রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কবর যিয়ারতের ত্রুটিসমূহ দ্বিতীয় কিস্তি
সংকলনেঃ মোহাম্মাদ ইস্রাফিল হোসাইন
১৫। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওয়াসিলা দিয়ে দুয়া করাঃ
দোয়া করার ক্ষেত্রে ওয়াসিলা গ্রহন করা কখনও জায়েয আবার কখনও নাজায়েয। সহিহ হাদিসে দোয়ার জন্য ওয়াসিলা গ্রহনের নজির আছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওয়াসিলা দিয়ে দুয়া করা যাবে কি না, এ সম্পর্কে কিছু মতভেদ আছে তবে সঠিক কথা হলো, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওয়াসিলা দিয়ে দুয়া করা যাবে না।
বিষয়টি একটু ব্যাখ্যার দাবি রাখে। কেননা আমাদের ওয়াসিলা সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান না থাকার কারনে ভুল করে থাকি। আমাদের আলোচ্য বিষয় হলো, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অসীলা দিয়ে দুয়া করা যাবে কি না?
ওয়াসিলা একটি আরবি শব্দ যার আবিধানিক অর্থ হলো, উপায়, উপকরণ, ব্যবস্থা ও মাধ্যম যার দ্বারা কাংখিত লক্ষে পৌছা যায়। ওয়াসিলা শব্দটি নৈকট্য, সান্নিধ্য, ঘনিষ্টতা, সম্মান পজিশন ইত্যাদি অর্থেও ব্যবহৃত হয়। তবে আমাদের সমাজে প্রচলিত ওয়াসিলা বলতে বুঝান হয়, এমন মাধ্যম বা পন্থা বা পথ বা ব্যক্তি যার মাধ্যমে কাংখিত লক্ষে পৌছা যায়। কুরআন দুটি স্থানে মহান আল্লাহ ওয়াসিলা শব্দটি ব্যবহার করছেন। মহান আল্লাহ বলেন,
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُواْ اتَّقُواْ اللّهَ وَابْتَغُواْ إِلَيهِ الْوَسِيلَةَ وَجَاهِدُواْ فِي سَبِيلِهِ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ
অর্থঃ হে মুমিনগণ! আল্লাহকে ভয় কর, তাঁর নৈকট্য অন্বেষন কর এবং তাঁর পথে জেহাদ কর যাতে তোমরা সফলকাম হও। (সুরা মায়েদা ৫:৩৫)
মহান আল্লাহ বলেন,
أُولَـئِكَ الَّذِينَ يَدْعُونَ يَبْتَغُونَ إِلَى رَبِّهِمُ الْوَسِيلَةَ أَيُّهُمْ أَقْرَبُ وَيَرْجُونَ رَحْمَتَهُ وَيَخَافُونَ عَذَابَهُ إِنَّ عَذَابَ رَبِّكَ كَانَ مَحْذُورًا
অর্থঃ যাদেরকে তারা আহবান করে, তারা নিজেরাই তো তাদের পালনকর্তার নৈকট্য লাভের জন্য পথ তালাশ করে যে, তাদের মধ্যে কে নৈকট্যশীল। তারা তাঁর রহমতের আশা করে এবং তাঁর শাস্তিকে ভয় করে। নিশ্চয় আপনার পালনকর্তার শাস্তি ভয়াবহ। (সুরা বনী-ইসরাঈল ১৭:৫৭)
মন্তব্যঃ এই দুটি আয়াত দ্বারা ওয়াসিলা শব্দটি নৈকট্য, সান্নিধ্য, ঘনিষ্টতা, সম্মান পজিশন ইত্যাদি অর্থেও ব্যবহৃত হয়েছে এখানে মাধ্যম হিসাবে নেয়া যায় না।
আমাদের সমাজে ওয়াসিলার প্রচলিত অর্থ হলো মাধ্যম ধরা। পার্থিক কোন কাজ সম্মত হওয়া জন্য যেমন একজন কে ওয়াসিলা বা মাধ্যম ধরে কাজটি করে নেয়া হয়। এই অর্থে দোয়ার জন্য আল্লাহ বা বন্দার মাধ্যে মাধ্যম ঠিক করা শির্ক কাজ। মহান আল্লাহ বলেন,
وَقَالَ رَبُّكُمُ ادْعُونِي أَسْتَجِبْ لَكُمْ
