হজ্জের সফরে জন্য বিশেষভাবে কিছু করণীয় কাজ

হজ্জের সফরে জন্য বিশেষভাবে কিছু করণীয় কাজ

সংকলনেঃ মোহাম্মাদ ইস্রাফিল হোসাইন

১। নিয়ত করা পর প্রথম কাজ কার মাধ্যমে হজ্জ করবেনঃ

ক। সরকারী ব্যবস্থাপনায় হজ্জঃ

সাধারণত কারো উপর হজ্জ ফরজ হলে তিনি হজ্জে যাওয়া নিয়ত করেন। নিয়ত করা পর প্রথম কাজ হলো, আপনিভাবে হজ্জের গমন করে মক্কার নগরীতে পৌছাবেন। আপনি নিজে ইচ্ছা করেই হজ্জের যেতে পারবেন না। আপনাকে যে কোন হজ্জ এজেন্সির মাধ্যমে হজ্জে যেতে হবে। বাংলাদেশ থেকে হজ্জে যেতে হলে দুই ধরনের মাধ্যম আছে। এই দুটির যে কোন একটি মাধ্যমকে আপনি বেচে নিতে পারেন। এই দুটি মাধ্যম হলো, সরকারী ব্যবস্থাপনায় এবং প্রাইভেট হজ্জ-এজেন্সির।  আপনি এই ব্যাপারে যারা আগে হজ্জ করেছেন তাদের সাথে পরামর্শ করে সিন্ধান্ত নিন। এখানে আমি দুটি এজেন্সি সম্পর্কে একটু ধারনা দিলাম।

সরকারী ব্যবস্থাপনায় অল্প সংখ্যক লোক হজ্জে গমন করেন। এই ধরুন, মোট হজ্জ যাত্রীর মাত্র ৫% লোক সরকারি ব্যস্থাপনায় যায়। সরকারী ব্যবস্থাপনার আওতায় দুটি ক্যাটাগরি রয়েছে সবুজ ও নীল। এ দুটোর যে কোনো একটার আওতাভুক্ত হয়ে হজ্জের সফর সম্পন্ন করতে পারেন। সবুজ ক্যাটাগরির হাজিদের জন্য মক্কা-মদিনায় প্রায় আধা কিলোমিটার এবং নীল ক্যাটাগরির হাজিদের জন্য এক কিলোমিটার বা তার থেকেও বেশি দূরত্বে বাসা বরাদ্দ করা হয়। দুটি পদ্ধতিতেই প্রাক-নিবন্ধন করতে হবে। কেননা হজ্জে গমন করার ক্ষেত্রে পৃথিবীর সকল দেশের একটি নির্দিষ্ট কোটা আছে। কোন দেশ কত জন হাজি পাঠাতে পারবে সৌদি হজ্জ কর্তৃপক্ষ আগে থেকেই ঐ দেশেকে জানিয় দেয় এবং সেই কোটা অনুসারে ঐ দেশে ঠিক করে কারা কারা হজ্জে গমন করবে। বাংলাদের ইচ্ছা করলেই বেশী হাজি প্রেরণ করেত পারবেনা। কেনানা এই সফরে যারা মক্কা মদীনা থাকবেন তাদের থাকা, খাওয়া, টয়লেট, বাথরুমসহ সকল প্রকারের জরুরী সেবা প্রদান সাপেক্ষে লোক নেয়া হয়। ধারন ক্ষমতার বেশী লোক গমন করলে এই সকল জরুরী থেকে বঞ্চিত হবে। বর্তমান বাংলাদেশর যে পরিমান কোটা থাকে, তার থেকেও অনেক বেশী লোক হজ্জে গমন করতে চায়। কাজেই আমাদের দেশে যত লোক হজ্জে গমন করতে চায়, তাদের সবাইকে হজ্জে যেতে দেয়া হয় না। এই জন্য বাংলাদের হজ্জ মন্ত্রনালয় পক্ষে থেকে যারা হজ্জে যেতে চায় তাদের একটি প্রাক-নিবন্ধন  পদ্ধতি চালু করেছে। যারা হজ্জ যাবেন তাদের সবাইকে এই তালিকাভু্ক্ত হতে হবে। এই তালিকা থেকে সিরিয়াল অনুসারে হজ্জে পাঠান হয়।

সরকারি ব্যবস্থাপনায় হজে গমনেচ্ছুগণ ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার (ইউডিসি), জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, ইসলামিক ফাউন্ডেশন অফিস ও ঢাকা হজ্জ অফিস হতে প্রাক-নিবন্ধনের ডাটা এন্ট্রি সম্পন্ন করে ভাউচার গ্রহণ করতে হয় এবং ব্যাংকে টাকা পরিশোধের পর ব্যাংক থে‌কে সিরিয়াল নম্বরসহ প্রাক-নিবন্ধন সনদ পাওয়া যাবে।

আপনি ইচ্ছা করলেই নিবন্ধ করতে পারবে না। এই জন্য ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রনালয় বছরের একটি নির্দষ্ট সময় ঘোষনা করে যে আগামি এত তারিখ থেকে এত তারিখের মধ্যে এত সালে হজ্জের জন্য নিবন্ধ করেত হবে ঐ তারিখ মতই আপনাকে নিবন্ধ করতে হবে। যদি আপনার সিরিয়াল অনেক পরে আসে আর আপনি চলিত বছর হজ্জে গমন করতে না পারেন তবে আপনার সিরিয়াল নষ্ট হবে না আপনি পরের বছরেও এই সিরিয়াল অনুসারে আগে হজ্জ করার সুযোগ পাবেন।

আপনার সিরিয়াল আসলে ধর্ম-মন্ত্রণালয়ের বেঁধে দেয়া সময় ও নিয়ম অনুযায়ী টাকা জমা দিন। ধর্ম-মন্ত্রণালয় কর্তৃক সরবরাহকৃত ফরম পূরণ করে যে কোনো অনুমোদিত ব্যাংকে টাকা জমা দিয়ে প্রদত্ব রসিদ নিয়ে জেলা প্রশাসকের অফিসে রিপোর্ট করুন। টাকা জমা দেয়ার রসিদ ও অন্যান্য কাগজ পত্র রাখতে হবে যত্ন সহকারে ও তা দেখিয়ে অফিস থেকে বলে দেওয়া সময়ে উপস্থিত হয়ে বিমানের টিকিট ও পিলগ্রিম পাস সংগ্রহ করতে হবে হজ্জ ক্যাম্প থেকে। আপনার জমা দেয়া টাকা যে সব খাতে ব্যয় করা হয় তা হল নিম্নরূপঃ

১. বিমান ভাড়া। ২. এম্বারকেশন ফি। ৩. ভ্রমণ কর। ৪. ইনস্যুরেন্স ও সারচার্জ (ব্যাজ কার্ড, পুস্তিকা, কবজি-বেল্ট, আই,টি সার্ভিস, পিলগ্রিম পাস ইত্যাদি) ৬. মুয়াল্লিম – সৌদি আরবের হজ্জ কনট্রাক্টার ফি ৭. মক্কা ও মদিনা শরীফের বাড়ি ভাড়া ৮. সৌদি আরবে অবস্থানকালীন খাওয়া-দাওয়া ও কোরবানি খরচ যা হাজিদেরকে বাংলাদেশেই ফিরিয়ে দেয়া হয়।

সরকারী ব্যবস্থাপনায় হজ্জ করতে গেলে সুবিধা হলো, আপনার সকল দায়িত্ব হজ্জ বিষায়ক মন্ত্রনালয় বহন করে আপনি যে কেটাগোরিত টাকা জমা দেবেন আশা করা যায় সেই সুযোগ সুবিধাই পাবেন। বিগত বছরগুলোর আলোকে বলা যায়, সরকারী ব্যবস্থাপনায় হজ্জযাত্রী মক্কা মদীনায় মোটামোটি কাছাকাছি রাখে। অপর পক্ষে সৌদি আরবে অবস্থানকালীন খাওয়া-দাওয়া খরচ যা হাজিদেরকে বাংলাদেশেই ফিরিয়ে দেয়া হয় যাব ফলে খুব সহজে বাংলাদেশী হোটেল থেকে চাহিদামত খাবার খাওয়া যায়। যে পরিমান টাকা দেয় তা দিয়ে খাবার খেতে কোনই সমস্যা হয় না।

সরকারী ব্যবস্থাপনায় হজ্জ করতে গেলে অসুবিধা হলো, আপনি যদি একটু চালি না হন তবে বেশ ঝামালায় পড়তে হবে। কেননা অনেক সময় মুয়াল্লিম বা হজ্জের গাইড পাবেন না। তাই নিজের হজ্জের সকল কাজ নিজেকেই করতে হতে পারে। অনেক সময় থাকার রুমটিও নিজেকে খুজে নিতে হয়। যদিও সরকার আপনার জন্য মুয়াল্লিম বা হজ্জের গাইড রেখেছেন। খাবার যেহেতু বাইরে থেকে খেতে হয় তাই একটু বাড়তি কষ্ট করতে হয়। কেননা প্রাইভেট হজ্জ-এজেন্সির মধ্যমে গেলে ওরা আপনার খাবার রুমে পৌছে দেয়।  

খ। বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হজ্জঃ 

বাংলাদেশে শতকরা ৯৫ ভাগ লোক বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হজ্জে গমন করে। আমাদের দেশে ব্যবসা করার জন্য বিভিন্ন ব্যক্তি সরকার থেকে অনুমতি নিয়ে বিভিন্ন ট্রাভেল এজেন্সি মাধ্যমে মুসলিমদের হজ্জে পাঠিয়ে থাকে। এই সকল ট্রাভেল এজেন্সিগুলোকে সরকারই হজ্জে পাঠানোর লাইসেন্স প্রদান করে থাকে। যে সকল ট্রাভেল এজেন্সিদের এই লাইসেন্স আছে সেই সকল ট্রাভেল এজেন্সি হজ্জের জন্য লোক পাঠাতে পারেন। আর এই পদ্ধতিকেই বেসরকারি হজ্জ ব্যবস্থাপনা বলা হয়। আমরা অনেকেই দেখে থাকবো নিজ নিজ এলাকাই বা পার্শ্ববর্তী এলাকায় এমন অনেক লোক আছে যাদেরকে মোয়াল্লেম বলা হয়ে থাকে, যারা আপনাকে হজ্জে নিয়ে যাবার জন্য চেষ্টা করতে থাকে এরাই সাধারনত বেসরকারি ব্যবস্থাপনার মোয়াল্লেম। কারন সাধারনত সরকারি ব্যবস্থাপনার কোন মোয়াল্লেম এই কাজ করে থাকেন না। বেসরকারি হজ্জ ব্যবস্থাপনায় একটা সুবিধা হচ্ছে আপনি নিশ্চিত সহকারে একজন মোয়াল্লেম বা গাইড পাবেন। আর সেইটা আপনার পরিচিত মোয়াল্লেমটিই হোক বা আপনার কাফেলার অন্য কোন মোয়াল্লেমই হোক। এই ছাড়া দ্বিতীয় কোন সুবিধা পাবার আশা মোটেও করবেন না। কারন বেশি আশা করলে সেই আশা অনুযায়ি ভরসা না পাইলে বেশি কষ্ট পাবার সম্ভাবনা থাকে। আপনার থাকার জায়গা হবে দুই রকম। 

