হজ্জ ও উমরা সম্পর্কিত জ্ঞান অর্জনের গুরুত্ব

হজ্জ ও উমরা সম্পর্কিত জ্ঞান অর্জনের গুরুত্ব

সংকলনেঃ মোহাম্মাদ ইস্রাফিল হোসাইন

সকল মুসলিমের উপর হজ্জ ও উমরা সম্পর্কিত জ্ঞান অর্জণ করা ফরজ নয়। তবে যার উপর হজ্জ ফরজ হয়েছে, তার হজ্জ আদায় করা যেমন ফরজ ঠিক তেমনি হজ্জ সম্পর্কিত জ্ঞান অর্জণ করাও ফরজ। প্রত্যেক মুসলিমের ওপর ইসলামী জ্ঞান অর্জন করা ফরয। আর প্রয়োজনীয় মুহূর্তের জ্ঞান অর্জন করা বিশেষভাবে ফরয। যার উপর সালাত ফরজ হয়েছে, তার সালাত সম্পর্কি সম্পর্কিত জ্ঞান অর্জণ করাও ফরজ। যার উপর জাকত ফরজ হয়েছে, তার জাকাত সম্পর্কিত জ্ঞান অর্জণ করা ফরজ। যার উপর যে আমল করা ফরজ, তার সে সম্পর্কিত জ্ঞান অর্জণ করাও ফরজ। এমনকি আপনি ব্যবসা করবেন, তার ব্যবসা সম্পর্কিত জ্ঞান অর্জণ করাও ফরজ। ঠিক তেমনি যার উপর হজ্জ ফরজ তার জন্য হজ্জ সম্পর্কিত জ্ঞান অর্জণ করাও ফরজ। তাই যারা হজ্জ করার নিয়ত করেছি বা হজ্জে যাচ্ছি তাদের এই সম্পর্কিত জ্ঞান অর্জণ করতে হবে। দেখা গেল জ্ঞানে অভাবে হজ্জের ফরজ হুকুমই বাদ পরেগেল। জীবন ভরের সাধনা হজ্জই বাতিল হয়ে গেল। আমার কোন কিছু জানার অভাবে যেন হজ্জ বাতিল হয়ে না যায় বা আমার জানার অভাবে যেন হজ্জ কোন কাজ বাদ না পড়ে যায়। এই সব বিবেচনা করে হজ্জের গমনের পূর্বে যথাসম্ভব হজ্জ সম্পর্কিত জ্ঞান অর্জণ করি। তাছাড়া রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে সহিহ হাদিসে বর্ণিত হজ্জ সম্পর্কিত জ্ঞান অর্জণ করতে বলা হয়েছে।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘তোমরা আমার কাছ থেকে তোমাদের হজ্জ ও উমরার বিধি-বিধান শিখে নাও। (সহহি মুসলিম)

এ হাদীস থেকে প্রমাণিত হয়, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে হজ্জ ও উমরা পালনের আগেই হজ্জ সংক্রান্ত যাবতীয় আহকাম সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করার নির্দেশ দিয়েছেন। অতএব আমরা নিঃসন্দেহে বলতে পারি, হজ্জ-উমরা পালনকারী প্রত্যেক নর-নারীর জন্য যথাযথভাবে হজ্জ ও উমরার বিষয়াদি জানা ফরয। আল্লাহ তা‘আলা আমাদের সকলকে সঠিকভাবে হজ্জ ও উমরার বীধি বিধান জেনে সহিহ সুন্নাহ সম্মত পদ্ধতি অনুসরণ করে হজ্জ ও উমরা পালন করার তাওফীক দান করুন। তাছাড়া যে কোন প্রকারের ইলম অর্জন করা সৌভাগ্যের বিষয়।

আবূ মূসা (রাযি.) হতে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ্ তা‘আলা আমাকে যে হিদায়াত ও ‘ইল্ম দিয়ে পাঠিয়েছেন তার দৃষ্টান্ত হল যমীনের উপর পতিত প্রবল বর্ষণের ন্যায়। কোন কোন ভূমি থাকে উর্বর যা সে পানি শুষে নিয়ে প্রচুর পরিমাণে ঘাসপাতা এবং সবুজ তরুলতা উৎপাদন করে। আর কোন কোন ভূমি থাকে কঠিন যা পানি আটকে রাখে। পরে আল্লাহ তা‘আলা তা দিয়ে মানুষের উপকার করেন; তারা নিজেরা পান করে ও (পশুপালকে) পান করায় এবং তা দ্বারা চাষাবাদ করে। আবার কোন কোন জমি রয়েছে যা একেবারে মসৃণ ও সমতল; তা না পানি আটকে রাখে, আর না কোন ঘাসপাতা উৎপাদন করে। এই হল সে ব্যক্তির দৃষ্টান্ত যে দ্বীনের জ্ঞান অর্জন করে এবং আল্লাহ্ তা‘আলা আমাকে যা দিয়ে প্রেরণ করেছেন তাতে সে উপকৃত হয়। ফলে সে নিজে শিক্ষা করে এবং অপরকে শিখায়। আর সে ব্যক্তিরও দৃষ্টান্ত- যে সে দিকে মাথা তুলে দেখে না এবং আল্লাহর যে হিদায়াত নিয়ে আমি প্রেরিত হয়েছি, তা গ্রহণও করে না। (সহিহ বুখারি ৭৯)

আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা মানুষকে খণির মত পাবে। আইয়্যামে জাহিলীয়্যাতের উত্তম ব্যক্তিগণ ইসলাম গ্রহণের পরও তারা উত্তম। যখন তারা দ্বীনী জ্ঞান অর্জন করে আর তোমরা শাসন ও কর্তৃত্বের ব্যাপারে লোকদের মধ্যে উত্তম ঐ ব্যক্তিকে পাবে যে এই ব্যাপারে তাদের মধ্যে সবচেয়ে অধিক অনাসক্ত। (সহিহ বুখারি ৩৪৯৬)

হজ্জ ও উমরার ইলম অজর্ন না করে হজ্জে গমন করলে সঠিকভাবে হজ্জ ও উমরা আদায় করার প্রশ্নই উঠে না। আরাফার ময়দানে অবস্থান হজ্জের অন্যতম একটি ফরজ ইবাদাত। এখানে সূর্যান্ত পর্যান্ত অবস্থান করা ফরজ। এই ইলম না থাকার জন্য যদি কেউ মনে করে যে, আমাকেতো সন্ধ্যার পর মুজদালিফায়  যেতে হবে এবং তখনতো সবাই রওয়ানা দিবে প্রচুর ভীর থাকবে কাজেই আমি আছরের সারাত আদায় করেই মুজদালিফায় চলে যাব। হজ্জের সঠিক ইলম না থাকার কারনে সে আছরের পর মুজদালিফায় চলে আসল। তার হজ্জ হবে কি? না, হবে না। এই কারনে দম দিলেও হবে না। তাকে আবার হজ্জ করতে হবে। এবার বলুন হজ্জের ইলম ছাড়াকি হজ্জ সঠিকভাবে আদায় করা সম্বব। আপনি প্রচুর অর্থ ব্যয় ও শারীরিক কষ্ট সহ্য করে হজ্জ আদায় করে দেশে ফিরলেন। ফেরার পর যদি জানতে পারেন যে, আপনি সমার্থ থাকা সত্বেও শুধু না জানার কারনে অনেক সুন্নাহ সম্মত কাজ ত্যাগ করে চলে এসেছেন। তখন আপনার যতই খারাপ লাগুক না কেন, এই ভুলের কোন সংশোধন করেত পারবেন না। তখন আপনাকে শুধুই আপসস করতে হবে। কাজেই হজ্জের সফরের পূর্বেই এ সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান অর্জন করে নিতে হবে। এই কাজটি কিন্তু ফরজ। হালকাভাবে নেয়ার কোন প্রশ্নই আসেনা।

হজ্জ ও উমরা পালনের বিধি-বিধান জানার পাশাপাশি প্রত্যেক হজ্জিকে অতি গুরুত্বের সাথে হজ্জ ও উমরার শিক্ষণীয় দিকগুলো অধ্যয়ন ও অনুধাবন করতে হবে। আমাদের জন্য এটি একটি দীর্ঘ সফর এই সফরে যেহেতু আর্থিক ও শারীরিক দুটি সমানভাবে প্রয়োজন। কাজেই সফর সঙ্গীদের সাথে মনোমালিন্য হয় থাকে। থাকা খাওয়া নিয়ে বিরোধ বাধতে পারে। এই সকল বিষয় জ্ঞান অর্জন করে সবরের মন মানষিতা নিয়ে সফরে যেতে হবে। সফরের আদর কায়দা ও ইবাদতের হুকুমও জানা ফরজ। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হজ্জের সফরে বা হজ্জের দিনগুলোতে কিভাবে আল্লাহর সাথে সম্পর্ক নিবিড় করার চেষ্টায় লিপ্ত ছিলেন, উম্মত ও পরিবার-পরিজন এবং স্বজনদের সাথে উঠাবসায় কী ধরনের আচার-আচরণ করেছেন তা রপ্ত করতে হবে। নিঃসন্দেহে এ বিষয়টির অধ্যয়ন, অনুধাবন ও রপ্তকরণ হজ্জ ও উমরার তাৎপর্য ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে চেতনা সৃষ্টি করবে। আশা করি হজ্জ ও উমরার জ্ঞান অর্জনের বিষয়টি অনুধারণ করতে পারছেন। মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদের সকলকে সঠিকভাবে হজ্জ ও উমরার বিধি-বিধান জেনে সঠিকভাবে হজ্জ ও উমরা আদায় করার তাওফীক দান করুন। আমীন।

সংকলনেঃ মোহাম্মাদ ইস্রাফিল হোসাইন। (বিএ ইন আরবি সাহিত্য ও ইসলাম শিক্ষা)

One thought on “হজ্জ ও উমরা সম্পর্কিত জ্ঞান অর্জনের গুরুত্ব

Leave a comment