সালাত কেন্দ্রিক বিদআত ও মতবিরোধ : পঞ্চম কিস্তি

সালাত কেন্দ্রিক বিদআত ও মতবিরোধ : পঞ্চম কিস্তি

সংকলনেঃ মোহাম্মাদ ইস্রাফিল হোসাইন। 

২৫। পূর্বের কাতার পূর্ণ না করেই নতুন কাতার শুরু করাঃ 

আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা সর্বাগ্রে প্রথম কাতার পূর্ণ কর, অতঃপর পর্যায়ক্রমে পরবর্তী কাতারগুলো পূর্ণ কর। যদি কোন কাতার অসম্পূর্ণ থাকে তবে তা অবশ্যই সর্বশেষ কাতার হবে। (আবু দাউদ ৬৭১ ইফাঃ, বাইহাকী ৩/১২০)

আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম (নামায প্রাক্কালে) বলেন, “তোমরা আগের কাতারটি পূর্ণ ক’রে নাও। তারপর ওর সংলগ্ন কাতার পূরন কর। তারপর যে অসম্পূর্ণতা থাকে, তা শেষ কাতারে থাকুক। (হাদিস সম্ভার ৭১৬)

জাবির ইবনু সামুরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের নিকট বের হয়ে বললেনঃ তোমরা কি কাতার সোজা করবে না যেরূপ ফেরেশতাগণ তাঁদের প্রভূর সামনে কাতার সোজা করে দাঁড়ান। তাঁরা বললেন, ফেরেশতাগণ তাদের রবের সামনে কিভাবে কাতারবন্দী হয়ে দাঁড়ান? রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তারা প্রথম কাতার পুর্ণ করে তারপর কাতারে পরস্পর মিশে দাঁড়ান। (ইবনু মাজাহ ৯৯২, মুসলিম ৮৬ ইসলামিক সেন্টার)।

 ইরবায ইবনু সারিয়া (রাঃ) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি প্রথম কাতারের জন্য তিনবার (রহমত ও মাগফিরাতের) দোয়া করতেন, তারপর দ্বিতীয় কাতারের জন্য একবার। (নাসাঈ ৮১৮ ইফাঃ, ইবনু মাজাহ হাঃ ৯৯৬)

মন্তব্যঃ অনেকে আছে যারা সামনের কাতার ফাঁকা রেখে পরের কাতারে দাড়িয় যান। উপরের হাদিসগুলিতে দেখা যায় সামনের কাতারের ফজিলত বেশী। তাছাড়া সামনের কাতার সম্পূর্ণ করেই পরের কাতারে দাড়াতে বলেছেন। মসজিদের প্রশস্থতা দীর্ঘ হয়ার কারণে বা তাড়াহুড়া করে রাকাআত ধরার জন্য অনেক মানুষ অলসতা করে আগের কাতার পূর্ণ না করেই নতুন একটি কাতার শুরু করে দেয়। ফলে পরবর্তীরা তাদের সাথে এসে শরীক হয় এবং অনেক সময় আগের কাতারের ডান দিক বা বাম দিক অপূর্ণই রয়ে যায়। অথচ এরূপ করা কোন ক্রমেই বৈধ নয়।

২৬। সালাতে ধীরে সুস্থে আসা কিন্তু ইমামের সাথে শরীক না হয়ে অপেক্ষা করাঃ

আবূ কাতাদা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একবার আমরা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে সালাত আদায় করছিলাম। হঠাৎ তিনি লোকদের (আগমনের) আওয়াজ শুনতে পেলেন। সালাত শেষে তিনি জিজ্ঞাসা করলেন তোমাদের কি হয়েছিল? তারা বললেন, আমরা সালাতের জন্য তাড়াহুড়া করে আসছিলাম।নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ এরূপ করবে না। যখন সালাতে আসবে ধীরস্থিরভাবে আসবে (ইমামের সাথে) যতটুকু পাও আদায় করবে, আর যতটুকু ফাওত হয়ে যায় তা (ইমামের সালাম ফেরানোর পর) পূরা করে নিবে। (সহিহ বুখারী ৬০৭ ইফাঃ)

আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, সালাত শুরু হয়ে গেলে তার জন্য দৌড়িয়ে আসবে না। বরং ধীরে সুস্থে আসবে তারপর যা ইমামের সাথে পাবে, তা আদায় করবে, আর যা ছুটে যায়, পূরণ করে নিবে। (সহিহ মুসলীম ১২৩৬ ইফাঃ)

আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, সালাতের ইকামাত দেওয়া হলে, তার জন্য দৌড়ে আসবে না, বরং ধীরে সুস্থে আসবে। তারপর যা পাবে, আদায় করবে আর যা ছুটে যায়, তা পূর্ণ করে নিবে। কেননা, তোমাদের কেউ যখন সালাতের উদ্দেশ্যে চলে তখন সে সালাতেই গণ্য।(সহিহ মুসলীম ১২৩৭ ইফাঃ)

আবূ কাতাদা থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে সালাত আদায় করছিলাম। তিনি পদধ্বনি ও গুঞ্জন শুনলেন। পরে বললেন, তোমাদের কি হয়েছিল? তাঁরা বললেন, আমরা সালাতের জন্য তাড়াহুড়া করে আসছিলাম। তিনি বললেন এমন করবে না। তোমরা যখন সালাতে আসবে,শান্তভাবে আসবে। অতঃপর যা ইমামের সাথে পাবে তা আদায় করে নেবে; আর যা তোমাদের আগে ছুটে গেছে তা পূর্ণ করে নিবে। (সহিহ মুসলীম ১২৪০ ইফাঃ)

আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যাক্তি ইমামের সাথে সালাতের এক রাকআত পেল সে উক্ত সালাতই পেল। (সহিহ মুসলীম ১২৪৯ ইফাঃ)

মন্তব্যঃ মসজিদে সালাতের জামাত শুরু হলে অনেক মুসল্লি জামাত ধরার জন্য দৌড়দেন। সালাতে অংশ গ্রহণের জন্য সমজিদের ভিতরে দৌড়ে জামাত ধরা নিষেধ। অনেক এত জোরে দৌড় দেন যে, তার পায়ের শব্দে মুসল্লীর সালাতের বেঘাত ঘটে। আবার অনেক সালাত অংশ গ্রহন করার জন্য এসে ইমম সাহেবের দাড়ানোর জন্য অপেক্ষা করেন। ইমাম সিজদায় থাকলে বাসার অপেক্ষা করা বা বসা অবস্থায় থাকলে দাঁড়ানোর অপেক্ষা করবে। তিনি যখন দাঁড়াবেন বা রুকুতে যাবেন তখন তার সাথে ছালাতে শামিল হবে। এটা সুন্নাত বহির্ভূত কাজ বরং ইমাম যে অবস্থাতেই থাকুন তার সাথে সালাতে শরীক হতে হবে।

২৭। ইমামের আগ বেড়ে সালাত আদায় করাঃ

আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তোমাদের কেউ যখন ইমামের আগে মাথা উঠিয়ে ফেলে, তহন সে কি ভয় করে না যে, আল্লাহ তা’লা তাঁর মাথা গাধার মাথায় পরিণত করে দিবেন, তাঁর আকৃতি গাধার আকৃতি করে দেবেন। (সহিহ বুখারী ৬৫৮ ইফাঃ)

আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, ঘোড়ার পিঠ থেকে পড়ে যাওয়ার দরুণ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর শরীরের দক্ষিন পাশ‍‌ ছিলে যায়। আমরা তাকে দেখতে গেলাম। ইতিমধ্যে সালাতের ওয়াক্ত হল। তিনি আমাদের নিয়ে বসে বসে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন। আমরাও বসে বসে তার পেছনে সালাত আদায় করলাম। সালাত শেষ হওয়ার পর তিনি বললেন, অনুসরণ করার জন্য ইমাম মনোনীত হন। তিনি যখন তাকবীর বলেন, তোমরাও তাকবীর বল, তিনি যখন সিজদা করেন, তোমরাও সিজদা কর, তিনি যখন উঠেন, তোমরাও উঠবে। তিনি যখনسَمِعَ اللَّهُ لِمَنْ حَمِدَهُ বলবেন, তোমরা তখনرَبَّنَا وَلَكَ الْحَمْدُ বল। আর তিনি যখন বসে সালাত আদায় করেন, তোমরাও তখন বসেই সালাত আদায় কর। (সহিহ মুসলিম ৮০৬ ইফাঃ)

আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অসুস্থ হলে তার শুশ্রূষার জন্য সাহাবায়ে কিরাম আগমন করলেন। তিনি তাদেরকে নিয়ে বসে বসে সালাত আদায় করলেন। কিছুলোক দাঁড়িয়ে সালাত শুরু করলে তিনি তাদেরকে বসে সালাত আদায় করতে ইশারা করলেন। তাই তারা বসে পড়লেন। সালাত সমাপনান্তে তিনি বললেন, ইমাম নিয়োগ করা হয় তাঁকে অনুসরণ করার জন্য। তিনি রুকু করলে তোমরাও রুকু করবে। তিনি মাথা তুললে তোমরাও মাথা তুলবে। আর তিনি বসে সালাত আদায় করলে তোমরাও বসে সালাত আদায় করবে। (সহিহ মুসলিম ৮১১ ইফাঃ)

আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, অনুসরণের জন্য ইমাম মনোনীত হন। তোমরা তাঁর বিরুদ্ধাচরণ করবে না। তিনি তাকবীর বললে তোমরাও তাকবীর বলবে। ইমাম রুকু করলে তোমরাও রুকু করবে। তিনি سَمِعَ اللَّهُ لِمَنْ حَمِدَهُ বললে তোমরা اللَّهُمَّ رَبَّنَا لَكَ الْحَمْدُ বলবে।। তিনি সিজদা করলে তোমরাও সিজদা করবে। আর তিনি বসে সালাত আদায় করলে তোমরাও সকলে বসে সালাত আদায় করবে। (সহিহ মুসলিম ৮১৫ ইফাঃ)

মন্তব্যঃ উপরের হাদিসগুলিতে দেখা যায় ইমামের আগেই রুকূ, সিজদা করা বা দাঁড়িয়ে পড়া ইত্যাদি সবই নিষিদ্ধ কাজ। আমরা অনেকে তাড়াহুড়া করতে গিয়ে অনেকে এরূপ করে ফেলি। অথচ উচিত ছিল ধীরস্থিরভাবে ইমামের পরে পরে এসমস্ত কাজ করা।

২৮। সালাতের শেষ বৈঠকেতাশাহুদের পর হাদিস সম্মত দুরুদ পাঠ করাঃ

আবূ মাসউদ আনসারী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের কাছে আসলেন, আমরা তখন সা’দ ইবনু উবাদা (রাঃ) এর মস্লিসে বিসা ছিলাম। অতঃপর বশীর ইবনু সা‘দ (রাঃ) তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আল্লাহ তা’আলা আপনার উপর সালাত পাঠ করার জন্য আমাদের নির্দেশ দিয়েছেন। আমরা কিভাবে আপনার উপর সালাত পাঠ করব? আবু মাসউদ (রাঃ) বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চুপ রইলেন। এমনকি আমরা অপেক্ষা করতে লাগলাম যে, তাঁকে যদি এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করা না হত (ত হলে খুবই ভালো হত)। অতঃপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেলন, তোমরা বলবেঃ

(اللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ كَمَا صَلَّيْتَ عَلَى آلِ إِبْرَاهِيمَ وَبَارِكْ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ كَمَا بَارَكْتَ عَلَى آلِ إِبْرَاهِيمَ فِي الْعَالَمِينَ إِنَّكَ حَمِيدٌ مَجِيدٌ)

আর সালাম দেয়ার নিয়ম তো তোমাদের জানাই আছে। (সহহি মুসলিম ৭৯২ ইফাঃ)

মন্তব্যঃ সালাতের শেষ বৈঠকে তাশাহুদের পর হাদিস সম্মত দুরুদ পাঠ করতে হবে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম  আমাদের বলে দিয়েছেন, কি দুরুদ পাঠ করতে হবে। উপরের হাদিসটি তারই প্রমান বহন করে। অধিকাংশ মুসলিম সহিহ হাদিসমতই আমল করে থাকে। সালাতের তাশাহুদের বৈঠকের আমল নিয়ে তোমন কোন মতভেদ পাওয়া যায় না। কিন্তু উপমহাদের কিছু মুসলিম দুরুদে এর নামের সাথে অতিরিক্ত সাইয়্যেদেনা শব্দ বৃদ্ধি করে পাঠ করে থাকে যা হাদিস নয়। এই ধরনের কোন আমল ছাহাবী, তাবেয়ী বা তাবে তাবেয়ীগন করেন নাই। কাজেই সালাতের তাশাহুদে হাদিস সম্মত দুরুদের সাথে অতিরিক্ত যোগ করে পাঠ একটি বিদআতী কাজ।

২৯। দুদিকে সালাম ফেরানোর সময় মাথা ঝাঁকানোঃ 

আবদুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রথমে ডান দিকে এবং পরে বাম দিকে এমনভাবে মুখ ঘুরিয়ে সালাম ফিরাতেন যে, তাঁর মুখমন্ডলের শুভ্র অংশটি পরিলক্ষিত হত এবং তিনি আসসালামু আলায়কুম ওয়া রহমাতুল্লাহ বলে সালাম ফিরাতেন (সুনানে আবু দাউদ ৯৯৬ ইফাঃ তিরমিযী, নাসাঈ, ইবন মাজা)।

মুহাম্মাদ ইবন সুলায়মান আল-আনবারী, আবু নুআয়েম হতে, তিনি মিসআর (রহঃ) হতে উপরোক্ত হাদীছের সনদে ও অর্থে হাদীছ বর্ণনা করেছেন। তিনি (নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেনঃ তোমাদের হস্তদ্বয় রানের উপর রেখে ডান এবং বাম পাশের লোকদের সালাম করাই যথেষ্ট। (সুনানে আবু দাউদ ৯৯৯ ইফাঃ

জাবের ইবন্ সামুরা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ একদা আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পেছনে নামায পাঠকালে এক ব্যক্তি সালাম ফিরাবার সময় ডান দিকের লোকদের প্রতি হাতের ইশারায় সালাম দেয় এবং পরে বাম দিকের লোকদেরও। নামায শেষে তিনি বলেনঃ তোমাদের ঐ ব্যক্তির কি হয়েছে যে, সে সালাম ফিরাবার কালে এইরূপে হাতের ইশারা করল, যেন তা ঐ ঘোড়ার লেজের মত যা দ্বারা মশা-মাছি বিতাড়িত করা হয়? বরং সে ব্যক্তি যদি হাতের আংগুলের ইশারা দ্বারা ডান ও বাম পাশের লোকদের সালাম করত, তবে তাই যথেষ্ট ছিল। (সুনানে আবু দাউদ ৯৯৮ ইফাঃ) (মুসলিম, নাসাঈ)।

মন্তব্যঃ কিন্তু সালাত আদায় কালে দেখা যায কিছু মুসাল্লী সালাম ফেরানোর সময় মাথাটা একটু উপর দিকে উঠয়ে আবার নীচে নামায়। উভয় দিকে এরূপ করে। অথচ এটা সুন্নাতে রাসূলের বিপরীত কাজ।  

৩০। সালাম ফেরানোর পর দু পাশের মুসাল্লীকে সালাম দিয়ে মুসাফাহা করাঃ 

উম্মুল মু’মিনীন উম্মু সালামাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাম ফিরানোর পর নিজ জায়গায় কিছুক্ষণ অপেক্ষা করতেন। ইবনু শিহাব (রহ.) বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর বসে থাকার কারণ আল্লাহ্ই অধিক জ্ঞাত। তবে আমার মনে হয় সালাতের পর মহিলাগণ যাতে ফিরে যাওয়ার সুযোগ পান। (সহিহ বুখারী ৮৪৯ তাওহীদ, ৮০৮ ইফাঃ)

ইয়াযীদ ইবনু আসওয়াদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি (একদা) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে ফজরের সালাত আদায় করেছিলেন। যখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাত শেষ করলেন তখন তিনি মুসল্লীদের দিকে ফিরে বসলেন। (সুনানে নাসাঈ ১৩৩৭)

