সালাত কেন্দ্রিক বিদআত ও মতবিরোধ চতুর্থ কিস্তি

সালাত কেন্দ্রিক বিদআত ও মতবিরোধ চতুর্থ কিস্তি

সংকলনেঃ মোহাম্মাদ ইস্রাফিল হোসাইন

২০। জামাতে সালাত শেষে সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করাঃ

আমাদের উপমহাদেশে সালাত শেষে ইমাম মুক্তাদি মিলে দলবদ্ধ হয়ে মুনাজাত একটি বহুল প্রচলিত কাজ। মুসলিমগণ ব্যাপকভাবে এভাবে দোয়া করে আসছে। সালাতে পরের এই সম্মিলিত দোয়া নিয়ে সমাজে ব্যাপক বিরোধ দেখা যায়। এর পক্ষে বিপক্ষে বহু আলেমকে লিখতে ও কথা বলতে দেখা যায়। সালাতে ভিতরে ও বাহিরে দোয়া কথা সহিহ হাদিস দ্বারা প্রমানিত। যারা সালাত শেষে সম্মিলিত দোয়াকে বিদআত বলেন তারা কিন্তু সালাত শেষে এককভাবে দোয়া, তাসবিহ তাহলিল করাকে বিদাআত বলেন না। তারা শুধু সালাতে শেষে হাত তুলে সম্মিলিত দোয়াক বিদআত বলেছেন। আলোচনার প্রথমে প্রমান করব যে, সালাতই দোয়া। সালাত আদায় করা নিশ্চয়ই একটি বড় ফরজ ইবাদাত। সালাত আদায় ইবাদতের পাশাপাশি দোয়ও। সালাতে মাঝে দোয়া করা নিয়ে কোন প্রকার মতবিরোধ নেই। সালাতে মাঝে অনেক স্থানে দোয়া করা সহিহ হাদিস দ্বারা প্রমানিত। স্থানগুলী হলোঃ

১। তাকবীরে তাহ্‌রীমার পর

২। সুরা ফাতির দ্বারা (শেষ অংশে)

৩। রুকুতে

৪। সিজদায়

৫। দুই সিজদার মাঝে

৬। তাশাহুদ এবং তাশাহুদের পরে

৭। বিতের সালাতে দোয়া কুনুতের মাধ্যমে

উপরে বর্ণিত সালাতের দোয়া স্থানগুলি সম্পর্কে খুবই সংক্ষিপ্ত দলীল পেশ করা হলঃ

১। তাকবীরে তাহ্‌রীমার পরঃ

তাকবীরে তাহ্‌রীমার পর সালাত শুরুর জন্য যে ছানা পড়া হয় তা মুলত দোয়া। যেমন তাকবীরে তাহরীমার পর বড়া হয়ঃ

আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকবীরে ও কিরাআতের মধ্যে কিছুক্ষণ চুপ করে থাকতেন। আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমার মাতাপিতা আপনার উপর কুরবান হোক, তাকবীর ও কিরাআত এর মধ্যে চুপ থাকার সময় আপনি কী পাঠ করে থাকেন? তিনি বললেনঃ এ সময় আমি বলিঃ

 *اللَّهُمَّ بَاعِدْ بَيْنِي وَبَيْنَ خَطَايَاىَ كَمَا بَاعَدْتَ بَيْنَ الْمَشْرِقِ وَالْمَغْرِبِ، اللَّهُمَّ نَقِّنِي مِنَ الْخَطَايَا كَمَا يُنَقَّى الثَّوْبُ الأَبْيَضُ مِنَ الدَّنَسِ، اللَّهُمَّ اغْسِلْ خَطَايَاىَ بِالْمَاءِ وَالثَّلْجِ وَالْبَرَدِ ‏”‏‏.‏*

(আল্লাহুম্মা বা-ইদ-বাইনি ওয়াবায়না খাতা ইয়া ইয়া-কামা বা আদতা বাইনাল মাশরিকি ওয়ালমাগরিবি, আল্লাহুম্মা নাক্কিনি মিনাল খাতাইয়া কামা ইউ নাক্কাস সাউবুল আবইয়াযু মিনাদদানাস্‌ , আল্লাহুম্মাগসিল খাতা ইয়া ইয়া বিল্‌মায়ি ওয়াস্‌সালজি ওয়ালবারাদ)।

হে আল্লাহ্! আপনি মাশরিক ও মাগরিবের মধ্যে যেরূপ দুরত্ব সৃষ্টি করেছেন, আমার ও আমার ত্রুটি-বিচ্যুতির মধ্যে ঠিক তদ্রুপ দূরত্ব সৃষ্টি করে দিন। হে আল্লাহ! শুভ্র বস্ত্রকে যেরূপ নির্মল করা হয় আমাকেও সেরূপ পাক-সাফ করুন। আমার অপরাধসমূহ পানি, বরফ ও হিমশিলা দ্বারা বিধৌত করে দিন। (সহিহ বুখারী ৭০৮ ইফাঃ, ৭৪৪ তাওহীদ)।

২। সুরা ফাতির দ্বারা (শেষ অংশে): সুরা ফাতির শেষ অংশে হলোঃ

ٱهۡدِنَا ٱلصِّرَٲطَ ٱلۡمُسۡتَقِيمَ (٦) صِرَٲطَ ٱلَّذِينَ أَنۡعَمۡتَ عَلَيۡهِمۡ غَيۡرِ ٱلۡمَغۡضُوبِ عَلَيۡهِمۡ وَلَا ٱلضَّآلِّينَ (٧)

অর্থঃ তুমি আমাদের সোজা পথ দেখাও। তাদের পথ যাদের প্রতি তুমি অনুগ্রহ করেছ। যাদের ওপর গযব পড়েনি এবং যারা পথভ্রষ্ট হয়নি। (সুরা ফাতিহা ১:৬-৭)

** ফাতিহার এই শেষ অংশটুকু দোয়া।

৩। রুকুতে দোয়াঃ

আয়িশাহ্ (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রুকূ‘ ও সাজদাহ্য় এ দু‘আ পড়তেন (سُبْحَانَكَ اللَّهُمَّ رَبَّنَا وَبِحَمْدِكَ اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي) ‘‘হে আমাদের রব আল্লাহ্! আপনার পবিত্রতা বর্ণনা করছি এবং আপনার প্রশংসা করছি। হে আল্লাহ্! আপনি আমাকে ক্ষমা করে দিন’’। (সহিহ বুখারি ৭৯৪ তাওহীদ,  ৭৫০ আধুনিক, ৭৫৮ ইফাঃ)

