প্রথম কিন্তি  : অতিরিক্ত ঊনিশটি বিদআতি আকিদা

প্রথম কিন্তি  : অতিরিক্ত ঊনিশটি বিদআতি আকিদা

সংকলনেঃ মোহাম্মাদ ইস্রাফিল হোসাইন

ইসলামি শরীয়তের প্রথম ও প্রধান বিষয় হল ইমান। আর খাটি ইমান হল, সঠিক আকিদা প্রষণ করা। কিন্তু খুবই দুঃখজনক বিষয় হল, আমরা সকলে মুসলিম দাবি করলেও শুধু আমাদের আকিদার কারনে আমরা মুসলিম নই। ইসলাম বহির্ভুত এই নতুত আকিদাকে বিদআতি আকিদা হিসাবে চিহিৃত করব। কুরআন সুন্নাহর বাহিরে যে আকিদা নতুন করে আবিস্কার হয়েছে তাই বিদআতি আকিদা। কাজেই যে কোন ভুল আকিদা যা কুরআন সুন্নাহের বাহিরে গিয়ে নতুত করে তৈরি হয়েছে তাই বিদআতি আকিদা। যার অর্থ হলো আকিদার ভূলভ্রান্তি মানেই বিদআত আকিদা। যৌক্তিক কোন কাজ সহজে যে কেউ মেনে নেন। আর বিজ্ঞান দ্বারা প্রমানিত কোন জ্ঞানতো সাথে সাথে মেনে নেয়। কিন্তু ইসলামি আকিদার মুল হল অদৃশ্যে বিশ্বাস এখানে জাগতিক কোন বিষয় থাকলে যুক্তি ও বিজ্ঞান দ্বারা পরীক্ষা করা যেত কিন্ত অদৃশ্যে বিশ্বাস করতে হলে অদৃশ্য থেকে প্রাপ্ত অহীর উপর নির্ভর করতে হবে। অহী ভিন্ন যে কোন উৎস থেকে আকিদা গ্রহন করলে শুদ্ধ ও অশুদ্ধ যে কোনটাই হতে পারে। ইসলামি আকিদা বিশ্বাস সব সময় আল্লাহকে কেন্দ্র অদৃশ্যের উপর নির্ভর করে থাকে। তাই ইসলামি আকিদার মুল উৎস হল কুরআন ও সহীহ সুন্নাহ ভিত্ত্বিক। এই কুরআন সুন্নাহর বাহিরে যখনি নতুন করে আকিদা রচনা করা হবে তাই বিদআতি আকিদা।

যেমনঃ অদৃশ্যের একটি ব্যাপার হল কবরের আজাব। কবরে আজাব হবে এটাই সত্য। কিন্তু কাউকে যুক্তি দিয়ে কি কবরের আজাব বুঝাতে বা দেখাতে পাবর। কিংবা বিজ্ঞানের আবিস্কার ক্যামেরা দ্বারা কি এই আজাব দেখাতে পারব। অপর পক্ষে আমলের ব্যাপারটা কিন্তু এমন নয়। এখানে কুরআন হাদিসের বাহিরে ইজমা কিয়াজের দরকার হয়। নতুন কোন সমস্যা আসলে কিয়াস করে মাসায়েল দিতে হয়। যেমনঃ মোবাইল, টিভি, ইন্টারনেট, শেয়ার বাজার ইত্যাদি ইসলামের প্রথমিক যুগে ছিলনা। তাই কুরআন সুন্নাহর ভিত্তিতে কিয়াস করে সমাধান দিতে হয়। কজেই একটি কথা মনে রাখতে হবেঃ “আকিদা ও ফিকহের মধ্যে মৌলিক পার্থক্য হলো, ফিকহের ক্ষেত্রে ইসতিহাদ, কিয়াস, যুক্তি বা আকলি দলিলের প্রয়োজন হতে পারে কিন্তু আকিদার ক্ষেত্রে ইসতিহাদ, কিয়াস, যুক্তি বা আকলি দলিলের প্রয়োজন নেই”

এক কথায় বলে গেলে কুরআন হাদিসের ষ্পষ্ট কোন রেফারেন্স ছাড়া আকিদা গ্রহণীয় নয়। যদি কেউ যুক্তি দিয়ে আকিদা বুঝাতে আসে তাকে সালাম জানাতে হবে।

কুনআন সুন্নাহকে উৎস হিসাবে না নিলে আকিদার ভিন্নতা তো থাকবেই। আর এই ভিন্ন আকিদা আসবে সম্পূর্ণ নতুন করে যা বিদআত বলা হয়। কুরআন হাদিসে ষ্পষ্টভাবে উল্লেখ নেই, এমন ফিকহি মাসলা মাসায়েলের ক্ষেতে ইখতিলাফ বা মতভেদ করা জায়েয হলেও, আকিদার ক্ষেত্রে কোন প্রকার মতভেদ জায়েয নেই। কারন আকিদার ছয়টি বিষয় (আল্লাহ্‌র প্রতি বিশ্বাস, ফিরিশতাগণের প্রতি বিশ্বাস, কিতার সমুহের প্রতি বিশ্বাস, রাসূলগনের প্রতি বিশ্বাস শেষ দিনের প্রতি বিশ্বাস, তাক্বদীরের  ভালো মন্দেন প্রতি বিশ্বাস) যার সবগুলিই গায়েবের সাথে সম্পৃক্ত এবং গায়েব জানার জন্য অহীর প্রয়োজন। যতি কেউ তার আকিদাকে অহী ভিত্তিক না করে, যুক্তি ভিত্তিক করে, তাহলে তার বিভ্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় শতভাগ। অহী ভিত্তিক না হয়ে আকিদা যুক্তি ভিত্তিক হলেই বিদআতি আকিদা হবে।

আকিদার সম্পর্কে আলোচনার আগে একটা কথাকে মনে খোদাই করে লিখে রাখেন, “আকিদা গাইবের প্রতি বিশ্বাস, এই বিশ্বাস হবে অহী নির্ভর, কোন প্রকার যু্‌ক্তিতর্কের অবতারণা করা যাবেনা”। কাজেই আমি যে ভ্রান্ত আকিদাগুলি তুলে ধরব তার বিপক্ষে আন্ততো কুরআনের একটি আয়াত অথবা একটি সহিহ হাদিস উপস্থাপণ করব। এই সহিহ আকিদার বিপরীতে যে সকল বিদআতি আকিদা সবার সামনে তুলে ধরব, সেই সকল আকিদার কুরআন সুন্নাহতে কোন প্রমান পাওয়া যাবে না। কুরআন সুন্নাহ নাই বলেই আকিদার নাম দিলাম বিদআতি আকিদা।

মুসলিম সমাজে কয়েকটি বিদআতি আকিদা হলঃ

 