মন্তব্যঃ সালাত ফিরানোর পরের আমল সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। উক্ত আলোচনায় কোথাও দেখা যায় না যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিংবা তার সর্বাধীক অনুসরণীয় সাহাবীগনের কেউ সালাম ফেরানোর পর দু পাশের মুসাল্লীকে সালাম দিয়ে মুসাফাহা করছেন। সালাম ফিরানোর পর এমন আমল করা বিদআত। আমাদের দেশে এই বিদআতটি বেশী প্রচলিত নয়। কিন্তু আমি দেখেছি ইন্দোনেশিয়ার অধিকাংশ মুসল্লী সালাতের পর পাশের দুজনের সাথে মুসাফাহা করে থাকে। আমলটি আমাদের নিকট নতুন মনে হবে। আসলে ইসলামের কাছেও আমলটি নতুন বা বিদআত।

এই কাজটি সম্পর্কে শায়খুল ইসলাম ইমাম ইবনু তায়মিয়া রাহিমাহুল্লাহ কে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, সালাত শেষ করে পাশের মুছল্লীর সাথে মুছাফাহা করা সুন্নাত নয়। বরং এটি একটি একটি বিদআত। (মাজমু ফাতাওয়া ২৩/২৩৯)

৩১। বিভিন্ন লেখা জামা পরিধান করে সালাত আদায়ঃ

আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি নকশাকৃত চাঁদর পরিধান করে সালাতে দাঁড়ালেন। চাদরের নকশাগুলি তার দৃষ্টি আকর্ষণ করল। সালাত শেষে তিনি বললেন, এই চাদরটি আবূ জাহম ইবনু হুযায়ফার নিকট নিয়ে যাও এবং তার মোটা চাদরটি আমাকে এনে দাও, কেননা এটি এখন আমাকে আমার সালাতে অন্যমনস্ক করেছে। (সহিহ মুসলীম ১১২১ ইফাঃ)

আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর একটি নকশাদার চাদর ছিল। চাদরখানি সালাত এর মনোযোগ নষ্ট করত। তিনি চাদরটি আবূ জাহমকে দিয়ে দিলেন এবং তার মোটা চাদরটি গ্রহন করলেন। (সহিহ মুসলীম ১১২২ ইফাঃ)

মন্তব্যঃ সালাতে দাড়ালে দেখা যায়, মুসল্লী বাহারী জামা বা গেজ্ঞী পড়ে সালাত আদায় করেছে। মুসল্লীর জামার উপর সুন্দর কারু কাজ করে বিভিন্ন কোম্পানীর নাম বা বিজ্ঞাপণ ষ্পষ্ট অক্ষরে লেখা আছে। মুসল্লীর জামার পিছনের এই লেখা পড়তে পড়তে পিছনের মুসল্লীল সালাত শেষ। কখন যে কত রাকাত হইল তার কোন খোজ খবর নাই। যা হোক, এই অর্থ এমন কোন জামা গায়ে সারাত আদায় করা যাবে না, যার যারা সালাতে অন্যমনস্ক হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।  

৩২। চিন্তা প্রেসানী নিয়ে সালাতে আদায় না করাঃ

আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, খাবার সামনে পেশ করা হলে এবং সালাত এর সময় হলে তোমরা মাগরিবের সালাতের পূর্বে খাবার খেয়ে নিবে। খাবার রেখে সালাতের জন্য তাড়াহুড়া করবে না। (সহিহ মুসলীম ১১২৪ ইফাঃ)

মন্তব্যঃ ক্ষুধার্ত অবস্থায় খাবার সামনে আসলে এবং তৎক্ষণাৎ খাবার ইচ্ছা থাকলে তা না খেয়ে ও মলমূত্রের বেগ চেপে রেখে সালাত আদায় করা মাকরূহ।

৩৩। দুর্গন্ধ যুক্ত খাবার খেয়ে মসজিদে না আসাঃ

ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যাক্তি এই সবজি অর্থাৎ রসুন খাবে, সে যেন এর দুর্গন্ধ দূর না হওয়া পর্যন্ত আমাদের মসজিদের নিকটবর্তী না হয়। (সহিহ মুসলীম ১১৩১ ইফাঃ)

জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যাক্তি এইসব রসুনের তরকারী খাবে (কখনও বলেছেন) যে ব্যাক্তি পিঁয়াজ, রসুন ও কুরগাছ (গন্ধে ও স্বাদে পিয়াজের মত সবজি বিশেষ) খাবে, সে যেন আমাদের মসজিদের কাছে না আসে। কেননা আদম সন্তান যাতে কষ্ট পায়, ফেরেশতাগনও তাতে কষ্ট পান। (সহিহ মুসলীম ১১৩৬ ইফাঃ)

মন্তব্যঃ কষ্ট হয় রসুন, পিয়াজ, মূলা ইত্যাদি দুর্গন্ধযুক্ত দ্রব্য খাওয়ার পর মুখে থেকে দুর্গন্ধ দূর না হওয়া পর্যন্ত মসজিদে প্রবেশ করা নিষেধ। আমাদের সমাজে অনেক মুসলিম জানানে যে বিড়ি সিগারেট খাওয়া হারাম। তারা ইহাকে মাকরূহ মনে করে থাকেন। বিড়ি খাওয়ার পর মসজিদে আসলে তার দুর্গন্ধে পাশের লোকদের কষ্ট হয়। যারা দুর্গন্ধ নিয়ে সালাত আদায় করেত আসেন তাদের মসজিদ থেকে বের করে দেওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

 

৩৪। মসজিদে হারানো বস্তুর ঘোষণা দেওয়া নিষেধঃ

আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যাক্তি কোনও লোককে মসজিদে হারানো বস্তুর ঘোষণা দিতে শুনবে, তখন সে বলবে, আল্লাহ তোমাকে তা ফিরিয়ে না দিন। কেননা মসজিদ এর জন্য তৈরি হয়নি। (সহিহ মুসলীম ১১৪২ ইফাঃ)

মন্তব্যঃ আমাদের সমাজে অধিকাংশ লোক ইসলাম সম্পর্কে অজ্ঞ তাই তারা হারান জিনিসের ঘোষণা দেয়ার স্থান হিসাবে সমজিদকেই বেচে নেন। যা হোক মসজিদে হারানো বস্তুর ঘোষণা দেওয়া সুন্নাহ  সম্মত আমর নয়। অবশ্য ইদানিং অনেক আলেম এই কাজ করা থেকে তার মুসল্লীদের বিরোত রাখতে দেখা যায়।  

 

৩৫। ঘুম ঘুম ভাব নিয়ে সালাত আদায় না করাঃ

আয়িশাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সালাতরত অবস্থায় তোমাদের কেউ তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে পড়লে সে যেন শুয়ে যায়, যাবত না তার ঘুম দূরীভূত হয়। কেননা তন্দ্রাচ্ছন্ন অবস্থায় সালাত পড়লে কী বলা হচ্ছে, তা সে জানে না। হয়তো সে ক্ষমা প্রার্থনা করতে গিয়ে নিজেকে গালি দিয়ে বসবে। (সহিহ বুখারী ২১২, ইবনে মাজাহ ১৩৭০, তিরমিযী ৩৫৫, নাসায়ী ১৬২, আবূ দাঊদ ১৩১০)

আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমাদের কেউ সালাতে তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে পড়লে সে যেন শুয়ে পড়ে যাতে তার ঘূম চলে যায়। কেননা, তোমাদের কেউ যখন তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে সালাত আদায় করবে তখন এমন হতে পারে যে, সে ইসতিগফার ও ক্ষমা প্রার্থনা করতে চাইবে, অথচ সে নিজেকে গালি দিয়ে বসবে। (দু’আ করতে গিয়ে বদ দু’আ করে ফেলবে)। (সহিহ মুসলিম ১৭০৮ ইফাঃ)

মন্তব্যঃ মন্তব্য করার প্রয়োজন নেই। হাদিসের ষ্পষ্ট বক্তব্য ঘুম ঘুমভান নিয় সালাত আদায় করা যাবে না।

 