অর্থঃ তোমাদের পালনকর্তা বলেন, তোমরা আমাকে ডাক, আমি সাড়া দেব। (সুরা মু’মিন ৪০:৬০)
আল্লাহ ও বান্দার মধ্যে মাধ্যম সাবস্থ্য না করে যদি নেক আলম, ঈমান বা আল্লাহ নাম ও তার গুনাবলীকে দোয়া কবুলের ওয়াসিলা হিসাবে গ্রহন কর হয় তবে তা জায়েয হবে।
ক। আল্লাহ ও রাসুলের প্রতি ঈমান আনার ওয়াসিলা দিয়া দোয়া করা
খ। নেক আমলের ওয়াসিলা দিয়া দোয়া করা
গ। আল্লাহ নাম ও তার গুনাবলী ওয়াসিলা দিয়া দোয়া করা
ঘ। নিজের অসহায় অবস্থার ওয়াসিলা দিয়া দোয়া করা
ঙ। জীবিত লোকদের নিকট দোয়া চাওয়া
ক। আল্লাহ ও রাসুলের প্রতি ঈমান আনার ওয়াসিলা দিয়া দোয়া করাঃ
আমরা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে সর্বশেষ রাসূল ও নবী হিসাবে ঈমান এনেছি এর অসীলা দীয়া দোয়া করা যাবে। মহান আল্লাহ তাআলা ঈমানের উসীলা দিয়ে দোয়া করার নিয়ম শিক্ষা দিতে গিয়ে বলেন,
﴿إِنَّ فِي خَلۡقِ ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلۡأَرۡضِ وَٱخۡتِلَٰفِ ٱلَّيۡلِ وَٱلنَّهَارِ لَأٓيَٰتٖ لِّأُوْلِي ٱلۡأَلۡبَٰبِ ١٩٠ ٱلَّذِينَ يَذۡكُرُونَ ٱللَّهَ قِيَٰمٗا وَقُعُودٗا وَعَلَىٰ جُنُوبِهِمۡ وَيَتَفَكَّرُونَ فِي خَلۡقِ ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلۡأَرۡضِ رَبَّنَا مَا خَلَقۡتَ هَٰذَا بَٰطِلٗا سُبۡحَٰنَكَ فَقِنَا عَذَابَ ٱلنَّارِ ١٩١ رَبَّنَآ إِنَّكَ مَن تُدۡخِلِ ٱلنَّارَ فَقَدۡ أَخۡزَيۡتَهُۥۖ وَمَا لِلظَّٰلِمِينَ مِنۡ أَنصَارٖ ١٩٢ رَّبَّنَآ إِنَّنَا سَمِعۡنَا مُنَادِيٗا يُنَادِي لِلۡإِيمَٰنِ أَنۡ ءَامِنُواْ بِرَبِّكُمۡ فََٔامَنَّاۚ رَبَّنَا فَٱغۡفِرۡ لَنَا ذُنُوبَنَا وَكَفِّرۡ عَنَّا سَئَِّاتِنَا وَتَوَفَّنَا مَعَ ٱلۡأَبۡرَارِ ١٩٣﴾
অর্থঃ “নিশ্চয় আসমান ও জমিন সৃষ্টিতে এবং রাত্রি ও দিনের আবর্তনে নিদর্শন রয়েছে বোধসম্পন্ন লোকদের জন্যে। যারা দাঁড়িয়ে, বসে ও শায়িত অবস্থায় আল্লাহকে স্মরণ করে এবং চিন্তা-গবেষণা করে আসমান ও জমিন সৃষ্টির বিষয়ে (তারা বলে) হে আমাদের প্রতিপালক! এসব তুমি অনর্থক সৃষ্টি করোনি। সকল পবিত্রতা তোমারই, আমাদেরকে তুমি দোযখের শাস্তি থেকে বাঁচাও। হে আমাদের রব! নিশ্চয় তুমি যাকে জাহান্নমে নিক্ষেপ করলে তাকে অপমানিত করলে, আর যালেমদের জন্যে তো কোনো সাহায্যকারী নেই। হে আমাদের রব! আমরা নিশ্চিতরূপে শুনেছি একজন আহ্বানকারীকে ঈমানের প্রতি আহ্বান করতে যে, তোমাদের রবের প্রতি ঈমান আন, তাই আমরা ঈমান এনেছি। হে আমাদের রব! অতঃপর আমাদের সকল গুনাহ ক্ষমা কর এবং আমাদের সকল দোষ-ত্রুটি দূর করে দাও, আর আমাদের মৃত্যু দাও নেক লোকদের সাথে।” (সুরা ইমরান ৩:১৯০-১৯৩)
খ। নেক আমলের ওয়াসিলা দিয়া দোয়া করাঃ
দোয়ার ক্ষেত্রে ওয়াসিলা কে দোয়া কবুলের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ মনে করা হয়। সাধারণত কিছু আমল করার পরই দোয়া করে থাকি। দোয়ার পূর্বে আমল না করলেও অন্তত কিছু সময় দুরুদ ও কুরআন তিলওয়াত করে থাকি। অতপর দোয়া শুরু করার পর আমরা এই সকল নেক আমলের ওয়াসিলা দিয়ে দোয়া করি। এইভাবে নেক আমলের ওয়াসিলা দ্বারা দোয়া করা সুন্নাহ সম্মত আমল।