প্রথমতো, হয় আপনি মক্কাই যেই জায়গায় প্রথমে উঠবেন সেই জায়গায় শেষ পর্যন্ত থেকে যাবেন। এমন ক্ষেত্রে আপনার থাকার জায়গাটি হবে নিম্ন মানের। যা আপনার সাথে প্রতারনা করা হবে। কারন আপনার কাছে তারাতো টাকা কম নেয় নাই যে, এমন পরিবেশে রাখবে। তারা টাকা ঠিকই নিয়েছে শুধু মাত্র প্রফিট বেশি করার জন্য নিম্নমানের হোটেল বা বাসাতে রাখবে।

দ্বিতীয়তো, আপনি মক্কাই যে জায়গায় প্রথমে উঠবেন মদিনা থেকে আসার পর তা পরিবর্তন হবে। এই পদ্ধতিকে বলা হয় ফেতরা। এই ক্ষেত্রে আপনি প্রথম টার্মে হারাম শরিফের কাছে অবস্থান করলে দ্বিতীয় টার্মে আপনাকে দূরে নিয়ে চলে যাবে। এতটাই দুরে যে হারাম শরিফে এসে নামাজ পড়াটাই হয়তো আপনার হবে না; সহজ্জ কোন ব্যবস্থা না থাকাই। আর প্রথম দিকে নিম্ন পরিবেশে থাকলে পারের দিকে একটু ভাল হটেলে নিবে, অথবা প্রথম দিকে একটু ভাল হটেলে থাকলে পরের টার্মে নিম্ন মানের হটেলে নিবে।

খাবারের মান হবে নিম্ন মানের। আপনাকে যে খাবার দেওয়ার কথা সেই ধরনের খাবার আপনি পাবেন না। হাজীদের কি খাবার পরিবেশন করা হবে তার মেনু অনেক আগেই প্রস্তুত হয়ে থাকে যা আপনি হয়তো জানতেই পারবেন না আপনাদের মেনুতে কি কি খাবার আছে। কারন বেসরকারি মোয়াল্লেম গুলো আপনাকে এই ব্যপারে কিছুই জানাবেনা। বেসরকারি ব্যবস্থাপনার অসুবিধা, সহজ্জ ভাষাই বলতে গেলে বলতে হয় মোয়াল্লেমদের কথার সাথে কাজের কোন মিল নাই।

২। বেসরকার ব্যবস্থাপনায় হজ্জে যেতে তাদের সম্পর্কে জানুনঃ

আমাদের দেশের অধিকাংশ হজ্জ এজেন্সিগুলো তাদের দেয়া সুযোগ সুবিধার কথা ঠিকমত রাখেন না। কাজেই বেসরকারি হজ্জ এজোন্সির মাধ্যম হজ্জে গমন করতে চাইলে আপনানে ঐ হজ্জ এজোন্সি সম্পর্ক আগে ধারনা নিতে হবে। এই জন্য আপনার আত্মীয়-স্বজন বা বন্ধু-বান্ধব যারা আগে হজ্জে গমন করেছেন তাদের পরামর্শ নিবেন। মনে রাখবেন বেসরকারি হজ্জ এজোন্সির ও হাজিদের বিভন্ন ক্যাটাগরি আছে। আপনার শক্তি-সামর্থ্য অনুযায়ী ক্যাটাগরি নির্বাচন করুন। যে সব এজেন্সির সুনাম, দীর্ঘ অভিজ্ঞতা ও সরকারের অনুমোদন রয়েছে সে গুলোর মধ্যে কোনো একটি তালাশ করে বের করুন। তবে নিম্মের বিষয়গুলো ভালো কর জেনেনিনঃ

ক। এজেন্সিকে কত টাকার দিতে হবেঃ

বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হজ্জে যেতে চাইলে প্রথমে আপনি জেনে নিবেন, এজেন্সিকে কত টাকার দিতে হবে। তবে আপনি টাকা কম-বেশির ভিত্তিতে নয়, প্যাকেজের সুবিধাদি দেখে, শুনে, বুঝে চুক্তি করবেন। বিমানভাড়া, বাসাভাড়া, হজ্জেরর সময় মিনায় তাঁবুতে বা অন্য কোন স্থানে থাকা না–থাকা, কুরবানি, ফিতরা ইত্যাদি আগে থেকে জেনে নিতে হবে।

খ। কত দিনের প্যাকেজঃ

হজ্জে গমন করলে আপনাকে কতদিন কোথায় রাখবে, মক্কায় কত দিন, মদীনায় কত দিন, সৌদি আরবে অবস্থানের মেয়াদ কত দিন, এই সকল স্থান আপনাকে কি কি সুযোগ সুবিধা দিন প্রশ্ন করে যেনে নিবেন।


গ। মক্কা মদীনার বাসস্থানঃ

মক্কা-মদিনার যত দিন থাকবেন এই দিনগুলিতে আপনাকে কোন ধরনের বাসায় রাখবে? মসজিদে হারমা থেকে আপনাকে কত দুরে রাখা হবে? এই সকল বিষয় ষ্পষ্টভাবে জেনে নিবেন।  কারন অনেকে কাছে রাখার কথা বলে ঠিকই কিন্তু হজ্জে গমনের পর আর কথামত স্থানে রাখে না।

ঘ। খাবারঃ

অনেক হজ্জ এজোন্সি আপনাকে দৈনিক তিন বেলা খাবার দিবে না। সকালের নাস্তা অনেক হজ্জ এজোন্সি দেয় না। অনেক সময় হাজ্জিগণ ফরজ সালাত থেকে আসতে দেরী করে বিধায় সকলকে এক সাথে খাবার পৌছাতে ঝামেলা হয় বিধায হজ্জ এজোন্সি এই সিন্ধান্ত নেয়। কাজেই আপানি হজ্জ এজোন্সি জিজ্ঞাসা করুন যে, সৌদি আরবে পৌঁছে তিন বেলা খাবার দেওয়া হবে কি না? যদি না দেয় তবে খাবারের বিকল্প ব্যবস্থা কী? তা জানতে হবে। মিনায় বা আরাফাতের ময়দানে অনেক হজ্জ এজোন্সি খাবার সঠিকভাবে পৌছাতে পারে না। এই বিষয়গুলো জিজ্ঞাসা করে ক্লিয়ার করে নিবেন।

ঙ। কুরবানিঃ

বাংলাদেশে প্রায় শতভাগ হাজ্জিই তামাত্তু হজ্জ করে থাকন। তাই আমাদের সবার উপর কুরবানি করা ওয়াজিব হয় থাকে। প্রথম পছন্দ হলো, নিজে হাজির থেকে কুরবানী করা। কিন্তু অধিকাংশের পক্ষে সম্বব হয় না। দ্বিতীয় অপসন হলো, প্রতারণা এড়াতে ইসলামি উন্নয়ন ব্যাংক বা আইডিবির কুপন কিনে দেওয়া ভালো। কিন্তু অনেক ভাই মোয়াল্লেম এর মাধ্যমে কুরবানী প্রদান করে, প্রতারণার শিকার হয়। তাই বিষয়টি আগে পরিস্কার করে নিবেন যে, কুরবানির টাকা কি হজ্জের প্যাকের অন্তরভূক্ত ? নাকি কুরবানির টাকা নিজেকে দিতে হবে।?


চ। হজ্জের সময় ফিতরা করেঃ

সরকার ঘোষিত হজ্জ প্যাকেজের চেয়ে কম টাকায় হজ্জে গেলে প্রতারিত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। অনেক হজ্জ এজোন্সি সরকার নির্ধারিত টাকার চেয়ে কম নেয়। কম টাকা নেয়ার প্রধান কারন তারা মক্কার কম টাকায় বাড়িভাড়া করে। হামার থেকে থাকার স্থান যত দুরে তার ভাড়াও কম। তাই অনেক হজ্জ এজোন্সি হাজিদের প্রথম দিকে মক্কা নিয়ে যায় এবং কাবার খুবই নিকটে রাখে। হজ্জের ১০/১২ দিন আগে মদীনা নিয়ে যায়। হজ্জের দিন ঘনিয়ে এলে, আবার মক্কার ফিরিয়ে নিয়ে আসে। হজ্জের সকল কার্যক্রম শেষ করার পর কাবা থেকে ৪০/৫০ মাইল দুর রাখে। এভাবে মক্কার থাকার স্থান একবার কাবার নিকটে, আবার একবার কাবার দুরে থাকে। এমন কি এই কাজটি তারা একাধিকবারও করে থাকে। এই স্থানান্তর করা কে ফিতরা বলে। কাজেই হজ্জ এজোন্সি সাথে কথা বলার সময় জেনেনিন আপনাকে ফিতরা করাবে কিনা। ফিতরা করালে আগে না পরে।

ছ। হজ্জের দিনগুলোঃ

হজ্জের দিনগুলো হল ৮ জিলহজ্জ থেকে ১৩ হজ্জ। এই ৬ দিন হাজ্জিগন মিনা, আরাফা ও মিজদালিফায় কাটায়। এই সময় হজ্জ এজোন্সিগগুলো ইচ্ছা থাকা সত্বেও আপনার চাহিদামত সুযোগ সুবিধা দিতে পারে না। টয়লেট, বাথরুমের থাকার স্থানের পাশাপাশী খাবারের ও সংকট থাকে কারন এই সকল স্থানে রান্না করার কোন সিস্টেম নাই। এই সময় অবিজ্ঞ হজ্জ এজোন্সি ছাড়া অনেকেই খাবার সঠিক সময় প্রদান করতে পারেনা। এ বিষয়টিও আপনি আলোচনায় অন্তরভুক্ত করে নিতে পারেন। কোন কারনে সমস্যা হলে আপনার সবর করা সহজ্জ হবে।

জ। হজ্জ এজোন্সির নিবন্ধ আছে কিনা যাচাই করুনঃ

ইন্টার নেট সার্স দিলেই আপনি জানতে পারবেন হজ্জ এজোন্সির সরকারি নিবন্ধ আছে কিনা। সরকারি নিবন্ধ নাই এমন কোন হজ্জ এজোন্সি কে কখনও টাকা দিবেন না। খরচের হিসাব এবং কী-কী সুবিধা আপনি তাদের কাছ থেকে পাবেন, এ ব্যাপারে মৌখিক নয়, বরং লিখিত চুক্তি করুন। অতীত অভিজ্ঞতা থেকে বলা যায়, চুক্তি করেন আর যাই করেন না কেন, হাতেগোনা কিছু এজেন্সি ছাড়া বাকি সকলের কর্তৃক ঘোষিত সুযোগ সুবিধা থেকে আপনি খুব করুণভাবে বঞ্চিত হবেন।

ঝ। ভাল মুয়াল্লিম আছে কিনা?

