ইফতারীর ফজিলত ও বিধান

ইফতার করা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সুন্নাহ। তিনি ইফতারি করার জন্য অনেক গুরুত্ব প্রদান করেছেন। ইফতারি করাও অনেক নেকীর কাজ। তিনি একধারে বিরতিহীন ভাবে সিয়াম পালন করতে নিষেধ করেছেন। মহান আল্লাহ তায়ালাও সিয়াম পালনে পর ইফতার কারার সময় নির্ধারণ করে দিয়েছেন। আয়াত। মহান আল্লাহ এরশাদ করেন,

* وَكُلُواْ وَاشْرَبُواْ حَتَّى يَتَبَيَّنَ لَكُمُ الْخَيْطُ الأَبْيَضُ مِنَ الْخَيْطِ الأَسْوَدِ مِنَ الْفَجْرِ ثُمَّ أَتِمُّواْ الصِّيَامَ إِلَى الَّليْلِ*

অর্থঃ আর পানাহার কর যতক্ষণ না কাল রেখা থেকে ভোরের শুভ্র রেখা পরিষ্কার দেখা যায়। অতঃপর রোযা পূর্ণ কর রাত পর্যন্ত। (সুরা বাকারা ২:১৮৭)।

‘উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যখন ওদিক থেকে রাত (পূর্বদিক হতে রাতের কালো রেখা) নেমে আসে, আর এদিক থেকে (পশ্চিম দিকে) দিন চলে যায় এবং সূর্য ডুবে যায়, তখনই সায়িম (রোযাদার) ইফতার করে। (হাদিসের মান সহিহ: মিশকাত-১৯৮৫, বুখারী ১৯৫৪, মুসলিম ১১০০, মুসান্নাফ ‘আবদুর রাযযাক ৭৫৯৫, ইবনু আবী শায়বাহ্ ৮৯৪১, আহমাদ ১৯২, আবূ দাঊদ ২৩৫১, তিরমিযী ৬৯৮, ইবনু খুযায়মাহ্ ২০৫৮, ইবনু হিব্বান ৩৫১৩, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৮০০৪, ইরওয়া ৯১৬, সহীহ আল জামি‘ ৩৬৪)।

উমার ইবনে খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যখন রাত্রি এ (পূর্ব) দিক থেকে আগমন করবে এবং দিন এ (পশ্চিম) দিক থেকে প্রস্থান করবে এবং সূর্য ডুবে যাবে, তখন অবশ্যই রোজাদার ইফতার করবে।” [হাদিসটি নেয়া হয়েছে রিয়াযুস স্বা-লিহীন, তাওহীদ পাবলিকেশন থেকে হাদিস নম্বর ১২৪৪। এই হাদিসটি আরও আছেঃ সহিহ বুখারী ১৯৫৪, সহিহ মুসলিম ১১০০, তিরমিযী ৬৯৮, আবূ দাউদ ২৩৫১, আহমাদ ১৯৩, ২২২, ৩৪০, ৩৮৫, দারেমী ১৭০০]

‘আবদুল্লাহ ইবনু আবূ আওফা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, কোন এক সফরে আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে ছিলাম। আর তিনি ছিলেন সায়িম। যখন সূর্য ডুবে গেল তখন তিনি দলের কাউকে বললেনঃ হে উমুক! উঠ। আমাদের জন্য ছাতু গুলিয়ে আন। সে বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! সন্ধ্যা হলে ভাল হতো। তিনি বললেনঃ নেমে যাও এবং আমাদের জন্য ছাতু গুলিয়ে আন। সে বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! সন্ধ্যা হলে ভাল হতো। তিনি বললেনঃ নেমে যাও এবং আমাদের জন্য ছাতু গুলিয়ে আন। তিনি বললেনঃ নেমে যাও এবং আমাদের জন্য ছাতু গুলিয়ে আন। সে বলল, দিন তো আপনার এখনো রয়েছে। তিনি বললেনঃ তুমি নামো এবং আমাদের জন্য ছাতু গুলিয়ে আন। তারপর সে নামল এবং তাঁদের জন্য ছাতু গুলিয়ে আনল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা পান করলেন, তারপর বললেনঃ যখন তোমরা দেখবে, রাত একদিক থেকে ঘনিয়ে আসছে, তখন সায়িম ইফতার করবে। (সহিহ বুখারী ইসলামি ফাউন্ডেশন হাদিস নম্বর ১৮৩০, ১৮৩২, ১৮৩৪; রিয়াযুস স্বা-লিহীন ১২৪৫’ সহিহ মুসলিম ১১০১, আবূ দাউদ ২৩৫২, আহমাদ ১৮৯০৫, ১৮৯২১)

