জিকির কেন্দ্রিক বিদআত দ্বিতীয় কিস্তি : জিকিরের প্রকারভেদ

জিকির কেন্দ্রিক বিদআত দ্বিতীয় কিস্তি : জিকিরের প্রকারভেদ

সংকলনেঃ মোহাম্মাদ ইস্রাফিল হোসাইন।

প্রতিটি ইবাদতের সুন্নাহ সম্মত কিছু নিয়ম কানুন আছে। সালাত, সিয়াম, হজ্জ, জাকাত, কুরবানী ইত্যাদি আদায়ে আলাদা আলাদা আল্লাহ প্রদত্ত সুন্নাহ সম্মত নিয়ম আছে। এর নিয়ম নীতির বাহিরে এই সকল ইবাদাত আদায় করলে সওয়াতের আশা করা যাবে না। বরং মহান আল্লাহর ক্রোদ্ধের কারন হতে হবে। কারন আল্লাহ প্রদত্ত নিয়ম নীতি নিয়ে কার খেল তামার করা অধিকার নাই। যেমনঃ হজ্জ করার জন্য বাইতুল্লাহ গমন করতে হবে এখন যদি কেউ দেশে বাইতুল্লাহ আদতে মসজিদ তৈরি করে হজ্জের সকল নিয়ম নীতি অনুসরণ করে তবে তার হজ্জ কি হবে? ইহাকে আল্লাদ্রোহী বলা হবে। সামন্য একটি নিয়ম ভঙ্গের কারনে ইসলাম থেকে খারিজ হয়ে যাবে। ঠিক তেমনি ভাবে সালাত এক রাকাতে দুইয়ের অধিক সিজদা দিলে বা একাধীক রুকু দিলে সালাত হবে তো? একজন অজ্ঞ মুসলিমও জানে সালাত হবে না। আমাদের সমাজের অধিকাংশ মানুষ মনে করে নিয়মিত তাসবীহ তাহলীল আদায় করাই জিকির। আসলে কেবল মুখে উচ্চারণের নামই জিকির নয়। আমাদের সমাজের অধিকাংশ মানুষ মনে করে নিয়মিত তাসবীহ তাহলীল আদায় করাই জিকির। আসলে কেবল মুখে উচ্চারণের নামই জিকির নয়। জিকির মুখের পাশাপাশি অন্তর কর্ম দ্বারাও হতে পারে। যে কোন উপায় মহান আল্লাহর স্মরনই জিকির হবে। এই হিসাবে জিকির সাধারণত তিন প্রকার।

১। জিকিরে কালবি বা আন্তরিক জিকির।

২। জিকিরে আমালি বা কর্মগত জিকির।

৩। জিকিরে লিসানি বা মৌখিক জিকির।

১৭। জিকিরে কালবি বা আন্তরিক জিকিরঃ

যে জিকির অন্তর দ্বারা করা হয়। অন্তুরে সার্বক্ষণিক মহান আল্লাহ স্মরন করাই হল জিকিরে কালবি বা আন্তরিক জিকির। এই জিকিরের মাধ্যমে বান্দার তাকওয়ার গুন অর্জন হয়। যার অন্তুর যত বেশী আল্লাহর স্মরন কবরে সে তত বেশী তাকওয়াবান বা আল্লাহ ভীরু হবে। আল্লাহ ভীরু মুসলিম তার প্রতিটি কাজে আল্লাহকে স্মরন করে।

প্রতিটি কাজ বা আমলের শুরুতে মহান আল্লাহকে অন্তরে অন্তরে স্মরণ করে শুরু করতে হয়। প্রতিটি কাজের শুরুতে আল্লাহ নাম স্মরণ থাকলে, শুধু তাকে খুসি করার জন্য কাজটি করা সহজ নয়। অন্তরে আল্লাহ স্মরণই বিশুদ্ধ নিয়তে কাজ করতে সাহায্য করে। কোন আমল কবুলের প্রধান ও প্রথম শর্ত হল বিশুদ্ধ নিয়ত করা। বান্দার কাজ বা আমলটি শুধুই আল্লাহ জন্য খাস করে নেয়াই হল বিশুদ্ধ নিয়ত।  সার্বক্ষনিক আস্তরিক জিকিরই বিশুদ্ধ নিয়তের চাবিকাঠি। প্রতিটি কাজ বা আমলে শুরুতে মহান আল্লাহকে অন্তরে স্মরণ করে, কাজটি শুধু করা একটি আস্তরিক জিকির।  কোন আমল কবুলের প্রধান ও প্রথম শর্ত হল বিশুদ্ধ নিয়ত করা। কোন আমল কবুলের প্রধান ও প্রথম শর্ত হল বিশুদ্ধ নিয়ত করা। কোন আমল কবুলের প্রধান ও প্রথম শর্ত হল বিশুদ্ধ নিয়ত করা। কোন আমল কবুলের প্রধান ও প্রথম শর্ত হল বিশুদ্ধ নিয়ত করা। কোন আমল কবুলের প্রধান ও প্রথম শর্ত হল বিশুদ্ধ নিয়ত করা। কোন আমল কবুলের প্রধান ও প্রথম শর্ত হল বিশুদ্ধ নিয়ত করা। আল্লাহ তাআলা বলেন

 إِنَّ فِى خَلۡقِ ٱلسَّمَـٰوَٲتِ وَٱلۡأَرۡضِ وَٱخۡتِلَـٰفِ ٱلَّيۡلِ وَٱلنَّہَارِ لَأَيَـٰتٍ۬ لِّأُوْلِى ٱلۡأَلۡبَـٰبِ (١٩٠) ٱلَّذِينَ يَذۡكُرُونَ ٱللَّهَ قِيَـٰمً۬ا وَقُعُودً۬ا وَعَلَىٰ جُنُوبِهِمۡ وَيَتَفَڪَّرُونَ فِى خَلۡقِ ٱلسَّمَـٰوَٲتِ وَٱلۡأَرۡضِ رَبَّنَا مَا خَلَقۡتَ هَـٰذَا بَـٰطِلاً۬ سُبۡحَـٰنَكَ فَقِنَا عَذَابَ ٱلنَّارِ (١٩١)

অর্থঃ আকাশমণ্ডল ও পৃথিবীর সৃষ্টিতে, দিবস ও রাত্রির পরিবর্তনে নিদর্শনা বলী রয়েছে বোধশক্তি সম্পন্ন লোকদের জন্য, যারা দাঁড়িয়ে, বসে ও শুয়ে আল্লাহর স্মরণ করে। আকাশমণ্ডল ও পৃথিবীর সৃষ্টি সম্বন্ধে চিন্তা করে ও বলে হে আমদের প্রতিপালক! তুমি এগুলো নিরর্থক সৃষ্টি করনি। তুমি পবিত্র, তুমি আমাদেরকে অগ্নি-শাস্তি হতে রক্ষা কর। (সূরা আল ইমরান ৩:১৯০-১৯১)

