ইফতারীর কিছু ভুলভ্রান্তি

ইফতারীর কিছু ভুলভ্রান্তি

সংকলনেঃ মোহাম্মাদ ইস্রাফিল হোসাইন

১। দেরী করে ইফতারী করাঃ

রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বয়ং তাড়াতাড়ি ইফতার করতেন এবং অন্যদেরও তাড়াতাড়ি ইফতার বলেছেন কারন এর মধ্যে কল্যাণ আছে।

সাহল (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যতদিন পর্যন্ত মানুষ তাড়াতাড়ি ইফতার করবে, ততদিন তারা কল্যাণের মধ্যে থাকবে। (হাদিসের মান সহিহঃ মিশকাত-১৯৮৪, সহিহ বুখারী ১৯৫৭, সহিহ মুসলিম ১০৯৮, তিরমিযী ৬৯৯, মুয়াত্ত্বা মালিক ১০১১)

সাহাল ইবনে সায়াদ রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যতদিন পর্যন্ত মুসলমানেরা শীঘ্র ইফতার করবে ততদিন তারা কল্যাণের মধ্যে থাকবে। (সহিহ বুখারী ১৯৫৭, তিরমিযী ৬৯৯, মুওয়াত্তা মালিক ৬৩৮, হাদিসটি নেয়া হয়েছে রিয়াযুস স্বা-লিহীন, তাওহীদ পাবলিকেশন থেকে হাদিস নম্বর ১২৪১)

আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ দীন সর্বদাই বিজয়ী থাকবে (ততদিন), যতদিন মানুষ তাড়াতাড়ি ইফতার করবে। কারণ ইয়াহূদী ও খৃষ্টানরা ইফতার করতে বিলম্ব করে। (হাদিসের মান হাসানঃ মিশকাত-১৯৯৫, আবূ দাঊদ ২৩৫৩, ইবনু মাজাহ ১৬৯৮)

মন্তব্যঃ কাজেই ইচ্ছা করে দেরীতে ইফতারী করা একটি সুন্নাহ বর্জিত কাজ। যখনই নিশ্চিত হব যে, সূর্য অস্ত গিয়েছে ঠিক তখনই আমরা ইপতার করব। যদি তারা তাড়াতাড়ি ইফতার করি তাহলে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘোষিত কল্যাণ পাব।

২। ইফতারের সঠিক ও যঈফ দুয়াঃ

আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নামায পড়ার আগে কতিপয় টাটকা পাকা খেজুর দিয়ে ইফতার করতেন। যদি টাটকা পাকা খেজুর না পেতেন, তাহলে শুকনো কয়েকটি খেজুর যোগে ইফতার করতেন। যদি শুকনো খেজুরও না হত, তাহলে কয়েক ঢোক পানি পান করতেন।’

ইমাম নাওয়াবী শিরোনামে পিপাসা দুর করার কথা উল্লেখ করেছেন, কিন্তু তার হাদিসটি উল্লেখ করেননি। হাদিসটি নিম্নরূপ, ইবনে উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু কর্তৃক বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন ইফতার করতেন, তখন এই দো‘আ বলতেন,

 «ذَهَبَ الظَّمَأُ وَابْتَلَّتِ الْعُرُوقُ وَثَبَتَ الأَجْرُ إِنْ شَاءَ اللَّهُ».

 (যাহাবায যামা-উ অবতাল্লাতিল উরুক্বু অষাবাতাল আজরু ইন শা-আল্লাহ)।

অর্থঃ পিপাসা দূরীভূত হল, শিরা-উপশিরা সতেজ হল এবং ইন শাআল্লাহ সওয়াব সাব্যস্ত হল। হাদিসের মান হাসানঃ রিয়াযুস স্বা-লিহীন, তাওহীদ পাবলিকেশন থেকে হাদিস নম্বর ১২৪৭, আবূ দাউদ ২৩৫৬, তিরমিযী ৬৯৪, আহমাদ ১২২৬৫)।

ইবনু ‘উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইফতার করার পর বলতেন, পিপাসা চলে গেছে, (শরীরের) রগগুলো সতেজ হয়েছে। আল্লাহর মর্জি হলে সাওয়াব প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে। (হাদিসের মান হাসান : মিশকাত-১৯৯৩, আবূ দাঊদ ২৩৫৭, মুসতাদারাক লিল হাকিম ১৫৩৬, ইরওয়া ৯২০, সহীহ আল জামি‘ ৪৬৭৮, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৮১৩৩)।

