বিদআত চিনার উপায় চতুর্থ কিস্তি : কিভাবে বুঝবেন আপনার আমলটি বিদআত

বিদআত চিনার উপায় : চতুর্থ কিস্তি

কিভাবে বুঝবেন আপনার আমলটি বিদআত

সংকলনেঃ মোহাম্মাদ ইস্রাফিল হোসাইন।

মুসলীম সমাজ সবচেয়ে বেশী বিভ্রান্তিতে আছে বিদআদ চিহিৃত করণ নিয়ে। যারা বিদআত করে তারা কখন স্বীকার করে না যে তার আমলটি বিদআত। সে নানা অনুহাতে বিদআতটিক ভাল কাজ বলে চালিয়ে যেতে চায়। যখন কাউকে বললেন ভাই আপনার এ আমলটি বিদআত। সে সাথে সাথে উত্তর দেন, দেখুন বুঝালাম আমলটি কি বিদআত, কিন্তু আমিতো কোন খারাপ কাজ করছিনা। আমলটি ভাল, মহান আল্লাহর খুশির জন্যই করছি। তাছাড়া কারও ক্ষতিতো আর হচ্ছে না। কিন্তু যে কিছুতেই বুঝতে চাবে না যে, আমলটি মহান আল্লাহর খুশির জন্যই করা হয় অথচ তার কোন নিয়ম পদ্ধতি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া-সাল্লাম এর সুন্নাহে নেই বা সময় সুযোগ থাকতেও সাহাবিগনও (রাঃ) করেন নাই। কাজেই বিদআতি আমল পরিত্যাগের আগে বিদআত চিনা খুবই দরাকার। যেমন ধরুন মিলাদুন্নবী একটি বিদআতি আমল। যখন আপনি কোন বিদআতি বলেবেন আমলটি বিদআত। সে শত শত ভাল ভাল যুক্তি দিয়ে মিলাদুন্নবী পালনের কথা বলবে। তাদের যুক্তি থেকে কোন খারাপ আপনি পাবেন না। কারন পৃথিবীর শ্রষ্ঠ মানুষের পক্ষে তা যা বলবে তা নিতান্তই কম হবে। তাই তাদের যুক্তি মিলাদুন্নবী পালন আপনি রাজি হয়ে যাবেন। কিন্তু আপনার যদি বিদআত চিনার জ্ঞান থাকে, তা হলে তাদের কোন যুক্তি আপানার কাছে যৌক্তিক মনে হবেন। কারন আপনি জেনে গেছেন যে, কোন ভাল কাজ ইসলাম মনে করে করা হয় অথচ সময় সুযোগ থাকতেও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া-সাল্লাম এই পদ্ধতিতে এমন আমল করে নাই তাই বিদআত। যখন দেখবেন মিলাদুন্নবী সম্পর্কে কুনআন হাদিসে কোন আমল বর্ণনা নাই। তখন আপনি এই আমলকে বিদআত বলে ঘোষনা দিবেন। কাজেই বুঝা গেলে বিদআত থেকে মুক্ত থাকতে গেলে আগে বিদআতকে সঠিকভাবে চিনতে হবে। শত্রুকে চিনতে পারলে যেমন তার থেকে শর্তক থাকা যায়। বিদআতকে চিনতে পারলেও তার থেকে শর্তক থাকা যাবে। তাই আসুন দেখি, কিভাবে বুঝবেন আপনার আমলটি বিদআত। নিম্ম এমনই কথগুলি মানদন্ড বর্ণনা করা হলোঃ

১। কুনআন ও সহিহ হাদিসে আমলটির কোন দলীল নেই

২। ইসলামী শরীয়ত সম্মত আমল নিয়ে বাড়াবাড়ি

৩। ইসলামি শরিয়ত সম্মত কোন বিষয়ে বৃদ্ধি

ক। ইবাদতে বৃদ্ধি করা

খ। আকিদায় বৃদ্ধি করা

গ। রাসূল সম্পর্কে বৃদ্ধিকরা

ঘ। অলী আওলীয়া সম্পর্কে বৃদ্ধিকরা

৪। ইসলামি শরিয়ত সম্মত কোন ইবাদতে হ্রাস করা

৫। ইবাদতকে স্থানের সাথে নির্দিষ্ট করা

৬। ইবাদতকে সময়ের সাথে নির্দিষ্ট করা

৭। ইবাদতকে সংখ্যার সাথে নির্দষ্ট করা

৮। অত্যধিক দুর্বল, মিথ্যা ও জাল হাদীসের উপর আমল করা

৯। যে আমলটির করার প্রমান খাইরুন রুকনেও পাওয়া যায় না

১০। শরীয়তের বাহিরে সম্পূর্ণ নতুন কোন পদ্ধতি আবিস্কার করে ইবাদত করা

১১। ইসলাম বিরোধী হারাম কাজকে ইবাদত মনে করে বিদআত করা

১২। বিদআতের সম্পর্ক দ্বীনের সাথে দুনিয়ার সাথে নয়

১৩। ইবাদতের উপকরন বিদআত নয়

১৪। বিদআতে আরও কিছু নীতিমালা

 

