আকিদার বিদআতসমূহ সপ্তম কিস্তি : রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কবরে আমাদের মতই জীবিত

আকিদার বিদআতসমূহ সপ্তম কিস্তি

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কবরে আমাদের মতই জীবিত

সংকলনেঃ মোহাম্মাদ ইস্রাফিল হোসাইন

ইসলামি শরীয়তের প্রথম ও প্রধান বিষয় হল ইমান। আর খাটি ইমান হল, সঠিক আকিদা প্রষণ করা। কিন্তু খুবই দুঃখজনক বিষয় হল, আমরা সকলে মুসলিম দাবি করলেও শুধু আমাদের আকিদার কারনে আমরা মুসলিম নই। ইসলাম বহির্ভুত এই নতুত আকিদাকে বিদআতি আকিদা হিসাবে চিহিৃত করব। কুরআন সুন্নাহর বাহিরে যে আকিদা নতুন করে আবিস্কার হয়েছে তাই বিদআতি আকিদা। কাজেই যে কোন ভুল আকিদা যা কুরআন সুন্নাহের বাহিরে গিয়ে নতুত করে তৈরি হয়েছে তাই বিদআতি আকিদা। যার অর্থ হলো আকিদার ভূলভ্রান্তি মানেই বিদআত আকিদা। যৌক্তিক কোন কাজ সহজে যে কেউ মেনে নেন। আর বিজ্ঞান দ্বারা প্রমানিত কোন জ্ঞানতো সাথে সাথে মেনে নেয়। কিন্তু ইসলামি আকিদার মুল হল অদৃশ্যে বিশ্বাস এখানে জাগতিক কোন বিষয় থাকলে যুক্তি ও বিজ্ঞান দ্বারা পরীক্ষা করা যেত কিন্ত অদৃশ্যে বিশ্বাস করতে হলে অদৃশ্য থেকে প্রাপ্ত অহীর উপর নির্ভর করতে হবে। অহী ভিন্ন যে কোন উৎস থেকে আকিদা গ্রহন করলে শুদ্ধ ও অশুদ্ধ যে কোনটাই হতে পারে। ইসলামি আকিদা বিশ্বাস সব সময় আল্লাহকে কেন্দ্র অদৃশ্যের উপর নির্ভর করে থাকে। তাই ইসলামি আকিদার মুল উৎস হল কুরআন ও সহীহ সুন্নাহ ভিত্ত্বিক। এই কুরআন সুন্নাহর বাহিরে যখনি নতুন করে আকিদা রচনা করা হবে তাই বিদআতি আকিদা।

যেমনঃ অদৃশ্যের একটি ব্যাপার হল কবরের আজাব। কবরে আজাব হবে এটাই সত্য। কিন্তু কাউকে যুক্তি দিয়ে কি কবরের আজাব বুঝাতে বা দেখাতে পাবর। কিংবা বিজ্ঞানের আবিস্কার ক্যামেরা দ্বারা কি এই আজাব দেখাতে পারব। অপর পক্ষে আমলের ব্যাপারটা কিন্তু এমন নয়। এখানে কুরআন হাদিসের বাহিরে ইজমা কিয়াজের দরকার হয়। নতুন কোন সমস্যা আসলে কিয়াস করে মাসায়েল দিতে হয়। যেমনঃ মোবাইল, টিভি, ইন্টারনেট, শেয়ার বাজার ইত্যাদি ইসলামের প্রথমিক যুগে ছিলনা। তাই কুরআন সুন্নাহর ভিত্তিতে কিয়াস করে সমাধান দিতে হয়। কজেই একটি কথা মনে রাখতে হবেঃ “আকিদা ও ফিকহের মধ্যে মৌলিক পার্থক্য হলো, ফিকহের ক্ষেত্রে ইসতিহাদ, কিয়াস, যুক্তি বা আকলি দলিলের প্রয়োজন হতে পারে কিন্তু আকিদার ক্ষেত্রে ইসতিহাদ, কিয়াস, যুক্তি বা আকলি দলিলের প্রয়োজন নেই”

এক কথায় বলে গেলে কুরআন হাদিসের ষ্পষ্ট কোন রেফারেন্স ছাড়া আকিদা গ্রহণীয় নয়। যদি কেউ যুক্তি দিয়ে আকিদা বুঝাতে আসে তাকে সালাম জানাতে হবে। 

কুনআন সুন্নাহকে উৎস হিসাবে না নিলে আকিদার ভিন্নতা তো থাকবেই। আর এই ভিন্ন আকিদা আসবে সম্পূর্ণ নতুন করে যা বিদআত বলা হয়। কুরআন হাদিসে ষ্পষ্টভাবে উল্লেখ নেই, এমন ফিকহি মাসলা মাসায়েলের ক্ষেতে ইখতিলাফ বা মতভেদ করা জায়েয হলেও, আকিদার ক্ষেত্রে কোন প্রকার মতভেদ জায়েয নেই। কারন আকিদার ছয়টি বিষয় (আল্লাহ্‌র প্রতি বিশ্বাস, ফিরিশতাগণের প্রতি বিশ্বাস, কিতার সমুহের প্রতি বিশ্বাস, রাসূলগনের প্রতি বিশ্বাস শেষ দিনের প্রতি বিশ্বাস, তাক্বদীরের  ভালো মন্দেন প্রতি বিশ্বাস) যার সবগুলিই গায়েবের সাথে সম্পৃক্ত এবং গায়েব জানার জন্য অহীর প্রয়োজন। যতি কেউ তার আকিদাকে অহী ভিত্তিক না করে, যুক্তি ভিত্তিক করে, তাহলে তার বিভ্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় শতভাগ। অহী ভিত্তিক না হয়ে আকিদা যুক্তি ভিত্তিক হলেই বিদআতি আকিদা হবে।

আকিদার সম্পর্কে আলোচনার আগে একটা কথাকে মনে খোদাই করে লিখে রাখেন, “আকিদা গাইবের প্রতি বিশ্বাস, এই বিশ্বাস হবে অহী নির্ভর, কোন প্রকার যু্‌ক্তিতর্কের অবতারণা করা যাবেনা”। কাজেই আমি যে ভ্রান্ত আকিদাগুলি তুলে ধরব তার বিপক্ষে আন্ততো কুরআনের একটি আয়াত অথবা একটি সহিহ হাদিস উপস্থাপণ করব। এই সহিহ আকিদার বিপরীতে যে সকল বিদআতি আকিদা সবার সামনে তুলে ধরব, সেই সকল আকিদার কুরআন সুন্নাহতে কোন প্রমান পাওয়া যাবে না। কুরআন সুন্নাহ নাই বলেই আকিদার নাম দিলাম বিদআতি আকিদা।

সঠিক আকিদা হলোঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মারা গেছেন তিনি বারযাকী হায়াতে জীবিত আছেন, আমাদের মত জীবিত নেই।

সহিহ আকিদার দলীলঃ

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের মতই কবরে জীবিত আছেন। এমনকি বিদআতীদের বিশ্বাস তাদের শাইখ, পীর, অলী আওলিয়া কবরে জীবিত আছেন। সুফিদের শিরমনি আহম্মদ রেজা খান বেরেলভী লিখেছেনঃ আওলীয়াগন তাদের কবরে অনন্ত জীবনসহ জীবিত। তাদের জ্ঞান ও অনভুতি, শ্রবন ও দৃষ্টিশক্তি তাদের (কবরে) পূর্বের চেয়ে অনেক বেশী হয়। (বাহারে শরিয়ত,আমজাদ আলী, ১ম খন্ড পৃষ্ঠা-৫৮)।

তিনি আরও লিখেননঃ ইয়া আলী, ইয়া গাওস বলে ডাকা জায়েয কারন আল্লাহর প্রিয় বান্দারা তাদের বারজাকে (কবরে) শুনতে পান। (হাকায়্যাত রিযভিয়্যাহ)।

সুফিদের বিশ্বাস তিনি কবরে হুবহু দুনিয়ার মতই জীবিত যাপন করছেন এবং তিনি মারাই যাননি। তাদের এ সকল বক্তব্য সাধারন মুসলিমদের মধ্যে মহাবিভ্রান্তি তৈরি হচ্ছে। তাই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওফাত পরবর্তী জীবন নিয়ে একটু আলোচনা করা দরকার। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওফাত পরবর্তী জীবন সম্পর্কে অনেকের মতের ভিন্নতা দেখা যায় তাই বিষয়টি নিয়ে কুরআন ও সহিহ হাদিসের আলোকে পর্যলোচনা করার চেষ্টা করব। যেহেতু বিষয়টি আকিদার সাথে সম্পর্কিত কাজেই যুক্তি তর্ক পরিহারের চেষ্টা করব ইনশাআল্লাহ।

এ সম্পর্কে ‘হায়াতুন্নাবী’ পরিভাষাটি বহুল প্রচলিত হলেও অনেকে আবার রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওফাত পরবর্তী জীবন সম্পর্কে আলোচনায় ‘হায়াতুন্নাবী’ পরিভাষাটি পরিহার করে চলে। আমাদের সমাজে বলেন, নবীগণ কবরে জীবিত বা মৃত দুটি বিশ্বাসই প্রচলিত। আবার কারো বিশ্বাস তিনি কবরে হুবহু দুনিয়ার মতই জীবিত যাপন করছেন। অনেকেরতো আবার বিশ্বাস করেন, তিনি মারাই যাননি। তবে মারা গেছেন এমন বিশ্বাস ও আছে। কাজেই বিষয়টি নিয়ে সাধারন মুসলিমদের মধ্যে মহাবিভ্রান্তি তৈরি হচ্ছে। তাই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওফাত পরবর্তী জীবন সম্পর্কে আলোচনা পু্র্বে দেখা যাক তিনি মারা গেছেন কিনা?