উমর ইবনু খাত্তাব (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যখন রাত্র সে দিক থেকে ঘনিয়ে আসে ও দিন এদিক থেকে চলে যায় এবং সূর্য ডুবে যায়, তখন সায়িম ইফতার করবে। (সহিহ বুখারী ইসলামি ফাউন্ডেশন হাদিস নম্বর ১৮৩০)।

 

তাড়াতাড়ি ইফতার করা মধ্যে কল্যাণঃ

রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বয়ং তাড়াতাড়ি ইফতার করতেন এবং অন্যদেরও তাড়াতাড়ি ইফতার বলেছেন কারন এর মধ্যে কল্যাণ আছে।

সাহল (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যতদিন পর্যন্ত মানুষ তাড়াতাড়ি ইফতার করবে, ততদিন তারা কল্যাণের মধ্যে থাকবে। (হাদিসের মান সহিহ: মিশকাত-১৯৮৪, বুখারী ১৯৫৭, মুসলিম ১০৯৮, তিরমিযী ৬৯৯, মুয়াত্ত্বা মালিক ১০১১, মুসান্নাফ ‘আবদুর রাযযাক ৭৫৯২, ইবনু মাজাহ ১৬৯৭, আহমাদ ২২৮০৪, দারিমী ১৭৪১, ইবনু খুযায়মাহ্ ২০৫৯, মু‘জামুল কাবীর লিত্ব ত্ববারানী ৫৭১৮, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৮১১৮, শু‘আবূল ঈমান ৩৬৩০, ইবনু হিববান ৩৫০২, ইরওয়া ৯১৭, সহীহাহ্ ২০৮১, সহীহ আত্ তারগীব ১০৭৩, সহীহ আল জামি‘ ৭৬৯৪।

সাহাল ইবনে সায়াদ রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যতদিন পর্যন্ত মুসলমানেরা শীঘ্র ইফতার করবে ততদিন তারা কল্যাণের মধ্যে থাকবে। (হাদিসটি নেয়া হয়েছে রিয়াযুস স্বা-লিহীন, তাওহীদ পাবলিকেশন থেকে হাদিস নম্বর ১২৪১ এই হাদিসটি আরও আছেঃ সহীহ বুখারী ১৯৫৭, ১০৯৮, তিরমিযী ৬৯৯, ইবনু মাজাহ ১৬৯৭, আহমাদ ২২২৯৮, ২২৩২১, ২২৩৩৯, ২২৩৫২, ২২৩৬৩, মুওয়াত্তা মালিক ৬৩৮, দারেমী ১৬৯৯]

আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ দীন সর্বদাই বিজয়ী থাকবে (ততদিন), যতদিন মানুষ তাড়াতাড়ি ইফতার করবে। কারণ ইয়াহূদী ও খৃষ্টানরা ইফতার করতে বিলম্ব করে। [হাদিসের মান হাসান : মিশকাত-১৯৯৫, আবূ দাঊদ ২৩৫৩, ইবনু মাজাহ ১৬৯৮, ইবনু আবী শায়বাহ্ ৮৯৪৪, ইবনু খুযায়মাহ্ ২০৬০, ইবনু হিব্বান ৩৫০৩, শু‘আবূল ঈমান ৩৯১৬, আহমাদ ৯৮১০, মুসতাদারাক লিল হাকিম ১৫৭৩, সহীহ আত্ তারগীব ১০৭৫, সহীহ আল জামি‘ ৭৬৮৯]।

কি খাবারে ইফতার করা সুন্নাতঃ

সালমান ইবনু ‘আমির  হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যখন ইফতার করবে সে যেন খেজুর দিয়ে (শুরু) করে। কারণ খেজুর বারাকাতময়। যদি খেজুর না পায়, তাহলে যেন পানি দিয়ে ইফতার তরে। কেননা পানি পবিত্র জিনিস। [হাদিসের মান যঈফ মিশকাত-১৯৯০, আবূ দাঊদ ২৩৫৫, তিরমিযী ৬৫৪, ইবনু মাজাহ ১৬৯৯, ইবনু আবী শায়বাহ্ ৯৭৯৭, আহমাদ ১৬২২৫, দারিমী ১৭৪৩, মু‘জামুল কাবীর লিত্ব ত্ববারানী ৬১৯৪, সুনানুস্ সুগরা লিল বায়হাক্বী ১৩৮৯, শু‘আবূল ঈমান ৩৬১৫, ইবনু হিব্বান ৩৫১৫, য‘ঈফাহ্ ৬৩৮৩, য‘ঈফ আত্ তারগীব ৬৫১, য‘ঈফ আল জামি‘ ৩৮৯। বিঃদ্রঃ তাঁর কর্ম থেকে এ ব্যাপারে সহিহ হাদীস রয়েছে]।

আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সলাতের আগে কিছু তাজা খেজুর দিয়ে ইফতার করতেন। যদি তাজা খেজুর না পেতেন, শুকনা খেজুর দিয়ে করতেন। যদি শুকনা খেজুরও না পেতেন, কয়েক চুমুক পানি পান করে নিতেন। (হাদিসের মান হাসান : মিশকাত-১৯৯১, তবে ইমাম তিরমিযী বলেন, এ হাদীসটি হাসান ও গরীব। আবূ দাঊদ ২৩৫৬, তিরমিযী ৬৯৬, আহমাদ ১২৬৭৬, মুসতাদারাক লিল হাকিম ১৫৭৬, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৮১৩১, শু‘আবূল ঈমান ৩৬১৭, ইরওয়া ৯২২, সহীহ আত্ তারগীব ১০৭৭, সহীহ আল জামি‘ ৪৯৯৫]।

আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সায়াদ ইবনে উবাদাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু-এর নিকট উপস্থিত হলেন। তিনি রুটি ও (জয়তুনের) তেল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সম্মুখে পেশ করলেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা ভক্ষণ করে এই দো‘আ পড়লেন,

‘আফত্বারা ইন্দাকুমুস স্বা-য়িমূন, অআকালা ত্বাআমাকুমুল আবরার, অস্বাল্লাত আলাইকুমুল মালাইকাহ।’

অর্থাৎ রোজাদারগণ তোমাদের নিকট ইফতার করল। সৎ ব্যক্তিগণ তোমাদের খাবার ভক্ষণ করল এবং ফেরেশতাগণ তোমাদের (ক্ষমার) জন্য দো‘আ করলেন। (হাদিসটি নেয়া হয়েছে রিয়াযুস স্বা-লিহীন, তাওহীদ পাবলিকেশন থেকে হাদিস নম্বর ১২৭৫। এই হাদিসটি আরও আছেঃ আবূ দাউদ ৩৮৫৪, আহমাদ ১১৭৬৭, ১২৬৭৩, দারেমী ১৭৭২

ইফতারের ফজিলতঃ

আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তা‘আলা বলেন, আমার কাছে সে বান্দা বেশী প্রিয় যে (সময় হয়ে যাবার সাথে সাথে) ইফতার করতে ব্যস্ত হয়। [হাদিসের মান যঈফ: মিশকাত-১৯৮৯, তিরমিযী ৭০০, ইবনু খুযায়মাহ্ ২০৬২, ইবনু হিব্বান ৩৫০৭, আহমাদ ৭২৪১, ৮৩৬০, ৯৮১০, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৮১২০, রিয়াযুস্ সলিহীন ১২৪৪, য‘ঈফ আত্ তারগীব ৬৪৯, য‘ঈফ আল জামি‘ ৪০৪১। কারণ এর সানাদে কুবরাহ্ ইবনু ‘আবদুর রহমান মন্দ স্মৃতিশক্তিজনিত কারণে একজন দুর্বল রাবী]।

যায়দ ইবনু খালিদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি সায়িমকে ইফতার করাবে অথবা কোন গাযীর আসবাবপত্র ঠিক করে দেবে সে তাদের (সায়িম ও গাযীর) সমপরিমাণ সাওয়াব পাবে। [হাদিসের মান সহিহ: মিশকাত-১৯৯২, বায়হাক্বী- শু‘আবূল ঈমান-এ আর মুহয়্যিইউস্ সুন্নাহ্- শারহে সুন্নাহ্’য় এ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন এবং বলেছেন হাদীসটি সহীহ]।

অপরকে ইফতার করানোর ফযীলতঃ

যায়েদ ইবনে খালেদ জুহানী রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যে ব্যক্তি কোন রোজাদারকে ইফতার করাবে, সে (রোজাদারের) সমান নেকীর অধিকারী হবে। আর তাতে রোজাদারের নেকীর কিছুই কমবে না।” [হাদিসটি নেয়া হয়েছে রিয়াযুস স্বা-লিহীন, তাওহীদ পাবলিকেশন থেকে হাদিস নম্বর ১২৭৩। হাদিসের মান হাসান সহিহ (তিরমিযী),  আরও আছেঃ তিরমিযী ৮০৭, ইবনু মাজাহ ১৪৪৬, আহমাদ ২১১৬৮, দারেমী ১৭০২