৪। সিজদায়ঃ

আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। (একরাতে) আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে তাঁর বিছানায় না পেয়ে তাঁকে হাতড়িয়ে তালাশ করতে লাগলাম। আমি মনে করেছিলাম তিনি তার অন্য কোন স্ত্রীর নিকট গিয়ে থাকবেন। এমতাবস্থায় আমার হাত তাঁর উপর পতিত হলো, তখন তিনি সিজদায় থেকে বলছিলেনঃ اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي مَا أَسْرَرْتُ وَمَا أَعْلَنْتُ 

(সুনানে নাসাঈ ১১২৭)

আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রুকূ এবং সিজদায বলতেন,

« رَبَّنَا وَبِحَمْدِكَ، اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي سُبْحَانَكَ اللَّهُمَّ »   

এর দ্বারা তিনি কুরআনের মর্ম বর্ণনা করতেন। (সুনানে নাসাঈ ১০৪৭)

৫। দুই সিজদার মাঝেঃ

ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দু’সাজদার মাঝখানে (বসে) বলতেনঃ

«اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي، وَارْحَمْنِي، وَاهْدِنِي، وَعَافِنِي، وَارْزُقْنِي»

(আল্লাহুম্মাগ ফিরলী, ওয়ারহামনী, ওয়াহদিনী, ওয়া আফিনী, ওয়ারযুকনী)।

অর্থঃ হে প্রভু! আমায় ক্ষমা করুন, আমাকে দয়া করুন, আমাকে পথ প্রদর্শন করুন, আমাকে সুখী করুন এবং আমাকে রিযিক দান করুন।) হাকিম একে সহীহ বলেছেন। (আবূ দাউদ ৮৫০, তিরমিযী ২৮৪, ইবনু মাজাহ ৮৯৮)

৬। তাশাহুদ এবং তাশাহুদের পরেঃ

তাশাহুদের অর্থ দেখুন এটা মুলত একটি দোয়া। পরবর্তিতে যে দুরুদ ও দোয়া মাসুরা বড়া হয় তাও দোয়া। দুরুদ হলো এর জন্য দোয়া। আর দোয়া মাসুরা হলো নিজের জন্য দোয়া। ইহা ছাড়াও তাশাহুদের বৈঠকে বহু দুয়ার কথা সহিহ হাদিস সমুহে উল্লেখ আছে। যেমনঃ

ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে তাশাহ্হুদ শিক্ষা দিতেন, যেমন তিনি আমাদেরকে কুরআনের সূরাহ শিখাতেন। তিনি বলতেনঃ

*التَّحِيَّاتُ الْمُبَارَكَاتُ الصَّلَوَاتُ الطَّيِّبَاتُ لِلَّهِ السَّلاَمُ عَلَيْكَ أَيُّهَا النَّبِيُّ وَرَحْمَةُ اللَّهِ وَبَرَكَاتُهُ السَّلاَمُ عَلَيْنَا وَعَلَى عِبَادِ اللَّهِ الصَّالِحِينَ أَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ*

অর্থঃ সব তাযীম ভক্তি-শ্রদ্ধা, নামায, সব পবিত্র ইবাদত-বন্দেগী আল্লাহর জন্য, আল্লাহর উদ্দেশ্যে। হে নাবী, আপনার উপর সালাম এবং আপনার উপর আল্লাহ তা’আলার অসীম রহমত ও বরকত। আমাদের জন্য এবং আল্লাহর অন্যান্য নেক বান্দার জন্য আল্লাহর পক্ষ হতে শান্তি অবতীর্ন হোক। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, এক আল্লাহ ছাড়া কোন উপাস্য নেই এবং আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর রাসূল। (ইবনে মাজহ ৯০০, তিরমিযী ২৯০, নাসায়ী ১১৭৪)

আবূ বাকর সিদ্দীক (রাযি.) হতে বর্ণিত। একদা তিনি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট আরয করলেন, আমাকে সালাতে পাঠ করার জন্য একটি দু‘আ শিখিয়ে দিন। তিনি বললেন, এ দু‘আটি বলবে-

 اللَّهُمَّ إِنِّي ظَلَمْتُ نَفْسِي ظُلْمًا كَثِيرًا وَلاَ يَغْفِرُ الذُّنُوبَ إِلاَّ أَنْتَ فَاغْفِرْ لِي مَغْفِرَةً مِنْ عِنْدِكَ وَارْحَمْنِي إِنَّك أَنْتَ الْغَفُورُ الرَّحِيمُ

‘‘হে আল্লাহ্! আমি নিজের উপর অধিক জুলুম করেছি। আপনি ছাড়া সে অপরাধ ক্ষমা করার আর কেউ নেই। আপনার পক্ষ হতে আমাকে তা ক্ষমা করে দিন এবং আমার উপর রহমত বর্ষণ করুন। নিশ্চয়ই আপনি ক্ষমাশীল ও দয়াবান।’’ (সহিহ বুখারী ৭৯৫ ইফাঃ)

৭। বিতের সালাতে দোয়া কুনুতের মাধ্যমেঃ

নামই হলো দুয়া কুনুত। কাজেই ব্যাখ্যা করার কোন প্রয়োজন নাই। দোয়া কুনুতের অর্থের প্রতি খেয়াল করলে দেখা যাবে, ইহা অন্যতম একটি শ্রেষ্ঠ দোয়া।

