আযানের ভুলভ্রান্তিসমূহ

আযানের ভুলভ্রান্তিসমূহ

সংকলনেঃ মোহাম্মাদ ইস্রাফিল হোসাইন।

১। আযানের পূর্বে উচ্চস্বরে দরুত ও তাসবীহ পড়াঃ

জুম‘আর দিনে এবং অন্যান্য ছালাতে বিশেষ করে ফজরের আযানের আগে ও পরে বিভিন্ন মসজিদে মাইকে বিভিন্ন প্রকারে দুরুদ পাঠ করা হয়। নবী সালাম দিয়ে পড়া হয় ‘বিসমিল্লা-হ, আছ্ছালাতু ওয়াসসালা-মু ‘আলায়কা ইয়া রাসূলাল্লা-হ  ইয়া হাবীবাল্লাহ, … ইয়া রহমাতাল লিল ‘আ-লামীন এভাবে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে সালাম দেওয়ার পরে সরাসরি আল্লাহকেই সালাম দিয়ে বলা হয়, আছ্ছালাতু ওয়াসসালামু ‘আলায়কা ইয়া রববাল ‘আ-লামীন” এটা বিদ‘আত তো বটেই, বরং চরম মূর্খতা। কেননা আল্লাহ নিজেই ‘সালাম’। তাকে কে সালাম দিবে? তাছাড়া হাদীছে আল্লাহকে সালাম দিতে নিষেধ করা হয়েছে। (সহিহ বুখারী ও সহিহ মুসলিম)।

দুরুদ ছাড়াও বিভিন্ন প্রকারের হামদ, না‘ত, তাসবীহ, দরূদ, কুরআন তেলাওয়াত, ওয়ায, গযল ইত্যাদি শোনানো হয়। অনেক সময় উচ্চস্বরে বা মাইক্রোফোনে দরুদ বা তাসবীহ পাঠ পাশাপাশি গভীর রাতে আজানের পূর্বে মানুষের ঘুম থেকে ডাকার জন্য কুরআন তিলওয়াত করা হয়। এভাবে শেষরাতে ফজরের আযানের আগে বা পরে মসজিদে মাইকে উচ্চৈঃস্বরে কুরআন তেলাওয়াত করা, ওয়ায করা ও এভাবে মানুষের ঘুম নষ্ট করা ও রোগীদের কষ্ট দেওয়া এবং তাহাজ্জুদে বিঘ্ন সৃষ্টি করা কঠিন গোনাহের কাজে। আজানের পূর্বে উচ্চস্বরে যা কিছু ভাল মনে করে করবে সবই বিদআত।

আমাদের প্রিয় রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামও সাহাবীদের (রাঃ) শিক্ষা প্রদানের উদ্দেশ্যেও এমনটি করেন নাই। আমাদের সালাফদের কেউই এরুপ করে যান নাই। তাই এই ধরনের সকল প্রকার আমল বিদআত। অথচ কেবলমাত্র ‘আযান’ ব্যতীত এসময় বাকী সবকিছুই বর্জনীয়। এমনকি আযানের পরে পুনরায় ‘আছছালাত, আছছালাত’ বলে ডাকাও হযরত আব্দুল্লাহ বিন ওমর (রাঃ) প্রমুখ ছাহাবীগণ ‘বিদ‘আত’ বলেছেন। (তিরমিজি)

কাতবে ব্যক্তিগতভাবে যদি কেউ কাউকে ছালাতের জন্য ডাকেন বা জাগিয়ে দেন, তাতে তিনি অবশ্যই নেকী পাবেন।

২। আজানের শুরুতে বিসমিল্লাহ বলাঃ

সকল কাজের শুরুতে বিসমিল্লাহ বলা একটি সুন্নাহ সম্মত কাজ। কিন্তু আজান যেহেতু একটি স্বয়ং সম্পুর্ণ ইবাদাত তাই এই পদ্ধতি কোন কিছু সংযোজন করা যাবে না। কাজেই আজান ও ইকামতের শুরুতে ‘বিসমিল্লাহ্‌’ পড়া বিদআতি কাজ।  (আলমুমতে’, শারহে ফিক্, ইবনে উষাইমীন /১৩২

৩। আজাদের শব্দগুলি জোড় আর ইকামতের শব্দগুলি বিজোড় নিয়ে মতভেদঃ

আজান ইকামতের সঠিক বাক্যগুলিঃ

আযানের বাক্য ১৫ টিঃ  চার বার  আল্লাহু আকবার,  দুই বার আসহাদু আল্লাহ ইলাহা ইল্লাল্লাহ, দুই বার আসহাদু আন্না মুহাম্মাদুর রসুলু্ল্লাহ, দুই বার হাইয়াস সালাহম,  দুই বার হাইয়ালাল ফালাহ, দুইবার আল্লাহু আকবার এবং একবার লাইলাহ ইল্লাল্লাহ বলা। ফযরের সালাতের আযানে হাইয়ালাল ফালাহ, বলার পর দুই বার আস সালাতু খাইরুম মিলান নাউম বৃদ্ধি করে বলা হয়।