৫। ইবাদতকে স্থানের সাথে নির্দিষ্ট করাঃ

যারা ইবাদতে স্থানের সাথে নির্দিষ্ট করতে তাদেরও  দলিল আছে। কিন্তু উক্ত দলীল ভূলভাবে উপস্থাপণ করা হয়েছে। পৃথিবীর সকল স্থান ইবাদতের জন্য নির্দিষ্ট করা যাবে না। কুরআন সুন্নাহ দ্বারা প্রমানিত স্থান ও বস্তু দ্বারা বরকত হাসিল করা যাবে। কিন্তু কুরআন সুন্নাহর বাহিরে স্থান ও বস্তু দ্বারা বরকত হাসিল করা যাবে না। কুরআন সুন্নাহ দ্বারা বাইতুল্লাহ স্থানকে নির্দিষ্ট করে অন্য স্থানে তাওয়াব যেমন সঠিক নয়। ঠিক তেমনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর করব, আরাফা, মীনা, মুজদালীফা ইত্যাদি দ্বারা অন্য স্থানের ফজিলত সাব্যস্ত করা যাবে না। যারা স্থানের সাথে বরকতে কথা বলে থাকেন তাদের দলীল উল্লেখ করা হল।

“ইসলামি আকিদা ও ভ্রান্ত মতবাদ” কিতাবে বলা হয়েছে, স্মৃতি বিজরিত স্থান থেকে বরকত লাভ এ বিষয়টি জায়েয হওয়ার ব্যপারে আমদের জমহুরের মতের পক্ষে কুরআন, হাদিস, ইজমা ও কিয়াস। এই সকল দলিল বিদ্যমান। এসর দলিল থাকার পরও যারা এটা্কে অস্বীকার করেন এবং নিজের মতে গো ধনের, তাদের শরিয়ত প্রিয় বলা যেতে পারে না। নিম্মে কুরআন, হাদিস, ইজমা ও কিয়াস এই চার প্রকার দলিল পেশ করা হল। এর পর কুরআনের দলিল হিসাবে প্রথম আয়কাতটি পেশ করেন।

মহান আল্লাহ বলেন,

سُبۡحَـٰنَ ٱلَّذِىٓ أَسۡرَىٰ بِعَبۡدِهِۦ لَيۡلاً۬ مِّنَ ٱلۡمَسۡجِدِ ٱلۡحَرَامِ إِلَى ٱلۡمَسۡجِدِ ٱلۡأَقۡصَا ٱلَّذِى بَـٰرَكۡنَا حَوۡلَهُ ۥ لِنُرِيَهُ ۥ مِنۡ ءَايَـٰتِنَآ‌ۚ إِنَّهُ ۥ هُوَ ٱلسَّمِيعُ ٱلۡبَصِيرُ (١)

অর্থঃ পবিত্র মহান সে সত্তা, যিনি তাঁর বান্দাকে রাতে নিয়ে গিয়েছেন আল মাসজিদুল হারাম থেকে আল মাসজিদুল আকসা* পর্যন্ত, যার আশপাশে আমি বরকত দিয়েছি, যেন আমি তাকে আমার কিছু নিদর্শন দেখাতে পারি। তিনিই সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা। (সুরা বনী ঈসরাইলের ১৭:০১)।

হাদিসের  দলিল হিসাবে বুখারির এ সহিহ হাদিসটি উল্লেখ করেন, ইতবান ইবন মালিক (রাঃ) একবার কাছে এসে  বললেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমরা দৃষ্টি শক্তি খারাপ হয়ে গেছে। আমি আমার গোত্রের লোকদের নামাজ পড়াতাম। বৃষ্টি হলে সেখানে যাওয়ার পথ পানিতে সয়লার হয়ে যায়। যার ফলে আমি মসজিদে নামাজ পড়তে যেতে পানি না। ইয়া রাসূলুল্লাহ! আপনি আমার ঘরে কোন একস্থানে সালাত আদায় করুণ, যে স্থানটিকে আমার সালাতের স্থান হিসেবে নির্ধারন করবো। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন অচিরেই আমি তা করব। ইতবান ইবন মালিক (রাঃ) বলেন, পরের দিন সকাল বেলা আলো পরিস্কার হতেই আবু বক্কর কে সাথে নিয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমর গৃহে তাশরিফ আনলেন। এবং দুই রাকাত নামাজ আদায় করলেন।