১। বিদআতীদের আকিদা হলোঃ মহান আল্লার মুমিদের কলবে আল্লাহ থাকেন।

সঠিক আকিদা হলোঃ মুমিন জিকিরের মাধ্যমে তার অন্তরে মহান আল্লাহকে স্মরণ করে থাকে।

সঠিক আকিদার দলীলঃ 

মুমিনের কলবে আল্লাহ থাকের এই কথাটি কোন হাদিস নয়। কোন কোন সুফিদের কিতাবে কথাটি লেখা আছে। যেমন চরমোনাই এর পীর মাওলানা ইসহাক সাহেব তার লিখিত কিতার “ভেদে মারেফত আ ইয়াদে খোদা” এর ২১ পৃষ্ঠায় লিখেন। মাওলানা রুমি সাহেব ফরমাইয়াছেন, আমি জমিন ও আশমানে সামান হইনা, এক মাত্র মোমেনের কলবে সামান হই। তার অর্থ হল এ বাক্যটি হাদিস নয়, মাওলানা রুমির কথা। এ কথাটি ভিত্তিহীন, মগজপ্রসূত ও কল্পিত। এ কথাটির সপক্ষে একটি আয়াত বা সহীহ হাদীসও নেই। তবে ইন্টারনেটে এক বিদাতিকে দেখলাম কথাটিকে হাদিসের রুপ দিতে হাজার বাহানা করেছে। তার কথা যদি সত্য হয়, তবে এ কথাটি জাল হাদিস বলা যেতে পারে। আর জাল হাদিস তো কোন হাদিস নয়, যা সকলে স্বীকার করে।

তারা জাল হাদিসটি এভাবে উল্লেখ করে থাকে, মুমিনের কলব আল্লাহ আরশ। গবেষণা যানা যায় এই জাল হাদিসটি (আল মাওযূ‘আত লিস্ সাগানী বা সাগানী প্রণীত জাল হাদীসের সমাহার/ভান্ডার- ১/৫০, তাযকিরাতুল মাউযূ‘আত লিল-মাকদিসী ১/৫০ গ্রন্থে  জাল হিসাবে পাওয়া যায়। মনে রাখতে হবে, হাদিস গ্রহনে সাবধান অবলম্বন করতে হবে। শুধু আরবী হলেই কুরআন-হাদীস মনে করা যাবেনা তার জন্য রেফারেন্স রাখবে। আল লোকতো আর কখনও রেফারেন্স খুজে পাবেনা তাই কষ্ট হলেও খুজে খুজে সঠিক আলেমের নিকট জিজ্ঞাসা করে নিতে হবে। কারন, দীনের ব্যাপারে কুরআন-সুন্নাহ ব্যতীত বুজুর্গের কথা মূল্যহীন-অচল। আর তাদের দাবি কোন যুক্তিতে মানা যায়না, কারন মহান আল্লাহ ও তাঁর মহান ‘আরশের বিশালতা সম্পর্কে তাদের কোন ধারণা নেই।

বর্তমান পৃথিবীতে দেড়শত কোটি মুমিনের দেড়শত কোটি কলব আছে। প্রতি কলবে আল্লাহ থাকলে কিভাবে? চরমোনাই এর পীর মাওলানা ইসহাক সাহেব তার লিখিত কিতার “ভেদে মারেফত বা ইয়াদে খোদা” এর ২১ পৃষ্ঠায় লিখেন, আমার বিবি একদিন আমাকে জিজ্ঞাসা করেন যে এক আল্লাহ বিভিন্ন মুহুর্তে কেমনে আশেক মোমেন বান্দার কলবে স্থান লাভ করে? কেহবা মক্কা শরীফ বসে আল্লাহকে স্বরণ করিতেছে। তিনি খেয়াল রাখেন। কেহবা বরিশাল বসে আল্লাহকে স্বরণ করিতেছে। তিনি খেয়াল রাখেন। ইহা কি করিয়া সম্বব হতে পারে আমার পূর্ণ বুঝে আসে না। আমি তাকে বলিলাম, যদি কেউ এক হাজার ক্ষুদ্র আয়না বিভিন্ন স্থানে রাখেন, তবে দ্বিপ্রহরের সময় প্রতিটি আয়নায দুনিয়ার চেয়ে লক্ষগুন বড় সূর্যকে আয়নার ভীতরে দেখা যাবে কিনা? বলিলেন হ্যা, দেখা যাইবে। আমি বলিলাম তবে আল্লাহ কেন, একই সময় বিভিন্ন মুমিনের কলবে স্থান নিতে পারিবেন না।

আসলে মুমিনের কলবকে আয়নার সাথে তুলনা করা ঠিক নয় কারন আয়নায় তো আর সূর্য ছিলনা ছিল তার প্রতিচ্ছবি। সূর্যের আসল স্থান আয়না থেকে কোটি কোটি মাইল দুরে। তবে মনে রাখতে হবে মুমিনের কলবে স্বত্বাগদভাবে না থাকলেও তার স্বরণ থাকা একান্ত বাঞ্চনীয়। একজন সত্যিকারের মুমিনের ঈমানেন দাবি হল। তার অন্তরে আল্লাহ স্বত্বায় থাকবে না। তার অন্তরে থাকবে ঈমানের প্রতি ভালবাসা আর কুফর, পাপাচার ও নাফরমানীর প্রতি ঘৃণা। আর এথাই মহান আল্লাহ কুরআনে কারীমে বলেছেন। তিনি এরশাদ করেন,

وَلَكِنَّ اللَّهَ حَبَّبَ إِلَيْكُمُ الْإِيمَانَ وَزَيَّنَهُ فِي قُلُوبِكُمْ وَكَرَّهَ إِلَيْكُمُ الْكُفْرَ وَالْفُسُوقَ وَالْعِصْيَانَ أُوْلَئِكَ هُمُ الرَّاشِدُونَ

অর্থঃ কিন্তু আল্লাহ তোমাদের অন্তরে ঈমানের মহব্বত সৃষ্টি করে দিয়েছেন এবং তা হৃদয়গ্রাহী করে দিয়েছেন। পক্ষান্তরে কুফর, পাপাচার ও নাফরমানীর প্রতি ঘৃণা সৃষ্টি করে দিয়েছেন। তারাই সৎপথ অবলম্বনকারী। (সুরা হুজুরাত ৪৯:৭)।

কাজেই মুমিদের কলবে আল্লাহ থাকেন বা মুমিনের কলব আল্লাহর, আরশ এসকল কথা থেকে দুরে

থাকতে হবে। কারন এনে মহান আল্লাহর মর্জাদা হানি হয়। আমরা সব সময় বলল, মুমিদের কলবে আল্লাহ স্মরন থাকে।

বিদআতী আকদা হলোঃ পীর বা শাইখ তাদের ভাল মন্দ করা ক্ষমতা রাখে বলে বিশ্বাস করে।

সঠিক আকিদা হলোঃ ভাল মন্দ করা ক্ষমতা এত মাত্র অধিকারী মহান আল্লহ

সঠিক আদিদার দলীলঃ

বিদআতী সুফিদের বিশ্বাস নবী, রাসূল, পীর, বুজুর্গ, অলী, আওলীয়া ইত্যাদি ব্যাক্তিবর্গ মহান আল্লাহর মত মানুষের ভাল মন্দ করার ক্ষমতা রাখেন। তাদের মতে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এমন ক্ষমতার অধিকারী, তিনি সারা দুনিয়া পরিচালনা করে থাকেন। সুফিদের একজন বড় নেতা আমজাদ আলী ব্রেলভী বলেছেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর সরাসরি নায়েব (প্রতিনিধী) সমস্ত বিশ্বজগত তার পরিচলনার অধিন। তিনি যা খুশী করতে পারেন এবং যাকে খুশী দান করতে পারেন। যাকে খুশী নিঃস্বও করতে পারেন। তাঁর রাজত্বে হস্তক্ষেপ করা দুনিয়ার কারু পক্ষে সম্ভব নয়। যে তাঁকে অধিপতি হিসাবে মনে করে না, সে সুন্নাত অনুসরণের স্বাদ থেকে বঞ্চিত হয়েছে’।