ইকামতের বাক্য ১১টিঃ দুই বার  আল্লাহু আকবার, এক বার আসহাদু আল্লাহ ইলাহা ইল্লাল্লাহ, এক বার আসহাদু আন্না মুহাম্মাদুর রসুলু্ল্লাহ, এক বার হাইয়াস সালাহম,  একবার হাইয়ালাল ফালাহ, দুইবার কদকামাতিস সালাহ, দুইবার আল্লাহু আকবার এবং একবার লাইলাহ ইল্লাল্লাহ বলা।

বিজোড় ইকামতের দলীলঃ

সহিহ বুখারীর শিরনাম হলোঃ কাদকা মাতিস সালাতু ব্যতিত ইকামাতের শব্দগুলো একবার বলা।

আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, বিলাল (রাঃ) কে আযানের শব্দ দু’বার এবং কাদকা মাতিস সালাহতু  (ةلصلا قامت قد) ব্যতীত ইকামাতের শব্দগুলো বেজোড় করে বলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। (সহিহ বুখারি হাদিস নম্বর ৫৭৮ ইসলামি ফাউন্ডেশন, পরের ৫৭৯ ও ৫৮০ এই একই বিষয়ে বর্ণিত হয়েছে)

সহিহ মুসলিমের শিরোমান হলোঃ এই শিরোনামে “আযানের শব্দ গুলো দুইদুইবার এবং ইকামাতের শব্দগুলো قد قامت الصلواة ছাড়া একবার বলা” মোট চারটি হাদিস এসেছে।

যেমনঃ  আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, বিলাল (রাঃ) কে নির্দেশ দেয়া হয়েছিল আযানের শব্দগুলো দু-বার করে বলতে এবং ইকামাতের শব্দগুলো এক বার করে বলতে। ইয়াহইয়া তার হাদীসে ইবনু উলায়্যার মাধ্যমে এতটুকু যোগ করেন যে, আমি আইউব (রাঃ) কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বললেন, قد قامت الصلوة শব্দটি ছাড়া (এটি দু’বার বলবে) বাকী শব্দ গুলো একবার করে বলবে। (সহিহ মুসলিম হাদিস নম্বর ৭২৪, ইসলামি ফাউন্ডেশন, পরের ৭২৫, ৭২৬, ও  ৭২৭ এই একই বিষয়ে বর্ণিত হয়েছে)

ইমাম বুখারী এবং ইমাম মুসলিমের মত ইমাম আবু দাউদ ও ইকামতের বর্ণনায় চাঁরটি হাদিস এনেছেন। যেমনঃ  আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, বিলাল (রাঃ)-কে আযান জোড় শব্দে এবং ইকামত বেজোড় শব্দে দেয়ার নির্দেশ প্রদান করা হয়। হাম্মাদ তাঁর হাদীছে আরও বর্ণনা করেছেন যে, কাদ কামাতিস্-সালাহ্ শব্দটি দু’বার বলবে। (সুনানে আবু দাউদ ৫০৮ ইসলামি ফাউন্ডেশন, পরের ৫০৯, ৫১০ ও ৫১১ এই একই বিষয়ে বর্ণিত হয়েছে)

এমনিভাবে কুতুবুস সিত্তায়র নাসাঈ ৬২৮ ও ৬২৯ ইসলামি ফাউন্ডেশন, সুনানে ইবনে মাযাহ অনুবাদ ইসলামি ফাউন্ডেশন এর ৭২৯, ৭৩০, ৭৩১ ও ৭৩২)

৩। জোড় বাক্যে ইকামত দেওয়ার পক্ষে দলীলঃ

 আব্দুর রহমান ইব্ন আবী লায়লা বলেন, আমাদের নিকট মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বহু সাহাবী বর্ণনা করেছেন যে, আব্দুল্লাহ ইবনে যায়েদ আল-আনসারী (রাঃ) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট আসলেন এবং বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ, আমি স্বপ্নে দেখলাম, যেন সবুজ একজোড়া কাপড় পরিহিত এক ব্যক্তি একটি দেয়ালের ভগ্নাবশেষের উপর দাঁড়ালেন, অতপর আযান দিলেন জোড়া জোড়া শব্দে এবং ইকামত দিলেন জোড়া জোড়া শব্দে। আর (আযান ও ইকামতের মধ্যবর্তী সময়ে) কিছুক্ষণ বসলেন। (তথা আযানের পরে কিছুক্ষণ বসে বিরতি দিলেন, তারপর ইকামত দিলেন)। (আল মুসান্নাফ, হাদীস ২১৩১; ত্বহাবী, ১/৪২০; আস সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হাদীস ২০৫৪)।

