সহিহ সুন্নাহর আলোক বিতের সালাত

সহিহ সুন্নাহর আলোক বিতের সালাত

সংকলনেঃ মোহাম্মাদ ইস্রাফিল হোসাইন

১।  বিতের সালাত কি ওয়াজিব, না সুন্নাহঃ

আমাদের সমাজে প্রচলিত বিতের সালাত ওয়াজিব। প্রকৃত পক্ষে বিতের সালাত ওয়াজিব নয়। বিতের সালাত সুন্নাতে মুআক্কাদাহ। এ নামায আদায় করতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উম্মতকে উদ্বুদ্ধ ও অনুপ্রাণিত করতেন।

১। আসিম ইবনু যামরা (রহঃ) সূত্রে বর্ণনা করেন যে, আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেছেনঃ ফরয সালাতের অনুরূপ বিতরের সালাত অবশ্য করনীয় নয়। এ হ’ল রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রচলিত এক সুন্নাত। (তিরমিজী হাদিস নম্বরঃ ৪৫৪, সহিহুত তারগীব ৫৯০),

  আবু মুহাম্মাদ (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, বিতিরের নামায ওয়াজিব। রাবী মাখ্‌দাজী বলেন, তখন আমি উবাদা ইবনুস সামিত (রাঃ) এর নিকট উপস্থিত হয়ে বলি যে, আবু মুহাম্মদ এরূপ বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, আবু মুহাম্মাদ ভুল করেছেন। আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছিঃ আল্লাহ তাআলা তাঁর বান্দাদের উপর পাঁচ ওয়াক্ত নামায ফরয করেছেন। যে ব্যক্তি তা সঠিকভাবে আদায় করবে এবং অলসতাহেতু তার কিছুই পরিত্যাগ করবে না, আল্লাহ তাআলা তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবার জন্য অংগীকার করেছেন। আর যে ব্যক্তি তা (সঠিকভাবে) আদায় করবে না, তাঁর জন্য আল্লাহর নিকট কোন অংগীকার নাই। তিনি ইচ্ছা করলে তাকে শাস্তি প্রদান করবেন এবং ইচ্ছা করলে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। (সুনানে আবু দাউদ ১৪২০, হাদিসের মান সহিহ)

৩। ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সফরে ফরজ সালাত ব্যতীত তার সাওয়ারীতে থেকেই ইশারায় রাতের সালাত আদায় করতেন। সাওয়ারী যে দিকেই ফিরুক না কেন, আর তিনি বাহনের উপরেই বিতর আদায় করতেন। (সহিহ বুখারী ৯৪৬ ইফাঃ)

সহিহ হাদিসটি প্রমান করে ফরয নামাযের সময় তিনি সওয়ারী থেকে নেমে পড়তেন। বিতের যেহেতু ফরজ নয় তাই তিনি সওয়ারীর উপর বিতের সালাত আদায় করতেন।

মন্তব্যঃ বিতের সালাত সুন্নাহ। কিছু হাদিসে এই সালাতের আদায়ের ব্যাপারে খুবই গুরুত্ব প্রদান করা হয়েছে, তাই কোন কোন মুজতাহীদ এই সালাত আদায় কে ওয়াজিব বলেছেন।  যেমনঃ একটি যঈফ হাদিসে এসেছে, আবদুল্লাহ ইবন বুরায়দা (রহঃ) তাঁর পিতা হতে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছিঃ বিতিরের নামায হক (সত্য)। যে ব্যক্তি এটা আদায় করবে না, সে আমাদের দলভুক্ত নয়। এই উক্তিটি তিনি তিনবার করেন। (আবু দাউদে হাদিস নম্বর ১৪১৯)

কিন্তু মনে রাখতে হবে, উম্মতের ইজমা হলোঃ যঈফ হাদিস দ্বারা ইসলামি শরীয়তের কোন হুকুম কার্যকর করা যাবে না। অধিকাংশ আলেম যঈফ হাদিস দ্বারা আমল করা থেকে বিরত থাকতে বললেও, কোন কোন আলেম যঈফ হাদিস দ্বারা শুধু ফাযায়েল যুক্ত আমল পক্ষে মত দিয়েছেন। 

অনেকে মনে করেন বিতের সালাত ইশার ওয়াক্তে পড়েত হয়ঃ

নিম্মরে সহিহ হাদিসগুলি পড়লেই আপনি বুঝে যাবেন, বিতের সালাত কখন পড়া উত্তম।

১। আয়িশা (রাঃ) খেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতের সকল অংশে (অর্থাৎ ভিন্ন ভিন্ন রাতে ভিন্ন ভিন্ন সময়ে) বিতর আদায় করতেন আর (জীবনের) শেষ দিকে সাহরীরর সময় তিনি বিতর আদায় করতেন। (সহিহ বুখারি ৯৪২ ইফাঃ)

২। আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) খেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ বিতরকে তোমাদের রাতের শেষ সালাত করবে। (সহিহ বুখারি ৯৪৪ ইফাঃ)

৩। আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমার প্রিয় হাবীব রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম আমাকে তিনটি কাজের জন্য ওসিয়াত করেছেন, যা আমি স্থায়ীভাবে কোথাও অবস্থানকালে এবং সফরের সময়েও ত্যাগ করি না।

ক। চাশতের সময় দুই রাকাত নামায,

খ। প্রতি মাসে তিন দিন রোযা রাখা (১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখের রোযা) এবং

গ। নিদ্রার পূর্বে বিতিরের নামায আদায় করা। (সহিহ বুখারী ১১৭৮ তাওহীদ, সুনানে আবু দাউদ ১৪৩২)

৪। জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ যে লোক আশংকা করে যে, শেষ রাতে উঠতে পারবে না সে যেন প্রথম রাতেই বিতরের সলাত আদায় করে নেয়। আর যে লোক শেষ রাত্রে উঠতে পারবে বলে মনে করে, সে যেন শেষ রাতেই বিতরের সলাত আদায় করে। এজন্য যে, শেষ রাতের সলাতে ফেরেশতাগণ উপস্থিত হন। আর এটা অনেক ভাল। (মিসকাতুল মাসাবিহ ১২৬০, সহিহ মুসলিম)