সহিহ হাদিসে এসছেঃ আলকামা ইবনে ওয়াক্কাস আল-লায়সী (রহঃ) থেকে বর্ণিত, আমি উমর ইবনুল খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহু কে মিম্বরের ওপর দাঁড়িয়ে বলতে শুনেছি, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছিঃ প্রত্যেক কাজ নিয়তের সাথে সম্পর্কিত। আর মানুষ তার নিয়ত অনুযায়ী ফল পাবে। তাই যার হিজরত হবে দুনিয়া লাভের অথবা নারীকে বিয়ে করার উদ্দেশ্যে সেই উদ্দেশ্যেই হবে তার হিজরতের প্রাপ্য। সহিহ বুখারি হাদিস নম্বর ০১)।

যে কোন কাজের শুরুতেই নিয়ত বিশুদ্ধ হতে হবে হবে, আর বিশুদ্ধ নিয়তের জন্য জন্য দরকার অন্তরে আল্লাহর স্মরন। অন্তরে সার্বক্ষণিক আল্লাহ স্মরন থালেই কেবল কাজের শুরুতে বিশুদ্ধ নিয়ত সম্ভব। মুমিন চলার পথে প্রতিটি কাজ করার আগে মহান আল্লাহকে স্মরন করবে এটাই স্বাভবিক। । তাই পার্থিব অপার্থিব যে কোন কাজ করার সময় কোন অস্থায়ই তার অন্তর থেকে মহান আল্লাহ নাম অবিস্মৃত হবে না। যদি মুমিন তার অন্তর সব সময় আল্লাহর স্মরন রাখতে সক্ষম হয় তবে তার দ্বারা কোন অন্যায় অস্লিল কাজ হবে পাবরে না। সার কথা হলো, অন্তরে সার্বক্ষণিক আল্লাহ স্মরন বা জিকিরে কালবি একজন মুমিনকে তাকওয়াব বান করতে পারে এবং তার প্রতিটি আমল শুধু আল্লাহ সন্ত্বষ্টির জন্য করতে পারে।

আন্তরিক স্মরণ মানুষকে মহান আল্লাহ নিকটবর্তী করে দেয়। বান্দা যেভার তাহার সৃষ্ট কর্তাকে স্মরণ করে তিনি ঠিক তেমনি ভাবে তাকে স্মরণ করে। আমরা যদি সারাক্ষন মহান আল্লাহকে স্মরণ করি তবে তিনিও আমাদের সারাক্ষন স্মরণ করবেন।

আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তা’আলা বলেন, আমি আমার বান্দার কাছে তার ধারণা অনুযায়ী। যখন সে আমার যিকর করে তখন আমি তার সঙ্গে থাকি। বান্দা আমাকে একাকী (তার মনে মনে) স্মরণ করলে আমিও তাকে একাকী স্মরণ করি। আর যদি সে কোন মজলিসে আমার জিকির (স্মরণ) করে তাহলে আমি তাকে তাদের চাইতে উত্তম মজলিসে স্মরণ করি। যদি সে আমার দিকে এক বিঘত এগিয়ে আসে তাহলে আমি তার দিকে এক হাত নিকটবর্তী (অগ্রসর) হই। যদি সে আমার দিকে হেঁটে আসে আমি তার দিকে অতি দ্রুত আসি। (সহিহ মুসলিম ৬৫৬১ ইসলামি ফাউন্ডেশন)

যার অন্তর মহান আল্লাহ স্মরন থাকেবে সে কখনও অন্যায় ও অশ্লীল কাজ করতে পারে না। কোন অন্যায় করা করার সময় তার অন্তরে মহান আল্লাহ ভয়ের সৃষ্টি হয়। এই জন্য একজন সিয়ামরত ব্যাক্তি সময় ও সুযোগ থাকা সত্বেও আল্লাহ ভয়ে পানাহার করে না। যদি প্রতিটি মানুষ অন্তরে সার্বক্ষণিক আল্লাহ স্মরন থাকত তবে কোন অন্যায় ও অশ্লীল কাজ করতে পারতে না। আল্লাহ স্মরনই তার অন্তরে তাকওয়া সৃষ্টি করে যা তাকে পাপাচার থেকে দুরে রাখে।

সার্বক্ষনিক জিকিরের ফলের যে লাভবান হওয়া যায়।

১। সার্বক্ষণিক আল্লাহ স্মরণ, বান্দাকেও সার্বক্ষণিক আল্লাহ স্মরণ করে অর্থাৎ বান্দাকে আল্লাহ রহমতের আবৃত করে রাখেন।

২। সার্বক্ষণিক আল্লাহ স্মরণ, বান্দাকে বিশুদ্ধ নিয়তে সকল প্রকার কাজ বা আমল করার যোগ্যতা প্রদান করে।

৩। সার্বক্ষণিক আল্লাহ স্মরণ অন্যায় ও অশ্লীল কাজ থেকে বান্দাকে দুরে রাখে।

১৮। জিকিরে আমালি বা কর্মগত জিকিরঃ

জিকিরে আমালি হচ্ছে মোমিনের ফরজ নফলসহ সব ধরনের ইবাদত-বন্দেগি। এ অর্থে মুমিন বান্দার যে সালাত, সিয়াম, হজ, ওমরাহ, জাকাত, তাওয়া, জিকর, দুয়া মোনাজাতসহ সকল প্রকার ইবাদাতই হল আমলি জিকির। কোন আমলই মহান আল্লাহ স্মরন ছাড়া করা সম্ভব নয়। কারন আমি যাকে খুশি করার  জন্য আমল করছি, তাকে কি করে স্মরন না করে পারা যায়। মুমিনদের জীবনের সর্বক্ষেত্রে প্রতিটি আমল তখনই কবুলে যোগ্যতা অর্জন করবে বা নেকীর কাজ হবে যখন সেই আমলে মহান আল্লাহ স্মরন থাকবে। কাজেই আমল কবুলের পূর্ব শর্ত হিসাবে আল্লাহর স্মরণই ধরাতে হবে। ইবাদতে আল্লাহর স্মরণ থেকে গাফিল হওয়ার সুযোগ নেই। বিজ্ঞ আলেদের মতে কোন ব্যাক্তি যদি তার সালাত আদায়ের সময় কখনও মহান আল্লাহ স্মরন না করে থাকে তবে তার সালাত বিশুদ্ধ হবে না। কমছে কম সালাতে মাঝে একবার হলেও মহান আল্লাহ স্মরন করতে হবে। এমনি যাকাত আদায়ের সময় যদি মনে আল্লাহ স্মরন না থাকে বা জাকাত প্রদানের নিয়ত না করে তবে হাজার টাকা দান করলে তার যাকাত আদায় হবে না। যাকাত নয় সাধারন সদকাও যদি দান কারার সময় আল্লাহ কথা স্মরন না করে মানুষকে খুশি করার জন্য কথা হয় তবে তাও ইবাদাত বলে গন্য হবে না। এক কথাই বলা যায় ইবাদত কবুলের শর্ত হল ইবাদতের সময় মহান আল্লাহ স্মরণ। আমাদের সমাজে বিভন্ন সময়ে ওয়াজ মাহফিলের আয়োজন করা হয়। কখনো কখনো ইসলাম শিক্ষার জন্য সভার বা আলোচনার আয়োজন করা হয়, কুরআন শিক্ষার জন্য ক্লাস চালু করা হয়। এই সকল প্রকার আমলই জিকিরের অন্তরভূক্ত।