এই হাদিসটি আব্দুল্লাহ ইবনে যায়েদ আল-আনসারী (রাঃ) এর সনদে আবু দাউদে ৫১২ ও ৫১৩ ইসলামি ফাউন্ডেশনে অনুবাদে দুটি হাদিস বর্ণিত হয়েছে। যার দুটি সনদই যঈফ। এই জন্য অনেক হাদিস গবেষন হাদিসটি যঈফ বলেছেন। কিন্তু অনেক হাদিস গবেষন মনে করেন তাবিঈ আব্দুর রহমান ইবনে আবী লায়লা রাহ. মু‘আয ইবনে জাবাল বা আব্দুল্লাহ ইবনে যায়েদ রাযি.-এর নিকট থেকে বর্ণনাটি শোনেননি  তা নিশ্চিত। তবে এটাও নিশ্চিত যে, তিনি অন্যান্য বহু সাহাবী থেকে শুনেছেন। কারণ, তিনি  একজন জ্যেষ্ঠ, অগ্রজ ও প্রবীণ তাবিঈ।  একশত বিশজন সাহাবীর সঙ্গে তাঁর সাক্ষাৎ লাভ হয়েছে। তিনি এই হাদীসটি বর্ণনা করতে গিয়ে বলছেন যে, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বহু সাহাবী আমাদের নিকট বর্ণনা করেছেন। তাই তারা এই হাদিস কে সহিহ বলেছেন।

মন্তব্যঃ আমাদের দেশে সিহাহ সিত্তা নামে খ্যাত বুখারী, মুসলিম, আবু দাউদ, তিমরিজ, নাসাঈ ও ইবনে মাযাহে যত হাদিস বর্ণিত হয়েছে, তার সবগুলোতেই ‘কাদকা মাতিস সালাতু’ ব্যতিত ইকামাতের শব্দগুলো একবার বলা হয়েছে। অনেক গবেষন আলেম দাবি করেছেন আমাদের দেশে যে জোড় ভাবে ইকামত প্রচলিত আছে তার পক্ষেও সহিহ হাদিস আছে। কাজেই অবস্থা দেখে মনে হয় যারা ইকামত আজানের মত জোড় সংখ্যায় প্রদান করেন তাদেরটিকে বিদআত বলা যাবে না। কিন্তু গবেষনা করে এটা নিশ্চত বলা যায় যে, ‘কাদকা মাতিস সালাতু’ ব্যতিত ইকামাতের শব্দগুলো একবার বলা অধিক সহিহ ও সঠিক। যেমনটি হজ্জের সফরে মক্কা এ মনদিনায় আমল করতে দেখেছি।

৪। আজানের জবাবে দুটি ভূল আমলঃ

আজানের জবাবের ভুল জানার পূর্বে দেখি কিভাবে সঠিকভাবে আজানের জবাব দিতে হয়। সঠিকটি জানতে পারলে ভূল ধরা সহজ হবে। এই জন্য ব্যাখ্যা বিশ্লষণ না করে কয়েটি সহিহ হাদিস তুলে ধরছি। পড়লেই আজানের জবাব সম্পর্কে জানা যাবে।

আবূ সায়ীদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যখন তোমরা আযান শুনতে পাও তখন মুয়ায্‌যিন যা বলে তোমরাও তার অনুরূপ বলবে। (সহিহ বুখারী ৫৮৪ ইফাঃ, সহিহ মুসলিম ৭৩৪ ইফাঃ, আবু দাউদ ৫১২ ইফাঃ)

উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ যখন মুয়াযযিন আযানের সময় আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার বলবে, তখন তোমরাও আল্লাহু আকবার বলবে। অতঃপর মুয়াযযিন যখন আশহাদু আল্-লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্ বলবে তখন তোমরাও আশহাদু আল্-লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্ বলবে অতঃপর মুয়াযযিন যখন আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ্ বলবে– তখন তোমরাও আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ্ বলবে অতঃপর মুয়াযযিন যখন হাইয়া আলাস্ সালাহ্ বলবে তখন তোমরা বলবে, লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ্ অতঃপর মুয়াযযিন যখন হাইয়া আলাল ফালাহ্ বলবে তখন তোমরা বলবে লা-হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ্ অতঃপর মুয়াযযিন যখন আল্লাহু আকবার বলবে তখন তোমরা আল্লাহু আকবার বলবে অতঃপর মুআযযিন যখন লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্ বলবে, তখন তোমরাও লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্ বলবে তোমরা যদি আন্তরিকভাবে এরূপ বল তবে অবশ্যই জান্নাতে প্রবেশ করবে। (সহিহ মুসলিম ৭৩৬ ইফাঃ, সুনানে আবু দাউদ ৫২৭ ইফাঃ)