আমাদের সমাজে যে ইফতারির দুয়াটি প্রচলিত আছে উহার মান যঈফ। সেই বহুল প্রচলিত জাল হাদিসটি হলো।

মু‘আয ইবনু যুহরা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইফতার করার সময় (এ দু‘আ) বলতেনঃ ‘‘আল্ল-হুম্মা লাকা সুমতু, ওয়া ‘আলা- রিযকবিকা আফত্বরতু’’ (অর্থাৎ- হে আল্লাহ! তোমার জন্য সওম রেখে, তোমার [দান] রিযক দিয়ে ইফতবার করছি)। (হাদিসের মান যঈফ মিশকাত-১৯৯৪, আবূ দাঊদ ২৩৫৮, আদ্ দা‘ওয়াতুল কাবীর ৫০০, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৮১৩৪, য‘ঈফ আল জামি‘ ৪৩৪৯, ইরওয়া ৯১৯। কারণ মু‘আয ইবনুয্ যুহরা একজন মাজহূল রাবী]।

৩। ইফতারের পূর্বে সম্মিলিত মুনাজাতঃ

সিয়াম পালনকারী ব্যক্তি সিয়মরত অবস্থায় যে কোন সময় দোয়া করবে। শুধু ইফতারের সময়ই দোয়া করতে হবে এমনটি নয়। ইফতারের পূর্বে ব্যক্তিগতভাবে দোয়া করা কখনোই দোষনীয় নয়। বরং সিয়াম থাকাকালীন সর্বাবস্থায় ব্যক্তিগতভাবে বেশি বেশি দোয়া করা মুস্তাহাব। ইফতারের পূর্বে সূর্যাস্তের সময় ব্যক্তিগতভাবে দুয়া করা যেতে পারে। কারণ এ সময় মানুষের অন্তর বিগলিত হওয়ার সাথে মানুষ নত হয়। কারন সিয়ামরত অবস্থায় দুয়া কবুল হয়। তাই বেশি বেশী দুয়া দ্বারা নিজের আমলের ঝুড়ি বৃদ্ধি করা।

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “তিন ব্যক্তির দোয়া ফিরিয়ে দেয়া হয় না। ন্যায়পরায়ণ শাসক, রোজাদার ইফতার করার পূর্ব পর্যন্ত, মজলুমের দোয়া”। (মুসনাদে আহমাদ ৮০৪৩, মুসনাদ কিতাবের পাঠোদ্ধারকারী সম্পাদকগণ হাদিসটিকে অন্যান্য সহায়ক সনদ ও হাদিসের ভিত্তিতে সহীহ বলেছেন)

আবু উমাম রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে মারফু হাদিস হিসেবে বর্ণিত হয়েছে যে, “প্রতিদিন ইফতারের সময় আল্লাহ কিছু মানুষকে (জাহান্নাম থেকে) মুক্ত করে দেন”। (মুসানদে আহমাদ ২১৬৯৮, আলবানী সহীহুত তারগীব গ্রন্থে হাদিসটিকে সহীহ আখ্যায়িত করেছেন)।

এমন কি ইফতার করা পর দুয়া করার জন্য একটি দুয়া বর্ণিত হয়েছে। সে দোয়াটি হচ্ছে,

ذَهَبَ الظَّمَأُ وَابْتَلَّتِ العُرُوقُ، وَثَبَتَ الْأَجْرُ إِنْ شَاءَ اللَّهُ

(উচ্চারণঃ যাহাবায-যামাউ ওয়াবতাল্লাতিল ‘উরূকু ওয়া সাবাতাল আজরু ইনশা-আল্লা-হু)।

অর্থঃ পিপাসা মিটেছে, শিরাগুলো সিক্ত হয়েছে এবং আল্লাহ্‌ চান তো সওয়াব সাব্যস্ত হয়েছে।

হাদীসটি সংকলন করেছেন আবূ দাউদ ২/৩০৬, নং ২৩৫৯।আলবানী হাদিসটিকে সহীহ আবু দাউদ গ্রন্থে হাসান বলেছেন, সহীহুল জামে‘ ৪/২০৯)।

মন্তব্যঃ ইফতারের পূর্বে সম্মিলিত মুনাজাত করা সুন্নাহ বিরোধী কাজ। এ সময় সম্মিলিত মুনাজাত করা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর আমল দ্বারা প্রমাণিত হয়নি। তাই এরূপ কাজে অংশগ্রহণ করা অবশ্যই বিদ’আতের অন্তর্ভুক্ত হবে, যদিও ইফতারের পূর্বে সকলে হাত তুলে সম্মিলিতভাবে দোয়া করার রীতি আমাদের সমাজে প্রচলিত রয়েছে।