১। মানুষ মাত্রই মরণশীল এমন কি মুহম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও এর উর্দ্ধে নন।

নিম্নের আয়াতটির মাধ্যমে আল্লাহ্‌ ঘোষণা করেছেন যে, মানুষ মাত্রই মরণশীল এমন কি পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ নবী হযরত মুহম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও এর উর্দ্ধে নন।

আল্লাহ্‌ সুবাহানাহুয়াতালা বলেনঃ

 إِنَّكَ مَيِّتٌ۬ وَإِنَّہُم مَّيِّتُونَ (٣٠) 

অর্থঃ নিশ্চয়ই তুমিও মারা যাবে , এবং নিশ্চয়ই তারাও মারা যাবে। (জুমার  ৩৯:৩০)।

প্রতিটি মানুষই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে। আমাদের নবী মুহম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের মত একজন মানুষ ছিলেন। নিম্নের আয়াতট দুটি তার দলিল। সুরা আনকাবুদের ৫৭ নম্বর আয়াতে আল্লাহ্‌ সুবাহানাহুয়াতালা বলেন:

كُلُّ نَفۡسٍ۬ ذَآٮِٕقَةُ ٱلۡمَوۡتِ‌ۖ ثُمَّ إِلَيۡنَا تُرۡجَعُونَ (٥٧)

অর্থঃ প্রতিটি মানুষই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে। সবশেষে তোমাদের আমার নিকট ফিরিয়ে আনা হবে। (আনকাবুদ ২৯:৫৭)।

আর সূরা কাহাফে মহান আল্লাহ এরশাদ করেন, আমাদের নবী মুহম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের মত একজন মানুষ ছিলেন।

এরশাদ হচ্ছঃ

 قُلۡ إِنَّمَآ أَنَا۟ بَشَرٌ۬ مِّثۡلُكُمۡ يُوحَىٰٓ إِلَىَّ أَنَّمَآ إِلَـٰهُكُمۡ إِلَـٰهٌ۬ وَٲحِدٌ۬‌ۖ فَمَن كَانَ يَرۡجُواْ لِقَآءَ رَبِّهِۦ فَلۡيَعۡمَلۡ عَمَلاً۬ صَـٰلِحً۬ا وَلَا يُشۡرِكۡ بِعِبَادَةِ رَبِّهِۦۤ أَحَدَۢا (١١٠)

অর্থঃ (হে রাসুল) আপনি বলে দিন, আমি তো তোমাদেরই মত এক জন মানুষ, আমার নিকট এই মর্মে ওহী করা হয় যে, তোমাদের উপাস্য এক ও একক, অতএব যে নিজ প্রতিপালকের দিদার লাভের আশাবাদী সে যেন সৎকর্ম করে এবং নিজ প্রতিপালকের ইবাদতে অন্য কাউকে শরীক না করে’। (সূরা আল্ কাহাব- ১৮:১১০)

জম্মিলে মৃত্যু আছে, একথটি সবার জন্য সমানভাবে প্রযোজ্য সে মানব শিশু হোক বা অন্য কিছু। যে দিন সে পৃথিবীতে জন্ম লাভ করে, তার পরের দিন থেকেই শুরু হয় তার মৃত্যুর দিকে পথযাত্রা। প্রতিটি জীবন মানেই মৃত্যু। নবী রসুলেরাও এর ব্যতিক্রম নয়। এর উর্দ্ধে নয় কোন অলী আওলিয়া বা কোন পূণ্যাত্মা মানুষ। পাপী ও পূণ্যাত্মা সকলেই মৃত্যুকে আলিঙ্গন করবে।পুর্বের কোন নবী বা রাসুল ও এর উর্দ্ধে ছিলন না। কাফেররা মুহম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বিদ্রূপ করতো যে তিনি যদি সত্য নবী হন তবে মৃত্যু তাঁকে স্পর্শ করবে নাল এরই প্রেক্ষিতে উক্ত আয়াত নাজেল হয়ল।

আল্লাহ্‌ সুবাহানাহুয়াতালা এরশাদ করেন:

وَمَا جَعَلۡنَا لِبَشَرٍ۬ مِّن قَبۡلِكَ ٱلۡخُلۡدَ‌ۖ أَفَإِيْن مِّتَّ فَهُمُ ٱلۡخَـٰلِدُونَ (٣٤) كُلُّ نَفۡسٍ۬ ذَآٮِٕقَةُ ٱلۡمَوۡتِ‌ۗ وَنَبۡلُوكُم بِٱلشَّرِّ وَٱلۡخَيۡرِ فِتۡنَةً۬‌ۖ وَإِلَيۡنَا تُرۡجَعُونَ (٣٥) 

অর্থঃ (পৃথিবীতে) তোমার পূর্বেও কোন মানুষকে অনন্ত জীবন দান করা হয় নাই। সুতারাং তোমার মৃত্যু হলে ওরা কি চিরদিন বেঁচে থাকবে ? প্রতিটি আত্মাকে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে। আমি তোমাদের মন্দ ও ভালো দ্বারা পরীক্ষা করে থাকি। আমারই নিকট তোমরা ফিরে আসবে, (আম্বিয়া ২১:৩৪-৩৫)।

আল্লাহ্‌ সুবাহানাহুয়াতালা আরও বলেনঃ

 فَلَمَّا قَضَيۡنَا عَلَيۡهِ ٱلۡمَوۡتَ مَا دَلَّهُمۡ عَلَىٰ مَوۡتِهِۦۤ إِلَّا دَآبَّةُ ٱلۡأَرۡضِ تَأۡڪُلُ مِنسَأَتَهُۖ ۥ فَلَمَّا خَرَّ تَبَيَّنَتِ ٱلۡجِنُّ أَن لَّوۡ كَانُواْ يَعۡلَمُونَ ٱلۡغَيۡبَ مَا لَبِثُواْ فِى ٱلۡعَذَابِ ٱلۡمُهِينِ (١٤)

অর্থঃ অতঃপর ,যখন আমি সুলাইমানের মৃত্যুর হুকুম দিলাম ,মাটির ক্ষুদ্র এক পোকা ব্যতীত কেহই জ্বিনদের তাঁর মৃত্যু সম্বন্ধে অবগত করায় নাই যে পোকা তার লাঠিকে খাচ্ছিল। সুতারাং যখন সে পড়ে গেলো, তখন জ্বিনেরা বুঝতে পারলো যে, তারা যদি অদৃশ্য বিষয় সম্বন্ধে অবগত থাকতো তাহলে তারা (তাদের কাজের দরুণ) অপমানকর শাস্তিতে আবদ্ধ থাকতো না। (সুরা সাবা ৩৪:১৪০।

 আল্লাহ্‌ সুবাহানাহুয়াতালা আরও এরশাদ করেন:

 أَمۡ كُنتُمۡ شُہَدَآءَ إِذۡ حَضَرَ يَعۡقُوبَ ٱلۡمَوۡتُ إِذۡ قَالَ لِبَنِيهِ مَا تَعۡبُدُونَ مِنۢ بَعۡدِى قَالُواْ نَعۡبُدُ إِلَـٰهَكَ وَإِلَـٰهَ ءَابَآٮِٕكَ إِبۡرَٲهِـۧمَ وَإِسۡمَـٰعِيلَ وَإِسۡحَـٰقَ إِلَـٰهً۬ا وَٲحِدً۬ا وَنَحۡنُ لَهُ ۥ مُسۡلِمُونَ (١٣٣) 

