আকিদার বিদআতসমূহ দশম কিন্তি : পরকালে পীর বা শাইখগণ সুপারিশ করে জান্নাতে নিয়ে যাবে।

আকিদার বিদআতসমূহ : দশম কিন্তি 

পরকালে পীর বা শাইখগণ সুপারিশ করে জান্নাতে নিয়ে যাবে।

সংকলনেঃ মোহাম্মাদ ইস্রাফিল হোসাইন

ইসলামি শরীয়তের প্রথম ও প্রধান বিষয় হল ইমান। আর খাটি ইমান হল, সঠিক আকিদা প্রষণ করা। কিন্তু খুবই দুঃখজনক বিষয় হল, আমরা সকলে মুসলিম দাবি করলেও শুধু আমাদের আকিদার কারনে আমরা মুসলিম নই। ইসলাম বহির্ভুত এই নতুত আকিদাকে বিদআতি আকিদা হিসাবে চিহিৃত করব। কুরআন সুন্নাহর বাহিরে যে আকিদা নতুন করে আবিস্কার হয়েছে তাই বিদআতি আকিদা। কাজেই যে কোন ভুল আকিদা যা কুরআন সুন্নাহের বাহিরে গিয়ে নতুত করে তৈরি হয়েছে তাই বিদআতি আকিদা। যার অর্থ হলো আকিদার ভূলভ্রান্তি মানেই বিদআত আকিদা। যৌক্তিক কোন কাজ সহজে যে কেউ মেনে নেন। আর বিজ্ঞান দ্বারা প্রমানিত কোন জ্ঞানতো সাথে সাথে মেনে নেয়। কিন্তু ইসলামি আকিদার মুল হল অদৃশ্যে বিশ্বাস এখানে জাগতিক কোন বিষয় থাকলে যুক্তি ও বিজ্ঞান দ্বারা পরীক্ষা করা যেত কিন্ত অদৃশ্যে বিশ্বাস করতে হলে অদৃশ্য থেকে প্রাপ্ত অহীর উপর নির্ভর করতে হবে। অহী ভিন্ন যে কোন উৎস থেকে আকিদা গ্রহন করলে শুদ্ধ ও অশুদ্ধ যে কোনটাই হতে পারে। ইসলামি আকিদা বিশ্বাস সব সময় আল্লাহকে কেন্দ্র অদৃশ্যের উপর নির্ভর করে থাকে। তাই ইসলামি আকিদার মুল উৎস হল কুরআন ও সহীহ সুন্নাহ ভিত্ত্বিক। এই কুরআন সুন্নাহর বাহিরে যখনি নতুন করে আকিদা রচনা করা হবে তাই বিদআতি আকিদা।

যেমনঃ অদৃশ্যের একটি ব্যাপার হল কবরের আজাব। কবরে আজাব হবে এটাই সত্য। কিন্তু কাউকে যুক্তি দিয়ে কি কবরের আজাব বুঝাতে বা দেখাতে পাবর। কিংবা বিজ্ঞানের আবিস্কার ক্যামেরা দ্বারা কি এই আজাব দেখাতে পারব। অপর পক্ষে আমলের ব্যাপারটা কিন্তু এমন নয়। এখানে কুরআন হাদিসের বাহিরে ইজমা কিয়াজের দরকার হয়। নতুন কোন সমস্যা আসলে কিয়াস করে মাসায়েল দিতে হয়। যেমনঃ মোবাইল, টিভি, ইন্টারনেট, শেয়ার বাজার ইত্যাদি ইসলামের প্রথমিক যুগে ছিলনা। তাই কুরআন সুন্নাহর ভিত্তিতে কিয়াস করে সমাধান দিতে হয়। কজেই একটি কথা মনে রাখতে হবেঃ “আকিদা ও ফিকহের মধ্যে মৌলিক পার্থক্য হলো, ফিকহের ক্ষেত্রে ইসতিহাদ, কিয়াস, যুক্তি বা আকলি দলিলের প্রয়োজন হতে পারে কিন্তু আকিদার ক্ষেত্রে ইসতিহাদ, কিয়াস, যুক্তি বা আকলি দলিলের প্রয়োজন নেই”

এক কথায় বলে গেলে কুরআন হাদিসের ষ্পষ্ট কোন রেফারেন্স ছাড়া আকিদা গ্রহণীয় নয়। যদি কেউ যুক্তি দিয়ে আকিদা বুঝাতে আসে তাকে সালাম জানাতে হবে। 

