বিদআতে সাইয়েআ ও বিদআতে হাসানা বলতে কি কোন বিদআদ আছে?

 বিদআতে সাইয়েআ ও বিদআতে হাসানা বলতে কি কোন বিদআদ আছে?

সংকলনেঃ মোহাম্মাদ ইস্রাফিল হোসাইন

উপমহদেশের অনেক আলেমই বিদআতে দুটি শ্রেণীবিভাগ করেছেন। তারা এর স্বপক্ষে তাদের জোরাল মতামত তুলে ধরেছেন। এবার তাদের বক্তব্য তুল ধরব এবং যারা তাদের বক্তব্য খন্ডন করেছেন তাদের বক্তব্যও তুলে ধরব। ইনশাআল্লাহ। যারা বিদআতের এই দুই ভাগ করছেন তাদের মতে বিদআত ভাল ও মন্দ দুটি হতে পারে। কারন যে কেউ ইসলামের মধ্যে ভাল রীতি প্রচলন করেন, তিনি এর জন্য সাওয়াব পাবেন। যারা এর উপর আমল করবেন, এর জন্যও সাওয়াব পাবেন। তবে তাঁদের সাওয়াবের মধ্যে কোন কমতি হবে না। অপর পক্ষে যারা ইসলামে মন্দরীতি প্রচলন করে, এর জন্য তাদের পাপ হবে এবং যারা এর উপর আমল করবে, তার জন্যও পাপের ভাগী হবে, তবে ওদের পাপের বেলায় কোন কমতি হবে না। অর্থাৎ ভাল প্রচলণ করলে নেকী পাব এবং যতজন ঐ ভাল কাজ করবে তাদের প্রত্যেকের নেকীর একটি অংশ  প্রচলণকারী পাবে। পক্ষান্তরে যে খারাপ কাজের প্রচলণ সৃষ্টি করবে সে গুনাহগার হবে এবং যতজন ঐ খারাপ কাজ করবে তাদের প্রত্যেকের গুনাহের একটি অংশ ঐ কাজের প্রচলন কারি পাবে। প্রতিটি নতুন কাজ কেন বিদআত কবে? প্রতিটি নতুন আবিস্কার বা বিদআত কেন খারাপ কাজ হবে? এই যুক্তির আলোকে অনেক আলেম বলেছেন বিদআত দুই প্রকার। যথাঃ

১। বিদআতে সাইয়েআ বা খারাপ বিদআত

২। বিদআতে হাসানা বা উত্তম বিদআত

১। বিদআতে সাইয়েআ বা খারাপ বিদআতঃ

ভাল কাজের বা ভাল রীতির প্রচলন ইসলামি শরীয়ত সম্মত। অপর পক্ষ মন্দ কাজের রীতি কিন্তু শরীয়ত বিরোধী। মহান আল্লাহ বলেন,

مَّن يَشْفَعْ شَفَاعَةً حَسَنَةً يَكُن لَّهُ نَصِيبٌ مِّنْهَا وَمَن يَشْفَعْ شَفَاعَةً سَيِّئَةً يَكُن لَّهُ كِفْلٌ مِّنْهَا وَكَانَ اللّهُ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ مُّقِيتًا

অর্থঃ যে ব্যক্তি কল্যাণ ও সৎকাজের সুপারিশ করবে, সে তা থেকে অংশ পাবে এবং যে ব্যক্তি অকল্যাণ ও অসৎকাজের সুপারিশ করবে, সে তা থেকে অংশ পাবে৷ আর আল্লাহ সব জিনিসের প্রতি নজর রাখেন৷ (সূরা নিসা ৪:৮৫)

রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি কোন উত্তম পন্থার প্রচলন করলো এবং লোকে তদানুযায়ী কাজ করলো, তার জন্য তার নিজের পুরস্কার রয়েছে, উপরন্তু যারা তদানুযায়ী কাজ করেছে তাদের সমপরিমাণ পুরস্কারও সে পাবে, এতে তাদের পুরস্কার মোটেও হ্রাস পাবে না। আর যে ব্যক্তি কোন মন্দ প্রথার প্রচলন করলো এবং লোকেরা তদানুযায়ী কাজ করলো, তার জন্য তার নিজের পাপ তো আছেই, উপরন্তু যারা তদানুযায়ী কাজ করেছে, তাদের সমপরিমাণ পাপও সে পাবে, এতে তাদের পাপ থেকে মোটেও হ্রাস পাবে না। (সহিহ মুসলিম ২২২৩ ইফাঃ। তিরমিযী ২৬৭৫, নাসায়ী ২৫৫৪, আহমাদ ১৮৬৭৫, দারিমী ৫১২, তাহক্বীক্ব আলবানী হাদিসের মান সহিহ)

সহিহ মুসলিমে এসেছেঃ কেউ হেদায়েতের দিকে আহ্বান করলে যতজন তার অনুসরণ করবে প্রত্যেকের সমান সওয়াবের অধিকারী সে হবে, তবে যারা অনুসরন করেছে তাদের সওয়াবের কোন কমতি হবে না। [সহিহ মুসলিমঃ ২৬৭৮]