গ। আল্লাহ নাম ও তার গুনাবলী ওয়াসিলা দিয়া দোয়া করাঃ
নেক আমলের পাশাপাশি আল্লাহর গুণবাচক নামগুলোর ওয়াসিলা দিয়ে দোয়া করা যাবে। আবূ বাকর সিদ্দীক (রাযি.) হতে বর্ণিত। একদা তিনি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট আরয করলেন, আমাকে সালাতে পাঠ করার জন্য একটি দু‘আ শিখিয়ে দিন। তিনি বললেন, এ দু‘আটি বলবে-
اللَّهُمَّ إِنِّي ظَلَمْتُ نَفْسِي ظُلْمًا كَثِيرًا وَلاَ يَغْفِرُ الذُّنُوبَ إِلاَّ أَنْتَ فَاغْفِرْ لِي مَغْفِرَةً مِنْ عِنْدِكَ وَارْحَمْنِي إِنَّك أَنْتَ الْغَفُورُ الرَّحِيمُ
‘‘হে আল্লাহ্! আমি নিজের উপর অধিক জুলুম করেছি। আপনি ছাড়া সে অপরাধ ক্ষমা করার আর কেউ নেই। আপনার পক্ষ হতে আমাকে তা ক্ষমা করে দিন এবং আমার উপর রহমত বর্ষণ করুন। নিশ্চয়ই আপনি ক্ষমাশীল ও দয়াবান।’’ (সহিহ বুখারী ৭৯৫ ইফাঃ)
মন্তব্যঃ এখানে আল্লাহর দু’টি নাম, ‘গাফূর’ এবং ‘রাহীম’ এর মাধ্যমে আল্লাহর কাছে ক্ষমা ও রহমত কামনা করা হয়েছে। এমনিভাবে আল্লাহর নামের পাশাপাশি তার গুণাবলীর মাধ্যমে উসীলা গ্রহণ করা যাবে।
ঘ। নিজের অসহায় অবস্থার ওয়াসিলা দিয়া দোয়া করাঃ
নিজের অবস্থা আল্লাহর কাছে তুলে ধরে তার ওয়াসিলা দিয়ে দোয়া করা যায়। অর্থাৎ দোয়াকারী যে অবস্থায় রয়েছে, তা আল্লাহর কাছে তুলে ধরবে। যেমন, মূসা আলাইহিস সালাম বলেছিলেন,
﴿رَبِّ إِنِّي لِمَآ أَنزَلۡتَ إِلَيَّ مِنۡ خَيۡرٖ فَقِيرٞ﴾
অর্থঃ হে আমার রব! তুমি আমার প্রতি যে অনুগ্রহ নাযিল করবে, আমি তার মুখাপেক্ষী। (সূরা কাসাস ২৪)
যাকারিয়া আলাইহিস সালাম নিজের দুর্বলতাকে তুলে ধরে উসীলা দিয়েছেন। আল্লাহ তার কথা উল্লেখ করে বলেন,
﴿قَالَ رَبِّ إِنِّي وَهَنَ ٱلۡعَظۡمُ مِنِّي وَٱشۡتَعَلَ ٱلرَّأۡسُ شَيۡبٗا وَلَمۡ أَكُنۢ بِدُعَآئِكَ رَبِّ شَقِيّٗا ٤﴾
অর্থঃ তিনি বললেন, হে আমার রব! আমার অস্থি বয়স-ভারাবনত হয়েছে, বার্ধক্যে মস্তক সুশুভ্র হয়েছে, হে আমার রব আপনাকে ডেকে আমি কখনো বিফল মনোরথ হইনি।” (সূরা মারইয়াম ৪)
ঙ। জীবিত লোকদের নিকট দোয়া চাওয়াঃ
জীবিত সৎকর্মশীলদের ওয়াসিলার দ্বারা দোয়া করা যাবে। সাহাবীগণ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে দোয়া চাইতেন।
দলিলঃ
১. আনাস ইব্নু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক ব্যক্তি আল্লাহ্র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট এসে বলল, হে আল্লাহ্র রসূল! পশুগুলো মারা যাচ্ছে, এবং রাস্তাগুলো বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। কাজেই আপনি আল্লাহ্র নিকট দু‘আ করুন। তখন আল্লাহ্র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দু‘আ করলেন। ফলে সে জুমু‘আ হতে পরবর্তী জুমু‘আ পর্যন্ত তাদের উপর বৃষ্টি বর্ষিত হতে থাকল। অতঃপর এক