 

ইফতারের পরের দোয়াঃ

আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নামায পড়ার আগে কতিপয় টাটকা পাকা খেজুর দিয়ে ইফতার করতেন। যদি টাটকা পাকা খেজুর না পেতেন, তাহলে শুকনো কয়েকটি খেজুর যোগে ইফতার করতেন। যদি শুকনো খেজুরও না হত, তাহলে কয়েক ঢোক পানি পান করতেন।’

ইমাম নাওয়াবী শিরোনামে পিপাসা দুর করার কথা উল্লেখ করেছেন, কিন্তু তার হাদিসটি উল্লেখ করেননি। হাদিসটি নিম্নরূপ, ইবনে উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু কর্তৃক বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন ইফতার করতেন, তখন এই দো‘আ বলতেন,

 «ذَهَبَ الظَّمَأُ وَابْتَلَّتِ الْعُرُوقُ وَثَبَتَ الأَجْرُ إِنْ شَاءَ اللَّهُ».

 (যাহাবায যামা-উ অবতাল্লাতিল উরুক্বু অষাবাতাল আজরু ইন শা-আল্লাহ)।

 অর্থঃ পিপাসা দূরীভূত হল, শিরা-উপশিরা সতেজ হল এবং ইন শাআল্লাহ সওয়াব সাব্যস্ত হল।

([হাদিসটি নেয়া হয়েছে রিয়াযুস স্বা-লিহীন, তাওহীদ পাবলিকেশন থেকে হাদিস নম্বর ১২৪৭। হাদিসের মান হাসান। (আবু দাউদ থেকে হাদিসটি নেয়া হয়েছে। এই হাদিসটি আরও আছেঃ আবূ দাউদ ২৩৫৬, তিরমিযী ৬৯৪, আহমাদ ১২২৬৫]।

ইবনু ‘উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইফতার করার পর বলতেন, পিপাসা চলে গেছে, (শরীরের) রগগুলো সতেজ হয়েছে। আল্লাহর মর্জি হলে সাওয়াব প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে। (হাদিসের মান হাসান : মিশকাত-১৯৯৩, আবূ দাঊদ ২৩৫৭, মুসতাদারাক লিল হাকিম ১৫৩৬, ইরওয়া ৯২০, সহীহ আল জামি‘ ৪৬৭৮, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৮১৩৩)।

আমাদের সমাজে যে ইফতারির দুয়াটি প্রচলিত আছে উহার মান যঈফঃ

মু‘আয ইবনু যুহরা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইফতার করার সময় (এ দু‘আ) বলতেনঃ ‘‘আল্ল-হুম্মা লাকা সুমতু, ওয়া ‘আলা- রিযকবিকা আফত্বরতু’’ (অর্থাৎ- হে আল্লাহ! তোমার জন্য সওম রেখে, তোমার [দান] রিযক দিয়ে ইফতবার করছি)। (হাদিসের মান যঈফ মিশকাত-১৯৯৪, আবূ দাঊদ ২৩৫৮, আদ্ দা‘ওয়াতুল কাবীর ৫০০, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৮১৩৪, য‘ঈফ আল জামি‘ ৪৩৪৯, ইরওয়া ৯১৯। কারণ মু‘আয ইবনুয্ যুহরা একজন মাজহূল রাবী]।

৫। দ্রুত ইফতার করেন, দ্রুত সলাত আদায় করা উচিৎ।

আবূ ‘আত্বিয়্যাহ্ (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি ও মাসরূক উভয়ে (একদিন) ‘আয়িশাহ্ (রাঃ)-এর কাছে গেলাম ও আমরা আরয করলাম, হে উম্মুল মু’মিনীন! মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দু’জন সাথী আছেন। তাদের একজন দ্রুত ইফতার করেন, দ্রুত সলাত আদায় করেন। আর দ্বিতীয়জন বিলম্বে ইফতার করেন ও বিলম্বে সলাত আদায় করেন। ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) জিজ্ঞেস করলেন, তাড়াতাড়ি করে ইফতার করেন ও সলাত আদায় করেন কে? আমরা বললাম, ‘আবদুল্লাহ ইবনু মাস্‘ঊদ। ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) বললেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরূপই করতেন। আর অপর ব্যক্তি যিনি ইফতার করতে ও সলাত আদায় করতে দেরী করতেন, তিনি ছিলেন আবূ মূসা। [হাদিসের মান সহিহ: মিশকাত-১৯৯৬, সহীহ : মুসলিম ১০৯৯, আবূ দাঊদ ২৩৫৪, তিরমিযী ৭০২, নাসায়ী ২১৬১, আহমাদ ২৪২১২]।