উক্ত আয়তে ও সহিহ হাদিসে একথা স্পষ্ট যে ভাল রীতি প্রচলনে পুরস্কার রয়েছে। আর মন্দ রীতির প্রচলনে পাপ আছে। সমাজে মন্দ রীতির উদ্ভাবন বা প্রচলন করারে বিদআতে সাইয়েআ বা খারাপ বিদআত বলা হয়। মুলত কোন প্রকার হারাম কাজের রীতির উদ্ভাবনকেই বিদআতে সাইয়েআ হিসাবে গন্য করা হয়।

২। বিদআতে হাসানাঃ

ইসলামি শরীয়তের প্রধান উৎস হল কুরআন, সুন্নাহ, ইজমা এবং কিয়াস। যখন কোন সমস্যার সমাধান কুরআন, সুন্নাহ ও ইজমা দ্বারা সমাধান সম্ভব নয় তখন কুরআন সুন্নাহ আলোকে কিয়াস দ্বারা সম্পন্ন করতে হবে। যেমনঃ রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সময়ে ইলম শিক্ষার চর্চা ছিল কিন্তু আমাদের মত গতানুগতিক মাদ্রাসা ছিল না, নাহু হরফের কিতাব ছিলনা, শ্রেণী বিভাগ ছিল না, সার্টিফিকেট ছিল না। এই সবই পরের যুগে সময়ের প্রয়োজনে নতুন (বিদআত) করে সৃষ্টি করা হয়েছে। ইসলামে মাদ্রাসা ও মাদ্রাসা কেন্দ্রীক সকল আমল বিদআত (নতুন)। কিন্তু মুসলিম সমাজ বা কোন বিজ্ঞ আলেম মাদ্রাসা ও মাদ্রাসা কেন্দ্রীক সকল আমলকে (খারাপ) বিদআত বলেন না, কারন এই সকল কাজ ইসলামি শরীয়ত সিদ্ধ কাজ। যেহেতু কাজটি নতুনভাবে ইসলামে সংযোজিক এবং শরীয়ত সিদ্ধ, কাজেই এই বিদআতকে বলা হয় বিদআতে হাসানা বা উত্তম বিদআদ।

সহিহ বুখারীতেও বিদআতে হাসান উল্লেখ কর হাদিস এছেন। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সময়ে তারাবীর সালাত জামতে আদায় করা হত না। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জীবিত অবস্থায় মাত্র তিন দিন জামাতে তারাবীর সালাত আদায় করছেন। আবু বক্কর রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু খেলাফতের সময়ে এবং উমর রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু খেলাফতের প্রথম দিকেও এই সালাত একাকি আদায় করা হত। একদিন উমর রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তারাবীর সালাত জামাতে আদায় করার আদেশ দিয়েছিলেন এবং জামাতে তারাবীর সালাত আদায় কে বলেছিলেন, কতই না উত্তম বিদআত (বিদআতে হাসানা)। সহিহ বুখারীর হাদিসটি হলোঃ

        আবদুর রাহমান ইবনু ‘আবদ আল-ক্বারী (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, আমি রমযানের এক রাতে ‘উমর ইবনুল খাত্তাব (রাঃ)- এর সাথে মসজিদে নাবাবীতে গিয়ে দেখি যে, লোকেরা এলোমেলোভাবে জামা’আতে বিভক্ত। কেউ একাকী সালাত আদায় করছে আবার কোন ব্যক্তি সালাত আদায় করছে এবং ইকতেদা করে একদল লোক সালাত আদায় করছে। ‘উমর (রাঃ) বললেন, আমি মনে করি যে, এই লোকদের যদি আমি একজন ক্বারীর (ইমামের) পিছনে জমা করে দেই, তবে তা উত্তম হবে। এরপর তিনি ‘উবাই ইব্‌নু ‘কাব (রাঃ) এর পিছনে সকলকে জমা করে দিলেন। পরে আর এক রাতে আমি তার [‘উমর (রাঃ)] সাথে বের হই। তখন লোকেরা তাদের ইমামের সাথে সালাত আদায় করছিল। ‘উমর (রাঃ) বললেন, কতইনা উত্তম বিদআত (নতুন ব্যবস্থা)। তোমরা রাতের যে অংশে ঘুমিয়ে থাক তা রাতের ঐ অংশ অপেক্ষা উত্তম যে অংশে তোমরা সালাত আদায় কর, এর দ্বারা তিনি শেষ রাত বুঝিয়েছেন, কেননা তখন রাতের প্রথমভাগে লোকেরা সালাত আদায় করত। (সহিহ বুখারি হাদিস নম্বর ২০১০)

এখন প্রশ্ন হল সহিহ হাদিসে বর্ণিত আছে, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, প্রত্যেক বিদআতই ভ্রষ্টতা আর প্রত্যেক ভ্রষ্টতা জাহান্নামে। এই হাদিসেতো রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিদআতের কোন ভাগ করেন নি। তিনি সকল বিদআতকে খারাপ বা সাইয়েআ বলে উল্লেক করছে।