একটি মাসায়েলঃ আযানের জওয়াব দেবে প্রত্যেক সেই ব্যক্তি যার জন্য আল্লাহর যিক্‌র করা বৈধ। অতএব পবিত্র অবস্থায়, অপবিত্র বা মাসিক অবস্থায় নারী-পুরুষ সকলের জন্যই আযানের জওয়াব দেওয়া মুস্তাহাব। অবশ্য নামায পড়া অবস্থায়, প্রস্রাব-পায়খানা করা অথবা বাথরুমে থাকা অবস্থায় এবং স্ত্রী-মিলন রত অবস্থায় আযানের উত্তর দেওয়া বৈধ নয়। এসব কাজ থেকে ফারেগ হওয়ার পর বাকী আযানের উত্তর দেওয়া বিধেয়। (সলাতে মুবাশশির, আব্দুল হামিদ ফাইজি)

 প্রথম ভূল আমলঃ মুয়াজ্জিন যখন “আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ্” বলেন তখন আমাদের দেশের অধিকাংশ লোক এর জমাবে বলেন, সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। তাদের এই কাজটি সুন্নাহ সম্মত নয়। কারন আজানের জবাবে আমরা দেখেছি, মুয়াযযিন যখন আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ্ বলবে, তখন তোমরাও আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ্ বলবে। দুরূদ পড়ার স্থান এখানে নয়। দুরূদ পড়ার স্থান হল আজানের শেষে রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জন্য অসিলার দোয়া করার পূর্বে।

 দ্বিতীয় ভূল আমলঃ আমাদের সমাজে অনেক বলে থাকেন, মুআযযিন যখন ‘আসস্বলাতু খাইরুম মিনান নাউম” বলবেন তখন উত্তরে বলতে হবে,‘স্বাদাকতা অবারিরতা বা বারারতা”। তাদের এই কথার কোন ভিত্তি ইসলামি শরীয়তে নেই। তবে দলীল না থাকলেও যুক্তি থাকতে পারে। কিন্তু যুক্তি দিয়েতো আর ইসলাম হয় না। কাজেই ,মুআযযিন ‘আসস্বলাতু খাইরুম মিনান নাউম’ বললে অনুরুপ বলে জওয়াব দিতে হবে।

৫। আজানের বর্ণিত শব্দবলী কম বেশি না করাঃ

আযানের সমস্ত শব্দাবলী রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কর্তৃক প্রদত্ত। এই শব্দাবলীর কোন প্রকার কম বেশী করা যাবে না। কম বেশী করলেই বিদআত হয়ে যাবে। যেমনঃ ‘হাইয়্যা আলা খাইরিল আমাল, ‘আশহাদু আন্না সাইয়্যিদানা’ প্রভৃতি বাড়তি শব্দ ও বাক্য বিদআত। (ফাতাওয়া মুহিম্মাহ্তাতাআল্লাকু বিসসলাহ্‌, ইবনে বায ৩৪পৃ🙂

তবে ঝড় বৃষ্টি বা অন্য কোন কারনে বাক্য বদলে বলা সহিহ হাদিস দ্বারা প্রমানিত ক্ষেত্র হাদিসে বর্ণিত বাক্য ব্যবহার করতে হবে যেমনঃ

নাফে (রহঃ) থেকে বর্ণিত। আব্দুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) এক রাতে সালাতের জন্য আযান দেন। সে রাত্রে খুব ঠাণ্ডা পড়েছিল ও প্রচণ্ড বাতাস বইছিল। তিনি আযানে বলেনঃ আলাস সল্লাও ফি রহাল (الرِّحَالِ فِي صَلُّوا أَلاَ) সকলেই আপন আপন স্থানে সালাত আদায় করে নিন। কেননা ঠাণ্ডা ও বৃষ্টির রাতে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুয়াযযিনকে এই কথা ঘোযণা করতে নির্দেশ দিতেন যে, সকলেই আপন আপন স্থানে সালাত আদায় করে নিন। (সুনানে নাসাঈ ৬৫৫ ইফাঃ)