৫। আবু কাতাদা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম আবু বাকর (রাঃ) কে বলেনঃ আপনি বিতিরের নামায কোন সময় আদায় করেন? তিনি বলেন, রাত্রির প্রথম অংশে। অতঃপর তিনি উমার (রাঃ)-কে জিজ্ঞাসা করেন, আপনি কোন সময়ে বিতিরের নামায় আদায় করেন? তিনি বলেন, রাত্রির শেষ অংশে। তিনি আবু বাকর (রাঃ)-কে বলেনঃ সতর্কতা হেতু আপনি এর উপর আমল করতে থাকুন। তিনি উমার (রাঃ)-কে বলেনঃ আপনি আপনার সামর্থ অনুযায়ী আমল করুন। (সুনানে আবু দাউদ ১৪৩৪ হাদিসের মান সহিহ)

৫। মাসরূক (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আয়েশা (রাঃ)-কে জিজ্ঞসা করি যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম রাত্রির কোন সময়ে বিতির আদায় করতেন? তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইশার নামায আদায়ের পর বিতিরের নামায কোন সময় রাত্রির প্রথমাংশে, কোন সময় মধ্যম অংশে এবং কোন সময় শেষাংশে আদায় করতেন। তবে তিনি ইনতিকালের পূর্বে শেষ রাত্রিতে বিতিরের নামায আদায় করতেন। (সুনানে আবু দাউদ ১৪৩৫, সুনানে তিরমিযী ৪৫৬, সুনানে ইবন মাজাহ ১১৫৮)

মন্তব্যঃ উপরের হাদিসের আলোকে বুঝা যায় শেষ রাতে তাহাজ্জুদ সালাতের শেষে বিতের সালাত পড়ার সবচেয়ে উত্তম সময়। তবে ইশার পরে বা মধ্য রাতে যে কোন সময় পড়া সুন্নাহ সম্মত। বিতের সালাত শুধু ইশার ওয়াক্তে পড়েত হয় এমন ধারনা ভুল।

বিতের সালাত কি শুধুই তিন রাকাতঃ

প্রথমে সহিহ হাদিসগুলো লক্ষ করিঃ

১। ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, বিতর হল এক রাকআত রাতের শেষভাগে। (সহিহ মুসলিম ১৬৩০ ইফাঃ)

২। আবূ মিজলায (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি ইবনু আব্বাস (রাঃ) কে বিতর সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি, শেষরাতে এক রাকাত। আমি ইবন উমর (রাঃ) কেও জিজ্ঞেস করলাম। তিনিও বললেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি, রাতের শেষভাগে এক রাকাত। (সহিহ মুসলিম ১৬৩২ ইফাঃ)

৩। আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) থেকে এ হাদীসটিও বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, আর বিতর এক রাকআত শেষ রাতে। (মিসকাতুল মাসাবিহ ১২৫৫, সহিহ মুসলিম ৭৫২)

৪। আবু আয়্যূব আনসারী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ বিতিরের নামায প্রত্যেক মুসলমানের জন্য হক। যে ব্যক্তি তাকে পাঁচ রাকাত আদায় করতে চায়, সে পাঁচ রাকাত আদায় করবে। যে ব্যক্তি তিন রাকাত আদায়ের ইচ্ছা করে, সে ঐরূপ করবে এবং যে ব্যক্তি এক রাকাত আদায় করতে চায়, সে এক রাকাত আদায় করবে। (সুনানে আবু দাউদ ১৪২২ ইফাঃ সুনানে নাসাঈ, সুনানে ইবন মাজা, হদিসের মান সহিহ)

৫। উম্মু সালামা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণিত আছে যে, তিনি বলেনঃ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তের রাকআত বিতর করতেন কিন্তু যখন তাঁর বয়স বেশি হয়েছিল এবং তিনি দুর্বল হয়ে পড়লেন, তখন সাত রাকআত বিতর করতেন। (তিরমিজী হাদিস নম্বরঃ ৪৫৮) 

 ৬। আয়িশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেনঃ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর রাতের সালাত ছিল তের রাকআত। এর মধ্যে পাঁচ রাকআত বিতর আদায় করতেন। এই পাঁচ রাকআতের শেষ রাকআত ছাড়া আর কোথাও বসতেন না। পরে মুয়াজ্জ্বীন (ফজরের) আযান দিলে তিনি উঠে দাঁড়াতেন এবং দু’রাকআত সংক্ষেপ্ত সালাত (সুন্নাত) আদায় করতেন। (তিরমিজী হাদিস নম্বরঃ ৪৫৯, সহিহ আবু দাউদ ১২০৯

৭। ইবন উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা এক বেদুইন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লামকে রাতের নামায সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে। তিনি তাঁর আংগুল দ্বারা ইশারা করে বলেন দুই, দুই এবং শেষ রাতে এক রাকাত বিতির (অর্থাৎ দুই ও এক রাকাত, মোট তিন রাকাত বিতির)। (আবু দাউদ ১৪২১)

৮। আবদুল্লাহ ইবন আবু কায়েস (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ একদা আমি আয়েশা (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করি যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম রাত্রিতে বিতির সহ কত রাকাত নামায আদায় করতেন? তিনি বলেনঃ তিনি চার রাকাত ও তিন রাকাত বিতির আদায় করতেন এবং কখনও ছয় রাকাআত ও তিন রাকাত ও বিতির আদায় করতেন এবং কখনও আট রাকাত আদায় করতেন এবং (কোন কোন সময়) তিনি মোট তের রাকাত নামায আদায় করতেন। তবে সাধারণতঃ তিনি সাত রাকাতের কম এবং তের রাকাতের অধিক নামায আদায় করতেন না। তিনি ফজরের সুন্নাত কোন সময় ত্যাগ করতেন না – এটা রাবী আহমদের বর্ণনা। রাবী আহমাদের বর্ণনায় ছয় এবং তিন রাকাতের কথা উল্লেখ নাই। (আবু দাউদ ১৩৬২, মিসকাতুর মাসাবিহ ১২৬৪)

৯। আবু আয়্যূব আনসারী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ বিতিরের নামায প্রত্যেক মুসলমানের জন্য হক। যে ব্যক্তি তাকে পাঁচ রাকাত আদায় করতে চায়, সে পাঁচ রাকাত আদায় করবে; যে ব্যক্তি তিন রাকাত আদায়ের ইচ্ছা করে, সে ঐরূপ করবে এবং যে ব্যক্তি এক রাকাত আদায় করতে চায়, সে এক রাকাত আদায় করবে। (আবু দাউদ ১৪২২, সুনানে নাসাঈ ১৭১০, সুনানে ইবন মাজা ১১৯০, মিসকাত ১২৬৫)।