উক্ত আয়াত ও হাদিস দ্বারা স্থানের দ্বারা বরকত লাভ করার ব্যাপারে কোন প্রকার সন্ধেহের অবকাশ নেই।

এরপর বলেন ইবনে তাইমিয়ার পূর্ব পর্যান্ত এ বিষয়টি উম্মতের ইজমা ছিল। যেহেতু স্থান থেকে বরকত লাভ কুরআন সুন্নাহ আছে। তাই ইহার উপর কিয়াস করে, কেন বুযুর্গানে দ্বীন ও অলী আউলিয়াদের স্মৃতি বিজরিত স্থান থেকে বরকত লাভ করা যাবে না? (“ইসলামী আকীদা ও ভ্রান্ত মতবাদ” পৃষ্ঠা –৪৬৫)।

উক্ত কিতাবে বলা হয়: বুযুর্গানে দ্বীন ও অলী আউলিয়াদের থেকে বরকত লাভ দুই ভাবে হয়ে থাকে।

(১) স্মৃতি বিজরিত বস্তু দ্বারা বরকত লাভ: যেমন:- রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চুল মুবারক, জুব্বা মুবারক ইত্যাদি। অনুরুপভাবে অলী আউলিয়াদের  জাতীয় কোন বস্তু।

(২) স্মৃতি বিজরিত স্থান থেকে বরকত লাভ: যেমন:- রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জম্ম স্থান, প্রথম ওহী আগমনেন স্থান হেরা গুহা, হাজার বার ওহী আগমনের স্থান খাদিজা (রা:) এর ঘর, হিজরতের আত্মগোপনের স্থার গারে সাওর, আবু বক্কর, ওমর প্রমুখ সাহাবিদের (রা) গৃহ ইত্যাদি।

 মন্তব্য: কুরআন সুন্নাহ দ্বারা প্রমানিত স্থান ও বস্তু দ্বারা বরকত হাসিল করা যাবে। কিন্তু কুরআন সুন্নাহর বাহিরে স্থান ও বস্তু দ্বারা বরকত হাসিল করা যাবে না। অর্থাৎ ইসলামি শরিয়তে যে সকল কোন ব্যক্তি বা বস্তুর মাধ্যমে বরকত হাসিল করার কথা বলা হয়েছে শুধু সে গুল থেকেই বরকত হাসিল করা যাবে। ইসলামি শরিয়তে নেই এমন ব্যক্তি বা বস্তুর মাধ্যমে বরকত  হাসিল করা অনেক সময় হারাম আবার অনেক সময় শির্ক। যেমন:

 আল্লাহর জিকির কারি বা নেককারদের সাথে বসলে বরকত হাসিল হয়। (বুখারি:৬৪০৮, মুসলীম:২৬৮৯)

সহিহ হাদিস প্রমান করে, মসজিদে হারাম, মসজিদে নবী, মসজিদে আকসা, এই তিনটি মসজিদের বরকতময়। ইহা ছাড়া পৃথিবীর সকল মসজিদসমুহ, অন্য সকল স্থান থেকে উত্তম। খাদ্য হিসাবে যাইতুনের তৈল, (সুরা নুর-৩৫. তিরমিজি-১৮৫১২) দুধ, (ইবনে মাজাহ-৩৩৮৫) মধু (সুরা নাহল৬৯, বুখারি-৫৬৮৪ মুসলিম-২২১৭) ও যমযমের পানি, (মুসলিম-২৪৭৩) বরকতময়।

তাই খাদ্য হিসাবে যাইতুনের তৈল, দুধ, মধু ও যমযমের পানি, আজও বরকতময়। মসজিদে হারাম, মসজিদে নবী, মসজিদে আকসা, এমনকি পৃথিবীর সকল মসজিদসমুহ আজও বরকত হাসিলের কেন্দ্রবিন্দু। আল্লাহর জিকির কারি বা নেককারদের সোহবত বরকতময় তা আর বরার অপেক্ষা রাখে না।

অপর পক্ষে লক্ষ করুন, হাদিসসমুহ দ্বারা প্রমানিত যে, সাহাবায়ে কেরাম রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের থুথু, ক্বফ, ঘাম, পোশাক ইত্যাদি দ্বারা বরকত হাসিল করতেন। (সহিহ বোখারী, মুসলীম)। এটা শুধু আল্লাহ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জন্য খাস ছিল। আমরা যদি কিয়াস করে বলি আলেমরা হল নবীদের ওয়ারিস যেহেতু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের থুথু, ক্বফ, ঘাম, পোশাক ইত্যাদি দ্বারা সাহাবিগন বরকত হাসিল করতেন। তাই আমরাও এখন ভাবে আমাদের পীর, বুজুর্গ, আকাবিরদের থুথু, ক্বফ, ঘাম, পোশাক ইত্যাদি দ্বারা বরকত হাসিল করব। তা হলে মহা ভুল করবেন কারন এটা শুধু রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জন্য খাস ছিল। তা না হলে আমাদের পীরের পীর, বুজুর্গদের বুজুর্গ, অলীদির অলী, হযরত আবু বক্কর (রা:), হযরত ওমর (রা:), হযরত আলী (রা:), হযরত ওসমানসহ (রা:) কোন সাহাবির থুথু, ক্বফ, ঘাম, পোশাক থেকে কেউ বরকত লাভ করছেন বলে জানা যায় না। তাছাড়া আমরা যাকে তার বাহিজ্জিক আমল আখলাক দেখে আল্লাহর অলী মনে করছি। মহান আল্লাহর কাছে সে অলী না ও হতে পারে। 