কুনআন সুন্নাহকে উৎস হিসাবে না নিলে আকিদার ভিন্নতা তো থাকবেই। আর এই ভিন্ন আকিদা আসবে সম্পূর্ণ নতুন করে যা বিদআত বলা হয়। কুরআন হাদিসে ষ্পষ্টভাবে উল্লেখ নেই, এমন ফিকহি মাসলা মাসায়েলের ক্ষেতে ইখতিলাফ বা মতভেদ করা জায়েয হলেও, আকিদার ক্ষেত্রে কোন প্রকার মতভেদ জায়েয নেই। কারন আকিদার ছয়টি বিষয় (আল্লাহ্‌র প্রতি বিশ্বাস, ফিরিশতাগণের প্রতি বিশ্বাস, কিতার সমুহের প্রতি বিশ্বাস, রাসূলগনের প্রতি বিশ্বাস শেষ দিনের প্রতি বিশ্বাস, তাক্বদীরের  ভালো মন্দেন প্রতি বিশ্বাস) যার সবগুলিই গায়েবের সাথে সম্পৃক্ত এবং গায়েব জানার জন্য অহীর প্রয়োজন। যতি কেউ তার আকিদাকে অহী ভিত্তিক না করে, যুক্তি ভিত্তিক করে, তাহলে তার বিভ্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় শতভাগ। অহী ভিত্তিক না হয়ে আকিদা যুক্তি ভিত্তিক হলেই বিদআতি আকিদা হবে।

আকিদার সম্পর্কে আলোচনার আগে একটা কথাকে মনে খোদাই করে লিখে রাখেন, “আকিদা গাইবের প্রতি বিশ্বাস, এই বিশ্বাস হবে অহী নির্ভর, কোন প্রকার যু্‌ক্তিতর্কের অবতারণা করা যাবেনা”। কাজেই আমি যে ভ্রান্ত আকিদাগুলি তুলে ধরব তার বিপক্ষে আন্ততো কুরআনের একটি আয়াত অথবা একটি সহিহ হাদিস উপস্থাপণ করব। এই সহিহ আকিদার বিপরীতে যে সকল বিদআতি আকিদা সবার সামনে তুলে ধরব, সেই সকল আকিদার কুরআন সুন্নাহতে কোন প্রমান পাওয়া যাবে না। কুরআন সুন্নাহ নাই বলেই আকিদার নাম দিলাম বিদআতি আকিদা।

সঠিক আকিদা হলোঃ সুপারিশ সত্য কিন্তু সকল সুপারিশ মহার আল্লাহ অনুমতিক্রমে হবে।।

সঠিক আকিদার দলীলঃ

১। আল্লাহ পেতে মাধ্যমের দরকার নাইঃ

অধিকাংশ বিদআতি বা সুফিবাদের শির্কি আমল এবং আকিদার মুল উত্স হল এই সুপারিস বা শাফাআত। এর জন্য তারা তাদের পীর কে তার ও আল্লাহর মাঝে মাধ্যম স্বাবস্ত করে। সুফিগন আল্লাহকে পেতে মাধ্যম সাব্যস্ত করতে গিয়ে সীমালংঘন করেছে। মাধ্যমের ভুল ব্যাখ্যা করে হাজার হাজার মানুষকে পথভ্রষ্ট করছে। তাদের যুক্তি, মাধ্যম ছাড়া আল্লাহ পর্যান্ত পৌছান যাবেনা। পুল পারাপারের জন্য ধরনির দরকার, বড় বড় অফিসার বা মন্ত্রীদের কাছে সরাসরি যাওয়া যাবে না, পিএ বা সহকারির মাধ্যম দরকার। বিচরকের কাছে সরাসরি যাওয়া যাবে না, উকিল দরকার।

ঠিক তেমনি ভাবে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং অন্যান্য নবী ও নেক্কার ব্যক্তিবর্গকে মাধ্যম না মানলে আল্লাহ তা’আলা তাদের কারো কোন আমল কবুল করবেন না। যেহেতু রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এবং অন্যান্য নবী জীবিত নেই তাই কোন না কোন অলী বা নেক্কার ব্যক্তিবর্গকে মাধ্যম মানতে হবে। তাদের এই যুক্তির অসারতা দেখুন, বড় বড় অফিসার বা মন্ত্রীবর্গ সাধারনত সকল মানূষ সম্পর্কে সমান জ্ঞান রাখে না। তাই তাদের জ্ঞান দান করার জন্য মাধ্যম দরকার। জ্ঞান সল্পতার জন্য সহকারি রাখেন, তারই মাধ্যমে যোগাযোগ করতে বলেন। আমার আল্লাহ কি জ্ঞানের কোন সল্পতা আছে? (নাউজুবিল্লাহ)।

মহান আল্লাহ আলেমুল গায়েব, তিনি আমেরিকার রাষ্ট্রপতিকে যেমন চেনেন, ঠিক তেমনি অজপাড়া গায়ের ভিক্ষুকটিকে চেনেন। ভাল করে ভাবেন, দুনিয়ার বিচারক ঘুস খায়, দর্নীতি পনায়ণ, স্বজন প্রীতি করে, সুপারিশ গ্রহন করে। আর এই সকল ফায়দা লোটার জন্য মাধ্যম দরকার হয়। আমার আল্লাহ কি ন্যায় পরায়ণ নয়? (নাউজুবিল্লাহ)। আল্লাহ কি সব বিচারকের চাইতে বড় বিচারকের নন? (সুরা তীন:৮)। তাহলে মাধ্যম কেন? বিচারক যদি ঘটনার সময় উপস্থিত থাকেন তবে উকিলে প্রয়োজন কিসের? এই সকল যুক্তি হল অজ্ঞ মানুষ ঠকানোর যুক্তি।  অথচ আল্লাহ তা’আলা পবিত্র কুরআনে বলেনঃ 