ব্যক্তি আল্লাহ্র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট এসে বলল, হে আল্লাহ্র রসূল! ঘরবাড়ি ধ্বসে পড়েছে, রাস্তাঘাট বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছে এবং পশুগুলোও মরে যাচ্ছে। আল্লাহ্র রসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম তখন বললেনঃ হে আল্লাহ্! পাহাড়ের চূড়ায়, টিলায়, উপত্যকায় এবং বনভূমিতে বৃষ্টি বর্ষণকরুন। অতঃপর মদীনার আকাশ হতে মেঘ সরে গেল, যেমন কাপড় ছিঁড়ে ফাঁক হয়ে যায়। (সহিহ বুখারি ১০১৭)
২. ইমরান (রাঃ) থেকে বর্ণিত, আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, আমার উম্মাতের সত্তর হাজার লোক বিনা হিসেবে জান্নাতে প্রবেশ করবে। লোকেরা জিজ্ঞেস করলো, তারা কারা, হে আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম? তিনি বললেনঃ যারা ক্ষতস্থানে লোহা পুড়ে লাগায় না এবং (জাহিলী যুগের ন্যায়) ঝাড়ফুঁক বা মন্ত্রের দ্বারা চিকিৎসা কামনা করে না বরং তারা আল্লাহর উপর পূর্ণ তাওয়াক্কুল করে। এ সময় ‘উক্কাশাহ্ (রাঃ) উঠে দাঁড়িয়ে বললেন, আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করুন, তিনি যেন আমাকে তাদের অন্তর্ভুক্ত করেন। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তুমিও তাদের অন্তর্ভুক্ত। বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর আর এক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে বলল, হে আল্লাহর নাবী! আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করুন, তিনি আমাকেও যেন তাদের অন্তর্ভুক্ত করেন। উত্তরে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ ‘উক্কাশাহ্ তোমার আগেই সে দলভুক্ত হয়ে গেছে। (সহিহ মুসলিম ৪১২)
মন্তব্যঃ এই সকল সহিহ হাদিসের আলোকে জানা যায় কোন বিষয়ে ভালো নেকাআর মুসলিমের নিকটি দোয়া চাওয়া যায়। এই জীবিত লোকদের নিকট দোয়া চাওয়া ও কবুলের আশা করা যায়। কাজেউ জীবিত লোকদের ওয়াসিলা গ্রহন করা যায়।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ওয়াসিলা কেন অবৈধঃ
উপরের আলোচনায় দেখলাম শরীয়ত সম্মত ওয়াসিলা জায়েয। কিন্তু ইহার বাহিরে ও নাজায়েয ওয়াসিলা আছে। যেমনঃ মৃত ব্যক্তির কাছে দোয়া চাওয়ার মাধ্যমে উসীলা গ্রহণ করা। মানুষ মৃত্যু বরণের সাথে সাথে তার আমর বন্ধ হয়ে যায়। সে আর জীবিত লোক কোন উপকার বা অপকার করার ক্ষমতা রাখেনা না। জীবিতেদের জন্য তাদের কোন সুপারিস গ্রহন করা হয় না। তারা বারজাকি জীবনের সাথে পার্থিব জীবন সম্পর্কহীন হয়ে যায়। সুতারং মৃত ব্যক্তির নিকট চাওয়া বা তার সাহায্য কামন করা শির্ক কাজ। তার সুপারিশে দোয়া কবুলের আশা করাও শির্ক কাজ।