এখনে আমি কুরআনের একটা আয়াত তুলে ধরছি যেখানে আল্লাহ তাআলা স্পষ্ঠ ভাষায় বলছেন মুহম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন অবস্থায়ই নিজের জন্য লাভ -ক্ষতির কোন ইখতিয়ার রাখে না। আল্লাহ তাআলা বলেনঃ

 قُل لَّآ أَمۡلِكُ لِنَفۡسِى نَفۡعً۬ا وَلَا ضَرًّا إِلَّا مَا شَآءَ ٱللَّهُ‌ۚ وَلَوۡ كُنتُ أَعۡلَمُ ٱلۡغَيۡبَ لَٱسۡتَڪۡثَرۡتُ مِنَ ٱلۡخَيۡرِ وَمَا مَسَّنِىَ ٱلسُّوٓءُ‌ۚ إِنۡ أَنَا۟ إِلَّا نَذِيرٌ۬ وَبَشِيرٌ۬ لِّقَوۡمٍ۬ يُؤۡمِنُونَ (١٨٨)

অর্থঃ হে মুহাম্মাদ! তাদেরকে বলো, নিজের জন্য লাভ ক্ষতির কোন ইখতিয়ার আমার নেই৷ একমাত্র আল্লাহই যা কিছু চান তাই হয়৷ আর যদি আমি গায়েবের খবর জানতাম, তাহলে নিজের জন্যে অনেক ফায়দা হাসিল করতে পারতাম এবং কখনো আমার কোন ক্ষতি হতো না৷ আমিতো নিছক একজন সতর্ককারী ও সুসংবাদদাতা আমি গায়েবের খবর জানতাম, তাহলে নিজের জন্যে অনেক ফায়দা হাসিল করতে পারতাম এবং কখনো আমার কোন ক্ষতি হতো না৷ এমন জাতীর জন্য, যারা বিশ্বাস করে।

(সুরা  আরাফ ৭: ১৮৮)

মন্তব্যঃ এ আয়াতে আল্লাহ তাআলা তার রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে পরিস্কার ভাবে ঘোষনা দিতে বললেন যে, মুহাম্মদ (স:) নিজের কোন লাভ -ক্ষতির করতে পারে না। সেখানে আন্য নবী, রাসুল, অলী, আওলীয়া, পীর, বুজুর্গ আল্লাহতায়ালার মত মানুষের ভাল মন্দ করার ক্ষমতা রাখে এমন আকিদা হল কুরআন বিরোধী।

৩। বিদআত বিশ্বাস হলোঃ পৃথিবী পরিচালনার জনয গাউস, কুতুব, আবদাল, নকিব ইত্যাদিতে আছে।

সঠিক আকিদা হলোঃ সমগ্র দুনিয়া পরিচালনার একক ক্ষমতা মহান আল্লাহ। এই ব্যাপারে তিনি কোন সৃষ্টির মুখাপেক্ষি নন।

সঠিক আকিদার দলীলঃ

বিদআতীদের মতে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুনিয়া পরিচালনার ক্ষমতা রাখেন এবং তার সাথে ওলী-আওলিয়ারাও দুনিয়া পরিচালনার কাজে সম্পৃক্ত রয়েছেন। আহমাদ রেযা খান লিখেছেন, ‘হে গাওছ (আব্দুল কাদের জিলানী)! ‘কুন’-বলার ক্ষমতা লাভ করেছেন মুহাম্মাদ (ছাঃ) তাঁর প্রভুর কাছ থেকে, আর আপনি লাভ করেছেন মুহাম্মাদ (ছাঃ) থেকে। আপনার কাছ থেকে যাই প্রকাশিত হয়েছে তাই দুনিয়া পরিচালনায় আপনার ক্ষমতা প্রমাণ করেছে। পর্দার আড়াল থেকে আপনিই আসল কারিগর।’

 বিদআতীদের বিশ্বাস, আল্লাহ যেহেতু একা, সেহেতু একাই তাঁর পক্ষে পুরো বিশ্বজগত পরিচালনা করা সম্ভব নয়। ফলে তিনি তাঁর বিশ্ব পরিচালনার সুবিধার্থে আরশে মু‘আল্লায় একটি পার্লামেন্ট কায়েম করেছেন। সেই পার্লামেন্টের সদস্য সংখ্যা মোট ৪৪১ জন। আল্লাহ তাদের স্ব স্ব কাজ বুঝিয়ে দিয়েছেন।

তন্মধ্যে নাজীব ৩১৯ জন, নাক্বীব ৭০ জন, আবদাল ৪০ জন, আওতাদ ৭ জন, কুতুব ৫ জন এবং একজন হ’লেন গাওছুল আযম, যিনি মক্কায় থাকেন। উম্মতের মধ্যে আবদাল ৪০ জন আল্লাহ তা‘আলার মধ্যস্থতায় পৃথিবীবাসীর বিপদাপদ দূরীভূত করে থাকেন। তারা অলীগণের দ্বারা সৃষ্টজীবের হায়াত, রুযী, বৃষ্টি, বৃক্ষ জন্মানো ও মুছীবত বিদূরণের কাজ সম্পাদন করেন। তাদের এই আকিদা কুফরি আকদিা কারন বিশ্বজগত পরিচালনার জন্য আল্লাহর কারো নিকট থেকে সাহায্য নিতে হয় না। তিনি আরও বলেন,

يُدَبِّرُ الْأَمْرَ مِنَ السَّمَاءِ إِلَى الْأَرْضِ

অর্থঃ  তিনি আকাশ থেকে পৃথিবী পর্যন্ত সমস্ত কর্ম পরিচালনা করেন। (সূরা সাজদা: ৫)।

মহান আল্লাহ আকাশ থেকে পৃথিবী পর্যন্ত সমস্ত কর্ম পরিচালনা করেন। তিনিই সকলের একমাত্র ত্রান কর্তা। অথচ ব্রেলভীগন আব্দুল কাদের জিলানী (রঃ)কে মহা ত্রাণকর্তা হিসেবে বিশ্বাস করেন। তার নাম রেখেছেন গাউছুল আযম। আল-গাউছুল আল-আযাম অর্থ হচ্ছে মহান ত্রাণকর্তা। তাদের বিভিন্ন আলেমদরে মুখে আব্দুল কাদের জিলানী এমন সব আজগুবি গল্প শুনা যায় মনে হয় তিনি আসলে ত্রানকর্তা। যেমন অনেকে বিশ্বাস করে, বড় পীর আব্দুল কাদের জিলানী নিজ হাতে লাওহে মাহফুযে নতুন করে বৃদ্ধি করতে বা তা থেকে কিছু কমানোরও অধিকার রাখেন। (নাউযুবিল্লাহ)

অথচ রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগে মক্কার মুশরিকরাও বিশ্বাস করত দুনিয়া পরিচালনার কাজে আল্লাহ তায়ালার ছাড়া কেউ সম্পৃক্ত নেই।

আল্লাহ রব্বুল আলামিন বলেন:

قُلْ مَن يَرْزُقُكُم مِّنَ السَّمَاءِ وَالأَرْضِ أَمَّن يَمْلِكُ السَّمْعَ والأَبْصَارَ وَمَن يُخْرِجُ الْحَيَّ مِنَ الْمَيِّتِ وَيُخْرِجُ الْمَيَّتَ مِنَ الْحَيِّ وَمَن يُدَبِّرُ الأَمْرَ فَسَيَقُولُونَ اللّهُ فَقُلْ أَفَلاَ تَتَّقُونَ