যেমনঃ আবূ নাজীহ ইরবায ইবনে সারিয়াহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে এমন মর্মস্পর্শী বক্তৃতা শুনালেন যে, তাতে অন্তর ভীত হল এবং চোখ দিয়ে অশ্রু বয়ে গেল। সুতরাং আমরা বললাম, ‘হে আল্লাহর রসূল! এ যেন বিদায়ী ভাষণ মনে হচ্ছে। তাই আপনি আমাদেরকে অন্তিম উপদেশ দিন।’ তিনি বললেন, “আমি তোমাদেরকে আল্লাহভীতি এবং (রাষ্ট্রনেতার) কথা শোনার ও তার আনুগত্য করার উপদেশ দিচ্ছি; যদিও তোমাদের উপর কোন নিগ্রো (আফ্রিকার কৃষ্ণকায় অধিবাসী) রাষ্ট্রনেতা হয়। (স্মরণ রাখ) তোমাদের মধ্যে যে আমার পর জীবিত থাকবে, সে অনেক মতভেদ বা অনৈক্য দেখবে। সুতরাং তোমরা আমার সুন্নাত ও সুপথপ্রাপ্ত খুলাফায়ে রাশেদ্বীনের রীতিকে আঁকড়ে ধরবে এবং তা দাঁত দিয়ে মজবূত করে ধরে থাকবে। আর তোমরা দ্বীনে নব উদ্ভাবিত কর্মসমূহ (বিদআত) থেকে বেঁচে থাকবে। কারণ, প্রত্যেক বিদআতই ভ্রষ্টতা। (আবু দাঊদ ৪৬০৯, তিরমিযী ২৬৭৬, ইবনে মাজাহ ৪২, নাসাঈর এক বর্ণনায় আছে, “আর প্রত্যেক ভ্রষ্টতা জাহান্নামে (নিয়ে যায়)।

তাহলে প্রশ্ন হলো, প্রত্যেক বিদআতই যদি ভ্রষ্টতার পথ দেখান তা হলে বিদআত হাসান বলতে আবার কি বুঝান হয়েছে?

তাদের দাবী এখানে “প্রত্যেক বিদআতই ভ্রষ্টতা” বলতে শুধু খারাপ বা মন্দ বিদআতকে বুঝান হয়েছে। অত্র হাদিসের ব্যাখ্যায় মিশকাত শরীফের শরাহ মিরকাত শরীফে বলা হয়েছে, প্রত্যেক বিদআত গোমরাহ এর অর্থ প্রত্যেক বিদআতে সায়্যিয়াহ বা মন্দ বিদআতই গোমরাহ।

বিশ্ববিখ্যাত মুহাদ্দিস শেখ আব্দুল হক মোহাদ্দেস রহঃ হাদিসখানার ব্যাখ্যায় বলেন, অত্র হাদীসের “সমস্ত বিদআতই গোমরাহ এ কথাটি বিদআতের দ্বিতীয় প্রকার (সায়্যিয়াহ) এর সাথে খাস করা হয়েছে। (আশিয়াতুল লুমআত ১/৪২২)

সহিহ বুখারীর ব্যাখ্যাগ্রন্থ উমদাতুল ক্বারী শরহে বুখারী কিতাবে এ সম্পর্কে বলা হয়েছে বিদআত ২ প্রকার।  বিদআতটি যদি শরীয়ত সম্মত ভাল কাজের অন্তর্ভুক্ত হয়, তবে তা বিদআতে হাসানাহ বা ভাল বিদআত। আর যদি তা শরীয়তের দৃষ্টিতে খারাপ ও জঘন্য কাজ হয় তবে তা বিদআতে মুস্তাকবিহা বা জঘন্য বিদআত। (উমদাতুল ক্বারী শরহে বুখারী)

ইমাম শাফেয়ী (রহঃ) বিদাতের প্রকারের ক্ষেত্রে বলেনঃ

যে নতুন আবিষ্কৃত কাজ কোরআন সুন্নাহ ও  ইজমায়ে উম্মতের বিরোধী উহা গোমরাহ বিদাত।  আর যে নতুন আবিষ্কৃত কাজ কোরআন সুন্নাহ ও ইজমায়ে উম্মতের বিরোধী নয় উহা নিন্দনীয় নয়। বরং উহা ভাল বিদাত। (মিরকাত শরহে মিশকাত ১/২১৬)।

প্রাচ্যের বুখারী শেখ আব্দুল হক মোহাদ্দেস দেহলবী (রহঃ) বিদাতের প্রকার সম্পর্কে বলেন, বিদআত বা নব আবিবিষ্কৃত কাজের মধ্যে যে বিদআত ধর্মের মূলনীতি, নিয়ম- কানুন ও সুন্নাতের সাথে সামঞ্জস্য পূর্ণ এবং কিতার ও সুন্নাহর উপর কিয়াস করা হয়েছে তাকে বিদআতে হাসানাহ বা উত্তম বিদাত বলে। আর যে বিদাত এর বিপরীত সেটাকে বিদআতে দালালাহ বা নিকৃষ্ট বিদআত বলে। (আশিয়াতুল লুমআত ১/৪২২)।

