তৃতীয় কিস্তি  : ফিকহের আলোকে শবে বরাত

তৃতীয় কিস্তি  : ফিকহের আলোকে শবে বরাত

সংকলনেঃ মোহাম্মাদ ইস্রাফিল হোসাইন

 

১। ফিকহের কিতাব থেকে দলীলঃ  

শুধু আল-কুরআনে কিংবা সহিহ হাদীসে নেই, বরং ফিক্‌হের নির্ভরযোগ্য কিতাবগুলো পড়েও শবে বরাত সম্পর্কে কিছু পাওয়া যাবে না। বাংলাদেশসহ ভারতীয় উপমহাদেশের দ্বীনি প্রতিষ্ঠানগুলো ফিকহের সিলেবাস হিসাবে মালাবুদ্দা মিনহু, নুরুল ইজাহ, মুখতাসাতুল কুদুরী, কানযুদ দাকায়েক, শরহে বিকায়া, হিদায়াহ ইত্যাদি কিতাবগুলি পড়ে থাকে। এই সকল কিতাবেগুল খুলে দেখুন না, কোথাও শবে বরাত নামের কিছু পাওয়া যায় কিনা। অথচ আমাদের পূর্বসূরী ফিকাহবিদগণ ইসলামের অতি সামান্য বিষয়গুলো আলোচনা করতেও কোন ধরনের কার্পণ্যতা দেখাননি। তারা সূর্যগ্রহণ, চন্দ্রগ্রহণের সালাত সম্পর্কেও অধ্যায় রচনা করেছেন। অনুচ্ছেদ তৈরী করেছেন কবর যিয়ারতের মত বিষয়েরও। শবে বরাতের ব্যাপারে কুরআন ও সুন্নাহর সামান্যতম ইশারা থাকলেও ফিকাহবিদগণ এর আলোচনা মাসয়ালা-মাসায়েল অবশ্যই বর্ণনা করতেন। 

আমাদের সালাফদের কিছু বক্তব্য অবশ্য অনুধাপন যোগ্যঃ

এ সম্পর্কে সাহাবীদের কোন বক্তব্য বা আসার পাওয়া যায় না। তাবেয়ী যুগ থেকেই কোন কোন তাবেয়ী গুরুত্ব না দিয়ে লাইলাতুল নিসফে মিন শাবান বা শাবানের মধ্য রাতে কিছু ইবাদত করতে থাকে এবং তখনই আবার অনেক তাবেয়ী এর প্রতিবাদ করেছেন। কিন্তু তারা লাইলাতুল কদর বা ভাগ্য রজনী বলে কিছু বলেন নাই বা তারা জানতেনও না। লাইলাতুল নিসফে মিন শাবান বা শাবানের মধ্য রাতের ইবাদাত সম্পর্কে দু ধরনের মতামত পাওয়া যায়। আলোচনায় নিরপেক্ষ রাখার শার্থে দু ধরনের (পক্ষে এ বিপক্ষে) আলেমদের মতামতই তুলে ধরব।

২। যারা শবে বরাতে ফজিলতের পক্ষ কথা বলেছেনঃ

১। প্রখ্যাত ফকীহ আল্লামা ইবন আবেদীন শামী বলেন, “নির্দিষ্ট সংখ্যার হিসাব না করে একাকি নফল নামায আদায় করা, কুরআন-হাদিস পাঠ ও শ্রবণ করা, তাসবিহ,আল্লাহর প্রশংসা এবং নবীর ওপর দরূদ শরিফ পাঠের মাধ্যমে লাইলাতুল বরাত উদ্যাপন করা হয়ে থাকে।”(ইবন আবেদীন শামী, রাদ্দুল মুহতার, দারুল ফিকর, বৈরুত, ১৪২১ হিজরী, খ. ২য়, পৃ: ২৬)