মন্তব্যঃ যারা আরবী ভাষা বুঝে তারা এই সকল স্থানে দোয়া করে থাকে বিধায় তারা সালাতের পর আর দোয়া করাকে জরুরী মনে করেনা। তারা সালাতের পর শুধু হাদিসে বর্ণিত সুন্নাহ সম্মত দোয়া করে থাকেন। অপর পক্ষে অনারব বা যাদের আবরী ভাষার জ্ঞান নাই, তারা সালাত আদায় করে ঠিক কিন্তু সালাতে কি পড়ল বা বলল তারা বুঝে না। তারা সালাতের পর দোয়া করতে ব্যস্ত হয়ে যায়। সালাতে পর দোয়া না করলে তাদের মনে হয় আমরা সালাত এখনও শেষ হয় নাই। সালাতের মাধ্যমে যে দোয়া করা যায় এই জ্ঞান আমাদের নাই। আমরা সালাতকে শুধু সালাত হিসাবে জানি, সালাত যে একটি দোয়া এই ধারনা আমাদের নাই। প্রতি রাকাতে সুরা ফাতিহা পড়া ওয়াজিব এই সুরা ফাতিহা যে একটি দোয়া সেই জ্ঞানও আমাদের সমাজের অনেক অজ্ঞ মুসলিম রাখে না।

২১।ফরজ সালাতের পর দোয়াঃ

সালাতে পরে দোয়া করাও সহিহ হাদিস দ্বারা প্রমানি। অনেক বলে থাকেন সালাতের পর দোয়া করা বিদআত তাদের এই কথা সহিহ হাদিস বিরোধী। তার দলীল সুনানে তিরমিজতে বর্ণিত এই সহিহ হাদিসটি।

আবু উমামা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, জিজ্ঞাসা করা হয়েছিলঃ ইয়া রাসুলাল্লাহ! কোন দু’আ বেশী কবুল হয়? তিনি বললেন, শেষ রাতের মাঝে আর ফরয সালাতের পরে। (সুনানে তিরমিযী ৩৪৯৯ ইসলামি ফাউন্ডেশন।

আবূ উমামাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, জিজ্ঞেস করা হলো, হে আল্লাহর রসূল! কোন্ (সময়ের) দু‘আ (আল্লাহর কাছে) বেশী শ্রুতি হয়। তিনি বললেন, শেষ রাতের মধ্যের (দু‘আ) এবং ফরয সলাতের শেষের দু‘আ। (মিসকাতুল মাসাবীহ ৯৬৮, আত তারগীব ১৬৪৮)

আলোকে দেখা যায় রাসূলুল্লাহ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ফরয সালাতের পর দোয়া কবুল হয়। তার অর্থ হল, নিশ্চয় ফরজ সালাতের পর দোয়া আছে। হ্যা, রাসূলুল্লাহ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ফরজ সালাতের পর দোয়া করেছেন কিন্তু তিনি এককভাবে দোয়া করছেন। ফরজ সালাতের পর সম্মিলিত দোয়া করেন নাই। এই জন্য দেখা যায় সালাতে পর বর্ণিত প্রায় প্রতিটি দোয়া রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একবচন শব্দ ব্যবহার করেছেন। তবে তিনি সকলকে সঙ্গে নিয়ে দুআটি করলে বহু বচন ব্যবাহার করতেন। সহিহ হাদিসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সালাম ফিরনোর পর তিনবার আস্তাগফিরুল্লাহ (আমি আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাচ্ছি) বলেছেন। তিনি যদি এটা সকলকে নিয়ে করতেন তাহলে নাস্তাগফিরুল্লাহ (আমরা আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাচ্ছি) বলতেন।

২২।ফরজ সালাত পর কি দোয়া করতেন?

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ফরজ সালাতের পর সাহাবীদের দিকে ফিরে বসাতেন। এই সময় তিনি বিভিন্ন তাসবিহ তাহলিল আদায় করতেন। তার আমল সম্পর্কে প্রায় সকল হাদিসের গ্রন্থে বিশদভাবে বর্ণিত হয়েছে। সেখান থেকে রেফারেন্সসহ কিছু সহিহ হাদিস তুলে ধরলাম। যাতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর আমল সম্পর্কে একটা সঠিক ধারনা চলে আসে। 

সালাতের পরে জিকির সম্পর্কে মহান আল্লাহর ঘোষনাঃ

فَإِذَا قَضَيْتُمُ الصَّلاَةَ فَاذْكُرُواْ اللّهَ قِيَامًا وَقُعُودًا**

অতঃপর যখন তোমরা নামায সম্পন্ন কর, তখন দন্ডায়মান, উপবিষ্ট ও শায়িত অবস্থায় আল্লাহকে স্মরণ কর। (সুরা নিসা ৪:১০৩)

মহান আল্লাহ আরও বলেন,

*وَمِنَ اللَّيْلِ فَسَبِّحْهُ وَأَدْبَارَ السُّجُودِ*

রাত্রির কিছু অংশে তাঁর পবিত্রতা ঘোষণা করুন এবং নামাযের পরেও। (সুরা ক্বাফ ৫০:৪০)

১। উম্মুল মু’মিনীন উম্মু সালামাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাম ফিরানোর পর নিজ জায়গায় কিছুক্ষণ অপেক্ষা করতেন। ইবনু শিহাব (রহ.) বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর বসে থাকার কারণ আল্লাহ্ই অধিক জ্ঞাত। তবে আমার মনে হয় সালাতের পর মহিলাগণ যাতে ফিরে যাওয়ার সুযোগ পান। (সহিহ বুখারী ৮৪৯ তাওহীদ, ৮০৮ ইফাঃ)

২। ইয়াযীদ ইবনু আসওয়াদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি (একদা) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে ফজরের সালাত আদায় করেছিলেন। যখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাত শেষ করলেন তখন তিনি মুসল্লীদের দিকে ফিরে বসলেন। (সুনানে নাসাঈ ১৩৩৭)

৩। উম্মুল মু’মিনীন ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সলাতের সালাম ফিরাবার পর শুধু এ দু‘আটি শেষ করার পরিমাণ সময় অপেক্ষা করতেন, ‘‘আল্ল-হুম্মা আন্‌তাস সালা-ম, ওয়া মিনকাস্ সালা-ম, তাবা-রকতা ইয়া- যালজালা-লি ওয়াল ইকর-ম’’ (অর্থা- হে আল্লাহ! তুমিই শান্তির আঁধার। তোমার পক্ষ থেকেই শান্তি। তুমি বারাকাতময় হে মহামহিম ও মহা সম্মানিত)। (মিসকাতুল মাসাবি ৯৬০, সহিহ মুসলিম )

