আকিদার বিদআতসমূহ তৃতীয় কিস্তি : রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, পীর মাসায়েক, অলী-আওলীয়াগন অদৃশ্যর জ্ঞান রাখেন

আকিদার বিদআতসমূহ তৃতীয় কিস্তি

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, পীর মাসায়েক, অলী-আওলীয়াগন অদৃশ্যর জ্ঞান রাখেন

সংকলনেঃ মোহাম্মাদ ইস্রাফিল হোসাইন

ইসলামি শরীয়তের প্রথম ও প্রধান বিষয় হল ইমান। আর খাটি ইমান হল, সঠিক আকিদা প্রষণ করা। কিন্তু খুবই দুঃখজনক বিষয় হল, আমরা সকলে মুসলিম দাবি করলেও শুধু আমাদের আকিদার কারনে আমরা মুসলিম নই। ইসলাম বহির্ভুত এই নতুত আকিদাকে বিদআতি আকিদা হিসাবে চিহিৃত করব। কুরআন সুন্নাহর বাহিরে যে আকিদা নতুন করে আবিস্কার হয়েছে তাই বিদআতি আকিদা। কাজেই যে কোন ভুল আকিদা যা কুরআন সুন্নাহের বাহিরে গিয়ে নতুত করে তৈরি হয়েছে তাই বিদআতি আকিদা। যার অর্থ হলো আকিদার ভূলভ্রান্তি মানেই বিদআত আকিদা। যৌক্তিক কোন কাজ সহজে যে কেউ মেনে নেন। আর বিজ্ঞান দ্বারা প্রমানিত কোন জ্ঞানতো সাথে সাথে মেনে নেয়। কিন্তু ইসলামি আকিদার মুল হল অদৃশ্যে বিশ্বাস এখানে জাগতিক কোন বিষয় থাকলে যুক্তি ও বিজ্ঞান দ্বারা পরীক্ষা করা যেত কিন্ত অদৃশ্যে বিশ্বাস করতে হলে অদৃশ্য থেকে প্রাপ্ত অহীর উপর নির্ভর করতে হবে। অহী ভিন্ন যে কোন উৎস থেকে আকিদা গ্রহন করলে শুদ্ধ ও অশুদ্ধ যে কোনটাই হতে পারে। ইসলামি আকিদা বিশ্বাস সব সময় আল্লাহকে কেন্দ্র অদৃশ্যের উপর নির্ভর করে থাকে। তাই ইসলামি আকিদার মুল উৎস হল কুরআন ও সহীহ সুন্নাহ ভিত্ত্বিক। এই কুরআন সুন্নাহর বাহিরে যখনি নতুন করে আকিদা রচনা করা হবে তাই বিদআতি আকিদা।

যেমনঃ অদৃশ্যের একটি ব্যাপার হল কবরের আজাব। কবরে আজাব হবে এটাই সত্য। কিন্তু কাউকে যুক্তি দিয়ে কি কবরের আজাব বুঝাতে বা দেখাতে পাবর। কিংবা বিজ্ঞানের আবিস্কার ক্যামেরা দ্বারা কি এই আজাব দেখাতে পারব। অপর পক্ষে আমলের ব্যাপারটা কিন্তু এমন নয়। এখানে কুরআন হাদিসের বাহিরে ইজমা কিয়াজের দরকার হয়। নতুন কোন সমস্যা আসলে কিয়াস করে মাসায়েল দিতে হয়। যেমনঃ মোবাইল, টিভি, ইন্টারনেট, শেয়ার বাজার ইত্যাদি ইসলামের প্রথমিক যুগে ছিলনা। তাই কুরআন সুন্নাহর ভিত্তিতে কিয়াস করে সমাধান দিতে হয়। কজেই একটি কথা মনে রাখতে হবেঃ “আকিদা ও ফিকহের মধ্যে মৌলিক পার্থক্য হলো, ফিকহের ক্ষেত্রে ইসতিহাদ, কিয়াস, যুক্তি বা আকলি দলিলের প্রয়োজন হতে পারে কিন্তু আকিদার ক্ষেত্রে ইসতিহাদ, কিয়াস, যুক্তি বা আকলি দলিলের প্রয়োজন নেই”

এক কথায় বলে গেলে কুরআন হাদিসের ষ্পষ্ট কোন রেফারেন্স ছাড়া আকিদা গ্রহণীয় নয়। যদি কেউ যুক্তি দিয়ে আকিদা বুঝাতে আসে তাকে সালাম জানাতে হবে। 

কুনআন সুন্নাহকে উৎস হিসাবে না নিলে আকিদার ভিন্নতা তো থাকবেই। আর এই ভিন্ন আকিদা আসবে সম্পূর্ণ নতুন করে যা বিদআত বলা হয়। কুরআন হাদিসে ষ্পষ্টভাবে উল্লেখ নেই, এমন ফিকহি মাসলা মাসায়েলের ক্ষেতে ইখতিলাফ বা মতভেদ করা জায়েয হলেও, আকিদার ক্ষেত্রে কোন প্রকার মতভেদ জায়েয নেই। কারন আকিদার ছয়টি বিষয় (আল্লাহ্‌র প্রতি বিশ্বাস, ফিরিশতাগণের প্রতি বিশ্বাস, কিতার সমুহের প্রতি বিশ্বাস, রাসূলগনের প্রতি বিশ্বাস শেষ দিনের প্রতি বিশ্বাস, তাক্বদীরের  ভালো মন্দেন প্রতি বিশ্বাস) যার সবগুলিই গায়েবের সাথে সম্পৃক্ত এবং গায়েব জানার জন্য অহীর প্রয়োজন। যতি কেউ তার আকিদাকে অহী ভিত্তিক না করে, যুক্তি ভিত্তিক করে, তাহলে তার বিভ্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় শতভাগ। অহী ভিত্তিক না হয়ে আকিদা যুক্তি ভিত্তিক হলেই বিদআতি আকিদা হবে।

আকিদার সম্পর্কে আলোচনার আগে একটা কথাকে মনে খোদাই করে লিখে রাখেন, “আকিদা গাইবের প্রতি বিশ্বাস, এই বিশ্বাস হবে অহী নির্ভর, কোন প্রকার যু্‌ক্তিতর্কের অবতারণা করা যাবেনা”। কাজেই আমি যে ভ্রান্ত আকিদাগুলি তুলে ধরব তার বিপক্ষে আন্ততো কুরআনের একটি আয়াত অথবা একটি সহিহ হাদিস উপস্থাপণ করব। এই সহিহ আকিদার বিপরীতে যে সকল বিদআতি আকিদা সবার সামনে তুলে ধরব, সেই সকল আকিদার কুরআন সুন্নাহতে কোন প্রমান পাওয়া যাবে না। কুরআন সুন্নাহ নাই বলেই আকিদার নাম দিলাম বিদআতি আকিদা।

 

সঠিক আকিদা হলোঃ মহান আল্লাহর ছাড়া সৃষ্টি জগতের কেউই অদৃশ্যর জ্ঞান রাখেন না।

সঠিক আকিদার দলীলঃ 

ইদানিং শিয়াদের মত কিছু নামধারি বিদআতী মুসলিম প্রচার চালাচ্ছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অদৃশ্যর জ্ঞান রাখেন। বিদআতিগণ এই দাবি অজ্ঞদের মাঝে প্রচার কর বেড়াচ্ছে। তারাও আরও দাবি করে, শুধু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নয় তাদের অনুসরণীয় পীর মাসায়েক, অলী-আওলীয়াও অদৃশ্যর জ্ঞান তাদের আকিদার অসারতা প্রমানের জন্য প্রথমে কুরআনের কিছু আয়াত, তার পর কিছু সহিহ হাদিস উল্লেখ করব।

১। কুরআনের আলোকে আল্লাহ ছাড়া কারও অদৃশ্যর জ্ঞান নেইঃ

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন অবস্থায়ই অদৃশ্যর জ্ঞান সম্বন্ধে খবর রাখে না। এ সম্পর্কে মহান আল্লাহ তাআলা বলেনঃ

 قُل لَّآ أَمۡلِكُ لِنَفۡسِى نَفۡعً۬ا وَلَا ضَرًّا إِلَّا مَا شَآءَ ٱللَّهُ‌ۚ وَلَوۡ كُنتُ أَعۡلَمُ ٱلۡغَيۡبَ لَٱسۡتَڪۡثَرۡتُ مِنَ ٱلۡخَيۡرِ وَمَا مَسَّنِىَ ٱلسُّوٓءُ‌ۚ إِنۡ أَنَا۟ إِلَّا نَذِيرٌ۬ وَبَشِيرٌ۬ لِّقَوۡمٍ۬ يُؤۡمِنُونَ (١٨٨) 

অর্থঃ হে মুহাম্মাদ! তাদেরকে বলো, নিজের জন্য লাভ -ক্ষতির কোন ইখতিয়ার আমার নেই৷ একমাত্র আল্লাহই যা কিছু চান তাই হয়৷ আর যদি আমি গায়েবের খবর জানতাম, তাহলে নিজের জন্যে অনেক ফায়দা হাসিল করতে পারতাম এবং কখনো আমার কোন ক্ষতি হতো না৷   আমিতো নিছক একজন সতর্ককারী ও সুসংবাদদাতা আমি গায়েবের খবর জানতাম, তাহলে নিজের জন্যে অনেক ফায়দা হাসিল করতে পারতাম এবং কখনো আমার কোন ক্ষতি হতো না৷ এমন জাতীর জন্য, যারা বিশ্বাস করে।৷  (সুরা আরাফ ৭: ১৮৮)।

মন্তব্যঃ এ আয়াতে আল্লাহ তাআলা তার রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে পরিস্কার ভাবে ঘোষনা দিতে বললেন যে, আমি গায়েবের খবর জানলে, নিজের  অনেক কল্যান করতাম এবং কখনো কোন ক্ষতি আমাকে স্পর্শ করতনা।

আল্লাহ তাআলা বলেন:

 قُل لَّآ أَقُولُ لَكُمۡ عِندِى خَزَآٮِٕنُ ٱللَّهِ وَلَآ أَعۡلَمُ ٱلۡغَيۡبَ وَلَآ أَقُولُ لَكُمۡ إِنِّى مَلَكٌ‌ۖ إِنۡ أَتَّبِعُ إِلَّا مَا يُوحَىٰٓ إِلَىَّ‌ۚ قُلۡ هَلۡ يَسۡتَوِى ٱلۡأَعۡمَىٰ وَٱلۡبَصِيرُ‌ۚ أَفَلَا تَتَفَكَّرُونَ (٥٠) 

অর্থঃ বল, “আমি তোমাদের বলি নাই যে, আমার নিকট আল্লাহ্‌র ধনভান্ডার রয়েছে। আমি অদৃশ্য সম্বন্ধে জানি না আমি তোমাদের এ কথা বলি না যে, আমি একজন ফেরেশতা। আমার নিকট যে প্রত্যাদেশ অবতীর্ণ হয়েছে, আমি শুধু তার অনুসরণ করি। বল, অন্ধ ও চক্ষুষ্মান কি এক হতে পারে? তোমরা কি বিবেচনা করবে না?  (সুরা আনাম ৬:৫০)।