অর্থঃ তাদেরকে জিজ্ঞেস করো, “কে তোমাদের আকাশ ও পৃথিবী থেকে রিযিক দেয়? এই শুনার ও দেখার শক্তি কার কর্তৃত্বে আছে? কে প্রাণহীন থেকে সজীবকে এবং সজীব থেকে প্রাণহীনকে বের করে? কে চালাচ্ছে এই বিশ্ব ব্যবস্থাপনা”?তারা নিশ্চয়ই বলবে, আল্লাহ৷ বলো, তবুও কি তোমরা বিরোধী পথে চলার ব্যাপারে সতর্ক হচ্ছোনা? (সুরা ইউনুস ৩১)।

সুফিদের বিশ্বাস মতে, বিশ্বজগত পরিচালনা জন্য আল্লাহ তা‘আলা নাজীব, নাক্বীব, আবদাল, আওতাদ, কুতুব ও গাওছুলদের মধ্যস্থতায় পৃথিবীবাসীর বিপদাপদ দূরীভূত করে থাকেন। এবং তারা অলীগণের দ্বারা সৃষ্টজীবের হায়াত, রুযী, বৃষ্টি, বৃক্ষ জন্মানো ও মুছীবত বিদূরণের কাজ সম্পাদন করেন। অথচ তাদের কল্পিত বিশ্বজগত পরিচালনা কারিগন, বিপদ দুরকারিগন নিজেরাই নিজেদের রবের নৈকট্যলাভের উপায় খুঁজে বেড়াচ্ছে। যেমনঃ আল্লাহ তাআলা বলেন:

أُوْلَـٰٓٮِٕكَ ٱلَّذِينَ يَدۡعُونَ يَبۡتَغُونَ إِلَىٰ رَبِّهِمُ ٱلۡوَسِيلَةَ أَيُّہُمۡ أَقۡرَبُ وَيَرۡجُونَ رَحۡمَتَهُ ۥ وَيَخَافُونَ عَذَابَهُ ۥۤ‌ۚ إِنَّ عَذَابَ رَبِّكَ كَانَ مَحۡذُورً۬ا (٥٧)

অর্থঃ এরা যাদেরকে ডাকে তারা তো নিজেরাই নিজেদের রবের নৈকট্যলাভের উপায় খুঁজে বেড়াচ্ছে যে, কে তাঁর নিকটতর হয়ে যাবে এবং এরা তাঁর রহমতের প্রত্যাশী এবং তাঁর শাস্তির ভয়ে ভীত। আসলে তোমার রবের শাস্তি ভয় করার মতো৷ (সুরা বনী ইসরাঈল ১৭:৫৭)।

কুরআনের একটি আয়াতও এর প্রমাণে পেশ করা সূফীদের সাধ্যাতীত। রসুল কোন গোপন ইলম কোন সাহাবীকে শিক্ষা দিয়ে যাননি।  আল্লাহ তাআলা বলেন,

يَا أَيُّهَا الرَّسُولُ بَلِّغْ مَا أُنزِلَ إِلَيْكَ مِن رَّبِّكَ وَإِن لَّمْ تَفْعَلْ فَمَا بَلَّغْتَ رِسَالَتَهُ وَاللّهُ يَعْصِمُكَ مِنَ النَّاسِ إِنَّ اللّهَ لاَ يَهْدِي الْقَوْمَ الْكَافِرِينَ

অর্থঃ হে রসূল, পৌছে দিন আপনার প্রতিপালকের পক্ষ থেকে আপনার প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে। আর যদি আপনি এরূপ না করেন, তবে আপনি তাঁর পয়গাম কিছুই পৌছালেন না। আল্লাহ আপনাকে মানুষের কাছ থেকে রক্ষা করবেন। নিশ্চয় আল্লাহ কাফেরদেরকে পথ প্রদর্শন করেন না। (সুরা মায়েদা ৫:৬৭)।

একথা স্বতঃসিদ্ধ যে, নবী (সাঃ) তাঁর উপর অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করেছেন। কিন্তু সূফীদের উক্তিঃ দ্বিতীয়টি (বাতেনী ইলম) অতি গোপনীয় যা মনোনীত সাহাবীদের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। এটাই ইলমে সীনা। তাদরে এ দাবীর দ্বারা প্রমাণ হচ্ছে যে, রসুল (সাঃ) বহু জিনিসকে গোপন করেছিলেন। তা করলে তিনি রিসালাতের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করেতে পারেনি, নাউজুবিল্লাহ।

৪। বিদআত বিশ্বাস হলোঃ বিপদে আপদে পীর বা অলি আওলিয়া আহবান করলে তারা সাহায্য কর থাকে।

সঠিক আকিদা হলোঃ বিপদে আপদে আল্লাহ ছাড়া কেউ সাহায্য করতে পারে না। তাই বিপদে একমাত্র তাকেই আহবান করতে হবে।    

সঠিক আকিদার দলীলঃ

বিদআতীগন বিশ্বাস করে যে, বিপদে তাদের মৃত পীর বা অলি আওলিয়াদের আহবান করলে তারা সাহয্য করে এবং কবরের নিকটি গিয়ে চাইলে তারা তাদরে ফরিয়াদ শুনে সাহায্য করে থাকেন। তাদের অভাব পূরন করে দেন। তাই তারা নিজেদের অভাব পূরণের উদ্দেশ্যে পীরের মাযারে গিয়ে ধর্না দেন। অথচ আল্লাহ ছাড়া অন্যকে সাহায্যের জন্য আহবান করা শির্কি কাজ। আল্লহ ছাড়া বিপদ থেকে কেউ উদ্ধার করতে পরেনা। ঈমানের দাবি হল বিপদ বা সংকটমুক্ত এবং অভাব বা প্রয়োজন পূর্ণ করার সব ক্ষমতা একমাত্র আল্লাহর হাতেই নিহীত আছে। তাই একমাত্র তার কাছেই প্রর্থনা করা সঠিক ও যথার্থ সত্য বলে বিবেচিত। অন্যকে অভাব পূরণের উদ্দেশ্যে সাহায্যের জন্য আহবান করা পরিস্কার কুফরি কাজ।

আল্লাহ তাআলা বলেন:

لَهُ دَعْوَةُ الْحَقِّ وَالَّذِينَ يَدْعُونَ مِن دُونِهِ لاَ يَسْتَجِيبُونَ لَهُم بِشَيْءٍ إِلاَّ كَبَاسِطِ كَفَّيْهِ إِلَى الْمَاء لِيَبْلُغَ فَاهُ وَمَا هُوَ بِبَالِغِهِ وَمَا دُعَاء الْكَافِرِينَ إِلاَّ فِي ضَلاَلٍ

অর্থঃ সত্যের আহবান একমাত্র তাঁরই এবং তাকে ছাড়া যাদেরকে ডাকে, তারা তাদের কোন কাজে আসে না; ওদের দৃষ্টান্ত সেরূপ, যেমন কেউ দু’ হাত পানির দিকে প্রসারিত করে যাতে পানি তার মুখে পৌঁছে যায়। অথচ পানি কোন সময় পৌঁছাবে না। কাফেরদের যত আহবান তার সবই পথভ্রষ্টতা। (সুরা রা’দ ১৩:১৪)

আল্লাহ তাআলা বলেন:

أَعۡتَزِلُكُمۡ وَمَا تَدۡعُونَ مِن دُونِ ٱللَّهِ وَأَدۡعُواْ رَبِّى عَسَىٰٓ أَلَّآ أَكُونَ بِدُعَآءِ رَبِّى شَقِيًّ۬ا (٤٨)