৩। বিদআতে হাসানার মানদন্ডঃ

বিদআত হাসান বা সইয়েআ বিভাজন করে থাকেন তাদের মতে বিদআতে হাসানার দুটি মানদন্ড আছে। যথাঃ

১। বিদআতটি ইসলামি সম্পর্কিত ভাল কাজ হবে।

২। বিদআতটি ইসলামি শরীয়ত বিরোধী হবে না।

বিদআতে হাসানা মানদন্ড প্রমানে তারা এই হাদিস থেকে দলীল দেন, আয়িশাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ যদি কেউ আমাদের এই দ্বীনে উদ্ভাবন করে যা তাতে (দ্বীনে) নেই, তা প্রত্যাখ্যাত। (সহিহ বুখারী ২৬৯৭, মুসলিম ১৭১৮, আবূ দাঊদ ৪৬০৬, আহমাদ ২৩৯২৯, ২৫৭৯৭, তাহক্বীক্ব আলবানী হাদিসের মান সহিহ)।

এই হাদিসটির ব্যাখ্যায় তারা বলে, হাদিসে বলা হয়েছে নতুন আবিষ্কৃত বিষয়টি যদি শরীয়তে না থাকে কেবল তখনই তা হারাম হবে। আর যদি বিষয়টি শরীয়তে থাকে অর্থাৎ শরীয়ত বিরোধী না হয় তাহলে তা জায়েয। তাদের দেয়া বিদআতে হাসানার মানদন্ড অনুসারে নিম্ম লিখিত বিদআত কে তারা হাসানা বলে উল্লেখ করা থাকে।

যেমনঃ

১। বর্তমানে ইলম শিক্ষাদানে জন্য মাদ্রাসায় তৈরি করা হয়েছে।

২। বর্তমান মাদ্রাসায় যে ‘নাহু সরফ’ শিক্ষা করে থাকি।

৩। বর্তমানে আমরা যে পদ্ধতিতে তারাবীহ সালাত আদায় করে থাকি।

৪। বর্তমানে আমরা মসজিদে জামায়াতের জন্য যে সময় নির্ধারণ করে থাকি।

৫। বর্তমানে আমরা যে পদ্ধতিতে জুময়ার সানী আজান দিয়ে থাকি।

৬। বর্তমানে আমরা যে পদ্ধতিতে ওয়াজ মাহফিল করে থাকি।

৭। বর্তমান যে সংকলিত এক খন্ডে কুরআন পড়ে থাকি।

৮। বর্তমানে কুরআনে যে যের, যবর, পেশ প্রদান করা হয়েছে।

৯। বর্তমানে মসজিদে এসি, মাইক, লাউড স্পিকার ব্যবহার করে থাকি।

১০। বর্তমান প্রায় সকল মসজিদ পাকা ইমারত তৈরি করছি।

১১। বর্তমান ইসলাম প্রচার, প্রাসার ও সংরক্ষনের জন্য হাদিস, ফিকহা, তাফসির রচনা করছি।

১২। বর্তমানে দ্বীন প্রচারের জন্য টিভি, ইন্টার সেট, ওয়েব সাইগ, ফেসবুক, ইউটিউব ইত্যাদি ব্যবহার করছি।

উপরের সব কাজগুলি (নতুন আমল) বিদআত যার সাথে ইসলামি শরীয়ত কোন বিরোধী নাই বরং এই কাজগুলি ইসলামি শরীয়ত পালনে সহায়ক ভুমিকা পালন করে। তাই এই কাজগুলি বিদআত হলেও বিদআতে হাসানা হবে।

৪। বিদআতে হাসানা ও সাইয়েআ ভাগ করলে ক্ষতি কি?

বিদআতে অনেকগুলি ভাগ উল্লেখ করেছি। বুঝার জন্য বা জ্ঞান অর্জনের জন্য এই বিভাজণ করা উত্তম কাজ। কিন্তু বিদআতে হাসানা ও সাইয়েআ এই দুইভাগ করে বিদআত নির্ণয় করলে সুক্ষভাবে দ্বীনে বিদআত অনুপ্রবেশের অশংকা থাকে।

যেমনঃ- পূর্বে উল্লেখিত বিদআতে হাসানার কাজগুলি (মাদ্রাসা নির্মান, কুরআন সংকলণ, আরবী ব্যাকারন শিক্ষা ইত্যাদি) শরীয়ত সম্মত হলেও ইহাতে অনেক ফাঁক আছে যার ফলে অনের বিদআতি লোক নতুন নতুন বিদাআত সৃষ্টি করতে পারে। বিদআতে হাসানার প্রধান মানদন্ড হলোঃ

