অতি প্রয়োজনীয় কিছু দোয়া এবং জিকির

অতি প্রয়োজনীয় কিছু দোয়া এবং জিকির

সংকলনেঃ মোহাম্মাদ ইস্রাফিল হোসাইন

১। ঘুমাতে যেতে এবং ঘুম থেকে জেগে উঠার সময়ের যিক্‌রসমূহঃ

ঘুম থেকে জেগে উঠার সময়ের যিক্‌রসমূহঃ

«الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِيْ أَحْيَانَا بَعْدَ مَا أَمَاتَنَا، وَإِلَيْهِ النُّشُوْرُ».

উচ্চারণঃ আলহামদু লিল্লা-হিল্লাযী আহ্ইয়া-না- বা‘দা মা- আমা-তানা- ওয়া ইলাইহিন্ নুশূর

অর্থঃ হামদ-প্রশংসা আল্লাহ্‌র জন্য, যিনি (নিদ্রারূপ) মৃত্যুর পর আমাদেরকে জীবিত করলেন, আর তাঁরই নিকট সকলের পুনরুত্থান।

ঘুমাতে যাওয়ার সময়ের যিক্‌রসমূহঃ

উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মা বিসমিকা আমুতু ওয়া-আহইয়া।

অর্থঃ হে আল্লাহ! আপনার নামেই মরি, আপনার নামেই জীবিত হই।

দলিলঃ

১. হুযাইফাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতে নিজ বিছানায় শোয়ার সময় নিজ হাত গালের নীচে রাখতেন, তারপর বলতেনঃ হে আল্লাহ! আপনার নামেই মরি, আপনার নামেই জীবিত হই। আর যখন জাগতেন তখন বলতেনঃ সেআল্লাহর জন্য প্রশংসা, যিনি মৃত্যুর পর আমাদের জীবন দান করলেন এবং তাঁরই দিকে আমাদের পুনরুত্থান। (সহিহ বুখারি ৬৩১৪)

২. হুযাইফা্হ ইবনুল ইয়ামান (রাঃ) থেকে বর্ণিত, যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিদ্রা যাওয়ার ইচ্ছা করতেন তখন বলতেন : “হে আল্লাহ! আমি তোমার নামেই মৃত্যুবরণ করি ও জীবন লাভ করি”। তিনি ঘুম হতে উঠে বলতেন : “সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ তা’আলার, যিনি মৃত্যুদানের পর আমার এ দেহকে পুনরায় জীবিত করেছেন এবং তাঁর নিকটই ফিরে যেতে হবে”। (সুনানে তিরমিজি ৩৪১৭,ইবনু মাজাহ (হাঃ ৩৮৮০)

২। খাবার খাওয়ার পর ও কাপড় পরার পরের দোয়াঃ

খাবার খাওয়ার পর এই দোয়া পড়তে হয়,

**الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي أَطْعَمَنِي هَذَا الطَّعَامَ، وَرَزَقَنِيهِ مِنْ غَيْرِ حَوْلٍ مِنِّي وَلَا قُوَّةٍ، غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ وَمَا تَأَخَّرَ**

অর্থঃ ‘‘সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যিনি আমাকে এ খাদ্য খাওয়ালেন এবং আমার পক্ষ থেকে কোনো কৌশল ও ক্ষমতা প্রয়োগ ব্যতীতই রিযিক দান করলেন।’’

কাপড় পরার পর এই দোয়া পড়তে হয়,

**الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي كَسَانِي هَذَا الثَّوْبَ وَرَزَقَنِيهِ مِنْ غَيْرِ حَوْلٍ مِنِّي، وَلَا قُوَّةٍ غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ وَمَا تَأَخَّرَ**

অর্থঃ ‘‘সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যিনি আমার কৌশল ও ক্ষমতা প্রয়োগ ব্যতীতই আমাকে এ কাপড়ের ব্যবস্থা করে পরালেন।

দলিলঃ

১. সাহল ইবনু মু‘আয ইবনু আনাস (রহঃ) থেকে তার পিতার সূত্রে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ যে ব্যক্তি খাওয়ার পরে এ দু‘আ পাঠ করবে তার আগে পরের সকল গুনাহ ক্ষমা করা হবে।

**الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي أَطْعَمَنِي هَذَا الطَّعَامَ، وَرَزَقَنِيهِ مِنْ غَيْرِ حَوْلٍ مِنِّي وَلَا قُوَّةٍ، غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ وَمَا تَأَخَّرَ**

অর্থঃ ‘‘সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যিনি আমাকে এ খাদ্য খাওয়ালেন এবং আমার পক্ষ থেকে কোনো কৌশল ও ক্ষমতা প্রয়োগ ব্যতীতই রিযিক দান করলেন।’’

তিনি আরো বলেনঃ যে ব্যক্তি কোনো কাপড় পরার সময় এ দু‘আ পাঠ করবে তার আগে পরের সকল গুনাহ ক্ষমা করা হবেঃ

**الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي كَسَانِي هَذَا الثَّوْبَ وَرَزَقَنِيهِ مِنْ غَيْرِ حَوْلٍ مِنِّي، وَلَا قُوَّةٍ غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ وَمَا تَأَخَّرَ**

অর্থঃ ‘‘সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যিনি আমার কৌশল ও ক্ষমতা প্রয়োগ ব্যতীতই আমাকে এ কাপড়ের ব্যবস্থা করে পরালেন।’’ (সুনানে আবু দাউদ ৪০২৩, তিরমিযী ৩৪৫৮, ইবন মাজাহ্ ৩২৮৫)

৩। পায়খানায় প্রবেশের দোয়াঃ

 «[بِسْمِ اللَّهِ] اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ الْخُبْثِ وَالْخَبائِث».

উচ্চারণঃ (বিসমিল্লাহিঘ আল্লা-হুম্মা ইন্নী আ‘ঊযু বিকা মিনাল খুব্‌সি ওয়াল খাবা-ইসি)

অর্থঃ (আল্লাহ্‌র নামে) হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট অপবিত্র নর জিন্ ও নারী জিন্ থেকে আশ্রয় চাই।

দলীলঃ

১. আলী ইবনু আবু তালিব (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ জিনের দৃষ্টি ও আদম সন্তানের লজ্জাস্থানের মাঝখানে পর্দা হলো, যখন তাদের কেউ পায়খানায় প্রবেশ করে সে যেন বিসমিল্লাহ বলে। (সুনানে তিরমিজি ৬০৬)

২. আনাস (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন প্রকৃতির ডাকে শৌচাগারে যেতেন তখন বলতেন, ‘‘হে আল্লাহ্! আমি মন্দ কাজ ও শয়তান থেকে আপনার আশ্রয় চাচ্ছি।’’ (সহহি বুখারি ১৪২)

৪। পায়খানা থেকে বের হওয়ার দোয়াঃ

পায়খানা থেকে বের হওয়ার সময় বলবে,

উচ্চারণঃ  «غُفْرَانَكَ» গুফরা-নাকা।

অর্থঃ আমি আপনার কাছে ক্ষমাপ্রার্থী।

দলিলঃ

আয়িশাহ্ (রাঃ) বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন পায়খানা থেকে বের হতেন, তখন বলতেনঃ ‘গুফরানাকা’ (অর্থঃ হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট ক্ষমা চাই)। (সুনানে আবু দাউদ ৩০)

প্রথমে দেখব রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মৌখিক জিকির করার ক্ষেত্রে কি কি বাক্যে জিকির করছেন ও করতে বলেছেন। এই নিমিত্তে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কয়েকটি হাদিস উল্লেখ করছি।

৫। বৈঠক শেষ করার দোয়াঃ

কোন স্থানে বৈঠক করার পর যখন শেষ হয়ে যাবে এবং বৈঠকে অংশগ্রহন কারিগন যখন চলে যাওয়ার ইচ্ছা করতেন তখন নিম্মের দোয়াটি বড়বেঃ

*سُبْحَانَكَ اللَّهُمَّ وَبِحَمْدِكَ أَشْهَدُ أَنْ لآ إِلَهَ إِلاَّ أَنْتَ أَسْتَغْفِرُكَ وَأَتُوْبُ إِلَيْكَ-*