অর্থঃ ইয়াকুবের নিকট যখন মৃত্যু উপস্থিত হলো, তোমরা কি তখন উপস্থিত ছিলে? দেখো! সে তাঁর পুত্রগণকে বলেছিলো, ‘আমার পরে তোমরা কার এবাদত করবে?’ তারা বলেছিলো, ‘আমরা আপনার ইলাহ্‌ এবং আপনার পিতৃপুরুষ ইব্রাহীম, ইসমাঈল ও ইসহাকের ইলাহ্‌ এরই এবাদত করবো। আল্লাহ্‌-ই [প্রকৃত পক্ষে] একমাত্র ইলাহ্‌। আমরা তাঁর নিকট আত্মসমর্পন করি [ইসলাম]’। (বাকারা ২ : ১৩৩)।

 আল্লাহ্‌ সুবাহানাহুয়াতালা বলেনঃ

 أَيۡنَمَا تَكُونُواْ يُدۡرِككُّمُ ٱلۡمَوۡتُ وَلَوۡ كُنتُمۡ فِى بُرُوجٍ۬ مُّشَيَّدَةٍ۬‌ۗ وَإِن تُصِبۡهُمۡ حَسَنَةٌ۬ يَقُولُواْ هَـٰذِهِۦ مِنۡ عِندِ ٱللَّهِ‌ۖ وَإِن تُصِبۡهُمۡ سَيِّئَةٌ۬ يَقُولُواْ هَـٰذِهِۦ مِنۡ عِندِكَ‌ۚ قُلۡ كُلٌّ۬ مِّنۡ عِندِ ٱللَّهِ‌ۖ فَمَالِ هَـٰٓؤُلَآءِ ٱلۡقَوۡمِ لَا يَكَادُونَ يَفۡقَهُونَ حَدِيثً۬ا (٧٨) 

অর্থঃ তোমরা যেখানেই থাক না কেন মৃত্যু তোমাদের খুঁজে বের করবেই, এমনকি সুউচ্চ, মজবুত দুর্গে অবস্থান করলেও।” যদি তাদের কোন কল্যাণ হয়; তবে তারা বলে, “এ তো আল্লাহ্‌র নিকট থেকে।” কিন্তু যদি তাদের অকল্যাণ হয়, তবে তারা বলে, “এতো তোমার নিকট থেকে। বল, ‘সব কিছু আসে আল্লাহ্‌র নিকট থেকে। কিন্তু তাদের কি হয়েছে যে, তারা কোন কথা বোঝে না। (নিসা ৪:৭৮)।

 

২। হাদিসের আলোকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মৃত্যুর স্বাদ গ্রহন করছেনঃ

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “মালাকুল মউত মুসা আলাইহিস সালামের নিকট এসে তাকে বলেন: আপনার রবের ডাকে সাড়া দিন। তিনি বলেন: অতঃপর মুসা আলাইহিস সালাম মালাকুল মউতকে থাপ্পড় মেরে তার চোখ উপড়ে ফেলেন। তিনি বলেন: অতঃপর মালাকুল মউত আল্লাহর নিকট ফিরে গেল এবং বলল: আপনি আমাকে আপনার এমন বান্দার নিকট প্রেরণ করেছেন যে মরতে চায় না, সে আমার চোখ উপড়ে ফেলেছে, তিনি বলেন: আল্লাহ তার চোখ তাকে ফিরিয়ে দেন, আর বলেন: আমার বান্দার নিকট ফিরে যাও এবং বলঃ আপনি হায়াত চান? যদি আপনি হায়াত চান তাহলে ষাঁড়ের পিঠে হাত রাখুন, আপনার হাত যে পরিমাণ চুল ঢেকে নিবে তার সমান বছর আপনি জীবিত থাকবেন। তিনি বলেন: অতঃপর? মালাকুল মউত বলল: অতঃপর মৃত্যু বরণ করবেন। তিনি বলেন: তাহলে এখনি দ্রুত কর। হে আমার রব, পবিত্র ভূমির সন্নিকটে পাথর নিক্ষেপের দূরত্বে আমাকে মৃত্যু দান কর”। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: “আল্লাহর শপথ আমি যদি তার নিকট হতাম, তাহলে রাস্তার পাশে লাল বালুর স্তূপের নিকট তার কবর দেখিয়ে দিতাম”। (বুখারি ও মুসলিম, হাদিসটি সহিহ)।

উপরের আয়াত ও সহিহ হাদিস দ্বারা এ কথা পরিস্কার যে আল্লাহর নবী মুসা (আ:), সুলাইমান (আ:) ও ইয়াকুব (আ:) -এর মৃত্যু হয়েছে। তাদের মৃত্যু প্রমান করে যে, আর কোন নবী রাসুলই পৃথিবীতে জীবিত নাই। আনেকে বলে থাকেন খিযির (আ:) এখনো জীবিত। তাদের কথার কোন দলিল নেই বরং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পৃথিবীতে প্রেরিত হওয়ার আগেই খিযির (আ:) মারা গেছেন।

কারণ উপরের বর্ণিত সুরা আম্বিয়ার ঐ ৩৪ নম্বর আয়াত যেখানে পরিস্কার বলা হয়েছে, “আপনার পূর্বে কোন মানুষকে আমি অনন্ত জীবন দান করিনি। সুতরাং আপনার মৃত্যু হলে তারা কি চিরঞ্জীব হবে”? আর যদি তিনি জীবিত থাকতেন, তাহলে তিনি নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অনুসরণ করতেন এবং তাঁর সাথে জিহাদে শরীক হতেন। কেননা আমাদের নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম সকল মানুষ এবং জিন জাতির নিকট প্রেরিত হয়েছিলেন। মহান আল্লাহ বলেন,

 قُلۡ يَـٰٓأَيُّهَا ٱلنَّاسُ إِنِّى رَسُولُ ٱللَّهِ إِلَيۡڪُمۡ جَمِيعًا 

অর্থঃ বলুন, হে মানবমণ্ডলী! তোমাদের সবার নিকটে আমি আল্লাহ প্রেরিত রাসূল,  (আ’রাফ ১৫৮)।

ইবনে ওমর (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর জীবনের শেষাংশে একবার আমাদেরকে নিয়ে এশার ছালাত আদায় করলেন।

তিনি সালাম ফিরে উঠে দাঁড়ালেন এবং বললেনঃ তোমরা আজকের রাত সম্পর্কে কিছু জানো কি? (মনে রেখো) বর্তমানে যারা ভূ-পৃষ্ঠে রয়েছে, তাদের কেউ এই রাত থেকে নিয়ে একশত বৎসরের মাথায় বেঁচে থাকবে না”( বুখারী ও মুসলিম)।  উক্ত হাদীসও প্রমাণ করে যে, খিযির মৃত্যুবরণ করেছেন। অতএব, তিনি কারো ডাকে সাড়া দেন না এবং কাউকে পথ প্রদর্শনও করেন না।

আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, যে সময় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইনতিকাল করলেন, তখন উমার ইবনুল খাত্তাব (রা) দাঁড়িয়ে বলতে লাগলেন, “কতকগুলো মুনাফিক বলে বেড়াচ্ছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মারা গেছেন। আল্লাহর কসম, তিনি মারা যাননি। তিনি কেবল মূসা আলাইহিস সালামের মত সাময়িকভাবে আল্লাহর কাছে গিয়েছেন। মূসা (আ) চল্লিশ দিনের জন্য আল্লাহর কাছে গিয়েছিলেন।

তখন প্রচার করা হয়েছিল যে, তিনি মারা গেছেন। অথচ তার পরে তিনি ফিরে এসেছিলেন। আল্লাহর কসম, মূসার (আ) মত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবার ফিরে আসবেন। এখন যারা বলছে যে তিনি মারা গেছেন, তাদের হাত পা কেটে দেয়া হবে।” আবু বাক্কর (রা:) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ইন্তিকালেরর খবর জানতে পেরে ছুটে এলেন। উমার (রা) তখনও ঐ কথা বলে চলেছেন। সেদিকে ভ্রুক্ষেপ না করে তিনি আয়িশার (রা) ঘরে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে চলে গেলেন। তখন তাঁকে ইয়ামনী কাপড় দিয়ে ঘরের এক কোণে ঢেকে রাখা হয়েছিল। এগিয়ে গিয়ে তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মুখের কাপড় সরিয়ে চুমু খেলেন। অতঃপর বললেন, “আপনার জন্য আমার পিতা-মাতা কুরবান হোক। আল্লাহ আপনার জন্য যে মৃত্যু নির্ধারিত করে রেখেছিলেন তা আপনি আস্বাদন করেছেন। এরপর আপনার কাছে আর কখনো মৃত্যু আসবে না।” অতঃপর মুখ ঢেকে দিলেন। তারপর বাহিরে বেরিয়ে দেখেন উমার (রা) সেই একই কথা বলে চলেছেন। তিনি বললেন, “উমার। তুমি ক্ষান্ত হও। চুপ কর।” উমার (রা) কছিুতেই থামতে রাজী হচ্ছিলেন না। এ অবস্থা দেখে আবু বাক্কর (রা:) জনগণকে লক্ষ্য করে কথা বলতে শুরু করলেন। তাঁর কথা শুনে জনতা উমারকে (রা) রেখে তাঁর দিকে এগিয়ে এল। তিনি আল্লাহর প্রশংসা করার পর বললেন,