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জীবন দসায় সাহারাগন (রা:) সময় এবং দুযোগ থাকা স্বত্বেও যে সকল স্থান, সময় এবং ব্যক্তি থেকে বরকত নেন নাই সে সকল স্থান, সময় এবং ব্যক্তি থেকে বরকত নেয়া যাবে না।

যেমন: স্থান হিসাবে: হেরাগুহা, জাবারে শুর, জাবালে রহমত, শোহদায়ো ওহুদের কবর জিয়ারত করে বরকত হাসিল করা যা কোন সাহাবি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জীবন দসায় বা ওফাতের পর করেনি। ক্বাবা ঘরের গিলাফ, যে কোন মসজিদ বা মাজারের দেয়াল, মাটি, জানালা, দরজা ইত্যাদি চুমু খাওয়া।

কাজেই, যেখানে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের স্মৃতি বিজরিত স্থান থেকে কোন সাহাবি বরকত লাভ করেনি, সেখানে আমরা কি ভাবে বুযুর্গানে দ্বীন ও অলী আউলিয়াদের স্মৃতি বিজরিত স্থান থেকে বরকত লাভ করব? মুল বক্তব্য “কুরআন সুন্নাহ দ্বারা প্রমানিত স্থান ও বস্তু দ্বারা বরকত হাসিল করা যাবে, অন্য স্থান ও বস্তু দ্বারা নয়।

দেখুন ব্রেলভীরা তদের বুযুর্গানে দ্বীন ও অলী আউলিয়াদের সৃস্মি বিজরিত স্থান থেকে বরকত লাভ করার ফলে, কবরকে মাজারে (দর্শনীয় স্থান) পরিনত করছে। কবর কেন্দ্রিক মসজিদ তৈরি করছে। কবরকে সিজদার স্থাসে পরিনত করছে। এভাবে তারা তারার বরকত হাসিলেন নামে হাজার হাজার বিদআত করতেছে।

৬। ইবাদতকে সময়ের সাথে নির্দিষ্ট করাঃ

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ইসলামের ভিত্তি পাঁচটি বিষয়ের উপর রাখা হয়েছে, এ কথার সাক্ষ্য দেয়া যে আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর রাসূল। সালাত কায়েম করা। জাকাত প্রদান করা। রমজানের রোজা রাখা। এবং যে তার সামর্থ রাখে তার জন্য বাইতুল্লাহর হজ্জ করা।  (হাদিসের মান সহিহঃ বুখারি – ৮; মুসলিম – ১৬)।

ইসলামের এই পাঁচটি ভিত্তিসহ প্রায় প্রতিটি আমলই সময়ের সাথে নির্দিষ্ট। ঈমানের পর ইসলামি শরীয়তের প্রধান চারটি আমল সালাত, সিয়াম, যাকাত ও হজ্জ্ব সময়ের সাথে নির্দষ্ট। কুরআন সুন্নাহর আরোকে একটু বুঝিয়ে বলছি। নির্দিষ্ট সময়ের সাথে সালাতঃ সময়মতো নামায পড়া নামায সংরক্ষণের অংশ এবং আল্লাহ তাআলার নির্দেশ।

*إِنَّ الصَّلَاةَ كَانَتْ عَلَى الْمُؤْمِنِينَ كِتَابًا مَوْقُوتًا*

অর্থঃ  মুমিনদের প্রতি নির্দিষ্ট সময়ে নামায আদায় করা ফরয করা হয়েছে। (সূরা নিসা ৪:১০৩)