৩। সালাম ফিরানোর পর বসে বসে কিছুক্ষণ যিকর-আযকার আদায় করা সম্পর্কে বহু সহিহ হাদিস বর্ণিত হয়েছে। দলীল হিসাবে কিছু উপস্থাপন করা হলোঃ

৪। আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সালাতের সমাপ্তি তাঁর তাকবীর দ্বারা বুঝতে পারতাম। (সহিহ মুসলিম ১১৯৪ ইফাঃ, সুনানে নাসাঈ ১৩৩৮)

৫। ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, তাকবীর শুনে আমি বুঝতে পারতাম সালাত শেষ হয়েছে। (সহহি বুখারী ৮০২ ইফাঃ)

৬। সাওবান (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন তার সালাত শেষ করতেন, তখন তিনবার ইস্তিগফার- করতেন এবং বলতেনঃ

*اللَّهُمَّ أَنْتَ السَّلاَمُ وَمِنْكَ السَّلاَمُ تَبَارَكْتَ ذَا الْجَلاَلِ وَالإِكْرَامِ*

(আল্লাহুম্মা আনতাস সালাম, ওয়া মিনকাস সালাম, তাবারকতা ইয়া যাল-জালালে ওয়াল ইকরাম)।

অর্থঃ হে আল্লাহ! আপনি শান্তিময় এবং আপনার থেকেই শান্তি। আপনি বরকতময় হে মহিমান্বিত ও সম্মানিত। ওয়ালীদ বলেন, আমি আওযাঈকে জিজ্ঞাসা করলাম, ইস্তিগফার কেমন করে? তিনি বললেন, আস্‌তাগফিরুল্লাহ, আস্‌তাগফিরুল্লাহ বলবে। (সহিহ মুসলিম ১২১২ ইফাঃ, সহিহ বুখারি ৮০৪ ইফাঃ, সুনানে আবু দাউদ ১৫১৩ ইফাঃ)

৭। মুগীর ইবনু শু’বার আযাদকৃত গোলাম ওয়াররাদ (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, মুগীরা ইবনু শুবা (রহঃ) মুআবিয়া (রাঃ) কে লিখে পাঠালেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাত শেষে সালাম ফিরিয়ে বলতেন,

لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيكَ لَهُ لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَىْءٍ قَدِيرٌ اللَّهُمَّ لاَ مَانِعَ لِمَا أَعْطَيْتَ وَلاَ مُعْطِيَ لِمَا مَنَعْتَ وَلاَ يَنْفَعُ ذَا الْجَدِّ مِنْكَ الْجَدُّ

(লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহ্‌দাহু লা শারীকা লাহু লাহুল-মুলকু ওয়ালাহুল হামদু ওয়াহুয়া আলা কুল্লি শায়ইন কাদীর। আল্লাহুম্মা লা মানেআ লিমা আতায়তা, ওলা মুতিয়া লিমা মানা’তা, ওলা লা য়ানফাঊ যাল-জাদ্দি মিনকাল জাদ্দু।)

অর্থঃ আল্লাহ ভিন্ন কোন মাবুদ নেই। তিনি একক। তার কোন অংশীদার নেই। রাজঁত্ব তাঁরই এবং প্রশংসাও তাঁরই প্রাপ্য। তিনি সব কিছুর উপর ক্ষমতাবান। হে আল্লাহ! তুমি যা দিতে চাও, তা কেউই রোধ করতে পারে না। এবং তুমি যা রোধ কর, তা কেউ করতে পারে না। আর কোন সম্পদশালীর সস্পদ তোমার আযাব থেকে তাকে রক্ষা করতে পারবে না”। (সহিহ বুখারী ৫৮৯১ ইফাঃ, সহিহ মুসলিম ১২১৬, ১২১৭ ইফাঃ, আবু দাউদ ১৫০৫ ইফাঃ, সুনানে নাসাঈ ১৩৪২)

৮। কা’ব ইবনু উজরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, প্রত্যেক ফরয সালাতের পর এমন কিছু যিকর আছে, যা পাঠকারী কিংবা আমলকারী কখনও বঞ্চিত হবে না। তেত্রিশবার সুবহানাল্লাহ, তেত্রিশবার আলহামদুলিল্লাহ ও চৌত্রিশবার আল্লাহু আকবর। (সহিহ মুসলিম ১২২৭ ইফাঃ, সুনানে নাসাঈ ১৩৪৯)

৯। আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যাক্তি প্রত্যেক সালাতের পর সুবহানাল্লাহ তেত্রিশবার, আলহামদুলিল্লাহ তেত্রিশবার ও আল্লাহু আকবার তেত্রিশবার বলবে এই হল নিরানব্বই-আর একশত পূর্ণ করার জন্য বলবেঃ

*لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ، لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ*

তার পাপ সমুহ মাফ হয়ে যাবে, যদিও তা সমুদ্রের ফেনার মত হয়। (সহিহ মুসলিম ১২৩০ ইফাঃ)

১০। আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যে ব্যক্তি সকালের সালাতর পর একশত বার সুবহানাল্লাহ এবং একশত বার লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলবে, তার গুনাহসমূহ মাফ করে দেওয়া হবে। যদিও তা সমুদ্রের ফেনাসম হয়। (সুনানে নাসাঈ ১৩৫৪)

১১। আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। গরীব সাহাবীগণ বলেনঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ! ধনশীল লোকেরা তো উচ্চমর্যাদা ও চিরস্থায়ী নিয়ামত নিয়ে আমাদের থেকে এগিয়ে গেলেন। তিনি জিজ্ঞাসা করলেনঃ তা কেমন করে? তারা বললেনঃ আমরা যে রকম সালাত আদায় করি, তারাও সে রকম সালাত আদায় করেন। আমরা সে রূপ জিহাদ করি, তারাও সেরূপ জিহাদ করেন এবং তারা তাদের অতিরিক্ত মাল দিয়ে সাদাকা-খায়রাত করেন; কিন্তু আমাদের কাছে সম্পদ নেই। তিনি বললেনঃ আমি কি তোমাদের একটি আমল বাতলে দেবনা, যে আমল দ্বারা তোমরা তোমাদের পূর্ববর্তীদের মর্যাদা অর্জন করতে পারবে, আর তোমাদের পরবর্তীদের চাইতে এগিয়ে যেতে পারবে, আর তোমাদের অনুরূপ আমল কেউ করতে পরেবে না, কেবলমাত্র যারা তোমাদের ন্যায় আমল করবে তারা ব্যতীত। সে আমল হলো তোমরা প্রত্যেক সালাতের পর ১০ বার সুবহানাল্লাহ, ১০ বার আলহামদুলিল্লাহ্‌ এবং ১০ বার আল্লাহ আকবর পাঠ করবে। (সহিহ বুখারি ৫৮৯০ ইফাঃ)