 وَإِذَا سَأَلَكَ عِبَادِى عَنِّى فَإِنِّى قَرِيبٌ‌ۖ أُجِيبُ دَعۡوَةَ ٱلدَّاعِ إِذَا دَعَانِ‌ۖ فَلۡيَسۡتَجِيبُواْ لِى وَلۡيُؤۡمِنُواْ بِى لَعَلَّهُمۡ يَرۡشُدُونَ (١٨٦) 

অর্থঃ যখন আমার বান্দাগণ আমার সম্বন্ধে তোমাকে জিজ্ঞাসা করে, আমি তো প্রকৃতই [তাদের] অতি নিকটে। যখন আহবানকারী আমাকে ডাকে, আমি প্রত্যেক আহবানকারীর আহবানে সাড়া দেই। সুতরাং তারাও আমার ডাকে সাড়া দিক এবং আমার প্রতি ঈমান আনুক, যাতে তারা সঠিক পথে চলতে পারে । (বাকারা ২:১৮৬)।

আল্লাহ তা’আলার এ বাণীর পরিবর্তে যারা যুক্তিদেয় তাদের বিশ্বাসের সংগতি কতটুকু? এ আয়াত ইঙ্গিত করছে যে, আল্লাহর কাছে পৌঁছার একমাত্র মাধ্যম হচ্ছে তার উপর সঠিকভাবে ঈমান আনা এবং তার প্রর্দশিত পথে ইবাদাত করা। এ দুটি ছাড়া আল্লাহ সন্তষ্টির আর তৃতিয় মাধ্যম নেই। অনেকে আবার নানান অজুহাত দেখিয়ে বলে অলীরা শুধু অসিলা মাত্র। কুরআনের সুরা মায়েদার ৩৫ নম্বর আয়াত উল্লখ করে বলেন স্বয়ং আল্লাহই অসিলা ধরতে বলেছেন। দেখুন আল্লাহ কি বলেনঃ

يَـٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ ٱتَّقُواْ ٱللَّهَ وَٱبۡتَغُوٓاْ إِلَيۡهِ ٱلۡوَسِيلَةَ وَجَـٰهِدُواْ فِى سَبِيلِهِۦ لَعَلَّڪُمۡ تُفۡلِحُونَ (٣٥):

অর্থঃ হে ঈমানদারগণ তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং তার কাছে অসীলা (পূর্ণ আনুগত্যের মাধ্যমে নৈকট্য) অন্বেষণ কর আর তার রাস্তায় জিহাদ কর যাতে করে তোমরা সফলকাম হতে পার। (সূরা আল-মায়িদাহ্ ৫:৩৫)। 

আল্লাহ তা’আলা কুরআনে অসীলা শব্দের উল্লেখ করেছেন এবং তা দ্বারা পূর্ণ আনুগত্য করাকেই বুঝিয়েছেন কারণ এটা (অর্থাৎ আল্লাহ ও তার রাসূলের পূর্ণ আনুগত্যই) একমাত্র মাধ্যম যা তাঁর নৈকট্য দিতে পারে এবং তার রহমতের দরজা খুলতে ও জান্নাতে প্রবেশ করাতে সক্ষম। যারা নেককার বান্দাদেরকে অসীলা হিসাবে গ্রহন করে তাদেইর আল্লাহ তায়ালা পরিহাস করছেন কারন তারা যে সকল নেককার বান্দাদেরকে অসীলা বানাচ্ছে তারা নিজেরাই অসীলা তথা আল্লাহর অনুগত্যের দ্বারা নৈকট্য হাসিলের অধিক মুখাপেক্ষী।

আল্লাহ তা’আলা পবিত্র কুরআনে বলেনঃ 

أُوْلَـٰٓٮِٕكَ ٱلَّذِينَ يَدۡعُونَ يَبۡتَغُونَ إِلَىٰ رَبِّهِمُ ٱلۡوَسِيلَةَ أَيُّہُمۡ أَقۡرَبُ وَيَرۡجُونَ رَحۡمَتَهُ ۥ وَيَخَافُونَ عَذَابَهُ ۥۤ‌ۚ إِنَّ عَذَابَ رَبِّكَ كَانَ مَحۡذُورً۬ا (٥٧) 

অর্থঃ এরা যাদেরকে ডাকে তারা তো নিজেরাই নিজেদের রবের নৈকট্যলাভের উপায় খুঁজে বেড়াচ্ছে যে, কে তাঁর নিকটতর হয়ে যাবে এবং এরা তাঁর রহমতের প্রত্যাশী এবং তাঁর শাস্তির ভয়ে ভীত৷ আসলে তোমার রবের শাস্তি ভয় করার মতো৷ (সূরা আল-ইসরা ৪১:৫৭)। 