ইসলাম একটি পরিপূর্ণ জীবন ব্যবস্থা। তার প্রতি কর্মই ইবাদাত কিন্তু কর্মের মাঝে আল্লাহ হুকুম ও রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দেখান পদ্ধতি বা তরীকা না থাকলে ইবাদত বলে গন্য হবে না। তাই আমল বা কাজের মাঝে মহান আল্লাহ স্মরন আসাই যুক্তিযুক্ত। ইহা ছাড়া মহান আল্লাহ হুকুম ফরজ ইবাদাত সালাত, সিয়াম, জাকাত, হজ্জ ইত্যাদিতে আল্লাহ স্মরন কেও ফরজ করা হয়েছে। ফরজ ছাড়াও মুমিন বান্দা সার্বক্ষণই ভিন্ন সুন্নাহ ও নফল আমলের ব্যস্ত থাকে। এই সকল আমলেও মহান আল্লাহর স্মরন বাধ্যতা মূলক করা হয়েছে। তাই আমরা বলতে পারি আমাদের দোয়া, জিকির, দান, সালাত, সিয়াম, কুরবানী, আকিকা, দাওয়াত, তাবলীগ, জিহাদসহ সকল ইবাদাত আমলী জিকিরের মধ্য অন্তরভূক্ত। মুমিনদের কোন কাজই ইবাদতের বাহিরে নয়, তাই মুমিন জীবনের সর্বক্ষেত্রে ইবাদতের মাধ্যমে আল্লাহকে স্মরণ করছে। আমাদের সর্বশ্রেষ্ট ফরজ ইবাদাত সালাত আদায়ও করাকে মহান আল্লাহ জিকির বলে উল্লেখ করছেন। যেমনঃ মহান আল্লাহ এরশাদ করেনঃ

إِنَّنِي أَنَا اللَّهُ لَا إِلَهَ إِلَّا أَنَا فَاعْبُدْنِي وَأَقِمِ الصَّلَاةَ لِذِكْرِي

আমিই আল্লাহ আমি ব্যতীত কোন ইলাহ নেই। অতএব আমার এবাদত কর এবং আমার স্মরণার্থে নামায কায়েম কর। (সুরা ত্বা-হা ২০:১৪)

আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি কোন মুমিনের পার্থিব কোন বিপদ-আপদ দূর করে দেবে, আল্লাহ তাআলা কিয়ামতের দিনে তার থেকে বিপদ দূরীভুত করবেন। যে ব্যক্তি কোন অভাবগ্রস্ত লোকের জন্য সহজ ব্যবস্থা (দুর্দশা লাঘব) করবে, আল্লাহ তাআলা দুনিয়া ও আখিরাতে তার দুর্দশা মোচন করবেন। যে ব্যক্তি কোন মূসলমানের ক্রটি গোপন রাখবে আল্লাহ তাআলা দুনিয়া ও আখিরাতে তার ক্রটি গোপন রাখবেন। বান্দা যতক্ষন তার ভাই এর সাহায্যে নিয়োজিত থাকে আল্লাহ ততক্ষন তার সাহায্যে নিয়োজিত থাকেন।

যে ব্যক্তি ইলম হাসিলের জন্য পথে বের হয়, আল্লাহ তার জন্য জান্নাতের পথ সুগম করে দেন। যখন কোন সম্প্রদায় আল্লাহর ঘর সমূহের কোন একটিতে সমবেত হয়ে আল্লাহর কিতাব তিলাওয়াত করে এবং পরস্পরে তার পর্যালোচনায় নিয়োজিত থাকে তখন তাদের উপর প্রশান্তি অবতীর্ণ হয়। রহমতের (শামিয়ানা) তাদের আচ্ছাদিত করে এবং ফিরিশতাগণ তাদের পরিবেষ্টন করে রাখেন। আর আল্লাহ তা’আলা তাঁর নৈকট্যধারীদের (ফিরিশতাগণের) মাঝে তাদের স্মরণ (আলোচনা) করেন। আর যে ব্যক্তির আমল তাকে পিছিয়ে দেবে তার বংশ মর্যাদা তাকে এগিয়ে নিতে পারবেনা।(সহহি মুসলিম ৬৬০৮ ইফাঃ)

আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ আল্লাহর একদল ফেরেশতা আছেন, যারা আল্লাহর যিকরে রত লোকদের তালাশে রাস্তায় রাস্তায় ঘোরাফেরা করেন। যখন তারা কোথাও আল্লাহর যিকরে রত লোকদের দেখতে পান, তখন তাঁদের একজন অন্যজনকে ডাকাডাকি করে বলেনঃ তোমরা নিজ নিজ কর্তব্য সম্পাদনের জন্য এদিকে চলে এসো। তখন তাঁরা সবাই এসে তাদের ডানাগুলো দিয়ে সেই লোকদের ঢেকে ফেলেন নিকটস্থ আসমান পর্যন্ত। তখন তাদের রব তাদের জিজ্ঞাসা করেন (অথচ এ সম্পর্কে ফেরেশতাদের চাইতে তিনই বেশি জানেন) আমার বান্দারা কি বলছে?

তখন তারা জবাব দেন, তারা আপনার পবিত্রতা বর্ণনা করছে, তারা আপনার শ্রেষ্ঠত্ব প্রকাশ করছে, তারা আপনার প্রশংসা করছে এবং তারা আপনার মাহাত্ব বর্ণনা করছে। তখন তিনি জিজ্ঞাসা করবেন, তারা কি আমাকে দেখেছে? তখন তারা বলবেনঃ হে আমাদের রব, আপনার কসম! তারা আপনাকে দেখেনি। তিনি বলবেন, আচ্ছা, তবে যদি তারা আমাকে দেখত? তারা বলবেন, যদি তারা আপনাকে দেখত, তবে তারা আরও বেশি আপনার ইবাদত করত, আরো অধিক আপনার মাহাত্ব বর্ননা করত, আর বেশি বেশি আপনার পবিত্রতা বর্ননা করত।

বর্ণনাকারী বলেনঃ তিনি বলবেন, তারা আমার কাছে কি চায়? তারা বলবেন, তারা আপনার কাছে জান্নাত চায়। তিনি জিজ্ঞাসা করবেন, তারা কি জান্নাত দেখেছে? ফেরেশতারা বলবেন, না। আপনার সত্তার কসম হে রব! তারা তা দেখেনি। তিনি জিজ্ঞাসা করবেন যদি তারা তা দেখত তবে তারা কি করত? তাঁরা বলবেন, যদি তারা তা দেখত তাহলে তারা জান্নাতের আরো বেশি লোভ করত, আরো অধিক চাইত এবং এর জন্য আরো অতিশয় উৎসাহী হয়ে উঠত। আল্লাহ তাআলা জিজ্ঞাসা করবেন, তারা কিসের থেকে আল্লাহর আশ্রয় চায়?