১০। আলী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ হে কুরআনের অনুসারীগণ! তোমরা বিতরের নামায আদায় কর। কেননা আল্লাহ তাআলা বেজোড় (একক), কাজেই তিনি বেজোড় (বিতর) কে ভালোবাসেন। (আবু দাউদ ১৪১৬, তিরমিযী ৪৫৩, নাসাঈ ১৬৭৫)

মন্তব্যঃ উপরের হাদিসগুলো দ্বারা সহজেই অনুমেয় যে বিতের সালাতের রাকাত সংখ্যা নির্দিষ্ট নয়। কেউ চাইলে তিন রাকাতের বাহিরে গিয়ে, এক রাকাত, পাঁচ বা সাত রাকাত আদায় করতে পারে। বিষয়টি বিতের সালাতের পদ্ধতি আলোচনা দেখার পর আরও ষ্পষ্ট হয়ে যাবে। কাজেই বিতের সালাত শুধু তিন রাকাত ভাবা মারাত্বক ভুল। 

বিতের সালাতে দোয়া কুনুতের স্থানঃ

দোয়া কুনুত বিতের সালাতের শেষ রাকাতের রুকুর আগে বা পরে যে কোন স্থানে পড়া যায়। দুটি স্থানেই দোয়া কুনুত পড়ার কথা সহিহ হাদিস দ্বারা প্রমানিত।

১। মুহাম্মদ ইবনু সীরীন (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আনাস ইবনু মালিক (রাঃ)-কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল যে, ফজরের সালাতে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুনূত পড়েছেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ। তাকে জিজ্ঞাসা করা হল তিনি কি রুকূর আগে কুনূত পড়েছেন? তিনি বললেন, কিছুদিন রুকূর পরে পড়েছেন। (সহিহ বুখারী ৯৪৭ ইফাঃ)

২। আনাস ইবনু মালিক (রাঃ)-কে কুনূত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলো। তিনি বললেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রুকূ‘র পর দু‘আ কুনূত পড়তেন। আর এক সূত্রে আছে, তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) দু‘আ কুনূত পড়তেন কখনো রুকূ‘র পূর্বে, আর কখনো রুকূ‘র পরে।( মিসকাতুল মাসাবিহ ১২৯৪, ইবনু মাজাহ ১১৮৪)

৩। আসিম (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) কে কুনূত সম্পর্কে জিজ্ঞারা করলাম। তিনি বললেন, কুনূত অবশ্যই পড়া হত। আমি জিজ্ঞাসা করলাম। রুকূ’র আগে না পরে? তিনি বললেন, রূকূর আগে। আসিম (রহঃ) বললেন, অমুক ব্যাক্তি আমাকে আপনার বরাত দিয়ে বলেছেন যে, আপনি বলেছেন, রূকুর পরে। তখন আনাস (রাঃ) বলেন, সে ভুল বলেছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রুকূর পরে এক মাস ব্যাপি কুনূত পাঠ করেছেন। আমার জানামতে, তিনি সত্তর জন সাহাবীর একটি দল, যাদের ‍কুররা (অভিজ্ঞ কারীগণ) বলা হতো মুশরিকদের কোন এক কওমের উদ্দেশ্যে পাঠান। এরা সেই কওম নয়, যাদের বিরুদ্ধে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বদ দুআ করেছিলেন। বরং তিনি এক মাস ব্যাপি কুনূতে সে সব কাফিরদের জন্য বদ দুআ করেছিলেন যাদের সাথে তার চুক্তি ছিল এবং তারা চুক্তি ভঙ্গ করে কারীগণকে হত্যা করেছিল। (সহিহ বুখারী ৯৪৮ ইফাঃ, সহিহ মুসলিম ১৪২২ ইফাঃ)

দোয়া কুনুত পড়ার সময় হাত তোলাঃ

দোয়া কুনূত পাঠ করার সময় হাত উত্তোলন করা সুন্নাত। মুসলমানদের ওপর কোন বিপদ আসলে নবী ফরয সালাতে কুনুত পাঠ করার সময় এরূপ হাত উঠাতেন। অনুরূপ সহিহভাবে প্রমাণিত হয়েছে, ওমার বিন খাত্তাব (রাঃ) বিতরের কুনুতে হাত উত্তোলন করতেন। (ফতওয়ায়ে আরকানুল ইসলাম, সালাত অধ্যায় প্রশ্ন নম্বর ২৭৭)।

তবে উমার (রাঃ), আবু হুরায়রা (রাঃ), আনাস (রাঃ) ও আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) থেকে বিতরে কুনুত পাঠের সময় বুক বরাবর হাত তুলে দো’আ করার প্রমান আছে। (বায়হাক্বী ২/২১১-১২)।

ইবনে আব্বাস (রাঃ) দোয়া কুনুতে হাত তুলতেন। (আল মুগনী ২য় খন্ড ১৫৪ পৃষ্ঠা)।

আল্লামা মুবারক পুরী বলেন, খাছ করে বিতরের সালাতে হাত তুলে দোয়া পাঠ করা সম্পর্কে রাসূল (ছাঃ) থেকে স্পষ্টভাবে সহিহ সনদে কোন প্রমান পাওয় যায় না। তবে সাহাবা কিরামগণদের ভিতর এই আমল করার প্রমান পাওয়া যায়। সাহাবীগণ দোয়া কুনুত পড়ার সময় হাত তুলতেন। অতএব, কেউ যদি হাত তুলে দোয়া করে তাতে কোন আপত্তি নেই। (মুহাদ্দিস পত্রিকা দিলি ১৯৪১ অক্টোবর ২০ পৃষ্ঠা)।

মন্তব্যঃ মোটি কথা বিতের সালাত হাত তোলা ও না তোলা উভয় প্রকার আমলই সলফ কর্তৃক বর্ণিত আছে। (তুহফাতুল আহওয়াযী ১/৪৬৪)

দোয়ার পর মুখে হাত বুলানোঃ

যে কোন দোয়া পরে মুখে হাত বুলানো সুন্নত নয়। কারণ, এ ব্যাপারে যত হাদীস এসেছে সবগুলোই দুর্বল। (ইবনে উষাইমীন শারহে ফিক্‌হ ৪/৫৫)