নাফি’ (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, প্রচন্ড এক শীতের রাতে ইবনু উমর (রাঃ) যাজনান নামক স্থানে আযান দিলেন। এরপর তিনি ঘোষণা করলেনঃ তোমরা আবাস স্থলেই সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করে নাও। পরে তিনি আমাদের জানালেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সফরের অবস্থায় বৃষ্টি অথবা প্রচন্ড শীতের রাতে মুয়ায্‌যিনকে আযান দিতে বললেন এবং সাথে সাথে একথাও ঘোষণা করতে বললেন যে, তোমরা আবাসে সালাত আদায় করে নাও। (সহিহ বুখারী ৬০৪ ইফাঃ)

মন্তব্যঃ তবে মনগড়া বাক্য সংযোজন করা যাবে না তা হলে বিদআত হয়ে যাবে ফজর ছাড়া অন্য ওয়াক্তের আযানে ‘আসস্বলাতু খাইরুম’ বলা বৈধ নয়। ইবনে উমার (রাঃ) এটিকে বিদআত বলেছেন এবং তা শুনে সে আযানের মসজিদ ত্যাগ করেছেন। (আবূদাঊদ, সুনান ৫৩৮)

 

৬। আজানের সমাপ্তের পর দোয়াঃ

আবদুল্লাহ ইবনু আমর ইবনুল আস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি রাসুল কে বলতে শুনেছেন, তোমরা যখন মু’আযযীনকে আযান দিতে শুনবে, তখন সে যা বলে তাই বলবে। তারপর আমার ওপর দুরূদ পাঠ করবে। কারণ যে আমার ওপর একবার দরুদ পাঠ করে, আল্লাহ তার বিনিময়ে তার ওপর দশবার রহমত নাযিল করেন। পরে আল্লাহর কাছে আমার জন্য ওসীলার দুআ করবে। ওসীলা হল জান্নাতের একটি বিশেষ স্থান, যা আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে কোন এক বান্দাকে দেয়া হবে। আমি আশা করি যে, আমিই হব সেই বান্দা। যে আমার জন্য ওসীলার দুআ করবে, তার জন্য আমার শাফাআত ওয়াজিব হয়ে যাবে। (সহিহ মুসলিম ৭৩৫ ইফাঃ,  আবু দাউদ ৫২৩ ইফাঃ)

জাবির ইবনু আবদুল্লাহ‌ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যাক্তি আযান শুনে দু’আ করেঃ

* اللَّهُمَّ رَبَّ هَذِهِ الدَّعْوَةِ التَّامَّةِ وَالصَّلاَةِ الْقَائِمَةِ آتِ مُحَمَّدًا الْوَسِيلَةَ وَالْفَضِيلَةَ وَابْعَثْهُ مَقَامًا مَحْمُودًا الَّذِي وَعَدْتَهُ، حَلَّتْ لَهُ شَفَاعَتِي يَوْمَ الْقِيَامَةِ ‏*‏

‘হে আল্লাহ-এ পরিপূর্ণ আহবান ও সালাতের প্রতিষ্ঠিত মালিক, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ওয়াসীলা ও সর্বোচ্চ মর্যাদার অধিকারী করুন এবং তাঁকে সে মাকেমে মাহমূদে পৌছিয়ে দিন যার অঙ্গিকার আপনি করেছেন’- কিয়ামতের দিন সে আমার শাফা’আত লাভের অধিকারী হবে।

(সহিহ বুখারী ৫৮৬ ইফাঃ)

মন্তব্যঃ আজান শ্রতার তিনটি কাজ। আজানের জবাব দিবে, দুরূদ পাঠ করবে এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জন্য দোয়া করবে। আজান সমাপ্তার পর আমরা এই তিনটি সুন্নাহ সম্মত কাজ না করে বিদআত করতে থাকে। যেমনঃ আজানের শেষে তারা হাত তুলে বিদআতি পদ্ধতিতে দোয়া করতে থাকে। আজানের পর হাত তুলে দুআ করা প্রমাণিত নয়। তাই হাত তুলে দুআ না করাই উচিত।

দোয়া সময় হাত তোলা কে জরুরী মনে করলে আমলটি বিদআত হবে। তদ্রুপ আজানের জবাব দানে যে দোয়া করা হয়, সে সময় হাত তোলাও বিধেয় নয়। রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম  বা তার সাহাবী থেকে এই সময় দোয়ায় হাত তোলার প্রমান নেই।  