ফেরেশতাগণ বলবেন, জাহান্নাম থেকে। তিনি জিজ্ঞাসা করবেন, তারা কি জাহান্নাম দেখেছে? তাঁরা জবাব দিবেন, আল্লাহর কসম! হে রব! তারা জাহান্নাম দেখেনি। তিনি জিজ্ঞাসা করবেন, যদি তারা তা দেখত তখন তাদের কি হত? তারা বলবেন, যদি তারা তা দেখত, তবে তারা এ থেকে দ্রুত পালিয়ে যেত এবং একে সাংঘাতিক ভয় করত। তখন আল্লাহ তায়ালা বলবেন, আমি তোমাদের সাক্ষী রাখছি, আমি তাদের মাফ করে দিলাম। তখন ফেরেশতাদের একজন বলবেন, তাদের মধ্যে অমুক ব্যাক্তি আছে, যে তাদের অন্তর্ভুক্ত নয় বরং সে কোন প্রয়োজনে এসেছে। আল্লাহ তা’আলা বলবেন, তারা এমন উপবিষ্টকারীবৃন্দ যাদের বৈঠকে অংশগ্রহনকারী বিমুখ হয় না।  (সহিহ বুখারী হাদিস নম্বর ৫৯৬৬ ইসলামি ফাউন্ডেশন)।

মন্তব্যঃ এই হাদিস দ্বারা ষ্পষ্ট হল কুরআন তিয়ওয়াত এবং পরস্পর ইসলাম সম্পর্কে পর্যালোচনায় করা ও জিকিরের অন্তরভূক্ত। মুমিনের প্রতিটি আমলেই মহান আল্লাহর স্মরণ থাকে তাই প্রতিটি আমলকেই জিকিরে আমালি বা কর্মগত জিকির বলা যাবে।

১৯। জিকিরে লিসানি বা মৌখিক জিকিরঃ 

জিকিরে লিসানি হচ্ছে মৌখিক ভাবে যে সকল জিকির আদায় করা হয়। যেমনঃ কুরআন তিলওয়াত করা, ইসলামি ওয়াজ মাহফিল আয়োজন করা, নিয়মিত তাসবীহ তাহলীল আদায় করা ইত্যাদি। এই প্রকার জিকির মুখ জিহ্বার সাহায্য করা হয়। এই আমল তেমন কোন কষ্ট ছাড়াই কাজের ফাঁকে ফাঁকে এমনটি কাজের মাঝেও করা যায়। আজে বাজে গল্প না করে অধিকাংশ সময় মৌখিক জিকিরে ব্যস্ত থাকাই মুত্তাকি মুসলিমের কাজ হওয়া উচিত। তবে খাদ্য গ্রহণ কালে, মুখে খাদ্য চিবানো অবস্থায়  এই জিকির না করা ভাল। প্রস্রাব পায়খানা করার সময় জিকির করা যাবে না। আমাদের সমাজে জিকির বলতে এই জিকিরে লিসানি বা মৌখিক জিকিরই বুঝে থাকি। এই মৌখিক জিকির কে আবার চারটি পদ্ধতিতে আদায় করা হয়। পদ্ধতি চারটি হলোঃ

কুরআনে করিম পাঠ করা

মৌখিক বিভিন্ন বাক্য জিকির করা

প্রার্থনা বা আল্লাহ নিকট দোয়া করা 

ইস্তিগফার বা আল্লাহর নিকট ক্ষমা চাওয়া

 

২০। কুরআনে করিম পাঠ করাঃ

কুরআন হলো, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর উপর নাজিলকৃত আল্লাহ তাআলার কালাম। আল্লাহর কালাম বিধায় সাধারণ জিকির-আজকারের চেয়ে কোরআন পাঠ করা উত্তম।

আব্দুল্লাহ বিন মাসঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেন যে কিতাবুল্লাহর একটি অক্ষর পড়ল তার জন্য এর বিনিময়ে একটি নেকি অবধারিত। এবং তাকে একটি নেকির দশ গুণ ছাওয়াব প্রদান করা হবে। আমি বলছি না আলিফ লাম মীম একটি অক্ষর বরং আলিফ একটি অক্ষর, এবং লাম একটি অক্ষর, এবং মীম একটি অক্ষর। (তিরমিজি-২৭৩৫)।  

২১।  মৌখিক বিভিন্ন বাক্য জিকির করাঃ

ইউসাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি ছিলেন হিজরতকারিণী মহিলাদের একজন তিনি বলেন, আমাদেরকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ অবশ্যই তোমরা তাসবীহ (সুবহানাল্লাহ), তাহলীল (লা-ইলা-হা ইল্লাল্লাহ) ও তাক্বদীস (সুব্বুহুন কুদ্দূসুন রাব্বুনা ওয়া রাব্বুল মালাইকাতি ওয়ার রূহ অথবা সুবহানালা মালিকিল কুদ্দূস) আঙ্গুলের গিরায় হিসাব করে পড়বে। কেননা এগুলোকে ক্বিয়ামাতের দিন জিজ্ঞাসা করা হবে এবং কথা বলতে আদেশ দেয়া হবে। সুতরাং তোমরা রহমাত (অনুগ্রহের কারণ) সম্পর্কে উদাসীন থেকো না এবং তা ভুলে যেও না। (তিরমিজি-৩৫৮৩, আবূ দাঊদ ১৩৪৫, মিশকাত ২৩১৬, হাদিসের মান হাসান)

আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ অবশ্যই আমার এ (বাক্যে) বলা, সুবহান আল্লাহ, আলহামদুল্লিল্লাহ, অ-লাইলাহ ইল্লাহল্লাহ, আল্লাহু আকবার (আল্লাহ পবিত্র, সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর এবং আল্লাহ ছাড়া ইলাহ নেই, আল্লাহ মহান) পাঠ করা আমার অধিক পছন্দনীয় সে সব জিনিসের চাইতে, যার উপর সূর্য উদিত হয়। (সহিহ মুসলীম ৬৬০২ ইফাঃ)।

মন্তব্যঃ কাজেই কুরআন ও সুন্নাহ দ্বারা প্রমাণিত যে কোন বাক্য মহান আল্লাহ তাসবীহ, তাহলীল, তাহমীদ ও তাকবীর ইত্যাদি পড়া যায়।

২২।  প্রার্থনা বা আল্লাহ নিকট দোয়া করাঃ

মৌখিক জিকিরের অন্যতম হল প্রার্থনা বা আল্লাহ নিকট দোয়া করা। দোয়ার মাধ্যমে আল্লাহ জিকিরের পাশাপাশি মহান আল্লাহ নিকট বান্দার ফরিয়াদ পৌছে যায়। দোয়া দ্বারা আল্লাহ তাআলার নৈকট্য লাভ হয়, ইহকাল ও পরকালের প্রয়োজন পূরণ হয়। মহান আল্লাহও দোয়া করার নির্দেশ প্রদান করেছেন। তিনি এরশাদ করেন,

وَقَالَ رَبُّكُمُ ادْعُونِي أَسْتَجِبْ لَكُمْ إِنَّ الَّذِينَ يَسْتَكْبِرُونَ عَنْ عِبَادَتِي سَيَدْخُلُونَ جَهَنَّمَ دَاخِرِينَ

অর্থঃ তোমাদের পালনকর্তা বলেন, তোমরা আমাকে ডাক, আমি সাড়া দেব। যারা আমার এবাদতে অহংকার করে তারা সত্বরই জাহান্নামে দাখিল হবে লাঞ্ছিত হয়ে। (সুরা মু’মিন ৪০:৬০)।

জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে আমি বলতে শুনেছি : কোন ব্যক্তি (আল্লাহ তা‘আলার কাছে) কোন কিছু দু‘আ করলে আল্লাহ তা‘আলা তাকে তা দান করেন কিংবা তার পরিপ্রেক্ষিতে তার হতে কোন অকল্যান প্রতিহত করেন, যতক্ষণ পর্যন্ত সে কোন গুনাহের কাজে লিপ্ত হওয়ার বা আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করার জন্য প্রার্থনা না করে। (হাদিসের মান  হাসান, মিশকাত-২২৩৬, তিরমিজী – ৩৩৮১G

২৩। ইস্তিগফার বা আল্লাহর নিকট ক্ষমা চাওয়াঃ

বান্দা অন্যায় করে আর মহান আল্লাহ ক্ষমা করেন। ক্ষমা লাভের প্রধান হাতিয়ার হল ইস্তিগফার বা আল্লাহর নিকট ক্ষমা চাওয়া। আল্লাহর ক্ষমা লাভের জন্য তাঁর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করতে হবে। আল্লাহ বলেন,

* وَاسْتَغْفِرُواْ اللّهَ إِنَّ اللّهَ غَفُورٌ رَّحِيمٌ*

অর্থঃ ‘আর আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা কর। নিশ্চয়ই আল্লাহ ক্ষমাকারী, করুনাময়। (সুরা বাকারা ২:১৯৯)

অন্যত্র আল্লাহ বলেন,

وَمَن يَعْمَلْ سُوءًا أَوْ يَظْلِمْ نَفْسَهُ ثُمَّ يَسْتَغْفِرِ اللّهَ يَجِدِ اللّهَ غَفُورًا رَّحِيمًا

অর্থঃ যে গোনাহ, করে কিংবা নিজের অনিষ্ট করে, অতঃপর আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে, সে আল্লাহকে ক্ষমাশীল, করুণাময় পায়। (সুরা নিসা ৪:১০০)

অন্যত্র আল্লাহ বলেন,

وَاسْتَغْفِرْ لِذَنبِكَ وَلِلْمُؤْمِنِينَ وَالْمُؤْمِنَاتِ وَاللَّهُ يَعْلَمُ مُتَقَلَّبَكُمْ وَمَثْوَاكُمْ

অর্থঃ ক্ষমাপ্রার্থনা করুন, আপনার ক্রটির জন্যে এবং মুমিন পুরুষ ও নারীদের জন্যে। আল্লাহ তোমাদের গতিবিধি ও অবস্থান সম্পর্কে জ্ঞাত। (সুরা মুহাম্মাদ ৪৭:১৯)।

আবূ বুরদাহ (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাহাবী আগার্‌র (রাঃ) থেকে শুনেছি যে, ইবনু উমর (রাঃ) হাদীস বর্ণনা করেছিলেন। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ হে লোক সকল! তোমরা আল্লাহর কাছে তাওবা কর। কেননা আমি আল্লাহর কাছে দৈনিক একশ’ বার তাওবা করে থাকি। (সহিহ মুসলিম হাদিস ৬৬১৩ ইফাঃ)

মৌখিক জিকির আদায় করার জন্য তেমন কোন শর্ত নেই। বান্দা তার সময় সুযোগমত এই জিকির আদায় করতে পারে। কুরআন মুখন্ত তিলওয়াতের জন্য অজু শর্ত নয়। ঠিক তেমনি মহান আল্লাহ তাসবীহ, তাহলীল, তাহমীদ ও তাকবীর ইত্যাদি পড়া জন্যও অজু শর্ত নয়। মহান আল্লাহ নিকট প্রার্থনা করা বা তওবা করার জন্য কোন স্থান বা সময়ের সাথে সংশ্লিষ্ট নয়। মনে চাইলেই মহান আল্লাহর নিকট ফরিয়াদ করা যায়। কোন অন্যায় বা অশ্লীল কাজ হলেই তার নিকট ক্ষমা চেয়ে তওয়া করা যায়। কুরআন তিলওয়াত, তওবা, প্রার্থনা এবং তাসবীহ, তাহলীল, তাহমীদ ও তাকবীর ইত্যাদি সময় ও স্থানের সাথে থাকে সংশ্লিষ্ট নয়। কিন্তু কিছু মৌখিক জিকির আছে যা সময় ও স্থানের সাথে থাকে। সময় ও স্থানের সাথে থাকে সংশ্লিষ্ট গন্য করে জিকির কে তিনভাগে ভাগ করা যায়। যেমনঃ

ক। স্থানের সাথে সংশ্লিষ্ট জিকিরঃ

খ। সময়ের সাথে সংশ্লিষ্ট জিকিরঃ

গ। স্থানের ও সময় সাথে সংশ্লিষ্ট নয়ঃ

২৪। স্থানের সাথে সংশ্লিষ্ট জিকিরঃ

যে সকল জিকির নির্দিষ্ট স্থান পড়তে হয়, অন্য স্থানে পড়া যাবে না। অর্থাৎ জিকিরের বাক্যগুলি স্থানের জন্যই খাস। নিম্মের উদাহরনগুলি দেখলেই বিষয়টি পরিস্কার হয়ে যাবে।

১. কাপড় পরিধান এবং  কাপড় খোলার দোয়া

২. পায়খানায় প্রবেশ এবং বের হওয়ার দোয়া

৩. বাড়ি থেকে বের এবং ঘরে প্রবেশের সময় দোয়া

৪. মসজিদে প্রবেশের ও মসজিদ থেকে বের হওয়ার দোয়া

৫. কবর যিয়ারতের দোয়া

৬. বৈঠকের কাফফারা এর দোয়া

৭. আরাফাতের দিনে দো‘আ

৮. সাফা ও মারওয়ায় দাঁড়িয়ে যা পড়বে

২৫। সময়ের সাথে সংশ্লিষ্ট জিকিরঃ

যে সকল জিকির সময় সাথে সম্পর্কিত, অন্য সময় পড়া যাবে না।  অর্থাৎ জিকিরের বাক্যগুলি শুধু ঐ সময়ের জন্যই খাস। নিম্মর উদাহরনগুলি লক্ষ করি।

১. ঘুমানোর সময় ও ঘুম থেকে জেগে দোয়া

২. কাপড় পরিধানের সময় এবং  কাপড় খোলার সময়ের দোয়া

২. ওযুর পূর্বে এবং শেষ করার পর দোয়া

৩. আযানের দোয়া

৪. রুকূ সিজদা ও দুই সিজদার মাঝের দোয়া

৫. সালাম ফিরানোর পর যিকরসমূহ

৬. সকাল ও বিকালের যিক্‌রসমূহ

৭. দুঃস্বপ্ন দেখে দোয়া

৮. রোগী দেখতে গিয়ে দোয়া

৯. বৃষ্টি দেখলে দোয়া

১০. নতুন চাঁদ দেখে পড়ার দোয়া

১১. ইফতারের সময় রোযাদারের দোয়া

২৬। স্থান ও সময়ের সাথে সংশ্লিষ্ট নয়ঃ

যে সকল জিকির নির্দিষ্ট সময় বা স্থানের জন্য খাস নয়। যে কোন সময় যে কোন স্থানেই পড়া যায়। দোয়া করা একটি ইবাদাত। দোয়া করা জন্য স্থান, সময়, অজুর কোন শর্ত থাকে না। দোয়া করা কখন স্থানের ও সময় সাথে সংশ্লিষ্ট নয়। জিকিরে অন্যতম পদ্ধতি হলো দোয়া।  স্থানের ও সময় সাথে সংশ্লিষ্ট নয় এমন কিছু জিকিরের উদাহরণ হলোঃ

১. তাসবীহ, তাহমীদ, তাহলীল ও তাকবীর

২. তওবার দোয়া

৩. সাইয়্যাদুল ইস্তিগফার পড়া

৪. দাজ্জাল থেকে হিফাজতের দোয়া

৫. ঋন পরিশোধের  দোয়া

৬. বিভিন্ন ফজিলতপূর্ণ দোয়া পড়া

৭. ফজিলতপূর্ণ কুরআনের আয়াত বা সুরা তিলওয়াত করা

৮. কুরআন পাঠ করা

২৭। জিকির বলতে আমরা কি বুঝি?

