সবর অর্জনের তেইশটি পদ্ধতিঃ চতুর্থ পর্ব

সবর অর্জনের তেইশটি পদ্ধতিঃ চতুর্থ পর্ব

১৫কোনটা কল্যাণকর তা আল্লাহই ভাল জানেনঃ

মহান আল্লাহ বলেন,

*كُتِبَ عَلَيْكُمُ الْقِتَالُ وَهُوَ كُرْهٌ لَّكُمْ وَعَسَى أَن تَكْرَهُواْ شَيْئًا وَهُوَ خَيْرٌ لَّكُمْ وَعَسَى أَن تُحِبُّواْ شَيْئًا وَهُوَ شَرٌّ لَّكُمْ وَاللّهُ يَعْلَمُ وَأَنتُمْ لاَ تَعْلَمُونَ *

অর্থঃ তোমাদের উপর যুদ্ধ ফরয করা হয়েছে, অথচ তা তোমাদের কাছে অপছন্দনীয়। পক্ষান্তরে তোমাদের কাছে হয়তো কোন একটা বিষয় পছন্দসই নয়, অথচ তা তোমাদের জন্য কল্যাণকর। আর হয়তোবা কোন একটি বিষয় তোমাদের কাছে পছন্দনীয় অথচ তোমাদের জন্যে অকল্যাণকর। বস্তুতঃ আল্লাহই জানেন, তোমরা জান না। (সুরা বাকারা, আয়াত ২১৬)।

কাজেই আমার বিপদের অন্তর নিহিত খবর মহান আল্লাহই জানেন। আমাদের নিরাশ হলে চলবে না। বরং আল্লাহর রহমত থেকে শুধু কাফের সম্প্রদায়ই নিরাশ হয়। মহান আল্লাহ বলেন,

يَا بَنِيَّ اذْهَبُواْ فَتَحَسَّسُواْ مِن يُوسُفَ وَأَخِيهِ وَلاَ تَيْأَسُواْ مِن رَّوْحِ اللّهِ إِنَّهُ لاَ يَيْأَسُ مِن رَّوْحِ اللّهِ إِلاَّ الْقَوْمُ الْكَافِرُونَ

অর্থঃ বৎসগণ! যাও, ইউসুফ ও তার ভাইকে তালাশ কর এবং আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয় আল্লাহর রহমত থেকে কাফের সম্প্রদায়, ব্যতীত অন্য কেউ নিরাশ হয় না। (সুরা ইউসুফ ১২:৮৭)

মন্তব্যঃ কাজেই আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ না হয়ে সবর করতে হবে। আশা করবে আল্লাহর সাহায্য অবশ্যই আসবে। দেরি হলে মনে করবে আল্লাহই জানেন কোন কাজ এবং কিসের মাঝে আমার মঙ্গল নিহীত আছে। তাছাড়া এই জগত সংসারে আল্লাহ ছাড়া আর কেউ নেই যে আল্লাহ চেয়ে আমার বেশী মঙ্গল কামনা করে।

১৬। সাধ্যের অতীত কোন কাজ আল্লাহ কারো উপর চাপান না।

মুমিনদের বিপদের কারন তাকে পরীক্ষা করা। তাই যখন বিপদ আসবে তখন একজন মুমিন ভাববে এ বিপদ এসেছে আমার পরীক্ষা জন্য। এ পরিক্ষায় পাশ করতে হলে, তাবে মনে রাখতে হবে, বিপদ যত বড় হোক না কেন মহান আল্লাহ পক্ষ থেকে এসেছে। আর মহান আল্লাহ প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে, তিনি কাউকে তার সাধ্যাতীত কোন কাজের ভার দেন না। বান্দার দ্বারা করা সম্ভব নয়, এমন কোন কাজ কারও উপর তিনি চাপিয়ে দেন না। তিনি এরশাদ করেন,