মন্তব্যঃ এ আয়াতে ও আল্লাহ তাআলা তার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে পরিস্কার ভাবে ঘোষনা দিতে বললেন যে, আমি অদৃশ্য সম্বন্ধে জানি না

আল্লাহ তাআলার কাছে আছে অদৃশ্যের চাবি, লুক্কায়িত বিষয়ের জ্ঞান, গর্ভে যা কিছু কমে বা বাড়ে তার জ্ঞান, তিনি জানেন যা কিছু অদৃশ্য ও দৃশ্যমান। অপর পক্ষ তিনি ছাড়া কেউ জানেনা অদৃশ্যের জ্ঞান, কেউ জানে না আগামী কাল সে কি অর্জন করবে, এবং কেউ জানে না কোন দেশে তার মৃত্যু ঘটবে, কেউ জানে না প্রত্যেক নারী যা গর্ভে ধারণ করে। তার প্রমানঃ আল্লাহতাআলা বলেন,

إِنَّ ٱللَّهَ عِندَهُ ۥ عِلۡمُ ٱلسَّاعَةِ وَيُنَزِّلُ ٱلۡغَيۡثَ وَيَعۡلَمُ مَا فِى ٱلۡأَرۡحَامِ‌ۖ وَمَا تَدۡرِى نَفۡسٌ۬ مَّاذَا تَڪۡسِبُ غَدً۬ا‌ۖ وَمَا تَدۡرِى نَفۡسُۢ بِأَىِّ أَرۡضٍ۬ تَمُوتُ‌ۚ إِنَّ ٱللَّهَ عَلِيمٌ خَبِيرُۢ (٣٤)

 অর্থঃ নিশ্চয় আল্লাহর কাছেই কেয়ামতের জ্ঞান রয়েছে। তিনিই বৃষ্টি বর্ষণ করেন এবং গর্ভাশয়ে যা থাকে, তিনি তা জানেন। কেউ জানে না আগামীকল্য সে কি উপার্জন করবে এবং কেউ জানে না কোন দেশে সে মৃত্যুবরণ করবে। আল্লাহ সর্বজ্ঞ, সর্ববিষয়ে সম্যক জ্ঞাত। (সুরা লুকমান ৩১:৩৪ )।

 আল্লাহতাআলা আরও বলেন,

 ٱللَّهُ يَعۡلَمُ مَا تَحۡمِلُ ڪُلُّ أُنثَىٰ وَمَا تَغِيضُ ٱلۡأَرۡحَامُ وَمَا تَزۡدَادُ‌ۖ وَڪُلُّ شَىۡءٍ عِندَهُ ۥ بِمِقۡدَارٍ (٨) عَـٰلِمُ ٱلۡغَيۡبِ وَٱلشَّہَـٰدَةِ ٱلۡڪَبِيرُ ٱلۡمُتَعَالِ (٩)

অর্থঃ প্রত্যেক নারী যা (গর্ভে) ধারণ করে এবং গর্ভে যা কিছু কমে বা বাড়ে, আল্লাহ্‌ তা জানেন। তাঁর বিধনে প্রতিটি বস্তুরই এক নির্দিষ্ট পরিমাণ আছে। যা কিছু অদৃশ্য ও দৃশ্যমান তিনি তা জানেন। তিনি মহান সর্বোচ্চ মর্যাদাবান। (সুরা রাদ ১৩: ৮-৯)।

মহান আল্লাহর ঘোষনা “কিয়ামতের সময় সম্বন্ধে জ্ঞান কেবল মাত্র তার নিকটআল্লাহ’তাআলা বলেন,

 يَسۡـَٔلُكَ ٱلنَّاسُ عَنِ ٱلسَّاعَةِۖ قُلۡ إِنَّمَا عِلۡمُهَا عِندَ ٱللَّهِۚ وَمَا يُدۡرِيكَ لَعَلَّ ٱلسَّاعَةَ تَكُونُ قَرِيبًا (٦٣) 

অর্থঃ লোকেরা আপনাকে কেয়ামত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে। বলুন, এর জ্ঞান আল্লাহর কাছেই। আপনি কি করে জানবেন যে সম্ভবতঃ কেয়ামত নিকটেই। (সুরা আহযাব ৩৩:৬৩)।

তিনি কুরআনে বার বার ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি ছাড়া পৃথিবীতে ও আকাশে কেউ অদৃশ্যের জ্ঞান রাখে না। যদি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জানতের তবে একবার হলেও বলতেন। তার ও ঘোষনা প্রমান করে এটা তার একক গুন, কোন সৃষ্টির এ গুন নেই। এমন কি কাউকে দান করে নাই।

যেমনঃ আল্লাহ তাআলা বলেনঃ

 قُل لَّا يَعۡلَمُ مَن فِى ٱلسَّمَـٰوَٲتِ وَٱلۡأَرۡضِ ٱلۡغَيۡبَ إِلَّا ٱللَّهُ‌ۚ وَمَا يَشۡعُرُونَ أَيَّانَ يُبۡعَثُونَ (٦٥)

অর্থঃ তাদেরকে বল, আল্লাহ ছাড়া পৃথিবীতে ও আকাশে কেউ অদৃশ্যের জ্ঞান রাখে না৷ এবং তারা জানেনা কবে তাদেরকে উঠিয়ে নেয়া হবে। (নামল  ২৭:৬৫)।

 আল্লাহ তাআলা আরও বলেনঃ

إِنَّ ٱللَّهَ يَعۡلَمُ غَيۡبَ ٱلسَّمَـٰوَٲتِ وَٱلۡأَرۡضِ‌ۚ وَٱللَّهُ بَصِيرُۢ بِمَا تَعۡمَلُونَ (١٨)

অর্থ:  নিশ্চয় আল্লাহ্‌ আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর সমস্ত গুপ্ত বিষয় জানেন। এবং তোমরা যা কর আল্লাহ্‌ তা অবশ্য দেখেন।”  (সুরা হুজুরাত ৪৯:১৮)।

আল্লাহ তাআলা আরও বলেনঃ

 (٣٧)  إِنَّ ٱللَّهَ عَـٰلِمُ غَيۡبِ ٱلسَّمَـٰوَٲتِ وَٱلۡأَرۡضِۚ إِنَّهُ ۥ عَلِيمُۢ بِذَاتِ ٱلصُّدُورِ (٣٨)

অর্থঃ আল্লাহ আসমান ও যমীনের অদৃশ্য বিষয় সম্পর্কে জ্ঞাত। তিনি অন্তরের বিষয় সম্পর্কেও সবিশেষ অবহিত। (সুরা ফাতির  ৩৫:৩৮)।

আল্লাহ তায়ালারই অদৃশ্যের জ্ঞানের অধিকারিমানুষ কেন সৃষ্টি জগতে আর কোন কে্‌উই অদৃশ্যের খবর জানেন। এ সর্ম্পকে আরও জানতে কুরআনের এই আয়াতগুলি প্রমান হিসাবে উল্লেখ করা হলঃ

সুরা মায়েদা- ৫:১০৯ ১১৬। সুরা আনাম- ৬:৫০  ৫৯ ৭৩। সুরা তওবা- ৯:৪৩,৭৮,৯৫,১০১, ১০৫। সুরা  নাহল- ১৬:৭৭। সুরা ত্বহা -২০:১৫ ১১০। সুরা জুকরুক-৪৩:৮৫। সুরা তাহরিম -৬৬:১। সুরা জিন-৭২:২৫। সুরা হুদ ১১:১২৩। সুরা বাকারা-২:৩৩। সুরা আনাম-৬:৫৯। সুরা সা’বা-৩৪:৩। সুরা আরাফ ৭:১৮৭। সুরা কাহাব-১৮:২৬।

 

২। সুরা আত-তাহরীমের প্রথম তিনটি  আয়াতের আলোকেঃ

সুরা আত-তাহরীমের শুরুর দিকের তিনটি  আয়াতের অনুবাদ লক্ষ করি। আল্লাহ তাআলা বলেন:

يَـٰٓأَيُّہَا ٱلنَّبِىُّ لِمَ تُحَرِّمُ مَآ أَحَلَّ ٱللَّهُ لَكَ‌ۖ تَبۡتَغِى مَرۡضَاتَ أَزۡوَٲجِكَ‌ۚ وَٱللَّهُ غَفُورٌ۬ رَّحِيمٌ۬ (١) قَدۡ فَرَضَ ٱللَّهُ لَكُمۡ تَحِلَّةَ أَيۡمَـٰنِكُمۡ‌ۚ وَٱللَّهُ مَوۡلَٮٰكُمۡ‌ۖ وَهُوَ ٱلۡعَلِيمُ ٱلۡحَكِيمُ (٢) وَإِذۡ أَسَرَّ ٱلنَّبِىُّ إِلَىٰ بَعۡضِ أَزۡوَٲجِهِۦ حَدِيثً۬ا فَلَمَّا نَبَّأَتۡ بِهِۦ وَأَظۡهَرَهُ ٱللَّهُ عَلَيۡهِ عَرَّفَ بَعۡضَهُ ۥ وَأَعۡرَضَ عَنۢ بَعۡضٍ۬‌ۖ فَلَمَّا نَبَّأَهَا بِهِۦ قَالَتۡ مَنۡ أَنۢبَأَكَ هَـٰذَا‌ۖ قَالَ نَبَّأَنِىَ ٱلۡعَلِيمُ ٱلۡخَبِيرُ (٣)

১।  হে নবী, আল্লাহ যে জিনিস হালাল করেছেন তা তুমি হারাম করছো কেন? (তা কি এ জন্য যে,) তুমি তোমার স্ত্রীদের সন্তুষ্টি চাও?  আল্লাহ ক্ষমাশীল এবং দয়ালু৷ 

২।  আল্লাহ তোমাদের জন্য কসমের বাধ্যবাধকতা থেকে মুক্ত হওয়ার পন্থা নির্ধারণ করে দিয়েছেন৷ আল্লাহ তোমাদের অভিভাবক এবং তিনি মহাজ্ঞানী ও মহা কৌশলী৷

৩। (এ ব্যাপারটিও লক্ষণীয় যে,) নবী তাঁর এক স্ত্রীকে গোপনে একটি কথা বলেছিলেন৷ পরে সেই স্ত্রী যখন (অন্য কারো কাছে) সেই গোপনীয় বিষয়টি প্রকাশ করে দিল এবং আল্লাহ নবীকে এই (গোপনীয় বিষয় প্রকাশ করার) ব্যাপারটি জানিয়ে দিলেন তখন নবী (ঐ স্ত্রীকে) কিছুটা সাবধান করলেন এবং কিছুটা মাফ করে দিলেন৷ নবী যখন তাকে (গোপনীয়তা প্রকাশের) এই কথা জানালেন তখন সে জিজ্ঞেস করলোঃ কে আপনাকে এ বিষয়ে অবহিত করেছে? নবী বললেন, আমাকে তিনি অবহিত করেছেন যদি সবকিছু জানেন এবং সর্বাধিক অবহিত।

এই আয়াতগুলোর শানে নূযুল জানা না থাকলে অর্থ বোধগম্য হবেনা। এই খানে আসলে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও তাঁর পবিত্র বিবিগণের সাথে দাম্পত্য জীবনের সাথে জড়িত দুইটি ঘটনা নিয়ে ওয়াহী করা হয়েছিলো।