“হে জনমন্ডলী, যে ব্যক্তি মুহাম্মাদের পূজা করতো সে জেনে রাখুক যে, মুহাম্মাদ মারা গেছেন। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর ইবাদাত করতো সে জেনে রাখুক যে, আল্লাহ চিরঞ্জীব ও অবিনশ্বর।” তারপর তিনি এই আয়াত তিলাওয়াত করলেন-

 وَمَا مُحَمَّدٌ إِلَّا رَسُولٌ۬ قَدۡ خَلَتۡ مِن قَبۡلِهِ ٱلرُّسُلُ‌ۚ أَفَإِيْن مَّاتَ أَوۡ قُتِلَ ٱنقَلَبۡتُمۡ عَلَىٰٓ أَعۡقَـٰبِكُمۡ‌ۚ وَمَن يَنقَلِبۡ عَلَىٰ عَقِبَيۡهِ فَلَن يَضُرَّ ٱللَّهَ شَيۡـًٔ۬ا‌ۗ وَسَيَجۡزِى ٱللَّهُ ٱلشَّـٰڪِرِينَ (١٤٤) 

 অর্থঃ মুহাম্মাদ আল্লাহর রাসূল বৈ আর কিছুই নন। তার পূর্বে বহু রাসূলস অতিবাহিত হয়েছেন। তিনি যদি মারা যান কিংবা নিহত হন তাহলে কি তোমরা ইসলাম থেকে ফিরে যাবে? যে ফিরে যাবে সে আল্লাহর কোন ক্ষতি করতে পারবে না। কৃতজ্ঞ লোকদের আল্লাহ যথোচিত পুরস্কার দেবেন।” (সুরা আল ইমরান-৩:১৪৪)।

এরপর মানুষের মধ্যে এমন ভাবান্তর ঘটলো যে, মনে হচ্ছিল তারা যেন আবু বাক্করের মুখে শোনার আগে এ আয়াত কখনো শোনেইনি। তার আয়াতটি আবু বাকরের কাছ থেকে মুখস্থ করে নিল এবং অনবরত তা আবৃত্তি করতে লাগলো। আবু হুরাইরা বলেন,, উমার (রা) বলেছেন, “আবু বাক্করের মুখে এ আয়াত শোনার পর আমি হতবাক ও হতবুদ্ধি হয়ে পড়ে গেলাম। পায়ের ওপর দাঁড়িয়ে থাকতে পারলাম না। আমি তখনই অনুভব করলাম যে,, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সত্যিই ইনতিকাল করেছেন। (সীরাতে ইবনে হিশাম প্রকাশনী বাংলাদেশ ইসলামিক সেন্টার)

মন্তব্যঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মারা গেছেন কিনা এ সম্পর্কে আর কিছু কি বলার আছে। রেফারেন্সগলি তুলে ধরলাম, এখন সিদ্ধান্ত আপনাদের।

হায়াতুন্নাবীর শাব্দিক ও পরিভাষাসিক  অর্থ কি? 

এবার দেখা যাক রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওফাত পরবর্তী জীবন কেমন। আগেই  ‘হায়াতুন্নাবীর’ উল্লেখ করেছি। তাহলে দেখা যাক এর দ্বারা কি বুঝাচ্ছে।

‘হায়াত’ মানে জীবন। আর নবী শব্দেটির সাথেতো সকলে পরিচিত। শাব্দিক অর্থ ‘নবীর জীবন’। হায়াতুন্নাবী  বা ‘নবীর জীবন’ বলতে, মৃত্যর আগের বা পরের জীবন যে কোনটাই বুঝাতে পারি। কিন্তু হায়াতুন্নাবী বলতে আমাদের সমাজে যে পরিভাষাটি ব্যবহৃত হয় তা হল, নবী ইন্তেকালের পর কবরে যে বিশেষ জীবন লাভ করে।  

যারা হায়াতুন্নাবী বলতে ‘নবী ইন্তেকালের পরে কবরের বিশেষ জীবন লাভ করে’, এই পরিভাষাটি ব্যবহৃত করে তাদের কুরআনের দলিল হিসাবে সুরা বাকারা ও সুরা আল- ইমরান দুটি আয়াত পেম করেন।

 আল্লাহ্‌ সুবাহানাহুয়াতালা বলেনঃ

وَلَا تَقُولُواْ لِمَن يُقۡتَلُ فِى سَبِيلِ ٱللَّهِ أَمۡوَٲتُۢ‌ۚ بَلۡ أَحۡيَآءٌ۬ وَلَـٰكِن لَّا تَشۡعُرُونَ (١٥٤) 

অর্থ: আর যারা আল্লাহর পথে নিহত হয় তাদেরকে মৃত বলো না৷ এই ধরনের লোকেরা আসলে জীবিত ৷ কিন্তু (তাদের জীবন সম্পর্কে) তোমারা কোন উপলব্ধি করতে পার না, (বাকারা ২:১৫৪)।

আল্লাহ্‌ সুবাহানাহুয়াতালা বলেনঃ

وَلَا تَحۡسَبَنَّ ٱلَّذِينَ قُتِلُواْ فِى سَبِيلِ ٱللَّهِ أَمۡوَٲتَۢا‌ۚ بَلۡ أَحۡيَآءٌ عِندَ رَبِّهِمۡ يُرۡزَقُونَ (١٦٩) 

অর্থ: “যারা আল্লাহর পথে নিহত হয়েছে তাদের কখনই মৃত মনে করো না, বরং তারা জীবিত, এবং তাদের রবের নিকট হতে তারা রিযিকপ্রাপ্ত। [আল- ইমরান ৩: ১৬৯]

কুরআনের আয়াতদুটিতে সুস্পষ্ট উল্লেখ করা হয়েছে যে, শহীদগণ মৃত নন, তারা জীবিত ও রিযিক পাচ্ছেন। আমরা জানি, বারযাখে সমস্ত মানুষেরই এক ধরনের জীবন আছে। আপনি যদি মুসলিম হন তবে অবশ্যই কবরের ছওয়াল জওয়াব বিশ্বাস করেন, কবরের আযাব/শান্তি বিশ্বাস করেন। আর এসব কোন প্রানহীন মানুষর পক্ষে ঘটা সম্ভব নয়। কাজেই এটাও জীবন কিন্তু এই জীবন সাধারণ দুনিয়ার জীবনের মত নয়। এই জীবনটাকে বলা হয় “হায়াতুন বারযাখিয়া’।

শহীদের এই বারযাখি জীবন সাধারণ লোকদের বারযাখি জীবনের চেয়ে ভিন্নতর কারন কুরআনে শহীদের সেই জীবন যেভাবে জীবিত ও রিজিক প্রাপ্ত বলে উল্লেখ করা হয়েছে। সাধারন লোকের জীবনের কথা তেমনিভাবে উল্লেখ করা হয়নি। কিন্তু এর অর্থ যদি আমরা এভাবে করি যে, শহীদগন দুনিয়ার জীবনের মত চলাফেরা করেন খাওয়া দাওয়া করেন, তবে নিতান্তই ভুল হবে। তাদের জীবন সম্পর্কে ব্যাখ্যা বিশ্লষন করা খুবই নির্বুদ্ধিতার কাজ। কারন আয়াতের শেষ অংশে বলা হয়েছে (۬ وَلَـٰكِن لَّا تَشۡعُرُونَ) ‘তোমারা কোন উপলব্ধি করতে পার না’। এরপরও উপলব্ধি করার চেষ্টা করা বা ব্যাখ্যা বিশ্লষন করে সাধারন দুনিয়ার জীবনের মত মনে করা কত টুকু যুক্তি সংগত হবে। শহীদদের ওফাত পরবর্তী জীবন সাধারণের জীবনের চেয়ে ভিন্নতর কুরআনে যেভাবে উল্লেখ করা হয়েছে, নবীদের কথা তেমনিভাবে উল্লেখ করা হয়নি। যেহেতু আল্লাহর কাছে নবীদের মর্যাদা শহীদের চেয়েও অনেক বেশি। কাজেই ওফাত পরবর্তী জীবন শহীদের জীবনের চেয়ে নবীদের জীবন ভিন্নতর হওয়ার কথা অধিকাংশ আলেম উল্লেখ করেছেন। তাহলে বুঝতে পাররাম সাধারন মুসলিম, শহীদ ও নবীদের ওফাত পরবর্তী জীবনের (বারযাখি জীবনের) মধ্যে পার্থক্য আছে।