لاَ يُكَلِّفُ اللّهُ نَفْسًا إِلاَّ وُسْعَهَا لَهَا مَا كَسَبَتْ وَعَلَيْهَا مَا اكْتَسَبَتْ رَبَّنَا لاَ تُؤَاخِذْنَا إِن نَّسِينَا أَوْ أَخْطَأْنَا رَبَّنَا وَلاَ تَحْمِلْ عَلَيْنَا إِصْرًا كَمَا حَمَلْتَهُ عَلَى الَّذِينَ مِن قَبْلِنَا رَبَّنَا وَلاَ تُحَمِّلْنَا مَا لاَ طَاقَةَ لَنَا بِهِ وَاعْفُ عَنَّا وَاغْفِرْ لَنَا وَارْحَمْنَآ أَنتَ مَوْلاَنَا فَانصُرْنَا عَلَى الْقَوْمِ الْكَافِرِينَ

অর্থঃ আল্লাহ কাউকে তার সাধ্যাতীত কোন কাজের ভার দেন না, সে তাই পায় যা সে উপার্জন করে এবং তাই তার উপর বর্তায় যা সে করে। হে আমাদের পালনকর্তা, যদি আমরা ভুলে যাই কিংবা ভুল করি, তবে আমাদেরকে অপরাধী করো না। হে আমাদের পালনকর্তা! এবং আমাদের উপর এমন দায়িত্ব অর্পণ করো না, যেমন আমাদের পূর্ববর্তীদের উপর অর্পণ করেছ, হে আমাদের প্রভূ! এবং আমাদের দ্বারা ঐ বোঝা বহন করিও না, যা বহন করার শক্তি আমাদের নাই। আমাদের পাপ মোচন কর। আমাদেরকে ক্ষমা কর এবং আমাদের প্রতি দয়া কর। তুমিই আমাদের প্রভু। সুতরাং কাফের সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে আমাদের কে সাহায্যে কর। (সুরা বাকারা ২:২৮৬)

মন্তব্যঃ বিপদকে সাধ্যাতীত না ভেবে সবর করলে, সবর অর্জন সহজ হবে।

১৭। বিপদে আল্লার উপর তাওয়াক্কুল করলে সবর অর্জন সহজ হয়ঃ

সকল কাজে সর্বাবস্থায় মহান আল্লাহ তা’আলার উপর তাওয়াক্কুল বা ভরসা করা অবশ্য কর্তব্য। আল্লাহ তা’আলার উপর তাওয়াক্কুল বা ভরসা করা ঈমানের দাবি ও শীর্ষ পর্যায়ের ইবাদত এবং সে তাওয়াক্কুল করা ফরজ। তাই কারন বিপদ আসলে তা দুর করার জন্য সকল প্রকার চেষ্টা প্রচেষ্টা চালাতে হবে। এরপরও যদি বিপদ না কাটে হবে আল্লার উপর তাওয়াক্কুল করে সবর করতে হবে। আল্লাহ বলেন,

وَعَلَى ٱللَّهِ فَتَوَكَّلُوٓاْ إِن كُنتُم مُّؤۡمِنِينَ (٢٣

অর্থঃ এবং একমাত্র আল্লাহ তা’আলার উপরই তাওয়াক্কুল কর, যদি তোমরা মুমিন হয়ে থাক। (সুরা মায়েদা ৫:২৩)।

আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ

فَإِذَا عَزَمۡتَ فَتَوَكَّلۡ عَلَى ٱللَّهِ‌ۚ إِنَّ ٱللَّهَ يُحِبُّ ٱلۡمُتَوَكِّلِينَ (١٥٩)

অর্থঃ তারপর যখন কোন মতের ভিত্তিতে তোমরা স্থির সংকল্প হবে তখন আল্লাহর ওপর ভরসা করো৷ আল্লাহ তাদেরকে পছন্দ করেন যারা তাঁর ওপর ভরসা করে কাজ করে৷ (সুরা আল ইমরান ৩:১৫৯)।

আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ

وَعَلَى ٱللَّهِ فَلۡيَتَوَكَّلِ ٱلۡمُؤۡمِنُونَ (١٦٠)

অর্থঃ কাজেই সাচ্চা মুমিনদের আল্লাহর ওপরই ভরসা করা উচিত। (সুরা আল ইমরান ৩:১৬০)। ৷

আল্লাহ তা’আলা বলেন :