সহিহ বুখারী, খন্ড ৬, অধ্যায় ৬০, হাদিস ৪৩৪। এর একটি ঘটনা সহীহ বুখারীর “তাফসির” অধ্যায়ে বর্ণনা করা হয়েছে এইভাবেঃ

আয়িশা (রাঃ) হতে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল (সাঃ) যয়নাব বিনতে জাহশ (রাঃ), রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর একজন স্ত্রী, এর কাছে মধু পান করতেন এবং সেখানে কিছুক্ষণ থাকতেন। তাই আমি (আয়েশাহ) ও হাফসা একমত হলাম যে, আমাদের যার ঘরেই আল্লাহর রসূল (সাঃ) আসবেন, সে তাঁকে বলবে, আপনি কি মাগাফীর খেয়েছেন? আপনার মুখ থেকে মাগাফীরের গন্ধ পাচ্ছি। (আমরা তাই করলাম) এবং তিনি বললেন, না, বরং আমি যয়নাব বিনতে জাহশ এর ঘরে মধু পান করেছি। তবে আমি কসম করলাম, আর কখনো মধু পান করব না। তুমি এ বিষয়টি আর কাউকে জানাবে না।

নোটঃ মাগাফীর একটা মিষ্টি কিন্তু দুর্গন্ধযুক্ত গাছের রস (রেসিন), রাসুলুল্লাহ (সাঃ) হালাল হলেও কখনো দুর্গন্ধযুক্ত খাবার খেতেন না, এটা তাঁর রীতি ছিলো।  যয়নাব বিনতে জাহশ (রাঃ) এর ঘরে মধু পান করা ও কিছু সময় কাটানো এটা তাঁর অপর দুই সতীন আয়িশা (রাঃ) ও হাফসা (রাঃ) স্বাভাবিকভাবে নিতে পারেন নি। সতীনের প্রতি নারীদের স্বাভাবিক বিদ্বেষপরায়ণ মনোভাব থেকে তারা দুইজন এই যুক্তি করেন, পরবর্তীতে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) যদি যয়নাব বিনতে জাহশ (রাঃ) এর কাছ থেক মধু পান করেন তাহলে তাঁরা এই কথা বলবেন যে আপনি কি মাগফীর খেয়েছন? সে অনুযায়ী, আয়িশাহ ও হাফসাহ দুইজনের কাছেই রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এইরকম কথা শুনে মনে করেছিলেন, সত্যিই বুঝি এই মধু খেলে মুখে দুর্গন্ধ সৃষ্টি হয়।

তাই তিনি কসম করে বললেন, এই মধু আর খাবেন না (এটাই ছিলো আয়িশাহ ও হাফসার উদ্দেশ্য, যাতে করে তিনি যয়নবের ঘরে ঐ সময়টা আর না কাটান), আর যেহেতু তাঁর রীতি ছিলো দুর্গন্ধযুক্ত খাবার না খাওয়া, তাই তিনি তাদেরকে এই কথাটা অন্য কাউকে বলতে না বলেন। এই ঘটনার প্রেক্ষিতে আল্লাহ সুরা তাহরীমের এই আয়াতগুলো নাযিল করেন।

আয়াতগুলো থেকে শিক্ষাঃ যদিও এটা রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে আয়াত কিন্তু কুরআনে নাযিল করার পেছনে উদ্দেশ্য রয়েছে। এই ঘটনা শিক্ষ পেলাম:

 ০১।  রাসুলুল্লাহ (সাঃ) নিজে থেকে কোনো কিছু হালাল বা হারাম করতে পারেন। 

০২।  রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও গায়বের খবর জানেন না। কারন তাহার স্ত্রী আয়েশাহ (রাঃ) ও হাফসা (রাঃ) পাশের ঘরে বসেই একমত হন যে, আমাদের যার ঘরেই আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম  আসবেন, সে তাঁকে বলবে, আপনি কি মাগাফীর খেয়েছেন অথচ আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিছুই জানলেন। কই গেল তাহার গায়বের খবর জানার ক্ষমতা?

আর ও পরিস্কার ভাবে তৃতীয় আয়াতের শেষে আল্লাহ রব্বুল আলামিন বলেন: “নবী যখন তা স্ত্রীকে বললেন, তখন স্ত্রী বললেনঃ কে আপনাকে এ সম্পর্কে অবহিত করল? নবী বললেনঃ যিনি সর্বজ্ঞ, ওয়াকিফহাল, তিনি আমাকে অবহিত করেছেন”। এর অর্থ দাড়াল আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের স্ত্রীদের ও আকিদা ছিল, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গায়বের খবর জানেন না।

৩। সুরা নুরের ১১-২০ নং আয়াতের আলোকেঃ

 প্রথমে সুরা নুরের ১১-২০ নং আয়াতের অনুবাদ লক্ষ করিঃ

إِنَّ ٱلَّذِينَ جَآءُو بِٱلۡإِفۡكِ عُصۡبَةٌ۬ مِّنكُمۡ‌ۚ لَا تَحۡسَبُوهُ شَرًّ۬ا لَّكُم‌ۖ بَلۡ هُوَ خَيۡرٌ۬ لَّكُمۡ‌ۚ لِكُلِّ ٱمۡرِىٍٕ۬ مِّنۡہُم مَّا ٱكۡتَسَبَ مِنَ ٱلۡإِثۡمِ‌ۚ وَٱلَّذِى تَوَلَّىٰ كِبۡرَهُ ۥ مِنۡہُمۡ لَهُ ۥ عَذَابٌ عَظِيمٌ۬ (١١)

لَّوۡلَآ إِذۡ سَمِعۡتُمُوهُ ظَنَّ ٱلۡمُؤۡمِنُونَ وَٱلۡمُؤۡمِنَـٰتُ بِأَنفُسِہِمۡ خَيۡرً۬ا وَقَالُواْ هَـٰذَآ إِفۡكٌ۬ مُّبِينٌ۬ (١٢)

لَّوۡلَا جَآءُو عَلَيۡهِ بِأَرۡبَعَةِ شُہَدَآءَ‌ۚ فَإِذۡ لَمۡ يَأۡتُواْ بِٱلشُّہَدَآءِ فَأُوْلَـٰٓٮِٕكَ عِندَ ٱللَّهِ هُمُ ٱلۡكَـٰذِبُونَ (١٣)

وَلَوۡلَا فَضۡلُ ٱللَّهِ عَلَيۡكُمۡ وَرَحۡمَتُهُ ۥ فِى ٱلدُّنۡيَا وَٱلۡأَخِرَةِ لَمَسَّكُمۡ فِى مَآ أَفَضۡتُمۡ فِيهِ عَذَابٌ عَظِيمٌ (١٤)

إِذۡ تَلَقَّوۡنَهُ ۥ بِأَلۡسِنَتِكُمۡ وَتَقُولُونَ بِأَفۡوَاهِكُم مَّا لَيۡسَ لَكُم بِهِۦ عِلۡمٌ۬ وَتَحۡسَبُونَهُ ۥ هَيِّنً۬ا وَهُوَ عِندَ ٱللَّهِ عَظِيمٌ۬ (١٥)

وَلَوۡلَآ إِذۡ سَمِعۡتُمُوهُ قُلۡتُم مَّا يَكُونُ لَنَآ أَن نَّتَڪَلَّمَ بِہَـٰذَا سُبۡحَـٰنَكَ هَـٰذَا بُہۡتَـٰنٌ عَظِيمٌ۬ (١٦)

يَعِظُكُمُ ٱللَّهُ أَن تَعُودُواْ لِمِثۡلِهِۦۤ أَبَدًا إِن كُنتُم مُّؤۡمِنِينَ (١٧)

وَيُبَيِّنُ ٱللَّهُ لَكُمُ ٱلۡأَيَـٰتِ‌ۚ وَٱللَّهُ عَلِيمٌ حَكِيمٌ (١٨)

إِنَّ ٱلَّذِينَ يُحِبُّونَ أَن تَشِيعَ ٱلۡفَـٰحِشَةُ فِى ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ لَهُمۡ عَذَابٌ أَلِيمٌ۬ فِى ٱلدُّنۡيَا وَٱلۡأَخِرَةِ‌ۚ وَٱللَّهُ يَعۡلَمُ وَأَنتُمۡ لَا تَعۡلَمُونَ (١٩)

وَلَوۡلَا فَضۡلُ ٱللَّهِ عَلَيۡڪُمۡ وَرَحۡمَتُهُ ۥ وَأَنَّ ٱللَّهَ رَءُوفٌ۬ رَّحِيمٌ۬ (٢٠)

অর্থঃ ১১। যারা এ মিথ্যা অপবাদ তৈরী করে এনেছে  তারা তোমাদেরই ভিতরের একটি অংশ ৷ এ ঘটনাকে নিজেদের পক্ষে খারাপ মনে করো না বরং এও তোমাদের জন্য ভালই৷ যে এর মধ্যে যতটা অংশ নিয়েছে সে ততটাই গোনাহ কামাই করেছে আর যে ব্যক্তি এর দায়দায়িত্বের বড় অংশ নিজের মাথায় নিয়েছে  তার জন্য তো রয়েছে মহাশাস্তি

১২। যখন তোমরা এটা শুনেছিলে তখনই কেন মু’মিন পুরুষ ও মু’মিন নারীরা নিজেদের সম্পর্কে সুধারণা করেনি এবং কেন বলে দাওনি এটা সুস্পষ্ট মিথ্যা দোষারোপ? 

১৩। তারা (নিজেদের অপবাদের প্রমাণ স্বরূপ) চারজন সাক্ষী আনেনি কেন? এখন যখন তারা সাক্ষী আনেনি তখন আল্লাহর কাছে তারাই মিথ্যুক৷

১৪।  যদি তোমাদের প্রতি দুনিয়ায় ও আখেরাতে আল্লাহর অনুগ্রহ ও করুণা না হতো তাহলে যেসব কথায় তোমরা লিপ্ত হয়ে গিয়েছিলে সেগুলোর কারণে তোমাদের ওপরে মহাশাস্তি নেমে আসতো৷  

১৫। একটু ভেবে দেখো তো¸ সে সময় তোমরা কেমন মারাত্মক ভুল করেছিলে) যখন তোমরা এক মুখ থেকে আর এক মুখে এ মিথ্যা ছড়িয়ে বেড়াচ্ছিলে এবং তোমরা নিজেদের মুখে এমন সব কথা বলে যাচ্ছিলে যা সম্পর্কে তোমাদের কিছুই জানা ছিল না ৷ তোমরা একে একটা মামুলি কথা মনে করেছিলে অথচ আল্লাহর কাছে এটা ছিল্ গুরুতর বিষয়৷

১৬। একথা শোনার সাথে সাথেই তোমরা বলে দিলে না কেন, ‘‘এমন কথা মুখ দিয়ে বের করা আমাদের শোভা পায় না , সুব্‌হানাল্লাহ! এ তো একটি জঘন্য অপবাদ৷’’

১৭। আল্লাহ তোমাদের উপদেশ দেন, যদি তোমরা মু’মিন হয়ে থাকো,

১৮।  তাহলে ভবিষ্যতে কখনো এ ধরনের কাজ করো না ৷ আল্লাহ তোমাদের পরিষ্কার নির্দেশ দেন এবং তিনি সবজ্ঞ ও বিজ্ঞানময়৷