হজ্জের জন্য আমার নিকটি এই বিষয়টি উপরের প্রত্যকটি বিষয় থেকে গুরুত্বপূর্ণ। আমি হজ্জে গমনের পর থাকা খাওয়া একটু কষ্ট হলেও মেনে নেয়া যায় কিন্তু এত কষ্টের পরও যদি শুনতে পান হজ্জের অনেক আমলই সঠিকভাবে করা হয় নাই। যদি একজন সহিহ আকিদার আলেমের সাথে হজ্জ করতে পারেন তবে আপনার হজ্জটি মাবরুর হওয়ার সম্ভাবনা শতভাগ। অপর পক্ষে একজন বিদআতি মুয়াল্লিমের সাথে হজ্জ করলে আপনার আমলটি ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার সম্ভাবনাও শতভাগ। হজ্জ এজেন্সীর মালিক কেমন? এটি আপনাকে জানতে হবে। কেননা, তিনি তার মতাদর্শী আলেমকেই মুয়াল্লিম হিসাবে নিয়োগ বিবেন। কাজেই হজ্জ এজেন্সী পছন্দ করার ক্ষেত্র মালিকের আকিদা বিশ্বাস সম্পর্ক আগে ভালভাবে জেনে নিন। তিনি যদি সহিহ আকিদায বিশ্বাসি হন তবে তিনি সহিহ আকিদার মুয়াল্লিমই নিয়োগ দিবেন। আর সহিহ আকিদার মুয়াল্লিম মানে আপনার হজ্জে সঠিকভাবে সম্পন্না করা পথে। এর পাশাপাশি আপনার চেষ্টা থাকবে,  সহিহ আকিদার হক্কানি আলেম বা নেককার ও অভিজ্ঞ ব্যক্তির সফর-সঙ্গী হওয়া। এরফলে আপনার হজ্জ ও উমরা পালনসহ সহজ্জ হবে। বিশেষ করে ভুলভ্রান্তি থেকে বেঁচে-থাকা সম্ভব হবে বলে আশা করা যায়।

৪। প্রাক নিবন্ধের পর কাজঃ

প্রাক নিবন্ধের করেছেন যার অর্থ হচ্ছে আপনি এখান হজ্জে যাওযার জন্য সম্পূর্ণভাবে প্রস্তত। এখন আর কোন কাজ আধাআধা করা যাবে। সকল প্রয়োজনীয় কার পাকাপাকি করে করতে হবে। কোন কাজে কোন প্রকার সিথিলতা প্রদর্শণ করা যাবে না। প্রাক নিবন্ধের পর নিম্মের কাজগুলো খুবই গুরুত্ব দিয়ে করেত হবে।

৫। পাসপোর্ট তৈরি করাঃ

রাষ্ট্রের নাগরিক হিসেবে আপনার পাসপোর্ট একটি গুরুত্বপূর্ন দলিলঃ। জাতীয় পরিচয়পত্রের মতো পাসপোর্টও প্রমাণ করে যে আপনি বাংলাদেশের নাগরিক। দেশে মধ্যে জাতীয় পরিচয় পত্রই যথেষ্ট কিন্তু বিদেশে পাসপোর্টে ছাড়া চলবে না। কাজেই হজ্জে যাইতে চাইলে আপনাকে অবশ্য পাসপোর্ট লাগবে। এটি হজ্জে যাওয়ার জন্য আপনার অপরিহার্য অনুষঙ্গ। আবেদন ফরম করতে নিম্মর ধাপের কাজগুলো করতে হবে।

ক. আবেদন ফরস সংগ্রহঃ

পাসপোর্ট করতে চাইলে প্রথমে আপনাকে আবেদন ফরস সংগ্রহ করতে হবে। পাসপোর্ট অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয়, আঞ্চলিক কার্যালয়, বিভাগীয় কার্যালয় এবং জেলা কার্যালয় থেকে সংগ্রহ করা যায়। তাছাড়া ইন্টারনেট থেকেও আবেদন ফরম ডাউনলোড করে প্রিন্ট করা যায়।

খ. ব্যাংকে টাকা জমা দেয়াঃ

ফরম পূরণের আগেই টাকা জমা দিতে হবে কারণ অনলাইনে আবেদন ফরমে ঐ ব্যাংকের রিসিট নম্বর এবং ফি জমা দেয়ার তারিখ সংযুক্ত করতে হবে। ব্যাংকে পাসপোর্ট ফি জমা দেয়ার জন্য আপনাকে সশরীরে ব্যাংকে যেতে হবে। বাংলাদেশের পাসপোর্ট অফিস কর্তৃক নির্ধারিত ব্যাংকের শাখাতে আপনি পাসপোর্টের ফি জমা দিতে পারবেন। যেসব ব্যাংকে টাকা জমা দিতে পারবেন সেগুলো হলোঃ সোনালী ব্যাংক, ঢাকা ব্যাংক, ব্যাংক এশিয়া, প্রিমিয়ার ব্যাংক, ওয়ান ব্যাংক ও ট্রাস্ট ব্যাংক। রেগুলার পাসপোর্ট সাধারণত এক মাসের মধ্যে পাওয়া যায়। এর জন্য ফি একটু কম আর ইমার্জেন্সি বা আর্জেন্ট পাসপোর্ট পাওয়া যায় ৭/১০ দিনের মধ্যে। এর জন্য ফি প্রায় দ্বিগুন।

গ. ফরম পূরণঃ

আবেদন ফরস সংগ্রহ এবং ব্যাংকে টাকা জমা করার পর নিজে আথবা আপনার আত্মীয়-স্বজন বা বন্ধু-বান্ধবদের মাধ্যমে ফিলাপ করে নিবেন। এখন ঘরে বসেই অনলাইনে পাসপোর্টের আবেদন ফরম পূরণ করা যায়। তাই আর ফরমের জন্য লম্বা লাইনে দাঁড়ানোর প্রয়োজন হয় না আর দালালের খপ্পরে পরতে হয় না। তাই অনলাইনে আবেদন ফরম পূরণ করাই বুদ্ধিমানের কাজ। তবে মনে রাখবেন, আপনার অনলাইনে সাবমিট করা ফরমের তথ্য ১৫ দিন ডাটাবেজে সংরক্ষিত থাকবে। তাই অবশ্যই অনলাইনে ফরম পূরণের ১৫ দিনের মধ্যে তা পাসপোর্ট অফিসে জমা দিতে যেতে হবে।

ঘ. ফরম জমা দেয়ার পূর্ববর্তী কাজ

এবার আপনাকে পূরণকৃত ফরমটি পাসপোর্ট অফিসে জমা দিতে হবে। তার আগে ফরম গোছাতে হবে। এই জন্য প্রথমে আপনার পূরণ করা অংশ ছাড়াও কিছু স্থানে আপনার স্বাক্ষর দিতে বলা আছে সেখানে আপনার স্বাক্ষর দিন এবং ফরমের সাথে জমা দানের জন্য নিম্মর সকল কাগজপত্র রেডি করতে হবে।

১. সত্যায়িত চার কপি রঙিন পাসপোর্ট সাইজ ছবি (৫৫×৪৫ মি.মি.)।  ছবি অবশ্যই সদ্য তোলা হতে হবে এবং সাদা পোশাক, টুপি ও সানগ্লাস পরে ছবি তোলা যাবে না।

২. জাতীয় পরিচয়পত্র অথবা জন্ম সনদপত্রের সত্যায়িত ফটোকপি লাগবে।

৩. চেয়ারম্যান/ ওয়ার্ড কমিশনার প্রদত্ত সনদ/ ভোটার আইডি কার্ড (জাতীয় পরিচয়পত্রের বিকল্পস্বরূপ) এবং বিদ্যুৎ/গ্যাস/পানির বিল/ বাড়ির দলিলের ফটোকপি ইত্যাদি।

৪. বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীর ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান প্রদত্ত প্রত্যয়নপত্র/ পরিচয়পত্র।

৫. ছাত্র/ছাত্রীদের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান প্রদত্ত প্রত্যয়ন পত্র/ পরিচয়পত্র দাখিল করতে হবে।

৬. অফিসিয়াল পাসপোর্টের ক্ষেত্রে প্রাসঙ্গিক জিও (GO)/ এনওসি(NOC) দাখিল করতে হবে।

৭. ব্যাংকের টাকা জমা দেয়ার রশিদটি

ঙ. ফরম জমাদান

ফরম জমা দেয়ার নির্ধারিত দিন পাসপোর্ট অফিসে খুব সকাল সকাল যাওয়াই উত্তম কারণ অনেক ভীড় হয়ে থাকে। সরাসরি আপনার ফরম সাথে নিয়ে উপস্থিত সেনা সদস্যকে জানান আজ আপনার ছবি তোলার দিন নির্ধারিত আছে। তিনি আপনাকে দেখিয়ে দিবে কোথায় ফরম সহ আপনাকে যেতে হবে। অবশ্যই সাদা পোশাক পরবেন না, ফরমাল পোশাক পরিধান করে যাবেন। সেদিন আপনার ছবি তোলা, আঙ্গুলের ছাপ বা ফিঙ্গারপ্রিন্ট নেয়া ইত্যাদি কাজ করা হবে। তার মধ্যে একটি হচ্ছে পুলিশ ভেরিফিকেশন। যদি আপনার স্থায়ী আর বর্তমান ঠিকানা আলাদা হয়, তবে দুই জায়গাতেই পুলিশ ভেরিফিকেশান হয়ে থাকে।

চ. পাসপোর্ট সংগ্রহঃ

প্রোসেসিং চলার মাঝেই আপনার কাজ হয়ে গেলে মোবাইলে একটি মেসেজ আসবে বাংলাদেশ পাসপোর্ট অফিস থেকে। এটি আপনার পাসপোর্ট বুঝে নেয়ার তারিখ। আপনি নির্ধারিত সময়ে গিয়ে পাসপোর্টটি বুঝে নিয়ে আসুন। পাসপোর্ট সংগ্রহের পর আপনার পাসপোর্ট ভেরিফাইড হয়েছে কি না অন লাইলে যাচাই করুন।

আর্থিক প্রস্ততিঃ

ইবাদতের কবুলের প্রথম ও প্রধান শর্ত হলো, হালাল পন্থায় উপার্জন। সহিহ হাদিস দ্বারা প্রমানিত যে, হারাম উপর্জনের অর্থে হজ্জ করতে গেলে তা আল্লাহর কাছে কবুল করবেন না। হারাম উপার্চজিত টাকায় হজ্জে গিয়ে ‘লাববাইক’ বললে আল্লাহ তার লাববাইক প্রত্যাখ্যান করেবেন।