উচ্চারণঃ সুবাহানকা আল্লাহুম্মা ওয়া বিহামদিকা আশহাদু আন লা ইলাহা ইল্লা আনতাআসতাগফিরুকা ওয়া আতূবু ইলাইকা

উচ্চারণ : ‘সুবহা-নাকাল্লা-হুম্মা ওয়া বিহামদিকা, আশহাদু আল লা ইলা-হা ইল্লা আনতা, আস্তাগফিরুকা ওয়া আতূবু ইলাইকা’।

অর্থঃ মহা পবিত্র তুমি হে আল্লাহ! তোমার প্রশংসার সাথে আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, তুমি ব্যতীত কোন উপাস্য নেই। আমি তোমার নিকটে ক্ষমা প্রার্থনা করছি এবং তোমার দিকেই ফিরে যাচ্ছি।

দলিলঃ

১. আবূ বারযাহ আল-আসলামী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন কোন বৈঠক শেষ করে চলে যাওয়ার ইচ্ছা করতেন তখন বলতেন,

*سُبْحَانَكَ اللَّهُمَّ وَبِحَمْدِكَ أَشْهَدُ أَنْ لآ إِلَهَ إِلاَّ أَنْتَ أَسْتَغْفِرُكَ وَأَتُوْبُ إِلَيْكَ-*

 “সুবাহানকা আল্লাহুম্মা ওয়া বিহামদিকা আশহাদু আন লা ইলাহা ইল্লা আনতাআসতাগফিরুকা ওয়া আতূবু ইলাইকা”। এক ব্যক্তি বললো, হে আল্লাহর রাসূল! এখন আপনি যে বাক্য পাঠ করলেন তা তো ইতোপূর্বে আপনি পাঠ করেননি? তিনি বললেন, মাজলিসে যা কিছু (ভুলক্রটি) হয়ে থাকে একথাগুলো তার কাফফারাহ গণ্য হবে।

২. আবূ বারযাহ আল-আসলামী (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন কোনো বৈঠক শেষ করে চলে যাওয়ার ইচ্ছা করতেন তখন বলতেনঃ

*سُبْحَانَكَ اللَّهُمَّ وَبِحَمْدِكَ أَشْهَدُ أَنْ لآ إِلَهَ إِلاَّ أَنْتَ أَسْتَغْفِرُكَ وَأَتُوْبُ إِلَيْكَ-*

‘‘সুবহানাকা আল্লাহুম্মা ওয়া বিহামদিকা আশহাদু আন লা ইলাহা ইল্লা আনতা আসতাগফিরুকা ওয়া আতূবু ইলাইকা।’’ এক ব্যক্তি বললো, হে আল্লাহর রাসূল! এখন আপনি যে বাক্য পড়লেন তা তো ইতোপূর্বে আপনি পাঠ করেননি? তিনি বললেন, মাজলিসে যা কিছু (ভুলত্রুটি) হয়ে থাকে একথাগুলো তার কাফফারাহ গণ্য হবে। (আবু দাউদ ৪৮৫৯)

৬। সহিহ হাদিস থেকে কিছু মৌখিক জিকিরঃ

১. মুসআব ইবনু সা’দ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমার পিতা আমাকে হাদীস শুনিয়েছেন যে, তিনি বলেন, আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে বসা ছিলাম। তখন তিনি বললেনঃ তোমাদের মধ্যে কেউ কি প্রতিদিন এক হাজার নেকী অর্জন করতে সক্ষম? তখন সেখানে উপবিষ্টদের মধ্য থেকে এক প্রশ্নকারী বলল, আমাদের কেউ কিভাবে এক হাজার নেকী অর্জন করতে পারবে? তিনি বললেনঃ যে একশ’বার তাসবীহ (سبحان الله ) পাঠ করলে তার জন্য এক হাজার নেকী লিপিবদ্ধ করা হবে (অথবা) এবং তার থেকে এক হাজার গুনাহ মিটিয়ে দেওযা হবে। (সহিহ মুসলিম ৬৬০৭ ইসলামি ফাউন্ডেশন)।

২. আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার ফাতিমা (রাঃ) একজন খাদিমের জন্য নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এলেন এবং কাজের অভিযোগ করলেন। তিনি বললেনঃ আমার কাছে তো কোন খাদিম নেই। তিনি বললেনঃ তবে আমি কি তোমাকে এমন কিছুর কথা বলবনা, যা তোমার খাদিম থেকে উত্তম? তা হল রাতে শয্যা গ্রহণের সময় তুমি ৩৩ বার সুবহানাল্লাহ, ৩৩ বার আলহামদুলিল্লাহ এবং ৩৪ বার আল্লাহু আকবার পাঠ করবে। (সহিহ মুসলিম ৬৬৭০ ইসলামি ফাউন্ডেশন)।

৩. জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে আমি বলতে শুনেছি, “লা- ইলা-হা ইল্লাল্লাহ” অতি উত্তম যিক্‌র এবং “আলাহামদু লিল্লাহ্‌” অধিক উত্তম দু‘আ।

৪. আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ

* لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ، وَحْدَهُ لاَ شَرِيكَ لَهُ، لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ، وَهْوَ عَلَى كُلِّ شَىْءٍ قَدِيرٌ  *

(এই বাক্যটি) যে ব্যাক্তি দিনের মধ্যে একশ বার পড়বে আল্লাহ ব্যতীত আর কোন ইলাহ নেই, তিনি এক, তার কোন অংশীদার নেই, রাজত্ব একমাত্র তারই, হামদ তারই, সব কিছুর উপর সর্বশক্তিমান” সে একশ গোলাম আযাদ করার সাওয়াব অর্জন করবে এবং তার জন্য একশটি নেকী লেখা হবে, আর তার একশটি গুনাহ মিটিয়ে দেওয়া হবে। আর সে দিন সন্ধ্যা পর্যন্ত এটা তার জন্য রক্ষা কবচে পরিণত হবে এবং তার চাইতে বেশী ফযীলত ওয়ালা আমল আর কারো হবে না। তবে যে ব্যাক্তি এ আমল তার চাইতেও বেশী করবে। (সহিহ বুখারী হাদিস নম্বর ৫৯৬১ ইসলামি ফাউন্ডেশন)।

৫. আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যাক্তি প্রত্যহ একশত বার (سُبْحَانَ اللَّهِ وَبِحَمْدِهِ -আল্লাহ পবিত্র ও সমস্ত প্রশংসা তাঁরই) সুবাহানআল্লাহি ওয়া বিহামদিহি বলবে তার গুনাহগুলি মাফ করে দেওয়া হবে তা সমুদ্রের ফেনা পরিমান হলেও। (সহিহ বুখারী হাদিস নম্বর ৫৯৬৩ ইসলামি ফাউন্ডেশন, সহিহ মুসলিম ৬৫৯৯ ইসলামি ফাউন্ডেশন)।

৬. আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ দুটি বাক্য এমন যে, মুখে তার উচ্চারন অতি সহজ্জ কিন্তু পাল্লায় অনেক ভারী, আর আল্লাহর কাছে অতি প্রিয়। তা হলঃ সুবাহানআল্লাহি ওয়া বিহামদিহি সুবাহানআল্লাহিল আযীম। (সহিহ বুখারী হাদিস নম্বর ৫৯৬৪ ইসলামি ফাউন্ডেশন)

৭. আবু হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ যে লোক সকালে ও বিকালে একশত বার বলেঃ সুবাহানাল্লহি ওয়া বিহামদিহী”, কিয়ামতের দিন তার চাইতে উত্তম (আমালকারী) আর কেউ হবে না। তবে যে লোক তার ন্যায় কিংবা তার চাইতে অধিক পরিমান তা বলে (সে উত্তম ‘আমালকারী বলে গণ্য হবে)। (তিরমিজী ৩৪৭৯ হাদিসেরমান সহিহ)।