 إِنَّمَا ٱلۡمُؤۡمِنُونَ ٱلَّذِينَ إِذَا ذُكِرَ ٱللَّهُ وَجِلَتۡ قُلُوبُہُمۡ وَإِذَا تُلِيَتۡ عَلَيۡہِمۡ ءَايَـٰتُهُ ۥ زَادَتۡہُمۡ إِيمَـٰنً۬ا وَعَلَىٰ رَبِّهِمۡ يَتَوَكَّلُونَ (٢)

অর্থ: সাচ্চা ঈমানদার তো তারাই আল্লাহকে স্মরণ করা হলে যাদের হৃদয় কেঁপে ওঠে৷ আর আল্লাহর আয়াত যখন তাদের সামনে পড়া হয়, তাদের ঈমান বেড়ে যায় এবং তারা নিজেদের রবের ওপর ভরসা করে৷ সুরা আনফাল ৮:২)।

মন্তব্যঃ আল্লার উপর তাওয়াক্কুল মুমিদের জন্য ফরজ। বিপদে যখন মহান আল্লার উপর তাওয়াক্কুল করা হয় তখন মনে হবে মহান আল্লাহ আমার পাশে থেকে আমার বিপদ দুর করছে। পৃথিবীর সকলে আমার বিপদ দেখে হাসছে আর দুর সরে যাচ্ছে আর আমি যার উপর একান্ত নির্ভর করে আছি তিনি আমাকে সাহায্য করছে। এভাবে আল্লার উপর তাওয়াক্কুল বা ভরসা করলে সবর অর্জন সহজ হবে।

১৮। বিপদে আল্লাহকে ভয় করলে সবর অর্জন সহজ হয়।

  মহান আল্লাহ ভয় করলে সবর করা সহজ হবে। মহান আল্লাহ কুরআনে ঘোষনা দিয়েছেন ভয় করলে কাজ সহজ করে দিবেন। তিনি এরশাদ করেন, মহান আল্লাহ বলেন,

وَمَن يَتَّقِ اللَّهَ يَجْعَل لَّهُ مِنْ أَمْرِهِ يُسْرًا

অর্থঃ যে আল্লাহকে ভয় করে, আল্লাহ তার কাজ সহজ করে দেন। (সুরা তালাক ৬৫:৪)।

মহান আল্লাহ বলেন,

ذَلِكَ أَمْرُ اللَّهِ أَنزَلَهُ إِلَيْكُمْ وَمَن يَتَّقِ اللَّهَ يُكَفِّرْ عَنْهُ سَيِّئَاتِهِ وَيُعْظِمْ لَهُ أَجْرًا

অর্থঃ এটা আল্লাহর নির্দেশ, যা তিনি তোমাদের প্রতি নাযিল করেছেন। যে আল্লাহকে ভয় করে, আল্লাহ তার পাপ মোচন করেন এবং তাকে মহাপুরস্কার দেন। (সুরা তালাক ৬৫:৫)

 মন্তব্যঃ সকল কাজে সব সময় মহান আল্লাহকেই ভয় করতে হবে। বিপদ যেহেতু আল্লাহ পবীক্ষার মাধ্যম এবং এ পরীক্ষার পাশ ফেল রাব্বুল আলামিন আল্লাহর হাতে। আবার তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, ভয় করলে কাজ সহজ করে দিবেন এবং মহাপুরস্কারও দিবেন। কাজেই বিপদে একমাত্র আল্লাহকেই ভয় করা উচিৎ।

১৯। নিরাশ না হয়ে আল্লাহ উপর ভরসা করলে সবর অর্জন সহজ হয়।

বিপদ আসলে বিচলিত হওয়া মানুষের একটি স্বাভাবিক আচরন। যদি কোন মানুষ পরকাল, জান্নাত, জাহান্নাম, ভাগ্যে বা মহান আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসি না হয়, তবে তার সবর করার কোন প্রশ্র আসেনা। সে নিরাস হবেই। অপর পক্ষে ঈমানদার মুমিন বান্দা বিপদে থেকে উদ্ধারের জন্য সুন্নত হিসাবেপার্থিক সকল উপায় উপকরণ অবলম্ভন করে সমাধান খুজে পায় না, তখন সে নিরাশ না হয়ে মহান আল্লাহর উপর ভরসা করে সবর করে। আল্লাহে বিশ্বাসি কোন বান্দা কখনও নিরাশ হয় না, সে শেষ সিমানা পর্যান্ত ভরসা করে সবর করে। তাছাড়া মহান আল্লাহও মুমিনদের নিরাশ হতে নিষেধ করেছেন। তিনি বলেন,