অর্থঃ  আমি আপনাদেরকে ত্যাগ করছি এবং আপনারা আল্লাহকে বাদ দিয়ে যাদেরকে আহবান করেন তাদেরকেও। আমি তো আমার রবকেই আহবান করব৷ আশা করি আমি নিজের রবকে আহবান করে ব্যর্থ হবো না। (মারিয়াম-১৯:৪৮)।

মানুষের ওপর যখন কোন বিপদ আসে তখন সে গাইরুল্লাহ নিকট সাহায্য কামনা করে তাকে আহবান করে। কিন্তু  সে অন্তরে অন্তরে বিশ্বাস রাখে যে, লাভ ও ক্ষতি করার আসল ক্ষমতা একমাত্র আল্লাহরই হাতে রয়েছে। তাইতো বিপদের কোথাও থেকে সাহায্য না পেয়ে, সত্যিকার সাহায্য পাওয়ার আশায় সে শুধু এক আল্লাহকেই আহবান করে।

 মহান আল্লাহ তাআলা বলেন,

وَإِذَا مَسَّكُمُ ٱلضُّرُّ فِى ٱلۡبَحۡرِ ضَلَّ مَن تَدۡعُونَ إِلَّآ إِيَّاهُ‌ۖ فَلَمَّا نَجَّٮٰكُمۡ إِلَى ٱلۡبَرِّ أَعۡرَضۡتُمۡ‌ۚ وَكَانَ ٱلۡإِنسَـٰنُ كَفُورًا (٦٧)

অর্থঃ  যখন সাগরে তোমাদের ওপর বিপদ আসে তখন সেই একজন ছাড়া আর যাকে তোমরা ডাকো সবাই অন্তর্হিত হয়ে যায়৷  কিন্তু যখন তিনি তোমাদের রক্ষা করে স্থলদেশে পৌঁছিয়ে দেন তখন তোমরা তাঁর দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নাও৷ মানুষ সত্যিই বড়ই অকৃতজ্ঞ৷ (সুরা বনী ইসরাঈল ১৭:৬৭)।

বিপদে পীর বা অলি আওলিয়াদের আহবান করে এবং তাদের কবরের নিকট গিয়ে কোন কিছু চাওয়া শির্ক এতে কোন প্রকার সন্দেহ নেই। অথচ সুফিদের বড় একটি অংশ নবী-রাসূল এবং জীবিত ও মৃত অলী-আওলীয়াদের কাছে দুআ করে থাকে। সুতরাং যে ব্যক্তি আল্লাহ ছাড়া অন্যের কাছে দুআ করবে, সে মুশরিক হিসেবে গণ্য হবে।

আল্লাহ তাআলা বলেনঃ

 وَلَا تَدۡعُ مِن دُونِ ٱللَّهِ مَا لَا يَنفَعُكَ وَلَا يَضُرُّكَ‌ۖ فَإِن فَعَلۡتَ فَإِنَّكَ إِذً۬ا مِّنَ ٱلظَّـٰلِمِينَ (١٠٦)

অর্থ: আর আল্লাহকে বাদ দিয়ে এমন কোন সত্তাকে ডেকো না, যে তোমার না কোন উপকার করতে না ক্ষতি করতে পারে৷ যদি তুমি এমনিটি করো তাহলে জালেমদের দলভুক্ত হবে৷  (সূরা ইউনুস ১০:১০৬)। 

আল্লাহ তাআলা আরও বলেনঃ

 وَمَنۡ أَضَلُّ مِمَّن يَدۡعُواْ مِن دُونِ ٱللَّهِ مَن لَّا يَسۡتَجِيبُ لَهُ ۥۤ إِلَىٰ يَوۡمِ ٱلۡقِيَـٰمَةِ وَهُمۡ عَن دُعَآٮِٕهِمۡ غَـٰفِلُونَ (٥)

অর্থ: সেই ব্যক্তির চেয়ে বেশী পথভ্রষ্ট কে যে আল্লাহকে বাদ দিয়ে এমন সব সত্তাকে ডাকে যারা কিয়ামত পর্যন্ত তার ডাকে সাড়া দিতে সক্ষম নয়৷ এমনকি আহবানকারী যে তাকে আহবান করছে সে বিষয়েও সে অজ্ঞ৷ (সূরা আহকাফ ৪৬:৫) 

সঠিক কথা হল, যে সকল বিষয় মহান আল্লাহ ছাড়া আর কেহ দান করতে পারে না। এবং যা মানুষের ক্ষমতার বাইরে, তা মানুষের নিকট চাইলে শির্ক হবে।

মহান আল্লাহ তাআলা বলেন,

قُلۡ أَرَءَيۡتَكُمۡ إِنۡ أَتَٮٰكُمۡ عَذَابُ ٱللَّهِ أَوۡ أَتَتۡكُمُ ٱلسَّاعَةُ أَغَيۡرَ ٱللَّهِ تَدۡعُونَ إِن كُنتُمۡ صَـٰدِقِينَ (٤٠) بَلۡ إِيَّاهُ تَدۡعُونَ فَيَكۡشِفُ مَا تَدۡعُونَ إِلَيۡهِ إِن شَآءَ وَتَنسَوۡنَ مَا تُشۡرِكُونَ (٤١)

অর্থ: এদেরকে বলো, একটু ভেবে চিন্তে বলতো দেখি, যদি তোমাদের ওপর কখনো আল্লাহর পক্ষ থেকে কোন বড় রকমের বিপদ এসে পড়ে অথবা শেষ সময় এসে যায়, তাহলে সে সময় কি তোমরা আল্লাহ ছাড়া আর কাউকে ডাকো? বলো, যদি তোমরা সত্যবাদী হও৷ (সুরা আনআম ৬:৪০-৪১)।

মহান আল্লাহ তাআলা বলেন,

 ۞ وَإِذَا مَسَّ ٱلۡإِنسَـٰنَ ضُرٌّ۬ دَعَا رَبَّهُ ۥ مُنِيبًا إِلَيۡهِ ثُمَّ إِذَا خَوَّلَهُ ۥ نِعۡمَةً۬ مِّنۡهُ نَسِىَ مَا كَانَ يَدۡعُوٓاْ إِلَيۡهِ مِن قَبۡلُ وَجَعَلَ لِلَّهِ أَندَادً۬ا لِّيُضِلَّ عَن سَبِيلِهِۦ‌ۚ قُلۡ تَمَتَّعۡ بِكُفۡرِكَ قَلِيلاً‌ۖ إِنَّكَ مِنۡ أَصۡحَـٰبِ ٱلنَّارِ (٨)

অর্থঃ মানুষের ওপর যখন কোন বিপদ আসে তখন সে তার রবের দিকে ফিরে যায় এবং তাঁকে ডাকে৷ কিন্তু যখন তার রব তাকে নিয়ামত দান করেন তখন সে ইতিপূর্বে যে বিপদে পড়ে তাঁকে ডাকছিলো তা ভুলে যায় এবং অন্যদেরকে আল্লাহর সমক্ষ মনে করতে থাকে,  যাতে তারা আল্লাহর পথ থেকে তাকে গোমরাহ করে৷ তাকে বলো, তোমার কুফরী দ্বারা অল্প কিছুদিন মজা করে নাও৷ নিশ্চিতভাবেই তুমি দোযখে যাবে৷  (সুরা যুমার ৩৬:৮)।