যদি আমরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কবরের নিকট গিয়ে তার উপর দুরুদ পড়ি, তাকে সালাম দেই, তাই জন্য মহান আল্লাহর নিকট দোয়া চাই। এই সবই শরীয়ত সম্মত আমল। কিন্তু যদি তার কবরের নিকট গিয়ে তার সাহায্য চাই, তার ওয়াসিলা দ্বারা দোয়া কবুলের জন্য সুপারিশ চাই তবে জায়েয হবে না। কেননা, সাহাবিগন তার জীবন দসায় তার নিকট দোয়া চাইলেও তার মৃত্যুর পর তার কবরের পাশে বসে অন্য সাহাবিদের দ্বারা দোয়া করালেও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ওয়াসিলা দ্বারা দোয়া করেন নাই।
দলিলঃ
আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, উমর ইবনু খাত্তাব (রাঃ) অনাবৃষ্টির সময় ‘আব্বাস ইবনু আব্দুল মুত্তালিব সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর ওয়াসীলাহ দিয়ে বৃষ্টির জন্য দু’আ করতেন এবং বলতেন, হে আল্লাহ! (আগে) আমরা আমাদের নাবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর ওয়াসীলাহ দিয়ে দু’আ করতাম এবং আপনি বৃষ্টি দান করতেন। এখন আমরা আমাদের নাবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর চাচার ওয়াসীলাহ দিয়ে দু’আ করছি , আপনি আমাদে্রকে বৃষ্টি দান করুন। এর ফলে বৃষ্টি বর্ষিত হত। এর ফলে বৃষ্টি বর্ষণ হতো। (সহিহ বুখারি ১০১০ , ২৭১০)
মন্তব্যঃ কাজেই মৃত্যু ব্যক্তির ওয়াসিলা দ্বারা দোয়া করা বিবেক এবং শরী‘আত সম্মত নয়। কেননা মানুষ যখন মারা যায়, তার আমলের দরজা বন্ধ হয়ে যায়। কোনো মৃত ব্যক্তির পক্ষে কারও জন্য দোয়া করা সম্ভব নয়। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পক্ষেও মারা যাওয়ার পর কারও জন্য দোয়া করা সম্ভব নয়। তাই সাহাবীগণ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মৃত্যুর পর তাঁর কাছে এসে দোয়া চান নি। অনুরূপভাবে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সম্মানের উসীলা দেওয়াও জায়েয নেই। কারণ, আল্লাহর কাছে তাঁর সম্মান থাকা দোয়া জন্য কোনো উপকারে আসবে না। দোয়াকারীর জন্য এমন বিষয়ের উসীলা দেওয়া উচিৎ, যা তার কাজে আসবে। সুতরাং এভাবে বলা উচিৎ যে, হে আল্লাহ! আপনার প্রতি এবং আপনার রাসূলের প্রতি আমার ঈমান আনয়নের বিনিময়ে আমাকে ক্ষমা করুন। এ জাতীয় অন্যান্য শরী‘আত সম্মত বিষয়ের উসীলা দেওয়া বৈধ।
১৬। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে সুপারিশ চাওয়াঃ
আমাদের সব কিছুর মালিক একমাত্র আল্লাহ। তাই সৃষ্টির নিকট কোন কিছু চাওয়া হলো শির্ক কাজ। কিয়ামতের দিন মহান আল্লাহ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে সুপারিশ করার ক্ষমতা প্রদান করবেন। এর মান এই নয় যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যাকে ইচ্ছা তাকে সুপারিশ করতে পারবেন। মনে রাখতে হবে সুপারিশ কাকে করতে হবে, কে করবে, তা নির্ধারণের একমাত্র মালিক আল্লাহ। মহান আল্লাহ তায়ালাই হল শাফাআতের একমাত্র মালিক। তিনিই একচ্ছন্ন শাফাআতের অধিকারি। তিনি ছাড়া কঠিন হাসরের ময়দানে কেউ শাফাআত করতে পারবেন না। সর্বপ্রকার শাফাআতের চাবিকাঠি একমাত্র তাঁরই হাতে। কোন কারো সুপারিশ গ্রহণ করানোর ক্ষমতা তো দূরের কথা নিজে নিজেই আল্লাহর দরবারে সুপারিশকারী হিসেবে যাবে সে শক্তিও করো নেই। আল্লাহ তাআলা বলেন,