এ আয়াতের তাফসীরে আল্লামা ইবনে কাসীর রহ. বলেনঃ আল্লাহ তাআলা সময়মতো নামায সংরক্ষণ, নামাযের সীমারেখা সংরক্ষণ এবং নির্দিষ্ট সময়ে নামায আদায় করার নির্দেশ দিয়েছেন। সহিহ বুখারী ও সহিহ মুসলিমে হযরত ইবনে মাসউদ রা. থেকে যেভাবে বর্ণিত হয়েছে। হযরত ইবনে মাসউদ (রাঃ) বলেন: আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে জিজ্ঞেস করলাম: কোন্ আমল সবচেয়ে উত্তম? রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, সময়মতো নামায পড়া। আমি পুনরায় বললাম, তারপরে কি? তিনি ইরশাদ করলেন: আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করা। আমি আবার জিজ্ঞেস করলাম, তারপরে কী? রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করলেনঃ মাতা-পিতার আনুগত্য। হযরত ইবনে মাসউদ রা. বলেন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম  আমাকে এগুলো বললেনঃ যদি আমি আরও বেশী চাইতাম তাহলে তিনি আমাকে আরও বেশী বলতেন। (সহিহ বুখারী: ৫৫৪৫)

সময়মতো নামায পড়া নামায সংরক্ষণের অংশ এবং আল্লাহ তাআলার নির্দেশ। হযরত আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ রাঃ বলেন: আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে কোন নামায নির্দিষ্ট সময় ব্যতীত আদায় করতে দেখিনি। তবে তিনি (বিদায় হজ্বে) আরাফায় যোহর ও আছর এবং মুযদালিফায় মাগরিব ও ইশা একত্রে আদায় করেছেন। (আব্দুর রযযাক- ৪৪২০, সহিহ বুখারী- ১৫৭৭ হাদীসটির মান সহিহ শাব্দিক কিছু তারতম্যসহ এ হাদীসটি মুসলিম এবং আবু দাউদ শরীফেও বর্ণিত হয়েছে,জামিউল উসূল: ৩৩৫১)।

ররসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কোন নামায নির্দিষ্ট সময়ের বাইরে আদায় করেননি। বরং প্রত্যেকটি নামায সময়মতো পড়তেন। সুতরাং সময়মতো নামায পড়া আবশ্যকীয় আমল যার ব্যতিক্রম করার সুযোগ নেই।

হযরত আব্দুল্লাহ বিন সুনাবিহী রহ. বলেন: আবু মুহাম্মাদ বিতিরের নামাযকে ওয়াজিব মনে করেন। তখন হযরত উবাদা বিন সামিত রা. বললেনঃ আবু মুহাম্মাদ ঠিক বলেননি। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আমি রসূলুল্লাহ স.কে একথা বলতে শুনেছি: আল্লাহ  তাআলা পাঁচ ওয়াক্ত নামায ফরয করেছেন। যে উত্তমরূপে অযু করবে এবং সব নামায ওয়াক্তমতো পূর্ণ বিনয়ের সাথে আদায় করবে তার জন্য আল্লাহ  তাআলার পক্ষ থেকে ওয়াদা রয়েছে যে, আল্লাহ  তাআলা তাকে ক্ষমা করে দিবেন। আর যে এমন করবে না তার জন্য আল্লাহ  তাআলার কোন ওয়াদা নেই। ইচ্ছা করলে তিনি তাকে ক্ষমা করবেন অথবা শাস্তি দিবেন। (হাদিসটির মান সহিহ সুনানে আবু দাউদ: ৪২৫)

যেহেতু মহান আল্লাহ বলেন, মুমিনদের প্রতি নির্দিষ্ট সময়ে নামায আদায় করা ফরয করা হয়েছে, (৪:১০৩)। তাই প্রতিটি মুমিন নির্দষ্ট সময় সালাত আদায়ের জন্য মসজিদে ছুটে যায়। যদি সালাত আদায়ের নির্দিষ্ট সময় না থাকত তবে দিনে বা মাসে বা বছরে একবার সকল সালাত আদায় করে নিলেই হত।

নির্দিষ্ট সময়ের সাথে সিয়ামঃ আল্লাহ তা‘আলা এরশাদ করেন,

*شَهْرُ رَمَضَانَ الَّذِيَ أُنزِلَ فِيهِ الْقُرْآنُ هُدًى لِّلنَّاسِ وَبَيِّنَاتٍ مِّنَ الْهُدَى وَالْفُرْقَانِ فَمَن شَهِدَ مِنكُمُ الشَّهْرَ فَلْيَصُمْهُ وَمَن كَانَ مَرِيضًا أَوْ عَلَى سَفَرٍ فَعِدَّةٌ مِّنْ أَيَّامٍ أُخَرَ

অর্থঃ রমজান মাসই হল সে মাস, যাতে নাযিল করা হয়েছে কোরআন, যা মানুষের জন্য হেদায়েত এবং সত্যপথ যাত্রীদের জন্য সুষ্পষ্ট পথ নির্দেশ আর ন্যায় ও অন্যায়ের মাঝে পার্থক্য বিধানকারী। কাজেই তোমাদের মধ্যে যে লোক এ মাসটি পাবে, সে এ মাসের রোযা রাখবে। আর যে লোক অসুস্থ কিংবা মুসাফির অবস্থায় থাকবে সে অন্য দিনে গণনা পূরণ করবে। (সুরা বাকারা ২:১৮৫)।

