবস্থায় শিকার করলে, সিয়ামের মাধ্যমে কাফফারা আদায় করা যায়। মহান আল্লাহ বলেন,
ذَوَا عَدْلٍ مِّنكُمْ هَدْيًا بَالِغَ الْكَعْبَةِ أَوْ كَفَّارَةٌ طَعَامُ مَسَاكِينَ أَو عَدْلُ ذَلِكَ صِيَامًا لِّيَذُوقَ وَبَالَ أَمْرِهِ عَفَا اللّهُ عَمَّا سَلَف وَمَنْ عَادَ فَيَنتَقِمُ اللّهُ مِنْهُ وَاللّهُ عَزِيزٌ ذُو انْتِقَامٍ
অর্থঃ মুমিনগণ, তোমরা এহরাম অবস্থায় শিকার বধ করো না। তোমাদের মধ্যে যে জেনেশুনে শিকার বধ করবে, তার উপর বিনিময় ওয়াজেব হবে, যা সমান হবে ঐ জন্তুর, যাকে সে বধ করেছে। দু’জন নির্ভরযোগ্য ব্যক্তি এর ফয়সালা করবে-বিনিময জন্তুটি উৎসর্গ হিসেবে কাবায় পৌছাতে হবে। অথবা তার উপর কাফফারা ওয়াজেব-কয় েকজন দরিদ্রকে খাওয়ানো অথবা তার সমপরিমাণ রোযা রাখতে যাতে সে স্বীয় কৃতকর্মের প্রতিফল আস্বাদন করে। যা হয়ে গেছে, তা আল্লাহ মাফ করেছেন। যে পুনরায় এ কান্ড করবে, আল্লাহ তার কাছ থেকে প্রতিশোধ নিবেন। আল্লাহ পরাক্রান্ত, প্রতিশোধ গ্রহণে সক্ষম। (সুরা মায়েদা ৫:৯৫)।
৬। স্ত্রীর সাথে জিহার করলেঃ
স্ত্রীর সাথে জীহার করলে, সিয়ামের মাধ্যমে কাফফারা আদায় করা যায়। মহান আল্লাহ সুরা মুজাদালাহ প্রথম চার আয়াতে এরশাদ করেন।
قَدۡ سَمِعَ ٱللَّهُ قَوۡلَ ٱلَّتِى تُجَـٰدِلُكَ فِى زَوۡجِهَا وَتَشۡتَكِىٓ إِلَى ٱللَّهِ وَٱللَّهُ يَسۡمَعُ تَحَاوُرَكُمَآۚ إِنَّ ٱللَّهَ سَمِيعُۢ بَصِيرٌ (١) ٱلَّذِينَ يُظَـٰهِرُونَ مِنكُم مِّن نِّسَآٮِٕهِم مَّا هُنَّ أُمَّهَـٰتِهِمۡۖ إِنۡ أُمَّهَـٰتُهُمۡ إِلَّا ٱلَّـٰٓـِٔى وَلَدۡنَهُمۡۚ وَإِنَّہُمۡ لَيَقُولُونَ مُنڪَرً۬ا مِّنَ ٱلۡقَوۡلِ وَزُورً۬اۚ وَإِنَّ ٱللَّهَ لَعَفُوٌّ غَفُورٌ۬ (٢) وَٱلَّذِينَ يُظَـٰهِرُونَ مِن نِّسَآٮِٕہِمۡ ثُمَّ يَعُودُونَ لِمَا قَالُواْ فَتَحۡرِيرُ رَقَبَةٍ۬ مِّن قَبۡلِ أَن يَتَمَآسَّاۚ ذَٲلِكُمۡ تُوعَظُونَ بِهِۦۚ وَٱللَّهُ بِمَا تَعۡمَلُونَ خَبِيرٌ۬ (٣) فَمَن لَّمۡ يَجِدۡ فَصِيَامُ شَہۡرَيۡنِ مُتَتَابِعَيۡنِ مِن قَبۡلِ أَن يَتَمَآسَّاۖ فَمَن لَّمۡ يَسۡتَطِعۡ فَإِطۡعَامُ سِتِّينَ مِسۡكِينً۬اۚ ذَٲلِكَ لِتُؤۡمِنُواْ بِٱللَّهِ وَرَسُولِهِۦۚ وَتِلۡكَ حُدُودُ ٱللَّهِۗ وَلِلۡكَـٰفِرِينَ عَذَابٌ أَلِيمٌ (٤)
অর্থঃ যে নারী তার স্বামীর বিষয়ে আপনার সাথে বাদানুবাদ করছে এবং অভিযোগ পেশ করছে আল্লাহর দরবারে, আল্লাহ তার কথা শুনেছেন। আল্লাহ আপনাদের উভয়ের কথাবার্তা শুনেন। নিশ্চয় আল্লাহ সবকিছু শুনেন, সবকিছু দেখেন। তোমাদের মধ্যে যারা তাদের স্ত্রীগণকে মাতা বলে ফেলে, তাদের স্ত্রীগণ তাদের মাতা নয়। তাদের মাতা কেবল তারাই, যারা তাদেরকে জন্মদান করেছে। তারা তো অসমীচীন ও ভিত্তিহীন কথাই বলে। নিশ্চয় আল্লাহ মার্জনাকারী, ক্ষমাশীল। যারা তাদের স্ত্রীগণকে মাতা বলে ফেলে, অতঃপর নিজেদের উক্তি প্রত্যাহার করে, তাদের কাফফারা এই একে অপরকে স্পর্শ করার পূর্বে একটি দাসকে মুক্তি দিবে। এটা তোমাদের জন্যে উপদেশ হবে। আল্লাহ খবর রাখেন তোমরা যা কর। যার এ সামর্থ্য নেই, সে একে অপরকে স্পর্শ করার পূর্বে একাদিক্রমে দুই মাস রোযা রাখবে। যে এতেও অক্ষম হয় সে ষাট জন মিসকীনকে আহার করাবে। এটা এজন্যে, যাতে তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রসূলের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন কর। এগুলো আল্লাহর নির্ধারিত শাস্তি। আর কাফেরদের জন্যে রয়েছে যন্ত্রণা দায়ক আযাব। (সুরা মুজাদালাহ ৫৮:১-৪)
