রামাদান মাসের কিছু ভুল আমল : তৃতীয় কিস্তি

রামাদান মাসের কিছু ভুল আমল : তৃতীয় কিস্তি

সংকলনেঃ মোহাম্মাদ ইস্রাফিল হোসাইন

১১। ছেলেমেয়ে বালেগ হওয়ার পরও পরীক্ষা কিংবা কর্মব্যস্ততার অজুহাতে সিয়াম পালনে বিরত রাখাঃ

আমাদের সমাজে অনেক ছেলেমেয়ে আছে যারা বালেগ, রমজান মাসে যদি তাদের জিজ্ঞাসা করা হয়, তুমি কি সিয়াম রেখেছ? তারা সুন্দর করে উত্তর দেন, আমাদের আব্বু আম্মু সিয়াম রাখতে দেন না। আমিতে রাখতেই চাই। কিন্তু আব্বু আম্মু বলে সিয়াম পালন করলে শরীর নষ্ট হয়ে যাবে, পড়াশুনার ক্ষতি হবে ইত্যাদি ইত্যাদি। আসলে সে সকল অবিভাবক সিয়াম পালন করতে বালেগ ছেলেমেয়েদের নিষেধ করে, তারা জানেনা যে আমার সন্তানের উপর সিয়াম ফরজ যেমন ফরজ আমাদের উপর। শুধু এই কারনে অবিভাবক বালেগ ছেলেমেয়ে সকলকেই মহান আল্লাহর নিকট জবাবদীহি করতে হবে। আমাদের উচিত হবে বালেগ ছেলেমেয়েদের সিয়াম পালনে উত্সাহিত করা। তাদের সিয়াম পালনে নিরুতসাহিত করা কবিরাগুহনের অন্তরভু্ক্ত হবর।

পরীক্ষা কিংবা কর্মব্যস্ততার কারণে রোযা না রাখা শরীয়ত সম্মত নয়। সকালে পড়ালেখা করতে কষ্ট হলে রাতে করার সময় থাকে। আমাদের মনে রাখা উচিৎ যে পরীক্ষায় ভাল ফলাফল করার চেয়ে আল্লাহকে সন্তুষ্ট করাটাই আমাদের মূল লক্ষ্য।পড়ালেখা করার মধ্যে দিয়েও যদি আমরা সঠিকভাবে যদি আমরা রোযা রাখার মত ফরয কাজগুলো করার চেষ্টা করি, ইনশাআল্লাহ আল্লাহ আমাদের জন্য তা সহজ করে দিবেন এবং আমাদের সাহায্য করবেন। মহান আল্লহ বলেনঃ

 وَمَن يَتَّقِ اللَّهَ يَجْعَل لَّهُ مَخْرَجًا

আর যে আল্লাহকে ভয় করে, আল্লাহ তার জন্যে নিস্কৃতির পথ করে দেবেন। [ সুরা তালাক ৬৫:২ ]

তিনি আরও বলেন,

وَيَرْزُقْهُ مِنْ حَيْثُ لَا يَحْتَسِبُ وَمَن يَتَوَكَّلْ عَلَى اللَّهِ فَهُوَ حَسْبُهُ إِنَّ اللَّهَ بَالِغُ أَمْرِهِ قَدْ جَعَلَ اللَّهُ لِكُلِّ شَيْءٍ قَدْرًا

এবং তাকে তার ধারণাতীত জায়গা থেকে রিযিক দেবেন। যে ব্যক্তি আল্লাহর উপর ভরসা করে তার জন্যে তিনিই যথেষ্ট। আল্লাহ তার কাজ পূর্ণ করবেন। আল্লাহ সবকিছুর জন্যে একটি পরিমাণ স্থির করে রেখেছেন। (সুরা তালাক ৬৫:৩)

১২। ঈদের প্রস্তুতি নিতে গিয়ে রমযানের শেষাংশ অবহেলা করাঃ

আমরা অনেকেই ঈদের জন্য নানান ধরনের প্রস্ততি গ্রহন করি। বিষেশত বর্তমানে ছেলে মেয়েদের জন্য ঈদে নতুন কাপড় কেনা একটা ফ্যাসন হয়ে দাড়িয়েছে। ঈদ মানেই নতুন নতুন কাপল চোপড়। অনেকের নিকট সিয়াম পালণের চেয়ে ঈদের পোশাকের কদর বেশী। এই জন্য দেখা যায় রমজানে মার্কেটি গিয়ে সিয়াম ভেঙ্গে খারাব খায় তবু মার্কেট ছাড়ে না। অনেক মহিলাকে পর্দাহীন নির্লজ্জভাবে কেনাকাটা করে যা রমজানের মহাত্তকে মলিন করে দেয়। আর এই কাজট করে তারা রমযানের শেষাংশ। অথচ এই শেষাংশে তার ইবাদতে সময় বেশী ব্যয় করা উচিত ছিল।  রমযানের শেষ দশ দিন অবহেলায় পালন করলে লাইলাতুল ক্বাদরের তালাশ করা সম্ভব হবে না। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রমযানের শেষ দশ দিন আল্লাহর ইবাদতে খুব বেশি সময় নিমগ্ন থাকতেন, কেনাকাটি করায় ব্যস্ত থাকতেন না। রমযান শুরু হবার আগেই আমাদের কেনাকাটি শেষ করা উচিৎ।

১৩। ইতিকাফ কে “সুন্নাতে কিফায়া” বলা একটি ভুলঃ

আমাদের দেশে মনে করা হয় যে সমাজের পক্ষ থেকে এক ব্যক্তিকে অবশ্যই ইতিকাফে বসতে হবে তা না হলে সবাই গুনাহগার হবে। আমি এক রমজানের জুমার খুতরায় এক ইমামকে বলতে শুনছি, ইতিকাফ হলো “সুন্নাতে কিফায়া” অর্থাৎ একজন ইতিকাফ করলে সকলের পক্ষ থেকে আদায় হয়ে যাবে। কিন্তু এ ধারণা মোটেই ঠিক নয়। কারণ, ইতিকাফ হল একটি সুন্নত ইবদাত।

যে কোন মুসলমান তা পালন করতে পারে। যে ব্যক্তি তা পালন করবে সে অগণিত সোওয়াবের অধিকারী হবে। সবার পক্ষ থেকে একজনকে ইতিকাফে বসতেই হবে এমন কোন কথা শরীয়তে নেই। আল্লাহ তাআলা সকল ক্ষেত্রে তার নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সুন্নতকে যথাযথভাবে পালন করার তাওফীক দান করুন এবং সকল বিদআত ও সুন্নত বিরোধী কার্যকলাপ থেকে হেফাজত করুন।