৪। ইফতার পার্টির আয়োজন করাঃ

যদিও অপরকে ইফতারি করানোতে সওয়াব আছে এবং এ কাজে উৎসাহ প্রদান করা হয়েছে, তথাপি আমাদের অনেকেই মুখরোচক ইফতার পার্টির আয়োজন করে থাকেন, যেখানে হিজাববিহীন নারীদের আগমন, নারীপুরুষের অবাধ মেলামেশা এবং ইফতার শেষে অধিক সময় অবস্থান করে তারাবিহ এর সালাত ছেঁড়ে দেওয়া। এ সবগুলো সম্পূর্ণভাবে ইসলামে নিষিদ্ধ।

রমজান মাস এলেই ইফতার পার্টির আয়োজনে ধুম পড়ে যায়। ভিআইপিদের সময় দেয়া কষ্ট হয়ে দাড়ায়। সাধারনত সমাজের উচ্চ শ্রেণির মানুষ ইফতার পার্টি আয়োজন করে থাকে। তাই এ সকল পার্টিগুলোতে কেবল উচ্চ শ্রেণির মানুষই দাওয়াত পেয়ে থাকেন। তাছাড়া ইফতার পার্টির আয়োজন মানেই এই স্থানে বাহারী খাবারের আয়োজন করে অর্থের অপচয়। সমাজের অনেক অবহেলীত মানুষ আছে যারা ঠিকমত ইফতারীর আয়েজন করতে পারেনা আর অপর পক্ষ এখান বিশ ত্রিশ প্রকারের খাবারের আয়োজন একেবারে সাধারণ। ইফতার পার্টের সবচেয়ে খারাপ দিক হল খাদ্যের অপচয়। প্রয়োজনের তুলনায় অধিক হারে আয়োজন করা হয়, বিধায় খাদ্যের অপরচয় হয়। যাদের ইফতারি ক্রয় করে খাওয়ার ক্ষমতা আল্লাহ দিয়েছেন তারাই দাওয়াত পান। সমাজের সাধারণ ও গরিব মিসকিন যারা ঠিক মত ইফতার জোগার করতে হিমসীম খান, তারা দাওয়াত পান না। যদি ইফতার পার্টির মাধ্যমে মহান আল্লাহ সন্ত্বস্তি পেতে চাই তাহলে সবার জন্য উম্মুক্ত রাখার ব্যবস্থা করতে হবে। নিয়ত থাকবে সিয়াম কারী বান্দাকে ইফতার করান এখানে কোন প্রকার শ্রেণি বিন্যাসের দিকে নজর দেয়া যাবে না। উচ্চ শ্রেণির মানুষ ইফতার পার্টি মানেই হল অপচয়। অথচ অপচয় করা ইসলামি শরীয়াত হারাম। কিন্ত আমাদের সমাজে আয়োজিত প্রায় সবগুলো ইফতার মাহফিলে শরিয়তের বিধানের স্পষ্ট লংঘন হতে দেখা যায়। নারী পুরুষ বেপর্দা হয়ে এক সঙ্গে বসে ইফতার করা হয়। অনেক সময় তাদের মাগরিবের নামাজেরও খবর থাকে না। সম্মিলিত দুয়ার মাধ্যমে ইফতার শুরু করা।  আরো নানা অসঙ্গতি এখানে দেখা যায়। তাই এসব ইফতার মাহফিল থেকে বিরত থাকা জরুরি। আর যদি ইফতারের পার্টি করতেই হয় তাহলে নিম্ম লিখিত শর্থ সাপেক্ষে করা যেতে পারে। শর্থসমূহ হলোঃ

১। ইফতারের পার্টি শরীয়ত বিরোধী কোন কার্যকলাপ না হওয়া।

২। নারী পুরুষের পর্দাহীন অবাধ মেলামেশা থেকে দুরে থাকতে হবে।

৩। সমাজের প্রচলন হিসাবে বা লোক লজ্জার ভয়ে না করা। সবাই ইফতারের পার্টি করে আমি না করলে কি হয়? মানুষ কি বলে।