ওফাত পরবর্তী জীবন বা বারযাখি জীবন সম্পর্কে হাদিসে সুস্পষ্ট উল্লেখ থাকায় জন্য কারো কোন মতভেদ নাই।

যেহেতু সাধারন মুসলিম, শহীদ ও নবীদের বারযাখি জীবনের মধ্যে পার্থক্য আছে। আর পার্থক্য না জানার জন্যই মুলত আমরা এ সম্পর্কে মহা বিভ্রান্তে পতিত হই।

এই পার্থক্য নির্ণয় করতে গিয়ে কুরআন হাদিসের উপর নির্ভর না করে বিভিন্ন ব্যাখ্যা প্রদান করে। কিন্তু মনে রাখতে হবে, বারযাখি জীবনের কথা একটি গায়েবি বিষয় কাজেই অহী ছাড়া কথা বলা যাবে না। অহীর ব্যাখ্যা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেভাবে করছেন, সাহাবিগন রাজি: যেভাবে বুঝছেন, সলফে সালেহীন যেভাবে পালন করছেন তার ব্যতিক্রম গ্রহনীয় নয়।

মৃত্যু পরবর্তী জীবন বা বারযাখি জীবন তিন শ্রেণীতে ভাগ করা যায়ঃ

১.  সাধারন মুসলিম বা অমুসলিমদের বারযাখি জীবন।

২.  শহীদের বারযাখি জীবন

৩.  নবীদের বারযাখি জীবন

 

৪। মানুষের বারযাখি জীবনের কেমন?

সকলের কাছে এ ব্যাপারটি স্পষ্ট যে মৃত্যুর পর সকলেনই বারযাখি জীবন ভোগ করতে হয়। তাহলে দেখা যাক সাধারন মুসলিম বা অমুসলিমদের বারযাখি জীবন কেমন হবে। নিম্নের  হাদিস তিনটি লক্ষ করলেই সাধারন মুসলিম বা অমুসলিমদের বারযাখি জীবন সম্পর্কে পরিস্কার দারনা হবে।

আনাস ইবনে মালিক (রা) থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ্‌ (সা) বলেছেন, (মৃত) বান্দাকে যখন তার কবরে রাখা হয় এবং তার সাথী এতটুকু মাত্র দূরে যায় যে সে(মৃত ব্যক্তি) তখনও তাদের জুতার আওয়ায শুনতে পায়। এ সময় দু’জন ফিরিশতা তার কাছে এসে তাকে বসান এবং তাঁরা বলেন, এ ব্যক্তি অর্থাৎ মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সম্পর্কে তুমি কি বলতে?

তখন মু’মিন ব্যক্তি বলবে, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, তিনি আল্লাহর বান্দা এবং তাঁর রাসূল। তখন তাঁকে বলা হবে, জাহান্নামে তোমার অবস্থানস্থলটির দিকে নযজ কর, আল্লাহ তোমাকে তার বদলে জান্নাতের একটি অবস্থানস্থল দান করেছেন। তখন সে দু’টি স্থলের দিকেই দৃষ্টি করে ফেলবে। কাতাদা রহ. বলেন, আমাদের কাছে বর্ণনা করা হয়েছে যে, সে ব্যক্তির জন্য তাঁর কবর প্রশস্ত করে দেওয়া হবে।

এরপর তিনি (কাতাদ) পুনরায় আনাস (রা.) এর হাদীসের বর্ণনায় ফিরে আসেন। তিনি (আনাস রা.) বলেন, আর মুনাফিক বা কাফির ব্যক্তিকেও প্রশ্ন করা হবে তুমি এ ব্যক্তি (মুহাম্মাদসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সম্পর্কে কি বলতে? সে উত্তরে বলবে, আমি জানি না। লোকেরা যা বলত আমি তা-ই বলতাম। তখন তাকে বলা হবে, তুমি না নিজে জেনেছ, না তিলাওয়াত করে শিখেছ। আর তাকে লোহার মুগুর দ্বারা এমনভাবে আঘাত করা হবে, যার ফলে সে এমন বিকট চিৎকার করে উঠবে যে, দু’ জাতি (মানব ও জিন) ব্যতিত তার আশপাশের সকলেই তা শুনতে পাবে। (সহিহ বুখারী, খন্ড- ২, হাদিস ৪৫৬)।

আবূ আইয়ূব আনসারী (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, (একবার) সূর্য ডুবে যাওয়ার পর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বের হলেন। তখন তিনি একটি আওয়ায শুনতে পেয়ে বললেনঃ ইয়াহুদীদের কবরে আযাব দেওয়া হচ্ছে। (সহিহ বুখারী, খন্ড- ২ , হাদিস ৪৫৭)।

ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, (একবার) রাসূলুল্লাহ্‌ (সা) দু’টি কবরের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তখন তিনি বললেন- ঐ দু’জনকে আযাব দেওয়া হচ্ছে আর কোন কঠিন কাজের কারণে তাদের আযাব দেওয়া হচ্ছে না। এরপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন: হাঁ (আযাব দেওয়া হচ্ছে) তবে তাদের একজন পরনিন্দা করে বেড়াত, অন্যজন তার পেশাবের ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন করত না। (রাবী বলেন) এরপর তিনি একটি ডাল নিয়ে তা দু’খণ্ডে ভেঙ্গে ফেললেন। তারপর সে দু’ খণ্ডের প্রতিটি এক এক কবরে পুঁতে দিলেন। এরপর বললেন: আশা করা যায় যে এ দু’টি শুকিয়ে না যাওয়া পর্যন্ত তাদের আযাব লঘু করা হবে। (সহিহ বুখারী, খন্ড-২, হাদিস ৪৬০)

হাদিস দ্বারা সাধারন মুমিন, মুনফিক, কাফির ও ইয়াহুদীদের  বারযাখি জীবন সম্পর্কে ধারনা পেলাম। মুমিন জান্নাত দেখান হবে, সামান্য অন্যায়ে আযাব দেওয়া হবে। মুনফিক ও কাফির আযাবে যন্ত্রনায় চিত্কার করবে।  ইয়াহুদী, খৃষ্টান ও কাফির সকলকেই আযাব ভোক করতে হবে। যার অর্থ হল এদের সললেরই বারযাখি জীবন আছে। যদি কেউ বলে, এরা সকলে আযাবে যন্ত্রনায় চিত্কার করছে, কাজেই দুনিয়ার জীবনের সাথে তাদের জীবনের সাদৃশ্য আছে। যেমনটি শহীদদের ব্যাপারে অনেকে বলে থাকেনঃ  আল্লাহ্‌ সুবাহানাহুয়াতালা বলেন, “যারা আল্লাহর পথে নিহত হয়েছে তাদের কখনই মৃত মনে করো না, বরং তারা জীবিত, এবং তাদের রবের নিকট হতে তারা রিযিকপ্রাপ্ত, (আল- ইমরান ৩: ১৬৯)। আল্লাহ্‌ সুবাহানাহুয়াতালার স্পষ্ট ঘোষনা শহীদগন জীবিত ও রিজিক প্রাপ্ত। এ থেকেও বুঝা যায় দুনিয়ার জীবনের সাথে  শহীদদের বিশেষ জীবনের অনেক সাদৃশ্য রয়েছে। কারন দুনিয়ার জীবনে খাবার খেতে হয়। আর ও একটু বাড়িয়ে বলা যায়, নবীদের মর্যাদা শহীদের চেয়েও অনেক বেশি তাই দুনিয়ার জীবনের সাথে নবীদের জীবনের অনেক সাদৃশ্য রয়েছে। তাই তারা মরে নাই, তারা জীবিত, খাবার খায়, তারা হাজির নাজির ইত্যাদি ইত্যাদি। কাজেই তাদের বারযাখি জীবন ও সাধারণের জীবনের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। এভাবে যুক্তির দ্বারা মানুষকে ঘাস খাওয়ান যায় কিন্তু যুক্তির দ্বারা তৈরি আকিদা গ্রহনীয় নয়। যেমনঃ কেউ বলল মানুষ ঘাস খায়। আপনি বললেন কিভাবে? সে বলল, গরু ঘাস খায়। আর মানুষ গরু খায়। আপনি বললেন, না মানুষ মাংশ খায়। সে যুক্তি দিল মাংশতো ঘাস খাওয়ার ফলেই সৃষ্টি হয়েছে। আপনি বললেন ও বুঝেছি, এভাবেই মানুষ ঘাস খায়।