১৪। মসজিদ ছাড়া আর কোথাও ইতিকাফ করাঃ

 ইতিকাফের স্থান হল মসজিদ। মসজিদ ছাড়া আর কোথাও ইতিকাফ হবেনা। ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইতিকাফ করার সময় তাঁর জন্য মাসজিদে বিছানা পাতা হত। সেখানে তাঁর জন্য ‘তাওবার’ খুঁটির পেছনে খাট লাগানো হত। (হাদিসের মান হাসান মিশকাত-২১০৭, ইবনু মাজাহ ১৭৭৪, সহীহ ইবনু খুযায়মাহ্ ২২৩৬, তারাজু‘আতুল আলবানী ৩২)।

আমাদের সমাজে প্রচলিত আছে, মহিলগন তাদের ঘরে ইতিকাফ করতে পাবরে। হানাফি মাযহাবের অনুসারী অনেক আলেম এমনটি মতামত দিয়ে থাকেন। কিন্তু হাদিসের আলোকে দেখা যায় নবী এর স্ত্রীগণ মসজিদের সাথে তাবি টানিয়ে ইতিকাফ করতেন। তাদের হুজরা মাত্র ৫০/১০০ গজ দুরে থাকা সত্বেও তারা হুজরায় বসে ইতিকাফ করেন নাই। যেমন হাদিসে এসেছে।

আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমযানের শেষ দশকে ইতিকাফ করার অভিপ্রায় প্রকাশ করলে ‘আয়িশা (রাঃ) তাঁর কাছে ইতিকাফ করার অনুমতি প্রার্থনা করায় তিনি তাঁকে অনুমতি দিলেন। এরপর হাফসা (রাঃ) ‘আয়িশা (রাঃ) এর নিকট অনুমতি চাইলে তিনি তাঁকে অনুমতি দিলেন। তা দেখে যায়নাব বিনত জাহশ (রাঃ) নিজের জন্য তাঁবু লাগানোর নির্দেশ দিলে তা পালন করা হল। ‘আয়িশা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফজরের সালাত আদায় করে নিজের তাঁবুতে ফিরে এসে কয়েকটি তাবু দেখতে পেলেন, (হুজরা থাকা সত্বেও তাবু টানালেন)। তখন তিনি বললেনঃ এ কি ব্যাপার? লোকেরা বলল, ‘আয়িশা, হাফসা ও যায়নাব (রাঃ) এর তাঁবু। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তারা কি নেকী পেতে চায়? আমি আর ইতিকাফ করব না। এরপর তিনি ফিরে আসলেন। পরে সিয়াম করে শাওয়াল মাসের দশ দিন ইতিকাফ করেন। (সহিহ বুখারী হাদিস নম্বর ১৯১৭ ইসলামিক ফাউন্ডেশন)।

মন্তব্যঃ মহিলাদেরও মসজিদে ইতকাফ করতে হবে। এই অধিকাংশ আলেমদের মত হলো মহিলাদের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ আছে শুধু এমন মসজিদেই ইতিকাফ করা উচিত। কিন্তু এখানে একটি কথা উল্লেখ করতে চাই। আমাদের উপমহাদেশের অনেক হানাফি আলেম মহিলাদের ঘরে ইতিকাফ করাকে জায়েয বলেছেন। আমদের দেশে প্রায় শতভাগ মসজিদেই মহিলাদের জন্য কোন সালাতের স্থান নাই। কাজেই কোন মহিলাই ইতকাফ করতে পারবেনা, এমনটি হতে  পারেনা। তাই কোন কোন আলেমের মনে করেন ঘরের কোন নির্দিষ্ট স্থানকে আলাদা করে, মসজিদের মত পাক পরিত্র রেখে মহিলাদের ইতিকাফ করা জায়েয বলেছেন। কিন্তু সুন্নাহ হল ইতিকাফ মসজিদে করা। মসজিদে স্থান থাকা সত্বেও ঘরে ইতিকাফ করা বিদআত। আবরা ঘরে ইতিকাফ করা জায়েয/সুন্নাহ  মনে করলেও বিদআত হবে।

১৫। শুধু ২৭ শে রমাজানের  রাতকে শবেকদর মনে করাঃ

অধিকাংশ মুসলিমদের ধারনআ শবেকদর শুধু  ২৭ শে রমাজের তারিখে হয় থাকে। এমনকি আমাদের দেশে ২৭ শে রমাজানের দিন অফিস আদালত বন্ধ থাকে। যাদের ইসলাম সম্পর্কে জ্ঞান সিমিত তারাতো ধরেই নিয়েছি শুধু ২৭ শে রমাজানের  রাতকে শবেকদর হবে। এই দিনটিক করদ হিসাব পালন করে থাকে। যদি কাউকে প্রশ্ন করা হয় শবেকদর কবে? সাথে সাথে নির্দিধায় বলে দেবে কেন জাননা, ২৭ শে রমাজান। কিন্তু মহান আল্লাহ রহমতে আজ কাজ অনেক এই ধারনে থেকে বেল হয়ে আসতে শুরু করেছে। আসলে শবে করদ কখন হয় তা যানা খুবই জরুরী। সঠিক মত হলো, লাইলাতুল কদর এর নির্দিষ্ট কোন রাত কুরআন সুন্নাহ দ্বারা প্রমানিত নয়। নির্দিষ্ট না করার মাধ্যমে কল্যান নিহীত আছে বলে মহান আল্লাহ নির্দিষ্ট করেন নি। আবার রাতটি জন্য সারা বছর বা পুর রমজান মাসও নির্দিষ্ট করেন নি। হাদিসসমূহের ভাষ্য মতে বুঝা যায়, রমজানের শেষ দশকেই লাইলাতুল কদর নির্দিষ্ট আছে। মাত্র এই দশটি দিন অনুসন্ধান করলেই নিশ্চিতভাবে এই ফজিলতপূর্ন কল্যায়কর রজণী পাওয়া যাবে। এই রমজানের শেষ দশকে মাঝে আবার কোন কোন দিনকে গুরুত্ব প্রদান করা হয়েছে। নিম্ম এমনই কিছু হাদিস তুলে ধরলাম।

লাইলাতুল কদর রমজানের শেষ সাত দিনেঃ

ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কতিপয় সাহাবীকে স্বপ্নযোগে রমযানের শেষের সাত রাতে লাইলাতুল কদর দেখানো হয়। (এ কথা শুনে) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আমাকেও তোমাদের স্বপ্নের অনুরূপ দেখানো হয়েছে। (তোমাদের দেখা ও আমার দেখা) শেষ সাত দিনের ক্ষেত্রে মিলে গেছে। অতএব যে ব্যাক্তি এর সন্ধান প্রত্যাশী, সে যেন শেষ সাত রাতে সন্ধান করে। (সহিহ বুখারী হাদিস নম্বর ১৮৮৮ ইঃ ফাঃ)

আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কতিপয় সাহাবীকে স্বপ্নে দেখান হল যে, (রমযানের) শেষ সাত দিনের মধ্যে কদরের রাত রয়েছে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমি মনে করি যে, শেষের সাতদিন সম্পর্কে তোমাদের সকলের স্বপ্ন পরস্পর সামঞ্জস্যপূর্ণ। অতএব যে ব্যাক্তি তা অন্বেষণ করবে, সে যেন রমযানের শেষ সাতদিনের রাতগুলোতে তা অন্বেষণ করে। (সহিহ মুসলিম হাদিস নম্বর ২৬৩২ ইঃফাঃ)

১৬। লাইলাতুল কদর রমজানের শেষ দশকেঃ

‘আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমযানের শেষ দশকে ইতিকাফ করতেন এবং বলতেনঃ তোমরা শেষ দশকে লাইলাতুল কদর তালাশ কর। (সহিহ বুখারী হাদিস নম্বর ১৮৯৩ ইঃ ফাঃ)

সালিম ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তার পিতা [আবদুল্লাহ (রাঃ)] বলেছেনঃ আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে লায়লাতুল কদর সম্পর্কে বলতে শুনেছি, তোমাদের কতিপয় লোককে দেখান হল যে, তা রমযানের প্রথম সাতদিনের মধ্যে, আবার কতিপয় লোককে দেখান হয়েছে যে, তা শেষ সাতদিনের মধ্যে। অতএব (রমযানের) শেষ দশকেরে মধ্যে তা অন্বেষণ কর। (সহিহ মুসলিম হাদিস নম্বর ২৬৩৫ ইঃফাঃ)

১৭।লাইলাতুল কদর রমজানের ২১ তারিখেঃ

আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমযান মাসের প্রথম দশকে ইতিকাফ করলেন। এরপর তিনি মাঝের দশকেও একটি তাঁবুর মধ্যে ইতিকাফ করলেন এবং তাবুর দরজায় একটি চাটাই ঝূলান ছিল। রাবী বলেন, তিনি নিজ হাতে চাটাই ধরে তা তাঁবুর কোণে রাখলেন এরপর নিজের মাথা বাইরে এনে লোকদের সাথে কথা বললেন এবং তারাও তাঁর নিকট এগিয়ে এল। তিনি বললেন, এই রাতের অনুসন্ধানকল্পে আমি (রমযানের) প্রথম দশকে ইতিকাফ করলাম। অতঃপর মাঝের দশকে ইতিকাফ করলাম। এরপর আমার নিকট একজন আগন্তুক (ফিরিশতা) এসে আমাকে বলল, লায়লাতুল কদর শেষ দশকে নিহিত আছে। অতএব তোমাদের মধ্যে যে ব্যাক্তি ইতিকাফ করতে চায়, সে যেন ইতিকাফ করে।

লোকেরা তাঁর সঙ্গে (শেষ দশকে) ইতিকাফ করল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বললেন, স্বপ্নে আমাকে তা কোন এক বেজোড় রাতে দেখনো হয়েছে এবং আমি যেন সেই রাতে কাদা ও পানির মধ্যে ফজরের সিজদা করছি। (রাবী বলেন) তিনি ২১তম রাতের ভোরে উপনীত হয়ে ফজরের সালাতে দাঁড়ালেন এবং আসমান থেকে বৃষ্টি বর্ষিত হল। ফলে ছাদ থেকে মসজিদে পানি বর্ষিত হল এবং আমি কাদা ও পানি দেখতে পেলাম। তিনি ফজরের সালাত শেষে যখন বের হয়ে এলেন তখন তাঁর কপাল ও নাকের ডগা সিক্ত ও কর্দমাক্ত ছিল। আর তা ছিল রমযানের শেষ দশকের প্রথম (বা ২১তম) রাত।(সহিহ মুসলিম হাদিস নম্বর ২৬৪২ ইঃফাঃ)

১৮। লাইলাতুল কদর রমজানের ২৩ তারিখেঃ

আবদুল্লাহ ইবনু উনায়স (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আমাকে কদরের রাত দেখান হয়েছিল। অতঃপর তা ভুলিয়ে দেয়া হয়েছে। আমাকে ঐ রাতের ভোর সম্পর্কে স্বপ্নে আরও দেখান হয়েছে যে, আমি পানি ও কাদার মধ্যে সিজদা করছি। রাবী বলেন, অতএব ২৩তম রাতে বৃষ্টি হল এবং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের সাথে (ফজরের) সালাত আদায় করে যখন ফিরলেন, তখন আমরা তাঁর কপাল ও নাকের ডগায় কাদা ও পানির চিহ্ন দেখতে পেলাম। রাবী বলেন, আবদুল্লাহ ইবনু উনায়স (রাঃ) বলতেন, তা ছিল ২৩তম। (সহিহ মুসলিম হাদিস নম্বর ২৬৪৬ ইঃফাঃ)

১৯। লাইলাতুল কদর রমজানের ২৭ তারিখেঃ

যির ইবনু হুবায়শ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন আমি উবাই ইবনু কা’ব (রাঃ) কে বললাম, আপনার ভাই আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাঃ) বলেন, যে ব্যাক্তি গোটা বছর রাত জাগরণ করে, সে কদরের রাতের সন্ধান পাবে। তিনি (উবাই) বললেন, আল্লাহ তাকে রহম করুন, এর দ্বারা তিনি একথা বুঝাতে চাচ্ছেন যে লোকেরা যেন কেবল একটি রাতের উপর ভরসা করে বসে না থাকে। অথচ তিনি অবশ্যই জানেন যে, তা রমযনি মাসে শেষের দশ দিনের মধ্যে এবং ২৭ তম রজনী। অতঃপর তিনি শপথ করে বললেন, তা ২৭ তম রজনী। আমি (যির) বললাম, হে আবূল মুনযির! আপনি কিসের ভিত্তিতে তা বলছেন? তিনি বললেন, বিভিন্ন আলামত ও নিদর্শনের ভিত্তিতে যে সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের অবহিত করেছেন। যেমন, সেদিন সূর্য উঠবে কিন্তু তার আলোতে তেজ থাকবে না। (সহিহ মুসলিম হাদিস নম্বর ২৬৪৮ ইঃফাঃ)