১৯।  যারা চায় মু’মিনদের সমাজে অশ্লীলতার প্রসার ঘটুক তারা দুনিয়ায় ও আখেরাতে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি ভোগ করবে৷  আল্লাহ জানেন এবং তোমরা জানো না ৷ 

২০।  যদি আল্লাহর অনুগ্রহ ও তাঁর করুণা তোমাদের প্রতি না হতো এবং আল্লাহ যদি স্নেহশীল ও দয়ার্দ্র না হতেন (তাহলে যে জিনিস এখনই তোমাদের মধ্যে ছড়ানো হয়েছিলো তার পরিণাম হতো অতি ভয়াবহ)। 

সুরা নুরের এই আয়াতগুলি ঐতিহাসিক ইফকের পরিপেক্ষিতে নাজিল হয়। ঘটনাটি সহীহ বুখারী, আল মাগাযী অধ্যায়, হযরত আয়েশা রা. এর জবানিতে বর্নিত হয়েছে এই ভাবে:

আবদুল আযীয ইবনে আবদুল্লাহ রহ………..উরওয়া ইবনে যুবাইর, সাঈদ ইবনে মুসায়্যিব, আলকামা ইবনে ওয়াক্কাস ও উবায়দুল্লাহ ইবনে আবদুল্লাহ ইবনে উতবা ইবনে মাসউদ রা. সূত্রে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সহধর্মিণী আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত যে, যখন অপবাদ রটনাকারীগণ তাঁর প্রতি অপবাদ রটিয়েছিল রাবী যুহরী রহ. বলেন, তারা প্রত্যেকেই হাদীসটির অংশবিশেষ আমার কাছে বর্ণনা করেছেন। হাদীসটি স্মরণ রাখা ও সঠিকভাবে বর্ণনা করার ক্ষেত্রে তাদের কেউ কেউ একে অন্যের চেয়ে অধিকতর অগ্রগামী ও নির্ভরযোগ্য। আয়েশা রা. সম্পর্কে তারা আমার কাছে যা বর্ণনা করেছেন আমি তাদের প্রত্যেকের কথাই যথাযথভাবে স্মরণ রেখেছি। তাদের একজনের বর্ণিত হাদীসের অংশবিশেষ অপরের বর্ণিত হাদীসের অংশবিশেষের সত্যতা প্রমাণ করে। যদিও তাদের একজন অন্যজনের চেয়ে অধিক স্মৃতিশক্তির অধিকারী। রাবীগণ বলেন, আয়েশা রা. বলেছেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন সফরের ইচ্ছা করতেন তখন তিনি তাঁর স্ত্রীগণের (নামের জন্য) কোরা ব্যবহার করতেন। এতে যার নাম আসত তাকেই তিনি সাথে করে সফরে বের হতেন।

আয়েশা রা. বলেন, এমনি এক যুদ্ধে (মুরায়সীর যুদ্ধ) তিনি আমাদের মাঝে কোরা ব্যবহার করেন, এতে আমার নাম বেরিয়ে আসে। তাই আমিই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে সফরে বের হলাম। এ ঘটনাটি পর্দার হুকুম নাযিল হওয়ার পর সংঘটিত হয়েছিল। তখন আমাকে হাওদাজ সহ সাওয়ারীতে উটানো ও নামানো হত। এমনি করে আমরা চলতে থাকলাম। অবশেষে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন এ যুদ্ধ থেকে অবসর হলেন, তখন তিনি (বাড়ির দিকে) ফিরলেন। ফেরার পথে আমরা মদীনার নিকটবর্তী হলে তিনি একদিন রাতের বেলা রওয়ানা হওয়ার জন্য নির্দেশ দিলেন। রওয়ানা হওয়ার ঘোষণার পর আমি উঠলাম এবং (প্রকৃতির ডাকে সাড়া দেওয়ার জন্য) পায়ে হেটে সেনাছাউনী অতিক্রম করে (একটু সামনে) গেলাম। এরপর প্রয়োজন সেরে আমি আমার সাওয়ারীর কাছে ফিরে এসে বুকে হাত দিয়ে দেখলাম যে, (ইয়ামানের অন্তর্গত) যিফার শহরের পুতি দ্বারা তৈরী করা আমার গলার হারটি ছিড়ে কোথায় পড়ে গিয়েছে। তাই আমি ফিরে গিয়ে আমার হারটি তালাশ করতে আরম্ভ করলাম। হার তালাশ করতে করতে আমার আসতে বিলম্ব হয়ে যায়। আয়েশা রা. বলেন, যে সমস্ত লোক উটের পিঠে আমাকে উঠিয়ে দিতেন তারা এসে আমার হাওদাজ উঠিয়ে তা আমার উটের পিঠে তুলে দিলেন, যার উপর আরোহণ করতাম। তারা মনে করেছিলেন যে, আমি এর মধ্যে আছি, কারণ খাদ্যভাবে মহিলাগণ তখন খুবই হালকা পাতলা হয়ে গিয়েছিল এবং তাদের দেহ মাংসল ছিলনা। তাঁরা খুবই স্বল্প পরিমাণ খানা খেতে পেত। তাই তারা যখন হাওদাজ উঠিয়ে উপরে রাখেন তখন তখন তা হালকা হওয়ার বিষয়টিকে কোন প্রকার অস্বাভাবিক মনে করেননি। অধিকন্তু আমি ছিলাম একজন অল্প বয়স্কা কিশোরী। এরপর তারা উট হাঁকিয়ে নিয়ে চলে যায়। সৈন্যদল রওয়ানা হওয়ার পর আমি আমার হারটি খুঁজে পাই এবং নিজস্ব স্থানে ফিরে এসে দেখি তাদের (সৈন্যদল) কোন আহবায়ক এবং কোন উত্তরদাতা তথায় নেই। ( নিরুপায় হয়ে) তখন আমি পূর্বে যেখানে ছিলাম সেখানে বসে রইলাম। ভাবছিলাম, তাঁরা আমাকে দেখতে না পেলে অবশ্যই আমার কাছে ফিরে আসবে। ঐ স্থানে বসে থাকা অবস্থায় ঘুম চেপে আসলে আমি ঘুমিয়ে পড়লাম। বানূ সুলামী গোত্রের যাকওয়ান শাখার সাফওয়ান ইবনে মুআত্তাল রা. (যাকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফেলে যাওয়া আসবাবপত্র কুড়িয়ে নেয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছিলেন) সৈন্যদল চলে যাওয়ার পর সেখানে ছিলেন। তিনি প্রত্যুষে আমার অবস্থানস্থলের কাছে পৌঁছে একজন ঘুমন্ত মানুষ দেখে আমার দিকে তাকানোর পর আমাকে চিলে ফেললেন। তিনি আমাকে দেখেছিলে পর্দার বিধান নাযিল হওয়ার পূর্বে। তিনি আমাকে চিনতে পেরে ‘ইন্না লিল্লাহহি ওয়া ইন্না ইলায়হি রাজিউন’ পড়লে আমি তা শুনতে পেয়ে ঘুম থেকে জেগে উঠলাম এবং চাদর টেনে আমার চেহারা ঢেকে ফেললাম। আল্লাহর কসম, আমি কোন কথা বলিনি এবং তাঁর থেকে ইন্না লিল্লাহ……..পাঠ ছাড়া আর কোন কথাই শুনতে পাইনি। এরপর তিনি সাওয়ারী থেকে অবতরণ করলেন এবং সাওয়ারীকে বসিয়ে তার সামনের পা নিচু করে দিলে আমি গিয়ে তাতে আরোহণ করলাম। পরে তিনি আমাকেসহ সাওয়ারীকে টেনে আগে আগে চলতে লাগলেন, পরিশেষে ঠিক দ্বিপ্রহরে প্রচণ্ড গরমের সময় আমরা গিয়ে সেনাদলের সাথে মিলিত হলাম। সে সময় তাঁরা একটি জায়গায় অবতরণ করছিলেন। আয়েশা রা. বলেন, এরপর যাদের ধ্বংস হওয়ার ছিল তারা (আমার প্রতি অপবাদ আরোপ করে) ধ্বংস হয়ে গেল। তাদের মধ্যে এ অপবাদ আরোপের ব্যাপারে যে প্রধান ভূমিকা গ্রহণ করেছিল সে হচ্ছে আবদুল্লাহ ইবনে উবায় ইবনে সুলুল। রাবী উরওয়া রা. বলেন, আমি জানতে পেরেছি যে, তার সামনে অপবাদের কথাগুলো প্রচার করা হত এবং আলোচনা করা হত আর অমনি সে এগুলোকে বিশ্বাস করত, খুব ভালভাবে শ্রবণ করত এবং শোনা কথার ভিত্তিতেই বিষয়টিকে প্রমাণ করার চেষ্টা করত। উরওয়া রা. আরো বর্ণনা করেছন যে, অপবাদ আরোপকারী ব্যক্তিদের মধ্যে হাসসান ইবনে সাবিত, মিসতাহ ইবনে উসাসা এবং হামনা বিনতে জাহাশ রা. ব্যতীত আরো কারো নাম উল্লেখ করা হয়নি।