৮. আবূ মালিক (রহঃ) এর পিতার সুত্রে বর্ণিত। তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে শুনেছেন যে, তাঁর কাছে জনৈক ব্যক্তি এসে বলল, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমি যখন আমার রবের কাছে প্রার্থনা করব তখন কিভাবে তা ব্যক্ত করব? তিনি বললেন, তুমি বল,اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي وَارْحَمْنِي وَعَافِنِي وَارْزُقْنِي (হে আল্লাহ! আপনি আমাকে ক্ষমা করে দিন, আমার প্রতি রহম করুন, আমাকে মাফ করে দিন এবং আমাকে জীবিকা দান করুন।) আর (দু’আ করার সময়) বৃদ্ধাঙ্গুলী ব্যতীত সব আংশুল একত্র করবে। (তিনি বললেন) এই শব্দগুলো তোমার দুনিয়া ও আখিরাতকে একত্র করে দেবে। (সহিহ মুসলিম ৬৬০৬ ইসলামি ফাউন্ডেশন)।

৯. ইবনু মাসউদ রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ মি’রাজের রাতে আমি ইবরাহীম (আঃ)-এর সঙ্গে দেখা করেছি। তিনি বললেনঃ হে মুহাম্মাদ” আপনার উম্মাতকে আমার সালাম পৌছিয়ে দিন এবং তাদেরকে জানান যে, জান্নাতের যামীন অতীব সুগন্ধি সমৃদ্ধ এবং সেখানকার পানি অত্যন্ত সুস্বাদু। তা একটি সমতল ভূমি এবং তার গাছপালা হল “সুবহানাল্লাহ ওয়ালহামৃদু লিল্লাহ ওয়ালা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার”। (তিরমিজি ৩৪৫২ হাদিসের মান হাসান সহিহ)।

১০. আবূ হুরাইরাহ রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিতঃ নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন , আল্লাহ্‌ তা’আলার নিরানব্বইটি নাম আছে অর্থাৎ এক কম এক শত। যে লোক এই নামসমুহ মুখস্ত করবে বা পড়বে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। (তিরমিজি ৩৫০৬, মিশকাত ২২৮৮, সহিহ বুখারি ও সহিহ মুসলিম।

১১. সা’দ রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্নিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এক বেদুঈন এসে বলল, আমাকে একটি কালাম শিক্ষা দিন, যা আমি পাঠ করব। তিনি বললেন, তুমি বলবে- 

لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيكَ لَهُ اللَّهُ أَكْبَرُ كَبِيرًا وَالْحَمْدُ لِلَّهِ كَثِيرًا سُبْحَانَ اللَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ لاَ حَوْلَ وَلاَ قُوَّةَ إِلاَّ بِاللَّهِ الْعَزِيزِ الْحَكِيمِ

“আল্লাহ ব্যতীত কোন ইলাহ নেই, তিনি একক, তাঁর কোন শরীক নেই, আল্লাহ মহান, সর্বাপেক্ষা মহান, আল্লাহরই জন্য যাবতীয় প্রশংসা এবং আমি আল্লাহ রাব্বূল আলামীনের পবিত্রতা জ্ঞাপন করছি। আল্লাহর সাহায্য ব্যতীত ভাল কাজ করার এবং মন্দ কাজ থেকে বিরত থাকার সাধ্য কারো নেই, তিনি পরাক্রমশালী জ্ঞানবান।”

সে বলল, এই সব তো আমার প্রতিপালকের জন্য। আমার জন্য কি? তিনি বললেন, বল,

للَّهُمَّ اغْفِرْ لِي وَارْحَمْنِي وَاهْدِنِي وَارْزُقْنِي

হে আল্লাহ আপনি আমাকে ক্ষমা করুন! আমার প্রতি রহম করুন, আমাকে হিদায়াত নসীব করুন এবং আমাকে রিযক দান করুন। মূসা (রহঃ) বলেন, আমার মনে হয় তিনি (عَافِنِي) আল্লাহ আমাকে ক্ষমা করুনও বলেছেন। তবে আমার তা সঠিক মনে নেই। ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) তার হাদীসে মূসা (রহঃ) এর এ উক্তি উল্লেখ করেননি। (সহিহ মুসলিম ৬৬০৩ ইসলামি ফাউন্ডেশন)।