৭। রাসূল (সাঃ) এর নাম শুনেই আঙ্গুলে চুমু দিয়ে চোখ রগড়ানোঃ

অনেক মুসলিম ভাইকে দেখা যায় আজান এবং ইকামতের সময় যখন মুয়াজ্জিল বলেন, আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ্ তখন তারা বিশেষ দো‘আ সহ আঙ্গুলে চুমু দিয়ে চোখ রগড়ানো। রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নাম শুনলে দুরূদ পড়তে হবে ঠিক আছে। কিন্তু আজান ইকামতের সময় তার নাম শুনলে পড়তে হবে না। পরে দুরূদ পড়তে হবে। কিন্তু তারা আজান ইকামতে ‘মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ’ শুনেই আঙ্গুলে চুমু দিয়ে চোখ রগড়াতে শুরু করে। এই ধরনের আমল পরিস্কার বিদআতি কাজ। কিন্তু ইদানিং বিদআত পন্থী কিছু আলেম এর পক্ষ মিথ্যা ও জাল হাদিস পেশ করে দলীল পেশ করা চেষ্টা করছে। তাই বিষয়টি নিয়ে একটু আলোকপাত করছি। তারা মুলত ৪/৫ টি জাল কথা উল্লেখ করে থাকে পাঠদের অবগতির জন্য কয়েকটি জাল কথা তুলে ধরলাম।

১। খিযির (আঃ) বলেন, মুয়াযযিন যখন ‘আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ’ বলবে, তখন যে ব্যক্তি বলবে, আমার প্রিয় ব্যক্তিকে স্বাগত, মুহাম্মাদ বিন আব্দুল্লাহর কারণে আমার চক্ষু শীতল হয়েছে, অতঃপর তার দুই হাতের বৃদ্ধা আংগুলে চুম্বন করবে ও দুই চোখ মাসাহ করবে, সে কখনো অন্ধ হবে না এবং তার চোখও ওঠবে না। (ইসমাঈল বিন মুহাম্মাদ আল-জার্রাহী, কাশফুল খাফা ২/২০৬ পৃঃ; তাযকিরাতুল মাওযূ‘আত, পৃঃ ৩৪।

মন্তব্যঃ  বানোয়াট ও ভিত্তিহীন বর্ণনা। এর কোন সনদই নেই। আল-মাক্বাছিদুল হাসানাহ, পৃঃ ৬০৫; আল-ফাওয়াইদুল মাজমূ‘আহ ফিল আহাদীছিল মাওযূ‘আহ, পৃঃ ২০,
২। হযরত ওয়াহাব ইবনে মুনাব্বাহ (রাঃ) বলেন, বনী ইসরাঈলের মধ্যে এক ব্যক্তি ছিল অত্যন্ত পাপী, যে ২০০ বছর পর্যন্ত আল্লাহর নাফরমানী করেছে। যখন সে মৃত্যুবরণ করে মানুষেরা তাকে এমন স্থানে নিক্ষেপ করল, যেখানে আবর্জনা ফেলা হতো। তখন হযরত মুসা (আ:) এর প্রতি ওহী এলো যে, লোকটিকে ওখান থেকে তুলে যেন তার ভালভাবে জানাযার নামায পড়ে তাঁকে দাফন করা হয়। হযরত মুসা (আ:) আরজ করলেন, হে আল্লাহ! বনী ইসরাঈল সাক্ষ্য দিচ্ছে যে, লোকটি ২০০ বছর পর্যন্ত তোমার নাফরমানী করেছিল। ইরশাদ হলো, হ্যাঁ, তবে তার একটি ভাল অভ্যাস ছিল। যখন সে তাওরাত শরীফ তেলাওয়াত করতো, যতবার আমার হাবীব হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নাম মোবারক দেখত তখন সেটা ততবার চুম্বন করে চোখের উপর রাখত এবং তার প্রতি দুরূদ পাঠ করত। এজন্য আমি তাকে ক্ষমা করে দিয়েছি এবং সত্তর জন হুর স্ত্রী স্বরূপ তাকে দান করেছি।’’

(হুলিয়াতুল আউলিয়া ৩/১৪২, সিরাতে হালবিয়্যাহ ১/৮৩, জিকরে জামীল ৩৫৪ পৃষ্ঠা, নুযহাতুল মাযালিস ২/১৪২, আল খামীস ফি আহওয়ালে আনফাসে নাফীস : ১/২৮২)

মন্তব্যঃ এই কথাগুলি জাল। যারা যে সকল বইয়ের নাম উল্লেখ করছেন যার কোন সহিহ ভিত্তি শরীয়তে নেই। এই কিতাবগুলির অধিকাংশ কথাই মন গড়া। জাল প্রমানের জন্য কিতাবগুলির নামই যথেষ্ট।