১২। ইব্‌ন উমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম কে মসজিদে অবস্থানকালে একই বৈঠকে নিম্নোক্ত দু’আটি একশত বার পাঠ করতে-গণনা করেছিঃ

* الرَّحِيمُ ابُ أَنْتَ التَّوَّإِنَّكَ عَلَىَّ وَتُبْ لِي اغْفِرْ رَبِّ*

(রাব্বিগফিরলি ওয়াতুব ‘আলাইয়া ইন্নাকা আনতাত্ তাওয়াবুর রহীম)।

অর্থঃ প্রভূ হে! আমাকে ক্ষমা করে দাও, আমার তাওবাহ কবুল করে নাও, তুমিই তাওবাহ কবুলকারী ও দয়ালু। (আবু দাউদ ১৫১৬ ইফাঃ)

১৩। মুআয ইব্‌ন জাবাল (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম তাঁর হাত ধরে বলেন, হে মুআয! আল্লাহর শপথ, আমি তোমাকে ভালবাসি। অতঃপর তিনি বলেনঃ আমি তোমাকে কিছু ওসয়িত করতে চাই। তুমি নামায পাঠের পর এটা কোন সময় ত্যাগ করবে না। তা হলঃ

( اللَّهُمَّ أَعِنِّي عَلَى ذِكْرِكَ وَشُكْرِكَ وَحُسْنِ عِبَادَتِكَ ‏)

 “আল্লাহুম্মা আইন্নী আলা যিক্‌রিকা ওয়া শুক্‌রিকা ওয়া হুস্‌নি ইবাদাতিক।”

অর্থঃ হে আল্লাহ! আপনার স্মরণে, আপনার কৃতজ্ঞতা প্রকাশে এবং আপনার উত্তম ‘ইবাদাতে আমাকে সাহায্য করুন।

অতঃপর মুআয (রাঃ) আল-সানাবিহী কে এরূপ ওসীয়ত করেন এবং আল-সানাবিহী আবু আব্দুর রহমান কে এরূপ ওসীয়ত করেন। (আবু দাউদ ১৫২২ ইফাঃ)

১৪। উক্‌বা ইব্‌ন আমের (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম আমাকে প্রত্যেক নামাযের পর সূরা ফালাক ও সূরা নাস্‌ পাঠের জন্য নির্দেশ প্রদান করেন। (সুনানে আবু দাউদ ১৫২৩ ইফাঃ, সুনানে তিরমিযী ২৯০৩, সুনান নাসাঈ ১৩৩৯)।

১৫। আবু যার রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ফজরের সালাত শেষে কোনরূপ কথা বলার আগে পা ফিরানোর পূর্বে যদি কেউ দশবার

*( ءٍ قَدِيرٌلاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيكَ لَهُ لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ يُحْيِي وَيُمِيتُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْ)*

এই দুআটি পাঠ করে তবে তার জন্য দশটি নেকী লেখা হবে, তার দশটি গুনাহ মাফ করা হবে, তার দশটি দরজা বুলন্দ করা হবে, পুরো দিনটিতে সে সব ধরনের অপছন্দনীয় বিষয় থেকে হেফাযতে থাকবে, শয়তান থেকে প্রহরা দিয়ে রাখা হবে, আর শিরক ব্যতীত অন্য কোন গুনাহ তাকে ঐ দিন কাবু করতে পারবে না। (সুনানে তিরমিজি ৩৪৭৪ ইফাঃ)

১৬। মুসলিম ইব্‌ন আবূ বাকরা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, আমার পিতা প্রত্যেক সালাতের পর বলতেন,

«اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ الْكُفْرِ وَالْفَقْرِ، وَعَذَابِ الْقَبْرِ»،

তারপর আমিও তা বলতে থাকলে আমার পিতা আমাকে বললেন, হে বৎস! তুমি এ দোয়াগুলো কার কাছ থেকে শিখেছ? আমি বললাম, আপনার কাছ থেকে। তারপর তিনি বললেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (প্রত্যেক) সালাতের পর এই দোয়াগুলো বলতেন।(সুনানে নাসাঈ ১৩৪৭ মান সহিহ)

১৭। আবু উমামা (রাঃ) হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি প্রত্যেক ফরজ সালাতের পর ‘আয়াতুল কুরসী’ পাঠ করবে, সে ব্যক্তির জন্য তার মৃত্যু ছাড়া আর অন্য কিছু জান্নাত প্রবেশের পথে বাধা হবে না। (হাদিস সম্ভার ১৪৬৩, নাসাঈ কুবরা ৯৯২৮, ত্বাবারানী ৭৫৩২, সহীহুল জামে ৬৪৬৪)

১৮। উবাই ইবন কাব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ হে আবুল মুনযির! তোমার নিকট কুরআনের কোন আয়াতটি সর্বাপেক্ষা সম্মানিত? আমি বলি, আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল এ বিষয়ে অধিক অবগত। তিনি তাঁকে পুনরায় জিজ্ঞাসা করেন, যে আবুল মনযির! তোমার নিকট কুরআনের কোন আয়তটি অধিক গুরুত্বপূর্ণ? রাবী বলেন, তখন আমি বলি, আল্লাহু লা ইলাহা ইল্লা হুয়াল্ হায়উল কায়্যূম…….। এতদশ্রবণে তিনি আমার বক্ষে হাত চাপড়িয়ে (মহব্বতের সাথে) বলেনঃ হে আবুল মুনযির! তোমার জন্য কুরআনের ইল্‌ম বরকতময় হোক। (আবু দাউদ ১৪৬০, ও সহিহ মুসলিম)।