অনেকে আবার আল্লাহর সাহায্য সহযোগিতা জন্য স্রষ্টা ও সৃষ্টির মাঝে মাধ্যম মানার চেষ্টা করে। কঠিন বিপদে পড়ে যখন কুল কিনারা পায় না, তখন অজ্ঞ শ্রেণীর মানুষ ছোটে মাযার পানে মাধ্যম ধরার খোজে। এ ব্যাপারটা আরও অত্যন্ত বিপজ্জনক বিষয়। পরিতাপের বিষয় যে, অনেক মুসলমানই এ সম্পর্কে পরিষ্কার কোন ধারণা রাখেনা। ফলে তারা সরাসরি শির্কি কাজে লিপ্ত হচ্ছে। এবং আমরা আল্লাহর সাহায্য সহযোগিতা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ 

‌ۖ وَكَانَ حَقًّا عَلَيۡنَا نَصۡرُ ٱلۡمُؤۡمِنِينَ (٤٧)

অর্থঃ “আর মু’মিনদের সাহায্য করা আমার দায়িত্ব”(সূরা আর-রূম ৩০:৪৭) 

আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ

 يَـٰٓأَيُّہَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوٓاْ إِن تَنصُرُواْ ٱللَّهَ يَنصُرۡكُمۡ وَيُثَبِّتۡ أَقۡدَامَكُمۡ (٧) 

অর্থঃ হে ঈমান গ্রহণকারীগণ, তোমরা আল্লাহকে সাহায্য করো তাহলে আল্লাহও তোমাদেরকে সাহায্য করবেন এবং তোমাদের পা সুদৃঢ় করে দিবেন৷ (সূরা মুহাম্মাদ ৪৭:৭) 

বড়ই পরিতাপের বিষয় যে, এ সমস্ত অজ্ঞ লোকেরা বিভিন্ন পীর বা অলীদের কে মাধ্যম হিসাবে গ্রহণ করেছে তাদের সত্তার উপর ভরসা করে নেক আমল করা থেকে বিরত থাকছে। অথচ যিনি সমস্ত মানব সন্তানের নেতা, সেই রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে সম্বোধন করে আল্লাহ তা’আলা বলেছেন,

قُل لَّآ أَمۡلِكُ لِنَفۡسِى نَفۡعً۬ا وَلَا ضَرًّا إِلَّا مَا شَآءَ ٱللَّهُ‌ۚ وَلَوۡ كُنتُ أَعۡلَمُ ٱلۡغَيۡبَ لَٱسۡتَڪۡثَرۡتُ مِنَ ٱلۡخَيۡرِ وَمَا مَسَّنِىَ ٱلسُّوٓءُ‌ۚ إِنۡ أَنَا۟ إِلَّا نَذِيرٌ۬ وَبَشِيرٌ۬ لِّقَوۡمٍ۬ يُؤۡمِنُونَ (١٨٨) ۞

অর্থঃ হে মুহাম্মাদ! তাদেরকে বলো, নিজের জন্য লাভ ক্ষতির কোন ইখতিয়ার আমার নেই৷ একমাত্র আল্লাহই যা কিছু চান তাই হয়৷ আর যদি আমি গায়েবের খবর জানতাম, তাহলে নিজের জন্যে অনেক ফায়দা হাসিল করতে পারতাম এবং কখনো আমার কোন ক্ষতি হতো না৷ আমি তো যারা আমার কথা মেনে নেয় তাদের জন্য নিছক একজন সতর্ককারী ও সুসংবাদদাতা মাত্র৷  (সূরা আল-আ’রাফ ৮:১৮৮) 

সুতারং আল্লাহ নৈকট্য লভের প্রধান উপকরন হল ঈমান ও কুরআন সুন্নাহ ভিত্তিক নেক আমল। যদি মনে করে থাকি আত্মিয়তার সম্পর্ক তবে মারাত্ত্বক ভুল করবেন। একটু লক্ষ করুন, ইউসুফ আলাইহিস সালাম এর  পিতা ইয়াকুব আলাইহিস সালাম, ইয়াকুব আলাইহিস সালাম এর পিতা ইছহাক আলাইহিস সালাম, ইছহাক আলাইহিস সালাম এর পিতা ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম, ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম এর পিতা আজল। এই চার জন জলিল কদর নবী  একত্রে মিলে কি তাদের পূর্ব পুরুষ  ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম এর পিতা আজর কে জান্নাতে নিতে পারবেন? নিশ্চয়ই না। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর চাচা, আলীর (রাজি:) বাবা, ফাতিমার (রাজি:) শশুর, হাসান ও হোসেনের (রাজি:) দাদা হল “আবু তালিব”।

তারা সকলে মিলে কি আবু তালিবের জন্য জান্নাতের সুপারিশ করতে পারবেন? কঠিন প্রশ্ন, এবার একটু ভাবেন আপনার শয়েখ বা পীরের ক্ষমতা কত টুকু? অনুরুপভাবে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর কলিজার টুকরা কন্যাকে সম্বোধন করে বলেছেনঃ  হে ফাতিমা! আমার কাছে যত সম্পদ আছে তার থেকে যা ইচ্ছা হয় চেয়ে নাও, আমি আল্লাহর কাছে তোমার কোন কাজে আসবনা। (বুখারী ও মুসলিম)। 