রিয়াযুস স্বা-লিহীন -১২৪২।

সাহল ইবনু সা’দ (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ লোকেরা যতদিন যাবৎ ওয়াক্ত হওয়া মাত্র ইফতার করবে, ততদিন তারা কল্যাণের উপর থাকবে। (সহিহ বুখারী ইসলামি ফাউন্ডেশন হাদিস নম্বর ১৮৩৩, )।

দিনের বেলায় সিয়াস সম্পর্কে জানতে পারলে বাকি সময় না খাওয়াঃ

রুবায়্যি‘ বিনত মু’আব্বিয (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘আশূরার সকালে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আনসারদের সকল পল্লীতে এ নির্দেশ দিলেনঃ যে ব্যাক্তি সিয়াম পালন করেনি সে যেন দিনের বাকি অংশ না খেয়ে থাকে, আর যার সিয়াম অবস্থায় সকাল হয়েছে, সে যেন  সিয়াম পূর্ণ করে। তিনি (রুবায়্যি) (রাঃ) বলেন, পরবর্তীতে আমরা ঐ দিন রোযা রাখতাম এবং আমাদের শিশুদের রোযা রাখাতাম। আমরা তাদের জন্য পশমের খেলনা তৈরী করে দিতাম। তাদের কেউ খাবারের জন্য কাঁধলে তাকে ঐ খেলনা দিয়ে ইফতার পর্যন্ত ভুলিয়ে রাখতাম। (সহিহ বুখারী ইসলামি ফাউন্ডেশন হাদিস নম্বর ১৮৩৬)।

মেঘাচ্ছন্ন দিনে আগে ইফতার করলে কাযা করাঃ

আসমা বিনত আবূ বাকর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর যুগে একবার মেঘাচ্ছন্ন দিনে আমরা ইফতার করলাম, এরপর সূর্য দেখা যায়। বর্ণনাকারী হিশামকে জিজ্ঞাসা করা হল, তাদের কি কাযা করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল? হিশাম (রহঃ) বললেন, কাযা ছাড়া উপায় কি? (অপর বর্ণনাকারী) মা’মার (রহঃ) বলেন, আমি হিশামকে বলতে শুনেছি, তাঁরা কাযা করেছিলেন কি না তা আমি জানি না। (সহিহ বুখারী ইসলামি ফাউন্ডেশন হাদিস নম্বর ১৮৩৫, ১৮৩৬)।

ইফতারের কয়েকটি ভুল কাজঃ

১।ইফতারের পূর্বে সম্মিলিত মুনাজাতঃ

২। ইফতারের নামে পার্টি করাঃ

৩। ইফতারীতে অপচয় করাঃ

১। ইফতারের পূর্বে সম্মিলিত মুনাজাতঃ

সিয়াম পালনকারী ব্যক্তি সিয়মরত অবস্থায় যে কোন সময় দোয়া করবে। শুধু ইফতারের সময়ই দোয়া করতে হবে এমনটি নয়। ইফতারের পূর্বে ব্যক্তিগতভাবে দোয়া করা কখনোই দোষনীয় নয়। বরং সিয়াম থাকাকালীন সর্বাবস্থায় ব্যক্তিগতভাবে বেশি বেশি দোয়া করা মুস্তাহাব। ইফতারের পূর্বে সূর্যাস্তের সময় ব্যক্তিগতভাবে দুয়া করা যেতে পারে। কারণ এ সময় মানুষের অন্তর বিগলিত হওয়ার সাথে মানুষ নত হয়। কারন সিয়ামরত অবস্থায় দুয়া কবুল হয়। তাই বেশি বেশী দুয়া দ্বারা নিজের আমলের ঝুড়ি বৃদ্ধি করা।

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “তিন ব্যক্তির দোয়া ফিরিয়ে দেয়া হয় না। ন্যায়পরায়ণ শাসক, রোজাদার ইফতার করার পূর্ব পর্যন্ত, মজলুমের দোয়া”। (মুসনাদে আহমাদ ৮০৪৩, মুসনাদ কিতাবের পাঠোদ্ধারকারী সম্পাদকগণ হাদিসটিকে অন্যান্য সহায়ক সনদ ও হাদিসের ভিত্তিতে সহীহ বলেছেন)