উবাই ইবনু কা’ব (রাঃ) কদরের রাত সম্পর্কে বলেন, আল্লাহর শপথ! কদরের রাত সম্পর্কে আমি খুব ভাল করেই জানি। শু’বা বলেন, আমার জানামতে তা হচ্ছে সেই রাত যে রাতে জেগে ইবাদত করার জন্য রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের নির্দেশ দিয়েছেন। তা হচ্ছে রমযানের ২৭তম রজনী। “তা হচ্ছে সেই রাত যে রাতে আমাদেরকে ইবাদত করার জন্য রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নির্দেশ দিয়েছেন।” এই বাক্যটুকু সম্পর্কে শু’বা সন্দেহে পতিত হয়েছেন এবং বলেছেন, আমার এক বন্ধু তার শায়খের সুত্রে আমার নিকট ঐ কথা বর্ণনা করেছেন। (সহিহ মুসলিম হাদিস নম্বর ২৬৪৯ ইঃফাঃ)

মন্তব্যঃ উপরের হাদিসগুলোর আলোক বুঝা যায় লাইলাতুল কদর নির্ধারিত নয়। তবে এ কথা ষ্পষ্ট জোর দিয়ে বলা যায় যে, রমজানের শেষ দশকেই লাইলাতুল কদর নির্ধারিত। একদল মুজতাহীদ আলেম জোর দিয়ে বলেছেন, নিশ্চয়ই লাইলাতুল কদর রমাজানের শেষ দশকের বেজোড় রাতে হতে পারে। তরে নিশ্চিত করে বলা যাবে না যে প্রতি বছর একই তারিখেই হবে। কোন বছর তা ২১তম রাতে হতে পারে, আবার কখনো ২৫শে কখনো ২৭শে এবং কখনো ২৯শে রাতে হতে পারে। তাই শুধু  ২৭ শে রমজান লাইলাতুল কদর পালন করা বিদআত কাজ।

২০। ২৭ শের রাত্রি জাগরণ করে মিলাদ পড় বা ওয়াজ করাঃ

বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ বিশ্বাস করে লাইলাতুর করদ হল ২৭ শে রমাজনে কাজেই এই রাতে বাংলার প্রতিটি মসজিদে মিলাদের আয়োজন করা হয়, বিশেষ করে যারা ব্রেলভী আকিদার লোক। মিলাদ উপলক্ষে তারা মিষ্টি বিতরন করে থাকে। এই জন্য তারা বাড়ি বাড়ি গিয়ে চাদাও তুলে থাকে। যারা মিলাদ পড়ে না, তারা এর একটু উন্নত ভার্সন আবিস্কার করছেন। তারা এই রাতে ব্যক্তিগত ইবাদের পরিবর্তে ওয়াজ মাহফিলের আয়োজন করে থাকে। এই দ্বারা দুটি বিদআত চালু হয়। প্রথম ২৭ রমজানের রাতকে নির্দিষ্ট করা জাগরণ। দ্বিতিয়ত বিদআতি কাজের মাধ্যমে রাত কাঠান।  

২১। শবেকদরের ১০০ বা ১০০০ রাকআত নামায পড়াঃ

লাইলাতুল কদর এই উম্মতের জন্য বড় নেয়ামত। মহান আল্লাহর অশেষ নেয়ামত মধ্যে এটি একটি বড় নেয়ামত। এই নেয়ামতের হক হল, আল্লাহ প্রদত্ত বিধান মোতাবেগ তার ইবাদাত তার সন্ত্বষ্টি অর্জন করা। আমাদের প্রিয় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাই এই রাতের সন্দানে রমজানের শেষ দশকে ইবাদতের জন্য কোমর বেধে আমল করতেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রামাযানে শেষ দশকে যত বেশি পরিশ্রম করতেন অন্য কখনো করতেন না।  যেমনঃ

আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যখন রমযানের শেষ দশক আসত তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর লুঙ্গি কষে নিতেন (বেশী বেশী ইবাদতের প্রস্তুতি নিতেন) এবং রাত্রে জেগে থাকতেন ও পরিবার-পরিজনকে জাগিয়ে দিতেন। (সহিহ বুখারী হাদিস নম্বর ১৮৯৭ ইঃ ফাঃ, মুসলিম ১১৭৪)

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দেখান পথ ধরে আমরাও রমজানের শেষ দশকে লাইলাতুল কদর অনুসন্ধানের নিমিত্তে শেষ দশকে ইতিকাফ করতে পারি। নিয়মিত তারাবিহ ও তাহাজ্জুদের সালাত আদায় করতে পারি। নফল সালাত আদায় করতে পারি। সাধ্যমত তাজবিহ তাহলীল সাথে কুরআন বুঝে তিলওয়াত করতে পারি। অর্থাৎ সারা রাত যেন ইবাদত বন্দেগীতে ব্যস্ত থাকি, যাতে লাইলাতুল কদর কোনভাবেই মিস না হয়। কিন্তু এই রাতে নির্দিষ্ট করে ১০০ বা ১০০০ রাকআত নামায আদায় করা সম্পর্কিত কোন সহিহ বা জ্‌ঈফ হাদিস নাই। তাই মনগড়া সালাতের পরিমান আবিস্কার বিদআতি কাজ হবে।

২২। ঈদের তাকবীর নিয়ে বিরোধ করাঃ

ঈদের সলাতে তাকবীরে তাহরীমা বাধার পর “আল্লাহু আকবার বলে অতিরিক্ত কিছু তাকবীর দেয়া হয়, সে তাকবীরের সংখ্যা সম্পর্কে বেশ কিছু মতভেদ আছে। তাদের মধ্যে দুটি মত প্রসিদ্ধ।

প্রথম মত হলঃ হানাফী মাযহাবের ইমাম আবূ হানিফার (রহ.) মত হল ঈদের সলাতে তাকবীরে তাহরীমা বাধার পর “আল্লাহু আকবার বলে ১ম রাক’আতে অতিরিক্ত ০৩ তাকবীর ও ২য় রাক’আতে অতিরিক্ত ০৩ তাকবীর, মোট অতিরিক্ত ০৬ তাকবীর দিতে হবে।

তাদের দলীলঃ

তাদের দাবি প্রসিদ্ধ তাবেয়ী আবু আব্দুর রহমান কাসেম বলেন, আমাকে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর জনৈক সাহবী বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঈদের দিন আমাদেরকে ঈদের সালাত পড়ান, এর পর প্রতি রাকাতে তিনি চারটি করে তাকবির প্রদান করেন। সালাত শেষে আমাদের দিকে তাকিয়ে বলেন, ভুলে যেয়োনা, জানাযার সালাতের তাকবিরের মত চারটি করে তাকবির হবে। বৃদ্ধাঙ্গুলি বন্ধ করে অবশিষ্ট চারটি আঙ্গুল দিয়ে তিনি এদিকে ইঙ্গিত করেন।