তবে হ্যা, ঈমান এনে কুরআন সুন্নাহ মোতাবেক জীবন যাপন করলেই আল্লাহ সন্তষ্টি পাওয়া যাবে। এরপর চলার পথে ভুলত্রুটি হওয়া সাভাবিক ব্যপার। এই পাপগুলি আল্লাহর একান্ত ইচ্ছা মাপ করা বা না করা। এখানেই সুপারিশ দরকার।

২। আল্লাহতাআলাই হল শাফাআতের একমাত্র মালিকঃ

তখই নবী রাসুলগন, কুরআন, সাওম, নেক বান্দাসহ অন্যান্যদের সুপারিশ গ্রহন করা হবে, যাদের কথা সহিহ হাদিস সমুহে উল্লেখ আছে। আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ 

 قُلۡ هَلۡ نُنَبِّئُكُم بِٱلۡأَخۡسَرِينَ أَعۡمَـٰلاً (١٠٣) ٱلَّذِينَ ضَلَّ سَعۡيُہُمۡ فِى ٱلۡحَيَوٰةِ ٱلدُّنۡيَا وَهُمۡ يَحۡسَبُونَ أَنَّہُمۡ يُحۡسِنُونَ صُنۡعًا (١٠٤) أُوْلَـٰٓٮِٕكَ ٱلَّذِينَ كَفَرُواْ بِـَٔايَـٰتِ رَبِّهِمۡ وَلِقَآٮِٕهِۦ فَحَبِطَتۡ أَعۡمَـٰلُهُمۡ فَلَا نُقِيمُ لَهُمۡ يَوۡمَ ٱلۡقِيَـٰمَةِ وَزۡنً۬ا (١٠٥)

অর্থঃ বলুন, আমি কি তোমাদেরকে আমলের দিক থেকে সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্তদের সংবাদ দেব? (তারা হলো ঐ সব লোক) যাদের দুনিয়ার জীবনের সমস্ত প্রচেষ্টা পন্ড হয়ে গেছে, অথচ তারা মনে করত কত সুন্দর কাজই না তারা করছে, তারাই সে সব লোক যারা তাদের রবের আয়াতসমূহ ও তার সাথে সাক্ষাৎকে অস্বীকার করেছে, ফলে তাদের সমস্ত আমল বিনষ্ট হয়ে গেছে, সুতরাং কিয়ামতের দিন তাদের জন্য কোন ওজন স্থাপন করবোনা। (সূরা আল-কাহ্ফ: ১০৩-১০৫)

মহান আল্লাহতাআলাই হল শাফাআতের একমাত্র মালিক। তিনিই একচ্ছন্ন শাফাআতের অধিকারি। তিনি ছাড়া কঠিন হাসরের ময়দানে কেউ শাফাআত করতে পারবেন না। সর্বপ্রকার শাফাআতের চাবিকাঠি একমাত্র তাঁরই হাতে। কোন কারো সুপারিশ গ্রহণ করানোর ক্ষমতা তো দূরের কথা নিজে নিজেই আল্লাহর দরবারে সুপারিশকারী হিসেবে যাবে সে শক্তিও করো নেই।  আল্লাহ তাআলা বলেন,

قُل لِّلَّهِ ٱلشَّفَـٰعَةُ جَمِيعً۬ا‌ۖ لَّهُ ۥ مُلۡكُ ٱلسَّمَـٰوَٲتِ وَٱلۡأَرۡضِ‌ۖ ثُمَّ إِلَيۡهِ تُرۡجَعُونَ (٤٤) 

অর্থঃ বলো, সুপারিশ সম্পূর্ণরূপে আল্লাহর ইখতিয়ারাধীন৷  আসমান ও যমীনের বাদশাহীর মালিক তিনিই৷ তোমাদেরকে তারই দিকে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে৷ ( সূরা যুমার ৩৯:৪৪)।

আল্লাহ তাআলা আরও বলেন,

ٱللَّهُ ٱلَّذِى خَلَقَ ٱلسَّمَـٰوَٲتِ وَٱلۡأَرۡضَ وَمَا بَيۡنَهُمَا فِى سِتَّةِ أَيَّامٍ۬ ثُمَّ ٱسۡتَوَىٰ عَلَى ٱلۡعَرۡشِ‌ۖ مَا لَكُم مِّن دُونِهِۦ مِن وَلِىٍّ۬ وَلَا شَفِيعٍ‌ۚ أَفَلَا تَتَذَكَّرُونَ (٤)

অর্থ: আল্লাহই আকাশ মণ্ডলী ও পৃথিবী এবং এদের মাঝখানে যা কিছু আছে সব সৃষ্টি করেছেন ছয় দিনে এবং এরপর আরশে সমাসীন হয়েছেন ৷ তিনি ছাড়া তোমাদের কোন সাহায্যকারী নেই এবং নেই তার সামনে সুপারিশকারী, তারপরও কি তোমরা সচেতন হবে না। (সূরা সাজদাহ ৩২:৪)।