তারা গুটিকয়েক ব্যক্তির একটি দল ছিল, এতটুক ব্যতীত তাদের সম্পর্কে আমার আর কিছু  জানা নেই। যেমন (আল কুরআনে) মহান আল্লাহ পাক বলেছেন, এ ব্যাপারে যে প্রধান ভূমিকা গ্রহণ করেছিল তাকে আবদুল্লাহ ইবনে উবাই বিন সুলুল বলে ডাকা হয়ে থাকে। বর্ণনাকারী উরওয়া রা. বলেন, আয়েশা রা.-এর এ ব্যাপারে হাসসান ইবনে সাবিত রা.-কে গালমন্দ করাকে পছন্দ করতেন না। তিনি বলতেন, হাসসান ইবনে সাবিত রা. তো ঐ ব্যক্তি যিনি তার এক কবিতায় বলেছেন, আমার মান সম্মান এবং আমার বাপ দাদা মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মান সম্মান রক্ষায় নিবেদিত। আয়েশা রা. বলেন, এরপর আমরা মদীনায় আসলাম। মদীনায় আগমন করার পর এক মাস পর্যন্ত আমি অসুস্থ থাকলাম। এদিকে অপবাদ রটনাকরীদের কথা নিয়ে লোকদের মধ্যে আলোচনা ও চর্চা হতে লাগল। কিন্তু এসবের কিছুই আমি জানি না। তবে আমার সন্দেহ হচ্ছিল এবং তা আরো দৃঢ় হচ্ছিল আমার এ অসুখের সময়। কেননা এর পূর্বে আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে যেরূপ স্নেহ-ভালবাসা লাভ করতাম আমার এ অসুখের সময় তা আমি পাচ্ছিলাম না। তিনি আমার কাছে এসে সালাম করে কেবল ‘তুমি কেমন আছ’ জিজ্ঞাসা করে চলে যেতেন। তাঁর এ আচরণই আমার মনে চরম সন্দেহের উদ্রেক করে। তবে কিছুটা সুস্থ হয়ে বাইরে বের হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত এ জঘন্য অপবাদ সম্বন্ধে আমি কিছুই জানতাম না। উম্মে মিসতাহ রা. একদা আমার সাথে পায়খানার দিকে বের হন। আর প্রকৃতির ডাকে আমাদের বের হওয়ার অবস্থা এই ছিল যে, এক রাতে বের হলে আমরা আবার পরের রাতে বের হতাম। এ ছিল আমাদের ঘরের পার্শ্বে পায়খানা তৈরী করার পূর্বের ঘটনা। আমাদের অবস্থা প্রাচীন আরবীয় লোকদের অবস্থার মত ছিল। তাদের মত আমরাও পায়খানা করার জন্য ঝোঁপঝাড়ে চলে যেতাম। এমনকি বাড়ির পার্শ্বে পায়খান তৈরী করলে আমরা খুব কষ্ট পেতাম। আয়েশা রা. বলেন, একদা আমি এবং উম্মে মিসতাহ “যিনি ছিলেন আবু রূহম ইবনে মুত্তালিব ইবনে আবদে মানাফের কন্যা, যার মা সাখার ইবনে আমির-এর কন্যা ও আবু বকর রা. সিদ্দীকের খালা এবং মিসতাহ ইবনে উসাসা ইবনে আব্বাদ ইবনে মুত্তালিব যার” একত্রে বের হলাম। আমরা আমাদের কাজ থেকে ফারিগ হওয়ার পর বাড়ি ফেরার পথে উম্মে মিসতাহ তার কাপড়ে জাড়িয়ে হোঁচট খেয়ে পড়ে গিয়ে বললেন, মিসতাহ ধ্বংস হোক। আমি তাকে বললাম, আপনি খুব খারাপ কথা বলছেন। আপনি কি বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী ব্যক্তিকে গালি দিচ্ছেন? তিনি আমাকে বললেন, ওগো অবলা, সে তোমার সম্পর্কে কি বলে বেড়াচ্ছে তুমি তো তা শোননি। আয়েশা রা. বলেন, আমি তাকে জিজ্ঞাসা করলাম, সে আমার সম্পর্কে কি বলছে? তখন তিনি অপবাদ রটনাকরীদের কথাবার্তা সম্পর্কে আমাকে জানালেন। আয়েশা রা. বর্ণনা করেন, এরপর আমার পুরানো রোগ আরো বেড়ে গেল। আমি বাড়ি ফেরার পর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার কাছে আসলেন এবং সালাম দিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি কেমন আছ? আয়েশা রা. বলেন, আমি আমার পিতা-মাতার কাছে গিয়ে বিষয়টি সম্পর্কে সঠিক খবর জানতে চাচ্ছিলাম, তাই আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বললাম, আপনি কি আমাকে আমার পিতা-মাতার কাছে যাওয়ার জন্য অনুমতি দেবেন? আয়েশা রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমকে অনুমতি দিলেন। তখন (বাড়িতে গিয়ে) আমি আমার আম্মাকে বললাম, আম্মাজান, লোকজন কি আলোচনা করছে? তিনি বললেন, বেটী ও বিষয়টিকে হালকা করে ফেল। আল্লাহর কসম, সতীন আছে এমন স্বামী সোহাগিনী সুন্দরী রমণীকে তাঁর সতীনরা বদনাম করবে না, এমন খুব কমই হয়ে থাকে। আয়েশা রা. বলেন, আমি বিস্ময়ের সাথে বললাম, সুবহানাল্লাহ । লোকজন কি এমন গুজবই রটিয়েছে। আয়েশা রা. বর্ণনা করেন, রাতভর আমি কাঁদলাম। কাঁদতে কাঁদতে ভোর হয়ে গেল। এর মধ্যে আমার অশ্রুও বন্ধ হল না এবং আমি ঘুমাতেও পারলাম না। এরপর ভোরবেলাও আমি কাঁদছিলাম।

তিনি আরো বলেন যে, এ সময ওহী নাযিল হতে বিলম্ব হলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার স্ত্রীর (আমার) বিচ্ছেদের বিষয়টি সম্পর্কে পরামর্শ ও আলোচনা করার নিমিত্তে আলী ইবনে আবু তালিব  এবং উসামা ইবনে যায়েদ রা.-কে ডেকে পাঠালেন। আয়েশা রা. বলেন, উসামা রা. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর স্ত্রীদের পবিত্রতা এবং তাদের প্রতি (নবীজীর) ভালবাসার কারণে বললেন, (হে আল্লাহর রাসূল) তাঁরা আপনার স্ত্রী, তাদের সম্পর্কে আমি ভাল ছাড়া আর কিছুই জানি না। আর আলী রা. বললেন, হে আল্লাহ রাসূল, আল্লাহ তো আপনার জন্য সংকীর্ণতা রাখেননি। তাকে (আয়েশা) ব্যতীত আরো বহু মহিলা  রয়েছে। তবে আপনি এ ব্যাপারে দাসী (বারীরা রা.) কে জিজ্ঞাসা করুন। সে আপনার কাছে সত্য কথাই বলবে। আয়েশা রা. বলেন, তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বারীরা রা.-কে ডেকে বললেন, হে বারীরা তুমি তাঁর মধ্যে কোন সন্দেহমূলক আচরণ দেখেছ কি? বারীরা রা. তাকে বললেন, সেই আল্লাহর শপথ যিনি আপনাকে সত্য বিধানসহ পাঠিয়েছেন আমি তার মধ্যে কখনো এমন কিছু দেখিনি যার দ্বারা তাকে দোষী বলা যায়। তবে তাঁর ব্যাপারে শুধু এতটুকু বলা যায় যে, তিনি হলেন অল্প বয়স্কা যুবতী, রুটি তৈরী করার জন্য আটা খামির করে রেখে ঘুমিয়ে পড়েন। আর বকরী এসে অমনি তা খেয়ে ফেলে। আয়েশা রা .বলেন, (এ কথা শুনে) সেদিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাথে সাথে উঠে গিয়ে মিম্বরে বসে আবদুল্লাহ ইবনে উবাই-এর ক্ষতি থেকে রক্ষার আহবান জানিয়ে বললেন, হে মুসলিম সম্প্রদায়, যে আমার স্ত্রীর ব্যাপারে অপবাদ ও বদনাম রটিয়ে আমাকে কষ্ট দিয়েছে তার এ অপবাদ থেকে আমাকে কে মুক্ত করবে? আল্লাহর কসম, আমি আমার স্ত্রী সম্পর্কে ভাল ছাড়া আর কিছুই জানিনা। আর তাঁরা (অপবাদ রটনাকারীরা) এমন এক ব্যক্তির (সাফওয়ান ইবনে মুআত্তাল) নাম উল্লেখ করছে যার সম্বন্ধেও আমি ভাল ছাড়া কিছু জানি না। সে তো আমর সাথেই আমার ঘরে যায়। আয়েশা রা. বলেন, (এ কথা শুনে) বনী আবদুল আশহাল গোত্রের সাদ (ইবনে মুআয) রা. উঠে বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! আমি আপনাকে এ অপবাদ থেকে মুক্তি দেব। সে যদি আউস গোত্রের লোক হয় তা হলে তার শিরচ্ছেদ করব। আর যদি সে আমাদের ভাই খাযরাজের লোক হয় তাহলে তার ব্যাপারে আপনি যা বলবেন তাই পালন করব। আয়েশা রা. বলেন, এ সময় হাসসান ইবনে সাবিত রা.-এর মায়ের চাচাতো ভাই খাযরাজ গোত্রের সর্দার সাঈদ ইবনে উবাদা রা. দাঁড়িয়ে এ কথার প্রতিবাদ করলেন। আয়েশা রা. বলেন, এ ঘটনার পূর্বে তিনি একজন সৎ ও নেককার লোক ছিলেন। কিন্তু (এ সময়) গোত্রীয় অহমিকায় উত্তেজিত হয়ে তিনি সাদ ইবনে মুআয রা.-কে বললেন, তুমি মিথ্যা কথা বলছ। আল্লাহর কসম, তুমি তাকে হত্যা করতে পারবে না এবং তাকে হত্যা করার ক্ষমতাও তোমার নেই। যদিসে তোমার গোত্রের লোক হত তাহলে তুমি তার হত্যা হওয়া কখনো পছন্দ করতে না। তখন সাদ ইবনে মুআয রা.-এর চাচাতো ভাই উসাইদ ইবনে হুযাইর রা. সাদ ইবনে ওবায়দা রা.-কে বললেন, বরং তুমি মিথ্যা কথা বললে। আল্লাহর কসম, আমরা অবশ্যই তাকে হত্যা করব। তুমি হলে মুনাফিক। তাই মুনাফিকদের পক্ষ অবলম্বন করে কথাবার্তা বলছ। আয়েশা রা. বলেন, এ সময় আউস ও খাযরাজ উভয় গোত্র খুব উত্তেজিত হয়ে উঠে। এমনকি তারা যুদ্ধের সংকল্প পর্যন্ত করে বসে। এ সময় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিম্বরে দাঁড়িয়ে ছিলেন। আয়েশা রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের থামিয়ে শান্ত করলেন এবং নিজেও চুপ হয়ে গেলেন। আয়েশা রা. বলেন, আমি সেদিন সারাক্ষণ কেঁদে কাটালাম। অশ্রুঝরা আমার বন্ধ হয়নি এবং একটু ঘুমও আমার আসেনি। তিনি বলেন, আমি ক্রন্দনরত ছিলাম আর আমার পিতা-মাতা আমার পার্শ্বে বসা ছিলেন। এমনি করে একদিন দুই রাত কেঁদে কেঁদে কাটিয়ে দিই। এর মাঝে আমার কোন ঘুম আসেনি। বরং অবারিত ধারায় আমার চোখ থেকে অশ্রুপাত হতে থাকে। মনে হচ্ছিল যেন, কান্নার ফলে আমার কলিজা ফেটে যাবে। আমি ক্রন্দনরত ছিলাম আর আমার আব্বা-আম্মা আমার পাশে বসা ছিলেন।