বলা বাহুল্য, দুর্বল হাদীস দ্বারা কোন সুন্নত প্রমাণ করা সম্ভব নয়। তাই কিছু উলামা স্পষ্টভাবে মুখে ও বুকে হাত বুলানকে বিদআত বলেছেন।

ইযয বিন আব্দুস সালাম বলেন, ‘জাহেল ছাড়া এ কাজ অন্য কেউ করে না।’ পক্ষান্তরে দুআয় হাত তোলার ব্যাপারে অনেক সহীহ হাদীস এসেছে। তার মধ্যে কোন হাদীসেই মুখে হাত ফিরানোর কথা নেই। আর তা এ কথারই দলীল যে, উক্ত আমল আপত্তিকর ও অবিধেয়। (সিফাতু স্বালাতিন নাবী (সাঃ), আলবানী ১৭৮ পৃষ্ঠা)

বিতের সালাতের কুনুতে নাযেলাকে একমাত্র দোয়া মনে করাঃ

আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক মাস ব্যাপী রি’ল ও যাকওয়ান গোত্রের বিরুদ্ধে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুনূতে দু’আ পাঠ করেছিলেন। (সহিহ বুখারী ৯৪৯ ইফাঃ)

কাফির, অমুসলিদের জন্য বদ দোয়া করাকে কুনূতে নাযেলাহ বলা হয়। এই কুনূতে মুসলিমদের জন্য দুআ এবং অত্যাচারী কাফেরদের বিরুদ্ধে বদ দু’আ করা বিধেয়। আমাদের সমাজে এই কুনুতে নাজেলাটি দোয়া কুনুত হিসাবে পরিচিত। দোয়াটি হলোঃ-

اَللّهُمَّ إِنَّا نَسْتَعِيْنُكَ وَنَسْتَغْفِرُكَ وَنُثْنِيْ عَلَيْكَ الْخَيْرَ كُلَّهُ، وَنَشْكُرُكَ وَلاَ نَكْفُرُكَ، وَنَخْلَعُ وَنَتْرُكُ مَنْ يَّفْجُرُكَ، اَللّهُمَّ إِيَّاكَ نَعْبُدُ، وَلَكَ نُصَلِّيْ وَ نَسْجُدُ، وَإِلَيْكَ نَسْعى وَنَحْفِدُ، نَرْجُوْ رَحْمَتَكَ وَنَخْشى عَذَابَكَ، إِنَّ عَذَابَكَ بِالْكُفَّارِ مُلْحَقٌ।

উচ্চারণ: আল্লা-হুম্মা ইন্না নাসতাঈনুকা অ নাসতাগফিরুক, অনুষনী আলাইকাল খায়রা কুল্লাহ্‌, অনাশ কুরুকা অলা নাকফরুক, অনাখ লাউ অনাত রুকু মাঁইয়্যাফ জুরুক, আল্লা হুম্মা ইয়্যাকা না’বুদ, অলাকা নুসাল্লী অনাসজুদ, অইলাইকা নাসআ অ নাহ্‌ফিদ, নারজু রাহ্‌মাতাকা অনাখশা আযা-বাক, ইন্না আযা-বাকা বিল কুফফা-রি মুলহাক্ব।

অর্থঃ হে আল্লাহ! নিশ্চয় আমরা তোমার নিকট সাহায্য প্রার্থনা করছি এবং ক্ষমা ভিক্ষা করছি, তোমার নিমিত্তে যাবতীয় কল্যাণের প্রশংসা করছি, তোমার কৃতজ্ঞতা করি ও কৃতঘ্নতা করি না, তোমার যে অবাধ্যতা করে তাকে আমরা ত্যাগ করি এবং তার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করি। হে আল্লাহ! আমরা তোমারই ইবাদত করি, তোমার জন্যই নামায পড়ি এবং সিজদা করি, তোমার দিকেই আমরা ছুটে যাই। তোমার রহ্‌মতের আশা রাখি এবং তোমার আযাবকে ভয় করি, নিশ্চয় তোমার আযাব কাফেরদেরকে পৌঁছবে।

** মুসলিম উম্মাহ যখন বিপদে পড়বে তখন, এই কুনুতে নাজেরা পাঁচ ওয়াক্ত সালাতে পর পড়া যায়। যেমনঃ হাদিসে এসেছে, আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একাধারে এক মাস পর্যন্ত প্রতিদিন যুহর, ‘আসর, মাগরিব, ‘ইশা ও ফাজরের সলাতের শেষ রাক্‘আতে ‘সামি‘আল্ল-হু লিমান হামিদাহ’  বলার পর দু‘আ কুনূত পড়তেন। এতে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বানী সুলায়ের কয়েকটি গোত্র, রিল, যাকওয়ান, ‘উসাইয়্যাহ এর জীবিতদের জন্যে বদ দোয়া করতেন। পেছনের লোকেরা ‘আমীন’ ‘আমীন’ বলতে। (মিসকাতুল মাসবিহ ১২৯০, আবু দাউদ ১৪৯০)

অপর পক্ষে সহিহ হাদিসের মাধ্যমে জানা যায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম তার প্রিয় নাতী হাসান ইবন আলী (রাঃ) কে নির্দিষ্ট করে বিতের সালাতের দোয়া শিক্ষা দিয়েছিলেন। হাদিসটি হলোঃ

আবুল হাওরা (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা হাসান ইবন আলী (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম আমাকে কয়েকটি বাক্য শিক্ষা দিয়েছেন, যা আমি বিতিরের নামাযে পাঠ করি। রাবী ইবন জাওয়াসের বর্ণনায় আছে “বিতিরের দুআ কুনূতে পড়ে থাকি”। তা হলঃ

اَللّهُمَّ اهْدِنِيْ فِيْمَنْ هَدَيْتَ وَعَافِنِيْ فِيْمَنْ عَافَيْتَ وَتَوَلَّنِيْ فِيْمَنْ تَوَلَّيْتَ وَبَارِكْ لِيْ فِيْمَا أَعْطَيْتَ وَقِنِيْ شَرَّ مَا قَضَيْتَ فَإِنَّكَ تَقْضِيْ وَلاَ يُقْضى عَلَيْكَ إِنَّهُ لاَ يَذِلُّ مَنْ وَّالَيْتَ وَلاَ يَعِزُّ مَنْ عَادَيْتَ تَبَارَكْتَ رَبَّنَا وَتَعَالَيْتَ لاَ مَنْجَا مِنْكَ إِلاَّ إِلَيْكَ (وَصَلَّى اللهُ عَلى نَبِيِّنَا مُحَمَّدٍ)।