(তাহাবী শরীফ ২/৩৪৫, হাদিস নম্বর ১৬৫৯, নেয়া হয়েছে, ঈদের নামাযে ৬ তাকবির কেন বই থেকে, লেখকঃ মুফতি রফিকুল ইসলাম আল মাদানী, তিনি এর সদন সহিহ দাবী করেছেন)।

ইবনে মাসউদ রাদিআল্লাহু আনহু বর্ণিত একটি রেওয়ায়েতে ৪ তাকবীরে ঈদের নামাযের স্বপক্ষে একটি হাদীস পাওয়া যায়। একদল ফকীহ এ ৪ তাকবীরকে প্রথম রাকাতে তাকবীরে উলার সাথে ৩ তাকবীর এবং দ্বিতীয় রাকাতে রুকুর তাকবীর সহ ৩ তাকবীর-এভাবে অতিরিক্ত ৬ তাকবীরের ব্যাখ্যা দিয়েছেন। উল্লেখ্য, মুহাদ্দিস আল্লামা নাসিরুদ্দীন আলবানী (রহঃ) এটাকে দুর্বল হাদীস বলেছেন।

 দ্বিতীয় মত হলঃ তাকবীরে তাহরীমা বাধার পর “আল্লাহু আকবার বলে প্রথম রাক’আতে অতিরিক্ত ০৭ তাকবীর ও দ্বিতীয় রাক’আতে অতিরিক্ত ০৫ তাকবীর, মোট অতিরিক্ত ১২ তাকবীর দিতে হবে।

তাদের দলীলঃ

মুসলিম ইবনু আমর ও আবূ আমর আল-হায্য আল-মাদীনী (রহঃ).. আমর ইবনু আওফ আল-মুযানী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাতুল ঈদে তাকবীর পাঠ করতেন প্রথমে রাকআত কিরআতের পূর্বে সাত তাকবীর; দ্বিতীয় রাকআতে কিরআতের পূর্বে পাঁচ তাকবীর। (ইবনু মাজাহ ১২৭৯, তিরমিজী হাদিস নম্বরঃ ৫৩৬)।

আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার সালাতে ১ম রাকআতে (অতিরিক্ত) ৭ টি তাকবীর ও ২য় রাকআতে (অতিরিক্ত) ৫টি তাকবীর পাঠ করতেন। (আবূ দাউদ, হা: ১০১৮)

হাদীসে আরো এসেছে  (প্রখ্যাত সাহাবী) ইবনে আব্বাস রাদিআল্লাহু আনহু ঈদের সালাতে অতিরিক্ত) ১২ তাকবীর বলেছেন। প্রথম রাকআতে ৭টি এবং দ্বিতীয় রাকআতে ৫টি। (বায়হাকী ৩য় খণ্ড)।

তাই অধিকাংশ আলেম ১২ তাকবীরের মাসআলাকে বেশী শক্তিশালী বলেছেন। তাছাড়া এ মাসআলার উপর আমল করেছেন। হানাফি মাযহাবের ইমাম আবূ হানীফার অনুসারী তার দুই ছাত্র ইমাম আবূ ইউসুফ (রহ.) ও ইমাম মুহাম্মাদ (রহ.), মালিকী, শাফিঈ’, হাম্বলী মাযহাব ও আহলে হাদীসের লোকেরা এবং মাক্কা ও মাদীনার ইমামগণ এভাবে অতিরিক্ত ১২ তাকবীরে ঈদের সলাত আদায় করে থাকেন। (রাদ্দুল মুহতার ৬৬৪ পৃঃ)

তৃতীয় মতটি হলঃ ইমাম মালিক ইবনু আনাস, শাফিঈ, আহমদ ও ইসহাক (রহঃ) এর বক্তব্যও এই। ইবনু মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি বলেনঃ সালাতুল ঈদে তাকবীরের সংখ্যা হল নয়। প্রথম রাকআতে কিরাআতের পূর্বে পাঁচ তাকবীর, দ্বিতীয় রাকআতে প্রথমে কিরআত পরে রুকুর তাকবিরসহ চার তাকবির। একাধীক সাহাবি থেকে অনুরূপ রিওয়াত বিদ্যমান। কূফাবাসী আলিম ও ফকিহ সুফিয়ান সাওরী থেকেও এই অভিমত পাওয়া যায়। (তিরমিজির টিকা থেকে)।

মাসায়েলঃ হানাফী ও মালেকী মাযহাবে বাড়তি তাকবীর বলা ওয়াজিব। এটা ছুটে গেলে সাহু সিজদা দিতে হবে। পক্ষান্তরে অন্যান্য মাযহাবে বাড়তি তাকবীর বলা সুন্নাত। এবং এই বাড়তি তাকবীর বলার সময় প্রত্যেক তাকবীরেই কি হাত উঠাতে হবে। কারন দ্বিতীয় খলীফা উমার রাদিআল্লাহু আনহু জানাযা ও ঈদের সলাতে প্রত্যেক তাকবীরে দু’হাত তুলতেন। (বায়হাকী)।

মন্তব্যঃ এই মতগুলির মাঝে প্রথম দুটি মত সর্বাধীকভাবে প্রচলিতপ্রতিটি মতামনের পিছনে সহিহ হাদিস রয়েছে। সর্বাধীক সহিহ মনে হয়েছে ১১ তাকবিরের দ্বিতীয় মত যা মক্কার হারামে ও মদীনার মসজিদে নব্বীতে প্রচলিত আছে। তবে যারা ৬ তাকবিরের সাথে ঈদের সালাত আদায় করে তাদেরও যেহেতু প্রমান আছে। কাজেই এই মতভেদপূর্ন মাসায়েল নিয় মতবিরোধ করা যাবেনা। যারা যত বিরোধে লিপ্ত হবে তারা তত বেশী গুনাহগার হবে। তবে সহিহ হাদিসের আলোকে নিজের মতামত তুলে ধরা যাবে।

 

২৩। ঈদের সালাতের পর মুআনাকা বা কোলাকুলি করাঃ

আমাদের সমাজে ঈদ মানে, ঈদের সালাতে পর কোলাকুলি। ঈদুল ফিতর মানে ছবিতে বা ক্যাপসনে কোলাকুলির দৃশ্য। কিন্তু আমরা কেউ একবারর জন্যও ভেবে দেখেনি কাজটি কি ইসলাম সম্মত। এখানে দুটি প্রশ্ন একটি হলো কোলাকুলি আর একটি হল ঈদের সালাতের পর কোলাকুলি। কোলাকুলি মুলত একটি শরীযত সম্মত সুন্নাহ কাজ।  যেমন হাদিসে এসেছেঃ