৪। ইফতারের পার্টি ‍পৃথক সাওয়াবের বিষয় বা পৃথক ইবাদত মনে করা।

৫। সবার জন্য উম্মুক্ত রাখা

৬। অপচয় রোধ করা

৭। ইফতার পূর্ব গতানুগতিক সম্মিলিত দুয়া না করা।

৮। ইফাতরি করতে করতে মাগরিবের জামাত পরিত্যাগ করা।

মন্তব্যঃ আমাদের দেশে প্রতিটি মসজিদে অনানুষ্ঠানীক ইফতার মাহফিলের আয়োজন করা হয়ে থাকে। এই মাহফিল শরিয়ত সম্মত কারন এখানে শরিয়ত বিরোধী কোন কাজ হয় না। এখানে যে কোন সাধারণ মানুষ ইফতারি করা বা করানোর সুযোগ পায়, অর্থাৎ সবার জন্য উম্মুক্ত। কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া ইফতার পূর্ব গতানুগতিক সম্মিলিত দুয়া করা হয় না। মসজিদে ইফাতরি আয়োজন করা হয় বিধায় মাগরিবের জামাত পরিত্যাগ করার সুযোগ থাকেনা।

৫। ইফতারীতে অপচয় করা বিদআত নয় হারামঃ

বর্তমানে মানুষের ক্রয় ক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে। এখন ধনী গরীব সকলেই ইফতার আয়োজন করতে সক্ষম। তাই এই আয়োজনে ধনী গরিব সকলে সামিল আছে। আমরা প্রায় সকলে ইফতারির জন্য খাবারের অপচয় করে থাকি। ঘরের ইফতারি থেকে পার্টির ইফতারিতে অপচয় বেশী হয়। অথচ অপচরা করা হারাম। কুরআনে মহান আল্লাহ বলেন,

يَا بَنِي آدَمَ خُذُواْ زِينَتَكُمْ عِندَ كُلِّ مَسْجِدٍ وكُلُواْ وَاشْرَبُواْ وَلاَ تُسْرِفُواْ إِنَّهُ لاَ يُحِبُّ الْمُسْرِفِينَ

অর্থঃ হে বনী-আদম! তোমরা প্রত্যেক নামাযের সময় সাজসজ্জা পরিধান করে নাও, খাও ও পান কর এবং অপব্যয় করো না। তিনি অপব্যয়ীদেরকে পছন্দ করেন না। (সুরা আরাফ ৭:৩১)।

তিনি আরও বলেনঃ

 وَءَاتِ ذَا ٱلۡقُرۡبَىٰ حَقَّهُ ۥ وَٱلۡمِسۡكِينَ وَٱبۡنَ ٱلسَّبِيلِ وَلَا تُبَذِّرۡ تَبۡذِيرًا (٢٦) إِنَّ ٱلۡمُبَذِّرِينَ كَانُوٓاْ إِخۡوَٲنَ ٱلشَّيَـٰطِينِ‌ۖ وَكَانَ ٱلشَّيۡطَـٰنُ لِرَبِّهِۦ كَفُورً۬ا (٢٧)

অর্থঃ আত্নীয়-স্বজনকে তার হক দান কর এবং অভাবগ্রস্ত ও মুসাফিরকেও। এবং কিছুতেই অপব্যয় করো না। নিশ্চয় অপব্যয়কারীরা শয়তানের ভাই। শয়তান স্বীয় পালনকর্তার প্রতি অতিশয় অকৃতজ্ঞ। (সুরা বনী-ইসরাঈল ১৭:২৬-২৭)

রাসূল (সা.) যখন আহার করতেন, আহার শেষে তিনবার আঙ্গুল চেটে খেতেন এবং বলতেন, তোমাদের খানার বাসন থেকে কিছু পড়ে গেলে উঠিয়ে পরিষ্কার করে খেয়ে নাও, তা শয়তানের জন্য ছেড়ে দিও না। (আবু দাউদ-৩৮৪৫)। অথচ, বর্তমানে খাবারের অপচয় রমজানে রীতিমত যেন ফ্যাশন। রেস্তোরাঁ থেকে বস্তা বস্তা খাবার ফেলে দেয়া হচ্ছে, এমন ছবিও সংবাদপত্রে ছাপা হয়েছে।

এই অপচয়ের বিপরীত চিত্রও সমাজে আছে। বহু মানুষ এখনও অভুক্ত থাকে। পেট ভরে খেতে পায় না। গার্মেন্টের এমন অনেক শ্রমিক আছে যারা এখনও পেটে ক্ষুধা নিয়ে কাজ করে। পেট ভরে খেতে পারে না। কাজেই ইফতারি আয়োজনের আগে হিসাব করি সবার প্রতি খেয়াল রাখি। অপচয় না করে গরীবদের প্রতি সহানুভূতির দৃষ্টি দেই।