আবু দাউদের এক বর্ণনায় পাওয়া যায়। এরপর থেকে যে রমযান পায়, তার ওপর সওম ওয়াজিব হয়, মুসাফির সফর শেষে কাযা করবে, যারা বৃদ্ধ- সওম পালনে অক্ষম, তাদের ব্যাপারে ফিদিয়া তথা খাদ্য দান বহাল থাকে”। (আবু দাউদ: ৫০৭, আহমদ: ৫/২৪৬, তাবরানি ফিল কাবির: ২০/১৩২, হাদিস নং: (২৭০), হাকেম: ২/৩০১)। 

নির্দিষ্ট সময়ের সাথে যাকাতঃ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

«لا زكاة في مالٍ، حتى يَحُول عليه الحَوْل».

অর্থঃ কোনো সম্পদেই যাকাত নেই, যতক্ষণ না তার ওপর এক বছর পূর্ণ হবে”। (সহীহুল জামে‘: হাদীস নং ৭৪৯৭)।

অর্থাৎ যাকাতের হিসাব সব সময়ে বছরের সাথে। নিসাব পরিমান সম্পদ থাকলেই যাকাত ওয়াজিব হবে না। নিসাব পরিমান সম্পদ পূর্ণ এক বছর থাকতে হবে। সম্পদ যেদিন নিসাব পরিমাণ হবে সেদিন থেকে হিজরী বছর গণনা শুরু করবে, তবে শর্ত হচ্ছে বছর শেষ পর্যন্ত নিসাব পরিমাণ সম্পদ স্থির থাকা অথবা ক্রমান্বয়ে বর্ধিত হওয়া। যদি বছরের মধ্যবর্তী সম্পদ নিসাব থেকে কমে যায়, অতঃপর একই বছর পুনরায় নিসাব পরিমাণ হয়, তাহলে বিশুদ্ধ মতে দ্বিতীয়বার যখন সম্পদ নিসাব পরিমাণ হবে, তখন থেকে বছর গণনা শুরু করবে, প্রথম তারিখ গ্রহণযোগ্য নয়, কারণ নিসাব থেকে সম্পদ কমে যাওয়ার কারণে বছর শেষ হয়ে গেছে। অধিকাংশ আলিমের মাযহাব এটি। নিসাব পরিমান থেকে সম্পদ বৃদ্ধি পেলে বা লাভ হলে বা ব্যবসায়ী পণ্যের মুনাফা হলে (বছরের মাঝখানে অর্জিত মুনাফা) মূলধনের সাথে যোগ হবে, যদিও মুনাফার ওপর এক বছর পূর্ণ না হয়। অনুরূপ গুপ্তধন, তার ওপরও হিজরী এক বছর পূর্ণ হওয়া জরুরি নয়। তবে কতক সম্পদ রয়েছে, যার যাকাত ওয়াজিব হওয়ার জন্য এক বছর পূর্ণ হওয়া জরুরি নয়। যেমন, জমি থেকে উৎপন্ন ফল ও ফসল। কারণ জমি থেকে যে দিন উৎপন্ন ফল ও ফসল কাটা হয় সেদিন তার ওপর যাকাত ওয়াজিব হয়। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন:

﴿وَءَاتُواْ حَقَّهُۥ يَوۡمَ حَصَادِهِۦۖ ١٤١ 

অর্থঃ আর তার (অর্থাৎ ফল ও ফসলের) হক দিয়ে দাও, যে দিন তা কাটা হয়। (সূরা আন‘আম, আয়াত ৬:১৪১]

অনুরূপ জতুষ্পদ প্রাণীর বাচ্চার যাকাত, অর্থাৎ হিজরী বছরের মধ্যবর্তী যদি কোন পশু বাচ্চা জন্ম দেয়, সেই বাচ্চা নিসাবের সাথে যোগ হবে।

নির্দিষ্ট সময়ের সাথে হজ্জঃ হজ্জ প্রতিটি মুসলমানদের জন্য একটি ফরজ ইবাদত। এটি ইসলাম ধর্মের পঞ্চম স্তম্ভ। শারীরিক ও আর্থিকভাবে সক্ষম প্রত্যেক মুসলমান নর-নারীর জন্য জীবনে একবার হজ্জ সম্পাদন করা ফরজ। আরবি জিলহজ মাসের ৮ থেকে ১৩ তারিখ হজের জন্য নির্ধরিত সময় হজ পালনের জন্য বর্তমান সৌদি আরবের মক্কা নগরী এবং সন্নিহিত মিনা, আরাফাত, মুযদালিফা প্রভৃতি স্থানে গমন এবং অবস্থান আবশ্যক। আল্লাহ তাআলা বলেন,