উচ্চারণ: আল্লা-হুম্মাহ্‌দিনী ফী মানহাদাইত। অআ-ফিনী ফীমান আ ফাইত। অতাওয়াল্লানী ফী মান তাওয়াল্লাইত। অবা-রিকলী ফী মা আ’ত্বাইত। অকি¸নী শার্রামা ক্বাযাইত। ফাইন্নাকা তাক্বয্ব অলা ইউক্বযা আলাইক। ইন্নাহু লা য়্যাযিল্লু মাঁ উওয়া-লাইত। অলা য়্যাইযযু মান আ’-দাইত। তাবা-রাকতা রাব্বানা অতাআ’-লাইত। লা মানজা মিনকা ইল্লা ইলাইক। (অস্বাল্লাল্লাহু আলা নাবিয়িনা মুহাম্মাদ।)

অর্থঃ হে আল্লাহ! তুমি আমাকে হেদায়াত করে তাদের দলভুক্ত কর যাদেরকে তুমি হেদায়াত করেছ। আমাকে নিরাপদে রেখে তাদের দলভুক্ত কর যাদেরকে তুমি নিরাপদে রেখেছ, আমার সকল কাজের তত্তাবধান করে আমাকে তাদের দলভুক্ত কর যাদের তুমি তত্তাবধান করেছ। তুমি আমাকে যা কিছু দান করেছ তাতে বরকত দাও। আমার ভাগ্য তুমি যা ফায়সালা করেছ তার মন্দ থেকে রক্ষা কর। কারণ তুমিই ফায়সালা করে থাক এবং তোমার উপর কারো ফায়সালা চলে না। নিশ্চয় তুমি যাকে ভালোবাস সে লাঞ্জিত হয় না এবং যাকে মন্দ বাস সে সম্মানিত হয় না। তুমি বরকতময় হে আমাদের প্রভু এবং তুমি সুমহান। তোমার আযাব থেকে তুমি ছাড়া কোন আশ্রয়স্থল নেই। আর আমাদের নবীর উপর আল্লাহ রহ্‌মত বর্ষণ করেন। (আবু দাউদ ১৪২৫. তিরমিযী ৪৬৪, নাসাঈ ১৭৪৫)।

মন্তব্যঃ এই দুটি দোয়া ছাড়াও বিতের সালাতে আরও কয়েকটি দোয়ার কথা হাদিসে উল্লেখ আছে। তাই  হাদিসের আলোকে বলা যায় বিতের সালাতের দোয়া নির্দষ্ট নয়। হাদিসের বর্ণিত দোয়া পাশাপাশি বিতের সালাত অন্য দোয়াও পড়া যায়। আমাদের অনেকই অজ্ঞতার কারনে হাদিসে বর্ণিত কুনুতে নাজেলাকেই, বিতের সালাতের এক মাত্র দোয়া বলে চালিয়ে দেই।

৮। বিতের সালাতে দোয়া কুনুত পড়া কি ওয়াজিব?

১। আবু সালামা ইবন আবদুর রহমান (রহঃ), আবু হুরায়রা (রাঃ) কে বলতে শোনেন যে, আল্লাহর কসম, আমি তোমাদের নিকট রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সালাতের অনুরূপ চিত্র পেশ করব। সুতরাং আবূ হুরায়রা (রাঃ) যুহর, এশা ও ফজরের সালাতে কুনুত পড়তেন। মুসলমানদের জন্য দু’আ করতেন এবং কাফিরদেরকে অভিশাপ দিতেন। (সহিহ মুসলিম ১৪১৭ ইফাঃ)

২। মুহাম্মাদ (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আনাস (রাঃ) কে জিজ্ঞাসা করলাম, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি ফজরের সালাতে কুনূত পাঠ করতেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ, রুকু করার পর কিছু সময়। (সহিহ মুসলিম ১৪১৯ ইফাঃ)

৩। আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে কোন সারিয়্যার (বাহিনীর) সম্বন্ধে এত বেশী দুঃখিত হতে দেখিনি। যতখানি দুঃখিত হয়েছিলেন সেই সত্তরজন সাহাবীর জন্য যাদের ‘বির-ই মাউনা-র দিন শহীদ করা হয়েছিল, তাঁদের ‘কারী’ বলা হতো। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই হত্যাকারীদের এক মাস ধরে বদদোয়া করতে থাকলেন।(সহিহ মুসলিম ১৪২৩ ইফাঃ)

মন্তব্যঃ যখন মুসল্মানের উপর কোন বিপদ আসে, তখন সকল সালাতে কুনুতে নাযিলা পাঠ মুস্তাহাবঅনুরূপভাবে, বিতের সালাতও দোয়া কুনুত পড়া মুস্তাহাব। উপরে বর্ণিত সহিহ হাদিসের মাধ্যমে জানা যায় রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক মাস বিভিন্ন কওমের জন্য বদ দোয়া করেছিলেন। তিনি প্রতি ওয়াক্তেই দোয়া কুনুত পড়েছিলেন। এ ছাড়া অন্যান্য সময় বিতেরসহ অন্যান্য সালাতেও দোয়া কুতুন পড়েছেন। অনেক মুসলিম প্রায় সব সময় প্রত্যেক রাত্রে বিতের সালাতে দোয়া কুনুত পড়েন। তারা এই  দোয়া পড়াকে ওয়াজিব মনে করেন এবং দোয়া কুনুত কখনও ভুলে ছেড়ে দিয়ে সিজদায় গেলে, সহু সিজদা দেন। এই আমলটি ভুল প্রচলন। কেউ ভুলে দোয়া কুনুত ছেড়ে দিয়ে সিজদায় গেলে, সহু সিজদা লাগে না। আমলটি নিয়মিত করা মুস্তাহাব নয়, বরং মাঝে মাঝে ইচ্ছা করে ছেড়ে দেয়াও মুস্তাহার। তাই প্রত্যেক রাত্রে তা নিয়মিত না পড়ে মাঝে মাঝে ত্যাগ করা উচিত। (সিফাতু স্বালাতিন নাবী (সাঃ), আলবানী ১৭৯পৃ:, আল মুমতে শারহে ফিকহ, ইবনে উষাইমীন ৪/২৭)