৩। বিখ্যাত মুফাস্সির আল্লামা ইসমাঈল হাক্কী (রহ,) তাঁর উল্লেখযোগ্য তাফসীর তাফসীরে ‘রুহুল বায়ানে’ লিখেন, ‘‘কাসাসুল আম্বিয়া কিতাবে বর্ণিত আছে যে, হযরত আদম (আ:) জান্নাতে অবস্থানকালে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে সাক্ষাতের জন্যে আগ্রহ প্রকাশ করেন। অত:পর আল্লাহ তা‘য়ালা তাঁর নিকট ওহী প্রেরণ করেন যে, হে আদম! তিনি তোমার পৃষ্ঠ হতে শেষ যামানায় প্রকাশ হবেন। তা শুনার পর তিনি জান্নাতে অবস্থানকালে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা জানালেন। বিনিময়ে আল্লাহ তা’য়ালা ওহী প্রেরণ করলেন, যে নূরে মুহাম্মদী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তোমার ডান হাতের শাহাদাত আঙ্গুলীর মধ্যে স্থানান্তরিত করেছি, তখন সে অঙ্গ হতে তাসবীহ পাঠ আরম্ভ হলো। এজন্যই এই আঙ্গুলকে তাসবীহ পাঠকারী আঙ্গুল বলা হয়। যেমনঃ রওযাতুল ফায়েক কিতাবেও বর্ণিত আছে, অথবা আরেক বর্ণনায় রয়েছে, আল্লাহ তা’য়ালা আপন হাবীব সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সৌন্দর্য প্রকাশ করলেন দুই বৃদ্ধাঙ্গুলীর উপর যেভাবে আয়নাতে দেখা যায়। তখন আদম (আ:) দুই বৃদ্ধাঙ্গুলে চুম্বুন করে স্বীয় চোখের উপর মালিশ করলেন। এটি দলীল হিসেবে প্রমাণিত হলো যে, তাঁর সন্তানাদীর জন্য। অতঃপর জিবরাঈল (আঃ) এই ঘটনা হুযুর সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে জানালেন। হুযুর সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের বললেন, যেই ব্যক্তি আযানের মধ্যে আমার নাম মোবারক শুনে দুই বৃদ্ধাঙ্গুলী চুম্বন করবে আর চোখে মালিশ করবে, সে কখনো অন্ধ হবে না।

মন্তব্যঃ এই হাদিস দুটি দেয়া হয়েছে, কাসাসুল আম্বিয়া কিতাবে ও রওযাতুল ফায়েক থেকে এই দুটি কিতাবই জাল। এখান থেকে কোন হাদিস গ্রহন করে আমল করা জায়েয হবে না।

 হযরত আবু বকর (রা:) এর আমল এবং সনদ তাত্ত্বিক বিশ্লেষনঃ হযরত আবু বকর (রা:) হতে বর্ণিত, তিনি মুয়ায্যিনকে ‘আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার’ রাসূলূল্লাহ বলতে শোনলেন, তখন তিনিও তা বললেন এবং বৃদ্ধাঙ্গুলীদ্বয়ে চুমু খেয়ে তা চোখে বুলিয়ে নিলেন। তা দেখে রাসূল পাক সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন : যে ব্যক্তি আমার বন্ধুর ন্যায় আমল করবে, তার জন্য আমার সুপারিশ বৈধ হয়ে গেল।’’

 (এই জাল হাদিসটি উল্লেখ করে বিদআতিগন বলে থাকেন, আল্লামা ইমাম সাখাভী (রহ,) হযরত আবু বকর (রা:) এর বর্ণিত হাদিসটি সংকলন করে বলেন, ‘হাদিসটি সহীহ নয়।’ হাদিসটি সহীহ নয় বললে, “হাসান” হাদিস বুঝায়)।

মন্তব্যঃ দেখুন কিভাবে ধোকা দেয়। হাদিসটি সহিহ নয় মানে হাসান হাদিস। বলা উচিত ছিল সহিহ নয় মানে জাল হাদিস। এটি ডাহা মিথ্যা বর্ণনা। এর কোন সনদ নেই।

এই অশুদ্ধ হাদিটির বিশ্লষন দেখুনঃ

দায়লামী ফিরদাউস নামক কিতাবে লিখেছেন যে, হযরত আবূ বকর সিদ্দীক (রাঃ) মুআজ্জিনের মুখ থেকে “আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ” শুনে হুবহু তা বললেন। তারপর শাহাদত আঙ্গুলের ভিতরের অংশে চুমু খেলেন এবং উভয় চোখ মাসাহ করলেন। এ কর্ম দেখে রাসূল সাঃ বললেন, যে ব্যক্তি আমার বন্ধুর অনূরূপ কাজ করবে তার জন্য সুপারিশ করা আমার উপর অপরিহার্য। আল্লামা সাখাবী বলেনঃ এ বর্ণনা সহীহ নয়। [মাকাসিদুল হাসানাহ-৪৪০-৪৪১, বর্ণনা নং-১০১৯]