وَاذْكُرُواْ اللّهَ فِي أَيَّامٍ مَّعْدُودَاتٍ فَمَن تَعَجَّلَ فِي يَوْمَيْنِ فَلاَ إِثْمَ عَلَيْهِ وَمَن تَأَخَّرَ فَلا إِثْمَ عَلَيْهِ لِمَنِ اتَّقَى وَاتَّقُواْ اللّهَ وَاعْلَمُوا أَنَّكُمْ إِلَيْهِ تُحْشَرُونَ

আর স্মরণ কর আল্লাহকে নির্দিষ্ট সংখ্যক কয়েকটি দিনে। অতঃপর যে লোক তাড়াহুড়া করে চলে যাবে শুধু দু, দিনের মধ্যে, তার জন্যে কোন পাপ নেই। আর যে লোক থেকে যাবে তাঁর উপর কোন পাপ নেই, অবশ্য যারা ভয় করে। আর তোমরা আল্লাহকে ভয় করতে থাক এবং নিশ্চিত জেনে রাখ, তোমরা সবাই তার সামনে সমবেত হবে। [ সুরা বাকারা ২:২০৩ ]

অব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রাঃ) এই আয়াতে তাফসীর করেছেন এবং বলেছেন, নির্দিষ্ট দিনগুলো হচ্ছে, তাশরিকের দিন। আর তাশরিকের দিন হল ১১ থেকে যিলহজ্জ থেকে ১৩ যিলহজ্জ পর্যান্ত। অধিকাংশ আলেম এ তাফসীরটি গ্রহণ করেছেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বলেন, “নিশ্চয় এ দিনগুলো হচ্ছে, পানাহার ও আল্লাহকে স্মরণ করার দিন। ঈদের দিনসমূহে পানাহার অব্যাহত থাকলেও আল্লাহর জিকির ও নেক আমল চালিয়ে যেতে হবে। এ সম্পর্ক মহান আল্লাহ আরও বলেন,

فَإِذَا قَضَيْتُم مَّنَاسِكَكُمْ فَاذْكُرُواْ اللّهَ كَذِكْرِكُمْ آبَاءكُمْ أَوْ أَشَدَّ ذِكْرًا فَمِنَ النَّاسِ مَن يَقُولُ رَبَّنَا آتِنَا فِي الدُّنْيَا وَمَا لَهُ فِي الآخِرَةِ مِنْ خَلاَقٍ

আর অতঃপর যখন হজ্জ্বের যাবতীয় অনুষ্ঠানক্রিয়াদি সমাপ্ত করে সারবে, তখন স্মরণ করবে আল্লাহকে, যেমন করে তোমরা স্মরণ করতে নিজেদের বাপ-দাদাদের কে; বরং তার চেয়েও বেশী স্মরণ করবে। তারপর অনেকে তো বলে যে পরওয়াদেগার! আমাদিগকে দুনিয়াতে দান কর। অথচ তার জন্যে পরকালে কোন অংশ নেই। [ সুরা বাকারা ২:২০০

এই কারনে সলফে সালেহীনদের মতে, তাশরিকের দিনগুলোতে অধিক দোয়া করা মুস্তাহাব।  নেয়ামতের সর্বোত্তম কৃতজ্ঞতা হচ্ছে প্রাপ্ত নেয়ামতকে নেকীর কাজে লাগানো। তাই তাশরিকের দিনগুলি জিকিরে কাটান ভাল আমল। মহান আল্লাহ বলেনঃ

فِيهِ آيَاتٌ بَيِّـنَاتٌ مَّقَامُ إِبْرَاهِيمَ وَمَن دَخَلَهُ كَانَ آمِنًا وَلِلّهِ عَلَى النَّاسِ حِجُّ الْبَيْتِ مَنِ اسْتَطَاعَ إِلَيْهِ سَبِيلاً وَمَن كَفَرَ فَإِنَّ الله غَنِيٌّ عَنِ الْعَالَمِينَ

অর্থঃ এতে রয়েছে মকামে ইব্রাহীমের মত প্রকৃষ্ট নিদর্শন। আর যে, লোক এর ভেতরে প্রবেশ করেছে, সে নিরাপত্তা লাভ করেছে। আর এ ঘরের হজ্ব করা হলো মানুষের উপর আল্লাহর প্রাপ্য। যে লোকের সামর্থ রয়েছে এ পর্যন্ত পৌছার। আর যে লোক তা মানে না। আল্লাহ সারা বিশ্বের কোন কিছুরই পরোয়া করেন না। [ সুরা ইমরান ৩:৯৭ ]

এই আয়াতের আলোকে ইমাম আবু হানিফা ও ইমাম মালেকের অভিমত হল প্রত্যেক সামর্থবাস মুসলিমের উপর হজ্জ ফরয। অর্থাৎ যার পক্ষে হজ্জ আদায় করা সম্ভবপর তার উপর অবিলম্বে হজ্জ আদায় করা ফরয, বিলম্ব করা নাজায়েয। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি বলেন: “যে ব্যক্তি হজ্জ আদায় করতে চায় সে যেন দেরী না করে।”[মুসনাদে ইমাম আহমাদ, সুনানে আবু দাউদ, সুনানে ইবনে মাজাহ)

শাইখ উছাইমীনকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল: হজ্জ পালন কি অবিলম্বে ফরয; নাকি বিলম্বে?