মান্নত সিয়ামঃ
মানত করা মাকরুহ হলেও সৎ কাজের মানত আদায় করা ওয়াজিব। মানত করা জায়েয নয়। কিন্তু কেউ যদি কোনো ভাল কাজ করার মানত করে তাহলে তাকে তা পালন করতে হবে। যাকে আমরা বলি মানত পুরা করা। মানত পুরা করা ওয়াজিব। না করলে গুনাহ হবে। মানত পুরা করা একটি ইবাদত। যেমনঃআল্লাহ তাআলা সৎকর্মশীল ঈমানদারদের প্রশংসায় বলেনঃ
يُوفُونَ بِالنَّذْرِ وَيَخَافُونَ يَوْمًا كَانَ شَرُّهُ مُسْتَطِيرًا
অর্থঃ এরা হবে সেসব লোক যারা (দুনিয়াতে) মানত পূরণ করে সে দিনকে ভয় করে যার বিপদ সবখানে ছড়িয়ে থাকবে৷ (সুরা দাহর/ইনসান ৭৬:৭)
আল্লাহ আরো বলেন:
وَمَا أَنْفَقْتُمْ مِنْ نَفَقَةٍ أَوْ نَذَرْتُمْ مِنْ نَذْرٍ فَإِنَّ اللَّهَ يَعْلَمُهُ
অর্থঃ তোমরা যা কিছু ব্যয় করেছো এবং যা মানতও করেছো আল্লাহ তা সবই জানেন ৷ আর জালেমদের কোন সাহায্যকারী নেই। (সূরা বাকারা ২:২৭০)
১। উমর ইবনু খাত্তাব (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি জাহিলিয়্যাতের যুগে মসজিদে হারামে এক রাত ইতিকাফ করার মানত করেছিলাম। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে বললেনঃ তোমার মানত পুরা কর। তিনি এক রাতের ইতিকাফ করলেন। (সহিহ বুখারি হাদিস ১৯১৪ ইঃ ফাঃ)
২। ইমরান ইবনু হুসায়ন (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের মধ্যে আমার যমানার লোকেরাই সর্বোত্তম। তারপর এর পরবর্তী যমানার লোকেরা। তারপর এদের পরবর্তী যমানার লোকেরা। ইমরান (রাঃ) বর্ণনা করেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ কথাটি দু’বার কি তিনবার বললেন, তা আমার স্মরণ নেই- তারপর এমন লোকদের আবির্ভাব হবে যে, তারা সাক্ষ্য দিবে, অথচ তাদের সাক্ষ্য চাওয়া হবে না। তারা খিয়ানতকারী হবে। তাদের আমানতদার মনে করা হবে না। তারা মানত মানবে তা পূরণ করবে না। তাদের দৈহিক হৃষ্টপুষ্টতা প্রকাশিত হবে। (সহিত বুখারি হাদিস নং ৫৯৮৫ ইঃ ফাঃ)।
মান্নত আদায় করা কখনো কখনো ওয়াজিব আবার কখনো হারাম। কিন্তু অধিকাংশ ইমাম ও ফেকাহবিদ মান্নত করাকে মাকরূহ বলেছেন আর এ অভিমতটিই সঠিক। কারণ, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মান্নত করতে নিষেধ করেছেন। তিনি এ ব্যাপারে সব সময় উম্মতদের নিরুৎসাহিত করেছেন। বিষয়টি আমরা অনেকেই জানি না। বরং মনে করি মানত করা খুব সওয়াবের কাজ। আসলে এটি কোনো সওয়াবের কাজ নয়। তবে মানত আদায় করা সওয়াবের কাজ। যতি কেউ কোন কারনে সিয়াম আদায়ের মানত করে তবে তার সিয়াম আদায় করা ওয়াজিব হয়ে যাবে।
সংকলনেঃ মোহাম্মাদ ইস্রাফিল হোসাইন। (বিএ ইন আরবি সাহিত্য ও ইসলাম শিক্ষা)