قُل لِّلَّهِ ٱلشَّفَـٰعَةُ جَمِيعً۬اۖ لَّهُ ۥ مُلۡكُ ٱلسَّمَـٰوَٲتِ وَٱلۡأَرۡضِۖ ثُمَّ إِلَيۡهِ تُرۡجَعُونَ (٤٤)
অর্থঃ বলো, সুপারিশ সম্পূর্ণরূপে আল্লাহর ইখতিয়ারাধীন৷ আসমান ও যমীনের বাদশাহীর মালিক তিনিই৷ তোমাদেরকে তারই দিকে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে৷ ( সূরা যুমার ৩৯:৪৪)
আল্লাহ তাআলা আরও বলেন,
ٱللَّهُ ٱلَّذِى خَلَقَ ٱلسَّمَـٰوَٲتِ وَٱلۡأَرۡضَ وَمَا بَيۡنَهُمَا فِى سِتَّةِ أَيَّامٍ۬ ثُمَّ ٱسۡتَوَىٰ عَلَى ٱلۡعَرۡشِۖ مَا لَكُم مِّن دُونِهِۦ مِن وَلِىٍّ۬ وَلَا شَفِيعٍۚ أَفَلَا تَتَذَكَّرُونَ (٤)
অর্থঃ আল্লাহই আকাশ মণ্ডলী ও পৃথিবী এবং এদের মাঝখানে যা কিছু আছে সব সৃষ্টি করেছেন ছয় দিনে এবং এরপর আরশে সমাসীন হয়েছেন ৷ তিনি ছাড়া তোমাদের কোন সাহায্যকারী নেই এবং নেই তার সামনে সুপারিশকারী, তারপরও কি তোমরা সচেতন হবে না। (সূরা সাজদাহ ৩২:৪)।
আখিরাতের সেই ভয়াবহ বিপদের মূহূর্ত মহান আল্লাহর অনুমতি ব্যতিত কেউ শাফাআত করতে পারবে না। তিনি যাকে ইচ্ছা সুপারিশের অনুমতি দেবেন। আবার ইচ্ছা করলে না ও দিতে পারেন। ইহা সম্পূর্ণ রূপে তার ইখাতিয়ার ভূক্ত। এক শ্রেণীর মুশরীকেরা চিন্তা করে থাকেন যে, আল্লাহর প্রিয় ব্যক্তিবর্গ, নবীগন রাসুলগন, ফেরেশস্তাগর বা অন্যান্য সত্তা আল্লাহর নিকট শাফাআত করে তাদের জান্নাত দিবেন বা আল্লাহর নিকট তাদের বিরাট প্রতিপত্তি আছে। তাই তারা আল্লাহর কাছ থেকে তারা যে কোন কার্যোদ্ধার করতে সক্ষম। তারা যে কথার ওপর অটল থাকে, তা তারা আদায় করেই ছাড়ে। এভাবেই শাফাআতের লোভে শির্কি কাজে জড়িয়ে পরে। অথচ শ্রেষ্ঠতম পয়গম্বর এবং কোন নিকটতম ফেরেশতাও এই পৃথিবী ও আকাশের মালিকের দরবারে বিনা অনুমতিতে একটি শব্দও উচ্চারণ করার সাহস রাখে না। তবে মনে রাখতে হবে শাফায়াতে দুটি শর্থ আছে।
১। মহান আল্লাহ তাআলার অনুমতি
২। ঈমানদার হতে হবে (তার প্রতি আল্লাহর সন্তুষ্টি থাকা)
ক। শাফাআতের জন্য মহান আল্লাহ তাআলার অনুমতি প্রয়োজনঃ
মহান তাআলা বলেছেন,
مَا فِى ٱلسَّمَـٰوَٲتِ وَمَا فِى ٱلۡأَرۡضِۗ مَن ذَا ٱلَّذِى يَشۡفَعُ عِندَهُ ۥۤ إِلَّا بِإِذۡنِهِۦۚ
অর্থঃ পৃথিবী ও আকাশে যা কিছু আছে সবই তার৷ কে আছে তাঁর অনুমতি ছাড়া তাঁর কাছে সুপারিশ করবে? (সূরা বাক্বারা ২:২৫৫)।
মহান তাআলা বলেছেন,
إِنَّ رَبَّكُمُ ٱللَّهُ ٱلَّذِى خَلَقَ ٱلسَّمَـٰوَٲتِ وَٱلۡأَرۡضَ فِى سِتَّةِ أَيَّامٍ۬ ثُمَّ ٱسۡتَوَىٰ عَلَى ٱلۡعَرۡشِۖ يُدَبِّرُ ٱلۡأَمۡرَۖ مَا مِن شَفِيعٍ إِلَّا مِنۢ بَعۡدِ إِذۡنِهِۦۚ ذَٲلِڪُمُ ٱللَّهُ رَبُّڪُمۡ فَٱعۡبُدُوهُۚ أَفَلَا تَذَكَّرُونَ (٣)
অর্থঃ কোন শাফায়াতকারী (সুপারিশকারী ) এমন নেই, যে তার অনুমতি ছাড়া শাফায়াত করতে পারে৷ এ আল্লাহই হচ্ছেন তোমাদের রব৷ কাজেই তোমরা তারই ইবাদত করো৷ এরপরও কি তোমাদের চৈতন্য হবে না। (ইউনুস ১০:১০৩)।