১৯। জাবির ইব্‌ন সামুরা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ফজরের সালাতের পর তাঁর সালাতের স্থানে সূর্যোদয় পর্যন্ত বসে থাকতেন। (সুনানে নাসাঈ ১৩৪৭ মান সহিহ)

২৩রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কি হাত তুলে দোয়াঃ

সহিহ হাদিসের আলোকে জানতে পারলাম সালাতের পর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিভিন্ন প্রকারের জিকির ও দোয়া করেছেন কিন্তু কোন হাদিসে পাওয়া যায়না যে তিনি এই সকল জিকির এবং দোয়া করার সময় হাত উত্তলন করেছেন। তিনি দোয়ার সময় হাত তুলেছেন কিন্তু সালাতের পর তাজবিহ, তাহলিল ও দোয়ার সময় হাত তুলেছের বলে হাদিসে পাওয়া যায় না। তিনি হাত তুলে দোয়া করেছেন, তার কিছু উদাহরণ দেয়া হলোঃ

১। যে কোন দোয়া হাত তোলাঃ

সালমান ফারসী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: নিশ্চয় তোমাদের রব্ব চিরঞ্জীব ও মহান দাতা। বান্দাহ দু’হা্ত তাঁর নিকট চাইলে তিনি খালি হাত ফেরত দিতে লজ্জাবোধ করেন। (আর দাউদ ১৪৮৮, তিরমিযী ৩৫৫৬, ইবনু মাজাহ ৩৮৬৫, আহমাদ ২৩২০২)

আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি নবী (সাঃ)-কে তাঁর দুই হাত তুলে দোয়া করতে দেখেছেন। তিনি তাঁর দোয়ায় বলেন, “আমি একজন মানুষই। অতএব তুমি আমাকে শাস্তি দিও না। আমি যদি কোন মুমিন ব্যক্তিকে কষ্ট দিয়ে থাকি বা গালি দিয়ে থাকি, তবে তুমি সেজন্য আমাকে শাস্তি দিও না (আল আদাবুল মুফরাদ ৬১৪, সহিহ মুসলিম, মুসনাদ আহমাদ)

২। জুমার দিনে বৃষ্টির জন্য হাত তুলে দোয়াঃ

আনাস ইবনু মালিক (রাযি.) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর যুগে একবার লোকেরা অনাবৃষ্টিতে পতিত হল। সে সময় আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার মিম্বারে দাঁড়িয়ে জুমু‘আহ’র খুৎবা দিচ্ছিলেন। তখন এক বেদুঈন দাঁড়িয়ে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! (অনাবৃষ্টিতে) ধন-সম্পদ বিনষ্ট হয়ে যাচ্ছে। পরিবার-পরিজন ক্ষুধার্ত। আপনি আল্লাহর নিকট দু‘আ করুন, তিনি যেন আমাদের বৃষ্টি দান করেন। তখন আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর দু’ হাত তুললেন। সে সময় আকাশে একখন্ড মেঘও ছিল না। বর্ণনাকারী বলেন, হঠাৎ পাহাড়ের মত বহু মেঘ একত্রিত হল। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিম্বার হতে নামার আগেই বৃষ্টি শুরু হলো। এমনকি আমি দেখলাম, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর দাড়ি বেয়ে বৃষ্টির পানি ঝরছে। বর্ণনাকারী আরো বলেন, সেদিন, তার পরের দিন, তার পরের দিন এবং পরবর্তী জুমু‘আহ পর্যন্ত বৃষ্টি হল। অতঃপর সে বেদুঈন বা অন্য কেউ দাঁড়িয়ে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! ঘর-বাড়ি বিধ্বস্ত হয়ে গেল, সম্পদ ডুবে গেল, আপনি আল্লাহর নিকট আমাদের জন্য দু‘আ করুন। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন তাঁর দু‘হাত তুলে বললেনঃ হে আল্লাহ্! আমাদের আশে পাশে, আমাদের উপর নয়। অতঃপর তিনি হাত দিয়ে আকাশের যে দিকে ইশারা করলেন, সে দিকের মেঘ কেটে গেল। এতে সমগ্র মাদ্বীনার আকাশ মেঘ মুক্ত চালের মত হয়ে গেল এবং কানাত উপত্যকায় এক মাস ধরে বৃষ্টি প্রবাহিত হতে থাকে। বর্ণনাকারী বলেন, তখন যে এলাকা হতে লোক আসত, কেবল এ প্রবল বর্ষণের কথাই বলাবলি করত। (সহিহ বুখারী ১০৩৩ তাওহীদ, ৯৭০ আধুনিক,  ৯৭৬ ইফাঃ)

৩। জামরায় কঙ্কর নিক্ষেপ করার সময়ঃ

যুহরী (রহ.) হতে বর্ণিত যে, মসজিদে মিনার দিক হতে প্রথমে অবস্থিত জামরায় যখন আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কঙ্কর মারতেন, সাতটি কঙ্কর মারতেন এবং প্রত্যেকটি কঙ্কর মারার সময় তিনি তাকবীর বলতেন। এরপর সামনে এগিয়ে গিয়ে কিবলামুখী হয়ে দাঁড়িয়ে উভয় হাত উঠিয়ে দু‘আ করতেন এবং এখানে অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতেন। অতঃপর দ্বিতীয় জামরায় এসে সাতটি কঙ্কর মারতেন এবং প্রতিটি কঙ্কর মারার সময় তিনি তাকবীর বলতেন। অতঃপর বাঁ দিকে মোড় নিয়ে ওয়াদীর কাছে এসে কিবলামুখী হয়ে দাঁড়াতেন এবং উভয় হাত উঠিয়ে দু‘আ করতেন। অবশেষে ‘আকাবার কাছে জামরায় এসে তিনি সাতটি কঙ্কর মারতেন এবং প্রতিটি কঙ্কর মারার সময় তাকবীর বলতেন। এরপর ফিরে যেতেন, এখানে বিলম্ব করতেন না। যুহরী (রহ.) বলেন, সালিম ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রহ.)-কে তাঁর পিতার মাধ্যমে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে অনুরূপ বর্ণনা করতে শুনেছি। (রাবী বলেন) ইবনু ‘উমার (রাঃ)-ও তাই করতেন।( সহিহ বুখারী ১৭৫৩ তাওহিদ, ১৬৩১ আধুনিক, ১৬৩৯ ইফাঃ)