 বলেছিলাম যে, শহীদগন জীবিত ও রিজিক প্রাপ্ত। তাই  তাদের সাথে দুনিয়ার জীবনে সাদৃশ্য রয়েছে। সাদৃশ্য বা বৈসাদৃশ্য দেখানোর প্রয়োজন নেই। হাদিসে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ওফাত পরবর্তী জীবন সম্পর্কে যা বলছেন তা মোনে নেওয়াই মুমিদের কাজ।   

সহীহ মুসলিম বর্নিত, হযরত আনাস রা. বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেনঃ ‘আমি মিরাজের রাতে (বাইতুল মাকদিসের পাশে) লাল বালুর ঢিবির কাছে মূসা (আঃ) -এর পাশ দিয়ে অতিক্রম করেছি। তখন তিনি তাঁর কবরে দাড়িয়ে নামায আদায় করছিলেন”।

এই হাদিসটি বর্ননা করে বলে, যেহেতু মুসা (আ:) কবরে দাড়িয়ে নামায আদায় করছিলেন, সুতারং তিনি জীবিত।  অথচ সহিহ মুসলিম, সহিহ বুখারি, নাসাঈ শরীফসহ অনেক গ্রন্থে পাওয়া যায় মিরাজের রাতে ষষ্ঠ আসমানের হযরত মুসা (আঃ)-এর সাক্ষাৎ পান। তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে মারহাবা দেন ও কল্যাণের জন্য দুআ করলেন। ফিরে আসার সময় মুসা (আঃ)-এর পরামর্শে আল্লাহর নিকট থেকে পঞ্চাশ ওয়াক্ত কমিয়ে পঞ্চাশ ওয়াক্ত নামায ফরজ করে নিয়ে আসেন। তাই বলে কি তিনি ষষ্ঠ আসমানের থাকেন? আমাদের আকিদা হবে, মুসা (আ:) কবরে দাড়িয়ে নামায আদায় করেন আবার  আল্লাহর ইচ্ছায় ষষ্ঠ আসমানে ও থাকেন। বারযাখী হায়াত সম্পর্কে আল্লাহই ভাল জানেন।

এ হিসাবেতো মুমিন, মুনফিক, কাফির ও ইয়াহুদী এমনকি পরনিন্দাককারী, পেশাবের ব্যাপারে অসতর্কতা অবলম্বনকারি সকলেই জীবিত। এমনি ভাবে আয়াতের ভুল ব্যাখ্যা করে সাধারন মানুষকে মহাবিভ্রান্তিতর ফেলে দেয়। কাজেই কোন আকিদার প্রশ্ন আসলে, আপনি যুক্তি না খুজে দলিল খুজবেন।

৫। সহিহ হাদিসের নবীগণের বারযাখি জীবন

নবীগণের বিষয়ে কুরআন কারীমে কিছু না বলা হলেও সহীহ হাদীসে তাঁদের মৃত্যু পরবর্তী জীবন সম্পর্কে বলা হয়েছে। এ সম্পর্কে এখন শুধু সহিহ হাদিসগুলি উল্লেখ করব। দেখবেন একজন বুদ্ধিমান জ্ঞানি মানুষ হিসাবে আপনি নিজেই বলতে পারবেন আসল ব্যাপারটি কি? এমন কি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওফাত পরবর্তী জীবন বা বারযাখি জীবন ও সাধারণের জীবনের মধ্যে কোন পার্থক্য আছে কি নেই তার জন্য কোন ব্যাখ্যা প্রয়োজন নেই। দরকার শুধুই কুরআন হাদিসের সঠিক রেফারেন্স।

ক। আনাস ইবনু মালিক (রা) বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ

 ‘‘নবীগণ তাঁদের কবরের মধ্যে জীবিত, তাঁরা সালাত আদায় করেন।’’

(হাদীসটির সনদ সহীহ। আবূ ইয়ালা আল-মাউসিলী, আল-মুসনাদ ৬/১৪৭; বাইহাকী, হায়াতুল আম্বিয়া, পৃ. ৬৯-৭৪; হাইসামী, মাজমাউয যাওয়াইদ ৮/২১১; শাওকানী, তুহফাতুয যাকিরীন পৃ. ২৮; নাইলুল আউতার, ৩/২৪৭); শায়খ নাসীরুদ্দীন আলবানী রাহ., সিলসিলাতুস সহীহা, হাদীস ৬২১)।

খ। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ইন্তিকাল পরবর্তী জীবন সম্পর্কে বিশেষভাবে কিছু হাদীস বর্ণিত হয়েছে। আবু হুরাইরা (রা.) বলেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ

‘‘যখনই যে কেউ আমাকে সালাম করে তখনই আল্লাহ আমার রূহকে আমার কাছে ফিরিয়ে দেন, যেন আমি তার সালামের উত্তর দিতে পারি।’’  [আবূ দাউদ, আস-সুনান ২/২১৮। হাদীসটির সনদ গ্রহণযোগ্য]।
গ। অন্য হাদীসে আবু হুরাইরা (রা) বলেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ

‘‘কেউ আমার কবরের কাছে থেকে আমার উপর দরুদ পাঠ করলে আমি শুনতে পাই। আর যদি কেউ দূর থেকে আমার উপর দরুদ পাঠ করে তাহলে আমাকে জানান হয়।’’

(বাইহাকী, হায়াতুল আম্বিয়া ১০৩-১০৫ পৃ.; সাখাবী, আল-কাউলুল বাদী ১৫৪; [সুয়ূতী, আল-লাআলী ১/২৮৩; ইবনু আর্রাক, তানযীহ ১/৩৩৫; দরবেশ হূত, আসনাল মাতালিব, পৃ. ২১৬; শাওকানী, আল-ফাওয়াইদ ২/৪১০; আলবানী, যায়ীফুল জামি, পৃ. ৮১৭,; যায়ীফাহ ১/৩৬৬-৩৬৯পৃ.)।

হাদীসটির একটি সনদ খুবই দুর্বল হলেও অন্য আরেকটি গ্রহণযোগ্য সনদের কারণে ইবনু হাজার, সাখাবী, সুয়ূতী প্রমুখ মুহাদ্দিস এ সনদটিকে সুন্দর ও গ্রহণযোগ্য বলে উল্লেখ করেছেন।
ঘ। আউস (রা) বলেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ

‘তোমাদের শ্রেষ্ঠ দিনগুলোর একটি হল জুমার দিন। এ দিনেই আদম আলাইহিস সালামকে সৃষ্টি করা হয়েছে। এ দিনেই তাঁর মৃত্যু হয়েছে। এ দিনেই শিঙ্গায় ফুৎকার দেওয়া হবে, আর এ দিনেই সকল প্রাণী মৃত্যুবরণ করবে। সুতরাং এ দিনে তোমরা আমার উপর বেশি করে ছালাত ও সালাম পাঠাও। তোমাদের ছালাত আমার কাছে পেশ করা হবে। সাহাবাগণ বললেন, আমাদের ছালাত আপনার কাছে কীভাবে পেশ করা হবে, তখন যে আপনি (মাটির সাথে মিশে) ক্ষয়প্রাপ্ত (নিঃশেষিত) হয়ে যাবেন? নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা মাটির জন্য নবীগণের দেহ খাওয়াকে হারাম করে দিয়েছেন’

 (মুনযিরী, আত-তারগীব ২/৩৮৮; হাইসামী, মাজমাউয যাওয়ায়িদ ১০/১৬২; সাখাবী, আল-কাওলুল বাদী, পৃ. ১৫৩-১৫৫; আলবানী, আস-সহীহা ৪/৪৩-৪৫, নং ১৫৩০; সুনানে আবু দাউদ,হাদীস ১০৪৭; সহীহ ইবনে খুযাইমা,  ৩/১১৮ হাদীস ১৭৩৩; মুসতাদরাকে হাকেম, ১/২৭৮, হাদীস ১০২৯; মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ১৬১৬২)।

হাদীসটিকে আরও যারা সহীহ বলেছেনঃ হাফেজ ইবনুল কায়্যিম রাহ. জালাউল আফহাম পৃ.৮১-৮৫; যাদুল মা‘আদ ১/৩৫৪; হাফেজ ইবনে কাসীর রাহ. (তাফসীরে ইবনে কাসীর, সূরা আহযাব, ৩/৫১৪’; হাফেজ ইবনে আব্দুল হাদী, আছছারিমুল মুনকী পৃ. ২১০; উবাইদুর রহমান মোবারকপুরী, মিরআতুল মাফাতীহ; শাওকানী রাহ. তুহফাতুয যাকিরীন; শায়েখ বিন বায ফাতাওয়া নূরুন আলাদ দারব ১/৯৩);  শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রাহ. হাদীসটি দলিল হিসেবে উল্লেখ করেছেন।  (৪/২৯৬, ২৬/১৪৭)।