২। ইমাম হাসান শুরুনবুলালি বলেন, “লাইলাতুল বরাত উদ্যাপন করা মুস্তাহাব। কেননা এ রাত অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ এবং এ রাতে রিযিক বন্টন করা হয় আর মৃত্যু নির্ধারণ করা হয়।”(ইমাম হাসান শুরুনবুলালি, মারাকিল ফালাহ,আল-মাকতাবাতুল আসরিয়্যাহ,বৈরুত, ১৪২৫হি,খ.১,পৃ.৭৩)

৩। ফকীহ মনসুর বিন ইউনুস বুহুতী হাম্বলী বলেন, “শাবান মাসের পনের তারিখ কিয়ামুল লাইল তথা ইবাদতের মাধ্যমে উদযাপন করা মুস্তাহাব।”(ইমাম বহুতী, কাশফুল ক্বিনা ১/২, দারুল ফিকর, বৈরুত)।

৪। আল্লামা রুহায়বানী হাম্বলী বলেন, “শাবান মাসের পনের তারিখ রাত ঈদের রাতের মত কিয়ামুল লাইল তথা ইবাদতের মাধ্যমে উদযাপন করা মুস্তাহাব।”(রুহায়বানী, মাতালিবু উলির নেহী, আলমাকতাবাতুল ইসলামী, দামেস্ক, ১৯৬১ ইং, খ: ১ম, পৃ: ৫৮১)

৫। আব্দুল কাদের জিলানি হাম্বলী আলাইহির রাহমাহ বলেন, “কতিপয় আলেম ওই চৌদ্দটি রাতকে একত্রে করে লিখেছেন, যেগুলো কে ইবাদতের মাধ্যমে উদযাপন করা মুস্তাহাব। তিনি বলেন, এ রাতগুলোর সংখ্যা হচ্ছে বছরে চৌদ্দটি। এর মাঝে তিনি শাবানের মধ্য রাতের কথাও বলেছেন। (আব্দুল

৬। ইবন রজব হাম্বলীর মতেও এ রাতে ইবাদত করা মুস্তাহাব। এ রাতে রাসূলুল্লাহ্ পরিপূর্ণ রাত ইবাদত করতেন।( ইবনু রজব হাম্বলি,প্রাগুক্ত,পৃ.১৩৮)

৭। আল্লামা ইবনুল হাজ্ব মালেকী বলেন, শাবান মাসের পনের তারিখের রাতটি যদিও লাইলাতুল কদর নয়, তথাপি অত্যাধিক সম্মানিত ও বরকতময়। সলফে সালেহীনরা এ রাতকে খুব সম্মান করতেন এবং এ রাত আগমণ করার পূর্বে এর জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করতেন। আগমনের পর শরিয়ত সমর্থিত বিষয়ের মাধ্যমে এর সম্মান করতেন।”(ইবনুল হাজ্ব মালেকী, আল-মাদহাল, দারুল ফিকর,১৪০১ হিজরী, খ: ১ম, পৃ: ২৯৯)

৮। দারুল উলুম দেওবন্দের ফতোয়া : “এ রাত অত্যন্ত ফযিলতপূর্ণ। এ রাতে একাকী নামাজ পড়া, কুরআন তিলাওয়াত করা, যিকির করা, কবর যিয়ারত করা, দোয়া এবং ক্ষমা চাওয়া মুস্তাহাব। তবে সম্মিলিতভাবে মসজিদে নয়।”(ফাতাওয়ায়ে দারুল উলুম দেওবন্দ,ভারত,খ.১,পৃ.১০২ ও ২৯৩)

৯। আশরাফ আলী থানভী বলেন, ‘১৫ শাবান রাত জেগে ইবাদত করা উত্তম; প্রকাশ্যে হোক কিংবা গোপনে হোক।’(মাওলানা আখতারুজ্জমান,লাইলাতুম মুবারাকাহ্,আজিমপুর দায়রা শরিখ খানকা,ঢাকা,২য় সংস্করণ,২০০৭ইং,পৃ,৫২)