৩৬। নামাযীর সামনে দিয়ে চলে যাওয়াঃ 

বুসর ইবনু সা’ঈদ (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, যায়েদ ইবনু খালিদ (রাঃ) তাঁকে আবূ জুহায়ম (রাঃ) এর কাছে পাঠালেন, যেন তিনি তাঁকে জিজ্ঞাসা করেন যে, মুসল্লীর সামনে দিয়ে অতিক্রমকারী সম্পর্কে তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে কি শুনেছেন। তখন আবূ জুহায়ম (রাঃ) বললেনঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যদি মুসল্লীর সামনে অতিক্রমকারী জানতো এটা তার কত বড় অপরাধ, তাহলে সে মুসল্লীর সামনে দিয়ে অতিক্রম করার চাইতে চল্লিশ দিন/মাস/বছর দাঁড়িয়ে থাকা উত্তম মনে করতো। আবূন-নাযর (রহঃ) বলেনঃ আমার জানানেই তিনি কি চল্লিশ দিন বা চল্লিশ মাস বা চল্লিশ বছর বলেছেন। (সহিহ বুখারি ৪৮৬ ইফাঃ)

বুসর ইবনু সাঈদ (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, সালাতীর সামনে দিয়ে অতিক্রমকারী সম্পর্কে জিজ্ঞেস করার জন্য সাহাবীগণ আমাকে যায়দ ইবনু খালিদ এর নিকট পাঠালেন। তিনি আমাকে অবহিত করেন যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সালাতীর সামনে দিয়ে অতিক্রম করার চাইতে চল্লিশ পর্যন্ত দাঁড়িয়ে থাকা উত্তম। সুফ্ইয়ান (রহঃ) বলেন, চল্লিশ দ্বারা তিনি চল্লিশ বছর না মাস না দিন, না ঘণ্টা বুঝিয়েছেন তা আমি অবগত নই। (ইবনে মাজাহ ৯৪৪)

আবূ সালেহ সম্মান (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ আমি আবূ সা’ঈদ খুদরী (রাঃ)-কে দেখেছি। তিনি জুম্মার দিন লোকদের জন্য সুতরা হিসাবে কোন কিছু সামনে রেখে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করছিলেন। আবূ মু’আইত গোত্রের এক যুবক তাঁর সামনে দিয়ে যেতে চাইল। আবূ সা’ঈদ খুদরী (রাঃ) তার বুকে ধাক্কা মারলেন। যুবকটি লক্ষ্য করে দেখলো যে তাঁর সামনে দিয়ে যাওয়া ছাড়া আর কোন পথ নেই। এজন্য সে পুনরায় তাঁর সামনে দিয়ে যেতে চাইল। এবার আবূ সা’ঈদ খুদরী (রাঃ) প্রথম বারের চাইতে জোরে ধাক্কা দিলেন। ফলে আবূ সা’ঈদ (রাঃ)-কে তিরস্কার করে সে মারওয়ানের কাছে গিয়ে আবূ সা’ঈদ (রাঃ) এর ব্যবহারের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করল। এদিকে তার পরপরই আবূ সা’ঈদ (রাঃ)-ও মারওয়ানের কাছে গেলেন। মারওয়ান তাঁকে বললেনঃ হে আবূ সা’ঈদ! তোমার এই ভাতিজার কি ঘটেছে? তিনি জবাব দিলেনঃ আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি যে, তোমাদের কেউ যদি লোকদের জন্য সামনে সুতরা রেখে সালাত আদায় করে, আর কেউ যদি তার সামনে দিয়ে যেতে চায়, তাহলে যেন সে তাকে বাধা দেয়। সে যদি না মানে, তবে সে ব্যাক্তি (মুসল্লী) যেন তার সাথে মুকাবিলা করে, কারণ সে শয়তান।  (সহিহ বুখারি ৪৮৫ ইফাঃ)

মন্তব্যঃ কাজেই কোন অস্থায়ই সালাতরত ব্যক্তির সামনে দিয়া চলাচল করা যাবে না। হাদিসের ভাষ্যমতে কাজটি বিনা কারনে করলে গোনাহ হবে।

৩৭। কোন সুতরা ছাড়াই সালাত আদায় করা ঠিক নয়ঃ

তালহা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমাদের যে কেউ তার সম্মুখে হাওদার পিছনের খাড়া কাঠের পরিমাণ কিছু স্থাপন করে, যেন সালাত আদায় করে। এরপর সেটির পিছন দিয়ে কেউ গেলে কোন পরোয়া করবে না। (সহিহ মুসলিম ৯৯৪ ইফাঃ)

আবূ জুহায়ফা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদিন দুপুরে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের সামনে তাশরীফ আনলেন। তিনি ‘বাতহা’ নামক স্থানে যোহর ও আসরের সালাত দুরাকাত করে আদায় করলেন। তখন তাঁর সামনে একটা লোহযুক্ত ছড়ি পুঁতে রাখা হয়েছিল। তিনি যখন অজু করছিলেন, তখন সাহাবীগণ তাঁর উযূর পানি নিজেদের শরীরে (বরকতের জন্য) মাসেহ করতে লাগলো। (সহিহ বুখারী ৪৭৭ ইফাঃ)

তালহা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতাম এবং আমাদের সম্মুখ দিয়ে পশুগুলো যাতায়াত করত আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এ বিষয়টি উল্লেখ করলাম। তিনি বললেন, তোমাদের কারও সম্মুখে হাওদার পিছনের কাঠ পরিমাণ কোনও কিছু থাকলে সেটির বহিরে দিয়ে কোন কিছুর যাতায়াত তার কোন ক্ষতি করবে না। ইবনু নুমায়র (রহঃ) বলেন, তার বাইরে দিয়ে ‘কোনও ব্যাক্তির’ যাতায়াত ক্ষতি করবে না। (সহিহ মুসলিম ৯৯৫ ইফাঃ)

ইবনু উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লাঠি গেড়ে রাখতেন। আবূ বাকর (রাঃ) বলেন, পুতে রাখতেন। এবং সেটির দিকে সালাত আদায় করতেন। ইবনু আবূ শায়বা বাড়িয়ে বলেন, উবায়দুল্লাহ (রহঃ) বলেছেন, তা হল ক্ষুদ্রাকৃতির বর্শা। (সহিহ মুসলিম ৯৯৯ ইফাঃ)

মন্তব্যঃ উপরের হাদিস থেকে সালাতে সুতরা ব্যাবহারের গুরুত্ব বুঝা যায়। সব সময় সুতরা ব্যাবহার করে সালাত আদায় করেছেন। সাহাবীগনের আমল থেকেও তাই প্রমানিত হয়। কাজেই সুতরা দিয়ে সালাত আদায় আদায় করেত হবে। মুজতাহিদ আলেমদের মধ্যে অনেকে সুতরা গ্রহণ করা ওয়াজিব বলেছেন।  শহরাঞ্চালের অধিকাংশ মসজিদ প্রশস্থ। তাই একাকি সালাত সালাতে আদায়ে সময় অন্য মুসল্লীদের যাতায়াতের কথা মাথায় রেখে সুরতা ব্যবহার করা উচিত। অজ্ঞতা বা অবজ্ঞা যে কারনেই হোক অধিকাংশ মানুষ সুতরার বিষয়টি খেয়াল রাখেন না। আমরা শুধু যে সালাতের সামনে দিয়ে যায় তার দোষ ধরি কিন্তু যার সুতরা ব্যবহার করা ওয়াজিব ছিল তিনি তার করেন নাই। একটু খেয়াল করলে দেখা যাবে অধিকাংশ মুসল্লী সুতরার কোন প্রকার পরওয়া না করেই মসজিদের যেখানে সেখানে দাড়িয়ে সুন্নাহ বা নফল সালাতে আদায় করছে। সুন্নাত হচ্ছে, সালাতে দাড়ালে কোন কিছুকে সুতরা হিসাবে সামনে রাখা। অর্থাৎ কমপক্ষে অর্ধহাত বরাবর কোন উঁচু বস্তু সামনে রেখে ছালাতে দাঁড়ানো উচিত।

এ সম্পর্কে একটি জরুরী মাসায়েলঃ সুতরা না থাকলে কত সালাতরত ব্যাক্তির কত টুকু সমানে দিয় যাওয়া যাবে?