জবাবে তিনি বলেন: বিশুদ্ধ মতানুযায়ী হজ্জ অবিলম্বে ফরয। সামর্থ্যবান ব্যক্তির জন্য বায়তুল্লাহর হজ্জ পালনে বিলম্ব করা নাজায়েয। অনুরূপ বিধান শরিয়তের সকল ফরয আমলের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। যদি কোন আমল বিশেষ কোন কাল বা কারণের সাথে সম্পৃক্ত না হয় তাহলে সেটা অবিলম্বে আদায় করা ফরয। (শাইখ উছাইমীনের ফতোয়াসমগ্র (১৩/২১)

মন্তব্যঃ উপরে বর্ণিত ইসলামের মুল স্তম্বের প্রতিটি আমল সময়ের সাথে আয়াদ করা ফরজ করা হয়েছে। নির্দষ্ট সময়ের আগে পরে করলে ফরজ আদায় হবে না। সালাত প্রতি দিনের সময়ের সাথে, সিয়াম রমজান মাসের সাথে, যাকাত বছেরর সাথে, হজ্জ প্রতি বছরের একটি নির্দষ্ট তারিখের সাথে সংশ্লিষ্ট। প্রতিটি ইবাদাত যদি সময়ের সাথে সংশ্লিষ্ট থাকে তা হলে ইবাদতকে সময়ের সাথে নির্দিষ্ট করলে বিদআত হবে কেন?

প্রশ্নের উত্তর খুবই সহজ। ইবাদতকে সময়ের সাথে নির্দিষ্ট করার ক্ষমতা কার? এক কথায় উত্তর মহান আল্লাহ। হ্যা, উপরের প্রতিটি ইবাদের সময় স্বয়ং আল্লাহ নির্ধারণ করেছেন। মহান আল্লাহ নির্ধারণ করে তার হাবিব রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে অহি মারফত জানিয়ে দিয়েছেন। তিনি তার হুকুম বাস্তবায়ণ করেছেন। মহান আল্লাহ এই হুকুম বাস্তবায়ণই হল ইবাদাত। যদি কেউ তার দেয়া সময়ের আগে বা পরে সময় নির্ধারণ করে ইবাদাত করে, তবে তা হবে চরম অন্যায়। 

যেমনঃ কেউ ঈদের দিন সিয়াম পালন করলে গুনাহগার হবে। আবার ঈদের একদিন আগে (রমজান মাসে) ঈদ পালন করলেও গুনাহগার হবেন। অর্থাৎ সময় নির্ধারণ করার কোন ক্ষমতা বান্দার নেই। সে শুধু মহান আল্লাহর হুকুম পালনের গোলাম।

ইবাদতকে সময়ের সাথে নির্দিষ্ট করলেই বিদআত হবে না। মহান আল্লাহ হুকুম বা কুরআন সুন্নার বাহিরে গিয়ে বান্দা যখন নিজেই ইবাদতকে সময়ের সাথে নির্দিষ্ট করে, তখন আর ইবাদাত থাকে না। তখন হয়ে যার বিদআত।

যেমনঃ জম্ম দিন পালন করা, মৃত্যু বার্ষিকী পালন করা, উরশ উৎজাপন করা, চল্লিশা পালন করা, কুলখানী করা, ঈদে মিলাদুন্নবী পালন করা ইত্যাদি।

এই সকল ইবাদাতের কোনটি কুরআন হাদিসে বর্ণিত হয়নি। সালফে সালেহিদদের যুগে এর কোন অস্তিত্বও ছিলনা। এমনকি আমদের চার মাযহাবের চার ইমামের কারও ফিকহে এর উল্লেখ নেই। তার পরও বিদআতি মুসলিম সময়ের সাথে নির্দিষ্ট করে ইবাদাতের পদ্ধতি আবিস্কার করে আমল করেছে।

সংকলনেঃ মোহাম্মাদ ইস্রাফিল হোসাইন। (বিএ ইন এ্যারাবিক লিটারেচার, ইসলামিক হিস্টরী এন্ড ইসলামিক স্টাডিস)

Leave a comment