১০। আব্দুল হাই লাকনভী বলেন“লাইলাতুল বরাতে জাগ্রত থেকে ইবাদতে মশগুল থাকার ব্যাপারে কোন দ্বিমত নেই। এ ব্যাপারে ইমাম ইবন মাজাহ এবং ইমাম বায়হাকি হযরত আলী রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণনা করেন,রাসূলুল্লাহ ইরশাদ করেছেন-“শা’বান মাসের পনের তারিখ উপনীত হলে তোমরা ইবাদতের মাধ্যমে রাত উদ্যাপন কর এবং দিনে রোযা রাখ। কেননা, মহান রাব্বুল আলামীন সূর্য অস্তমিত হবার পর প্রথম আসমানে অবতীর্ণ হয়ে বলেন, ক্ষমা প্রার্থনা করার কে আছে, যাকে আমি ক্ষমা করব? রিযিক প্রার্থনা করার কে আছে, যাকে আমি রিযিক প্রদান করব? কে বিপদগ্রস্ত আছে, যাকে আমি বিপদ মুক্ত করব? এভাবে ফজর পর্যন্ত বিভিন্ন কিছু প্রার্থনার জন্য আহ্বান করতে থাকবেন।”…উল্লিখিত বর্ণনা থেকে বোঝা যায় যে,রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেই রাতে অধিক ইবাদত,দুয়া,কবর যিয়ারত এবং মৃতদের জন্য দুয়া করতেন। সকল প্রকার হাদিসে কাওলি এবং হাদিসে ফে’লি দ্বারা ঐ রাতে অধিক পরিমাণে ইবাদত করা মুস্তাহাব প্রমাণিত হয়েছে। নামায বা অন্য ইবাদত করার ব্যাপারে সে স্বাধীন। যদি নামায পড়াকে সে গুরুত্ব দেয়, তাহলে সে যত রাকাত ইচ্ছা পড়তে পারবে। যে বিষয় নিষেধ হবার ব্যাপারে রাসূলের কোন নির্দেশ সরাসরি কিংবা ইঙ্গিতে রয়েছে, তা অবশ্য বর্জনীয়।”(আব্দুল হাই লকনবী, আল-আছারুল মারফুয়াহ, দারুল কুতুব আল-ইলমিয়্যাহ, খ. ১ম পৃ: ৮১-৮২)

১১।  নির্ভরযোগ্য শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিত্ব ইবনে তাইমিয়া হাম্বলী বলেন-

শাবান মাসের পনের তারিখের রাতের ফযিলত সম্পর্কে অসংখ্য শুদ্ধ হাদিস রয়েছে, যেগুলোর মাধ্যমে এ রাতের মর্যাদা বোঝা যায়। সলফে সালেহীনগণ এ রাতে নামাজ পড়ার জন্য নির্ধারণ করে রাখতেন এবং দিনে রোজা রাখতেন। কেননা এ ব্যাপারে অনেক সহীহ হাদিস রয়েছে। পূর্ববর্তী ও পরবর্তীকালের কিছু আলেম এ রাতের মর্যাদাকে অস্বীকার করেছে এবং সহীহ হাদিসের ওপর অপবাদ দিয়েছে। কিন্তু আমাদের হাম্বলী মাযহাবসহ অন্যান্য মাযহাবের অধিকাংশ আলেমদের মতে এ রাতটি অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ। ইমাম আহমদ ইবনু হাম্বল এর মতও এটি। কেননা এ ব্যাপারে অসংখ্য হাদিস শরিফ রয়েছে।”(ইমাম ইবন তাইমিয়া,ইকতিযাউস সিরাতিল মুস্তাকিম,দারু আলামিন কুতুব,বৈরুত,৭ম সংস্করণ,১৪১৯হি,খ.২,পৃ.৯৭)