১২. আবূ মালিক আশজায়ী (রহঃ) তাঁর পিতার সুত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, কোন ব্যক্তি ইসলাম গ্রহণ করলে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে এই দুআ শিক্ষা দিতেনঃ

اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي وَارْحَمْنِي وَاهْدِنِي وَارْزُقْنِي

“হে আল্লাহ! আপনি আমাকে ক্ষমা করুন, আমার প্রতি রহম করুন, আমাকে হিদায়াত করুন এবং আমাকে জীবিকা দান করুন।” (সহিহ মুসলিম ৬৬০৪ ইসলামি ফাউন্ডেশন)।

১৩. শাদ্দাদ ইবনু আউস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সাইয়্যেদুল ইস্তিগফার হলো বান্দার এ দু’আ পড়া- “হে আল্লাহ তুমিই আমার প্রতিপালক। তুমি ছাড়া কোন ইলাহ নেই। তুমিই আমাকে সৃষ্টি করেছ। আমি তোমারই গোলাম। আমি যথাসাধ্য তোমার সঙ্গে প্রতিজ্ঞা ও অঙ্গীকারের উপর আছি। আমি আমার সব কৃতকর্মের কুফল থেকে তোমার কাছে পানাহ চাচ্ছি। তুমি আমার প্রতি তোমার যে নিয়ামত দিয়েছ তা স্বীকার করছি। আর আমার কৃত গুনাহের কথাও স্বীকার করছি। তুমি আমাকে মাফ করে দাও। কারন তুমি ছাড়া কেউ গুনাহ ক্ষমা করতে পারবে না।

যে ব্যাক্তি দিনের (সকাল) বেলায় দৃঢ় বিশ্বাসের সাথে এ ইস্তিগফার পড়বে আর সন্ধা হওয়ার আগেই সে মারা যাবে, সে জান্নাতী হবে। আর যে ব্যাক্তি রাতের (প্রথম) বেলায় দৃঢ় বিশ্বাসের সাথে এ দু’আ পড়ে নেবে আর সে ভোর হওয়ার আগেই মারা যাবে সে জান্নাতী হবে। সাইয়্যেদুল ইস্তিগফার বাংলা উচ্চারন সহঃ

(اللَّهُمَّ أَنْتَ رَبِّي لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ خَلَقْتَنِي وَأَنَا عَبْدُكَ وَأَنَا عَلَى عَهْدِكَ وَوَعْدِكَ مَا اسْتَطَعْتُ أَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّ مَا صَنَعْتُ أَبُوءُ لَكَ بِنِعْمَتِكَ عَلَيَّ وَأَبُوءُ لَكَ بِذَنْبِي فَاغْفِرْ لِي فَإِنَّهُ لَا يَغْفِرُ الذُّنُوبَ إِلَّا أَنْتَ )

উচ্চারণঃ “আল্লাহুম্মা আনতা রব্বী লা-ইলাহা ইল্লা আনতা খালাক্কতানী ওয়া আনা আ’বদুকা ওয়া আনা আ’লা আহ্‌দিকা ওয়া ও’য়াদিকা মাসতাত’তু আ’উযুবিকা মিন শার্‌রি মা ছা’নাতু আবূউলাকা বিনি’মাতিকা আ’লাইয়্যা ওয়া আবূউলাকা বিযানবী ফাগ্‌ফির্‌লী ফাইন্নাহু লা-ইয়াগফিরুয্‌যুনূবা ইল্লা আনতা”। (সহিহ বুখারী হাদিস নম্বর ৫৮৬৭ ইসলামি ফাউন্ডেশন)।