এতে স্পষ্ট যে, সুপারিশকারীকে অবশ্যই সুপারিশের অনুমতি প্রাপ্ত হতে হবে। অর্থাৎ বিনা অনুমতিতে সুপারিশ করার কেউ নেই। সুপারিশ স্বেচ্ছামূলক নয়, বরং তা হবে অনুমতি ক্রমে।
আখিরাতে কেউ যখন শাফাআত করার সাহস করতে পারবে না। তখন আমাদের প্রিয় বিশ্বনবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামই প্রথম শাফাআতের অনুমতি পাবেন বলে আশা করা যায়। অতপর, আমাদের নবীজির সাথে অন্যান্যরা শাফায়েত করবেন। যেমনঃ নবীগণ, ফেরেশতাগণ, সিদ্দীকগণ, শহীদগণ, নেককার বান্দাগণ সকলেই শাফাআত করবেন, অবশ্য আল্লাহর অনুমতিক্রমে।
খ। ঈমানদার হতে হবেঃ
নবীগণ, ফেরেশতাগণ, সিদ্দীকগণ, শহীদগণ, নেককার বান্দাগণ সকলেই শাফাআত করবেন কিন্তু তাদের শাফাআত প্রাপ্তির প্রধান উপকরন হল ঈমান ও কুরআন সুন্নাহ ভিত্তিক নেক আমল যা করলে তিনি সন্তুষ্টি থাকবেন। যদি মনে করে থাকি আত্মিয়তার সম্পর্ক তবে মারাত্ত্বক ভুল করবেন। মনে রাখবেন শাফায়াত প্রাপ্তির জন্য শর্থ হল ঈমান। আল্লাহর নিকট অপ্রিয় (মুসরিক) এমন কারো জন্য কোন সুপারিশ চলবে না। কোরআনে বর্ণিত আছে, মহা প্লাবনের সময় আল্লাহর প্রেরিত নবী নূহ আলাইহিস সালাম তার ছেলে কেনানকে আযাব হতে রক্ষা করার ব্যাপারে সুপারিশ করে ছিলেন আল্লাহ তা গ্রহণ করেননি। পিতা আজরের জন্যে ইবরাহীম আলাইহিস সালামের ক্ষমা করে দেয়ার সুপারিশ গ্রহণ করেননি। এমনকি মুনাফিকদের ব্যাপারে নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আল্লাহ তাআলার বলেছেন।
ٱسۡتَغۡفِرۡ لَهُمۡ أَوۡ لَا تَسۡتَغۡفِرۡ لَهُمۡ إِن تَسۡتَغۡفِرۡ لَهُمۡ سَبۡعِينَ مَرَّةً۬ فَلَن يَغۡفِرَ ٱللَّهُ لَهُمۡۚ ذَٲلِكَ بِأَنَّہُمۡ ڪَفَرُواْ بِٱللَّهِ وَرَسُولِهِۦۗ وَٱللَّهُ لَا يَہۡدِى ٱلۡقَوۡمَ ٱلۡفَـٰسِقِينَ (٨٠)
অর্থঃ হে নবী! তুমি তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা কর, অথবা তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা না কর। যদি তুমি তাদের জন্য সত্তর বারও ক্ষমা প্রার্থনা কর তথাপিও আল্লাহ তাদেরকে কখনো ক্ষমা করবেন না। (সূরা তাওবা ৯:৮০)।
আল্লাহ তাআলা বলেছেন,
يَعۡلَمُ مَا بَيۡنَ أَيۡدِيہِمۡ وَمَا خَلۡفَهُمۡ وَلَا يَشۡفَعُونَ إِلَّا لِمَنِ ٱرۡتَضَىٰ وَهُم مِّنۡ خَشۡيَتِهِۦ مُشۡفِقُونَ (٢٨)
অর্থঃ যাকিছু তাদের সামনে আছে এবং যাকিছু আছে তাদের অগোচরে সবই তিনি জানেন৷ যাদের পক্ষে সুপারিশ শুনতে আল্লাহ সম্মত, তাদের পক্ষে ছাড়া আর কারো সুপারিশ তারা করে না। এবং তারা তার ভয়ে ভীত৷ (সূরা আম্বিয়া ২১:২৮)।
এ জন্যই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বীয় আদরের কন্যা কলিজার টুকরা ফাতিমা রাদিয়াল্লাহু আনহাকে নিজের আমল সম্পর্কে সতর্ক করছেন।