১২। প্রখ্যাত আলেম শায়খ আব্দুর রহমান মুবারকপুরী শবে বরাত উদযাপনের পক্ষে একাধিক হাদিস উল্লেখ করে বলেন, এ সকল হাদিস তাদের জন্য প্রমাণ,যারা মনে করে যে, শবে বরাতের কোন ফযিলত প্রমাণিত নয়।”(শায়খ মুবারকপুরী,তুহফাতুল আহওয়াযি,দারুল কুতুবিল ইলমিয়্যাহ,বৈরুত,খ.৩,পৃ.৩৬৭)

১৩। নির্ভযোগ্য ইমাম নাসিরুদ্দিন আলবানি স্বীয় কিতাব “সিলসিলাতুল আহাদীসিল সহিহা” গ্রন্থে লাইলাতুল বরাত সম্পর্কিত অনেক হাদিস উল্লেখ করত: এগুলোর মান যাচাই করার পর বলেন-“সার কথা হল (হযরত আয়েশা সিদ্দিকা রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা থেকে বর্ণিত উপরিউক্ত) হাদিস শরিফটি (বর্ণিত) সকল সূত্রের সমন্বয়ে নি:সন্দেহে সহিহ। হাদিস অতিশয় দুর্বল না হলে আরো কম সংখ্যাক সূত্রে বর্ণিত হাদিস দ্বারা হাদিসের বিশুদ্ধতা প্রমাাণিত হয় তথা কোন দুর্বল হাদিসও অন্য সূত্রের কারণে সহিহ হয়ে যায় যেমন এ হাদিসে(শবে বরাত বিষয়ে হযরত আয়েশ সিদ্দিকা রা: থেকে বর্ণিত ) হয়েছে। শাইখ কাসেমি তাঁর ‘ইসলাহুল মাসাজিদ’ গ্রন্থের ১০৭ পৃষ্ঠায় হাদিস বিশারদগণের উদ্ধৃতিতে লিখেছেন যে, ‘শবে বরাতের ফযিলত সম্পর্কে কোন সহিহ হাদিস নেই।’ তাঁর এ কথার ওপর আস্থা রাখা উচিত নয়। আর যদি তাঁদের থেকে কেউ এ কথা বলেও ফেলে,তাহলে বুঝতে হবে যে,চিন্তা-ভাবনা ছাড়া অতি তাড়াহুড়া হেতু এবং বর্তমান পদ্ধতির ন্যায় হাদিসের বিভিন্ন সূত্র অন্বেষণের প্রচেষ্টা সীমিত হবার কারণেই এমনটা হয়েছে। তবে তিনি এ রাতে বিশেষ কোন এবাদত করাকে বিদআত বলে উল্লেখ করেছেন এবং কঠোর ভাষায় তার প্রতিবাদ করেছেন। মহান আল্লাহই তাওফিকদাতা।”(নাসিরুদ্দিন আলবানি,‘সিলসিলাতুল আহাদীসিল সহিহা’,দারুল মায়ারিফ,রিয়াদ,খ.৩,পৃ.২১৮ বা সিলসিলায়ে সহাহা, হাদীছ নং- ১১৪৪)

১৪। ইমাম আওযায়ীঃ  এ রাতে মাসজিদে একত্র হয়ে ইবাদাত-বন্দেগী করা মাকরূহ, তবে কেহ ব্যক্তিগতভাবে ইবাদাত-বন্দেগী করলে তাতে দোষের কিছু নেই। এ মত পোষণ করে বর্তমনে আমাদের উপমহাদেশের দেওবন্দ অনুসারী আলেমগন। তারা বলেন এই রাতে ব্যক্তিগতভাবে কিছু ইবাদাত করা যায় কিন্তু সম্মিলিতভাবে ঢাকঢোল পিটিয়ে ইবাদাত করা যাবে না।