আমাদের সমাজে জিকির বলেত সাধারণত শুধু মৌখিক জিকির বুঝে থাকি। আমাদের উপমহাদেশে অধিকাংশ লোক পীর মুরিদীতে বিশ্বাসি তাই আমাদের অধিকাংশের ধারন জিকির হলো নিজ নিজ পীর কর্তৃক তার মুরিদকে দেয়া অজিফা। যে অজিফা তিনি সকাল সন্ধ্যা পীরের আদেশ মত আদায় করে থাকেন। উপরের আলোচনায় দেখেছি জিকিরের যে প্রকারভেদ করা হয়েছে তার মধ্য এই সকল মৌখির জিকরও বিদ্যমান আছে। বান্দা অন্তর দ্বারা যে আল্লাহর জিকির করতে পারে বা সকল প্রকার আমলও যে জিকিরের অন্তরভূক্ত, এই বিষয়টি সাধারণের ধারানার বাহিরে। সাধারণ মুসলিমদের ধারনা, মৌখিক জিকিরের বাহিরে কোন আমল বা কাজকে সাধারন জিকিরের মধ্যে গন্য করা হয় না অথচ যে কাজে কর্মে আল্লাহ স্মরণ হবে তাও জিকিরের মধ্যে গন্য হবে। যারা আমরা মৌখিক জিকির কেই একমাত্র জিকির বলে আদায় করছি, তারাও অনেক সময় সুন্নাহ সম্মত জিকির না করে মনগড়া ভাবে আদায় করছি। কারন আমাদের সমাজে প্রচলিত যে সকল পীর আছেন, তারা নিজেদের পরিচয় ফুটিয়ে তুলতে অন্য পীর থেকে আলাদা আলাদ অজিফা প্রদান করেন, যা অনেক সময় সুন্নাহ সম্মত হয় না। তাই প্রথমে প্রদত্ত কিছু মৌখিক জিকির উল্লেখ করছি তার পরই আমাদের বিষয় জিকিরের বি্দআত সম্পর্কে আলোচনা করব। জিকির সম্পর্কে আলোচনা না করলে জিকিরের বিদআত বুঝা দায় তাই জিকির সম্পর্কে একটু আলোপাত করছি।

উপরের আলোচনায় দেখেছি মুমিনের প্রতিটি কাজই জিকিরের অন্তরভুক্ত তাই সে মৌখিকভাবে করুন, আমলের দ্বারা করুক কিংবা অন্তরে প্রকাশ করুক। অর্থাৎ মুমিন বান্দা যখন মহান আল্লাহকে খুশি করার জন্য অন্তর, মুখ, হাত, পা প্রভৃতি ব্যবহার কবরে তখন জিকির বলা যাবে। তা ছাড়া মহান আল্লাহও মহান গ্রন্থ আল কুরআন বিভিন্ন অর্থ জিকির ব্যবহার করছেন। জিকির যেমন সময় ও স্থানের সাথে সংশ্লিষ্ট, আবার কখনও সময় ও স্থানের সাথে সংশ্লিষ্ট নয়।

প্রথমে দেখব রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মৌখিক জিকির করার ক্ষেত্রে কি কি বাক্যে জিকির করছেন ও করতে বলেছেন। এই নিমিত্তে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কয়েকটি হাদিস উল্লেখ করছি।

০১। মুসআব ইবনু সা’দ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমার পিতা আমাকে হাদীস শুনিয়েছেন যে, তিনি বলেন, আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে বসা ছিলাম। তখন তিনি বললেনঃ তোমাদের মধ্যে কেউ কি প্রতিদিন এক হাজার নেকী অর্জন করতে সক্ষম? তখন সেখানে উপবিষ্টদের মধ্য থেকে এক প্রশ্নকারী বলল, আমাদের কেউ কিভাবে এক হাজার নেকী অর্জন করতে পারবে? তিনি বললেনঃ যে একশ’বার তাসবীহ (سبحان الله ) পাঠ করলে তার জন্য এক হাজার নেকী লিপিবদ্ধ করা হবে (অথবা) এবং তার থেকে এক হাজার গুনাহ মিটিয়ে দেওযা হবে। (সহিহ মুসলিম ৬৬০৭ ইসলামি ফাউন্ডেশন)।

০২। আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার ফাতিমা (রাঃ) একজন খাদিমের জন্য নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এলেন এবং কাজের অভিযোগ করলেন। তিনি বললেনঃ আমার কাছে তো কোন খাদিম নেই। তিনি বললেনঃ তবে আমি কি তোমাকে এমন কিছুর কথা বলবনা, যা তোমার খাদিম থেকে উত্তম? তা হল রাতে শয্যা গ্রহণের সময় তুমি ৩৩ বার সুবহানাল্লাহ, ৩৩ বার আলহামদুলিল্লাহ এবং ৩৪ বার আল্লাহু আকবার পাঠ করবে। (সহিহ মুসলিম ৬৬৭০ ইসলামি ফাউন্ডেশন)।

০৩। জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে আমি বলতে শুনেছি : “লা- ইলা-হা ইল্লাল্লাহ” অতি উত্তম যিক্‌র এবং “আলাহামদু লিল্লাহ্‌” অধিক উত্তম দু‘আ।

০৪। আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ

* لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ، وَحْدَهُ لاَ شَرِيكَ لَهُ، لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ، وَهْوَ عَلَى كُلِّ شَىْءٍ قَدِيرٌ  *

(এই বাক্যটি) যে ব্যাক্তি দিনের মধ্যে একশ বার পড়বে আল্লাহ ব্যতীত আর কোন ইলাহ নেই, তিনি এক, তার কোন অংশীদার নেই, রাজত্ব একমাত্র তারই, হামদ তারই, সব কিছুর উপর সর্বশক্তিমান” সে একশ গোলাম আযাদ করার সাওয়াব অর্জন করবে এবং তার জন্য একশটি নেকী লেখা হবে, আর তার একশটি গুনাহ মিটিয়ে দেওয়া হবে। আর সে দিন সন্ধ্যা পর্যন্ত এটা তার জন্য রক্ষা কবচে পরিণত হবে এবং তার চাইতে বেশী ফযীলত ওয়ালা আমল আর কারো হবে না। তবে যে ব্যাক্তি এ আমল তার চাইতেও বেশী করবে। (সহিহ বুখারী হাদিস নম্বর ৫৯৬১ ইসলামি ফাউন্ডেশন)।

আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যাক্তি প্রত্যহ একশত বার (سُبْحَانَ اللَّهِ وَبِحَمْدِهِ -আল্লাহ পবিত্র ও সমস্ত প্রশংসা তাঁরই) সুবাহানআল্লাহি ওয়া বিহামদিহি বলবে তার গুনাহগুলি মাফ করে দেওয়া হবে তা সমুদ্রের ফেনা পরিমান হলেও। (সহিহ বুখারী হাদিস নম্বর ৫৯৬৩ ইসলামি ফাউন্ডেশন, সহিহ মুসলিম ৬৫৯৯ ইসলামি ফাউন্ডেশন)।

০৫। আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ দুটি বাক্য এমন যে, মুখে তার উচ্চারন অতি সহজ কিন্তু পাল্লায় অনেক ভারী, আর আল্লাহর কাছে অতি প্রিয়। তা হলঃ সুবাহানআল্লাহি ওয়া বিহামদিহি সুবাহানআল্লাহিল আযীম। (সহিহ বুখারী হাদিস নম্বর ৫৯৬৪ ইসলামি ফাউন্ডেশন)

০৬। আবু হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ যে লোক সকালে ও বিকালে একশত বার বলেঃ সুবাহানাল্লহি ওয়া বিহামদিহী”, কিয়ামতের দিন তার চাইতে উত্তম (আমালকারী) আর কেউ হবে না। তবে যে লোক তার ন্যায় কিংবা তার চাইতে অধিক পরিমান তা বলে (সে উত্তম ‘আমালকারী বলে গণ্য হবে)। (তিরমিজী ৩৪৭৯ হাদিসেরমান সহিহ)।

০৭। আবূ মালিক (রহঃ) এর পিতার সুত্রে বর্ণিত। তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে শুনেছেন যে, তাঁর কাছে জনৈক ব্যক্তি এসে বলল, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমি যখন আমার রবের কাছে প্রার্থনা করব তখন কিভাবে তা ব্যক্ত করব? তিনি বললেন, তুমি বল,اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي وَارْحَمْنِي وَعَافِنِي وَارْزُقْنِي (হে আল্লাহ! আপনি আমাকে ক্ষমা করে দিন, আমার প্রতি রহম করুন, আমাকে মাফ করে দিন এবং আমাকে জীবিকা দান করুন।) আর (দু’আ করার সময়) বৃদ্ধাঙ্গুলী ব্যতীত সব আংশুল একত্র করবে। (তিনি বললেন) এই শব্দগুলো তোমার দুনিয়া ও আখিরাতকে একত্র করে দেবে। (সহিহ মুসলিম ৬৬০৬ ইসলামি ফাউন্ডেশন)।

০৮। ইবনু মাসউদ রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ মি’রাজের রাতে আমি ইবরাহীম (আঃ)-এর সঙ্গে দেখা করেছি। তিনি বললেনঃ হে মুহাম্মাদ” আপনার উম্মাতকে আমার সালাম পৌছিয়ে দিন এবং তাদেরকে জানান যে, জান্নাতের যামীন অতীব সুগন্ধি সমৃদ্ধ এবং সেখানকার পানি অত্যন্ত সুস্বাদু। তা একটি সমতল ভূমি এবং তার গাছপালা হল “সুবহানাল্লাহ ওয়ালহামৃদু লিল্লাহ ওয়ালা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার”। (তিরমিজি ৩৪৫২ হাদিসের মান হাসান সহিহ)।

০৯। ১১। আবূ হুরাইরাহ রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিতঃ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন , আল্লাহ্‌ তা’আলার নিরানব্বইটি নাম আছে অর্থাৎ এক কম এক শত। যে লোক এই নামসমুহ মুখস্ত করবে বা পড়বে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। (তিরমিজি ৩৫০৬, মিশকাত ২২৮৮, সহিহ বুখারি ও সহিহ মুসলিম।

১০। সা’দ রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্নিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এক বেদুঈন এসে বলল, আমাকে একটি কালাম শিক্ষা দিন, যা আমি পাঠ করব। তিনি বললেন, তুমি বলবে- 

لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيكَ لَهُ اللَّهُ أَكْبَرُ كَبِيرًا وَالْحَمْدُ لِلَّهِ كَثِيرًا سُبْحَانَ اللَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ لاَ حَوْلَ وَلاَ قُوَّةَ إِلاَّ بِاللَّهِ الْعَزِيزِ الْحَكِيمِ

“আল্লাহ ব্যতীত কোন ইলাহ নেই, তিনি একক, তাঁর কোন শরীক নেই, আল্লাহ মহান, সর্বাপেক্ষা মহান, আল্লাহরই জন্য যাবতীয় প্রশংসা এবং আমি আল্লাহ রাব্বূল আলামীনের পবিত্রতা জ্ঞাপন করছি। আল্লাহর সাহায্য ব্যতীত ভাল কাজ করার এবং মন্দ কাজ থেকে বিরত থাকার সাধ্য কারো নেই, তিনি পরাক্রমশালী জ্ঞানবান।”

সে বলল, এই সব তো আমার প্রতিপালকের জন্য। আমার জন্য কি? তিনি বললেন, বল,

للَّهُمَّ اغْفِرْ لِي وَارْحَمْنِي وَاهْدِنِي وَارْزُقْنِي

হে আল্লাহ! আপনি আমাকে ক্ষমা করুন, আমার প্রতি রহম করুন, আমাকে হিদায়াত নসীব করুন এবং আমাকে রিযক দান করুন। মূসা (রহঃ) বলেন, আমার মনে হয় তিনি (عَافِنِي) আল্লাহ আমাকে ক্ষমা করুনও বলেছেন। তবে আমার তা সঠিক মনে নেই। ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) তার হাদীসে মূসা (রহঃ) এর এ উক্তি উল্লেখ করেননি। (সহিহ মুসলিম ৬৬০৩ ইসলামি ফাউন্ডেশন)।

১১। আবূ মালিক আশজায়ী (রহঃ) তাঁর পিতার সুত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, কোন ব্যক্তি ইসলাম গ্রহণ করলে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে এই দুআ শিক্ষা দিতেনঃ

اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي وَارْحَمْنِي وَاهْدِنِي وَارْزُقْنِي

“হে আল্লাহ! আপনি আমাকে ক্ষমা করুন, আমার প্রতি রহম করুন, আমাকে হিদায়াত করুন এবং আমাকে জীবিকা দান করুন।” (সহিহ মুসলিম ৬৬০৪ ইসলামি ফাউন্ডেশন)।

১২। শাদ্দাদ ইবনু আউস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সাইয়্যেদুল ইস্তিগফার হলো বান্দার এ দু’আ পড়া- “হে আল্লাহ তুমিই আমার প্রতিপালক। তুমি ছাড়া কোন ইলাহ নেই। তুমিই আমাকে সৃষ্টি করেছ। আমি তোমারই গোলাম। আমি যথাসাধ্য তোমার সঙ্গে প্রতিজ্ঞা ও অঙ্গীকারের উপর আছি। আমি আমার সব কৃতকর্মের কুফল থেকে তোমার কাছে পানাহ চাচ্ছি। তুমি আমার প্রতি তোমার যে নিয়ামত দিয়েছ তা স্বীকার করছি। আর আমার কৃত গুনাহের কথাও স্বীকার করছি। তুমি আমাকে মাফ করে দাও। কারন তুমি ছাড়া কেউ গুনাহ ক্ষমা করতে পারবে না।