৬।  ইফতারি আয়োজনে সময় ইবাদাত নষ্ট করাঃ

সাধারন মহিলা ইফতারি তৈরি করে থাকে। প্রতিটি সংসারের এক জন মহিলাকে গড়ে ৫/৬ জনের ইফতারি তৈরি করতে হয়। এই জন্য তাকে জোহরের সালাত আদায় করে এই কাজে তাকে লেগে যেতে হয়। ইফতারি তৈরি করতে করতে তার আছরের সালাতের খবর থাকে। সারা জীবনের ইফতারি তৈরির ফজিলত দ্বারা কি আছরের ফরজ সালাতের রিকভারি করা যাবে? আছরের সালাত কাজা আদায় করলেও আর রিকভারি হবে না। সকালে সংসারের নানা কাজ করে বিধায় মহিলাগন রমজানের সকলে নফল ইবাদাত করতে সময় পায়না আর বিকালে ইফতারির ছিপনে সময় দিলে আর তার নফল ইবাদতে সময় নেই। কাজেই পরিমিত ইফতারি তৈরি করি আর কিছু ক্রম করে আনতে বলি, তাহলে ইফতারি আয়োজনে ইবাদাতের সময় নষ্ট হবে না।

৭। আমাদের দুআ কবুল হওয়ার সুযোগ ছেড়ে দেওয়াঃ

সিয়াম পালনকারী ব্যক্তির দুআ রোযা ভাঙার সময় আল্লাহর নিকট কবুল হয়ে থাকে। আমাদের সিয়ামরত অবস্থায় মহান আল্লাহ নিকট দুয়া করা। সারা দিন নানান কাজের ফাকে ফাকে দুয়া করা। সরাদিন সময় না হলেও ইফতারির আগে কিন্ত কিছু সময় হাতে এসে যায় যখন আমরা ইফতরি নিয়ে অপেক্ষা করে থাকি। এই অপেক্ষার সময় দুআ না করে বরং খাবার পরিবেশন, কথাবার্তা ইত্যাদি নিয়ে ব্যস্ত থাকি। আমাদের চিন্তা করা উচিৎ এই সময়টি কাজে লাগিয়ে পরিবারের সকল নিয়ে মহান আল্লাহর দরবারে দুয়া করা। এই সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “তিন ব্যক্তির দুআ ফিরিয়ে দেওয়া হয়না ১) একজন পিতার দুয়া ২) রোযাদার ব্যক্তির দুয়া  ৩) মুসাফিরের নামাজ”। (বায়হাকি)

হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, তিন ধরনের লোকের দোয়া কখনো ফিরিয়ে দেওয়া হয় না।  ১) রোজাদার যখন ইফতার করে ২) ন্যায়পরায়ণ শাসকের দোয়া  ৩) মজলুমের দোয়া। মজলুম ব্যক্তির দোয়াকে আল্লাহ মেঘমালার ওপর উঠিয়ে নেন এবং এ জন্য আসমানের সব দরজা খুলে দেওয়া হয়। আল্লাহ বলেন, আমার ইজ্জতের কসম! আমি তোমাকে অবশ্যই সাহায্য করব, যদিও তা কিছুকাল পরে হয়।  (তিরমিযি)।

৮। মৃত্যু মাতাপিতার জন্য ইফতারির আয়োজন করাঃ

উপরের আলোচনা বুঝতে পেরেছি। শর্ত সাপেক্ষে ইফতারির আয়োজন করা যায়। তবে হাক ডাক না করে প্রতিদিনই কিছু কিছু করে গরীব অসহায়দের ইফতারি দিতে পারলে ভাল হয়। কিন্তু সমাজে একটি প্রচলন আছে মৃত্যু মাতাপিতার সওয়ার পৌছান জন্য ইফতারি বিশাল আয়োজন করা হয়। যেখান গরীবদের কোন স্থান পায় না। সমাজের প্রভাবশালী, কিছু আলেম ও নিজের আত্মীয় স্বজনই স্থান যায়। মনে হবে সওয়াব পৌছান নয়, লৌকিকত ও  সমাজের ভয়ে ইফতারির আয়োজন করা হচ্ছে। রমাজের সাথে এইভাবে খাস করে ইবাদাত করা সুন্নাহ সম্মত নয়। তবে মহান আল্লাহুকে খুশি করার জন্য অন্যদের কে ইফতারি করা একটি বিশার পুন্যের কাজ। কাজেই এই কাজটিতে যাতে কোন প্রকার বিদআতে সংশ্লিষ্টতা না হয় তার প্রতি খেয়াল রাখতে হবে। নিজের বাছাই করা লোকদের সাথে যেন অধিক পরিমানের ফকির মিসকিন থাকে তার প্রতি খেয়াল রাখতে হবে। 