কাজেই বিপদে ডাকতে হবে একমাত্র আল্লাহকে কেননা তিনি ছাড়া কেহ বিপদ দুর করতে পারবে না। আর যাদের বিপদ উদ্ধারকারী মনে করছে ডাকছে, তারা নিজেরাই নিজেদের রবের নৈকট্যলাভের উপায় খুঁজে বেড়াচ্ছে।

আল্লাহ তাআলা বলেনঃ

 قُلِ ادْعُواْ الَّذِينَ زَعَمْتُم مِّن دُونِهِ فَلاَ يَمْلِكُونَ كَشْفَ الضُّرِّ عَنكُمْ وَلاَ تَحْوِيلاً

অর্থঃ বলুনঃ আল্লাহ ব্যতীত যাদেরকে তোমরা উপাস্য মনে কর, তাদেরকে আহবান কর। অথচ ওরা তো তোমাদের কষ্ট দুর করার ক্ষমতা রাখে না এবং তা পরিবর্তনও করতে পারে না। [ সুরা বনী-ইসরাঈল ১৭:৫৬ ]

আল্লাহ তাআলা বলেন:

أُوْلَـٰٓٮِٕكَ ٱلَّذِينَ يَدۡعُونَ يَبۡتَغُونَ إِلَىٰ رَبِّهِمُ ٱلۡوَسِيلَةَ أَيُّہُمۡ أَقۡرَبُ وَيَرۡجُونَ رَحۡمَتَهُ ۥ وَيَخَافُونَ عَذَابَهُ ۥۤ‌ۚ إِنَّ عَذَابَ رَبِّكَ كَانَ مَحۡذُورً۬ا (٥٧)

অর্থ: এরা যাদেরকে ডাকে তারা তো নিজেরাই নিজেদের রবের নৈকট্যলাভের উপায় খুঁজে বেড়াচ্ছে যে, কে তাঁর নিকটতর হয়ে যাবে এবং এরা তাঁর রহমতের প্রত্যাশী এবং তাঁর শাস্তির ভয়ে ভীত। আসলে তোমার রবের শাস্তি ভয় করার মতো৷ (সুরা বনী ইসরাঈল ১৭:৫৭)।

বিদআতীদের সুফিদের ধারনা  অলি আওলিয়ারা কবরে কাছ ফরিয়াদ করলে শুনতে পান। এই জন্য সুফি গুরু  আহম্মদ রেজা খান  বেরেলভী লিখেছেন: মৃতরা শুনেন এবং তাদের মৃত্যুর পর প্রিয়জনদের সাহায্য করে। (ইলমুল কুরআন আহম্মদ ইয়ার)। যে কোন অবস্থায় আল্লাহ ছাড়া, অলি আওলিয়ারা কবরে কাছ ফরিয়াদ করব শির্ক। তৎকালিন কাফেরগন  বিপদ আপদে, রোগ শোকে জর্জরিত হয়ে গাইরুল্লার কাছে ফরিয়াদ করত। কিন্তু কঠিন কোন বিপদের সম্মুখিন হলে তাদের ও তাদরে বানান বহু উপাস্যের নিকট ফরিয়াদ না করে মহান আল্লাহর নিকট ফরিয়াদ জানাত। বিপদ মুক্তির পরই আবার বহু উপাস্যের উপসনা করে। কারন মনের গভীরে অন্য উপাস্যদের ক্ষমতা আছে বলে বিশ্বাস করার সাথে সাথে আল্লাহর ক্ষমতার প্রতি ও বিশ্বাস ছিল। আল্লাহ তাআলা বলেন:

فَإِذَا رَڪِبُواْ فِى ٱلۡفُلۡكِ دَعَوُاْ ٱللَّهَ مُخۡلِصِينَ لَهُ ٱلدِّينَ فَلَمَّا نَجَّٮٰهُمۡ إِلَى ٱلۡبَرِّ إِذَا هُمۡ يُشۡرِكُونَ (٦٥)

অর্থঃ   যখন তারা নৌযানে আরোহণ করে তখন নিজেদের দ্বীনকে একমাত্র আল্লাহর জন্য নির্ধারিত করে নিয়ে তার কাছে ফরিয়াদ করে৷ তারপর যখন তিনি তাদেরকে উদ্ধার করে স্থলে ভিড়িয়ে দেন তখন সহসা তারা শির্ক করতে থাকে। (আনকাবুত-২৯:৬৫)।

আল্লাহ তাআলা বলেন:

 إِذۡ تَسۡتَغِيثُونَ رَبَّكُمۡ فَٱسۡتَجَابَ لَڪُمۡ أَنِّى مُمِدُّكُم بِأَلۡفٍ۬ مِّنَ ٱلۡمَلَـٰٓٮِٕكَةِ مُرۡدِفِينَ (٩)

অর্থ: আর সেই সময়ের কথা স্মরণ করো যখন তোমরা তোমাদের রবের কাছে ফরিয়াদ করছিলে৷ জবাবে তিনি বললেন, তোমাদের সাহায্য করার জন্য আমি একের পর এক, এক হাজার ফেরেশতা পাঠাচ্ছি৷ (সূরা আনফাল ৮:৯)।

মন্তব্যঃ তাই বিপদ আপদে আল্লাহর পরিবর্তে পীর বা বুজুর্গের কবরের নিকট গিয়ে ফরিয়াদ করা মুশরিকদের একটি গুন। তারা বিভিন্ন দেব দেবির কাছে ফরিয়াদ জানায়।

৫। বিদআতি আকিদা হলোঃ সুফিদের কেউ কেউ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহ তা’য়ালার সাথে তুলনা করে ও কোন কোন ক্ষেত্রে সমান জ্ঞান করেল।

সঠিক আকিদা হলোঃ কোন বিষয় আল্লাহ সাথে সাথে তার সৃষ্টির তুলনা শির্ক কাজ। এমন কাজ মুসলিম কে ইসলাম থেকে বাহির করে দেয়ঃ

সঠিক আকিদার দলীলঃ

উপমহাদেশ যিনি সর্ব প্রথম দলিল প্রমানে মাধ্যমে সুফিবাদ প্রতিষ্ঠার চেষ্টা চালায় তিনি হলেন আহমাদ রেযা খান। তিনি ভক্তির আতিশয্যে গদগদ চিত্তে লিখেছেন, ‘হে মুহাম্মাদ (সাঃ)! আমি আপনাকে আল্লাহ বলতে পারছি না। কিন্তু আল্লাহ ও আপনার মাঝে কোন পার্থক্যও করতে পারছি না। তাই আপনার ব্যাপারটি আমি আল্লাহর হাতেই ছেড়ে দিলাম, তিনিই আপনার ব্যাপারে সবিশেষ অবগত’ (হাদায়েক বখশিশ, ২/১০৪)।

মহান আল্লাহর একটা গুন হল তিনি সব কিছু দেখেন ও শুনেন, তাই তিনিই সর্বত্র হাজির ও নাজির। এটা মহান আল্লাহর একক গুন। এ গুনটা অন্য করো জন্য কল্পনা করাও শির্ক। অথচ এই গুনটিতে মহান আল্লাহর সাথে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে শরিক করে। যা বাংলাদেশের আকবার আলী রিজভী ও তার কিতাবে লিখেছেন। যে আল্লাহ্‌ এবং রাসুল উল্লাহ (সাঃ) আলাদা কিছু নয় আল্লাহ্‌ এবং রাসুলুল্লাহ দুটিই একি সত্ত্বা। (নাউজুবিল্লাহ)। ফলে এ আক্বীদার ভিত্তিতে আজকাল মসজিদে, বাসে, রিকশায় সর্বত্র ‘আল্লাহ’ ও ‘মুহাম্মাদ’ পাশাপাশি লেখার ছড়াছড়ি লক্ষ্য করা যায়।