আখিরাতের সেই ভয়াবহ বিপদের মূহূর্ত মহান আল্লাহর অনুমতি ব্যতিত কেউ শাফাআত করতে পারবে না। তিনি যাকে ইচ্ছা সুপারিশের অনুমতি দেবেন। আবার ইচ্ছা করলে না ও দিতে পারেন। ইহা সম্পূর্ণ রূপে তার ইখাতিয়ার ভূক্ত। এক শ্রেণীর মুশরীকেরা চিন্তা করে থাকেন যে, আল্লাহর প্রিয় ব্যক্তিবর্গ, নবীগন রাসুলগন, ফেরেশস্তাগর বা অন্যান্য সত্তা আল্লাহর নিকট শাফাআত করে তাদের জান্নাত দিবেন বা আল্লাহর ওখানে তাদের বিরাট প্রতিপত্তি আছে।

তাই তারা আল্লাহর কাছ থেকে তারা যে কোন কার্যোদ্ধার করতে সক্ষম। তারা যে কথার ওপর অটল থাকে, তা তারা আদায় করেই ছাড়ে। এভাবেই শাফাআতের লোভে শির্কি কাজে জড়িয়ে পরে। অথচ শ্রেষ্ঠতম পয়গম্বর এবং কোন নিকটতম ফেরেশতাও এই পৃথিবী ও আকাশের মালিকের দরবারে বিনা অনুমতিতে একটি শব্দও উচ্চারণ করার সাহস রাখে না।

৩। শাফায়াতের শর্ত কতটি?

মহান আল্লাহ হলেন একমাত্র শাফায়াতের অনুমোদন দ্বাতা। তাই অনুমোদন ক্রমে নবী রাসুলগন, কুরআন, সাওম, নেক বান্দাসহ অন্যান্যদের সুপারিশ গ্রহন করা হবে। কিন্তু এই অনুমোদনের প্রথাম শর্ততো বুঝতে পারলাম যে, মহান আল্লাহ অনুমোদন লাগবে। অপর পক্ষে কুরআন সুন্নাহ দ্বারা একথা ষ্পষ্ট যে, শির্ক কাজ করে যে মুসরিক অবস্থায় মৃত্যু বরণ করেছে তার জন্য কোন সুপারিশ কাজে আসবে না, তাই সুপারিসের যোগ্য হতে হলে তাকে অবশ্যই ইমানদার হতে হবে। এই হিসাবের আলোকে বলা যায শাফায়াতে দুটি শর্ত আছে। যথাঃ

১। মহান আল্লাহ তাআলার অনুমতি।

২। ঈমানদার হতে হবে (তার প্রতি আল্লাহর সন্তুষ্টি থাকা)।

৩। শাফাআতের জন্য মহান আল্লাহ তাআলার অনুমতি প্রয়োজনঃ

মহান তাআলা বলেছেন,

مَا فِى ٱلسَّمَـٰوَٲتِ وَمَا فِى ٱلۡأَرۡضِ‌ۗ مَن ذَا ٱلَّذِى يَشۡفَعُ عِندَهُ ۥۤ إِلَّا بِإِذۡنِهِۦ‌ۚ

অর্থঃ পৃথিবী ও আকাশে যা কিছু আছে সবই তার৷  কে আছে তাঁর অনুমতি ছাড়া তাঁর কাছে সুপারিশ করবে? (সূরা বাক্বারা ২:২৫৫)।

মহান তাআলা বলেছেন,

إِنَّ رَبَّكُمُ ٱللَّهُ ٱلَّذِى خَلَقَ ٱلسَّمَـٰوَٲتِ وَٱلۡأَرۡضَ فِى سِتَّةِ أَيَّامٍ۬ ثُمَّ ٱسۡتَوَىٰ عَلَى ٱلۡعَرۡشِ‌ۖ يُدَبِّرُ ٱلۡأَمۡرَ‌ۖ مَا مِن شَفِيعٍ إِلَّا مِنۢ بَعۡدِ إِذۡنِهِۦ‌ۚ ذَٲلِڪُمُ ٱللَّهُ رَبُّڪُمۡ فَٱعۡبُدُوهُ‌ۚ أَفَلَا تَذَكَّرُونَ (٣)

অর্থঃ কোন শাফায়াতকারী (সুপারিশকারী ) এমন নেই, যে তার অনুমতি ছাড়া শাফায়াত করতে পারে৷ এ আল্লাহই হচ্ছেন তোমাদের রব৷ কাজেই তোমরা তারই ইবাদত করো৷ এরপরও কি তোমাদের চৈতন্য হবে না। (ইউনুস ১০:১০৩)।

এতে স্পষ্ট যে, সুপারিশকারীকে অবশ্যই সুপারিশের অনুমতি প্রাপ্ত হতে হবে। অর্থাৎ বিনা অনুমতিতে সুপারিশ করার কেউ নেই। সুপারিশ স্বেচ্ছামূলক নয়, বরং তা হবে অনুমতি ক্রমে।