আবূ হুরাইরাহ্‌ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, হে লোক সকল! আল্লাহ তা’আলা পবিত্র। তিনি পবিত্র জিনিস ব্যতীত কিছু ক্ববূল করেন না। আল্লাহ তাঁর রাসূলদেরকে যেসব বিষয়ের হুকুম দিয়েছেন, মু’মিনদেরকেও সেসব বিষয়ের হুকুম দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, “হে রাসূলগণ! তোমরা পবিত্র বস্তু হতে আহার কর এবং সৎকাজ কর। তোমরা যা কর সে সম্বন্ধে আমি সবিশেষ অবগত”। (সূরা মুমিনূন-৫১)। তিনি আরো বলেন, “হে মুমিনগণ! তোমাদেরকে আমি যে রিযিক্ব দিয়েছি তা হতে পবিত্র বস্তু আহার কর”।(সূরা বাক্বারা-১৭২)। বর্ণনাকারী বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম এক ব্যক্তির কথা উল্লেখ করলেন, দীর্ঘ সফরের ক্লান্তিতে যার মাথার চুল বিক্ষিপ্ত, অবিন্যস্ত এবং সারা শরীর ধূলি মলিন। সে আসমানের দিকে হাত দরায করে বলে, হে আমার প্রভু! হে আমার প্রতিপালক! অথচ তার খাদ্য ও পানীয় হারাম, তার পোশাক হারাম, তার জীবন জীবিকাও হারাম। এমতাবস্থায় তার দু’আ কিভাবে ক্ববূল হতে পারে। (তিরমিজি ২৯৮৯)

এই কারনে হজ্জে গমন করার নিয়ত করেছেন তো রিজকের প্রতি লক্ষ রাখুন। হালাল রুজি-রোজগারের মাধ্যমে নিজের ও পরিজনের প্রয়োজন মেটানো ও সম্পূর্ণ হালাল রিজিক-সম্পদ থেকে পাই-পাই করে একত্রিত করা। যদি হালাল রিজিক উপার্জন করে হজে যাওয়ার মতো টাকা জোগাড় করতে না পারেন তবে আপনার ওপর হজ্জ ফরজ হবে না। হজে আপনাকে যেতেই হবে, কথা এ রকম নয়। বরং পরিবারের জরুরি প্রয়োজন মিটিয়ে হজ্জে যাওয়ার খরচা হাতে আসলে তবেই কেবল হজ্জ ফরজ হয়। তাই কখনো হারাম পয়সায় হজ্জ করার পরিকল্পনা করবেন না। যদি এমন হয় যে আপনার সমগ্র সম্পদই হারাম, তাহলে আপনি তাওবা করুন। হারাম পথ বর্জন করে হালাল পথে সম্পদ উপার্জন শুরু করুন। আর কোনো দিন হারাম পথে যাবেন না বলে প্রতিজ্ঞা করুন। এক পর্যায়ে যখন প্রয়োজনীয় হালাল পয়সা জোগাড় হবে কেবল তখনই হজ্জ করার নিয়ত করুন।

হালাল পন্থায় উপার্জিত অর্থ দ্বারাই হজ্জে গমনের জন্য আপনি নিবন্ধ করবেন। আপনার কষ্টে অর্জিত হালাল টাকা সব সময় আপনার হাতে রাখতে হবে এবং হজ্জ এজেন্সীর চুক্তি মাফিক পরিশোধ করুন। যদি মনে করে থাকেন, হজ্জের দেরী আছে কাজেই টাকাটা একটু খাটিয়ে রাখি তা হলে আপনার প্রয়োজন টাকা নাও পেতে পারেন। হজ্জের টাকার গচ্ছিত থাকলে কোন প্রকার চিস্তা থাকবেনা। ব্যবসায় খাটালে বা ধার দিলে হজ্জের সময়ের দিকে খেয়াল রাখুন। অনেক সময় হজ্জ এজেন্সী এক সাথে টাকা নেয়। তাই আপনি টাকাগুলো গচ্ছিত না রাখলে পেরেশানিতে পড়তে পারেন। আর যখন হজ্জ এজেন্সীকে টাকা দিবেন তখন পাকা রসিদ ব্যতীত টাকার দিবেন না। কেবল বিশ্বাসের উপর টাকা দিয়ে এর আগে অনেক হজ্জযাত্রী প্রতারিত হয়েছেন।

হজ্জ এজেন্সির টাকা পরিশোধের পরও আপনার নিকট অতিরিক্ত ৩০/৪০ হাজার রাখতে হবে। সমর্থ থাকলে আরও বেশী টাকা সঙ্গে নিয়ে যাবেন। হজ্জের সফরের সময় এই টাকার অর্ধেটা রিয়াল এর মাধ্যমে পরিবর্তন করে নিবেন। প্রয়োজনে মক্কা ও মদীনাতেও টাকা পরিবর্তন করে রিয়াল করা যায়। এই টাকার আপনি আপনার প্রয়োজনের সময় ব্যয় করতে পারবেন। যেমন, কোনো ভুলের কারণে ক্ষতিপূরণ হিসেবে দম ওয়াজিব হয়ে গেলে হাদি কিনতে টাকা লাগবে, সহযাত্রী হাজিদের আপ্যায়ন করতে টাকার লাগবে, কোন অভাবী হাজিদেরকে সাহায্য করতে টাকা লাগবে, দেশে কারো জন্য যদি কিছু হাদিয়া তোহপা কিনতে টাকার প্রয়োজন হবে। কোন কারনে ক্ষুধা-পিপাসা পেলে কার্পণ্য না করে প্রয়োজনীয় খাবার গ্রহণ করতেও টাকা লাগবে।

হজ্জ সম্পর্কিত জ্ঞান অর্জনঃ

হজ্জ মহান আল্লাহ নির্দেশিত একটি ফরজ ইবাদাত। আল্লাহ প্রদত্ত প্রতিটি ইবাতেরই সুনির্দিষ্ট কিছু নিয়ম পদ্ধতি থাকে। এই নিয়ম পদ্ধতিগুলিও মহান আল্লাহ প্রদত্ত। আল্লাহ প্রদত্ত ও রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দেখান পদ্ধতিতেই হজ্জের আমল করতে হয়। এই সুনির্দিষ্ট নিয়ম পদ্ধতি বাহিরে কোন আমল করলে হজ্জ হবে না। বরং মনগড়া নতুন ইবাতদের মধ্য বিদআদের সম্পৃক্ততা থাকে বিধায় রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সকল মনগড় আমল প্রত্যাখাত করতে বলেছেন। কাজেই হজ্জে গমনের পূর্বে আপনাকে হজ্জ সম্পর্কিত জ্ঞান অর্জন করতে হবে। তিনটি পদ্ধতিতে জ্ঞান অর্জন করতে পারেন।

ক। অন্যদের জিজ্ঞাসা করেঃ

কোন বিষয় নিজে না জানলে অন্যকে জিজ্ঞাসা করে জানার মধ্যে কোন লজ্জা নাই। ইসলমি শরীয়তের ক্ষেত্র এই কাজটি ফরজ। অর্থাৎ কোন আমল সম্পর্কে জ্ঞান না থাকলে সেই বিষয় জ্ঞান অর্জন করা ফরজ। মহান আল্লাহ বলেন,

** فَاسْأَلُواْ أَهْلَ الذِّكْرِ إِن كُنتُمْ لاَ تَعْلَمُونَ

অর্থঃ অতএব জ্ঞানীদেরকে জিজ্ঞেস কর, যদি তোমাদের জানা না থাকে। (সুরা নাহল ১৬:৪৩)

যে সকল মুসলিমভাই আগে হজ্জ করেছেন তাদের নিকট থেকে বাস্তব জ্ঞান অর্জন করা যায়। তারা হজ্জে গমনের সময় কি কি সমস্যায় পতিত হয়েছেন। তাদের থাকা খাওয়া সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করা যায়। তারাই বলতে পারবেন, কি ভাবে ইবাদাত করলে হজ্জের মৌসুমটি কাজে লাগান যাবে। মক্কা, মদীনা, মিনা, আরাফা ও মুজদালিফায় কি কি আমল, কখন কিভাবে আদায় করা যায়। কোন কাজটি হজ্জের জন্য ফরজ, কোন কাজটি হজ্জের জন্য ওয়াজিব, কোন কাজটি হজ্জের সুন্নাহ এই সকল বিষয় তাদের নিকট থেকে হজ্জে গমনের আগেই জেনে নিতে হবে। এমনকি কোন কাজটি করলে হজ্জ বাতিল হয়ে যাবে বা কোন কাজটি করলে কাফ্ফারা হিসাবে দম দিতে হবে। এই সকল বিষয় হজ্জে অভিজ্ঞ মুসলিম ভাইদের নিকট থেকে শিখতে হবে। তাছাড়া নিজ মহল্লাহ সমজিদের ইমাম যদি শিক্ষতি আলেম হয় তবে তার নিকটও প্রশ্ন করে হজ্জের বিভন্ন মাসয়ালা মাসায়েল শিখে নেয়া যায়।

খ। সরাসরি হজ্জ সংক্রান্ত বই পড়েঃ

যারা মোটামুটি শিক্ষিত তাদের জন্য এই কাজটি খুবই সহজ্জ। কেননা বর্তমানে হজ্জের উপর বহু গ্রন্থ লেখা হয়েছে। যে কোন বইয়ের দোকানে গেলেই ইচ্ছামত ভালো ভালো আলেমদের গ্রন্থ ক্রয় করে পড়া যায়। তবে গ্রন্থ ক্রয়ের আগে একটু খোজ খবর নিতে হবে। বাজারে ফাজায়েলে হজ্জের মত সহিহ, জাল ও যঈফ মিশ্রিত গ্রন্থও আছে। যাদের এ্যান্ডোয়েড মোবাইল আছে তারা একটু খোজখবর নিয়ে সঠিক হজ্জ সংক্রান্ত এ্যাপ ডাউনলোড করতে পারেন। আবার বিভিন্ন ওয়েব সাইডে বহু বিশুদ্ধ হজ্জ সংক্রান্ত গ্রন্থ আছে।  এই সকল বই ডাউনলোড করেও পড়তে পারেন। মোট কথা হজ্জের প্রাক নিবন্ধ করে আর বসে থাকবেন না। সারাদিন কাজের ফাঁকে ফাঁকে হজ্জ সংক্রান্ত বই পড়েতে থাকবেন। দেখবেন কয়েক মাসের মধ্যেই আপনি হজ্জের প্রায় সকল নিয়ম কানুন আয়ত্য করতে পেরেছেন।

মন্তব্যঃ হজ্জের উপর অনেক প্রচলিত বই আছে যা গতানুগাতিভাবে লেখা। এই সকল বই না পড়াই ভালো। বই পড়ার আগে বাচাই করুন কোন কোন আলেমের লেখা বই বড়বেন। যে সকল বইয়ে কুরআন সু্ন্নাহ দলিল প্রমানসহ লিখেছেন, পড়ার ক্ষেত্রে তাদের বই অগ্রাধিকার দিবেন। 