হযরত আয়শা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হযরত জায়েদ বিন হারেসা রাঃ মদীনায় এলেন। তখন রাসূল সাঃ আমার গৃহে ছিলেন। হযরত জায়েদ এসে রাসূল (সাঃ) এর দরজায় কড়া নাড়লেন। রাসূল সাঃ তখন বেরিয়ে গেলেন খালি গায়েই। আল্লাহর কসম আমি এর আগে কখনো রাসূল (সাঃ) কে খালি গায়ে দেখিনি। তারপর তিনি তার সাথে মুআনাকা করলেন এবং তাকে চুমু খেলেন। (সুনানে তিরমিজী, হাদীস নং-২৭৩২, শরহুস সুন্নাহ, হাদীস নং-৩৩২৭, তাহাবী শরীফ, হাদীস নং-৬৯০৫)।

এখন আসুন ঈদের সালাতের পর বিশেষ কুলাকুলি। মূলত কুলাকুলির হুকুম হল, দীর্ঘদিন পর কোন কাছের মানুষের সাথে দেখা হলে কুলাকুলি করবে। এখন ঈদের জামাতের পর যদি কোন কাছের মানুষের সাথে দেখা হয়, তাহলে সালাম বিনিময়ের পর কুলাকুলি করতে কোন সমস্যা নেই। কিন্তু এটিকে ঈদের সালাতের পরের সুন্নত মনে করা বিদআত। কিংবা আমভাবে সবার সাথেই ঈদের নামায শেষ হতেই কুলাকুলি শুরু করে দেয়া একটি রুসুম। সুন্নাত, মুস্তাহাব কিছুই নয়। এটিকে সুন্নাত, মুস্তাহাব ইত্যাদি মনে করা বিদআত হবে। এই কুলাকুলি আরেকটি সুন্নাহ বিরোধী কাজ হল তিন বার কুলাকুলি করা। হাদিসে মূলত একবার করার কথা পাওয়া যায়। তিনবারের কোন বিধান নেই। কিন্তু আমাদের সমাজের প্রচলন হিসেবে এমনটি করা হয়ে থাকে। এটি সুন্নত নয়।

কোলাকুলি সম্পর্কে অধিক জানার জন্য আধুনিক যুগ শ্রেষ্ঠ তিন জন ‘আলিমের ফাতওয়া পেশ করা হলোঃ

১। সৌদি আরবের সাবেক গ্র্যান্ড মুফতী যুগশ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ ও মুহাদ্দিস শাইখুল ইসলাম ইমাম ‘আব্দুল ‘আযীয বিন ‘আব্দুল্লাহ বিন বায রাহিমাহুল্লাহ (মৃত-১৯৯৯) বলেছেন,

“লোকদের মধ্যে প্রচলিত প্রথা ছাড়া কোলাকুলির কোনো ভিত্তি আছে বলে আমরা জানি না। এক্ষেত্রে সঠিক পদ্ধতি হলো, (ইবাদত) কবুল হওয়ার দু‘আ করা। যখন সে তার ভাইয়ের সাথে সাক্ষাৎ করবে, তখন তার জন্য (ইবাদত) কবুলের দু‘আ করবে। এটা সালাফদের কর্ম। পক্ষান্তরে এ উপলক্ষে কোলাকুলি করার ভিত্তি আমি জানি না। এটি লোকদের আচার বা প্রথা মাত্র। সবচেয়ে উত্তম হলো, সাক্ষাতে শুধু করমর্দন করা এবং এটাতেই ক্ষান্ত হওয়া। সে তার ভাইয়ের সাথে করমর্দন করবে এবং তাকে বলবে, ‘হান্নাআকাল্লাহু বি হাযাল ঈদ (আল্লাহ তোমাকে এই ঈদের মাধ্যমে খুশি করুন)’, ‘বারাকাল্লাহু লাকা ফী হাযাল ঈদ (আল্লাহ তোমাকে এই ঈদে বরকত দিন)’ অথবা ‘তাক্বাব্বালাল্লাহু মিন্না ওয়া মিনকা (আল্লাহ তোমার ও আমার পক্ষ থেকে এই ঈদ কবুল করুন)’; কিংবা অনুরূপ কিছু বলবে। এতে কোনো অসুবিধা নাই। (binbaz.org.sa/fatwas/1533/حكم-المعانقة-في-الاعياد.]

  • ২। সৌদি আরবের সর্বোচ্চ ‘উলামা পরিষদের সাবেক সদস্য, বিগত শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ মুফাসসির, মুহাদ্দিস, ফাক্বীহ ও উসূলবিদ আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল ‘উসাইমীন রাহিমাহুল্লাহ (মৃত – ২০০১) প্রদত্ত ফাতওয়াঃ

প্রশ্ন: “ঈদের নামাজের পর করমর্দন, কোলাকুলি এবং মুবারকবাদ জানানোর বিধান কী?”

উত্তর: “এগুলো করায় কোনো সমস্যা নেই। কেননা লোকেরা এগুলো ইবাদত বা আল্লাহ’র নৈকট্য অর্জনের জন্য করে না। বরং তারা এগুলো দেশাচারমূলক প্রথা হিসেবে করে এবং একে অপরকে সম্মান ও মর্যাদা প্রদানের জন্য করে। যতক্ষণ পর্যন্ত কোনো আচার বা প্রথার ব্যাপারে শরিয়তের নিষেধাজ্ঞা সাব্যস্ত হচ্ছে না, ততক্ষণ পর্যন্ত তার মৌলিক মান হলো বৈধতা। যেমন বলা হয়—‘সকল (প্রথাগত) বিষয়ের মৌলিক মান হলো বৈধতা, আর শরিয়তপ্রণেতার অনুমতি ছাড়া সকল ইবাদতের মৌলিক মান হলো নিষিদ্ধতা’।” (ইমাম ইবনু ‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ), মাজমূ‘উ ফাতাওয়া ওয়া রাসাইল; খণ্ড: ১৬ পৃষ্ঠা)

৩। মাদীনাহ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক আচার্য, বর্তমান যুগের শ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিস ও ফাক্বীহ আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ ইমাম ‘আব্দুল মুহসিন আল-‘আব্বাদ আল-বাদর হাফিযাহুল্লাহ প্রদত্ত ফাতওয়াঃ