আখিরাতে কেউ যখন শাফাআত করার সাহস করতে পারবে না। তখন আমাদের প্রিয় বিশ্বনবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামই প্রথম শাফাআতের অনুমতি পাবেন বলে আশা করা যায়। অতপর, আমাদের নবীজির সাথে অন্যান্যরা শাফায়েত করবেন। যেমনঃ নবীগণ, ফেরেশতাগণ, সিদ্দীকগণ, শহীদগণ, নেককার বান্দাগণ সকলেই শাফাআত করবেন, অবশ্য আল্লাহর অনুমতিক্রমে।

৫। শাফাআতের জন্য ঈমানদার (আল্লাহর সন্ত্বষ্টি) হতে হবেঃ

নবীগণ, ফেরেশতাগণ, সিদ্দীকগণ, শহীদগণ, নেককার বান্দাগণ সকলেই শাফাআত করবেন কিন্তু তাদের শাফাআত প্রাপ্তির প্রধান উপকরন হল ঈমান ও কুরআন সুন্নাহ ভিত্তিক নেক আমল যা করলে তিনি সন্তুষ্টি থাকবেন। যদি মনে করে থাকি আত্মিয়তার সম্পর্ক তবে মারাত্ত্বক ভুল করবেন। মনে রাখবেন শাফায়াত প্রাপ্তির জন্য শর্থ হল ঈমান। আল্লাহর নিকট অপ্রিয় (মুসরিক) এমন কারো জন্য কোন সুপারিশ চলবে না। কোরআনে বর্ণিত আছে, মহা প্লাবনের সময় আল্লাহর প্রেরিত নবী নূহ আলাইহিস সালাম তার ছেলে কেনানকে আযাব হতে রক্ষা করার ব্যাপারে সুপারিশ করে ছিলেন আল্লাহ তা গ্রহণ করেননি। পিতা আজরের জন্যে ইবরাহীম আলাইহিস সালামের ক্ষমা করে দেয়ার সুপারিশ গ্রহণ করেননি।

এমনকি মুনাফিকদের ব্যাপারে নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আল্লাহ তাআলার বলেছেন।

 ٱسۡتَغۡفِرۡ لَهُمۡ أَوۡ لَا تَسۡتَغۡفِرۡ لَهُمۡ إِن تَسۡتَغۡفِرۡ لَهُمۡ سَبۡعِينَ مَرَّةً۬ فَلَن يَغۡفِرَ ٱللَّهُ لَهُمۡ‌ۚ ذَٲلِكَ بِأَنَّہُمۡ ڪَفَرُواْ بِٱللَّهِ وَرَسُولِهِۦ‌ۗ وَٱللَّهُ لَا يَہۡدِى ٱلۡقَوۡمَ ٱلۡفَـٰسِقِينَ (٨٠)

অর্থঃ হে নবী! তুমি তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা কর, অথবা তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা না কর। যদি তুমি তাদের জন্য সত্তর বারও ক্ষমা প্রার্থনা কর তথাপিও আল্লাহ তাদেরকে কখনো ক্ষমা করবেন না। (সূরা তাওবা ৯:৮০)।

আল্লাহ তাআলা বলেছেন,

يَعۡلَمُ مَا بَيۡنَ أَيۡدِيہِمۡ وَمَا خَلۡفَهُمۡ وَلَا يَشۡفَعُونَ إِلَّا لِمَنِ ٱرۡتَضَىٰ وَهُم مِّنۡ خَشۡيَتِهِۦ مُشۡفِقُونَ (٢٨)

অর্থঃ যাকিছু তাদের সামনে আছে এবং যাকিছু আছে তাদের অগোচরে সবই তিনি জানেন৷ যাদের পক্ষে সুপারিশ শুনতে আল্লাহ সম্মত, তাদের পক্ষে ছাড়া আর কারো সুপারিশ তারা করে না। এবং তারা তার ভয়ে ভীত৷ (সূরা আম্বিয়া ২১:২৮)।

এ জন্যই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বীয় আদরের কন্যা কলিজার টুকরা ফাতিমা রাদিয়াল্লাহু আনহাকে বলেছেন,  “হে মুহাম্মদের কন্যা ফাতিমা, আমার সম্পদ থেকে যা খুশী চেয়ে নাও। কিন্তু আল্লাহর কাছে (জবাবদিহি করার ব্যাপারে) তোমার কোন উপকার করার ক্ষমতা আমার নেই”। (বুখারী, মুসলিম)

এখানে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কর্তৃক নিজ মেয়েকে মুহাম্মদের মেয়ে বলে সম্বোধন করাটা সবিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। এতে বুঝানো হয়েছে যে, আল্লাহর  কাছে কারো গ্রহণ যোগ্যতা তার পিতৃ বা বংশ পরিচয়ের নিক্তিতে হবে না, হবে নিজ নিজ ঈমান, আমলের মূল্য  ও মানের ভিত্তিতে।