গ। হজ্জ প্রশিক্ষনে অংশ গ্রহন করেঃ

বর্তমানে অনেক বিজ্ঞ আলেম মহান আল্লাহকে খুসি করার জন্য হজ্জ প্রশিক্ষনের ব্যবস্থা করছেন। তারা ৩/৭ দিন ব্যাপি প্রশিক্ষন দিয়ে থাকেন। অনকে আবার প্রতি শুক্রবার প্রশিক্ষন দিয়ে থাকেন। তারা হজ্জের কার্যক্রম হাতে কলমে শিক্ষা দিয়ে থাকেন। এই সকল প্রশিক্ষনে অংশগ্রহন করলে আশা করা যায় হজ্জ সম্পর্কে ভাল একটি আইডিয়া হবে যাবে। অনেক সময় স্থানীয় মসজিদের ইমামগনও নিজ উদ্দেগ্যে হজ্জযাত্রীদের জন্য প্রশিক্ষনের আয়োজন করে থাকে। এই সকল প্রশিক্ষন অংশ গ্রহন করে হজ্জ সম্পর্কিত জ্ঞান অর্জন করা উচিত।

ইহাছাড়া, সরকারি ব্যবস্থাপনায় হজ্জযাত্রীদের জন্য ইসলামিক ফাউন্ডেশনের আঞ্চলিক কার্যালয়সমূহে সুবিধা মত সময়ে প্রশিক্ষণের আয়োজন করা হয়। দ্বিতীয় পর্যায়ে হজ্জ যাত্রার ৩ দিন পূর্বে হজ্জ ক্যাম্পে অবস্থানের সময় প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়। বেসরকারি হজ্জ এজেন্সিগুলোর কোনো-কোনোটা ব্যক্তিগত উদ্যোগে সৌদি আরব গমনের পূর্বেই একদিন ব্যাপী প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে থাকে। এসব প্রশিক্ষণ কার্যক্রমে মনোযোগের সাথে অংশগ্রহণ করা উচিৎ।

৬। স্বাস্থ্য পরীক্ষা করাঃ

হজ্জের মৌসুমে প্রতিটি জেলায় সিভিল সার্জনের নেতৃত্বে মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়। সিটি কর্পোরেশন এলাকাতেও বিশেষ বিশেষ হাসপালকে এই বোর্ড গঠনের দায়িত্ব দিয়ে থাকেন। এই মেডিকেল বোর্ডের মাধ্যমেই সরকার বিনামূল্যে স্বাস্থ্য পরীক্ষার ব্যবস্থা করে থাকেন। স্বাস্থ্য পরীক্ষার পাশাপাশি এই বোর্ড কর্তৃক মেনিনজাইটিস প্রতিরোধক টিকা প্রদান করে থাকেন। এই টিক নেয়া প্রত্যেক হজ্জযাত্রীর জন্য বাধ্যতামূলক। কেননা এই টিকা ছাড়া মেডিকেল সার্টিফিকেটের প্রদান করা হয় না। স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও টিকা নিয়ে এ বোর্ড থেকে আপনাকে মেডিকেল সার্টিফিকেট সংগ্রহ করতে হবে। জেলা পর্যায়ে এ কাজটি সম্পূর্ণ করা সম্ভব না হলে পরবর্তীতে ঢাকায় হজ্জ ক্যাম্পে এসে সম্পূর্ণ করবেন। এই মেডিকেল সার্টিফিকেট ব্যতীত হজ্জে যাওয়া সম্ভব হবে না।

৭। পুলিশের ছাড়পত্রঃ

সরকারী ব্যবস্থাপনার হোক আর বেসরকারী ব্যবস্থাপনায় কোন সকল প্রকারের হাজিদের জন্য পুলিশের ছাড়পত্র লাগবে। পুলিশ ছাড়পত্র না পেলে আপনাকে ইমিগ্রেশন পুলিশ দেশ ত্যাগ করতে দিবে না। কেননা, বিচাধীন কোন  আসামিকে হজ্জের জন্য ছাড়পত্র প্রদান করা হয় না। এই লক্ষে হজ্জ কর্তৃপক্ষ জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের নিকট ছাড়পত্রের জন্য হজ্জযাত্রীদের তালিকা প্রেরণ করেন। পুলিশ কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় কার্যক্রম সেরে হজ্জ কর্তৃপক্ষকে ছাড়পত্র সরবরাহের ব্যবস্থা গ্রহন করে থাকেন।

হজ্জযাত্রা করার পূর্বে করণীয়

১। হজ্জ ক্যাম্পে আসাঃ

সরকারী ব্যবস্থাপনায় হজ্জ গমনের ক্ষেত্রে হজ্জ অফিস বা যথাযথ কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করে আপনার ফ্লাইট সিডিউল জেনে নিন। কবে কখন হজ্জ ক্যাম্পে আসতে হবে জেনে সেভাবে নিজেকে প্রস্তত রাখু্ন। বেসরকারী ব্যবস্থাপনায় হজ্জ গমনের ক্ষেত্রে একটু সহজ্জ। আপনি যে লোকের মাধ্যমে হজ্জের যাবতিয় কার্যক্রম সম্পন্ন করেছেন তার সাথে সার্বক্ষনিক যোগাযোগ রাখবেন। তিনি যে দিন যেভাবে আপনাকে হজ্জ ক্যাম্প আসতে বলবেন ঠিক সেভাবেই আসবেন।

২। দেনা পাওনা পরিশোধ করাঃ

মহান আল্লাহই জানেন সফর থেকে ফিরে আসতে পারব কিনা। এই জন্য সফরের আগে সকল প্রকারের দেয়া পাওনা পরিশোধ করে দেয়া। পাওনা পরিশোধের পর যদি সফরের খরচ চালানোর মত টাকা পয়সা না থাকে তবে তার উপর হজ্জ ফরজ নয়। কাজেই হজ্জে যাওয়ার আগেই আপনাকে পাওনা পরিশোধ করে দিতে হবে।  তবে আপনি যদি বড়ো ব্যবসায়ী হন, ঋণ করা যার নিত্যদিনের অভ্যাস বা প্রয়োজন, তাহলে আপনার গোটা ঋণের ব্যাপারে একটা আলাদা অসিয়ত নামা তৈরি করুন। আপনার ওয়ারিশ বা উত্তরাধিকার যারা হবেন তাদেরকে এ বিষয়ে দায়িত্ব অর্পণ করে যান।

আবূ উমামা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে আমি তাঁর বিদায় হাজ্জের বক্তৃতায় বলতে শুনেছিঃ ধার করা বস্তু ফেরত দিতে হবে, যামিনদার পাওনা পরিশোধকরার দায় বহন করবে এবং ঋণ পরিশোধ করতে হবে। (সুনানে তিরমিজ ১২৬৫, ইবনু মাজাহ ২৩৯৮)

আবূ হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ ঋণ পরিশোধ করার ক্ষেত্রে সক্ষম ব্যক্তির টালবাহানা করা অন্যায়। তোমাদের কারো পাওনা পরিশোধকরার জন্য ঋণগ্রস্থ ব্যক্তি কোন সক্ষম ব্যক্তির উপর দায়িত্ব দিলে তা অনুমোদন করা উচিত।(সুনানে তিরমিজ ১২৬৫, ইবনু মাজাহ ২৪০৩)

মন্তব্যঃ হজ্জের সফরের সব কিছু করা হয়েছে, এখন আর হজ্জের সফর বাতিল করা সম্বব নয়। আবার পাওনা পরিশোধের মত সম্পদও নেই। এই ক্ষেত্রে হজ্জে যাওয়ার আগে দেনা-পাওনা বিষয়ে একটি অসিয়তনামা লিখে যেতে হবে এবং উক্ত অসিয়তনামায় একজনকে সাক্ষী হিসেবে রাখতে হবে।

৩। আমানত থাকলে তা পৌছে দিতে হবেঃ

আপনার কাছে কেউ কোনো জিনিস আমানত রেখে থাকলে তা মালিকের কাছে পৌঁছিয়ে দিতে হবে। যে কোন কারনে আপনার সফর দেরী হতে পারে, সফরে মারা যেতে পারেন তাই আমানতকারীদের সকল প্রকার আমানাত বুঝিতে দিতে হবে।

আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কেউ তোমার কাছে আমানাত রাখলে তা তাকে ফেরত দাও। যে ব্যক্তি তোমার সাথে খিয়ানাত করেছে তুমি তার সাথে খিয়ানাত করো না। (আবু দাউদ ৩৫৩৫, তিরমিজি ১২৬৪)

আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, মুনাফিকের আলামত তিনটি, কথা বলতে গেলে মিথ্যা বলে, আমানত রাখলে খিয়ানত করে, আর ওয়াদা করলে তা ভঙ্গ করে। (সহিহ বুখারি ২৬৮২)

৪। দ্বীন ও দুনিয়ার সম্পর্কে অসিয়াত করাঃ

হজ্জে যাওয়ার আগে দ্বীন ও দুনিয়ার সম্পর্কে অসিয়াত করে সফরে যাওয়া একটি মুস্তাহাব আমল। আপনার অনুপস্থিতে আপনার সম্পদ, ব্যবসা, জমিজমা, টাকা পয়সা কিভাবে খরচ করবে তার জন্য আপনার ছেলে, মেয়ে এবং অধিনাস্ত কর্মচারীদের ভালো করে উপদেশ দিয়ে বুঝিয়ে যায়। শুধু দুনিয়ার ব্যাপারে নয় দ্বীন সম্পর্কেও ছেলে-সন্তান, পরিবার পরিজনকে তাকওয়া পরহেজগারির ব্যাপারে বুঝান এবং তাদের মেনে চলতে অসিয়ত করুন। তারা যেন আপনার অনুপস্থিতিতে আরো বেশি একাগ্রতা নিয়ে দ্বীন-ধর্ম মেনে চলতে পারে এবং কোনো প্রকার পাপ কর্মের ধারে কাছেও না যায়। খারাপ লোকদের সাথে না মিলামিসা না করে। সালাত আদায়ের ব্যাপারে সতেষ্ট থাকে।

৫। সাবার কাছ থেকে বিদায় নিতে হবেঃ

হজ্জে সফরের আগে পাড়া-প্রতিবেশী, বন্ধু-বান্ধব, পরিবার-পরিজন, আলেম-ওলামা ও আত্মীয় স্বজনদের কাছ থেকে বলে-কয়ে বিদায় নেয়া মুস্তাহাব। যাদের কাছ থেকে বিদায় নিবে তাদের নিকট সফর আরাম দায়ক হওয়ার জন্য দোয়া চাবেন। তাদেরও উচিত আপনার সফরের সাফাল্য কামনা করে দোয়া করা।

আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বিদায় দিয়ে বলেন, আমি তোমাকে আল্লাহর আমানতে সোপর্দ করলাম, যাঁর নিকট সোপর্দকৃত জিনিস ধ্বংস হয় না। (ইবনে মাজাহ ২৮২৫)

প্রয়োজনীয় কাজগপত্র একত্র করাঃ

যে সকল কাগজপত্র এত দিন আপনি অনেক কষ্ট বা শ্রম করে সংগ্রহ কবছেন হজ্জে গমনের পূর্বে এই সকল প্রয়োজনীয় কাজগপত্র একত্র করে একটি ছোট ব্যাগে রাখুন। কমপক্ষে নিম্মের কাগজপত্রগুলি ব্যাগে করে সবসময় সঙ্গে রাখাবেন।