প্রশ্ন: “বর্তমানে আমাদের এখানে বিভিন্ন উপলক্ষে এবং ঈদের দিনগুলোতে লোকেরা একে অপরের সাথে কোলাকুলি করে।”

উত্তর: “আল্লাহ’র কসম, আমার কাছে এটা প্রতীয়মান হয়েছে যে, এটা সফর থেকে প্রত্যাবর্তনকারী ব্যক্তির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ, যার সাথে লোকেরা কোলাকুলি করে থাকে। আর তারা তা খুশি ও আনন্দের উপস্থিতির কারণে করে। সুতরাং এ কাজে কোনো ক্ষতি নেই। উদাহরণস্বরূপ কোনো ব্যক্তির যদি বিবাহ উপস্থিত হয়, আর সে তার বিয়েতে আনন্দিত হয়, ফলে সে অপরকে শুভেচ্ছা জানায় এবং কোলাকুলি করে। এগুলোর (উল্লিখিত প্রকারগুলোর) প্রত্যেকটিতেই খুশি ও আনন্দ রয়েছে। যেমন: সফর থেকে প্রত্যাবর্তনকারী ব্যক্তিকে নিয়ে খুশি হওয়া, বিয়েতে খুশি হওয়া এবং ঈদে খুশি হওয়া।”

মন্তব্যঃ কোলাকুলি করা একটি সুন্নাহ সম্মত ইবাদাত। অনেক দিন পর দেখা হলে করা যায় এমনকি ঈদের দিনও করা যায়। আবার কেউ ঈদের ইবাদাত মনে না করে আদায় করলেও বিদআত হবে না। কিন্তু যদি কেউ মনে করে এই সুন্নাহটি ঈদের সাথে সংশ্লিষ্ট এবং এটি একটি ইবাদাত তবে তা বিদআতে পরিনত হবে।   

 

২৪। ঈদের রাতে সালাত  আদায় করাঃ

আমাদের দেশে অনেক ঈদের রাত মসজিদে কাঠান। কারন তারা একটা জাল হাদিসের উপর আমর করে থাকে। রমজানের শেষ দশকে ইতিকাফ করা পর, শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখা গেলে ইতিকাফ শেষ করে বাড়িতে যেতে হয়। কিন্তু কিছু ভাই এই যঈফ/জাল হাদিসের কারনে ঈদের রাত মসজিদে থেকে ঈদের দিন সকালে বাড়িতে যান। তাদের এই কাজটি ইবাদতে বাড়াবাড়ি। তারা যে হাদিসের আলোকে এই রাতে ইবাদাত করেন সেই বিখ্যাত জাল হাদিসটি হলোঃ 

“যে ব্যক্তি ঈদুল ফিতর ও আযহার রাত্রি জাগরণ (ইবাদত) করবে, তার হৃদয় সেদিন মারা যাবে না, যেদিন সমস্ত হৃদয় মারা যাবে।” (ত্বাবারানী, মু’জাম)  সে হাদীসটি জাল ও মনগড়া হাদীস।  (সিলসিলাহ যায়ীফাহ, আলবানী ৫২০, যইফ জামে -৫৩৬১, স্বলাতে মুবাশ্শির, আবদুল হামিদ ফাইজি থেকে সংকলিত)

ইহা ছাড়াও এই রাত সম্পর্কে কিছু জাল বর্ননা আছে। যেমনঃ

উভয় ঈদের রাতে বিশেষ নামায (যইফ জামে ৫৩৫৮, ৫৩৬১)।

এই রাত্রি জেগে ইবাদত বিদআত। (মু’জামুল বিদা’ ৩৩২পৃ:) 

ঈদুল ফিতরের রাতের ১০০ রাকআত এবং ঈদুল আযহার রাতের ২ রাকআত নামাযও বিদআত। ((মু’জামুল বিদা ৩৪৪পৃ:)

২৫। জুমাতুর বিদআঃ

জুমাতুর বিদআ একটি আবরী শব্দ। আরবিতে বিদা শব্দের অর্থ হলো, শেষ। কাজেই জুমাতুল বিদআ এর অর্থ দাড়াবে শেষ জুমা বা শেষ শুক্রবার। আমাদের সমাজে জুমাতুর বিদআ বলতে সাধারনত আমরা রমাজান মাসের শেষ শুক্রবার বুঝে থাকি। এই দিনে মসজিদে মুসল্লীদের ঢল নামে। আমাদের দেশের প্রতিটি দৈনিক এই দিন সম্পর্কে বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করে। কিছু আলেমকেও ইহার গুরুত্ব তুলে ধরতে দেখা যায়। আসলে এই দিনের কোন ভিত্তি কি ইসলামে আছে?

ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের কাছে জুমার সালাত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। জুমার সালাতের জন্য আলাদ তাগিদ ও ফজিলত বর্ণনা করা হয়েছে। রমজান মাসেরও আলাদ ফজিলত আছে। কাজেই দুটি ফজিলত যখন এক হয়ে যায়, তখন বলা হয় সোনায় সোহাগা। এই ধারনা থেকেই মুলত জুমাতুল বিদআ ফজিলত ও মহাত্য সম্পর্কে মানুষের মনে স্থান পেয়েছে। ইসলামি শরীয়তে অন্যতম বৈশিষ্ট হল, কোন আমল ভাল লাগলেই করা যাবে না, যদি না তার কোন শরীয়ত সম্মত দলীল প্রমান না থাকে। হ্যা, রমজানের মাসের ও শুক্রবারের গুরুত্ব মাথায় রেখে ইবাদাত বন্দগি করার কোন সমস্যা নাই। কিন্তু এই দিনটি কে বিশেষ মর্জাদা দিয়ে উদ্দীপনার সাথে পালন করা বিদআত। কুরআন সুন্নাহর গবেষক অনেক মুহাক্কিক আলেম বলে থাকেন এই দিনের কোন ভিত্তি ইসলামে নাই। যে দিনটি পালনের ভিত্তি ইসলামে নেই আমরা কেন তা পালন করব। যে নাম দিনের নাম রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তার সাহাবিগন (রাঃ) দেন নাই, আমরা কেন সেই নাম দিনে আলাদা হব। কাজেই সময় সুযোগ থাকতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তার সাহাবিগন (রাঃ) যা করেন নাই, আমরা তা করব না। যদি করি তবে বিদআত হবে।  

২৬। রমজানের ভাংতি সিয়াম পালন না করে, শাওয়াল মাসের ছয়টি সুন্নাহ সিয়াম পারন করাঃ