উত্তরঃ এ সম্পর্কে সহিহ হাদিসে সরাসরি কিছু উল্লেখ নাই। তাই মুজতাহীদ আলেমগন ভিন্ন ভিন্ন মতামত প্রদান করছেন। একদল বলেছেন, সালাত আদায় রাখা অবস্থায় যেখানে সুতরা রাখা হয়। সুতরা না থাকলেও ঐ পর্যান্তই তার স্থান। এর সামনে দিয় চলাচল করা যাবে। অর্থাৎ সালাতরত ব্যাক্তির সিজদার স্থান পর্যান্তই তার স্থান। হাদিসে এই স্থানের ভিতর দিয়ে কেউ গেলে তাকে বাধা দানের কথা বলা হয়েছে। দ্বিতীয় মতটি হলঃ সুতরা না থাকলেও দুই কাতারের সমপরিমান স্থান সামনে রেখে চলা সালাতরত ব্যাক্তির সামনে দিয়ে চলাচল করা যাবে। দুটি মনের যে কোনটি অনুসরণ করা যায়।

৩৮ ধীরস্থিরতার সাথে সালাত আদায় করাঃ

আল্লাহ্ তাআলা বলেন,

قَدۡ أَفۡلَحَ ٱلۡمُؤۡمِنُونَ (١) ٱلَّذِينَ هُمۡ فِى صَلَاتِہِمۡ خَـٰشِعُونَ (٢)

অর্থঃ নিশ্চয় মুমিনগণ সফলকাম হবে। যারা ছালাতে বিনয়ী একাগ্র থাকে। (সূরা মুমিনূন ২৩:১-২) 

আবূ কাতাদা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সালাতের ইকামাত হলে আমাকে না দেখা পর্যন্ত তোমরা দাঁড়াবে না। ধীরস্থিরতার প্রতি লক্ষ রাখা তোমাদের জন্য একান্ত আবশ্যক। (সহিহ বুখারি ৬১০ ইফাঃ)

আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, একসময়ে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে তাশরীফ আনলেন, তখন এক ব্যাক্তি মসজিদে প্রবেশ করে সালাত আদায় করলো। তারপর সে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সালাম করলো। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার সালামের জবাব দিয়ে বললেনঃ তুমি ফিরে গিয়ে সালাত আদায় কর, কেননা, তুমি সালাত আদায় করনি। লোকটি আবার সালাত আদায় করল এবং পুনরায় এসে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সালাম দিল। তিনি বললেনঃ আবার গিয়ে সালাত আদায় কর, কেননা, তুমি সালাত আদায় করনি। এভাবে তিনবার ঘটনার পূনরাবৃত্তি।

তারপর লোকটি বলল, সে মহান সত্তার শপথ! যিনি আপনাকে সত্যসহ প্রেরণ করেছেন, আমি এর চেয়ে সুন্দর সালাত আদায় করতে জানিনা। কাজেই, আপনি আমাকে শিখিয়ে দিন। তখন তিনি বললেনঃ যখন তুমি সালাতে দাঁড়াবে, তখন তাকবীর বলবে। তারপর কুরআন থেকে যতটুকু তোমার পক্ষে সহজ ততটুকু পড়বে। এরপর রুকূ’তে যাবে এবং ধীরস্থিরভাবে রুকূ’ আদায় করবে। তারপর রুকূ’ থেকে উঠে সোজা হয়ে দাঁড়াবে। ধীরস্থিরভাবে সিজদা করবে। এরপর সিজদা থেকে উঠে স্থিরভাবে বসবে এবং পুনরায় সিজদায় গিয়ে স্থিরভাবে সিজদা করবে। তারপর পূর্ণ সালাত এভাবে আদায় করবে। (সহিহ বুখারি ৭৫৭ ইফাঃ)

আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। এক ব্যক্তি মসজিদে প্রবেশ করে সালাত আদায় করছিল। আর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন মসজিদের এক কোণে অবস্থান করছিলেন। লোকটি এসে তাঁকে সালাম করল। তিনি বললেনঃ ফিরে যাও এবং সালাত আদায় কর। কেননা, তুমি সালাত আদায় করনি। তখন সে ফিরে গেল এবং সালাত আদায় করল। আবার এসে তাঁকে সালাম করল। তিনি বললেনঃ তোমার উপরও সালাম। তুমি ফিরে যাও এবং সালাত আদায় কর। কারণ, তুমি সালাত আদায় করনি। তৃতীয়বারে লোকটি বলল, আমাকে শিখিয়ে দিন। তিনি বললেনঃ যখন তুমি সালাতে দন্ডায়মান হবে তখন খুব ভালভাবে ‘উযূ করবে। এরপর কিবলামুখী হবে। তারপর তাকবীর বলবে। এরপর কুরআন থেকে যা তোমার জন্য সহজ তা তিলাওয়াত করবে। এরপর ধীরস্থিরভাবে রুকূ করবে। এরপর মাথা উঠাবে। এমনকি সঠিকভাবে দাঁড়িয়ে যাবে। এরপর সাজদাহ করবে ধীরস্থিরভাবে। এরপর মাথা তুলে সোজা হবে এবং ধীরস্থিরভাবে বসে যাবে। এরপর আবার ধীরস্থিরভাবে সাজদাহ করবে। তারপর সি্জদা থেকে মাথা উঠিয়ে স্থির হয়ে বসবে। তারপর সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে যাবে। এরপর তোমার পুরো সালাতেই এরূপ করবে।  (সহিহ বুখারি ৬১০ ইফাঃ)

মন্তব্যঃ ধীরস্থিরভাবে সালাত আদায় করাই মহান আল্লাহর রসূল এর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নির্দষ। সালাতে সুন্নাত হচ্ছে মুমিন ব্যক্তি শরীর হৃদয়-মন সবকিছু উপস্থিত রেখে বিনয়-নম্র সহকারে ছালাত আদায় করবে। উক্ত ছালাত ফরয হোক বা নফল। আবশ্যক হচ্ছে অনর্থক নড়াচড়া না করে প্রশান্তি ও ধীরস্থিরভাবে ছালাত আদায় করা। তাই বেশী নাড়া-চাড়া করা, ঘড়ি দেখা, বোতাম লাগানো, আঙ্গুল ফুটানো, নাক, দাড়ী, কাপড় প্রভৃতি নাড়াচাড়া করা মাকরূহ। এগুলো নিয়ে খেলা করা যদি অধিকহারে লাগাতার হতে থাকে তবে ছালাত বাতিল হয়ে যাবে। কিন্তু তা যদি সাধারণভাবে অল্প হয় এবং লাগাতার না হয় তবে ছালাত বাতিল হবে না। (শায়খ বিন বায (রহ:) অবশ্য কাতার বরাবর করার জন্য এবং ফাঁকা জায়গা পূরণ করার জন্য নাড়াচড়া করা ওয়াজিব।

৩৯। ফরয সালাতের ইকামত হওয়ার পরও নফল বা সুন্নাত আদায় করতে থাকাঃ

আবদুল্লাহ ইবনু মালিক ইবনু বুহাইনা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক ব্যাক্তির পাশ দিয়ে গেলেন। অন্য সুত্রে ইমাম বুখারী (রহঃ) বলেন, আব্দুর রাহমান (রহঃ) … হাফস ইবনু আসিম (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি মালিক ইবনু বুহাইনা নামক আযদ গোত্রীয় এক ব্যাক্তিকে বলতে শুনেছি যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক ব্যাক্তিকে দু’রাকাআত সালাত আদায় করতে দেখলেন। তখন ইকামত হয়ে গেছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন সালাত শেষ করলেন, লোকেরা সে লোকটিকে ঘিরে ফেলল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, ফজরের সালাত কি চার রাকাআত? ফজরের সালাত কি চার রাকাআত? গুনদার ও মুআয (রহঃ) শু’বা (রহঃ) থেকে হাদিসটি বর্ণিত বলে উল্লেখ করেছেন। (এ বর্ণনাটই সঠিক) তবে হাম্মাদ (রহঃ) ও সা’দ (রহঃ) এর মধ্যে সে হাফস (রহঃ) থেকে হাদীসটি বর্ণনা করতে গিয়ে মালিক ইবনু বুহাইনা (রহঃ) থেকে বর্ণিত বলে উল্লেখ করেছেন। (সহিহ বুখারী ৬৩০ ইফাঃ)