আগেকটি ভূলঃ আমাদের সমাজে প্রচলিত আছে, যদি কারও দোয়া কুনুত মুখন্ত না থাকে সে যেন, বিতর সালতের দোয়া কুনুত পড়ার পরিবর্তে তিনবার ক্বুলহু আল্লাহু বা সুরা ইখলাসঅথবা রাব্বানা আতেনাপড়ে নেয়। দোয়া কনুতের পরিবর্তে অর্থবহ দোয়া আবরীতে পড়া যায়। এর পরিবর্তে সুরা ইখলাসপড়া এতটি ভুল আমল। যেহেতু দোয়া কুনুত পড়া ওয়াজিব নয়, তাই যতদিন মুখস্ত না হবে তত দিন দোয়া কুনুত না পড়লেই সালাত আদায় করতে হবে। তবে খুব তাড়াতাড়ি মুখস্ত করার চেষ্টা করেত হবে।

বিতের সালাত আদায়ের পাঁচটি পদ্ধতিঃ

প্রথম পদ্ধতিঃ

কিয়ামুল লাইল বা তাহাজ্জুদ সালাত দুই দুই রাকাত পড়ে শেষে এক রাকাত দ্বারা সকল সালাতকে বিতের করা বা বিজোড় করা। এই পদ্ধতি সবচেয়ে উত্তম কোন মতভেদ নাই। সহিহ বুখারি এবং সহিহ মুসলিমসহ অসংখ্যা সহিহ হাদিস দ্বারা প্রমানিত।

দলীলঃ

১। আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, রাতের সালাত দু’ দু’ রাকাআত করে। তারপর যখন তুমি সালাত শেষ করতে চাইবে, তখন এক রাকা’আত আদায় করে নিবে। তা তোমার পূর্ববতী সালাতকে বিতর করে দিবে। কসিম (রহঃ) বলেন, আমরা সাবালক হয়ে লোকদের তিন রাকা’আত বিতর আদায় করতে দেখেছি। উভয় নিয়মেই অবকাশ রয়েছে। আমি আশা করি এর কোনটই দোষনীয় নয়। (সহিহ বুখারি ৯৩৯ ইফাঃ)

২। আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতে এগার রাকআত সালাত আদায় করতেন, এর মধ্যে এক রাকআত বিতর হিসেবে আদায় করতেন। এ সালাত শেষ করে তিনি ডান পার্শ্বে শুইতেন। অবশেষে মুয়াযযিন তার কাছে এলে তিনি সংক্ষিপ্ত দু রাকআত ফজরের সুন্নাত সালাত আদায় করতেন। (সহিহ মুসলিম ১৫৯০ ইফাঃ)

৩। আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাতের বেলা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সালাত ছিল দশ রাক’আত এবং এক রাকআত দিয়ে বিতর আদায় করতেন। আর ফজরের দু’ রাকাত (সূন্নাত) ও আদায় করতেন। এই হল তের রাক’আত।(সহিহ মুসলিম ১৬০০ ইফাঃ)

 ৪। ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। এক ব্যাক্তি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে রাতের সালাত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলো। তিনি বললেন, রাতের সালাত দু’ রাকআত দু’ রাকআত। পরে যখন তোমাদের কেউ ভোর হয়ে যাওয়ার আশংকা করে তখন এক রাকা’আত পড়বে। যা তার আদায়কৃত সালাতকে বিতর করে দেবে।(সহিহ মুসলিম ১৬২১, ১৬২৩ ইফাঃ)

দ্বিতীয় পদ্ধতিঃ

অনান্য সালাতের তিন রাকাত বিতর পড়ার ক্ষেত্রে দুই রাক‘আত পড়ে সালাম ফিরিয়ে পুনরায় এক রাক‘আত পড়া। প্রথমে ২ রাকাআত পড়ে সালাম ফিরিয়ে নেবে। অতঃপর পৃথকভাবে আরেক রাকাআত পড়ে রুকুর আগে বা পরে দুআ কুনূত পড়ে সিজদা শেষে আবার বসে সালাম ফিরাবেন।

দলীলঃ

১। আব্দুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, এক ব্যাক্তি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট রাতের সালাত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, রাতের সালাত দু’ দু’ (রাকা’আত) করে। আর তোমাদের মধ্যে কেউ যদি ফজর হওয়ার আশংকা করে, সে যেন এক রাকা’আত মিলিয়ে সালাত আদায় করে নেয়। আর সে যে সালাত আদায় করল, তা তার জন্য বিতর হয়ে যাবে। নাফি (রহঃ) থেকে বর্ণিত, আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) বিতর সালাতের এক ও দুরাকাআতের মাঝে সালাম ফিরাতেন। এরপর কাউকে কোন প্রয়োজনীয় কাজের নির্দেশ দিতেন। (সহিহ বুখারি ৯৩ ইফাঃ)

২। ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, রাতের সালাত দুই দুই (রাক’আত); পরে যখন তুমি দেখবে যে, সুবহ সাদিক তোমাকে পেয়ে বসেছে তখন তুমি এক (রাক’আত) দিয়ে বিতর আদায় করে নেবে। তখন ইবনু উমর (রাঃ) কে জিজ্ঞাসা করা হল, দুই দুই কি? তিনি বললেন, প্রতি দুই রাকাতে তুমি সালাম ফিরাবে। (সহিহ মুসলিম ১৬৩৬ ইফাঃ)

তৃতীয় পদ্ধতিঃ

একাধারে তিন রাকাত আদয় করবে। দুই রাকাত আদায়ের পর সকল সালাতে তাশাহুদের জন্য যে বৈঠক করা হয়, সেই বৈঠক বাদ দিতে হবে। অর্থাৎ অনান্য নামাযের মতোই ১ম ও ২য় রাকাআত পড়বে। তৃতীয় রাকাআতে কিরাআত পাঠ শেষে রুকুর আগে বা পরে দুআ কুনূত পড়ে সিজদায় চলে যাবে। তবে ২য় রাকাআতের পর তাশাহুদের জন্য না বসে সরাসরি দাড়িয়ে যাবে। শুধু মাত্র তৃতীয় রাকাআতে পর বসে আত্তাহিয়্যাতু, দুরুদ ও দুআ মাছুরা পড়ে সালাম ফিরিয়ে নেবে।