হাদীসটি বাযযার, তাবারানী ও আবুশ শাইখ সংকলন করেছেন। হাদীসের সনদে পরস্পর বর্ণনাকারী রাবীদের মধ্যে দুজন রাবী দুর্বল। এজন্য হাদীসটি যয়ীফ। তবে এ অর্থে আরো কয়েকটি দুর্বল সনদের হাদীস বর্ণিত হয়েছে। সেগুলোর সামগ্রিক বিচারে নাসিরুদ্দীন আলবানী ও অন্যান্য মুহাদ্দিস এ হাদীসটিকে ‘হাসান’ বা গ্রহণযোগ্য বলে গণ্য করছেন।

ঙ। আরো অনেক সহীহ হাদীসে বলা হয়েছে যে, ফিরিশতাগণ সে সালাত ও সালাম রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কবর মুবারাকে পৌঁছিয়ে দেবেন। আম্মার বিন ইয়াসির (রা)-এর সূত্রে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিতঃ

‘‘আল্লাহ আমার কবরে একজন ফিরিশতা নিয়োগ করছেন, যাকে তিনি সকল সৃষ্টির শ্রবণশক্তি প্রদান করেছেন, কিয়ামত পর্যন্ত যখনই কোনো ব্যক্তি আমার উপর সালাত (দরুদ) পাঠ করবে তখনই ঐ ফিরিশতা সালাত পাঠকারীর নাম ও তাঁর পিতার নাম উল্লেখ করে আমাকে তাঁর সালাত পৌঁছে দিয়ে বলবে, অমুকের ছেলে অমুক আপনার উপর সালাত প্রেরণ করেছে।’’

চ। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেনঃ

 “আল্লাহ তাআলার নির্ধারিত একদল ফেরেশতা রয়েছেন যারা দুনিয়াতে ঘুরে বেড়ান এবং আমার উম্মতের সালাম আমার কাছে পৌঁছে দেন”

(সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস ৯১৪; হাদীসটিকে আরও সহীহ বলেছেন:- ইমাম হাকেম, মুসতাদরাকে হাকেম, হাদীস ৩৫৭৬, ২/৪২১ ও হাফেজ ইবনুল কায়্যিম রাহ., জালাউল আফহাম পৃ.২৪)।  

উপরের সহিহ হাদীসগুলো থেকে প্রমাণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে মৃত্যু পরবর্তী জীবন দান করা হয়েছে। এ জীবন হল, তার বারযাখী জীবন। যা সম্পর্কে মনগড়া ইচ্ছামতন বানিয়ে বানিয়ে বলা সম্পুর্ন হারাম।  রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এই বারযাখী জীবনটা তার বিশেষ সম্মান ও মর্জাদার বহন করে। যেহেতু এটি গায়েবী জগতের খবর তই এ বিষয়ে হাদীসে যতটুকু বলা হয়েছে ততটুকুই বলতে হবে, এর বেশী বাড়ান বা কমান যাবে না। হাদীসের আলোকে বলা যায়, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ অলৌকিক বারযাখী জীবন অনেক ঘটনা ঘটছে যা সাধারন মুমিন থেকে সম্পুর্ণ আলাদা।

 

৬। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এই অলৌকিক বারযাখী জীবনের বৈশিষ্ট হলঃ

১. তার এই জীবনে সালাত আদায়ের সুযোগ রয়েছে।

২. কেউ সালাম দিলে আল্লাহ তাঁর রূহ মুবারাককে ফিরিয়ে দেন সালামের জবাব দেয়ার জন্য।

৩.  কবরের নিকট কেউ সালাম দিলে তিনি তা শুনেন, আর দূর থেকে সালাম দিলে তা তাঁর কাছে পৌঁছানো হয়।

৪.  নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা মাটির জন্য তার দেহ খাওয়াকে হারাম করে দিয়েছেন।

৭। এ সম্পর্কে আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআতের আকীদা

মাসিক আল কাউসার, অক্টোবার ২০১৫ সংখ্যায়, মাওলানা তাহমীদুল মাওলা “প্রসঙ্গঃ আকীদায়ে হায়াতুন্নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম” শিরোনামে এ সম্পর্কে সুন্দর ও জ্ঞানগর্ব একটি লেখা উপস্থাপন করছেন। ঐ লেখায় তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মৃত্যু পরবর্তী জীবন সম্পর্কে আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআতের আকীদা কি তা উল্লেখ করে লিখেছেনঃ

আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআতের আকীদা হলঃ

১. নির্ধারিত মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করার মাধ্যমে সকল নবীগণের দুনিয়ার জীবনের পরিসমাপ্তি ঘটেছে।

২. মৃত্যুর পর তাঁরা আল্লাহ তা’আলার পক্ষ থেকে এক বিশেষ জীবন লাভ করেছেন। তাই তারা কবরে জীবিত। তাদের কবরের জীবনের ধরণ বিষয়ে আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআর বিশ্বাস হলঃ

ক. আলমে বারযাখে সাধারণ মুমিনের জীবনের চেয়ে শহীদদের জীবন পূর্ণাঙ্গ। আর শহীদের জীবন থেকে নবীদের জীবন আরো পূর্ণাঙ্গ ও উন্নততর।

খ. দুনিয়ার জীবনের সাথে তাঁদের কবরের জীবনের কিছু কিছু বিষয়ে সাদৃশ্য রয়েছে। যেমন: কবরে তাঁদের দেহ মোবারক সুসংরক্ষিত রয়েছে। তাঁরা কবরে নামায আদায় করেন। যারা কবরের নিকট গিয়ে ছালাত ও সালাম পেশ করে তাঁরা তা সরাসরি শুনেন এবং যারা দূর থেকে সালাম পাঠান তা ফেরেশতা তাদের কাছে (কবরে) পৌঁছে দেন এবং তাঁরা আল্লাহর পক্ষ থেকে বিশেষ রিযিক প্রাপ্ত হন।

গ. কবরের জীবনের ধরণ সম্পর্কে যে বিষয়গুলো কুরআন-সুন্নাহয় পাওয়া যায় না সে বিষয়ে নিরবতা অবলম্বন করি।

৩. আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআহ এও বিশ্বাস করে যে, তাদের কবর-জীবন হুবহু দুনিয়ার জীবনের মত নয়। কবর থেকে স্বাভাবিকভাবে যথা ইচ্ছা গমনাগমন করা, মৃত্যু-পূর্ববর্তী সময়ের মত আদেশ নিষেধ ও পরামর্শ দেওয়া, কারো সাথে সরাসরি সাক্ষাৎ, কথোপকথন ও মুসাফাহা করা ইত্যাদি বিষয়ে শরয়ী কোনো দলিল নেই। তবে যদি স্বপ্ন, কাশফ বা কারামাতের মাধ্যমে এমন কোনো কিছু ঘটা প্রমাণিত হয়, তাহলে সেটি ভিন্ন বিষয়। হায়াতুল আম্বিয়ার আকীদার সাথে এর কোনো সম্পর্ক নেই।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ অলৌকিক বারযাখী জীবন সাধারন মুমিন থেকে সম্পুর্ণ আলাদা প্রমান করতে গিয়ে হাদিসের আলোকো বারযাখী জীবনের যে চারটি বৈশিষ্ট উল্লেখ করেছি তার সাথে “আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআতের আকীদা” মিলিয় দেখুন সম্পুর্ন মিলে যাবে। তবে আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআতের আকীদায় দুই নম্বরে বলা হয়েছে, “তাই তাঁরা কবরে জীবিত” দুই নম্বরের খ-তে বলা হয়েছে, “দুনিয়ার জীবনের সাথে তাঁদের কবরের জীবনের কিছু কিছু বিষয়ে সাদৃশ্য রয়েছে”।  তিন নম্বরটি পড়লেই এর ব্যাখ্যা পেয়ে যাবেন, সেখানে বলা হয়েছে, যে, তাদের কবর-জীবন হুবহু দুনিয়ার জীবনের মত নয়।  অর্থাৎ তারা জীবিত কিন্তু বলতে হবে বারযাখী জীবনে বা ওফাত পরবর্তী জীবন।