ক। আপনার পাসপোর্ট

খ। মেডিকের সার্টিফিকেট

গ। বিমানের টিকেট (যদি পেয়ে থাকেন)

ঘ। কিছু সৌদি মুদ্রা/রিয়াল (সাথে বাংলাদেশী টাকা)

ঙ। টাকা জমা দানের রশীদ 

ব্যক্তিগত জিনিসপত্রঃ

সফরের সময় আপনার ব্যক্তিগত প্রয়োজনে অনেক কিছু নিতে হবে। আপনি প্রতিদিন যে সকল জিনিসপত্র ব্যবহার করেন তা আপনাকে সঙ্গে করে নিত হবে। একজন মানুষের অনেক কিছুই লাগে। আপনার প্রয়োজনি সবকিছুই আপনি নিতে পারবেনা। তবে যা না হলে আপনার চলতে খুবই কষ্ট হবে তা কিন্তু নিতেই হবে। এই হিসেবে নিম্ম লিখিত ব্যক্তিগত জিনিসপত্র আপনার সাথে নিতে হবে।

১. কাগজপত্রের ব্যাগ। (পরিচয়পত্র, পাসপোর্ট, টিকিট, ডকুমেন্ট ইত্যাদি)

২. পুরুষের জন্য ইহরামের কাপড় (কমপক্ষে ২ সেট)

৩. নারীদের জন্য ইহরামের কাপড় নাই তবে ঢিলেঢালা সিলাই যুক্ত ফরমাল পোশাক (৪ সেট)

৪. কমপক্ষে ০২ জোড়া ফিতাওয়ালা নরমাল স্যান্ডেল

৫. গামছা/তোয়ালে, লুঙ্গী, গেঞ্জী, পায়জামা, পাঞ্জাবী, সার্ট ইত্যাদি নিতে হবে (কমপক্ষে ২ সেট)

৬. সাবান, টুথপেস্ট, ব্রাশ, মিশওয়াক, নেইল কাটার, সুঁই-সুতা, নোটবুক, কলম ইত্যাদি নিতে হবে

৭. থালা, বাটি, গ্লাস ইত্যাদি

৮. একটি এ্যান্ডোয়েট মোবাইল ফোন নিতে হবে

৯. নরমাল মোবাইল ফোন হলে হজ্জ সংক্রান্ত বই বা কিছু ইসলিম বই নেয়া জেতে পারে

১০. প্রয়োজনীয় ঔষধ পত্র (ব্যবস্থাপত্রসহ) এবং অন্তত দুইটি চশমা নিতে হবে (যাদের আইভিষণ আছে)

১১. নারীদের জন্য বোরখা নিতে হবে (০২ টি)

১২. মালপত্র নেওয়ার জন্য একটি ব্যাগ (এজেন্সী দিবে) এবং অন্য একটি ছোট হাত ব্যাগ নিতে হবে

১৩. ইহরাম পরার কাজে ব্যবহারের জন্য প্রয়োজন হলে কটি বন্ধনী (বেল্ট)

১৪. কোমর বন্দী বেল্ট  পাসপোর্ট ও টাকা পয়সা সাথে রাখার জন্য

১৫. একটি টুকরা পরিত্র মাটির চাকা (প্রয়োজনে তাইয়ামুম করা জন্য)

১৬· বাংলাদেশি টাকা (দেশে ফেরার পর বিমানবন্দর থেকে বাড়ি ফেরার জন্য)

মন্তব্যঃ ইহার বাহিরে আপনার কোন জিনিস থাকলে সংযোগ করতে পারেন। আবার যদি মনে করেন এখান থেকে কোন জিনিস বাদ দিবেন দিতে পারেন। জিনিসের সংখ্যাও কমবেশী করেত পারেন। এটা একটা ধারনা মাত্র।

২.৫.৮। হজের সময় যেসব পরিহার করবেন

১. টিনের ট্রাঙ্ক, ভারী স্যুটকেস, ভারী কম্বল ও পানির বালতি ইত্যাদি সাথে নেওয়া ঠিক হবে না।

২. ক্যাসেট অথবা সিডি সঙ্গে নিবেন না। কারণ, এর জন্য ইমিগ্রেশন চেক করতে পারে।

৩. পচনশীল অথবা গলে যেতে পারে এমন খাবার নিবেন না। যেমন- ফল, চকলেট, দুধ ইত্যাদি।

৪. পুরুষরা সিগারেট, স্বর্ণের আংটি, স্বর্ণের চেইন (সবই হারাম) সঙ্গে নিবেন না।

৫. মহিলারা ভারী অলঙ্কার সঙ্গে নিবেন না।

৬. শরীরে তাবিজ, কবজ ও ফিতা ইত্যাদি বাঁধা থাকলে তা খুলে ফেলে শির্ক মুক্ত হয়ে যান। কারণ শির্ক ইবাদত কবুল হওয়ার অন্তরায়!

৭. সঙ্গে ক্যামেরা, ভিডিও ক্যামেরা সাথে না নেওয়া ভালো। কারণ, এতে আপনার ইবাদতের মনসংযোগ নষ্ট হবে।

৮. নখ কাটার মেশিন, সুই-সুতা, কেঁচি, চাকু ইত্যাদি সব সময় মেইন বড় লাগেজে রাখবেন।

২.৬। হজ্জের জন্য সফর শুরু

হজ্জের সফরের আপনার রুট হবে। বাড়ি থেকে প্রথমে ঢাকার আশকোনা হজ্জ ক্যাম্পে আসবেন। এখানে ৩/৪ দিন থাকার পর শাহজালাল এয়ার পোর্ট হয়ে জেদ্দা বিমান বন্দন সৌদি আবর জেতে হবে। বর্তমান সিলেট ও বন্দর নগরী চট্রগাম থেকেও সরাসরি হজ্জ ফ্লাইট চালু করা হয়েছে। তাই সকল হাজ্জিকে এখন আর ঢাকা আসতে হবে না। জেদ্দা থেকে অধিকাংশ হাজিকে মক্কা নিয়ে যাওয়া হয়। আবার কিছু হাজিকে সরাসরি মক্কা না এনে, মদীনা হয়ে মক্কা আনা হয়।

ঢাকায় হজ্জ ক্যাম্পে করণীয়ঃ

হজ্জ অফিস সাথে যোগাযোগ রাখবের। তারা আপনাকে একটি অনুমতিপত্রে পাঠাবে যাতে হজ্জ ক্যাম্পে হাজির হওয়ার নির্ধারিত তারিখ থাকবে। তাদের দেয়া তারিখ মোতাবেগ সকাল ১০টার মধ্যে হজ্জ ক্যাম্পে গিয়ে রিপোর্ট করবেন। বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হজ্জযাত্রীগন এজেন্সির পরামর্শ অনুযায়ী হজ্জ ক্যাম্পে হাজির হবেন। এখানে সাধারনত তিন দিন থাকতে হয়। কিন্তু ফ্লাইট সিডিউলের কারনে অনেক সময় কমবেশী হবে পারে। আবরা যাদের বাসা ঢাকা শহরে তারা এক দিন আগে আসলেও হয়। তবে এ সম্পর্ক এজেন্সির সাথে কথা বলে নিতে হবে। কেননা অনেক এখান এসেই হজ্জের প্রয়োজনীয় বিষয় ব্রীফ করে থাকে। অনেক সময় হজ্জ ক্যাম্পে দুই একদিন  আগেপিছে আসতে হয়। এই সংবাদ হজ্জ এজেন্সি বা হজ্জ অফিসের আপনাকে জানিয়ে দিবে। হজ্জ ক্যাম্পে রিপোর্ট করার সময় সরকারী ব্যবস্থাপনার হাজি হোক আর বেসরকারি হাজ্জি হোক সবাই পূর্বের দেয়া পরামর্শ মোতাবেগ কাগজপত্র এ ব্যক্তিগত জিনিসপত্র নিয়ে আসবের। তবে হজ্জ অফিস বা হজ্জ এজেন্সি যদি অতিরিক্ত কোন কিছু আনতে বলে তার প্রতিও খেয়ার রাখবেন। সবসময় এজেন্সির পরামর্শ অনুযায়ী জিনিসপত্র সঙ্গে আনতে হবে।

হজ্জ ক্যাম্প ডরমিটরিতে শুধুমাত্র হজ্জযাত্রীদের অনুমতি দেয়া হয়। তাই আত্মীয় স্বজন সাথে আনা উচিৎ নয়। তবে নীচ তলায় আত্মীয় স্বজনগণ তাদের হজ্জযাত্রীকে নানাবিধ দাপ্তরিক কাজে সহায়তা দিতে পারেন। হজ্জ ক্যাম্পে পান খাওয়া বা ধূমপান করা নিষিদ্ধ। প্রয়োজনীয় খাবার সরবরাহের জন্য রয়েছে ৩ টি ক্যান্টিন যা খোলা থাকে রাত দিন ২৪ ঘণ্টা। তাই বাইরে থেকে খাবার নিয়ে আসার কোনো প্রয়োজন নেই। টিকিট, পিলগ্রিম পাস, বৈদেশিক মুদ্রা ও অন্যান্য কাগজপত্র খুবই যত্নের সহিত সংরক্ষণ করবেন। এ গুলো হারিয়ে গেলে হজে যাওয়া সম্ভব হবে না। মালামাল বহনের জন্য যে লাগেজ বহন করবেন তার গায়ে নাম, পিলগ্রিম পাস নং ও ঠিকানা লিখে নেবেন। যদি দেখেন, আপনি কোন জিনিস আনতে ভুলে গেছেন অবথা আপনার কোন জিনিক কম আনা হয়েছে হজ্জ ক্যাম্পের নিচ থেকে এই জিনিসগুলো কিনে নিতে পাবেন। যারা প্রয়োজনীর জিনিস যোগাড় করেত পারেন নাই তারাও এখান থেকে প্রয়োজনীয় জিনির সংগ্রহ করতে পারেন।

এখানে আসার পর আপনার পাসপোর্টের ফটোকপি নিয়ে একটি সৌদি আবরের সিম ফ্রিদেন আপনি সিমটি সংগ্রহ করে একটিভেট করার সিস্টেম জেনে নিন। আর আপনার সিমের নাম্বারটি নিজের আত্মিয় স্বজনদের জানিয়ে দিবেন। যাতে করে আপনি সৌদি আরবে কোন কারনে যোগাযোগ করতে না পারলে তারাই  আপনার সাথে যোগাযোগ করে নিতে পারে।   

২.৬.২। সফর শুরুর আগে একজন আমির নির্বাচন করাঃ

সফরে সকলে মিলে একজনকে আমির নির্ধারণ করা মুস্তাহাব। এতে করে যে কোন বিষয়ে সহজে সিদ্ধান্তে পৌঁছা যায়, এবং ঐক্য সুদৃঢ় হয়।

১. আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ তিন ব্যক্তি একত্রে সফর কলে তারা যেন নিজেদের মধ্য থেকে একজনকে আমীর বানায়।(আবু দাইদ ২৬০৮)

২. আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ তিন ব্যক্তি একত্রে সফর করলে তারা যেন তাদের একজনকে আমীর নিযুক্ত করে। নাফি‘ (রহঃ) আবূ সালামাহকে বললেন, তাহলে আপনি আমাদের নেতা। (আবু দাইদ ২৬০৯)

২.৬.৩। হজ্জ ক্যাম্প থেকে প্রস্থানঃ

আপনি আগেই জেনেছেন আপনার ফ্লাইট কবে এবং কখন। সেই অনুসারে আপনি আগে থেকেই হজ্জ ক্যাম্প হাজির আছেন। নির্ধারিত তারিখে আপনার মুয়াল্লিম আপনাকে নিয়ে কমপক্ষে চার ঘন্টা আগে বিমান বন্দের মধ্যে ঢুকে যাবে। কেননা, আপনাকে বিভিন্ন নিয়মের মধ্য দিয়ে যেতে হব আর এতে কিছু সময়ও লাগবে। বিমান বন্দরের উদ্দেশ্যে বের হওয়ার আগে প্রয়োজনীয় সব কাগজপত্র এবং আপনার ব্যাগ নিয়েছেন কিনা দেখে নিন। যেমন, ছোট ব্যাগ যাতে পাসপোর্ট, ভ্রমণ সংক্রান্ত কাগজপত্র, ভিসা ইত্যাদি রাখা এবং লাগেজ বা বড় ব্যাগ যাতে সব প্রয়োজনীয় জিনিস পত্র। এরপর মোয়াল্লিমের কথা মত সবকিছু নিয়ে হজ্জ ক্যাম্প থেকে নির্দিষ্ট বাসে করে বিমান বন্দের দিকে জেতে হবে। আপনার ভ্রমন সম্পর্কে কিছু তথ্যঃ

হতেপর্যন্তদূরত্ব (আনুমানিক)সময় (আনুমানিক)
ঢাকা বিমানবন্দরজেদ্দা বিমানবন্দর৩২৫৩ মাইল/৫২৩৪ কি.মি৬-৭ ঘণ্টা (বিমানে)
জেদ্দা বিমান বন্দরমক্কা৫৫ মাইল/৯০ কি.মি১-২ ঘণ্টা (বাসে)
জেদ্দা বিমানবন্দরমদীনা২৮০ মাইল/৪৫০ কি.মি৬-৭ ঘণ্টা (বাসে)
মক্কামদীনা৩০৫ মাইল/৪৯০ কি.মি৭-৮ ঘণ্টা (বাসে)
মক্কাআরাফা১৪ মাইল/২২ কি.মি
মক্কামিনা৫ মাইল/৮কি.মি১-২ ঘণ্টা (বাসে)
মিনাআরাফা৯ মাইল/১৪ কি.মি২-৩ ঘণ্টা (বাসে)
আরাফামুযদালিফা৮ মাইল/১৩ কি.মি২-৩ ঘণ্টা (বাসে)
মুযদালিফামিনা১.৬ মাইল/২.৫ কি.মি১-২ ঘণ্টা (বাসে)
ভ্রমণের রুটভারত, আরব সাগর, মাস্কট/দুবাই হয়ে সৌদি আরব।
সময়ের ব্যবধানতিন ঘণ্টা (ঢাকায় সকাল ৯টা, মক্কায় তখন সকাল ৬টা)
সৌদি ফোন কোড+৯৬৬XXXXXXXX (আমাদের যেমন +৮৮০XXXXXX)

২.৬.৪। বিমান বন্দরে করণীয়ঃ

বিমানে উঠার আগে বিমান বন্দরে কিছু ফর্মালিটি অনুসরণ করতে হয়। বিষয়গুলি শুধু হজ্জের জন্য প্রযোজ্য নয়, সকল নতুন যাত্রী যারা বিমানে প্রথম ভ্রমন করছেন তাদের সকলের জন্যই প্রযোজ্য। যারা হজ্জে গমন করেন তাদের অধিকাংশই প্রথম বিমানে ভ্রমন। বিমান ভ্রমন সম্পর্ক অনেকের সাধারণও নাই। তাই বিষয়টি একটু আলোকপাত করছি।

ক। বিমান বন্দরে চেক ইনঃ

বিমান বন্দর টার্মিনালে ঢোকার পর আপনাকে প্রথমেই চেক ইন করতে যেতে হবে। এখান প্রথম ধাপে আপনাকে একটি মেটাল ডিটেকটর মেসিনের মধ্য দিয়া যেতে হবে। আর আপনার সকল লাগেজ বা ব্যাগগুলো একটি স্কান মেসিনের মাধ্যমে স্কান করা হবে। এই স্কানের উদ্দেশ্য হলো, আপনার কাছে বা আপনার লাগেজের মধ্য কোন প্রকার বিপদজনক বস্তু নাই।

খ। লাগেজ মজাদানঃ

আপনার বড় ব্যাগ যাতে আপনি আপনার সকল জিনিস রেখেছেন তা আপনার সাথে রাখতে পারবেন না। এই বড় ব্যাগটি জমা দিতে হবে। আপনার ফ্লাইট খুলে দেয়ার পরই আপনি এটা করতে পারবেন। টার্মিনালের মনিটর এবং বোর্ডের দিকে খেয়াল রাখুন। আপনাকে আপনার টিকেট, পরিচয়পত্র, ভ্রমণ সংক্রান্ত কাগজপত্র দেখাতে হবে। এখানে আপনি আপনার লাগেজ জমা দেবেন। চেক ইন অফিসার আপনাকে বোর্ডিং পাস এবং লাগেজের জন্য একটি কার্ড দেবেন। আপনি বডিং পাশ ও লাগেস কার্ড যত্ম করে রাখবেন হারালে বীপদ আছে। বডিং পাশের সাহায্যে আপনি ডিপার্চার লাউঞ্জে (যেখান থেকে বিমান উঠান হবে) ঢুকতে পারবেন। আর লাগেস কার্ডের সাহায্য আপনি জেদ্দায় নিজের লাগেজ বা ব্যাগ খুজে পাবেন।

গ। ইমিগ্রেশন পুলিক কর্তৃক চেকঃ

আপনি যেহেতু দেশের বাইরে যাচ্ছেন তাই আপনাকে ইমিগ্রেশন তথ্য চেক করা হবে। আপনিকি বৈধভাবে না অবৈধভাবে যাচ্ছে তা চেক করাই ইমিগ্রেশন অফিসারের কাজ। ইমিগ্রেশন অফিসারের চেক করার পূর্বে ভ্রমন সংক্রান্ত এক পৃষ্ঠার একটি ফরম ফিরাপ করতে হবে। ফরম ফিলাপ করে লা্‌ইলে দাড়ান এক একজন করে তার নিকট যেতে হবে। আপনাকে সবরকম ডকুমেন্ট দেখাতে হবে এখানে। পাসপোর্ট, ভিসা, ভ্রমণ সংক্রান্ত তথ্য ইত্যাদি। ইমিগ্রেশন পুলিম আপনার আঙ্গুলের ছাপ ও চোখের আইরিস নিবেন। সবকিছু ঠিক থাকলে আপনাকে ফ্লাইটের জন্য অপেক্ষা করেত হবে। আর যদি কোনকিছু সন্দেহজ্জনক মনে হলে তারা আপনার ফ্লাইট বাতিল করতে পারে। এখানে বিভিন্ন ধরনের দোকান আছে আপনি ইচ্ছামত সময় কাটাতে থাকুন আর খেয়াল রাখুন কখন আপনার ডাক আসে। আপনার ফ্লাইটেন রুট, নম্বর  এবং কত নম্বর গেট দিয়ে বডিংএ ঢুকবেন তা কয়েকবার মাইকিং করে জানিয়ে দিবে। এই সকল তথ্য আবার টিবির মত স্কিনেও দেখান হয়। যা হোক চোককান খোলা রাখুন।

ঘ। বোর্ডিং

বোর্ডিং কার্ড দেখে আপনাকে এবার ডিপার্চার লাউঞ্জে (যেখান থেকে বিমান উঠান হবে) ঢোকান হবে। আপনার বডিং পাশের একটি অংশ কেটে রাখা হবে। এখানে আবার আপনাকে এবং আপনার ছোট ব্যাগ যা আপনি সাথে রেখেছেন তা স্কান করা হবে। আগে চেক থেকে এখানে আরও একটু কড়াকড়ি চেক করা হবে। যদি আপনার নিকট পানিজাতীয় কিছু, টুথপেষ্ট, ছুরি, কেচি, নেইল কাটার, সুই ইত্যাদি থাকে তবে তা আর নিতে দেয়া হবে না। এখানে রেখে দেয়া হবে। আপনার ব্যক্তিগত মোবাইল ফোন, জ্যাকেট, ল্যাপটপ নিতে দিবে। তবে এই সকল বস্তু বাইরে রেখে আপনাকে চেক করা হবে। সবকিছু ঠিক থাকলে সিকিউরিটি অফিসার আপনার হ্যান্ডব্যাগ এবং বোর্ডিং পাসে স্ট্যাম্প দেবেন।

ঙ। বিমানে উঠার পরঃ

ডিপার্চার লাউঞ্জে অপেক্ষা করতে থাকুন। কিছু সময় পরই আপনাদের বলা হবে বিমান রেডি আপনারা আসুন। সাধারনত বিমান এনে ডিপার্চার লাউঞ্জে সাথে লাগিয় দেয়া হয়। ডিপার্চার লাউঞ্জের গেটি খুলেই বিমান উঠা যায়। কিন্তু বিমান যদি ডিপার্চার লাউঞ্জ থেকে দুরে থাকে তবে বাসে করে যেয়ে উঠতে হয়। বিমান উঠার পর আপনার সবগুলো ঝামেলার কাজই শেষ। এখন আর কোন চিন্তা নেই। আপনার সীটে বসে পড়ুন। বোর্ডিং পাসে সীট নাম্বার দেয়া থাকে। অনেক ছোট এয়ারলাইন্সে হয়ত সীট নাম্বার নাও দেয়া থাকতে পারে। সেক্ষেত্রে আপনি যেকোন সীটে বসতে পারেন। তবে মহিলা এবং বৃদ্ধদের জন্য সীট আছে কিনা খেয়াল করবেন। সব যাত্রীরা প্রবেশ করলে প্লেনের দরজা বন্ধ করে দেওয়া হবে। প্লেন টেক-অফ করার আগে কিছু সতর্কতা মূলক নির্দেশনা দেয়া হবে। দুশ্চিন্তা করবেন না। টেক-অফ করতে কিছুটা সময় লাগতে পারে, শব্দও বাড়তে পারে। এধরণের শব্দ হয় সীট বেল্ট এলার্ম বা স্মোকিং এলার্ম হিসেবে। সীটবেল্ট সিগন্যাল যখন দেখা যাবে তখন দাঁড়ানো যাবে না। প্লেন যখন একটি নির্দিষ্ট উচ্চতায় উঠে যাবে তখন এই সিগন্যাল বন্ধ করে দেয়া হবে। এরপর আপনি ফ্রেশ হতে উঠতে পারবেন বা খাবার খেতে যেতে পারবেন। বিমানের ভিতরে আপনাকে হালকা খাবার দেয়া হবে। বিমানের ভিতরে জরুরী প্রয়োজনে টয়লেট আছে কিন্তু পানির পরিবর্তে টিসু পেপার ব্যবহার করতে হবে। বিমান উঠার আগেই অজু করে নিবেন। কিন্তু অজু ভেঙ্গে গেলে তাইয়্যামুম করে নিতে হবে। কোন কিছু বুঝতে সমস্যা হলে আপনার মুয়াল্লিমকে বলুন। বিমানের ভিতরে অনুমানের ভিত্তিতে কোন কাজ করবেন না। যা জানুন তাই করুন।।।