 দলীলঃ

২। আয়েশা (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) তিন রাক‘আত বিতর পড়তেন। তিনি শেষের রাক‘আতে ব্যতীত বসতেন না। (মুস্তাদরাক হাকেম ১১৪০, বায়হাক্বী ৪৮০৩ হাদিসের সনদ সহিহ)

৩। ইবনু ত্বাঊস তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসূল (ছাঃ) তিন রাকাত  বিতর পড়তেন। মাঝে বসতেন না। (মুছান্নাফ আব্দুর রাযযাক ৪৬৬৯, ৩য় খন্ড, পৃঃ ২৭)

চতুর্থ পদ্ধতিঃ

একাধারে পাঁচ বা সাত রাকাত আদয় করবে। দুই রাকাত আদায়ের পর সকল সালাতে তাশাহুদের জন্য যে বৈঠক করা হয়, সেই বৈঠক বাদ দিতে হবে। অর্থাৎ এক টানা একাধারে পাঁচ বা সাত রাকাত পড়বে। পঞ্চম বা সপ্তম রাকাতে কিরাআত পাঠ শেষে রুকুর আগে বা পরে দুআ কুনূত পড়ে সিজদায় চলে যাবে। শুধু মাত্র পঞ্চম বা সপ্তম রাকাতে পর বসে আত্তাহিয়্যাতু, দুরুদ ও দুআ মাছুরা পড়ে সালাম ফিরিয়ে নেবে।

দলীলঃ

১। সাঈদ ইবন যুবায়ের (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ একদা ইবন আব্বাস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লামের এরূপ নামায পাঠের ঘটনা আমার নিকট বর্ণনা করেন। রাবী বলেনঃ তিনি (নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) দুই দুই রাকাত করে মোট আট রাকাত নামায আদায় করেন। অতঃপর পাঁচ রাকাত বিতির আদায় করেন এবং এর মাঝখানে বসেননি।আবু দাউদ ১৩৫৮)

২। আয়িশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেনঃ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর রাতের সালাত ছিল তের রাকআত। এর মধ্যে পাঁচ রাকআত বিতর আদায় করতেন। এই পাঁচ রাকআতের শেষ রাকআত ছাড়া আর কোথাও বসতেন না। পরে মুয়াজ্জ্বীন (ফজরের) আযান দিলে তিনি উঠে দাঁড়াতেন এবং দু’রাকআত সংক্ষেপ্ত সালাত (সুন্নাত) আদায় করতেন। (তিরমিজী হাদিস নম্বরঃ ৪৫৯, সহিহ আবু দাউদ ১২০৯

৩। উম্মে সালামা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাত রাকআত বা পাঁচ রাকআত দ্বারা সালাতকে বেজোড় করে দিতেন। ঐ রাকাতগুলোর মধ্যে সালাম ফিরিয়ে সালাতকে বিভক্ত করতেন না। (সুনানে নাসাঈ ১৭১৮)

৪। উম্মে সালামা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পাঁচ রাকআত দ্বারাও বেজোড় করে দিতেন, সাত রাকআত দ্বারাও বেজোড় করে দিতেন। ঐ রাকআতগুলোর মধ্যে সালাম ফিরিয়ে কিংবা কথা বলে সালাতকে বিভক্ত করতেন না।(সুনানে নাসাঈ ১৭১৭, ইবনে মাজাহ ১১৯২)

৫। আয়িশাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাত্রে (তাহাজ্জুদের সময়) তের রাকআত সলাত আদায় করতেন। তের রাক্‘আতের মাঝে পাঁচ রাক্‘আত বিতর। আর এর মাঝে (পাঁচ রাক্‘আতের) শেষ রাক্‘আত ব্যতীত কোন রাকআতে ‘তাশাহুদ’ পড়ার জন্যে বসতেন না। (মিসকাতুল মাসাবিহ ১২৫৬, বুখারী, মুসলিম)

১৫৯৩। আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা, আবূ কুরায়ব ও ইবনু নুমায়র (রহঃ) … আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তের রাক’আত সালাত আদায় করতেন। এর মধ্যে পাঁচ রাক’আত দিয়ে তিনি বিতর আদায় করতেন এর শেষে ব্যতীত কখনও বসতেন না। (সহিহ মুসলিম ১৫৯৩ ইফাঃ)

পঞ্চম পদ্ধতিঃ

পূর্বের আলোচনায দেখেছি, তিন রাকাত বিতের সালাত একটানা পড়তে হবে। মাঝখানে কোন বৈঠক করা যাবে না। এটাই সুন্নাত। কিন্তু উপমহাদের অধিকাংশ মুছল্লী মাঝখানে বৈঠক করে ও তাশাহ্হুদ পড়ে। দলীল সহ নামাজের মাসায়েল গ্রন্থ মাওলানা আব্দুর মতিন লিখেন বিতের সালাত মাগরিবের মত তিন রাকাত।

১।  তিনি হাদিস কোট করেন, ইবনু মাসঊদ (রাঃ) বলেন, মাগরিবের ছালাতের ন্যায় বিতরের ছালাত তিন রাক‘আত। (দারা কুতরী ১৬৭২)

মন্তব্যঃ লেখক দাবি করেন হাদিসটি সহিহ পক্ষান্তে ইবনুল জাওযী বলেন, এই হাদীছ ছহীহ নয় বলেছেন। (هَذَا حَدِيْثٌ لاَيَصِحُّ তানক্বীহ, পৃঃ ৪৪৭।)

২। আরেকটি হাদিসে উল্লেখ করে বলেন, আব্দুল্লাহ ইবনু ওমর (রা) বলেন, মাগরিবের ছালাত দিনের বিতর ছালাত। (মুসনাদে আমহম্মদ ৪৮৪৭)

মন্তব্যঃ লেখক দাবি করেন হাদিসটি বর্ণনকারী নির্ভরযোগ্য, পক্ষান্তরে অনেক মুহাদ্দিস ত্রুটিপূর্ণ সনদের কারনে হাদিসটি যঈফ হিসাবে উল্লেখ করেছেন। জাওযী বলেন, এই হাদীছ সহিহ নয়। (তাহক্বীক্ব মুসনাদে আহমাদ ৫৫৪৯)

৩। তিনি আরও উল্লেখ করেন, ইবনু মাসঊদ (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, রাত্রির তিন রাক‘আত বিতর দিনের বিতরের ন্যায়। যেমন মাগরিবের ছালাত। (দারা কুতরী ১৬৭২)