৯। ইফতারী ও সেহেরীতে মাত্রাতিরিক্ত খাবারের আয়োজন করাঃ

ইফতারীর আয়োজন দেখলে মনে হবে এই মাস কোন সংযমের মাস নয়, এই মাস হলো ভোজের মাস। ইফতারের সময়ে আমাদের টেবিলের অবস্থা দেখার মত নয়। টেবিলে তাকালে দেখা যাবে, পুঞ্জীভূত নানাপদী খাবার, মিষ্টান্ন এবং পানীয়তে পরিপূর্ণ। আমরা এমনভাবে ইফতারের করি মনে হবে যেন আগামীকাল বলে কিছুই নেই। যার ফলে আমরা রামাদানের মুখ্য উদ্দেশ্য ভুলে যাচ্ছি। এভাবেই আমাদের লোভ আর প্রবৃত্তির অনুসরণ বাড়তে থাকে। আমরা আমাদের প্রবৃত্তি নিয়ন্ত্রণ করার বদলে তার লালসা পুরণ করছি। ইফতারীর আয়োজন দেখলে মনে হবে এক ধরনের অপচয় এবং সীমালঙ্ঘন। মহান আল্লাহ বলেনঃ

*يَا بَنِي آدَمَ خُذُواْ زِينَتَكُمْ عِندَ كُلِّ مَسْجِدٍ وكُلُواْ وَاشْرَبُواْ وَلاَ تُسْرِفُواْ إِنَّهُ لاَ يُحِبُّ الْمُسْرِفِينَ*

অর্থঃ হে বনী-আদম! তোমরা প্রত্যেক নামাযের সময় সাজসজ্জা পরিধান করে নাও, খাও ও পান কর এবং অপব্যয় করো না। তিনি অপব্যয়ীদেরকে পছন্দ করেন না। (সুরা আরাফ ৭:৩১)।

আমাদের কিছুসংখ্যক সেহরীর সময়ে নিজেদেরকে বিস্ফোরিত হওয়ার আগ পর্যন্ত ভরাক্রান্ত করে তুলি, কারণ আমরা মনে করি সারা দিন ক্ষুধার্ত অনুভব না করার এটাই একমাত্র পথ, সারাদিন না খাওয়ার অভাব একবারেই মিটিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন। যাহোক, এটা সম্পূর্ণরূপে সুন্নাহ্ বিরোধী কাজ। পরিমিতিবোধ সব কিছুর চাবিকাঠি। রাসূল (সাঃ) বলেছেনঃ 

“আদম সন্তান তার উদর ব্যতীত আর কোনো পাত্রই এত খারাপভাবে পূর্ণ করে না, আদম সন্তানের পৃষ্ঠদেশ সোজা রাখার জন্য এক মুঠো খাবারই যথেষ্ট। যদি তোমাদেরকে উদর পূর্ণ করতেই হয়, এক তৃতীয়াংশ খাবার দ্বারা, এক তৃতীয়াংশ পানি দ্বারা আর অবশিষ্ট এক তৃতীয়াংশ বায়ু দ্বারা পূর্ণ করো।” (তিরমিযী, ইবনে মাজাহ্, আলবানী কর্তৃক সহীহ্কৃত)

অতিরিক্ত খাবার গ্রহণ একজন মানুষকে আবশ্যকীয় অনেক আমল এবং ইবাদাত হতে দূরে সরিয়ে নেয়, তাকে অলস করে তোলে এবং অন্তরকে বধির করে ফেলে। ইমাম আহমদকে একবার জিজ্ঞেস করা হয়েছিলঃ “উদরপূর্ণ অবস্থায় একজন মানুষ কি তার হৃদয়ে কোমলতা ও বিনয় অনুভব করে?” তিনি উত্তরে বলেছিলেনঃ “আমার মনে হয় না।”

 

১০। ইফতারীর সাথে সাথে ধুমপান বিদআত নয় বরং হারাম কাজঃ

অনেক ধুমপায়ী আছে যারা সারাদিন সিয়ামরত অস্থায় ধুমপান করেন না কারন তারা যানের ধুমপান করলে তাদের সিয়াম নষ্ট হয়ে যাবে। যখন সিয়াস শেষে ইফতারী করা হয়, সাথে সাথে তারা ধুমপানে ব্যাস্ত হয়ে যায়, মনে হবে এতক্ষন সিয়ামের কারন ইহা হারাম ছিল এখন তা আবার হালাল হল। আসল বিষয়টা কি সত্যিই তাই? একটু ভেবে দেখছেন কি? তাহলে ইসলাম কি বলে?