আবু উমাম রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে মারফু হাদিস হিসেবে বর্ণিত হয়েছে যে, “প্রতিদিন ইফতারের সময় আল্লাহ কিছু মানুষকে (জাহান্নাম থেকে) মুক্ত করে দেন”। (মুসানদে আহমাদ ২১৬৯৮, আলবানী সহীহুত তারগীব গ্রন্থে হাদিসটিকে সহীহ আখ্যায়িত করেছেন)।

এমন কি ইফতার করা পর দুয়া করার জন্য একটি দুয়া বর্ণিত হয়েছে। সে দোয়াটি হচ্ছে,

ذَهَبَ الظَّمَأُ وَابْتَلَّتِ العُرُوقُ، وَثَبَتَ الْأَجْرُ إِنْ شَاءَ اللَّهُ

(উচ্চারণঃ যাহাবায-যামাউ ওয়াবতাল্লাতিল ‘উরূকু ওয়া সাবাতাল আজরু ইনশা-আল্লা-হু)।

অর্থঃ পিপাসা মিটেছে, শিরাগুলো সিক্ত হয়েছে এবং আল্লাহ্‌ চান তো সওয়াব সাব্যস্ত হয়েছে।

হাদীসটি সংকলন করেছেন আবূ দাউদ ২/৩০৬, নং ২৩৫৯।আলবানী হাদিসটিকে সহীহ আবু দাউদ গ্রন্থে হাসান বলেছেন, সহীহুল জামে‘ ৪/২০৯)।

মন্তব্যঃ ইফতারের পূর্বে সম্মিলিত মুনাজাত করা সুন্নাহ বিরোধী কাজ। এ সময় সম্মিলিত মুনাজাত করা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর আমল দ্বারা প্রমাণিত হয়নি। তাই এরূপ কাজে অংশগ্রহণ করা অবশ্যই বিদ’আতের অন্তর্ভুক্ত হবে, যদিও ইফতারের পূর্বে সকলে হাত তুলে সম্মিলিতভাবে দোয়া করার রীতি আমাদের সমাজে প্রচলিত রয়েছে।

২। ইফতারের নামে পার্টি করাঃ

রমজান মাস এলেই ইফতার পার্টির আয়োজনে ধুম পড়ে যায়। ভিআইপিদের সময় দেয়া কষ্ট হয়ে দাড়ায়। সাধারনত সমাজের উচ্চ শ্রেণির মানুষ ইফতার পার্টি আয়োজন করে থাকে। তাই এ সকল পার্টিগুলোতে কেবল উচ্চ শ্রেণির মানুষই দাওয়াত পেয়ে থাকেন। যাদের ইফতারি ক্রয় করে খাওয়ার ক্ষমতা আল্লাহ দিয়েছেন তারাই দাওয়াত পান। সমাজের সাধারণ ও গরিব মিসকিন যারা ঠিক মত ইফতার জোগার করতে হিমসীম খান, তারা দাওয়াত পান না। যদি ইফতার পার্টির মাধ্যমে মহান আল্লাহ সন্ত্বস্তি পেতে চাই তাহলে সবার জন্য উম্মুক্ত রাখার ব্যবস্থা করতে হবে। নিয়ত থাকবে সিয়াম কারী বান্দাকে ইফতার করান এখানে কোন প্রকার শ্রেণি বিন্যাসের দিকে নজর দেয়া যাবে না। উচ্চ শ্রেণির মানুষ ইফতার পার্টি মানেই হল অপচয়। অথচ অপচয় করা ইসলামি শরীয়াত হারাম। কিন্ত আমাদের সমাজে আয়োজিত প্রায় সবগুলো ইফতার মাহফিলে শরিয়তের বিধানের স্পষ্ট লংঘন হতে দেখা যায়। নারী পুরুষ বেপর্দা হয়ে এক সঙ্গে বসে ইফতার করা হয়। অনেক সময় তাদের মাগরিবের নামাজেরও খবর থাকে না। সম্মিলিত দুয়ার মাধ্যমে ইফতার শুরু করা।  আরো নানা অসঙ্গতি এখানে দেখা যায়। তাই এসব ইফতার মাহফিল থেকে বিরত থাকা জরুরি। আর যদি ইফতারের পার্টি করতেই হয় তাহলে নিম্ম লিখিত শর্থ সাপেক্ষে করা যেতে পারে। শর্থসমূহ হলোঃ