অথচ  সূরা কাহাফে মহান আল্লাহ এরশাদ করেনঃ

قُلْ إِنَّمَا أَنَا بَشَرٌ مِّثْلُكُمْ يُوحَى إِلَيَّ أَنَّمَا إِلَهُكُمْ إِلَهٌ وَاحِدٌ فَمَن كَانَ يَرْجُو لِقَاء رَبِّهِ فَلْيَعْمَلْ عَمَلًا صَالِحًا وَلَا يُشْرِكْ بِعِبَادَةِ رَبِّهِ أَحَدًا

অর্থঃ বলুনঃ আমি ও তোমাদের মতই একজন মানুষ, আমার প্রতি প্রত্যাদেশ হয় যে, তোমাদের ইলাহই একমাত্র ইলাহঅতএব, যে ব্যক্তি তার পালনকর্তার সাক্ষাত কামনা করে, সে যেন, সৎকর্ম সম্পাদন করে এবং তার পালনকর্তার এবাদতে কাউকে শরীক না করে। [ সুরা কা’হফ ১৮:১১০ ]

এনায়েতপুরী পীর মৌঃ মোঃ আব্দুর রহমান মুজাদ্দেদী “পুষ্পহার” নামক কিতাবের ৩৬ পৃষ্ঠায় একটি কবিতা লিখেন। কবিতাটি কিছু অংশ হলঃ

বানাইয়া নুর দেখাইলেন আপন ছবি

সেই নবীজীর চরণ বিনে নাইগো পরিত্রান

আহাদে আহম্মদ বানাইয়ে, মিমকা পদ মাঝে দিয়ে

খেলতিয়াছের পাক বারি হইয়া বেনিশান

তাদের ধারনা মহান আল্লাহ ও তার দাস মুহাম্মদের মাঝে কোন পার্থক্য নেই। আল্লাহ হলেন আহাদ আর মুহাম্মাদ হলেন আহম্মাদ। এই দুইয়ের মাঝে পার্থক্য শুধু একটা মীম হরফের।

এমনিভাবে মানিকগঞ্জের পীর আজহারুল ইসলাম তার মারেফতের ভেদ তত্ব নামক বইয়ে অনুরুপ একট কবিতা লিখেছেন। কবিতাটি কিছু অংশ হলঃ

বানাইয়া নুর দেখাইলেন আপন ছবি

সেই নবীজীর চরণ বিনে নাইগো পরিত্রান।

আহাদে আহম্মদ বানাইয়ে, মিমকা পদ মাঝে দিয়ে

খেলতিয়াছের পাক বারি হইয়া বেনিশান

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মর্জাকে মহান আল্লাহতায়ালার সমান জ্ঞান করেল শির্ক আকবর হবে। যারা এমন বিশ্বাস করবে তারা মুসলীম মিল্লাহ থেকে বাহির হয়ে যাবে। ইসলাম তাদের আর কোন অংশ থাকবে। তারা এহেন শির্ক আকিদার কারনে মুসরিক।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নবুয়তের উর্ধে মনে করে, তার সম্পর্কে অতিরজ্ঞন  করে থাকে।

অথচ পৃথিবীতে রিসালাতের উর্ধ্বে কোন মানুষের মর্জাদা আছে বলে কেউ স্বীকার করবে না। কারণ এটাই পৃথিবীর সর্বচ্চো ডিগ্রি, সর্বচ্চেো সম্মান। কিন্তু আগের আলোচনায় দেখছি সুফিরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কে মহান আল্লাহ কাছাকাছি তুলনা করতে দিধা করেনি। যেমনঃ তিনি অদৃশ্যের জ্ঞান রাখেন, সর্বদা হাজির নাজির, আল্লাহর স্বত্বাগত নূর থেকে সৃষ্টি, মানুষের ভাল মন্দের ক্ষমতা রাখেন, তিনি করবে দুনিয়ার জীবনের মত জীবন জাপন করছেন ইত্যাদি।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রসংশা করতে হবে সেইভাবে, যেভাবে আল্লাহ তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রসংশা করেছেন। মহান আল্লাহ সৃষ্টিকর্তা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার সর্বশ্রেষ্ট সৃস্টি। কজেই অতিরঞ্জন বা বাড়াবাড়ি করে স্রষ্টা ও সৃস্টি মধ্যে পার্থক্য না করাই বড় শির্ক। এই জন্য ইসলামে বাড়াবাড়ি নিষধ করা হয়েছে। আল্লাহ রাব্বূল আলামীন বলেঃ

يَـٰٓأَهۡلَ ٱلۡڪِتَـٰبِ لَا تَغۡلُواْ فِى دِينِڪُمۡ وَلَا تَقُولُواْ عَلَى ٱللَّهِ إِلَّا ٱلۡحَقَّ‌ۚ

অর্থঃ হে আহলী কিতাব ! নিজেদের দীনের ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করো না আর সত্য ছাড়া কোন কথা আল্লাহর সাথে সম্পৃক্ত করো না৷ (সুরা নিসা ৪:১৭১)।

আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে শ্রদ্ধা করার অর্থ হলো, তার প্রদত্ত আদেশ নিষেধ মেনে চলা। তার আনিত দ্বীনের পরিপূর্ণ অনুসরন করা।  কিন্তু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রসংশায় অতিরজ্ঞন বা বাড়াবাড়ি করছি আর মানুষকে পথভ্রষ্টতার দিকে ধাবিত করছি। আল্লাহ রাব্বূল আলামীন বলেনঃ

قُلۡ يَـٰٓأَهۡلَ ٱلۡڪِتَـٰبِ لَا تَغۡلُواْ فِى دِينِڪُمۡ غَيۡرَ ٱلۡحَقِّ وَلَا تَتَّبِعُوٓاْ أَهۡوَآءَ قَوۡمٍ۬ قَدۡ ضَلُّواْ مِن قَبۡلُ وَأَضَلُّواْ ڪَثِيرً۬ا وَضَلُّواْ عَن سَوَآءِ ٱلسَّبِيلِ (٧٧)

অর্থঃ বলে দাও, হে আহলি কিতাব! নিজেদের দীনের ব্যাপারে অন্যায় বাড়াবাড়ী করো না এবং তাদের খেয়ালখুশীর অনুসরণ করো না যারা তোমাদের পূর্বে নিজেরাই পথভ্রষ্ট হয়েছে এবং আরো অনেককে পথভ্রষ্ট করেছে আর সাওয়া-উস-সাবীল থেকে বিচ্যুত হয়েছে। (মায়েদা ৫:৭৭)।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্পর্কে আমাদের আর অতিরজ্ঞর করেত হবে তবে না কারন তিনিই একমাত্র ব্যক্তি যাকে আল্লাহ তা‘আলা চারিত্রিক সার্টিফিকেট দিয়েছেন। আল্লাহ রাব্বূল আলামীন তাকে অনেক অনেক সম্মান দান করে বলেন,

لَّقَدۡ كَانَ لَكُمۡ فِى رَسُولِ ٱللَّهِ أُسۡوَةٌ حَسَنَةٌ۬ لِّمَن كَانَ يَرۡجُواْ ٱللَّهَ وَٱلۡيَوۡمَ ٱلۡأَخِرَ وَذَكَرَ ٱللَّهَ كَثِيرً۬ا (٢١)