এমতাবস্থায় একজন আনসারী মহিলা আমার কাছে আসার অনুমতি চাইলে আমি তাকে আসার অনুমতি দিলাম। সে এসে বসল এবং আমার সাথে কাঁদতে আরম্ভ করল। তিনি বলেন, আমরা ক্রন্দনরত ছিলাম  ঠিক এ সময় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের কাছে এসে সালাম করলেন এবং আমাদের পাশে বসে গেলেন। আয়েশা রা. বলেন, অপবাদ রটানোর পর আমার কাছে এসে এভাবে তিনি  আর কখনো বসেননি। এদিকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দীর্ঘ একমাস কাল অপেক্ষা করার পরও আমার বিষয়ে তাঁর নিকট কোন ওহী আসেনি। আয়েশা রা. বলেন, বসার পর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কালিমা শাহাদাত পড়লেন। এরপর বললেন, যা হোক, আয়েশা তোমার সম্বন্ধে আমার কাছে অনেক কথাই পৌঁছেছে, যদি তুমি এর থেকে মুক্ত হও তাহলে শীঘ্রই আল্লাহ তোমাকে এ অপবাদ থেকে মুক্ত করে দেবেন। আর যদি তুমি কোন গুনাহ করে থাক তাহলে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা কর এবং তাওবা কর। কেননা বান্দা গুনাহ স্বীকার করে তাওবা করলে আল্লাহ তায়ালা তাওবা কবূল করেন। আয়েশা রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর কথা বলে শেষ করলে আমার অশ্রুপাত বন্ধ হয়ে যায়। এমনকি এক ফোটা অশ্রুও আমি আর অনুভব করলাম না। তখন আমি আমার আব্বাকে বললাম, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যা বলছেন আমার পক্ষ হতে আপনি তার জবাব দিন। আমার আব্বা বললেন,  আল্লাহর কসম, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে কি জবাব দিব আমি তা জানিনা। তখন আমি আমার আম্মাকে বললাম, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যা বলেছেন, আপনি তার জবাব দিন। আম্মা বললেন, আল্লাহর কসম! রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে কি  জবাব দিব আমি তা জানি না। তখন আমি ছিলাম অল্প বয়স্কা কিশোরী। কুরআনও বেশি পড়তে পারতাম না। তথাপিও এ অবস্থা দেখে নিজেই বললাম, আমি জানি আপনারা এ অপবাদের ঘটনা শুনেছেন, আপনারা তা বিশ্বাস করেছেন এবং বিষয়টি আপনাদের মনে সুদৃঢ় হয়ে আছে। এখন যদি আমি  বলি যে, এর থেকে আমি পবিত্র এবং আমি নিষ্কলুষ তাহলে আপনারা আমাকে বিশ্বাস করবেন না। আর যদি আমি এ অপরাধের কথা স্বীকার করে নেই যা সম্পর্কে আল্লাহ জানেন যে, আমি এর থেকে পবিত্র তাহলে আপনারা তা বিশ্বাস করবেন। আল্লাহর কসম, আমি ও আপনারা যে অবস্থায় শিকার হয়েছি এর জন্য (নবী) ইউসুফ আ.-এর পিতার কথা উদাহরণ ব্যতীত  আমি কোন উদাহরণ খুঁজে পাচ্ছি না। তিনি বলেছিলেন: “সুতরাং পূর্ণ ধৈর্যই শ্রেয়, তোমরা যা বলছ সে বিষয়ে আল্লাহই একমাত্র আমার আশ্রয়স্থল” এরপর আমি মুখ ফিরিয়ে আমার বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়লাম। আল্লাহ তায়ালা জানেন যে, সে মুহূর্তেও আমি পবিত্র। অবশ্যই আল্লাহ আমার পবিত্রতা প্রকাশ করে দেবেন। (একথার প্রতি  আমার বিশ্বাস ছিল) তবে আল্লাহর কসম,আমি কখনো ধারণা করিনি যে, আমার ব্যাপারে আল্লাহর ওহী নাযিল করবেন যা পঠিত হবে। আমার ব্যাপারে আল্লাহ কোন কথা বলবেন আমি নিজেকে এতখানি যোগ্য মনে করিনি বরং আমি নিজেকে এর চেয়ে অধিক অযোগ্য বলে মনে করতাম। তবে আমি আশা করাতাম যে, হয়তো রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে এমন স্বপ্ন দেখানো হবে যার দ্বারা আল্লাহ আমার পবিত্রতা প্রকাশ করে দেবেন। আল্লাহর কসম, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখনো তাঁর বসার জায়গা ছাড়েননি এবং ঘরের লোকদের থেকেও কেউ ঘর থেকে বাইরে যাননি। এমতাবস্থায় তাঁর উপর ওহী নাযিল হতে শুরু হল। ওহী নাযিল হওয়ার সময় তাঁর যে বিশেষ কষ্ট হত তখনও সে অবস্থা তাঁর হল। এমনকি প্রচণ্ড শীতের দিনেও তাঁর দেহ থেকে মোতির দানার মত বিন্দু বিন্দু ঘাম গড়িয়ে পড়ত ঐ বাণীর গুরুভাবের কারণে, যা তাঁর প্রতি নাযিল করা হয়েছে। আয়েশা রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর এ অবস্থা দূরীভূত হলে তিনি হাসিমুখে প্রথমে যে কথাটি বললেন, তা হল, হে আয়েশা ! আল্লাহ তোমার পবিত্রতা জাহির করে দিয়েছেন।

আয়েশা রা. বলেন, এ কথা শুনে আমার আম্মা আমাকে বললেন, তুমি উঠে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর প্রতি সম্মান প্রদর্শন কর। আমি বললাম, আল্লাহর কসম আমি এখন তাঁর দিকে উঠে যাব না। মহান আল্লাহ ব্যতীত আমি কারো প্রশংসা করব না। আয়েশা রা বললেন, আল্লাহ (আমার পবিত্রতা ঘোষণা করে) যে দশটি আয়াত নাযিল করেছেন, তা হল এইঃ

“যারা এ অপবাদ রটনা করেছে (তারা তো তোমাদেরই একটি দল। এ ঘটনাকে তোমরা তোমাদের জন্য  অনিষ্টকর মনে করো না; বরং এও তোমাদের জন্য কল্যাণকর। তাদের প্রত্যেকের জন্য আছে তাদের কৃত পাপকর্মের ফল এবং তাদের মধ্যে যে এ ব্যাপারে প্রধান ভূমিকা গ্রহণ করেছে তার জন্য আছ কঠিন শাস্তি। এ কথা শোনার পর মুমিন পুরুষ এবং নারীগণ কেন নিজেদের বিষয়ে সৎ ধারণা করেনি এবং বলেনি, এটা তো সুষ্পষ্ট অপবাদ। তারা কেন এ ব্যাপারে চারজন সাক্ষী উপস্থিত করেনি? যেহেতু তারা সাক্ষী উপস্থিত করেনি, সেহেতু তারা আল্লাহর বিধানে মিথ্যাবাদী। দুনিয়া ও আখিরাতে তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ ও দয়া না থাকলে তোমরা যাতে লিপ্ত ছিলে তার জন্য কঠিন শাস্তি তোমাদেরকে স্পর্শ করত। যখন তোমরা মুখে মুখে এ মিথ্যা ছড়াচ্ছিলে এবং এমন বিষয় মুখে উচ্চারণ করছিলে যার কোন জ্ঞান তোমাদের ছিলনা এবং একে তোমরা তুচ্ছ ব্যাপার বলে ভাবছিলে, অথচ আল্লাহর কাছে তা ছিল খুবই গুরুতর ব্যাপার। আল্লাহ পবিত্র, মহান! এ তো এক গুরুতর অপনাদ। আল্লাহ তোমাদেরকে উপদেশ দিচ্ছেন, যদি তোমরা মুমিন হয়ে থাক তাহলে কখনো অনুরূপ আচরণের পুনরাবৃত্তি করবে না, আল্লাহ তোমাদের জন্য তাঁর আয়াতসমূহ বিবৃত করেন এবং আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়। যারা মুনিনদের মধ্যে অশ্লীলতার প্রসার কামনা করে তাদের জন্য আছে দুনিয়া ও আখিরাতের মর্মন্তুদ শাস্তি। আল্লাহ জানেন, তোমরা জান না। তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ ও দয়া না থাকলে তোমাদের কেউই অব্যাহতি পেতে না। আল্লাহ দয়ার্দ্র ও পরম দয়ালু। (সুরা নুর ২৪:১১-২০)।

এরপর আমার পবিত্রতা ঘোষণা করে আল্লাহ এ আয়াতগুলো নাযিল করলেন। আত্মীয়তা এবং দারিদ্রের কারণে আবু বকর সিদ্দীক রা. মিসতাহ ইবনে উসাসাকে আর্থিক ও বৈষয়িক সাহায্য করতেন। কিন্তু আয়েশা রা. সম্পর্কে তিনি যে অপবাদ রটিয়েছিলেন এ কারণে আবু বকর সিদ্দীক রা কসম করে বললেন, আমি আর কখনো মিসতাহকে আর্থিক কোন সাহায্য করব না। তখন আল্লাহ তায়ালা নাযিল করলে, তোমাদের মধ্যে যারা ঐশ্বর্য ও প্রাচুর্যের অধিকারী তারা যেন শপথ গ্রহণ করে যে, তারা আত্মীয়স্বজন ও অভাবগ্রস্তকে এবং আল্লাহর রাস্তায় যারা গৃহত্যাগ করেছে তাদেরকে কিছুই দিবে না। তারা যেন তাদেরকে ক্ষমা করে এবং তাদের দোষত্রুটি উপেক্ষা করে। শোন! তোমরা কি পছন্দ কর না যে, আল্লাহ তোমাদের ক্ষমা করেন? আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। (২৪: ২২) (এ আয়াত নাযিল হওয়ার পর) আবু বকর সিদ্দীক রা. বলে উঠলেন হ্যাঁ, আল্লাহর কসম অবশ্যই আমি পছন্দ করি যে আল্লাহ আমাকে ক্ষমা করে দিন। এরপর তিনি মিসতাহ রা.-এর জন্য যে অর্থ খরচ করতেন তা পুন: দিতে শুরু করলেন এবং বললেন, আল্লাহর কসম, আমি তাকে এ অর্থ দেওয়া আর কখনো বন্ধ করব না। আয়েশা রা .বললেন, আমার এ বিষয় সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যায়নাব বিনতে জাহাশ রা.-কেও জিজ্ঞাসা করেছিলেন। তিনি যায়নাব রা. -কে বলেছিলেন, তুমি আয়েশা রা. সম্পর্কে কি জান অথবা বলেছিলেন তুমি কী দেখেছ? তখন তিনি বলেছিলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! আমি আমার চোখ ও কানকে সংরক্ষণ করেছি। আল্লাহর কসম ! আমি তাঁর সম্পর্কে ভাল ছাড়া আর কিছুই জানি না। আয়েশ রা. বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর স্ত্রীগণের মধ্যে তিনি আমার সমকক্ষ ও প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন। আল্লাহ তাকে আল্লাহ-ভীতির ফলে রক্ষা করেছেন। আয়েশা রা. বলেন, অথচ তাঁর বোন হামনা রা. তাঁর পক্ষ অবলম্বন করে অপবাদ রটনাকারীদের মত অপবাদ রটনা করে বেড়াচ্ছিলেন।

ফলে তিনি ধ্বংসপ্রাপ্তদের সাথে ধ্বংস হয়ে গেলেন। বর্ণনাকারী ইবনে শিহাব রহ. বলেন, ঐ সমস্ত লোকের ঘটনা সম্পর্কে আমার কাছে যা পৌঁছেছে তা হল এই : উরওয়ার রা. বলেন, আয়েশা রা. বর্ণনা করেছেন যে, আল্লাহ কসম, যে ব্যক্তি সম্পর্কে অপবাদ দেওয়া হয়েছিল, তিনি এসব কথা শুনে বলতেন, আল্লাহ মহান। ঐ সত্তার কসম, যার হাতে আমার প্রাণ, আমি কোন স্ত্রীলোকের কাপড় খু্লেও কোনদিন দেখিনি। আয়েশা রা. বলেন, পরে তিনি আল্লাহর পথে শাহাদত লাভ করেছিলেন।