যে ব্যাক্তি দিনের (সকাল) বেলায় দৃঢ় বিশ্বাসের সাথে এ ইস্তিগফার পড়বে আর সন্ধা হওয়ার আগেই সে মারা যাবে, সে জান্নাতী হবে। আর যে ব্যাক্তি রাতের (প্রথম) বেলায় দৃঢ় বিশ্বাসের সাথে এ দু’আ পড়ে নেবে আর সে ভোর হওয়ার আগেই মারা যাবে সে জান্নাতী হবে। সাইয়্যেদুল ইস্তিগফার বাংলা উচ্চারন সহঃ

(اللَّهُمَّ أَنْتَ رَبِّي لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ خَلَقْتَنِي وَأَنَا عَبْدُكَ وَأَنَا عَلَى عَهْدِكَ وَوَعْدِكَ مَا اسْتَطَعْتُ أَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّ مَا صَنَعْتُ أَبُوءُ لَكَ بِنِعْمَتِكَ عَلَيَّ وَأَبُوءُ لَكَ بِذَنْبِي فَاغْفِرْ لِي فَإِنَّهُ لَا يَغْفِرُ الذُّنُوبَ إِلَّا أَنْتَ )

উচ্চারণঃ “আল্লাহুম্মা আনতা রব্বী লা-ইলাহা ইল্লা আনতা খালাক্কতানী ওয়া আনা আ’বদুকা ওয়া আনা আ’লা আহ্‌দিকা ওয়া ও’য়াদিকা মাসতাত’তু আ’উযুবিকা মিন শার্‌রি মা ছা’নাতু আবূউলাকা বিনি’মাতিকা আ’লাইয়্যা ওয়া আবূউলাকা বিযানবী ফাগ্‌ফির্‌লী ফাইন্নাহু লা-ইয়াগফিরুয্‌যুনূবা ইল্লা আনতা”। (সহিহ বুখারী হাদিস নম্বর ৫৮৬৭ ইসলামি ফাউন্ডেশন)।

১৩। আবদুর রাহমান ইবনু আবূ লায়লা (রহঃ) বর্ণনা করেন, একবার আমার সঙ্গে কাব ইবনু উজরাহ রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এর সাক্ষাত হলো। তিনি বললেনঃ আমি কি তোমাকে একটি হাদিয়া দেবো না। তা হল এইঃ একদিন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের নিকট বেরিয়ে আসলেন, তখন আমরা বললাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমরা আপনাকে কেমন করে সালাম দেব, আমরা আপনার উপর দরুদ কিভাবে পড়বো? তিনি বললেনঃ তোমরা বলবে, (দুরুদে ইব্রাহীম ইয়া আল্লাহ আপনি মুহাম্মাদের উপর ও তার পরিবারবর্গের উপর খাস রহমত বর্ষণ করুন, যেমন আপনি ইবরাহীম আলাইহিস সালাম এর পরিবারের উপর খাস রহমাত বর্ষণ করেছেন। নিশ্চয়ই আপনি প্রশংসিত, উচ্চ মর্যাদাশীল। ইয়া আল্লাহ! আপনি মুহাম্মদের উপর ও তার পরিবারবর্গের উপর বরকত নাযিল করুন, যেমন আপনি ইববাহীম আলাইহিস সালাম এর পরিবারবর্গের উপর বরকত নাযীল করেছেন। নিশ্চয়ই আপনি প্রশংসিত উচ্চ মর্যাদাশীল। (সহিহ বুখারী হাদিস নম্বর ৫৯১৭ ইসলামি ফাউন্ডেশন)।

১৪। আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যখন কারী (ইমাম) আমীন বলবে তখন তোমরাও আমীন বলবে। কারন এ সময় ফিরিশতাগণ আমীন বলে থাকেন। সুতরাং যার আমীন বলা ফিরিশতাদের আমীন বলার সাথে মিলে যাবে, তার পূর্বের সবগুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে। (সহিহ বুখারী হাদিস নম্বর ৫৯৬০ ইসলামি ফাউন্ডেশন)।

১৫। উসমান ইবনু ‘আফ্‌ফান (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, প্রতিদিন ভোরে ও প্রতি রাতের সন্ধ্যায় যে কোন বান্দা এ দু‘আটি তিনবার পাঠ করবে কোন কিছুই তার অনিষ্ট করতে পারবে না। “বিসমিল্লা-হিল্লাযী লা ইয়াযুর্‌রু মা‘আস্‌মিহি শাইয়ূন ফিল আরযি, ওয়ালা ফিস্‌ সামায়ি ওয়া হুয়াস্‌ সামীউল ‘আলীম”। (অর্থঃ “আল্লাহ তা‘আলার নামে” যাঁর নামের বারাকাতে আকাশ ও মাটির কোন কিছুই কোন অনিষ্ট করতে পারে না। তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞানী)। আবান (রহঃ)-এর শরীরের একাংশ পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে পড়ে। (উক্ত হাদীস রিওয়ায়াতকালে) এক লোক (অধঃস্তন বর্ণনাকারী) তার দিকে তাকাতে থাকলে তিনি তাকে বলেন, তুমি কি প্রত্যক্ষ করছো? শোন! আমি তোমার কাছে যে হাদীস রিওয়ায়াত করেছি তা অবিকল বর্ণনা করেছি। তবে আমি যেদিন পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়েছি ঐ দু‘আটি পাঠ করিনি এবং আল্লাহ তা‘আলা ভাগ্যের লিখন আমার উপর কার্যকর করেছেন। (তিরমিজি ৩৩৮৮, ইবনু মাজাহ ৩৮৬৯, হাদিসের মান হাসান সহিহ)।

১৬। মু’আয ইবনু জাবাল (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সামনে দুই লোক পরস্পরকে গালি গালাজ করে। এমনকি তাদের একজনের মুখমণ্ডলের রাগের ছাপ স্পষ্ট হয়ে উঠে। সে সময় নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ নিশ্চয় আমি এমন একটি বাক্য জানি, এ ব্যক্তিটি যদি তা উচ্চারণ করত তবে অবশ্যই তার ক্রোধ চলে যেত। তা হলঃ “আমি বিতাড়িত শাইতান হতে আল্লাহ তা’আলার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করি। (তিরমিজি ৩৪৫২, সহিহ বুখারী, সহিহ মুসলিম, হাদিসের মান সহিহ

এমনিভাবে জিকিরের উপর শত শত সহিহ হাদিস হাদিসের গ্রন্থগুলিতে উল্লেখ আছে। উপরের হাদিসগুলির মাধ্যমে মহান আল্লাহ মৌখিক জিকির করার মত কতগুলি বাক্য সম্পর্কে জানত পারলাম যা পরবর্তিতে জিকিরের বিদআত সম্পর্কে আলোচনার সময় কাজে আসবে।

সংকলনেঃ মোহাম্মাদ ইস্রাফিল হোসাইন। (বিএ ইন এ্যারাবিক লিটারেচার, ইসলামিক হিস্টরী এন্ড ইসলামিক স্টাডিস)

Leave a comment