وَلاَ تَهِنُوا وَلاَ تَحْزَنُوا وَأَنتُمُ الأَعْلَوْنَ إِن كُنتُم مُّؤْمِنِينَ

অর্থঃ আর তোমরা নিরাশ হয়ো না এবং দুঃখ করো না। যদি তোমরা মুমিন হও তবে, তোমরাই জয়ী হবে। [ সুরা ইমরান ৩:১৩৯ ]

আবু হুরায়রাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, মহাপবিত্র আল্লাহ বলেছেনঃ ‘’হে আদম সন্তান! আমার ইবাদতে মগ্ন হও, আমি তোমার অন্তরকে ঐশ্বর্যমণ্ডিত করবো এবং তোমার দারিদ্র দূর করবো। তুমি যদি তা না করো, তাহলে আমি তোমার অন্তর পেরেশানী দিয়ে পূর্ণ করবো এবং তোমার দারিদ্রতা দূর করবো না’’ ইবন মাযাহ ৪১০৭; তিরমিযি ২৪৬৬ (আলবানি সহীহ বলেছেন)

মন্তব্যঃ তাই শিরনামের সাথে তালে মিলিয়ে বলতে চাইঃ “নিরাশ না হয়ে আল্লাহ উপর ভরসা করলে সবর অর্জন সহজ হয়”।

২০। কল্যানকর কাজের মননিবেশ করলে সবর অর্জন সহজ হবেঃ

বিপদ আসলে হতাশায় চারেদিক আচ্ছন্ন হয়ে যায়। মন মানষিকতক ঠিক থাকে না। শয়তান সুযোগ কাজে লাগিয়ে মনের মাঝে নানান ধরনের ধোকা দিতে থাকে। যাদের সবর সম্পর্কে জ্ঞান নেই, তারা নিরাশ করে পাপাচারে লিপ্ত হয়। এই জন্য সমাজে দেখবেন, সাধারন মানুষ হতাশা থেকে ধুম পান করে আর বলে হতাশাকে (বিপদকে) কাটিয়ে উঠার চেষ্টা করছে। সমাজে বসবাস কারি একটু উপরের তলার লোকজন হতাশা আসলে ক্লাবে যায়, নেসা করে, মদ খায় আর বলে হতাশা ভোলার চেষ্টা করেছে। আসলে এ সকল অনৈতেক কাজের মাধ্যমে হতাশা দুর করা ধোকা ছাড়া কিছু না। অথচ বিপদ আসলে আল্লাহ সালাতে মাধ্যমে সবর করতে বলেছেন। আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ

 **وَاسْتَعِينُواْ بِالصَّبْرِ وَالصَّلاَةِ وَإِنَّهَا لَكَبِيرَةٌ إِلاَّ عَلَى الْخَاشِعِينَ*

অর্থঃ ধৈর্য্যর সাথে সাহায্য প্রার্থনা কর নামাযের মাধ্যমে। অবশ্য তা যথেষ্ট কঠিন। কিন্তু সে সমস্ত বিনয়ী লোকদের পক্ষেই তা সম্ভব। [ সুরা বাকারা ২:৪৫ ]

সুহাইব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী (সাঃ) বলেছেনঃ ”আম্বিয়াগন শঙ্কিত হলে সলাতের আশ্রয় নিতেন” সাহীহাহ ১০৬১, ২৪৫৯, ৩৪৬৬ [আতিফা পাবলিকেশন্স ৬৬৬, ৬৭১, ৭১২] (আলবানি সহীহ বলেছেন)
মন্তব্যঃ কাজেই বিপদের মুহুর্তে মানুষিক অশান্তি দুর করার জন্য কল্যাণকর ও অর্থবহ কাজে নিজেকে ব্যস্ত রাখতে হবে। অটল থাকতে হবে পূর্ব নির্ধারিত স্বীয় সিদ্ধান্তে। নিয়মিত তেলাওয়াত, দু’আ-দরুদ, নামায ইত্যাদিতে মশগুল থাকতে হবে।