 এই ঘটনা শিক্ষ পেলামঃ

 ০১।  রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর “ইলমে গাইব বা অদৃশ্য জ্ঞান” ছিল না। এই ঘটনা সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আলী ইবনে আবু তালিব রাদিয়াল্লাহু আনহু, উসামা ইবনে যায়েদ রাদিয়াল্লাহু আনহু, তার স্ত্রী যায়নাব বিনতে জাহাশ রাদিয়াল্লাহু আনহা, এবং তার বাদি বারীরা রাদিয়াল্লাহু আনহা কে ও জিজ্ঞাসা করেছিলে।

০২। আল্লাহর ওহী না আসা পর্যাস্ত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা, আবু বক্কর রাদিয়াল্লাহু আনহু, সহ সকল সাহাবিদের রাদিয়াল্লাহু আনহুমদের উপর দিয়ে কি পেরেসানি না বয়ে গেল ভাবা যায়। অথচ আমরা মিথ্যা দাবি করি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের “ইলমে গাইব বা অদৃশ্য জ্ঞান” ছিল।

৪। আল ফাতহ  ১০ নং আয়াতের আলোকেঃ

আল ফাতহ  ১০ নং আয়াতের অনুবাদ লক্ষ করি,

 إِنَّ ٱلَّذِينَ يُبَايِعُونَكَ إِنَّمَا يُبَايِعُونَ ٱللَّهَ يَدُ ٱللَّهِ فَوۡقَ أَيۡدِيہِمۡ‌ۚ فَمَن نَّكَثَ فَإِنَّمَا يَنكُثُ عَلَىٰ نَفۡسِهِۦ‌ۖ وَمَنۡ أَوۡفَىٰ بِمَا عَـٰهَدَ عَلَيۡهُ ٱللَّهَ فَسَيُؤۡتِيهِ أَجۡرًا عَظِيمً۬ا (١٠) 

অর্থঃ হে নবী যারা তোমার হাতে বাইয়াত করছিলো, প্রকৃতপক্ষে তারা আল্লাহর কাছেই বাইয়াত করছিলো৷ তাদের হাতের ওপর ছিল আল্লাহর হাত৷ যে প্রতিজ্ঞা ভঙ্গ করবে তার প্রতিজ্ঞা ভঙ্গ করার অশুভ পরিণাম তার নিজের ওপরেই বর্তাবে৷ আর যে আল্লাহর সাথে কৃত এ প্রতিশ্রুতি পালন করবে,  আল্লাহ অচিরেই তাকে বড় পুরস্কার দান করবেন। (সুরা ফাতাহ ৪৮:১০)।

এই আয়াতে ঐ বায়আতে রিযওয়ানের কথাই বুঝানো হয়েছে। যে বায়আত দ্বারা  রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, উসমান রাদিয়াল্লাহু আনহু এর শহীদ হওয়ার খবর শুনে তাঁর প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য হুদাইবিয়ায় উপস্থিত ১৪ বা ১৫ শত মুসলিমদের কাছ থেকে গ্রহণ করেছিলেন। কিছু সংখ্যক বর্ণনা অনুসারে এ মর্মে বাইয়াত নেয়া হয়েছিলো যে, আমরা যুদ্ধের ময়দান থেকে পৃষ্ঠ প্রদর্শন করবো না। প্রথম মতটি হযরত সালামা ইবনে আকওয়া থেকে বর্ণিত হয়েছে আর দ্বিতীয়টি বর্ণিত হয়েছে ইবনে উমর, জাবের ইবনে আবদুল্লাহ এবং মা’কাল ইবনে ইয়াসার থেকে। দুটিরই প্রতিপাদ্য বিষয় এক। সাহাবীগণ এ সংকল্প নিয়ে রসূলুল্লাহর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাতে বাইয়াতে গ্রহণ করেছিলেন যে, তারা সবাই এখানে এ মুহুর্তেই কুরাইশদের সাথে বুঝাপড়া করবেন। এমনকি পরিণাম সবাই নিহত হলেও। প্রকৃতই হযরত উসমান শহীদ হয়েছেন না জীবিত আছেন এ ক্ষেত্রে তা যেহেতু নিশ্চিত জানা ছিল না তাই রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর পক্ষ থেকে নিজের একহাত অন্য হাতের ওপর রেখে বাইয়াত করলেন।

 এখানে হযরত উসমান রাদিয়াল্লাহু আনহু এ অসাধারণ মর্যাদা লাভ করলেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজের পবিত্র হাতকে তাঁর হাতের স্থলাভিষিক্ত করে তাঁকে বাইয়াতে অংশীদান করলেন। হযরত উসমান রাদিয়াল্লাহু আনহু এর পক্ষ থেকে রসূলুল্লাহর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজের বাইয়াত করার অনিবার্য অর্থ হলো তাঁর প্রতি রসূলুল্লাহর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ মর্মে আস্থা ছিল যে, তিনি যদি উপস্থিত থাকতেন তাহলে অবশ্যই বাইয়াত করতেন। অর্থাৎ যে সময় লোকেরা যে হাতে বাইয়াত করেছিলো তা ব্যক্তি রসূলের হাত ছিল না, আল্লাহর প্রতিনিধির হাত ছিল এবং রসূলের মাধ্যমে প্রকৃতপক্ষে আল্লাহর সাথে এ বাইয়াত অনুষ্ঠিত হচ্ছিলো। (তাফহীমুল কুরআন সুরা আল ফাতহ ১০ নং আয়াতের ব্যাখ্যা)

৫। সুরা কাহাফের ২৩ ও ২৪ আয়াতের আলোকেঃ

সুরা কাহাফের ২৩ ও ২৪ আয়াতের অনুবাদ লক্ষ করি,

 وَلَا تَقُولَنَّ لِشَاْىۡءٍ إِنِّى فَاعِلٌ۬ ذَٲلِكَ غَدًا (٢٣) إِلَّآ أَن يَشَآءَ ٱللَّهُ‌ۚ وَٱذۡكُر رَّبَّكَ إِذَا نَسِيتَ وَقُلۡ عَسَىٰٓ أَن يَهۡدِيَنِ رَبِّى لِأَقۡرَبَ مِنۡ هَـٰذَا رَشَدً۬ا (٢٤) 

অর্থঃ আপনি কোন কাজের বিষয়ে বলবেন না যে, সেটি আমি আগামী কাল করব। আল্লাহ ইচ্ছা করলে’ বলা ব্যতিরেকে। যখন ভুলে যান, তখন আপনার পালনকর্তাকে স্মরণ করুন এবং বলুনঃ আশা করি আমার পালনকর্তা আমাকে এর চাইতেও নিকটতম সত্যের পথ নির্দেশ করবেন।(সুরা কা’হফ ১৮:২৪ )।

তাফসীরে ইবনে কাসীর অনুবাদ ড: মুহম্মাদ মুজীবর রহমান, চতুর্দশ খন্ড, পৃষ্ঠা নম্বর-৪ এ আয়াতের শানে নুযুলে বলেন যে, কুরাইশরা নাজার ইবনে হারিস ও উকবা ইবনে মুইদকে মদীনার ইয়াহুদী আলেমদের নিকট পাঠিয়ে দেন এবং তাদের বলে: তোমরা তাদের কাছে গিয়ে তাদের সামনে মুহম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সমস্ত অবস্থা বর্নণা করবে।পূ্র্ববর্তী নবী সস্পর্কে তাদের জ্ঞান রয়েছে। সুতারং মুহম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সস্পর্কে তাদের মতামত কি তা তাদের জিজ্ঞাসা করবে। এই দুইজন যথন মদীনার ইয়াহুদী আলেমদের   সাক্ষাত করে এবং তাদের সামনে মুহম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সমস্ত অবস্থা ও গুনাবলী বর্নণা করে তারা এদের বলল: দেখ আমরা তোমাদের একটা মিমাংশাযুক্ত কথা বলছি।তোমরা ফিরে গিয়ে তিনটি প্রশ্ন করবে।যদি উত্তর দিতে পারে তবে তিনি সত্যবাদী নবী এতে কোন সন্দেহ নাই। আর করবে। যদি উত্তর দিতে না পারে তবে তিনি মিথ্যবাদী নবী এতে কোন সন্দেহ নাই। তখন তোমরা তার ব্যাপারে যা ইচ্ছা তাই করতে পার। তোমরা তাকে জিজ্ঞাসা: পূর্বযুগে যে যুবগন বেরিয়ে গিয়েছিল তাদের ঘটনা বর্ননা করুন। এটা একটা বিশ্বয়কর ঘটনা তারপর তাকে ঐ ব্যাক্তির কথা জিজ্ঞেস করবে যে পুথিবী ভ্রমন করেছির।তিনি পূর্ব হতে পশ্চিম প্রান্ত পর্যান্ত ভ্রমন করেছির। আর তাকে তোমরা রূহ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করবে। যদি তিনি এই প্রশ্নের উত্তর দিতে পারে তবে তাকে নবী বলে স্বীকার করে অনুসরন করবে।আর  যদি উত্তর দিতে না পারে তবে যানবে তিনি মিথ্যবাদী। সুতরং যা ইচ্ছা তাই করতে পার।  এরা মক্কায় ফিরে গিয়ে কুরাইশদের বলল। শেষ ফয়সালার কথা ইহুদী আলেরগন বলে দিয়েছেন। সুতরং চল প্রশ্নেগুলি করি। তারা মুহম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিকট আসল ও প্রশ্নে তিনটি করল। তিনি তাদের বললেন তোমরা আগামি কাল এস আমি তোমাদের প্রশ্নেগুলির উত্তর দিব। কিন্তু তিনি ইনশাআল্লাহ বলতে ভুরে গেলেন। এর পর পনের দিন অতিবাহিত হয়ে যায় কিন্তু তার কাছে না কোন ওহি আসে না আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রশ্নেগুলির উত্তর জানিয়ে দেওয়া হয়। এর ফলে মক্কা বাসি ফুলে উঠে পরস্পর বলাবলি করে, দেখ আগামিকালের কথা ছিল অথচ পনের দিন কেটে গেল তবুও জবাব দিতে পারলনা।

এতে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দিগুন দু:খে জর্জরিত হতে লাগলেন। একেত কুরাইশদের জবাব দিতে না পেরে কথা শুনতে হচ্ছে দ্বিতীয়ত ওহী আসা বন্ধ হয়েছে। এরপর জিব্রাইল (আ:) আগমন করলেন ও সুরা কাহব অবতীর্ন করেন।এতে ইনশাআল্লাহ না বলাতে তাকে ধমকানো হয় এবং যুবকদের ঘটনা, ঐ ভ্রমন কারির বর্ননা ও রূহের ব্যপাবে জবাব দেওয়া হয়।

হাদিস থেকে শিক্ষা: মুহম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যদি গায়েব জানতেন তবে প্রশ্নেগুলির উত্তর আগামি কাল দিব বলাল কোন যুক্তিকতা নেই। পনের দিন অতিবাহিত হয়ে যাওয়ার আল্লাহর পক্ষ থেকে ওহীর মাধ্যমে প্রশ্নেগুলির উত্তর জানিয়ে দেওয়া হয়। অদৃশ্যের জ্ঞান থাকলে তো মুহুর্তের ব্যাপার ছিল, সুরা নাজিলের জন্য অপেক্ষার কি কোন প্রয়োজন ছিল। জ্ঞানীদের নিকট প্রশ্ন রইল।

 