১৫। আল কাউসার সম্পাদক মাওলানা আব্দুল মালেকঃ তিনি বলেন, এক শ্রেণীর মানুষ বাড়াবাড়িতে লিপ্ত ছিল। তারা এ রাতটি উপলক্ষে নানা অনুচিত কাজকর্ম এবং রসম-রেওয়াজের অনুগামী হচ্ছিল। উলামায়ে কেরাম সবসময়ই সবের প্রতিবাদ করেছেন এবং এখনো করছেন। ইদানিং আবার এক শ্রেণীর মানুষের মধ্যে ছাড়াছাড়ির প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। তাদের দাবী হল ইসলামে শবে বরাতের কোন ধারণা নেই। এ ব্যাপারে যত রেওয়ায়েত আছে সব মওযু বা যয়ীফ। এসব অনুযায়ী আমল করা এবং শবে বরাতকে বিশেষ কোন ফযীলতপূর্ণ রাত মনে করা শরীয়তের দৃষ্টিতে জায়েয নয়। তারা এসব বক্তব্য সম্বলিত ছোটখাট পুস্তিকা ও লিফলেট তৈরী করে মানুষের মধ্যে বিলি করে।

বাস্তব কথা হল, আগেকার সেই বাড়াবাড়ির পথটিও যেমন সঠিক ছিল না, এখনকার এই ছাড়াছাড়ির মতটিও শুদ্ধ নয়। ইসলাম ভারসাম্যতার দ্বীনএবং এর সকল শিক্ষাই প্রান্তকতা মুক্ত সরল পথের পথ নির্দেশ করে। শবে বরাতের ব্যপারে সঠিক ও ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থান হল, এ রাতের ফযীলত সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। সম্মিলিত কোর রূপ না দিয়ে এবং এই রাত উদযাপনের বিশেষ কোন পন্থা উদ্ভাবন না করে বেশি ইবাদত করাও নির্ভরযোগ্য রেওয়াত দ্বারা প্রমাণিত। এই রাতকে অন্য সব সাধারণ রাতের মতো মনে করা এবং এই রাতের ফযীলতের ব্যাপারে যত হাদীস এসেছে, তার সবগুলোকে মওযু বা যয়ীফ মনে করা ভুল যেমন অনুরূপ এ রাতকে শবে কদরের মত বা তার চেয়েও বেশি ফযীলতপূর্ণ মনে করাও ভিত্তিহীন ধারণা।

               

৩। যারা শবে বরাতে বিপক্ষে কথা বলেছেনঃ

১। শাইখ আবদুল আজিজ আল বাজ রহিমকহুল্লাহঃ

বলেন,  বিশুদ্ধ কথা হল, এ রাতে ব্যক্তিগত ‘আমল সম্পর্কে ইমাম আওযায়ী ও ইবনে রজব (রহঃ) এর মতামত যা উপরে উল্লেখ করা হয়েছে তা তাদের ব্যক্তিগত অভিমত যা সহীহ নয়। আর এটাতো সকল আলেমে দ্বীনের সর্বসম্মত সিদ্ধান যে, শরয়ীভাবে প্রমাণিত নয় তা ব্যক্তিগত হোক বা সমষ্টিগত, প্রকাশ্যে হোক অথবা গোপনে হোক তা কোন মুসলিমের ধর্মীয় ‘আমল হিসাবে পালন করা জায়েয নয়। এ ক্ষেত্রে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণিত নিম্নের হাদীস হল আম তথা ব্যাপক অর্থবোধক। তিনি বলেছেন, যে কেহ এমন ‘আমল করবে যা করতে আমরা (ধর্মীয়ভাবে) নির্দেশ দেইনি তা প্রত্যাখ্যাত। (সহিহ মুসলিম) 

২। ইমাম আবূ বকর আত-তারতূশী (রহঃ) তার কিতাব (الحوادث والبدع) ‘আল-হাওয়াদিছ ওয়াল বিদ’আ’তে উল্লেখ করেনঃ ইবনে ওয়াদ্দাহ যায়েদ বিন আসলাম সূত্রে বর্ণনা করে বলেনঃ আমাদের কোন উস্তাদ বা কোন ফকীহকে মধ্য শাবানের রাতকে কোন রকম গুরুত্ব দিতে দেখিনি। তারা মাকহূলের হাদীসের দিকেও তাকাননি এবং এ রাতকে অন্য রাতের চেয়ে ‘আমলের ক্ষেত্রে মর্যাদা সম্পন্ন মনে করতেন না। 