বিদআতটি ইসলামি সম্পর্কিত ভাল কাজ হবে এবং যদি বিষয়টি শরীয়ত বিরোধী না হওয়া। এর উপর ভিত্তি করে বিদআতিগণ দৃঢ় কন্ঠে ঘোষনা করে, যদি মাদ্রাসা নির্মান, কুরআন সংকলণ, আরবী ব্যাকারন শিক্ষা ইত্যাদি ভাজ কাজ হিসাবে বিদআতে হাসান হয় তাহলে আমাদের নতুন বিদআতি আমল “মিলাদ, কিয়াম, বিভিন্ন খতম, উরশ, মৃত্য বার্ষিকী, জম্ম বার্ষিকী, কবরে কাপড় জড়ান, মুমবাতি জ্বালান, ঈদে মিলাদুন্নবী পালন, লাফালাফীর জিকির এবং পীরভক্ত গান সবই শরীয়ত সম্মত ভাল কাজ। এগুলো নমুনা শরীয়তে আছে আবার শরীয়ত বিরোধীও নয়, তাই এগুলো বিদআত হলেও বিদআতে হাসান বা উত্তম বিদাআত।

অতপর, তারা আরও কঠোর ভাষায় প্রশ্ন করে, প্রত্যেক নতুন আবিস্কৃত জিনিসই যদি পরিত্যাজ্য হয়, তাহলে আমরা অধুনিক কালের অনেক আবিস্কারই ব্যবহার করতে পারব না। বর্তমানে মানুষ অনেক আধুনিক যন্ত্রপাতি মানুষ ব্যবহার করছে। যেমনঃ মোবাইল, কম্পিউটার, মডেম, পেন ড্রাইভ, ফ্যান, ঘড়ি, চশমা, মাইক ইত্যাদি। এর কোনটিই রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ব্যবহার করেন নাই। কারন তার সময় এগুলো ছিল না। বর্তমানে মানুষ যে সকল খাট পালঙ্ক, সোকেস, আলমালী, চেয়ার, টেবিল, সোফা, প্লেট, গ্লাস, জগ, ফুলদানী ইত্যাদি ব্যবহার করে থাকে, তা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ব্যবহার করেন নাই। বর্তমানে আমরা যে পোলাও, বিরিয়ানী কোর্মা, বুট, মূড়ী, পিয়াঁজো খেয়ে থাকি যা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম খান নাই। বর্তমানে আমরা যে সকল যান-বাহনে চড়ে থাকি। যেমনঃ গাড়ী, ট্রেন, প্লেন, রকেট, রিক্সা, জাহাজ ইত্যাদি। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এই গুলিতে চড়েন নাই। বর্তমানে বিয়ে-শাদীতে যে কাবিননামা করা হয়, তা কি রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সময় ছিল না। বর্তমানে যে পদ্ধতিতে মাদ্রাসার জন্য চাঁদা আদায় করি, যেমনঃ সদকা, ফিতরা, যাকাত, কোরবানীর চামড়া, মান্নতের টাকা ইত্যাদি, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সময় ছিল না। এমনিভাবে আরো অনেক বিষয়ই রয়েছে, যা তা কি রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বা “খায়রুল কুরুনে” ছিল না কিন্তু আমরা করছি। উপরের কাজগুলি সম্পুর্ণ নতুন আবিস্কার রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বা “খায়রুল কুরুনে” এর অস্তিত্ব ছিল না কিন্তু আমার এগুলি ব্যবহার করছি। একবারের জন্যও মনে করি না যে এই কাজগুলী বিদআত। তাহলে আমাদের বিদআতে হাসানা (মিলাদ, কিয়াম, উরশ, ঈদে মিলাদুন্নবী) কে কেন তোমরা বিআদতে সাইয়েআ বা খারাপ বিদআত বলছ?

এই আলোচনায় মাধ্যমে এ কথা ষ্পষ্ট যে, বিদআতে হাসানা নামে অনেক সত্যিকারের বিদআত সমাজে প্রচলিত হয়ে যায়। যার ফলে অনেক বিজ্ঞ আলেমগণ মনে করে বিদআতে কোন ভাগ নেই।

৫। বিদআতে হাসানা ও সাইয়েআ ভাগ না করে কি বিদআত নির্ণয় করা সম্ভব?

বিদআতে সঙ্গায় দেখেছি, “দ্বীনের সাথে সম্পর্কিত, আবার ইবাদাত মনে করে নেকির আশায় পালন করি অথচ যে সকল আমল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের যুগে, সাহাবী, তাবেয়ী ও তাবে তাবেয়ীদের যুগে ধর্মীয় আমল, আচার বা উৎসব হিসাবে প্রচলিত বা পরিচিত ছিল না, পরবর্তী যুগে মুসলিম সমাজে ধর্মীয় আমল হিসাবে প্রচলিত হয়েছে তাই বিদআত। আবার হাদিসের আলোকে দেখতে পাই, দ্বীন মাঝে প্রত্যেক নব আবিস্কারই বিদআত, আর প্রত্যেক বিদআতই ভ্রষ্ট।