মন্তব্যঃ তাদের এই কাজটি খেলাপে সুন্নাহ  অনেক মানুষ সুন্নাত বিরোধী একাজটি করে থাকে। বিশেষ করে ফজরের সময় এটি ব্যাপক আকারে দেখা যায়। ইক্বামত হয়ে যাওয়ার পর বা ছালাত শুরু হয়ে গেলেও তাড়াহুড়া করে অনেকে দুরাকাআত ছালাত আদায় করে। তাদের এই কাজটি খেলাপে সুন্নাহ।  
ইবনু হযম (রহঃ) বলেন, ফরয নামাযের একামত হয়ে যাওয়ার পর যদি কেহ সুন্নাত নামায শুরু করে, আর এ কারণে তার তাকবীর বা এক রাকাত ছুটে যায় তবে উক্ত সুন্নাত শুরু করা তার জন্য জায়েয নয় এবং এ অবস্থায় সে আল্লাহর নাফারমান বলে গণ্য হবে।

সালাতের মাঝে দুই এক কদম হাঁটা চলা যায়ঃ

আবূ হাযিম (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, কতিপয় লোক সাহল ইবনু সা’দ (রাঃ) এর নিকট আগমন করল এবং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মিম্বর কি কাঠের তৈরি ছিল, তা নিয়ে তারা বিতর্ক করতে লাগল। তিনি (সাহল ইবনু সা’দ) বললেন, আল্লাহর কসম! সেটি কি কাঠের তৈরি ছিল, কে তৈরি করেছিল, তা আমি ভাল করে জানি এবং সর্বপ্রথম কোনদিন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার উপর আরোহণ করেছিলেন, তাও আমি দেখেছি।

আবূ হাজিম বলেন, আমি সাহল (রাঃ) কে বললাম, হে আব্বাসের পিতা! আপনি ঐসব ঘটনা পুনরায় আমাদের নিকট বর্ণনা করুন। তিনি বললেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক মহিলাকে বলে পাঠালেন [আবূ হাজিম বলেন, সাহল ইবনু সা’দ (রাঃ) সেইদিন মহিলাটির নামও বলেছিলেন] তুমি তোমার কাঠমিস্ত্রি গোলামটিকে একটু ফুরসত দিও। সে আমার জন্য একটি মিম্বর তৈরি করে দিবে, আমি তার উপর থেকে মানুষকে ওয়াজ নসিহত করব। অতঃপর সেই গোলামটি তিন সিঁড়িবিশিষ্ট এই মিম্বরটি বানায় এবং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নির্দেশে সেটি মসজিদের এই স্থানে (বর্তমান স্থানে) রাখা হয়। তার কাঠগুলি গাবা (মদিনার নয় মাইল দূরে অবস্থিত মালভূমির নাম) অঞ্চলের ঝাউগাছের ছিল।

আর আমি দেখলাম, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার উপর দাঁড়ালেন এবং (সালাতের) তাকবীর বললেন, লোকেরাও তার পিছনে তাকবীর বলল। তিনি মিম্বরের উপরেই ছিলেন, অতঃপর তিনি রুকু হতে উঠে দু’এক কদম পিছনের দিকে হেঁটে নিচে নেমে গেলেন। আর মিম্বরের গোঁড়ায় সিজদা করলেন। আবার তিনি পূর্বস্থানে চলে গেলেন। এভাবে তিনি তার সালাত সমাপ্ত করলেন। তারপর তিনি লোকদের দিকে ফিরে বললেন, হে লোকসকল! আমার এরুপ করার কারন হল, যেন তোমরা আমার অনুকরন করতে পার এবং আমার সালাত শিখে নিতে পার। (সহহি মুসলীম ১০৯৯)

মন্তব্যঃ আমাদের অনেকেরই ধারনা সালাতে কোন অবস্থায়ই নড়াপড়া করা যাবেনা। পূর্নের আলোচনা দেখেছি সালাতে অযথা নাড়া-চাড়া করা, ঘড়ি দেখা, বোতাম লাগানো, আঙ্গুল ফুটানো, নাক, দাড়ী, কাপড় প্রভৃতি নাড়াচাড়া করা মাকরূহ। কিন্তু সালাত আদায় সময় যদি সমনের কাতার ফাঁকা থাকে বা একাকী এক কাতারে দাড়াতে বাধ্য হলে সামনের কাতার থেকে একজন টেনে পিছনে আনা যায়। সালাতে নড়াচড়া জায়েয না হলেও প্রয়োজনে হাঁটা যায়।

  

৪১সলাতরত অবস্থায় হাই আসলে প্রতিরোধ করাঃ 
আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেনঃ সালাতে হাই তোলা শয়তান থেকে হয়। সুতরাং কারো যদি হাই আসে তবে সে যেন যথাশক্তি তা রোধ করে। (তিরমিজী হাদিস নম্বরঃ ৩৭০)

আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, হাই তোলা শয়তানের পক্ষ হতে হয়ে থাকে। কাজেই তোমাদের কারো যখন হাই আসবে তখন যথাসম্ভব তা রোধ করবে। কারণ তোমাদের কেউ হাই তোলার সময় যখন ‘হা’ বলে, তখন শয়তান হাসতে থাকে। (সহিহ বুখারী ৩০৫৯ ইফাঃ, আবু দাউদ ১০৩০ ইফাঃ)

আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ আল্লাহ তা‘আলা হাঁচি দেয়া পছন্দ করেন, আর হাই তোলা অপছন্দ করেন। কাজেই কেউ হাঁচি দিয়ে الْحَمْدُ للهِ বলবে, যারা তা শোনবে তাদের প্রত্যেককে তার জবাব দেয়া ওয়াজিব হবে। আর হাই তোলা, শয়তানের পক্ষ থেকে হয়, তাই যথাসম্ভব তা রোধ করা উচিত। কারণ কেউ যখন মুখ খুলে হা করে তখন শয়তান তাতে হাসে। (সহিহ বুখারী ৬২৩৩ তাওহীদ)

মন্তব্যঃ হাই আসতে পারে। হাই আসলে তা প্রতিরোধ করেত হবে। হাই প্রতিরোধ করার পদ্ধতি হচ্ছে, ঐ অবস্থায় মুখে হাত দেয়া। চেষ্টা চালাব যাতে সালাত আদায় কালে হাই না আসে।

৪২ মুসুল্লীদের অসন্তুষ্টিতে যদি কেউ ইমামতি না করাঃ

আমর ইবনুল হারিস ইবনু মুসতালিক রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি বলেনঃ বলা হয়, সবচেয়ে কঠিন আযাব হবে দুই ব্যক্তির, স্বামীর অবাধ্যা স্ত্রীর এবং এমন ইমামের যাকে মুসল্লিরা অপছন্দ করে। রাবী মানসূর বলেনঃ ইমাম সম্পর্কে আমরা জিজ্ঞাসা করলে আমাদের বলা হলোঃ যালিম বা অন্যায়চারী ইমামদের বেলায়ই উক্ত কথা প্রযোজ্য। কিন্তু যে ইমাম সুন্নাতের প্রতিষ্টা করেন, তাঁর ক্ষেত্রে তাঁকে অপছন্দকারী ব্যক্তির উপরই গুনাহ বর্তাবে। (তিরমিজী হাদিস নম্বরঃ ৩৫৯)

 

আবূ উমামা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেনঃ তিন ব্যক্তি এমন যাদের সালাত তাদের কানও অতিক্রম করে না, পলাতক গোলাম যতক্ষণ না সে (মালিকের কাছে) ফিরে আসে, এমন মহিলা যে তার স্বামীর অসন্তুষ্টিতে রাত্রি যাপন করে, এমন ইমাম মুসল্লিরা যাকে অপছন্দ করে। (মিশকাত ১১২২, তিরমিজী হাদিস নম্বরঃ ৩৬০)