১। ইফতারের পার্টি শরীয়ত বিরোধী কোন কার্যকলাপ না হওয়া।

২। নারী পুরুষের পর্দাহীন অবাধ মেলামেশা থেকে দুরে থাকতে হবে।

৩। সমাজের প্রচলন হিসাবে বা লোক লজ্জার ভয়ে না করা। সবাই ইফতারের পার্টি করে আমি না করলে কি হয়? মানুষ কি বলে।

৪। ইফতারের পার্টি ‍পৃথক সাওয়াবের বিষয় বা পৃথক ইবাদত মনে করা।

৫। সবার জন্য উম্মুক্ত রাখা

৬। অপচয় রোধ করা

৭। ইফতার পূর্ব গতানুগতিক সম্মিলিত দুয়া না করা।

৮। ইফাতরি করতে করতে মাগরিবের জামাত পরিত্যাগ করা।

মন্তব্যঃ আমাদের দেশে প্রতিটি মসজিদে অনানুষ্ঠানীক ইফতার মাহফিলের আয়োজন করা হয়ে থাকে। এই মাহফিল শরিয়ত সম্মত কারন এখানে শরিয়ত বিরোধী কোন কাজ হয় না। এখানে যে কোন সাধারণ মানুষ ইফতারি করা বা করানোর সুযোগ পায়, অর্থাৎ সবার জন্য উম্মুক্ত। কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া ইফতার পূর্ব গতানুগতিক সম্মিলিত দুয়া করা হয় না। মসজিদে ইফাতরি আয়োজন করা হয় বিধায় মাগরিবের জামাত পরিত্যাগ করার সুযোগ থাকেনা।

৩। ইফতারীতে অপচয় করাঃ

বর্তমানে মানুষের ক্রয় ক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে। এখন ধনী গরীব সকলেই ইফতার আয়োজন করতে সক্ষম। তাই এই আয়োজনে ধনী গরিব সকলে সামিল আছে। আমরা প্রায় সকলে ইফতারির জন্য খাবারের অপচয় করে থাকি। ঘরের ইফতারি থেকে পার্টির ইফতারিতে অপচয় বেশী হয়। অথচ অপচরা করা হারাম। কুরআনে মহান আল্লাহ বলেন,

يَا بَنِي آدَمَ خُذُواْ زِينَتَكُمْ عِندَ كُلِّ مَسْجِدٍ وكُلُواْ وَاشْرَبُواْ وَلاَ تُسْرِفُواْ إِنَّهُ لاَ يُحِبُّ الْمُسْرِفِينَ

অর্থঃ হে বনী-আদম! তোমরা প্রত্যেক নামাযের সময় সাজসজ্জা পরিধান করে নাও, খাও ও পান কর এবং অপব্যয় করো না। তিনি অপব্যয়ীদেরকে পছন্দ করেন না। (সুরা আরাফ ৭:৩১)।

তিনি আরও বলেনঃ

 وَءَاتِ ذَا ٱلۡقُرۡبَىٰ حَقَّهُ ۥ وَٱلۡمِسۡكِينَ وَٱبۡنَ ٱلسَّبِيلِ وَلَا تُبَذِّرۡ تَبۡذِيرًا (٢٦) إِنَّ ٱلۡمُبَذِّرِينَ كَانُوٓاْ إِخۡوَٲنَ ٱلشَّيَـٰطِينِ‌ۖ وَكَانَ ٱلشَّيۡطَـٰنُ لِرَبِّهِۦ كَفُورً۬ا (٢٧)

অর্থঃ আত্নীয়-স্বজনকে তার হক দান কর এবং অভাবগ্রস্ত ও মুসাফিরকেও। এবং কিছুতেই অপব্যয় করো না। নিশ্চয় অপব্যয়কারীরা শয়তানের ভাই। শয়তান স্বীয় পালনকর্তার প্রতি অতিশয় অকৃতজ্ঞ। (সুরা বনী-ইসরাঈল ১৭:২৬-২৭)

রাসূল (সা.) যখন আহার করতেন, আহার শেষে তিনবার আঙ্গুল চেটে খেতেন এবং বলতেন, তোমাদের খানার বাসন থেকে কিছু পড়ে গেলে উঠিয়ে পরিষ্কার করে খেয়ে নাও, তা শয়তানের জন্য ছেড়ে দিও না। (আবু দাউদ-৩৮৪৫)। অথচ, বর্তমানে খাবারের অপচয় রমজানে রীতিমত যেন ফ্যাশন। রেস্তোরাঁ থেকে বস্তা বস্তা খাবার ফেলে দেয়া হচ্ছে, এমন ছবিও সংবাদপত্রে ছাপা হয়েছে।