সুতারং এ কথা স্পষ্ট যে দ্বীনের ব্যাপারে কোন কিছুই নতুন করে উদ্ভাবন করা যাবে না। কারন মহান আল্লাহ দ্বীনকে পরিপূর্ণ করে দিয়েছেন। এক জন মুসলিম কি আকিদা রাখবে, কি আমল করবে তা কুরআন সুন্নাহ দ্বারা প্রমানিত হতে হবে। মনমত নিজে ভাল আমল করলেই ইবাদাত হবে না। আল্লাহর সন্ত্বষ্টি জন্য করা হলেও দ্বীনের ক্ষেত্রে বিদআত তথা নতুন কিছু উদ্ভাবন করা হারাম। কারণ দ্বীনের ব্যাপারে মূলনীতি হল তা অহীর উপর নির্ভরশীল হবে। অর্থাৎ দ্বীনের সমস্ত বিধান কুরআন ও সুন্নাহ থেকে গ্রহণ করতে হবে। যখন দ্বীনের ক্ষেত্রে নতুন কিছু উদ্ভাবন করা কে বিদআত মনে করবে তখন বিদআতে আর কোন ভাগ থাকবে না। তখনই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদিসের সাথে মিলে যাবে কারন তিনি বলেছেন, “প্রত্যেক বিদআতই ভ্রষ্টতা”। বিদআত শব্দটি সব সময় দ্বীনের সাথে সম্পর্কিত হবে, দুনিয়ার সাথে নয়। বিদআতে মুলনীতি হবেঃ

১। দ্বীন সম্পর্কিত ভাল যা পূর্বে ছিল না। দুনিয়া সম্পর্কিত কোন কাজের সাথে বিদআতে সম্পর্ক নেই। দুনিয়াবী কাজ হয় হালাল, না হয় হারাম।

২। ইবাদের পদ্ধতি আবিস্কার করলে বিদআত হবে, দুনায়াবী কাজের কোন পদ্ধতি কখনও বিদআত হয় না।

৩। ইবাদতের উপকরনে কখনও বিদআত হয় না। যেমনঃ আজানের জন্য মাইক ব্যবহার করা

৪। আমলটি নেকীর উদ্দ্যেশ্য বা আল্লাহকে খুশি করার জন্য করা।

আমরা প্রতিদিন সালাত আদায় করি এর পদ্ধতি আমরা সরাসরি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট থেকে নিয়েছি। এখন যদি সালাতের পদ্ধতিতে কেউ পরিবর্তন এনে রুকু দুটি বা তিনটি করা, সিজদা তিন বা চার করে, বৈঠক কম বেশী করে তা হলে সালাত হবে না। আমরা যেভাবে সালাত আদায় করি এই পদ্ধতিতে সালাত আদায় করলে ইবাদত হবে, অন্য পদ্ধতিতে আদায় করলে কুফরী হবে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম পদ্ধতিতে কোন কাজ করলেই ইবাদত, তার নিয়ম নীতির বাহিরে ইবাদত করলেই বিদআত।  যদি কেউ জানাযার সালাতে আজানের প্রচলন করে তবে তা বিদআত হবে কারন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম জানাযার সালাতে আজান প্রদান করেন নাই। এমনি এই সালাতে রুকু-সিজদাহ ও নাই, কেউ  রুকু-সিজদাহ চালু করলে জানাযার সালাত হবে না। এইভাবে ইবাদতে কোন নতুন পদ্ধতি আবিস্কার করা যাবে না। কিন্তু ইবাদতের উপকরনে কখনও বিদআত হয় না।

যেমনঃ আমরা জানি আজাদ দেয়া ইবাদত, আজানের জন্য মাইক ব্যবহার করা হয় উপকরন হিসাবে। মাইক ব্যবহারে অতিরিক্ত কোন সওয়ারের আশা কেউ করে না। ঠিক তেমনিভাবে ইলম অর্জণ ফরজ, তা সে যে কোন ভাবে অর্জণ করতে পারে। আজ কাল মাদ্রাসা, মসজিদ, খানকা বা সরাসরি আলেমদের নিকট থেকে ইলম অর্জন করছে। কাজেই এই সকল উপকরণের সাহায্য ইবাদত করা বিদআত হবে না। এবার আসুন মিলাদ কিয়াম সম্পর্কে যা সম্পূর্ণ নতুন ইবাদত, ইহা সওয়াবের উদ্দ্যশ্যে করা হয়, ইহার একটি নির্দিষ্ট পদ্ধতি আছে। তাই এই সকল ইবাদাত সম্পূর্ণভাবে বিদআত।