২১। সবর হাসিলের জন্য চেষ্টা সাধনা করাঃ

চেষ্টা ছাড়া কোন কিছু অর্জন হয়না। দুনিয়াবি কোন কাজ হোক আর পরকারের মুক্তির জন্য হিদায়েতই হোক সকল কাজের জন্য চাই চেষ্টা ছাড়া আল্লাহ হিদায়েত দেননা যেমন। মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন,

**وَالَّذِينَ جَاهَدُوا فِينَا لَنَهْدِيَنَّهُمْ سُبُلَنَا وَإِنَّ اللَّهَ لَمَعَ الْمُحْسِنِينَ*

অর্থঃ যারা আমার পথে সাধনায় আত্মনিয়োগ করে, আমি অবশ্যই তাদেরকে আমার পথে পরিচালিত করব। নিশ্চয় আল্লাহ সৎকর্মপরায়ণদের সাথে আছেন। [ সুরা আনকাবুত ২৯:৬৯]

দুনিয়ার ব্যাপার মহা আল্লাহ কোন জাতির অবস্থা আপনা আপনি পরিবর্তন করেন না। বরং তাদের চেষ্টা্ ফল আল্লাহ তাদের দান করেণ তার ইচ্ছা্নুযায়ী।মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন,

**لَهُ مُعَقِّبَاتٌ مِّن بَيْنِ يَدَيْهِ وَمِنْ خَلْفِهِ يَحْفَظُونَهُ مِنْ أَمْرِ اللّهِ إِنَّ اللّهَ لاَ يُغَيِّرُ مَا بِقَوْمٍ حَتَّى يُغَيِّرُواْ مَا بِأَنْفُسِهِمْ وَإِذَا أَرَادَ اللّهُ بِقَوْمٍ سُوءًا فَلاَ مَرَدَّ لَهُ وَمَا لَهُم مِّن دُونِهِ مِن وَالٍ**

অর্থঃ তাঁর পক্ষ থেকে অনুসরণকারী রয়েছে তাদের অগ্রে এবং পশ্চাতে, আল্লাহর নির্দেশে তারা ওদের হেফাযত করে। আল্লাহ কোন জাতির অবস্থা পরিবর্তন করেন না, যে পর্যন্ত না তারা তাদের নিজেদের অবস্থা পরিবর্তন করে। আল্লাহ যখন কোন জাতির উপর বিপদ চান, তখন তা রদ হওয়ার নয় এবং তিনি ব্যতীত তাদের কোন সাহায্যকারী নেই। [ সুরা রা’দ ১৩:১১ ]

এবভাবে যে কোন কাজের জন্য চেষ্টা করে যেতে হবে, হয়ত নিন্দুকের নিন্দা করবে। আর আমার সবর করতে হবে এটাই সবল অন্নেষণকারির কাজ। আল্লাহ তায়ালা বলেন,

يَـٰٓأَيُّہَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ مَن يَرۡتَدَّ مِنكُمۡ عَن دِينِهِۦ فَسَوۡفَ يَأۡتِى ٱللَّهُ بِقَوۡمٍ۬ يُحِبُّہُمۡ وَيُحِبُّونَهُ ۥۤ أَذِلَّةٍ عَلَى ٱلۡمُؤۡمِنِينَ أَعِزَّةٍ عَلَى ٱلۡكَـٰفِرِينَ يُجَـٰهِدُونَ فِى سَبِيلِ ٱللَّهِ وَلَا يَخَافُونَ لَوۡمَةَ لَآٮِٕمٍ۬‌ۚ ذَٲلِكَ فَضۡلُ ٱللَّهِ يُؤۡتِيهِ مَن يَشَآءُ‌ۚ وَٱللَّهُ وَٲسِعٌ عَلِيمٌ (٥٤)