এই অপচয়ের বিপরীত চিত্রও সমাজে আছে। বহু মানুষ এখনও অভুক্ত থাকে। পেট ভরে খেতে পায় না। গার্মেন্টের এমন অনেক শ্রমিক আছে যারা এখনও পেটে ক্ষুধা নিয়ে কাজ করে। পেট ভরে খেতে পারে না। কাজেই ইফতারি আয়োজনের আগে হিসাব করি সবার প্রতি খেয়াল রাখি। অপচয় না করে গরীবদের প্রতি সহানুভূতির দৃষ্টি দেই।

৫। ইফতারি আয়োজনে সময় ইবাদাত নষ্ট করাঃ

সাধারন মহিলা ইফতারি তৈরি করে থাকে। প্রতিটি সংসারের এক জন মহিলাকে গড়ে ৫/৬ জনের ইফতারি তৈরি করতে হয়। এই জন্য তাকে জোহরের সালাত আদায় করে এই কাজে তাকে লেগে যেতে হয়। ইফতারি তৈরি করতে করতে তার আছরের সালাতের খবর থাকে। সারা জীবনের ইফতারি তৈরির ফজিলত দ্বারা কি আছরের ফরজ সালাতের রিকভারি করা যাবে? আছরের সালাত কাজা আদায় করলেও আর রিকভারি হবে না। সকালে সংসারের নানা কাজ করে বিধায় মহিলাগন রমজানের সকলে নফল ইবাদাত করতে সময় পায়না আর বিকালে ইফতারির ছিপনে সময় দিলে আর তার নফল ইবাদতে সময় নেই। কাজেই পরিমিত ইফতারি তৈরি করি আর কিছু ক্রম করে আনতে বলি, তাহলে ইফতারি আয়োজনে ইবাদাতের সময় নষ্ট হবে না।

 

৪।  রোজাদারের খাবারের কোনো হিসাব হবে নাঃ

সমাজে বহুর প্রচারিত একটি কথা হলোঃ রোজাদারের খাবারের কোনো হিসাব হবে না। এই কথাটির কোন ভিত্তি ইসলামে নেই। মহান আল্লাহ বা তার প্রেরিত রাসুল সাঃ ও এমন কোন কথা বলেন নি। কিন্তু কথাটি সমাজে এমনভাবে প্রচলিত মনে হবে শতভাগই সত্য। কিছু কিছু ভুল মানুষের মাঝে এমনভাবে প্রচার পায় মনে হয় ভুলটাই যেন শুদ্ধ। এরূপ একটি ভুল কথা হল এই বাক্যটি। এই ভুল কথাটির ভুলের মাসুল দিতে সমাজের হাজারও মানুষ সংযমের মাসে ইফতারিতে বাহারি খাবারের আয়োজন করে থাকে। খাবারের হিসাব বলতে সাধারণত খাবারের অপচয় বোঝায়। আর পবিত্র কোরআন-হাদিসে এমন কোনো কথা নেই যে, রোজাদার যদি খাবারের অপচয় করে তাহলে তার কোনো হিসাব হবে না। যে ব্যক্তিই খাবার বা যে কোনো বস্তু অপচয় করুক আল্লাহর দরবারে তাকে এর হিসাব দিতে হবে। সুতরাং রোজাদার হোক বা যেই হোক খাবার বা যেকোনো বস্তুর অপচয় থেকে বেঁচে থাকা জরুরি।

মন্তব্যঃ অনেকের ধারনা রমজানে যেহেতু খাবারের হিসাব নেই, তাই হারাম হালালের বাচ-বিচার নেই। যা পাও তাই খাও। কিন্তু পানাহারের ক্ষেত্রে হারাম থেকে বেঁচে থাকা ফরজ। রমজান মাসে এ দাবি আর বেড়ে যায়। হিসাবের প্রশ্ন আসে হালালের ক্ষেত্রে, নিয়ামতের যথাযথ ব্যবহার হল কিনা এবং তার শোকর আদায় করা হল কিনা। হারামের উপর তো সরাসরি শাস্তি হয়। তাই প্রচলিত এ বাক্য শুনে এরূপ মনে করা যে, হারাম খেলেও কোনো হিসাব নেই, তা আরো ভয়াবহ।

Leave a comment