হায়াতুন্নাবী সম্পর্কে আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআতের আকীদাই চুড়ান্ত আকিদা হওয়া উচিৎ। কিন্তু হায়াতুন্নাবী বলতে যদি আমরা বুঝি আমাদের দুনিয়ার জীবনের মত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও কবরে জীবন যাপন করছেন তবেতো মারাত্বক ভুল করলাম। অনেকে বলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বশরীরে কররে জীবিত বলেন, কথাটা ঠিক আছে কারন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দেহ মোবারক আল্লাহ তাআলা মাটির জন্য খাওয়াকে হারাম করে দিয়েছেন। (আলবানী, আস-সহীহা ৪/৪৩-৪৫)।

সার কথঃ তিনি বারযাখী জীবনে বা ওফাত পরবর্তী জীবনে বিশেষ হায়াত প্রাপ্ত। স্বশরীরে কররে জীবিত এর দ্বারা যদি বুঝে থাকন দুনিয়ার জীবনের মত কবরে জীবন যাপন করছেন। কবর জিয়ারতে গেলে তিনি তাকিয়ে থাকেন। আমাদের কর্ম সম্পর্কে খোজ খবর নেন। যেমন জীবিত লোকে খোজ খবর নেন। তাহলে মহা বিভ্রান্তিতে আছেন। তাইতো অনেক বিজ্ঞ আলেম হায়াতুন্নাবী শব্দটিও পবিহার করে চলেন।

হায়াতুন্নাবী বলতে অনেকে বুঝে থাকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ওফাত পরবর্তী জীবন জাগতিক জীবনের মতই। এ ধারণাটি ভুল এবং তা কুরআন, সুন্নাহ ও সাহাবীগণের রীতির পরিপন্থী। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মৃত্যু পরবর্তী পরের ঘটনাগুলো হাদীসগ্রন্থগুলোতে পাঠ করলেই আমরা অত্যন্ত সুস্পষ্টভাবে বুঝতে পারি যে, সাহাবীগণ তাকে কখনোই জাগতিক জীবনের অধিকারী বলে মনে করেন নি। তাই তার ওফাতের পর একজন সাধারন মুমিনের মৃত্যর পর তার সাথে যে রকম করার আদেশ তিনি দিয়ে ছিলেন তার তার সাথেও ঠিক তেমনি আচরন করা হইয়াছে। যেমন গোসল করান, দাফন করা।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জীবদ্দশায় তার পরামর্শ, দোয়া ও অনুমতি ছাড়া কোন সাহাবি কিছু করছেন বলে প্রমান পাওয়া যায় না। কিন্তু তার ওফাতের পরে কখনো কোনো সাহাবী তার কবরে দোয়া, পরামর্শ বা অনুমতি গ্রহণের জন্য আসেন নি। ইতিহাস গ্রন্থ পড়লে দেখা যায় তার ওফাতের পরে খলীফা নির্বাচনের বিষয়সহ সাহাবীগণ বিভিন্ন সমস্যায় পড়েছেন। নিজেদের মধ্যে ভুল বুঝাবুঝির জন্য যুদ্ধবিগ্রহ করেছেন।

আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু এর খিলাফত গ্রহণের পরই অনেকে জাকাত দিতে অস্বীকার করে,  প্রায় আধা ডজন ভন্ড নবী দাবি করে বসে এবং আভ্যন্তরীণ বিদ্রোহ শুরু হয়। উম্মুল মুমিনীন আয়েশার রাদিয়াল্লাহু আনহা এর সাথে আমীরুল মুমিনীন আলীর রাদিয়াল্লাহু আনহু কঠিন যুদ্ধ হয়েছে, আমীর মুয়াবিয়ার রাদিয়াল্লাহু আনহু সাথেও তার যুদ্ধ হয়েছে। হাজার হজার সাহাবি শহীদ হয়েছেন। তার কলিজার টুকরা ফাতিম রাদিয়াল্লাহু আনহা এর পুত্র হোসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহু কারবালায় নির্মমভাবে শহীদ হন। এই ভয়াবহ বিপদের সময় কোনো খলিফা রাদিয়াল্লাহু আনহু বা  সাহাবী রাদিয়াল্লাহু আনহু তার কবরে কাছে দোয়া বা পরামর্শের জন্য গিয়েছেন বলে জানা যায়না। আল্লাহর কাছে দোয়া করার জন্যও কবর শরীফে সমবেত হয়ে কোনো অনুষ্ঠান করেন নি। এমনকি কারো কাছে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রূহানীভাবেও প্রকাশিত হয়ে কিছু বলেন নি এবং কাউকে সপ্নের মধ্যে ও নির্দেশ দেন নি। জালিয়াতগন হযরত ওমরের রাদিয়াল্লাহু আনহু এর পক্ষে বিপক্ষে, হযরত আলীর রাদিয়াল্লাহু আনহু ওর পক্ষে বিপক্ষে হাদিস বানিয়েছেন। কিন্তু ওফাতের পরে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কবর থেকে বা রূহানীভাবেও প্রকাশিত হয়েছে অথবা সাহাবীগণের মাজলিসে এসে কোন পরামর্শ দিয়েছেন বলে হাদিস জাল করতে সাহস পাননি। সুতারং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ওফাত পরবর্তী জীবন জাগতিক জীবনের মত মনে করা চরম বোকামি ছাড়া কিছু না।

৮। এ সম্পর্কিত যঈফ ও জাল হাদিসসমূহঃ

 ‘হাদীসের নামে জালিয়াতি’ নামক বইটিতে, ডঃ খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওফাত পরবর্তী জীবন কিছু জয়িফ ও জাল হাদিস বর্ননা করছেন। শুধু সতর্ক হওয়ার জন্যই তিনটি হদিস সরাসরি তুলে ধরছি।

 ১.     একটি যয়ীফ সনদের হাদীসে বর্ণিত হয়েছেঃ

‘নবীগণকে ৪০ রাতের পরে তাঁদের কবরের মধ্যে রাখা হয় না। কিন্তু তারা মহান আল্লাহর সামনে সালাতে রত থাকেন; শিংগায় ফুঁক দেয়া পর্যন্ত।’’

হাদীসটির বর্ণনাকারী আহমাদ ইবনু আলী আল-হাসনবী মিথ্যাবাদী ও জালিয়াত বলে পরিচিত। এজন্য কোনো কোনো মুহাদ্দিস একে মাউযূ বলে গণ্য করেছেন। অন্যান্য মুহাদ্দিস এ অর্থের অন্যান্য হাদীসের সমন্বয়ে একে দুর্বল বলে উল্লেখ করেছেন। (দাইলামী, আল-ফিরদাউস ১/২২২; ৩/৩৫; ইবনু হাজার, ফাতহুল বারী ৬/৪৮৭; সুয়ূতী, আল-লাআলী ১/২৮৫; আলবানী, যয়ীফুল জামি, পৃ. ২০৫)।

বিঃ দ্রঃ তবে বিভিন্ন হাদীসে বর্ণিত  মি’রাজের রাত্রিতে মূসা (আ)-কে নিজ কবরে সালাত আদায় করা এবং ঈসা (আ) কেও দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করার কথা আছে।

২.     রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর দরুদ পাঠ করলে মাধ্যম ছাড়াই তা শুনতে পান

আব্দুল হাই লাখনবী বলেন, প্রচলিত জাল ও মিথ্যাগুলোর একটি হলঃ যদি কেউ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর দরুদ পাঠ করে, তবে সে ব্যক্তি যত দূরেই থাক, তিনি কারো মাধ্যম ছাড়াই তা শুনতে পান। (আব্দুল হাই লাখনবী, আল-আসার, পৃ. ৪৬)।

৩. তিনি মীলাদের মাহফিলে উপস্থিত হনঃ

আব্দুল হাই লাখনবী বলেন: প্রচলিত আরেকটি জাল ও মিথ্যা কথা:

‘মাওলিদের ওয়াযের মাজলিসে তাঁর মাওলিদ বা জন্মের কথা উল্লেখের সময় তিনি নিজে সেখানে উপস্থিত হন। এ কথার উপরে তারা তাঁর মাওলিদের বা জন্মের কথার সময় সম্মান ও ভক্তি প্রদর্শনের জন্য কিয়াম বা দাঁড়ানোর প্রচলন করেছে।’

(আব্দুল হাই লাখনবী, আল-আসার, পৃ. ৪৬)। উপরের বর্নিত কথা সনদহীন, ভিত্তিহীন, বানোয়াট ও মিথ্যা কথা। উপরন্তু এ কথা উপরে আলোচিত সহীহ হাদীসগুলোর সুস্পষ্ট বিরোধী।

সংকলনেঃ মোহাম্মাদ ইস্রাফিল হোসাইন। (বিএ ইন এ্যারাবিক লিটারেচার, ইসলামিক হিস্টরী এন্ড ইসলামিক স্টাডিস)

Leave a comment