মন্তব্যঃ মুসুল্লীদের অসন্তুষ্টি রেখে কোন ইমামের ইমামতি করা ঠিক নয় যদি মুসল্লীগন ইমামের প্রতি অসন্তষ্ট থাকে তবে ইমামের দায়িত্ব হল তা খুজে বাহির করা। তারপর নিজেকে সংশোধণ করে নেয়া। ইমাম হল সমাজের অনুকরণীয় ব্যাক্তি। তার চরিত্র দেখেই মানুষ খারাপ কাজ থেকে ফিরে আসবে। ইমামের প্রতি মুসল্লীর অসন্তুষ্ট এর অর্থ হলো তাকে সংশোধন হতে হবে। কাজেই ইমামের নিজ দায়িত্ব সংশোধন হতে হবে না হয় ইমামতি ছেড়ে দিতে হবে। 

৪৩। ইমাম সালাম সালাম ফেরানো শুরু করলেই মাসবূকের দাঁড়িয়ে পড়াঃ 

জমাতে সারাত শুরু হওয়ার এক দুই রাকারত হওয়ার পর অনেক মুসল্লী এসে জামাতে শরীক হয়। যে মুসল্লী জামাতে শুরুর পর ইমামের সাথে শরীক হল তাকে মাসবুক বলা হয়। ইমাম সালাম ফিরানোর পর মাসবুক ব্যাক্তি তার ছুটে যাওয়া সালাত একাকী আদায় করে থাকে। এই সময় লক্ষ করলে দেখা যায়, অনেক মুসল্লী ইমামের সালাম শেষ হওয়ার আগেই বা সালাম ফেরানো শুরু করলেই মাসবূকের দাঁড়িয়ে বাকি সালাত আদায় শুরু করে থাকে। মাসবুকের উচিত ইমামের দুই দিকে সালাম ফিরানো পর্যান্ত অপেক্ষা করা। যদি ইমাম সাহেব দিকে সালাম ফিরানোর পর সাহু সিজদা দেয় তবে কেমন হবে। তাই অনেক আলেম ইমামের দুই দিকের সালাম পর্যান্ত অপেক্ষা করতে বলেছেন।

মন্তব্যঃ শায়খ আবদুর রহমান সাদী (রহঃ) বলেন, এরূপ করা জায়েয নয়। ইমামের দ্বিতীয় সালাম শেষ করা পর্যন্ত অপেক্ষা করা জরুরী। কেউ যদি ইমামের সালাম পূর্ণ হওয়ার আগেই দাঁড়িয়ে পড়ে তবে তার ছলাত নফল হয়ে যাবে। ফরয ছালাত তাকে পূণরায় পড়তে হবে। অবশ্য যদি আবার বসে পড়ে তারপর দাঁড়ায় তবে কোন অসুবিধা নেই।

৪৪। সাহু সিজদার পদ্ধতিঃ

আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু’ রাকা’আত আদায় করে শেষ করলেন। যুল-ইয়াদাইন (রাঃ) তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! সালাত কি কম করে দেয়া দেওয়া হয়েছে, না কি আপনি ভুলে গেছেন? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞাসা করলেন, যুল-ইয়াদাইন কি সত্য বলছে? মুসল্লীগণ বললেন, হ্যাঁ। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাঁড়িয়ে আরও দু’ রাকা’আত সালাত আদায় করলেন। তারপর তিনি সালাম ফিরালেন এবং তাক্‌বীর বললেন, পরে সিজদা করলেন, স্বাভাবিক সিজ্‌দার মতো বা তাঁর চেয়ে দীর্ঘ। এরপর তিনি মাথা তুললেন।  (সহিহ বুখারি ১১৫৫ ইফাঃ, সহহি মুসলীম ১১৬৬ ইফাঃ, আবু দাউদ ১০০৮ ইফাঃ, তিরমিজ ৩৯৯)

আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাত দু’রাকাআত পড়লেন। তাঁকে বলা হল আপনি দু’রাকাআত সালাত আদায় করেছেন। তখন তিনি আরও দু’রাকাআত সালাত আদায় করলেন এবং সালাম ফেরানোর পর দুটি সিজদা করলেন (সহিহ বুখারি ৬৮০ ইফাঃ, আবু দাউদ ১০১৪, নাসাঈ ১২৫২)

আব্দুল্লাহ ইবন বুহায়না (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, একবার রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোনও এক সালাতে দু’রাক’আত আদায় করে না বসে দাঁড়িয়ে গেলেন। লোকেরাও তার সাথে দাঁড়িয়ে গেলেন। যখন তিনি সালাত শেষ করলেন এবং আমরা তাঁর সালাম ফিরানোর অপেক্ষা করছিলাম, তিনি তাকবীর বললেন এবং (শেষ) সালাম ফিরানোর পূর্বে বসা অবস্থায় পরপর দু’টি সিজদা করলেন পরে সালাম ফিরালেন (সহহি মুসলীম ১১৫১ এবং ১১৫৮ ইফাঃ, সহিহ বুখারি ১১৫১ ইফাঃ, আবু দাউদ ১০৩৪, তিরমিজ ৩৯১, নাসাঈ ১২৬১)

ইবরাহীম ইবনু সুওয়ায়দ (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, আলকামা আমাদেরকে নিয়ে যুহরের সালাত পাঁচ রাকআত আদায় করলেন। যখন সালাম ফিরালেন, তখন লোকেরা বলল, হে আবূ শিবল (আল কামার কুনিয়াত)! আপনি পাঁচ রাকআত পড়েছেন। তিনি বললেন, কক্ষণও নয়। আমি (ঐরূপ) করি নি। তারা বলল, অবশ্যই (আপনি পাঁচ রাকআত পড়েছেন)। বর্ণনাকারী সুওয়ায়দ বলেন, আমি তাদের এক পার্শ্বে ছিলাম। তখন আমি ছেলে মানুষ! আমি বললাম, হ্যাঁ। তখন তিনি ফিরলেন এবং দুটি সিজদা করে সালাম ফিরালেন। তারপর বললেন, আবদুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) বলেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার আমাদের নিয়ে পাঁচ রাক’আত সালাত আদায় করলেন। যখন সালাত শেষ করলেন লোকেরা ফিসফিস করতে লাগল। তিনি বললেন, তোমাদের কি হয়েছে? তারা বলল, ইয়া রাসুলাল্লাহ! সালাত কি বৃদ্ধি পেয়েছে? তিনি বললেন, না। তারা বলল, আপনি পাঁচ রাকআত পড়েছেন। তখন তিনি ঘূরে বসলেন এবং সিজদা করে সালাম ফিরালেন। তারপর বললেন, আমি তোমাদরই মত একজন মানুষ। তোমরা যে রূপ ভুলে যাও, আমিও তদ্রুপ ভুলে যাই। ইবনু নুমায়রের বর্ণনায় এটুকু বেশী আছে অতএব, তোমাদের কেউ যখন ভুলে যাবে, তখন দুটি সিজদা করবে। (সহহি মুসলীম ১১৬১ ইফাঃ)

আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমাদের কেউ যখন সালাত আদায় করতে দাঁড়ায়, তখন শয়তান ভুলাবার জন্য তাঁর নিকট আগমন করে। শেষ পর্যন্ত সে কয় রাক’আত পড়ল, তা তাঁর মনে থাকে না। যখন এরুপ হবে, তখন দুটি সিজদা (সাহু) করবে। (সহহি মুসলীম ১১৪৭ ইফাঃ, সহিহ বুখারি ১১৬০ ইফাঃ, তিরমিজ ৩৯৭, নাসাঈ ১২৫৩, ইবনে মাজাহ ১২১৬)

আবূ সাইদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যখন তোমাদের কেউ তার সালাতে সন্দেহে পতিত হয় এবং সে স্থির করতে ব্যর্খ হয় যে তিন রাকআত পড়েছে, তিন না চার রাকআত, তখন সে সন্দেহ পরিত্যাগ করবে এবং যে-কয় রাকআতের উপর দৃঢ় প্রত্যয় হয়, সেটিই ধারণ করবে। তারপর সালাম ফিরাবার পূর্বে দুটি সিজদা করবে যদি তার পাঁচ রাকআতই পড়া হয়ে গিয়ে থাকে, তবে এই দুই সিজদা মিলে ছয় রাকআত হয়ে যাবে। আর যদি তার সালাত পূর্ণ চার রাকআতই হয়, তবে দুই সিজদা! শয়তানের মুখে মাটি নিক্ষেপের শামিল হবে। (সহহি মুসলীম ১১৫৪ ইফাঃ, আবু দাউদ ১০২৪, ইবনে মাজাহ ১২০৪)

আবদুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যোহরের সালাত পাঁচ রাকআত পড়লেন। যখন সালাম ফিরালেন, তখন তাকে বলা হল, সালাত কি বেড়ে গেছে? তিনি বললেন, কি রূপে? তারা বলল, আপনি পাঁচ রাকআত পড়েছেন। তখন তিনি দুটি সিজদা করলেন। (সহহি মুসলীম ১১৬০ ইফাঃ, সহিহ বুখারী ৩৯৫ ইফাঃ, আবু দাউদ ১০১৯, তিরমিজি ৩৯২, নাসাঈ ১২৫৪, ইবনে মাজাহ ১২০৫)

মন্তব্যঃ উপরের সহিহ হাদিসগুলি আমাদের দেশে সিহাহ সিত্তাহ নামে খ্যাত সহিহ বুখারী, সহিহ মুসলিম, সুনানে আবু দাউদ, সুনানে তিরমিজি, সুনানে নাসাঈ এবং সুনানে ইবনে মাজাহ থেকে নেয়া হয়েছে। একই হাদিস একাধীক হাদিস গ্রন্থে উল্লেখ আছে বিধান বার বার একই হাদিস উল্লেখ করা হল না। এই হাদিসগুলীই সকল হাদিসের প্রতিনীধিত্ব করে বিধায় এইগুলি পড়লেই সিহাহ সিত্তাহ বা কুতুবুস সিত্তার সকল হাদিস পড়া হয়ে যাবে। এই হাদিসগুলিতে সিজদায়ে সাহুর দুটি নিয়ম বর্ণনা করা হয়েছে।

১। সালাম ফিরানোর আগে দুটি সিজদা

২। সালাম ফিরানোর পরে দুটি সিজদা

আমাদের দেশে অধিকাংশ মুসলিম যে এক দিকে সালাম ফিরিয়ে তার পর দুটি সিজদা প্রদান করে তার কোন প্রমন কি হাদিসের গ্রন্থে পাওয়া যায়?

কঠিন প্রশ্ন, আসুন উত্তর প্রমানের আগে কয়েকটি হাদিস দেখে আসি।   

১। সালামা ইবনু আলকামা (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি মুহাম্মদ ইবনু সীরীন) (রহঃ) কে জিজ্ঞাসা করলাম, সিজ্‌দায়ে সহুর পর তাশাহ্‌হুদ আছে কি? তিনি বললেন, আবূ হুরায়রা (রাঃ) এর হাদীসে তা নেই। (সহিহ বুখারি ১১৫৬ ইফাঃ)

২। ইমরান ইবনু হুসাইন (রাঃ) থেকে বর্ণিত, একদা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদেরকে নিয়ে সালাত আদায়কালে ভুল করেন। ফলে তিনি দু’টি সাহু সাজদাহ্‌ করেন। অতঃপর তাশাহ্‌হুদ পড়ে সালাম ফিরান। (আবু দাউদ ১০৩৯ ইফাঃ, মিশকাত ১০১৯ হাদিসের শাজ)

৩। ইমরান ইবনু হুসায়ন (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আসরের সালাত তিন রাকআত পড়ে সালাম ফিরালেন। তারপর নিজ গৃহে প্রবেশ করলেন। তখন খিরবাক নামক জনৈক ব্যাক্তি যার হাত দু’টি কিছুটা লম্বা ছিল। তাঁর উদ্দেশ্যে উঠে দাঁড়ালেন। এবং ‘হে আল্লাহর রাসুল’ বলে সম্মোধন করে বিষয়টি সম্পর্কে তাকে জানালেন। তিনি চাঁদর হেঁচড়াতে হেঁচড়াতে রাগান্বিত হয়ে বেরিয়ে এলেন। লোকদের নিকট এসে বললেন, এই লোকটি কি সত্য বলছে? তারা বলল, জী হ্যাঁ। তারপর তিনি এক রাকঅত আদায় করে সালাম ফিরালেন এবং দুটি সিজদা (সাহু) করে পূনরায় সালাম ফিরালেন। (সহহি মুসলীম ১১৭১ ইফাঃ)

মন্তব্যঃ আমাদের দেশে হানাফি মাযহাবের প্রচলিত পদ্ধতি কোন সহিহ হাদিসে পাওয়া যায় না। যারা এর পক্ষে পলেন তারা ইমরান ইবনু হুসাইন (রাঃ) থেকে সুনান আবু দাউদ ইসলামি ফাউন্ডেশন প্রকাশিত ১০৩৯ নম্বর হাদিসটি উল্লেখ করেন। এই হাদিসটি শাজ হাদিস। একাধিক নির্ভরযোগ্য রাবীর বিপরীত একজন নির্ভরযোগ্য রাবীর বর্ণনাকে শাজ হাদিস বলে। সহিহ বুখারি ও সহিহ মুসলিমে বহু সিহহ হাদিসের বিপরীত মাত্র একটি শাজ হাদিস গ্রহন যোগ্য নয়। তারা ছাড়া সহহি মুসলীম ইসলামি ফাউন্ডেশন প্রকাশিত ১১৭১ হাদিসটি ঐ একই রাবি ইমরান ইবনু হুসাইন (রাঃ) যিনি নিজেই তার হাদিসের বিপরীত হাদিস বর্ণনা করেছেন। তার শাজ হাদিসের সরাসরি বিরোধী একটি সহিহ হাদিস ইমাম বুখারী উল্লেখ করছেন হাদিসটি হলোঃ সালামা ইবনু আলকামা (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি মুহাম্মদ ইবনু সীরীন) (রহঃ) কে জিজ্ঞাসা করলাম, সিজ্‌দায়ে সহুর পর তাশাহ্‌হুদ আছে কি? তিনি বললেন, আবূ হুরায়রা (রাঃ) এর হাদীসে তা নেই। (সহিহ বুখারি ১১৫৬ ইফাঃ) 

এই সকল আলোচনা পর্যালোচনা করে এক বুঝা যায়। সুন্নাহ সম্মত সাহু সিজদার পদ্দতি দুটি। তা হলোঃ সালাম ফিরানোর আগে আথবা সালাম ফিরানোর পরে। তা হলে উপমহাদেশের হানাফি মাযহাবে যে আমল করে থাকে তার কি হবে?

হানাফি মাযহাবের অনেক আলেম দাবি করে থাকে ইমরান ইবনু হুসাইন (রাঃ) থেকে সুনান আবু দাউদ ইসলামি ফাউন্ডেশন প্রকাশিত ১০৩৯ নম্বর হাদিসটি সহিহ, তাই এই হাদিসের উপর আমল করা যাবে। তাদের আরও দাবি, সহিহ সনদে প্রমান পাওয়া যায় যে, অনেক সাহবী ও তাবেয়ীদর এইভাবে আমল করেছেন। এই হিসাবে তাদের মতে আমলটি করা সঠিক। যেহেতু তারা আমলের পক্ষে দলীল পেশ করে হোক না দুর্বল তাই তাদের সালাত হবে না এ কথা বলা যাবেনা। তবে তাদের দাবী যে অনেকই দুর্বল যা বলার অপেক্ষা রাখেনা। কারন সিহাহ সিত্তার শতাধীক সহিহ হাদিসের বিপক্ষে একটি শাজ হাদিসের উপর আমল করা কতটুকু যৌক্তিক।

একটি বিষয় উল্লেখ না করলেই নয়। সাহু সিজদার আগে একদিকে সালাম ফিরানোর যে প্রথাটি সমাজে প্রচলিত আছে, তার কোন ভিত্তি সহিহ বা যঈফ কোন হাদিসেই পাওয়া যায় না।

সংকলনেঃ মোহাম্মাদ ইস্রাফিল হোসাইন। (বিএ ইন এ্যারাবিক লিটারেচার, ইসলামিক হিস্টরী এন্ড ইসলামিক স্টাডিস)

Leave a comment