ইসলামের দৃষ্টিতে ধুমপান নিঃসন্দেহে একটি হারাম কাজ। তাই সে ধুমপান রমজান মাসে করুক আর অন্য মাসে করুক। ইফতারীর পরে আর সেহরীর আগে করুক। কোন ব্যক্তি ধূমপান বর্জনীয় সেটা রামাদান মাসেই হোক বা এর বাইরে হোক। ধুমপান যে হারাম এ সম্পর্কিত কুরআনের কয়েকটি কিয়াস করার মত আয়াত তুলে ধরলাম। কারন কুরআনে সরাসরি ধুমাপান হামার এই অর্থে কোন আয়াত নেই।

আল্লাহ্ তা‘আলা তার বান্দাদের জন্য শুধু পবিত্র বস্তু থেকে পানাহার হালাল করেছেন। আর তাদের উপর অপবিত্র জিনিস হারাম ঘোষণা করেছেন।  মহান আল্লাহ ঘোষনা করেনঃ 

يَسْأَلُونَكَ مَاذَا أُحِلَّ لَهُمْ قُلْ أُحِلَّ لَكُمُ الطَّيِّبَاتُ

অর্থঃ তারা আপনাকে জিজ্ঞাসা করবে, কোন জিনিস তাদের উপর হালাল করা হয়েছে? আপনি বলুন, তোমাদের জন্য পবিত্র জিনিস গুলোই শুধু হালাল করা হয়েছে।’’ (সুরা মায়েদা ৫:৪)।  

মহান আল্লাহ আরও বলেনঃ

يَأْمُرُهُم بِالْمَعْرُوفِ وَيَنْهَاهُمْ عَنِ الْمُنكَرِ وَيُحِلُّ لَهُمُ الطَّيِّبَاتِ وَيُحَرِّمُ عَلَيْهِمُ الْخَبَآئِثَ

অর্থঃ তিনি তাদেরকে সৎ কাজের আদেশ দেন আর অন্যায় কাজ থেকে নিষেধ করেন এবং তাদের জন্য সর্বপ্রকার পবিত্র জিনিস হালাল করেন ও তাদের উপর সর্বপ্রকার অপবিত্র জিনিস হারাম করেন।’’ (সূরা আরাফ ৭: ৫৭)

মন্তব্যঃ সকল প্রকারের ধূমপানই অপবিত্র জিনিসের অর্ন্তভুক্ত। ইহা মারাত্মক ক্ষতিকর ও অপবিত্র জিনিস। সুতারং ধুমপান করা হারাম।

আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন,

 وَلاَ تُلْقُواْ بِأَيْدِيكُمْ إِلَى التَّهْلُكَةِ وَأَحْسِنُوَاْ إِنَّ اللّهَ يُحِبُّ الْمُحْسِنِينَ

অর্থঃ নিজের জীবনকে ধ্বংসের সম্মুখীন করো না। আর মানুষের প্রতি অনুগ্রহ কর। আল্লাহ অনুগ্রহকারীদেরকে ভালবাসেন। (সুরা বাকারা ২:১৯৫)।

মন্তব্যঃ ধূমপায়ী যেমন নিজেদেরকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছে, তেমনি সে ধীরে ধীরে নিজের জীবনী শক্তি নষ্ট করে আত্মহত্যার মত অপরাধ করছে। কাজেই ধুমপান হারাম।

আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন,

إِنَّ الْمُبَذِّرِينَ كَانُواْ إِخْوَانَ الشَّيَاطِينِ وَكَانَ الشَّيْطَانُ لِرَبِّهِ كَفُورًا

অর্থঃ নিশ্চয় অপব্যয়কারীরা শয়তানের ভাই। শয়তান স্বীয় পালনকর্তার প্রতি অতিশয় অকৃতজ্ঞ। (সুরা বনী-ইসরাঈল ১৭:২৭)।

আল্লাহ্ তা‘আলা আরও বলেন,

يَا بَنِي آدَمَ خُذُواْ زِينَتَكُمْ عِندَ كُلِّ مَسْجِدٍ وكُلُواْ وَاشْرَبُواْ وَلاَ تُسْرِفُواْ إِنَّهُ لاَ يُحِبُّ الْمُسْرِفِينَ