 অর্থঃ হে ঈমানদারগণ! তোমাদের মধ্য থেকে কেউ যদি দীন থেকে ফিরে যায়, (তাহলে ফিরে যাক ), আল্লাহ এমনিতর আরো বহু লোক সৃষ্টি করে দেবেন, যাদেরকে আল্লাহ ভালবাসেন এবং তারা আল্লাহকে ভালবাসবে, যারা মুমিনদের ব্যাপারে কোমল ও কাফেরদের ব্যাপারে কঠোর হবে, যারা আল্লাহর পথে প্রচেষ্টা ও সাধনা করে যাবে এবং কোন নিন্দুকের নিন্দার ভয় করবেনা ৷  এটি আল্লাহর অনুগ্রহ, যাকে চান তাকে দান করেন৷ আল্লাহ ব্যাপক উপায় উপকরণের অধিকারী এবং তিনি সবকিছু জানেন৷ (সুরা মায়িদা ৫:৫৪)

সবর এমন একটি গুন যা শুধু নিয়তের দ্বারা হাছিল করা সম্ভর নয়। এর জন্য প্রয়োজন কঠর চেষ্টা সাধনা করা। আবূ সায়ীদ সা‘দ ইবনু মালিক ইবনু সিনান খুদরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত যে কিছু আনসারী আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে কিছু চাইলেন। তিনি তাদেরকে দিলেন। পুনরায় তারা দাবী করল। ফলে তিনি (আবার) তাদেরকে দিলেন। এমনকি যা কিছু তাঁর কাছে ছিল তা সব নিঃশেষ হয়ে গেল। অতঃপর যখন তিনি সমস্ত জিনিস নিজ হাতে দান করে দিলেন, তখন তিনি বললেন, ‘‘আমার কাছে যা কিছু (মাল) আসে তা আমি তোমাদেরকে না দিয়ে কখনই জমা করে রাখব না। (কিন্তু তোমরা একটি কথা মনে রাখবে) যে ব্যক্তি চাওয়া থেকে পবিত্র থাকার চেষ্টা করবে, আল্লাহ তাকে পবিত্র রাখবেন। আর যে ব্যক্তি (চাওয়া থেকে) অমুখাপেক্ষিতা অবলম্বন করবে, আল্লাহ তাকে অমুখাপেক্ষী করবেন। যে ব্যক্তি ধৈর্য ধারণ করার চেষ্টা করবে আল্লাহ তাকে ধৈর্য ধারণের ক্ষমতা প্রদান করবেন। আর কোন ব্যক্তিকে এমন কোন দান দেওয়া হয়নি, যা ধৈর্য অপেক্ষা উত্তম ও বিস্তর হতে পারে। (সহিহ বুখারী ১৪৬৯, ৬৪৭০, সহিহ মুসলিম ১০৫৩, তিরমিযী ২০২৪, নাসায়ী ২৫৮৮,  আহমাদ ১০৬০৬, মুওয়াত্তা মালিক ১৮৮০)

মন্তব্যঃ এই হাদিসে মাহান আল্লাহ সবর অর্জনের জন্য  চেষ্টার নির্দেশ দিচ্ছে।

আরেকটি হাদিস লক্ষ করিঃ

আবু সাইদ সা’দ ইবন মালিক ইবন সিনান খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী (সাঃ) বলেছেনঃ ‘’যে ব্যক্তি চাওয়া থেকে পবিত্র থাকার চেষ্টা করবে, আল্লাহ্ তাকে পবিত্র রাখবেন। আর যে ব্যক্তি (চাওয়া থেকে) অমুখাপেক্ষিতা অবলম্বন করবে, আল্লাহ্ তাকে অমুখাপেক্ষী করবেন। যে ব্যক্তি ধৈর্য ধারন করার চেষ্টা করবে আল্লাহ্ তাকে ধৈর্যধারণের ক্ষমতা প্রদান করবেন’। (সহিহ বুখারী ১৪৬৯, ৬৪৭০; মুসলিম ১০৫৩; তিরমিযি ২০২৪; নাসায়ী ২৫৮৮; রিয়াদুস সালিহীন ২৭)

মন্তব্যঃ এই হাদিসে সবর প্রদানের জন্য চেষ্টাকে শর্থ দেওয়া হয়েছে।

 

২২। অধিকতর বিপদগ্রস্ত ব্যক্তিদের দেখাঃ

 মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি হল, কোন কাজে উপমা খোজা, কার সাদৃশ্য অবলম্বন করা, তুলনা করা। যখন কোন বিপদ আসবে তখন নিজের বিপদকে অন্যের বিপদের সাথে তুলনা করে বিপদে সবর করা। যখন অন্যের বিপদ নিজের তুলনা অনেক বেশী দেখবে তখন সরব করা সহজ হবে। যেমনঃ