বিদআত কে হাসানা এবং সাইয়েআ এ দুভাগে ভাগ করলে বিদআতগণ যুক্তি দিবে। মাদ্রাসা নির্মান, কুরআন সংকলণ, আরবী ব্যাকারন শিক্ষা ইত্যাদি নব আবিস্কার যা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিল না। যদি এই সকল কাজ বিদআত না হয়, তাহলে আমাদের নতুন আমল মিলাদ, কিয়াম, বিভিন্ন খতম, উরশ, মৃত্য বার্ষিকী, জম্ম বার্ষিকী, কবরে কাপড় জড়ান, মুমবাতি জ্বালান, ঈদে মিলাদুন্নবী পালন এবং পীরভক্ত গান কেন বিদআত হবে। আর ইসলামি জ্ঞানের সল্পতার কারনে মুসলিমগণ বিদআত কে ইবাদাত হিসাবে গ্রহণ করে। কিন্তু বিদআতের মানদন্ড সম্পর্কে জ্ঞান থাকলে এই বিদআত আমাদের মাঝে প্রবেশ করতে পারত না। যদি সে জানত, যদি আমলটি দ্বীনের সাথে সম্পর্কি এবং আল্লাহকে খুশি করার জন্য করা হয় অথচ এর পদ্ধতি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলে যাননি এবং মুল ইবাদাতের কোন উপকরণ হিসাবেও গ্রহন করি নাই, তবে তা বিদআত হবে। তখন তাকে আর বিদায়াতে হাসানা এবং সাইয়েআ বলে ধোকা দিতে পারতনা।

এক বিদআতি আলেম ওয়াজ মাহফিলে গলা ফাটিয়ে বলছিলঃ বাস চলা, প্লেনে উড়া, মোবাইল ব্যবহার করা, কম্পিউটার ব্যবহার করা, টিভি দেখা ইত্যাদি যদি বিদআত না হয়, মিলাদ, কিয়াম, বিভিন্ন খতম, উরশ, মৃত্য বার্ষিকী, জম্ম বার্ষিকী, কবরে কাপড় জড়ান, মুমবাতি জ্বালান, ঈদে মিলাদুন্নবী পালন, পীরভক্ত গান ইত্যাদি কেন বিদআত হবে? তিনি শ্রতাদের বলেন, বাসে চলা, প্লেনে উড়া, মোবাইল ব্যবহার করা, কম্পিউটার ব্যবহার করা, টিভি দেখা ইত্যাদি ব্যবহার হল বিদআতে হাসান, ঠিক তেমনি আমরা যে সকল ভাল কাজ করছি তাও বিদআতে হাসান। তিনি যুক্তি দ্বারা বিদআতকে ইবাদতে পরিনত করলেন। অথচ ঐ মাহফিলেন শ্রতাদের বিদআত সম্পর্কে জ্ঞান থাকত তবে তারা কখনও যুক্তির কাছে মাথানত না করে বলতেন, যদিও এই আমলগুলী মহান আল্লাহকে খুশি করার জন্য করা হয় কিন্তু এর কোন পদ্ধতি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলে যাননি এবং মুল ইবাদাতের কোন উপকরণ হিসাবেও গ্রহন করি নাই। তাই এই সকল ইবাদত (খতম, উরশ, মৃত্য বার্ষিকী, জম্ম বার্ষিকী) বিদআত।

তাইতো অনেক বিজ্ঞ আলেম দাবি করে থাকেন, ইসলামি শরিয়তে বিদআত কে হাসানা এবং সাইয়েআ এ দুভাগে ভাগ করা যাবে না। বিদআতকে এভাবে ভাগ করা সম্পূর্ণ ভুল এবং রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর হাদিস বিরোধী। প্রথমেই তারা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম এই হাদিসটি উল্লখ করে থাকে। হদিসটি হলোঃ

আবূ নাজীহ ইরবায ইবনে সারিয়াহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে এমন মর্মস্পর্শী বক্তৃতা শুনালেন যে, তাতে অন্তর ভীত হল এবং চোখ দিয়ে অশ্রু বয়ে গেল। সুতরাং আমরা বললাম, ‘হে আল্লাহর রসূল! এ যেন বিদায়ী ভাষণ মনে হচ্ছে। তাই আপনি আমাদেরকে অন্তিম উপদেশ দিন।’ তিনি বললেন, “আমি তোমাদেরকে আল্লাহভীতি এবং (রাষ্ট্রনেতার) কথা শোনার ও তার আনুগত্য করার উপদেশ দিচ্ছি; যদিও তোমাদের উপর কোন নিগ্রো (আফ্রিকার কৃষ্ণকায় অধিবাসী) রাষ্ট্রনেতা হয়। (স্মরণ রাখ) তোমাদের মধ্যে যে আমার পর জীবিত থাকবে, সে অনেক মতভেদ বা অনৈক্য দেখবে। সুতরাং তোমরা আমার সুন্নাত ও সুপথপ্রাপ্ত খুলাফায়ে রাশেদ্বীনের রীতিকে আঁকড়ে ধরবে এবং তা দাঁত দিয়ে মজবূত করে ধরে থাকবে। আর তোমরা দ্বীনে নব উদ্ভাবিত কর্মসমূহ (বিদআত) থেকে বেঁচে থাকবে। কারণ, প্রত্যেক বিদআতই ভ্রষ্টতা। (আবু দাঊদ ৪৬০৯, তিরমিযী ২৬৭৬, ইবনে মাজাহ ৪২, নাসাঈর এক বর্ণনায় আছে, “আর প্রত্যেক ভ্রষ্টতা জাহান্নামে (নিয়ে যায়)।