৫। জিহাদের ময়দানেঃ

উমার ইবনুল খাত্তাব (রাযিঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, (বদর যুদ্ধের দিন) মুশরিকদের উপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দৃষ্টিপাত করলেন। তারা (সংখ্যায়) ছিল এক হাজার। আর তার সাথীরা ছিলেন তিন শত দশজনের কিছু বেশি। আল্লাহর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিবলার দিকে মুখ করে দুই হাত তুলে তার প্রভুর নিকট দু’আ করতে লাগলেনঃ “হে আল্লাহ! তুমি আমার সাথে যে ওয়াদাহ করেছিলে তা পূর্ণ কর। হে আল্লাহ! তুমি আমাকে তা দান কর যার ওয়াদাহ্ তুমি করেছ। হে আল্লাহ! যদি কতিপয় মুসলিমের এ ক্ষুদ্র দলটি ধ্বংস করে দাও তাহলে যমিনে তোমার ইবাদাত অনুষ্ঠিত হবে না”। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিবলামুখী হয়ে দুই হাত তুলে এমনভাবে তার প্রভুর নিকট ফারিয়াদ করেন, তার উভয় কাঁধ হতে তার চাদর গড়িয়ে পড়ে গেল।

তখন আবূ বকর (রাযিঃ) তার কাছে এসে চাদরটি উঠিয়ে তার কাধে তুলে দিলেন এবং তার পেছন দিক হতে তাকে চেপে ধরে বললেন, হে আল্লাহর নাবী। আপনার প্রভুর সমীপে আপনার যথেষ্ট পরিমাণ ফরিয়াদ করা হয়েছে। আপনার সাথে আল্লাহ তা’আলা যে ওয়াদাহ করেছেন তা অবশ্যই তিনি পূর্ণ করবেন। এ প্রসঙ্গে বারকাতময় আল্লাহ তা’আলা নিম্নোক্ত আয়াত অবতীর্ণ করেন (অনুবাদ) “স্মরণ কর যখন তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের নিকট সাহায্য প্রার্থনা করছিলে তখন তিনি তোমাদের ডাকে সাড়া দিলেন, আমি তোমাদেরকে পর্যায়ক্রমে এক হাজার ফেরেশতা দ্বারা সাহায্য করব” (সূরা আল-আনফাল ৯)। অতএব আল্লাহ তা’আলা ফেরেশতাদের পাঠিয়ে তাদেরকে সাহায্য করেন। (সুনানে তিরমিজি ৩০৮১ হাদিসের মান হাসান)

মন্তব্যঃ উদাহরন হিসাবে কয়েকটি হাদিস উল্লেখ করা হল। এর দ্বারা সহজেই অনুমেয় যে হাত তুলে দোয়া করা একটি সুন্নাহ সম্মত ইবাদাত। কাজেই হাত তুলে দোয়া করা যাবে। এখন প্রশ্ন হলো সালাতের পর কি হাত তুলে দোয়া করা যাবে। এর উত্তরে কোন কোন মুজতাহীদ সালাতে পর একাকী হাত তুলে দোয়া করাকে জায়েয বলেছেন। কারন শুধু সালাত নয়, যে কোন সময়ই হাত তুলে দোয়া করা যাবে। উপরে বর্ণিত সালমান ফারসী (রাঃ) এর দলীল। যে কোন সময়ই বলতে ফরজ সালাতও তার অন্তরভুক্ত। কিন্তু যদি কেউ শুধুই ফরজ সালাতকে খাস করে তবে কিন্তু সুন্নাহ বিরোধী হবে। কারন শুধু এই সময় হাত না তোলা সহিহ হাদিস দ্বারা প্রমনিত। তাই অনেক মুজতাহীদ আলেম এই সময় হাত তুলে দোয়া করেকে নাজায়েয বলেছেন। তাদের দলীল হলোঃ সহিহ বুখারীল এই হাদিস।

আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইসতিসকার সালাত ব্যতীত তাঁর অন্য কোন দুআয় তাঁর দুহাত উঠাতেন না (হাত তুলে মোনাজত করতেন না)। তিনি ইসতিসকার সালাতে এতটা উপরে হাত উঠাতেন যে, তাঁর উভয় বগলের শুভ্রতা দৃষ্টিগোচর হতো। (সহিহ বুখারী ১০৩১ তাওহীদ, ৯৭৪ ইফাঃ সহিহ মুসলিম ৮৯১, নাসায়ী ১৫১৩, ইবনে মাজাহ ১১৮০)

যেহেতু নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে কোন প্রকারের হাদিস থেকে এ কথা প্রমানিত নয় যে তিন ফরজ সালাতের পর হাত তুলে মোনাজাত করেছেন তাই বিষয়টি এড়িয়ে চলা উত্তম। উপরে উল্লেখিত হাদিসের আলোকে আমল করাই সুন্নাহের দাবী। প্রমানিত সুন্নাহক বাদ দিয়ে মুজতাহীদ আলেমদের গবেষনাকে বেশী গুরুত্ব প্রদান করা নেহায়েত অন্যায় হবে। কাজেই নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রদর্শিত পথে সুন্নাহ সম্মত আমল করি।

২৪। সালাতের পর সম্মিলিত মুনাজাতঃ

ফরজ সালাতের পর এককভাবে হাত তুলে মুনাজাত করাকে কেউ কেউ জায়েয বললেও সুন্নাহ দ্বারা প্রমান করতে ব্যর্থ হয়েছেন। অপর পক্ষে সালাতের পর সম্মিলিত মুনাজাত করা যা আমাদের আলোচ্য বিষয় তা প্রমান করার কোন প্রশ্নই উঠেনা। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে এ ব্যাপারে কোন হাদিছ পাওয়া যায় না। সাহাবী তাবেয়ীদের যুগেও এর সহিহ সনদ ভিত্তিক কোন প্রমাণ মিলেনা। এমনকি নবীজি থেকে সহিহ তো দূরের কথা যঈফ বা মওযু বর্ণনাও পাওয়া যায় না। তাই একাজ সম্পূর্ণ সুন্নাত বিরোধী বা বিদআত।