লেখক মাওলানা আব্দুর মতিন, দাবি করেন হাদিসটি হাসান পর্যায়, পক্ষান্তরে, ইমাম দারাকুৎনী হাদীছটি বর্ণনা করে বলেন, ইয়াহইয়া ইবনু যাকারিয়া যাকে ইবনু আবীল হাওয়াজিব বলে। সে যঈফ, সে আমাশ ছাড়া আর কারো নিকট থেকে মারফূ হাদীছ বর্ণনা করেনি। (সুনানু দারাকুতনী হা/১৬৭২; তানক্বীহ, পৃঃ ৪৪৭)

এছাড়াও ইমাম দারাকুৎনী উক্ত বর্ণনার পূর্বে তার বিরোধী সহিহ হাদিস উল্লেখ করেছেন। সেখানে মাগরিবের মত করে বিতর পড়তে নিষেধ করা হয়েছে। যেমনঃ আবু হুরায়রাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, তোমরা (মাগরিবের ছালাতের ন্যায়) তিন রাক‘আত বিতর পড় না, পাঁচ, সাত রাকাত পড়। আর মাগরিবের ছালাতের ন্যায় আদায় কর না’। ইমাম দারাকুৎনী উক্ত হাদীছকে সহিহ বলেছেন। (দারাকুৎনী ২/২৪ পৃঃ, সনদ ছহীহ)

মন্তব্যঃ এই যঈফ হাদিসের আলোকে বর্ণিত পদ্ধতিটি আমাদের দেশে সবচেয়ে বেশি প্রচলিত। আমাদের দেশের হানাফি মাযহাব অনুসরী প্রায় সকলেই এই পদ্ধতিতে বিতের সালাত আদায় করে থাকে। আলোচনার দ্বারা বুঝা যায়, এই পদ্ধতি বিতের সালাত আদায় করালে অনেকটি দুর্বল হাদিসের উপর আমল হবে। সহিহ হাদিস থাকতেও দুর্বল হাদিসের উপর আমল করা কতটা যৌক্তিক?

উপমহাদের খ্যাতনামা আলেম ছফিউর রহমান মুবারকপুরি, মদীনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পি. এইচ. ডি গবেষক উস্তাদ ফাইহান শালী আল মুতাইরী তারা বলেছেন, এই পদ্ধতিতে রাসূল (সা:) বিতর পড়েছেন মর্মে কোনো সহিহ হাদিস পাওয়া যায় না। ইবনুল কায়্যিম ‘যাদুল মাআদে’ প্রচলিত পদ্ধতির আলোচনায় আনেন নি। তাই আমরা উপরের চারটি পদ্ধতির যে কোনো একটি গ্রহন করবো, সেটাই আমাদের জন্য উত্তম হবে।

 ১০বিতর সালাত কাজা আদায়ঃ

বিতের নামায যথা সময়ে না পড়া হলে তা কাযা পড়া বিধেয়। নিম্মের হাদিসগুলো লক্ষ করিঃ

১। আবূ সাঈদ আল-খুদরী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেনঃ কেউ যদি বিতর আদায় না করে শুয়ে পড়ে বা তা আদায় করতে ভূলে যায়, তবে যখনই স্মরণ হবে বা সে নিদ্রা থেকে উঠবে, তখনই তা আদায় করে নিবে। (তিরমিজী ৪৬৫)

২। আবু সাঈদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ যে ব্যক্তি নিদ্রা বা ভুলের কারণে বিতিরের নামায আদায় করে নাই, সে যেন তা স্মরণ হওয়ার পরপরই আদায় করে নেয়। (আবু দাউদ ১৪৩১)

৩। আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি বিতর সালাত না পড়ে ঘুমিয়ে গেলো বা তা পড়তে ভুলে গেলো, সে যেন ভোরবেলা অথবা যখন তার স্মরণ হয় তখন তা পড়ে নেয়। (ইবনু মাজাহ ১১৮৮)

৪। আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, কোন অসুস্থতা বা অন্য কোন কারণে যদি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সালাত ছুটে যেত, তবে তিনি দিনের বেলা বার রাক’আত সালাত আদায় করে নিতেন। (সহিহ মুসলিম ১৬১৬ ইফাঃ)

মন্তব্যঃ উপরে আবু সাঈদ (রাঃ) হতে বর্ণিত সহিহ হাদিসের আলোকে বলা যায় বিতের সালাতের কাজা আদায় করা যাবে। ফজর হয়ে গেলেও বিতর নামায বিতরের মতই কাযা পড়া যাবে। কিন্তু আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত হাদিসে দেখা যায়, দিনের বেলায় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বার রাকাত সালাত আদায় করেছেন। তার অর্থ হলো, তিনি তাহাজ্জুদের সালাত কাজা করেছেন কিন্তু বিতের সালাত কাজা করেন নাই। কাজেই দুটি পদ্ধতিই সঠিক সময সুযোগ থাকলে কাজা আদায় করবে আর যারা নিয়মতি তাহাজ্জুদ পড়েন তারা তাহাজ্জুদের কাজা আদায় করবেন বিতের কাজা না করলেও চলবে।  

১১এক রাতে দুই বার বিতের সালাত আদাযঃ

রাত্রের সর্বশেষ নামায হল বিতরের নামায। বিতরের পর আর কোন নামায নেই। অতএব, যদি কেউ শেষ রাত্রে উঠতে পারবে না মনে করে এশার পর বিতের পড়ে নেয়। অতঃপর শেষ রাত্রে উঠতে সক্ষম হয়, সে তাহাজ্জুদ পড়বে কিন্তু আর দ্বিতীয় বার বিত্‌র পড়বে না।

নিম্মের হাদিসগুলো লক্ষ করিঃ

১। ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, যে ব্যাক্তি রাতে সালাত আদায় করে সে যেন বিতরকে তার শেষ সালাত বানায়। কেননা, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ আদেশ করতেন। (সহিহ মুসলিম ১৬২৭ ইফাঃ)

২। ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা তোমাদের রাতের শেষ সালাত বিতরকে বানিও। (সহিহ মুসলিম ১৬২৮ ইফাঃ)

সংকলনেঃ মোহাম্মাদ ইস্রাফিল হোসাইন। (বিএ ইন এ্যারাবিক লিটারেচার, ইসলামিক হিস্টরী এন্ড ইসলামিক স্টাডিস)

Leave a comment