২.৬.৫। । ল্যান্ড করার পরঃ

আস্তে আস্তে বিমান জেদ্দার দিকে এগিয় যাবে। বিমান অপতরনের সময় আপনি টের পাবেন যে বিমান নিচের দিকে যাচ্ছে। বিমানের চাকা রানওয়ে স্পর্শ করলে শব্দ বাড়তে থাকে আর গতি ধীর হতে থাকে। বিমান অনেক সময় ল্যান্ড করা পরও টার্মিনালে যেতে সময় নয়। কেননা জেদ্দা বিশার বিমান বন্দর। বিমান থামার সাথেই দাঁড়িয়ে যাবেন না। আপনাকে সিট বেল্ট খোলার নির্দেশনা দেওয়ার আগ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।

কোন তথ্যের জন্য তথ্যকেন্দ্র রয়েছে। তারা আপনাকে সহযোগিতা করবেন।

জেদ্দা বিমান বন্দরে বিমান থেকে বিশ্রাম কক্ষে গিয়ে অপেক্ষা করুন। ইমিগ্রেশন অফিসে আপনাকে আপনার পাসপোর্ট দেখাতে বলবেন। এখানেও আপনার আঙ্গুলে ছাপ ও আইরিস নেয়া হবে। বিমান বন্দরে যে বিশ্রাম কক্ষ হতে বহির্গমন বিভাগে গিয়ে পিলগ্রিম পাসে সিলমোহর লাগাতে হবে। এখানে আপনাকে লাইন বেঁধে বসতে হবে। পিলগ্রিম পাসে সিল লাগানো সম্পূর্ণ হলে আপনার ব্যাগ সংগ্রহ করবেন। ব্যাগ মেশিনে স্ক্যান করিয়ে মূল বিল্ডিং থেকে বের হয়ে যাবেন। বের হওয়ার গেটেই ট্রান্সপোর্ট কর্তৃপক্ষ আপনার কাছ থেকে ব্যাগ নিয়ে নেবে যা আপনি জায়গা মতো পেয়ে যাবেন।

একটু সামনে এগোলে কিছু অফিসার দেখতে পাবেন। তারা আপনার পিলগ্রিম পাসে বাসের টিকিট লাগিয়ে দেবে। কোনো একটি টিকিট অব্যবহৃত থেকে গেলে তার পয়সা দেশে আসার সময় ফেরত পাবেন যা জেদ্দা বিমান বন্দর থেকে সংগ্রহ করে নিতে হবে।

বাংলাদেশের পতাকা টানানো জায়গায় গিয়ে পাসপোর্টে মুয়াল্লিমের স্টিকার লাগাবেন। এরপর বাসে ওঠার জন্য লাইন ধরে দাঁড়াবেন। আপনার মাল-সামানা গাড়িতে ওঠানো হল কি-না সে ব্যাপারে নিশ্চিত হয়ে নিন। বাসে ওঠার পর ড্রাইভার হজ্জ যাত্রীদের পিলগ্রিম পাস (পাসপোর্ট) নিয়ে নেবেন, এবং মক্কায় পৌঁছে হজ্জ কন্ট্রাক্টর কাছে সেগুলো হস্তান্তর করবেন।

২.৬.৬। মক্কায় পৌছে করণীয়ঃ

জেদ্দা থেকে গাড়ি সরাসরি মক্কা যাবে। বাস থেকে নেমে প্রথমে নিজের মাল-সামানা সংগ্রহ করে নেবেন। মাল-সামানা নিয়ে সরকার অথবা এজেন্সির ভাড়া-করা বাসায় আপনার জন্য নির্দিষ্ট করেদেয়া কক্ষে গিয়ে উঠবেন। প্রথমে মক্কায় এসে থাকলে গোসল করে খাওয়া দাওয়া সেরে সামান্য বিশ্রাম নিয়ে উমরা আদায়ের প্রস্ত্ততি নিন। সরকারি ব্যবস্থাপনার আওতাধীন হলে আপনার ফ্ল্যাটে অথবা আপনার নাগালের মধ্যে কোনো আলেম আছেন কিনা তা জেনে নিন। আলেম না পেলে হজ্জ উমরা বিষয়ে যাকে বেশি জ্ঞানসম্পন্ন মনে হবে তার নেতৃত্বে উমরা করার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হবেন। যাওয়ার পথে কিছু জিনিসকে আলামত হিসাবে নির্ধারণ করবেন যাতে হারিয়ে গেলে সহজেই আপনার বাসা খুজে বের করতে পারেন। আলেম অথবা নেতা নির্ধারণের সময় হকপন্থী কিনা, তা ভালো করে যাচাই করে নেবেন। অন্যথায় আপনার উমরা নষ্ট হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে।

মক্কায় পৌঁছার পর মুয়াল্লিম অফিস থেকে দেয়া বেল্ট সবসময় সঙ্গে রাখবেন। এ বেল্টে মুয়াল্লিম অফিসের নম্বর লেখা আছে, যা আপনি হারিয়ে গেলে কাজে লাগবে। ঘর হতে বাইরে যাওয়ার সময় বেশি টাকা পয়সা সঙ্গে রাখবেন না। কেননা ভিড়ের মধ্যে হারিয়ে যেতে পারে অথবা পকেটমারের পালায় পড়তে পারেন। আর সবসময় দলবদ্ধ হয়ে চলার চেষ্টা করবেন। একা কখনো ঘরের বাইরে যাবেন না যতক্ষণ না আপনার বাসার লোকেশন ভালভাবে আয়ত্ব করতে না পারেন।

রোদের মধ্যে বাইরে বেশি ঘোরা-ফেরা করবেন না। প্রচুর ফলের রস ও পানি পান করবেন। প্রয়োজনে লবণ মিশিয়ে পান করবেন। অনেকেই একের পর এক উমরা করে অসুস্থ হয়ে পড়েন। এ ধরনের কাজ থেকে বিরত থাকবেন। শারীরিক অসুস্থতা অনুভব করলে বাংলাদেশ হজ্জ মিশনের ডাক্তার অথবা সৌদি সরকার কর্তৃক স্থাপিত চিকিৎসাকেন্দ্রসমূহে গিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাপত্র ও ওষুধ সংগ্রহ করবেন। এ ব্যাপারে কোন অলসতা করা উচিৎ হবে না। কেননা হজ্জের কার্যক্রম অসুস্থ শরীর নিয়ে সম্পন্ন করা খুবই কঠিন। হজ্জ এজেন্সি বা মুয়াল্লিমের সাথে কোনো সমস্যা দেখা দিলে আলোচনার মাধ্যমে ঠান্ডা মাথায় সমাধানের চেষ্টা করবেন। বাংলাদেশ হজ্জ মিশনের কর্মকর্তাদের সাহায্যও নিতে পারেন, যদি প্রয়োজন মনে করেন।

২.৬.৭। কিছু যোগাযোগের ঠিকানা জেনে রাখুনঃ

১। ঢাকা বাংলাদেশ হজ্জ অফিস

ঠিকানা: হজ্জ অফিস, আশকোনা, এয়ারপোর্ট, ঢাকা।

ফোন: ডিরেক্টর (৮৯৫৮৪৬২), সহকারী হজ্জ অফিসার (৭৯১২৩৯১), স্বাস্থ্য (৭৯১২১৩২)

আইটি হেল্প: ৭৯১২১২৫, ০১৯২৯৯৯৪৫৫৫

২। জেদ্দায় বাংলাদেশি দূতাবাস

যোগাযোগের ঠিকানা: গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের কনস্যুলেট জেনারেল

পিও বক্স-৩১০৮৫, জেদ্দাহ ২১৪৯৭, সৌদি আরব।

অবস্থান: ৩ কিলোমিটার, পুরাতন মক্কা রোডের কাছে (মিতশুবিশি কার অফিসের পেছনে) নাজলাহ, পশ্চিম জেদ্দা, সৌদি আরব।

ফোন: ৬৮৭ ৮৪৬৫ (পিএবিএক্স)

৩। জেদ্দায় বাংলাদেশ হজ্জ মিশন

লোকেশন: জেদ্দা ইর্ন্টারনেশনাল এয়ারপোর্ট (বাংলাদেশ প্লাজার নিকটবর্তী)।

ফোন: +৯৬৬-২-৬৮৭৬৯০৮। ফ্যাক্স:০০-৯৬৬-২-৬৮৮১৭৮০।

আইটি হেল্প: +৯৬৬৫৬২৬৬৩৪৬৭।

ই-মেইল: jeddah@hajj.gov.bd

৪। মক্কায় বাংলাদেশ হজ্জ মিশন

লোকেশন: ইবরাহীম খলীল রোড, মিসফালাহ মার্কেট ও গ্রিনল্যান্ড পার্কের সামনে।

ফোন: +৯৬৬-২-৫৪১৩৯৮০,৫৪১৩৯৮১। ফ্যাক্স:০০-৯৬৬-২-৫৪১৩৯৮২

আইটি হেল্প: +৯৬৬৫৬২৬৫৪৬৬৪।

ই-মেইল: makkah@hajj.gov.bd

৫। মদীনায় বাংলাদেশ হজ্জ মিশন:

লোকেশন: কিং ফাহাদ রোড জংশন ও এয়ারপোর্ট।

ফোন: +৯৬৬-০৪-৮৬৬৭২২০।

আইটি হেল্প: +৯৬৬৫৬২৬৫৪৩৭৬।

ই-মেইল: madinah@hajj.gov.bd

৬। মিনায় বাংলাদেশ হজ্জ মিশন:

লোকেশন: ২৫/০৬২ সু-কুল আরব রোড ৬২, ৫৬, জাওয়হারাত রোডের সামান্তরালে।

সংকলনেঃ মোহাম্মাদ ইস্রাফিল হোসাইন। (বিএ ইন আরবি সাহিত্য ও ইসলাম শিক্ষা)

One thought on “হজ্জের সফরে জন্য বিশেষভাবে কিছু করণীয় কাজ

Leave a comment