এতে প্রতীয়মান হচ্ছে যে, সুপারিশ তারাই পাবেন যারা আল্লাহর প্রিয়জন হবেন। বস্তুতপক্ষে যখন সমস্ত শাফাআত একমাত্র আল্লাহরই জন্য সংরক্ষিত এবং তা আল্লাহর অনুমতি সাপেক্ষ। আর নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বা অন্য কেউ আল্লাহর অনুমতি ব্যতীত কারো জন্য শাফাআত করতে সক্ষম হবেন না। আল্লাহর অনুমতি একমাত্র একনিষ্ঠ তাওহীদবাদীদের জন্যই নির্দিষ্ট।

আখিরাতে মহান আল্লাহর অনুমতিক্রমে যারা শাফাআত করবেন তারা হচ্ছেন, নবীগণ, ফিরিশতাগন, শহীদগণ, আলেম ওলামাগণ, হাফেজে কোরআন, নাবালগ সন্তান, সাওম এবং কুরআন। তাদের শাফাআত কোরআন-হাদীসের অকাট্য প্রমাণাদি দ্বারা প্রমানিত। তাদের মধ্যে শাফাআতকারীদের সর্দার হলেন বিশ্বনবী

মুহাম্মদ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ।

 যেমনঃ তিনি বলেছেনঃ আমিই প্রথম সুপারিশকারী এবং আমার শাফাআতই প্রথম গ্রহণ করা হবে। (বুখারী, মুসলিম)

রাসুল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেছেন,  তিন শ্রেণীর লোক কিয়ামতের দিন সুপারিশ করবেন, নবী-রাসূরগণ, আলেম-ওলামা ও শহীদগণ (ইবনু মাজাহ, বাইহাকী ও বাজ্জার)

রাসুল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেছেন, শহীদ তার পরিবারের সত্তর জনের জন্য সুপারিশ করবে(আবু দাউদ)

রাসুল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেছেন, তোমরা কোরআন পাঠ কর। কেননা এ কোরআন তার পাঠকারীর জন্য কিয়ামতের দিন সুপারিশকারী হয়ে আবির্ভূত হবে। (মুসলিম)

কিয়ামত দিবসে অনুষ্ঠিত শাফাআত থেকে বঞ্চিত হবে যারা প্রকাশ্য শিরক ও কুফরীর গুনাহে লিপ্ত ছিল এবং এরই উপর মৃত্যুবরণ করেছে। তাদের সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন,

إِنَّ ٱلَّذِينَ كَفَرُواْ مِنۡ أَهۡلِ ٱلۡكِتَـٰبِ وَٱلۡمُشۡرِكِينَ فِى نَارِ جَهَنَّمَ خَـٰلِدِينَ فِيہَآ

অর্থঃ আহলে কিতাবের মধ্যে যারা কাফের এবং যারা মুশরিক, তারা জাহান্নামের আগুনে স্থায়ী ভাবে থাকবে। তারাই সৃষ্টির অধম(সূরা বায়্যিনাহ : ৬)

মহান আল্লাহ বলেন,

 أَفَمَنۡ حَقَّ عَلَيۡهِ كَلِمَةُ ٱلۡعَذَابِ أَفَأَنتَ تُنقِذُ مَن فِى ٱلنَّارِ (١٩)

অর্থঃ হে নবী, সে ব্যক্তিকে কে বাঁচাতে পারে যার উপর আযাবের ফয়সালা হয়ে গেছ, তুমি কি তাকে বাঁচাতে পার যে জাহান্নামে রয়েছে? (সূরা যুমার ৩৯:১৯)

এতে বুঝা গেল, এ সব জাহান্নামীদের জন্য কোন শাফাআতকারী নেই। নেই কোন রক্ষাকারী। তাদের ব্যাপারে কোন শাফাআত গ্রহণও করা হবে না। কারণ, তারা ঈমানশূন্য। অনেক পীরকে বলতে শুনা যায় অখেরাতে কিয়ামতের কঠিন ময়দানে পীর সাহের তার মুরিদ নাকি ফেলে জন্নাতে যাবে না। সূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বয়ং নিজের কলিজার টুকরার জিম্মাদারী নিতে পারলেন না। অথচ পীর সাহেব মুরিদদের জিম্মাদারী নিচ্ছেন। তবে মনে রাখতে হবে অলীদের শাফায়াত সত্য কিন্তু নিশ্চত নয় বা ইচ্ছাধিন।  কারন ইহাতে আল্লাহকে বাধ্য করা হয় যা চুড়ান্তভাবে অন্যায়। আর যদি কেউ গাইরুল্লাহ তথা আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো কাছে শাফাআতের দু’আ বা প্রার্থনা করে তবে দাও শির্ক হবে। কারণ, দু’আ ইবাদত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “দু’আই ইবাদত”। (তিরমিযী)। আর ইবাদত একমাত্র আল্লাহর জন্যই নির্দিষ্ট। ইবাদতে তাঁর আর কোন শরীক নেই। আর শির্ক হচ্ছে, গাইরুল্লাহকে ইবাদতে অংশীদার করার নাম।

 সংকলনেঃ মোহাম্মাদ ইস্রাফিল হোসাইন। (বিএ ইন এ্যারাবিক লিটারেচার, ইসলামিক হিস্টরী এন্ড ইসলামিক স্টাডিস)

Leave a comment