দুঃখজনক হলেও সত্য যে, বর্তমানে মুসলামানগণ এই বিদআতটিকে সুন্নাতের সমপর্যায় নিয়ে গেছে। অনেক স্থানেতো আমলটি না করা পর্যান্ত কোন মুসাল্লাকি কে সালাতে স্থান ত্যাগ করতে দেখা যায় না। তাদের কাছে মনে হয় মুনাজাত না করলে, সালাত পরিপুর্ণ হয় না। যে সকল আলেম সালাতের পর সম্মিলিত মুনাজাত করেন তাদের নিকট বিনীতভাবে প্রশ্ন করেলে বলে থাকেন, আমরাও জানি সালাতের পরে সম্মিলিত মুনাজাত নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, সাহাবী বা তাবেয়ী কেউই করে নাই। কিন্তু এটা একটি ভাল কাজে করলেও অসুবিধা কি? তাছাড়া মুসল্লীদের চাহিদা। সমাজে এমনভাবে আমলটি প্রচলিত যদি কোন ইমাম হটাৎ করে এই বিদআতটি বাদ দেন তবে ইমামের চাকুরী চলে যাবে।

যারা সালাতের পরে সম্মিলিত মুনাজাত করে তাদের অনেকে আবার তাদের পক্ষে দলীল প্রমান উপস্থান করে আমলটি প্রমানে চেষ্টা করা হয়। আমাদের সমাজে সালাতের পরে সম্মিলিত মুনাজাতের পক্ষ বিপক্ষ হয়ে বাহাচের আয়োজন করা হয়। এর কারন আমরা পূর্বের আলোচনায় দেখেছি, পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ সালাত শেষে দুআ কবুল হওয়ার কথা বহু সহিহ হাদিস থেকে প্রমাণিত। সালাতে পরে দুয়া বা মুনাজাত নিয়ে সকলে একমত কারন সহিহ হাদিস দ্বারা প্রমানিত কিন্তু সমস্যা হলো মুনাজাতের পদ্ধতি নিয়ে। আমরা দেখেছি, সালাত শেষে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একক ভাবে বহু দুয়া করেছেন এবং সাহাবীদের শিক্ষা দিয়েছেন। কিন্তু তিনি তার দীর্ঘ নবুয়তের জীবনে কখনও সালাত শেষে সম্মিলিতভাবে সাহাবীদের দিয়ে মুনাজাত করেন নাই। কাজেই বলা যায়, সালাতের পর দোয়া নিয়ে বিতর্ক নয়, বিতর্ক হল এর পদ্ধতি নিয়ে। পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ সালাত আদায়ের পর প্রচলিত মুনাজাত করা না করার ব্যাপারে আমাদের দেশের মুসল্লীদের সাধারণত তিন ভাগে বিভক্ত দেখা যায়। কিছু মুসল্লী সালাম ফিরানোর পর বসে বসে কিছুক্ষণ যিকর-আযকার করে তাদের এই আমলটি সুন্নাহ সম্মত। উপরের আলোচনার দ্বারা এ কথাটি একেবারে দিবালোকের মত পরিস্কার।  কিছু মুসল্লী সালাম ফিরানোর সাথে সাথে দাঁড়িয়ে সুন্নাত সালাত আদায় করে, তাদের এই কাজটি সুন্নাহ সম্মত নয় কারন তারা সহিহ হাদিসে বর্ণীত হাদিসের খেলাপ আমল করছে। জরুরী কাজের কোন তাড়া না থাকলে, তাদের উচিত সালাম ফিরানোর পর কিছু সুন্নাহ সম্মত তাজবিহ তাহলীল আদায় করা। কিন্তু আমাদের সমাজের অধিকাংশ মুসল্লী সালাম ফিরানোর পর সর্বদা ইমাম সাহেবের সঙ্গে সম্মিতিত মুনাজাত করেন। এই কাজটি অনেক আলেমদের মতে বিদআত। উপরের আলোচনায় এই কথার প্রমানও পাওয়া যায়। যারা সালাতের শেষে সম্মিতিত মুনাজাত করেন, তাদের দাবী জরুরী মনে না করে মুনাজাত বিদআত হবে না। তাদের দাবী এই ধরনের আমর মুস্তাহাব। কিন্তু সত্য কথা হল, যারা বলেন এই কাজ আমরা জরুরী মনে করে করি না, তাদের যদি এই আমল ত্যাগ করতে বলেন, তখন তারা বাহাস বা মুনাজারা আহবান করে তাদের মত প্রতিষ্ঠার জন্য আধা জল খেয়ে লেগে যায়। কাজেই এই কাজটি বিদআত তাতে কোন প্রকার সংশয় থাকার কথা নয়।

খুব লক্ষ করে দেখবেন, যারা ফরজ সালাত শেষে সম্মিলিত মুনাজাত করেন, তারা মুনাজাতের পরই স্থান ত্যাগ করে অথবা সুন্নাহ/নফল সালাতে দাড়িয়ে যায়, কোনো জিকির-আজকার কবে না। এই সুন্নাহ সম্মত আমলটি প্রয়োজনও বোধ করেনা। হাদিস সম্মত সুন্নাহ আমল ছেড়ে দিয় তার স্থানে সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করা সুন্নাহকে অবমাননার সামিল হবে। কাজেই এই সম্মিলিত মুনাজাত করার অর্থ হবে একটা সহিহ সুন্নাত বাদ দিয়ে সে স্থানে অন্য একটি বিদআতি আমল করা।

সারকথাঃ পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায়ের পর সব সময় জামাআতের সঙ্গে মুনাজাত করা একটি বিদআত এত কোন সংশয় নাই। তবে যদি কেউ জামাতে সালাত আদায়ের পর একা একা দুআ মুনাজাত করেন তা সুন্নাতের খেলাফ হবে না। এমনিভাবে ইমাম সাহেব যদি সকলকে নিয়ে বিশেষ কোনো পরিস্থিতিতে কোনো কোনো সময় দুআ-মুনাজাত করেন তবে তা নাজায়েয হবে না।

সংকলনেঃ মোহাম্মাদ ইস্রাফিল হোসাইন। (বিএ ইন এ্যারাবিক লিটারেচার, ইসলামিক হিস্টরী এন্ড ইসলামিক স্টাডিস)

Leave a comment