সঠিক মতানুযায়ী শাওয়ালের ছয় রোজা রমজানের রোজা পূর্ণ করার সাথে সম্পৃক্ত। দলিল হচ্ছেঃ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বাণী, “যে ব্যক্তি রমজান মাসে রোজা রাখল অতঃপর এ রোজার পর শাওয়াল মাসে ছয়টি রোজা রাখল সে যেন গোটা বছর রোজা রাখল।” (সহিহ মুসলিম ১১৬৪)।

হাদিসে উল্লেখিত ثُمَّ শব্দটি حرف عطف যা الترتيب (বিন্যাস) ও التعقيب (ক্রমধারা) অর্থে ব্যবহৃত হয়। এদিক থেকে হাদিসটি প্রমাণ করছে যে, আগে রমজানের রোজাপূর্ণ করতে হবে। সেটা সুনির্দিষ্ট সময়ে আদায় হিসেবে হোক অথবা (শাওয়াল মাসে) কাযাপালন হিসেবেহোক। অর্থাৎ রমজানের রোজা পূর্ণ করার পর শাওয়ালের ছয় রোজা রাখতে হবে। তাহলে হাদিসে উল্লেখিত সওয়াব পাওয়া যাবে।কারণ যে ব্যক্তির উপর রমজানের কাযা রোজা বাকী আছে সেতো পূর্ণ রমজান মাস রোজা রাখেনি। রমজান মাসের কিছুদিনরোজা রেখেছে। তবে কারো যদি এমন কোন ওজর থাকে যার ফলে তিনি শাওয়াল মাসে রমজানের কাযা রোজা রাখতে গিয়ে শাওয়ালের ছয়রোজা রাখতে পারেননি। যেমন কোন নারী যদি নিফাসগ্রস্ত (প্রসবোত্তর স্রাবগ্রস্ত) হন এবং গোটা শাওয়াল মাস তিনি রমজানের রোজা কাযা করেন তাহলে তিনি জিলক্বদ মাসে শাওয়ালের ছয় রোজা রাখতে পারবেন। কারণ এ ব্যক্তির ওজর শরিয়তেগ্রহণযোগ্য। অন্য যাদের এমন কোন ওজর আছে তারা সকলে রমজানের রোজা কাযা করার পর শাওয়ালের ছয় রোজা জিলক্বদ মাসে কাযা পালন করতে পারবেন। কিন্তু কোন ওজর ছাড়া কেউ যদি ছয় রোজা না রাখে এবং শাওয়াল মাস শেষ হয়ে যায় তাহলে সে ব্যক্তি এই সওয়াব পাবেন না। শাইখ উছাইমীনকে প্রশ্ন করা হয়েছিল: কোন নারীর উপর যদি রমজানের রোজার ঋণ থেকে যায় তাহলে তার জন্য কি রমজানের ঋণের আগে শাওয়ালের ছয় রোজা রাখা জায়েয হবে; নাকি শাওয়ালের ছয়রোজার আগে রমজানের ঋণের রোজা রাখতেহবে? জবাবে তিনি বলেন: যদি কোন নারীর উপর রমজানের কাযা রোজা থাকে তাহলে তিনি কাযা রোজা পালনের আগে ছয়রোজা রাখবেন না। কেননা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “যে ব্যক্তি রমজান মাসে রোজা রাখল এবং এ রোজার পর শাওয়াল মাসে ছয়টি রোজা রাখল সে যেন গোটা বছর রোজা রাখল।” [সহিহ মুসলিম (১১৬৪)]

যার উপর কাযা রয়ে গেছে সেতো রমজানের রোজা পূর্ণ করেনি। সুতরাং সে কাযা আদায়ের আগে এই রোজা পালনের সওয়াব পাবে না। যদি ধরে নেয়া হয় যে, কাযা রোজা পালন করতে গোটা মাস লেগে যাবে (যেমনঃ কোন নারী যদি নিফাসগ্রস্ত হন এবং তিনি গোটা রমজানে একদিনও রোজা রাখতে না পারেন, শাওয়াল মাসে তিনি রমজানের কাযা রোজা রাখা শুরু করেন, কিন্তু কাযা রোজা শেষ করতে করতে জিলক্বদ মাস শুরু হয়ে যায়) তাহলে তিনিজিলক্বদ মাসে ছয়রোজা রাখবেন। এতে করে তিনি শাওয়াল মাসে ছয় রোজা রাখার সওয়াব পাবেন। কেননা তিনি বাধ্য হয়ে এই বিলম্ব করেছেন (যেহেতু শাওয়াল মাসে তার পক্ষে রোজা রাখা সম্ভবপর ছিল না)। তাই তিনি সওয়াব পাবেন। (ফতোয়া সমগ্র ১৯/২০)।

এর সাথে আরেকটু যোগ করে বলা যায়, যে ব্যক্তি বিশেষ কোন ওজরের কারণে রমজানের রোজা ভেঙ্গেছে সেটা কাযা করা তার দায়িত্বেফরজ। রমজানের রোজা ইসলামের পঞ্চবুনিয়াদের অন্যতম। তাই এই ইবাদত পালনপ্রাধান্য পাবে এবং ফরজের দায়িত্ব থেকে মুক্ত হওয়াকে অন্য মুস্তাহাব আমলের উপর অগ্রাধিকার দিতে হবে।

এক কথায়, যার উপর একদিন বা একাধিক দিনের ফরজ রোজা কাযা আছে তিনি নফল রোজা রাখবেন না। বরং আগে ফরজ রোজার কাযা আদায় করবেন; তারপর নফল রোজা রাখবেন। যদি কেউ মুহররম মাসের ১০ তারিখ ও ১১ তারিখ রমজান মাসের কাযা রোজা পালনের নিয়ত করে সেটা জায়েয হবে এবং দুই দিনের কাযা রোজা আদায় হয়ে যাবে। দলিল হচ্ছেঃ “প্রত্যেক আমল নিয়ত অনুযায়ী পালিত হয়; প্রত্যেক ব্যক্তি যা নিয়ত করে সে তা-ই পায়। (ফতোয়া বিষয়ক স্থায়ী কমিটি-১১/৪০১)। আশা করি আপনি কাযা রোজার সওয়াব ও সেই দিন রোজা রাখার সওয়াব উভয় সওয়াব পাবেন। (শাইখ উছাইমীনের ‘মানারুল ইসলাম ফতোয়াসমগ্র (২/৩৫৮)।

সংকলনেঃ মোহাম্মাদ ইস্রাফিল হোসাইন। (বিএ ইন এ্যারাবিক লিটারেচার, ইসলামিক হিস্টরী এন্ড ইসলামিক স্টাডিস)

Leave a comment