মোল্লা আলী কারী রহঃ বলেন, সাখাবী বলেন, এটি বিশুদ্ধ নয়। আর শায়খ আহমাদ আররদাদ স্বীয় কিতাব “মুজিবাতুর রহমাহ” এ এমন সনদের সাথে উল্লেখ করেছেন, যাতে রয়েছে অপরিচিত লোক এবং হযরত খিজির আঃ পর্যন্ত সূত্র বিচ্ছিন্নতাও বিদ্যমান। এ বিষয়ে যা কিছু বর্ণিত এর কোনটিই রাসূল সাঃ এর ফরমান হওয়া প্রমাণিত নয়। আমি বলি, যদি আবু বকর সিদ্দীক রাঃ পর্যন্ত এর সনদ সহীহ হতো, তাহলে এর উপর আমল করা সঠিক হতো। [আলমওজুআতুল কুবরা, মোল্লা আলী কারী-২১০, বর্ণনা নং-৮২৯]

জালালুদ্দীন সুয়ূতী রহঃ বলেন, মুআজ্জিনের মুখে কালিমায়ে শাহাদাত পাঠকালে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নাম শুনে আঙ্গুল চুমু খাওয়া এবং তা চোখের উপর রাখা সংক্রান্ত যত হাদীস বর্ণিত হয়েছে, সবই জাল-বানোয়াট। {তাইসীরুল মাক্বাল লিস সুয়ূতী-১২৩}

আব্দুল হাই লাক্ষ্ণেৌবী রহঃ বলেন, সত্য কথা হল, রাসূল সাঃ এর নাম একামত বা অন্য কোন স্থানে শুনার পর আঙ্গুল চুমু খাওয়ার ব্যাপারে না কোন হাদীসে নববী [বিশুদ্ধ সূত্র অনুপাতে] আছে, না কোন সাহাবীর আমল বা বক্তব্য [বিশুদ্ধ সূত্রে] বর্ণিত আছে। তাই যে ব্যক্তি এ আমলের প্রবক্তা, সে ব্যক্তি অনেক বড় অপবাদ আরোপকারী। তাই একাজ ঘৃণ্য ধরণের বিদআত। শরয়ী গ্রন্থাবলীতে যার কোন ভিত্তি নেই। যে এসব কথা বলে, তার উচিত [সহীহ] প্রমাণ পেশ করা। [আসসিয়ায়া-১/৪৬]

মন্তব্যঃ আশা করি কিছু বলার প্রয়োজন নেই। আল্লামা সাখাবী যেখানে মানুষের মুখে প্রচলিত হাদীসের আলোচনায় এমন একটি বর্ণনা এনে, তা বিশুদ্ধ নয়, এতে প্রচুর অপরিচিত ব্যক্তি আছে এবং তাতে রয়েছে সূত্রবিচ্ছিন্নতা, এসব কিছু বলার পরও উক্ত কিতাবের নামে এ বর্ণনা দলীল হিসেবে পেশ করা প্রতারণা মাত্র। উপরের আলোচনা ও তথ্য প্রমাণ দ্বারা আশা করি পরিস্কার হয়ে গেছে যে, আজানের সময় বা অন্য সময় রাসূল সাঃ এর নাম শুনে আঙ্গুলে চুমু খেয়ে চোখে মোছা সম্পর্কিত কোন বর্ণনাই সহীহ নয়। সবই মনগড়া ও বানোয়াট। এই মর্মে রাসূল (সা.)-এর কোনো হাদিসই সাব্যস্ত হয়নি। যে রেওয়াতটি উল্লেখ করা হয়ে থাকে, এটি আবু বকর (রা.) থেকে এসেছে বলা হয়ে থাকে। এটি একেবারেই জালিয়াতি বক্তব্য, মিথ্যা বক্তব্য। তাই এ কাজকে সুন্নত বা মুস্তাহাব মনে করা সুষ্পষ্ট বিদআত।

৮। আজান ইকামত সরাসরি হবেঃ

আজান একামত যেহেতু ব্যক্তিগত ইবাদাত। তাই স্ব-শরীরে থেকে ব্যক্তিকে আজান ইকামত দিতে হবে। কোন কারনে টেপ-রেকর্ডারের মাধমে আযান দিলে শুদ্ধ হবে না। ঠিক তেমনীভাবে ইকামত মোবাইল বা অন্য কোন মাধ্যমে দিয়ে সালাত আদায় করলে ইকামত শুদ্ধ হবে না। (শারহে ফিক্, ইবনে উষাইমীন /৬১৬২)

সংকলনেঃ মোহাম্মাদ ইস্রাফিল হোসাইন। (বিএ ইন এ্যারাবিক লিটারেচার, ইসলামিক হিস্টরী এন্ড ইসলামিক স্টাডিস)

Leave a comment