৬। সহিহ হাদিসে আলোকে অদৃশ্যের জ্ঞানঃ

১.  ‘আবদুল্লাহ ইবন ইউসুফ (র)…… রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর স্ত্রী ‘আয়িশা (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সঙ্গে কোন এক সফরে বেরিয়েছিলাম। যখন আমরা ‘বায়যা’ অথবা ‘যাতুল জায়শ’ নামক স্থানে পৌছালাম তখন আমার একখানা হার হারিয়ে গেল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সেখানে হারের খোঁজে থেমে গেলেন আর লোকেরাও তাঁর সঙ্গে থেমে গেলেন, অথচ তাঁরা পানির নিকটে ছিলেন না। তখন লোকেরা আবূ বকর (রা) এর কাছে এসে বললেনঃ ‘আয়িশা কি করেছে আপনি কি দেখেন নি? তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও লোকদের আটকিয়ে ফেলেছেন, অথচ তাঁরা পানির নিকটে নেই এবং তাদের সাথেও পানি নেই। আবূ বকর (রা) আমার নিকট আসলেন, তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমার উরুর উপরে মাথা রেখে ঘুমিয়েছিলেন। আবূ বকর (রা) বললেনঃ তুমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর লোকদের আটকাইয়া ফেলেছো! অথচ আশেপাশে কোথাও পানি নেই। ‘আয়িশা (রা) বললেন আবূ বকর আমাকে খুব তিরস্কার করলেন আর, আল্লাহর ইচ্ছা, তিনি যা খুশি তাই বললেন। তিনি আমার কমরে আঘাত দিতে লাগলেন। আমার উরুর উপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর মাথা থাকায় আমি নড়তে পারছিলাম না। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ভরে উঠলেন, কিন্তু পানি ছিল না। তখন আল্লাহ তা’আলা তায়াম্মুমের আয়াত নাযিল করলেন। তারপর সবাই তায়াম্মুম করে নিলেন। উদায়দ ইবন হুযায়র (রা) বলেছেনঃ হে আবূ বকরের পরিবার বর্গ! এটাই আপনাদের প্রথম বরকত নয়। ‘আয়িশা (রা) বলেনঃ তারপর আমি যে উট এ ছিলাম তাকে দাড় করালে দেখি আমার হার খানা তার নীচে পরে আছে। (সহিহ বুখারী :: খন্ড ১ :: অধ্যায় ৭ :: হাদিস ৩৩০)

হাদিস থেকে শিক্ষা: হার হারিয়ে ‘আয়িশা রাদিয়াল্লাহু আনহা, আবূ বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু এর মার খেলেন, সাহাবিদের আটকিয়ে ফেলে কষ্ট দিলেন এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে পেরেসানিতে ফেললেন অথচ যে উটে তিনি ছিলেন হারটি তার নীচে পরে ছিল, এই সামান্য দুরেও তার নজর গেলনা। যদি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর অদৃশ্যের জ্ঞান থাকত তবে এই সামান্য দুরের হার খুজে পেতে এত কষ্ট করতে হত না। বরং এটা খুজে পাওয়া তো এক মুহুর্তের ব্যাপার ছিল মাত্র।

২.   আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, রি‘ল, যাকওয়ান, উসায়্যা ও বনূ লিহ্ইয়ানের লোকেরা শত্রুর মুকাবালা করার জন্য রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে সাহায্য চাইলে সত্তরজন আনসার সহাবী পাঠিয়ে তিনি তদেরকে সাহায্য করলেন।

সেকালে আমরা তাদেরকে ক্বারী নামে অভিহিত করতাম। তারা দিনে লাকড়ি জুটাতেন এবং রাতে সালাতে কাটাতেন। যেতে যেতে তাঁরা বি‘রে মাউনার নিকট পৌঁছলে তারা (ঐ গোত্রগুলির লোকেরা) তাঁদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করে এবং তাঁদেরকে শহীদ করে দেয়। এ সংবাদ নাবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে পৌঁছলে তিনি এক মাস পর্যন্ত ফাজরের সালাতে আরবের কতিপয় গোত্র যথা রিল, যাকওয়ান, উসায়্যাহ এবং বনূ লিহ্ইয়ানের প্রতি বদদু‘আ করে কুনূত পাঠ করেন। আনাস (রাঃ) বর্ণনা করেছেন যে, তাদের সম্পর্কিত কিছু আয়াত আমরা পাঠ করতাম। অবশ্য পরে এর তিলাওয়াত রহিত হয়ে যায়। (একটি আয়াত ছিল) ………… অর্থাৎ আমাদের কাওমের লোকদেরকে জানিয়ে দাও। আমরা আমাদের প্রভুর সান্নিধ্যে পৌঁছে গেছি। তিনি আমাদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন এবং আমাদেরকেও সন্তুষ্ট করেছেন।

ক্বাতাদাহ (রহ.) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন যে, তিনি তাঁকে বলেছেন, আল্লাহর নাবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক মাস পর্যন্ত ফাজরের সালাতে আরবের কতিপয় গোত্র- তথা রি‘ল, যাকওয়ান, উসায়্যা এবং বনূ লিহ্ইয়ানের প্রতি বদদু‘আ করে কুনূত পাঠ করেছেন। [ইমাম বুখারী (রহ.)-এর উস্তাদ] খলীফা (রহ.) এতটুকু অতিরিক্ত বর্ণনা করেছেন যে, ইবনু যুরায় (রহ.) ও সা‘ঈদ ও ক্বাতাদাহ (রহ.)-এর মাধ্যমে আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন যে, তাঁরা সত্তরজন সকলেই ছিলেন আনসার। তাঁদেরকে বি‘রে মাউনা নামক স্থানে শাহীদ করা। (সহিহ বুখারি :: আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৭৮৪, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৩৭৮৭)।

হাদিস থেকে শিক্ষা: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট সাহায্য চাইলে সত্তরজন আনসার সাহাবি পাঠিয়ে দিলেন। এবং তাদের সকল কে শহীদ করা হল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট অদৃশ্যের খবর থাকলে, তিনি এখন মারাত্বক ঘটনা আগেই জানতেন। আর যদি বলি,  তিনি জেনে শুনে এ কাজ করছেন, তবে তার বিরুদ্ধ অপবাদ হবে। অথচ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মাসুম বেগুনাহগান ছিলেন। সার কথা তিনি অদৃশ্যের খবর জানেন না।

 

৭। আরও দুটি হাদিস উল্লেখ করা হলঃ

অদৃশ্যের জ্ঞান শুধু শুধুই আল্লাহ রব্বুল আলামিনের, এ সম্পর্কে হাদিস একত্র করলে আলাদা কিতাব রচনা হবে। শুধু বোঝার জন্য আরও দুটি হাদিস উল্লেখ করা হল:

১.  ‘উমার (রাঃ) সূত্রে নাবী সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেছেনঃ গায়িবের চাবি পাঁচটি, যা আল্লাহ্ ব্যতীত অন্য কেউ জানে না। (১) মায়ের পেটে কী লুকিয়ে আছে তা জানেন একমাত্র আল্লাহ্। (২) আগামীকাল কী ঘটবে তাও জানেন একমাত্র আল্লাহ্। (৩) বৃষ্টিপাত কখন হবে তাও আল্লাহ্ ব্যতীত অন্য কেউ জানে না। (৪) কে কোন্ ভূমিতে মারা যাবে তা আল্লাহ্ ব্যতীত অন্য কেউ জানে না। (৫) ক্বিয়ামাত কখন ঘটবে আল্লাহ্ ছাড়া কেউ জানে না। (বুখারি তাওহিদ-৭৩৭৯  আধুনিক প্রকাশনী- ৬৮৬৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৮৭৫)

 ২.  ‘আয়িশাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, যে ব্যক্তি তোমাকে বলে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বীয় রবকে দেখেছেন, সে মিথ্যা বলল। কেননা আল্লাহ্ বলছেন, চক্ষু তাঁকে দেখতে পায় না। আর যে ব্যক্তি তোমাকে বলে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গায়েব জানেন, সেও মিথ্যা বলল। কেননা আল্লাহ্ বলেন, গায়িব জানেন একমাত্র আল্লাহ্। ((বুখারি তাওহিদ-৭৩৮০, আধুনিক প্রকাশনী- ৬৮৬৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৮৬৬)

মন্তব্যঃ আল্লাহ রব্বুল আলামিন বলেনঃ

  قُلۡ يَـٰٓأَيُّہَا ٱلنَّاسُ قَدۡ جَآءَڪُمُ ٱلۡحَقُّ مِن رَّبِّكُمۡ‌ۖ فَمَنِ ٱهۡتَدَىٰ فَإِنَّمَا يَہۡتَدِى لِنَفۡسِهِۦ‌ۖ وَمَن ضَلَّ فَإِنَّمَا يَضِلُّ عَلَيۡہَا‌ۖ وَمَآ أَنَا۟ عَلَيۡكُم بِوَڪِيلٍ۬ (١٠٨)

অর্থঃ হে মুহাম্মাদ! বলে দাও, হে লোকেরা! তোমাদের কাছে তোমাদের রবের পক্ষ থেকে সত্য এসে গেছে৷ এখন যারা সোজা পথ অবলম্বন করবে তাদের সোজা পথ অবলম্ব তাদের জন্যই কল্যাণকর হবে৷ এবং যারা ভুল পথ অবলম্বন করবে তাদের ভুল পথ অবলম্বন তাদের জন্যই ধ্বংস কর হবে৷ আর আমি তোমাদের ওপর হাবিলদার হয়ে আসেনি৷ (সুরা ইউনুস ১০:১০৮)।

কুরআনের স্পষ্ট ঘোষনা সত্য আসার পর (কুনআন ও সহিহ হাদিসের দলিল জানার পর) একে অবলম্বই কল্যাণকর আর ভুল পথ অবলম্বন মানেই ধ্বংস। উপরের আলোচনায় এটা সুস্পষ্ট যে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কোন অদৃশ্যের জ্ঞান ছিলনা। নবী রাসুলগন ওহীর মাধ্যমে অদৃশ্যের জ্ঞান যেমন আল্লাহর সত্তা ও গুণাবলী, ফেরেশতা, মৃত্যুর পরের জীবন, কিয়ামত, আখেরাত বা জান্নাত ও জাহান্নাম সম্পর্কে যা কিছু সত্য ও নির্ভুল তথ্য আসে তা সবই তিনি একটুও কমবেশী না করে তোমাদের কাছে বর্ণনা করেন।

সাহাবিদের (রাদিয়াল্লাহু আনহুম) কি অদৃশ্যের জ্ঞান ছিল?

এমন প্রশ্ন করাও লজ্জাসকর কারন যাদের নিকট ওহী আসত তাদেরই অদৃশ্যের জ্ঞান ছিল না। এর পরও দেখবেন অনেকে আবার দাবি করছে আল্লাহর অলী, আউলিয়া, পীর, বুজুর্গের ও অদৃশ্যের জ্ঞান ছিল।

সংকলনেঃ মোহাম্মাদ ইস্রাফিল হোসাইন। (বিএ ইন এ্যারাবিক লিটারেচার, ইসলামিক হিস্টরী এন্ড ইসলামিক স্টাডিস)

Leave a comment