৩। হাফেয ইরাকী (রহঃ) বলেনঃ মধ্য শাবানের রাতে সালাত আদায় সম্পর্কিত হাদীসগুলো বানোয়াট বা জাল এবং এটা আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি মিথ্যা আরোপের শামিল। এ সম্পর্কে সকল উলামাদের মতামত যদি উল্লেখ করতে যাই তাহলে বিরাট এক গ্রন্থ হয়ে যাবে। তবে সত্যানুরাগীদের জন্য এতটুকুই যথেষ্ট যা ইতোপূর্বে আলোচনা করা হয়েছে।

মন্তব্যঃ উপরের আলোচনা এ কথা ষ্পষ্ট যে, এই রাতের ফজিলত সম্পর্ক প্রায় সকলে একমত কিন্তু আমলের ব্যাপারে অধিকাংশ আলেম দ্বিমত প্রষণ করেন। কারন আমল নির্দিষ্ট করার জন্য কুরআন সুন্নাহ দলীল দরকার, আলেম বা জাহের যে কোন লোকের আহবানে সাড়া দিয় ইবাদাত করাই বিদআত।  কোন বিষয় বিদ‘আত হওয়ার ক্ষেত্রে উলামাদের বক্তব্য যথেষ্ট। কেননা কুরআন ও হাদীসে কোন বিষয়কে নির্দিষ্ট করে বলা হয়নি যে, অমুক কাজটি বিদ‘আত। তাই আলেমগণ যেটাকে বিদ‘আত বলে রায় দিবেন সেটা বিদ‘আতই হবে। বিদ‘আত নির্ধারণের দায়িত্ব আলেমদের। অপর পক্ষে ইবাদাত প্রমানে আলেমদের বক্তব্য যথেষ্ট নয় এ সম্পর্কে কুরআন ও সহিহ হাদিসের দলীল থাকতে হবে। যেমনঃ কেউ যদি কোন কিছুর নিজের বলে দাবি করে তবে তাকে তার মালিকানার পক্ষে দলীল দিতে হবে। আর যদি বলে এই বস্তু আমার নয় তবে তাকে কোন দলীল দিতে হবে না। কাজেই ইসলামী শরীয়ত পরিপূর্ণ বিধায় এখানে আমলের কোন পদ্ধতি আবিস্কারের সুযোগ নেই। যে আমল করা হবে তার দলীল কুরআন ও সহিহ হাদিসের মানদন্ডে উত্তির্ণ হতে হবে।

৪। শবে বরাতের নামে বিদআত ও ভ্রান্ত আকিদাঃ

উপরের আলোচনায় দেখেছি শবে রবাতের রাতে নানা আয়োজনে নানান ইবাদাত করা হয়। এর মাঝে অনেকগুল সুন্নাহ সম্মত নফল ইবাদাত শুধু এই রাতের সাথে সম্পৃক্ত করা জন্য নফল ইবাদাতটি বিদআদ হিসাবে পরিগনিত হয়। আমাদের উপমহাদেশ ইবাদাত বহির্ভূত বিদআত ও করা হয় এবং বিদআতের   পাশাপাশি এই রাত সম্পর্কে অনেকে ভ্রান্ত আকিদা রাখে। শবে বরাতে বহির্ভূত বিদআত ও ভ্রান্ত আকিদা এই দুটি বিষয় সামান্য আলোকপাত করব।

সংকলনেঃ মোহাম্মাদ ইস্রাফিল হোসাইন। (বিএ ইন এ্যারাবিক লিটারেচার, ইসলামিক হিস্টরী এন্ড ইসলামিক স্টাডিস)

Leave a comment