১৪. আবদুর রাহমান ইবনু আবূ লায়লা (রহঃ) বর্ণনা করেন, একবার আমার সঙ্গে কাব ইবনু উজরাহ রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এর সাক্ষাত হলো। তিনি বললেনঃ আমি কি তোমাকে একটি হাদিয়া দেবো না। তা হল এইঃ একদিন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের নিকট বেরিয়ে আসলেন, তখন আমরা বললাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমরা আপনাকে কেমন করে সালাম দেব, আমরা আপনার উপর দরুদ কিভাবে পড়বো? তিনি বললেনঃ তোমরা বলবে, (দুরুদে ইব্রাহীম ইয়া আল্লাহ আপনি মুহাম্মাদের উপর ও তার পরিবারবর্গের উপর খাস রহমত বর্ষণ করুন, যেমন আপনি ইবরাহীম আলাইহিস সালাম এর পরিবারের উপর খাস রহমাত বর্ষণ করেছেন। নিশ্চয়ই আপনি প্রশংসিত, উচ্চ মর্যাদাশীল। ইয়া আল্লাহ! আপনি মুহাম্মদের উপর ও তার পরিবারবর্গের উপর বরকত নাযিল করুন, যেমন আপনি ইববাহীম আলাইহিস সালাম এর পরিবারবর্গের উপর বরকত নাযীল করেছেন। নিশ্চয়ই আপনি প্রশংসিত উচ্চ মর্যাদাশীল। (সহিহ বুখারী হাদিস নম্বর ৫৯১৭ ইসলামি ফাউন্ডেশন)।

১৫. আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যখন কারী (ইমাম) আমীন বলবে তখন তোমরাও আমীন বলবে। কারন এ সময় ফিরিশতাগণ আমীন বলে থাকেন। সুতরাং যার আমীন বলা ফিরিশতাদের আমীন বলার সাথে মিলে যাবে, তার পূর্বের সবগুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে। (সহিহ বুখারী হাদিস নম্বর ৫৯৬০ ইসলামি ফাউন্ডেশন)।

১৬. উসমান ইবনু ‘আফ্‌ফান (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, প্রতিদিন ভোরে ও প্রতি রাতের সন্ধ্যায় যে কোন বান্দা এ দু‘আটি তিনবার পাঠ করবে কোন কিছুই তার অনিষ্ট করতে পারবে না। “বিসমিল্লা-হিল্লাযী লা ইয়াযুর্‌রু মা‘আস্‌মিহি শাইয়ূন ফিল আরযি, ওয়ালা ফিস্‌ সামায়ি ওয়া হুয়াস্‌ সামীউল ‘আলীম”। (অর্থঃ “আল্লাহ তা‘আলার নামে” যাঁর নামের বারাকাতে আকাশ ও মাটির কোন কিছুই কোন অনিষ্ট করতে পারে না। তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞানী)। আবান (রহঃ)-এর শরীরের একাংশ পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে পড়ে। (উক্ত হাদীস রিওয়ায়াতকালে) এক লোক (অধঃস্তন বর্ণনাকারী) তার দিকে তাকাতে থাকলে তিনি তাকে বলেন, তুমি কি প্রত্যক্ষ করছো? শোন! আমি তোমার কাছে যে হাদীস রিওয়ায়াত করেছি তা অবিকল বর্ণনা করেছি। তবে আমি যেদিন পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়েছি ঐ দু‘আটি পাঠ করিনি এবং আল্লাহ তা‘আলা ভাগ্যের লিখন আমার উপর কার্যকর করেছেন। (তিরমিজি ৩৩৮৮, ইবনু মাজাহ ৩৮৬৯, হাদিসের মান হাসান সহিহ)।

১৭. মু’আয ইবনু জাবাল (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সামনে দুই লোক পরস্পরকে গালি গালাজ করে। এমনকি তাদের একজনের মুখমণ্ডলের রাগের ছাপ স্পষ্ট হয়ে উঠে। সে সময় নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ নিশ্চয় আমি এমন একটি বাক্য জানি, এ ব্যক্তিটি যদি তা উচ্চারণ করত তবে অবশ্যই তার ক্রোধ চলে যেত। তা হলঃ “আমি বিতাড়িত শাইতান হতে আল্লাহ তা’আলার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করি। (তিরমিজি ৩৪৫২, সহিহ বুখারী, সহিহ মুসলিম, হাদিসের মান সহিহ

সংকলনেঃ মোহাম্মাদ ইস্রাফিল হোসাইন। (বিএ ইন আরবি সাহিত্য ও ইসলাম শিক্ষা)

One thought on “অতি প্রয়োজনীয় কিছু দোয়া এবং জিকির

Leave a comment