অর্থঃ আসলে তোমাদের জন্য আল্লাহর রসূলের মধ্যে ছিল একটি উত্তম আদর্শ এমন প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য যে আল্লাহ ও শেষ দিনের আকাঙ্ক্ষী এবং বেশী করে আল্লাহকে স্মরণ করে৷ (আহজাব ৩৩:২১)।

মহান আল্লাহ আরও বলেন,

﴿ وَإِنَّكَ لَعَلَىٰ خُلُقٍ عَظِيمٖ ٤ ﴾ [القلم: ٤]

অর্থঃ “আর নিশ্চয় আপনি মহান চরিত্রের উপর রয়েছেন।( ক্বলম ৬৪:৪)।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর অনুসরণ করলেই আল্লাহ ভালোবাসবেন এবং গোনাহ মাফ করে দেবেন। যেমনঃ মহান আল্লাহ আরও বলেন,

قُلۡ إِن كُنتُمۡ تُحِبُّونَ ٱللَّهَ فَٱتَّبِعُونِى يُحۡبِبۡكُمُ ٱللَّهُ وَيَغۡفِرۡ لَكُمۡ ذُنُوبَكُمۡ‌ۗ وَٱللَّهُ غَفُورٌ۬ رَّحِيمٌ۬ (٣١)

অর্থঃ হে নবী! লোকদের বলে দাওঃ ‘‘যদি তোমরা যথার্থই আল্লাহকে ভালোবাসো, তাহলে আমার অনুসরণ করো, আল্লাহ তোমাদের ভালোবাসবেন এবং তোমাদের গোহাহ মাফ করে দেবেন ৷ তিনি বড়ই ক্ষমাশীল ও করুণাময়৷’’ তাদেরকে বলোঃ আল্লাহ ও রসূলের আনুগত্য করো। (আল ইমরান ৩:৩১)।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আনুগত্য আল্লাহরই আনুগত্য। মহান আল্লাহ আরও বলেন,

مَّن يُطِعِ ٱلرَّسُولَ فَقَدۡ أَطَاعَ ٱللَّهَ‌ۖ وَمَن تَوَلَّىٰ فَمَآ أَرۡسَلۡنَـٰكَ عَلَيۡهِمۡ حَفِيظً۬ا (٨٠)

অর্থঃ যে ব্যক্তি রসূলের আনুগত্য করলো সে আসলে আল্লাহরই আনুগত্য করলো৷ আর যে ব্যক্তি মুখ ফিরিয়ে নিলো, যাই হোক, তাদের ওপর তো আমি তোমাকে পাহারাদার বানিয়ে পাঠাইনি সুরা নিসা ৪:৮০)।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে আল্লাহ তা‘আলা সার্টিফিকেট দিচ্ছেন নিসন্দেহে  রসূলদের অন্তরভুক্ত, সরল-সোজা, পথ অবলম্বনকারী।

যেমনঃ মহান আল্লাহ বলেন,

إِنَّكَ لَمِنَ ٱلۡمُرۡسَلِينَ (٣) عَلَىٰ صِرَٲطٍ۬ مُّسۡتَقِيمٍ۬ (٤)

অর্থঃ তুমি নিসন্দেহে রসূলদের অন্তরভুক্ত, সরল-সোজা, পথ অবলম্বনকারী, (ইয়াছিন ৩৬:২-৩)।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আনুগত্য না করলে আমল ধ্বংস অনিবার্য। যেমনঃ মহান আল্লাহ বলেন,

يَـٰٓأَيُّہَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوٓاْ أَطِيعُواْ ٱللَّهَ وَأَطِيعُواْ ٱلرَّسُولَ وَلَا تُبۡطِلُوٓاْ أَعۡمَـٰلَكُمۡ (٣٣)

অর্থঃ হে মু’মিনগণ! তোমরা আল্লাহর আনুগত্য করো, রসূলের আনুগত্য করো এবং নিজেদের আমল ধ্বংস করো না। (মুহম্মাদ ৪৭:৩৩)।

এ ছাড়াও মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সমস্ত বিশ্বজাহানের রহমত স্বরূপ তাকে প্রেরণ করা হইয়াছে। তিনি মাক্বামে মাহমূদের অধিকারী করেছেন। তিনি সমস্ত আদম জাতীর সর্দার বানিয়েছেন। তাকে আল্লাহর খলীল বা অন্তরঙ্গ বন্ধু হিসাবে গ্রহন করেছেন। তিনি আল্লাহর অনুমতি সাপেক্ষে হাশরের মাঠে মহান শাফাআতের অধিকারী। তিনি সর্ব প্রথম জান্নাতে প্রবেশকারী হিসাবে আল্লাহ মর্জাদা পেয়েছেন। তিনি সর্বাধিক মুত্তাক্বী ও পরহেজগারদের হিসাবে পরিগনিত। তিনি নবীকুল শিরোমণী। এত সম্মান ও মর্জাদা থাকা সত্বেও কিছু অতি পন্ডিত জ্ঞান পাপি তার সম্পর্কে বাড়াবাড়ি ও অতিরঞ্জিত করে বলে, দুনিয়া ও আখিরাত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্যই সৃষ্টি করা হয়েছে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সম্পর্কে সঠিক ও সু-ধারনা পোষন করা প্রত্যেকটি মুসলিমের দায়িত্ব। অতিরঞ্জর বাড়বাড়ি কখন ও শির্কি আকদার জম্মদেয়। এ প্রসঙ্গে হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে আব্বাস রাযি আল্লাহু আনহু রাযিআল্লাহু আনহু বর্ণিত একখানা হাদীসে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ তোমরা আমার সম্পর্কে অতিরঞ্জন করো না, যেমন নাসারাগণ অতিরঞ্জন করেছে ঈসা ইবনু মারইয়াম সম্পর্কে। আমি তো শুধূ আল্লাহর বান্দা। বরং তোমরা বলো আমি আল্লাহর বানদা ও রসুল। (বুখারী, মুসলিম)।

নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও ইরশাদ করেনঃ  ‘বাড়াবাড়ি থেকে সাবধান হও তোমাদের পূর্বসূরীগণ ধ্বংস হয়েছিল তাদের বাড়াবাড়ির জন্য (মুসনদে আহম্মদ)

মহান আল্লাহ্ তাঁর হাবীব রাসূল মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে যে সীমাহীন উচ্চ মর্যাদা ও সম্মান দান করেছেন তা আল কুরআন এবং সহিহ হাদিসের পাতায় পাতায় সুস্পষ্টভাবে বর্ণিত আছে। অতি ভক্তি প্রদর্শন করতে গিয়ে তাঁর মর্যাদা ও সম্মান বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে কুরআনুল কারীমের সুস্পষ্ট আয়াত ও ঘোষণাকে অস্বীকার করে, বিকৃত করে, ভ্রান্ত তাফসীর করে, জাল বানোয়াট মনগড়া কাহিনীর অবতারনা ককরে ইয়াহুদি খৃষ্টানদের মত সীমালঙ্ঘনকারী হওয়া কখনোই ঈমানের পরিচায়ক হতে পারে না। বরং আমাদের উচিত হবে আল্লাহ্ পাক তাঁর হাবীব রাসূল মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে যে মর্জাদা দিয়েচেন তার ভিত্তিতে তাকে সম্মান প্রদর্শন করতে হবে।

সংকলনেঃ মোহাম্মাদ ইস্রাফিল হোসাইন। (বিএ ইন এ্যারাবিক লিটারেচার, ইসলামিক হিস্টরী এন্ড ইসলামিক স্টাডিস)

Leave a comment