হাফেয ইবনে রজব (রঃ) বলেন, “প্রত্যেক বিদআতই গোমরাহী” এটি একটি সংক্ষিপ্ত কিন্তু পরিপূর্ণ বাক্য। এখানে প্রতিটি বিদআতকেই গোমরাহী বলে সাব্যস্ত করা হয়েছে। রাসূল (সাঃ) বিদআতের কোন প্রকারকেই হাসানা বলেননি। এই হাদীছটি দ্বীনের অন্যতম মূলনীতির অন্তর্ভূক্ত।

এখানে রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন, প্রতিটি বিদআতই গোমরাহী বা ভ্রষ্টতা অথচ যারা বিদআতের ভাগ করে তারা মনে বলে থাকে, প্রত্যেক বিদআত গোমরাহী নয়। বরং এমন কিছু বিদআত রয়েছে, যা হাসানা বা উত্তম বিদআত, যা এই সহিহ হাদিস পরিপন্থী। অতএব, যে ব্যক্তি কোন নতুন বিধান রচনা করে দ্বীনের মাঝে প্রবেশ করিয়ে দিবে, তা গোমরাহী বলে বিবেচিত হবে।

সুতরাং বিদআতে হাসানার পক্ষে মত প্রকাশকারীদের কোন দলীল নেই। কিছু লোক তারাবীর নামাযের ব্যাপারে উমার (রাঃ) এর উক্তি এটি কতই না উত্তম বিদআত এ কথাটিকে দলীল হিসাবে গ্রহণ করে থাকে। তারা আরও বলেন, এমন অনেক বিদআত আবিস্কৃত হয়েছে, যা সালাফে সালেহীনগণ সমর্থন করেছেন। যেমন গ্রন্থাকারে কুরআন একত্রিত করণ, হাদীছ সঙ্কলন করণ ইত্যাদি। এই যুক্তির উত্তর এই যে, শরীয়তের ভিতরে এ বিষয়গুলোর মূল ভিত্তি রয়েছে। এগুলো নতুন কোন বিষয় নয়। আমলটি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে সহিহ সনদে প্রমানিত। তারাবির সালাত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম সময়ে তিন দিন জামাতে আদায় করা কয়েছিল। যেমন সহিহ বুখারীর হাদিসে এসেছেঃ

আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গভীর রাতে বের হয়ে মসজিদে সালাত আদায় করেন, কিছু সংখ্যক পুরুষ তাঁর পিছনে সালাত আদায় করেন। সকালে লোকেরা এ সম্পর্কে আলোচনা করেন, ফলে লোকেরা অধিক সংখ্যায় সমবেত হন। তিনি সালাত আদায় করেন এবং লোকেরা তাঁর সঙ্গে সালাত আদায় করেন। সকালে তাঁরা এ বিষয়ে আলাপ-আলোচনা করেন। তৃতীয় রাতে মসজিদে মুসল্লীর সংখ্যা আরো বেড়ে যায়। এরপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বের হয়ে সালাত আদায় করেন ও লোকেরা তাঁর সঙ্গে সালাত আদায় করেন। চতুর্থ রাতে মসজিদে মুসল্লীর সংকুলান হল না। কিন্তু তিনি রাতে আর বের না হয়ে ফজরের সালাতে বেরিয়ে আসলেন এবং সালাত শেষে লোকদের দিকে ফিরে প্রথমে তাওহীদ ও রিসালাতের সাক্ষ্য দেওয়ার পর বললেনঃ শোন! তোমাদের (গতরাতের) অবস্থান আমার অজানা ছিল না, কিন্তু আমি এই সালাত তোমাদের উপর ফরয হয়ে যাবার আশংকা করছি (বিধায় বের হই নাই)। কেননা তোমরা তা আদায় করায় অপারগ হয়ে পড়তে। রাসূলল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ওফাত হল আর ব্যাপারটি এভাবেই থেকে যায়। (সহিহ বুখারী ইসলামি ফাউন্ডেশন ১৮৮৫)

উমার (রাঃ) এর কথা, “এটি একটি উত্তম বিদআত”, এর দ্বারা তিনি বিদআতের শাব্দিক অর্থ গ্রহণ করেছেন। ইসলামের পরিভাষায় যাকে বিদআত বলা হয়, সে অর্থ গ্রহণ করেন নি। মৌলিকভাবে ইসলামী শরীয়তে যে বিষয়ের অস্তিত্ব রয়েছে, তাকে বিদআত বলা হয়নি। কাজেই এই তিনি যে বিদআত শুধু  শাব্দিক অর্থে ব্যবহার করেছেন, পারিভাষিক অর্থে নয়। ইসলামি শরীয়তের পরিভাষায় এমন বিষয়কে বিদআত বলা হয়, যার পক্ষে কোন দলীল প্রমাণ নেই। কিন্তু উমার (রাঃ) যে বিষয়টিকে বিদআত বলেছেন তার প্রমান স্বয়ং রাসূলল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম  থেকে প্রমানিত।

সংকলনেঃ মোহাম্মাদ ইস্রাফিল হোসাইন। (বিএ ইন এ্যারাবিক লিটারেচার, ইসলামিক হিস্টরী এন্ড ইসলামিক স্টাডিস)

Leave a comment