এক ব্যক্তি দরিদ্র ঠিকমত পোশাক আশাক পায়না আবার খেতে পায়না। অপর এক ব্যক্তি দরিদ্র বিকলাঙ্গ বা দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত ব্যক্তি সে ও ঠিকমত পোশাক আশাক পায়, খেতে পায়না। প্রথম ব্যক্তি যদি ভাবে আমি পোশাক আশাক ও নিয়মিত খাবার না পেলেও  বিকলাঙ্গ বা দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত নই। এই দুটি দোষ থেকে মুক্ত আছি মনে করলে সবরের সাথে সাথে সে শুকরিয়া আদায় করবে।

এক সস্তানহারা ব্যক্তি, অধিক সন্তানহারা ব্যক্তিকে দেখবে। সব সন্তানহারা ব্যক্তি, পরিবারহারা ব্যক্তিকে দেখবে। এক ছেলের মৃত্যু শোকে শোকাহত দম্পত্তি স্মরণ করবে নিরুদ্দেশ সন্তান শোকে কাতর দম্পত্তিকে। যারা স্বীয় সন্তান সর্ম্পকে কিছুই জানে না যে, জীবিত না মৃত।  তাহলে সবর করা সহজ হবে।

২৩। আল্লাহর রহমতের প্রসস্ততা ও করুণার ব্যাপকতার স্মরণঃ

  বিপদ-আপদ, বালা-মসিবত মানুষের নিত্য সঙ্গি। কেউ চাইলেও এ মসিবত থেকে রেহাই পাবেনা। কারন এর দ্বারআ মহান আল্লাহ তাকে পরীক্ষা করবেন। আর এক প্রকার বিপদ আসে বান্দার আমলের প্রতিফল স্বরূপ। এই দুই প্রকার বিপদই আল্লাহ তার বান্দাকে দান করেন যাবে বান্দা সবর কারে ভাল আমল করে। আল্লাহ মুমিনকে সঠিক পথে দেখাতে বা মর্জাদা বৃদ্ধির জন্য বিপদ দেন। তার রহমতের প্রসস্ততা ও করুনার কথা মনে করল তার দেয়া বিপদ কিছুই মনে হবেনা। কারন তার ক্রধ তার রহমহ অতিক্রম করতে পারে না। তাই বিপদে আল্লাহর রহমতও করুণার কথা স্মরণ করলে সবর করা সহজ হবে। তিনি খুবই দয়ালু ও করুনাময় তাই তার কাছে সাহায্য চাইলে তার রহমতের ভান্ডার খুলে যাবে এবং বান্দার  বিপদ কেটে যাবে। আল্লাহ রহমাত সম্পর্কে তিনি নিজেই বলেনঃ।

ٱلۡحَمۡدُ لِلَّهِ رَبِّ ٱلۡعَـٰلَمِينَ (٢) ٱلرَّحۡمَـٰنِ ٱلرَّحِيمِ (٣)

যাবতীয় প্রশংসা আল্লাহ তা’ আলার যিনি সকল সৃষ্টি জগতের পালনকর্তা। যিনি নিতান্ত মেহেরবান ও দয়ালু। [ সুরা ফাতিহা ১:২-৩ ]

 মন্তব্যঃ আল্লাহর রহমতের প্রসস্ততা ও করুণার ব্যাপকতার স্মরণ করল বিপদকে আর বিপদ মনে হবেনা। দুনিয়ার কোন প্রভাবশালী লোক কোন ব্যাপারে প্রতিশ্রুতি দিলে, আমরা সহজে বিশ্বাস করে কাজের লেগে যাই। আর মহান আল্লাহ নিজেই বলেছের আমি রহমান ও রহীম। সুতারং আল্লাহর রহমতও করুণার উপর নির্ভর করে সবর করতে হবে।

সংকলনেঃ মোহাম্মাদ ইস্রাফিল হোসাইন। (বিএ ইন আরবি সাহিত্য ও ইসলাম শিক্ষা)

Leave a comment