অর্থঃ হে বনী-আদম! তোমরা প্রত্যেক নামাযের সময় সাজসজ্জা পরিধান করে নাও। খাও ও পান কর এবং অপব্যয় করো না। তিনি অপব্যয়ীদেরকে পছন্দ করেন না। (সুরা আরাফ ৭:৩১)।

মন্তব্যঃ অর্থের অপচয় বা অর্থ নষ্ট ইসলামে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। ধূমপান অর্থের অপচয় করে। কোন ভাল কাজ নয় শুধু ক্ষতিকর একটি কাজে অর্থ নষ্ট হয়। তাই ধুমপান করা অপচয়ের মত একটি হারাম কাজ। ধূমপান মানব সমাজের অবর্ণনীয় ক্ষতি সাধন করে। এই প্রসঙ্গে বর্তমানে যুগের বিখ্যাত ইসলামী চিন্তাবিদ সাউদী আরবের সর্বোচ্চ ফতোয়া বোর্ডের প্রধান মুফতি আল্লামা শেখ ইবন বায ‘ধূমপান করাকে হারাম বলে ফতোয়া দিয়েছেন।

শিক্ষাঃ রমজান মাসে দিনের বেলা যদি সিয়াম বাচাতে মহান আল্লাহ ভয়ে ধুমপান ত্যাগ করতে পারি, তবে কেন ইফতারীর পরে সেই মহান আল্লাহ ভয়ে ধুমপান ত্যাগ করতে পারবনা। অশ্যই পারব, দরকার শুধু দৃঢ় সংকল্প। আর যদি রমজানে মহান আল্লাহ ভয়ে ধুমপান ত্যাগ করতে পারি, তবে কেন সারা বছর এই হারাম ত্যাগ করতে পারবা। মহান আল্লাহ যেন সঠিক বুঝদান করে এই হারাম থেকে আমাদের সকলকে বাচার তৌফিক দান করেন। আমিন।

১১। একটি বিদআতি বিশ্বাস, সিয়ামের খাবারে কোন  হিসাব হবে নাঃ

সমাজে বহুল প্রচরিত একটি কথা হল, রোজাদারের খাবারের কোনো হিসাব হবে না। এই কথাটির কোন ভিত্তি ইসলামে নেই। মহান আল্লাহ বা তার প্রেরিত রাসুল সাঃ ও এমন কোন কথা বলেন নি। কিন্তু কথাটি সমাজে এমনভাবে প্রচলিত মনে হবে শতভাগই সত্য। কিছু কিছু ভুল মানুষের মাঝে এমনভাবে প্রচার পায় মনে হয় ভুলটাই যেন শুদ্ধ। এরূপ একটি ভুল কথা হল এই বাক্যটি। এই ভুল কথাটির ভুলের মাসুল দিতে সমাজের হাজারও মানুষ সংযমের মাসে ইফতারিতে বাহারি খাবারের আয়োজন করে থাকে। খাবারের হিসাব বলতে সাধারণত খাবারের অপচয় বোঝায়। আর পবিত্র কোরআন-হাদিসে এমন কোনো কথা নেই যে, রোজাদার যদি খাবারের অপচয় করে তাহলে তার কোনো হিসাব হবে না। যে ব্যক্তিই খাবার বা যে কোনো বস্তু অপচয় করুক আল্লাহর দরবারে তাকে এর হিসাব দিতে হবে। সুতরাং রোজাদার হোক বা যেই হোক খাবার বা যেকোনো বস্তুর অপচয় থেকে বেঁচে থাকা জরুরি।

মন্তব্যঃ অনেকের ধারনা রমজানে যেহেতু খাবারের হিসাব নেই, তাই হারাম হালালের বাচ-বিচার নেই। যা পাও তাই খাও। কিন্তু পানাহারের ক্ষেত্রে হারাম থেকে বেঁচে থাকা ফরজ। রমজান মাসে এ দাবি আর বেড়ে যায়। হিসাবের প্রশ্ন আসে হালালের ক্ষেত্রে, নিয়ামতের যথাযথ ব্যবহার হল কিনা এবং তার শোকর আদায় করা হল কিনা। হারামের উপর তো সরাসরি শাস্তি হয়। তাই প্রচলিত এ বাক্য শুনে এরূপ মনে করা যে, হারাম খেলেও কোনো হিসাব নেই, তা আরো ভয়াবহ।

সংকলনেঃ মোহাম্মাদ ইস্রাফিল হোসাইন। (বিএ ইন এ্যারাবিক লিটারেচার, ইসলামিক হিস্টরী এন্ড ইসলামিক স্টাডিস)

Leave a comment