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যখন এ মর্মে আয়াত অবতীর্ণ হলো (অর্থ) “তোমার নিকটাত্মীয়বর্গকে সতর্ক করে দাও”। (সূরা শু’আরা ২৬:২১৪)। তখন রসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, হে কুরায়শগণ! আল্লাহর (‘আযাব) থেকে তোমরা নিজেদের কিনে নাও (বাঁচাও)। আল্লাহর (‘আযাব) থেকে তোমাদের রক্ষা করার কোন ক্ষমতা আমার নেই। ওহে ‘আবদুল মুত্তালিব-এর বংশধর! তোমাদের আমি রক্ষা করতে পারব না। হে ‘আব্বাস ইবনু ‘আবদুল মুত্তালিব! তোমাকেও আমি রক্ষা কতে পারব না। হে সাফিয়্যাহ্ রসূলুল্লাহ্র ফুপু আমি আল্লাহর (‘আযাব) থেকে তোমার কোন উপকার করতে পারব না। হে রসূলুল্লাহ্র কন্যা ফাতিমাহ্! তোমার যা ইচ্ছা চাও। আল্লাহর (‘আযাব) থেকে আমি তোমাকে রক্ষা করতে পারবো না। (সহিহ মুসলিম ৩৯২)
এখানে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কর্তৃক নিজ মেয়েকে মুহাম্মদের মেয়ে বলে সম্বোধন করাটা সবিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। এতে বুঝানো হয়েছে যে, আল্লাহর কাছে কারো গ্রহণ যোগ্যতা তার পিতৃ বা বংশ পরিচয়ের নিক্তিতে হবে না, হবে নিজ নিজ ঈমান, আমলের মূল্য ও মানের ভিত্তিতে।
এতে প্রতীয়মান হচ্ছে যে, সুপারিশ তারাই পাবেন যারা আল্লাহর প্রিয়জন হবেন। বস্তুতপক্ষে যখন সমস্ত শাফাআত একমাত্র আল্লাহরই জন্য সংরক্ষিত এবং তা আল্লাহর অনুমতি সাপেক্ষ। আর নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বা অন্য কেউ আল্লাহর অনুমতি ব্যতীত কারো জন্য শাফাআত করতে সক্ষম হবেন না। আল্লাহর অনুমতি একমাত্র একনিষ্ঠ তাওহীদবাদীদের জন্যই নির্দিষ্ট।
আখিরাতে মহান আল্লাহর অনুমতিক্রমে যারা শাফাআত করবেন তারা হচ্ছেন, নবীগণ, ফিরিশতাগন, শহীদগণ, আলেম ওলামাগণ, হাফেজে কোরআন, নাবালগ সন্তান, সাওম এবং কুরআন। তাদের শাফাআত কোরআন-হাদীসের অকাট্য প্রমাণাদি দ্বারা প্রমানিত। তাদের মধ্যে শাফাআতকারীদের সর্দার হলেন বিশ্বনবী মুহাম্মদ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ।
দলিলঃ
১. আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহ ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমি আদম সন্তানের নেতা এবং আমাকেই সর্বপ্রথম কবর হতে উঠানো হবে এবং আমিই সর্বপ্রথম সুপারিশকারীহবো এবং সর্বপ্রথম আমার সুপারিশ গ্রহণ করা হবে। (আবু দাউদ ৪৬৭০ সহিহ মুসলিম ৫৮৩৪)
২. আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইরশাদ করেন, জান্নাতে লোকদের প্রবেশ সম্পর্কে আমিই হবো সর্বপ্রথম সুপারিশকারীএবং এত অধিক সংখ্যক মানুষ আমার প্রতি ঈমান এনেছে যা অন্য কোন নাবীর বেলায় হবে না। নাবীদের কেউ কেউ তো এমতাবস্থায়ও আসবেন যাঁর প্রতি মাত্র এক ব্যক্তিই ঈমান এনেছে। সহিহ মুসলিম ৩৭৩)
৩. আবূ উমামা বাহেলী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন, “তোমরা কুরআন পড়ো, কারণ তা কিয়ামতের দিন তার পাঠকের জন্য সুপারিশকারী হয়ে আগমন করবে।” (সহিহ মুসলিম ৮০৪)
৪. নিমরান ইবনু ‘উতবাহ আয-যামারী (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, আমরা কতক ইয়াতীম উম্মুদ দারদা (রাঃ) এর কাছে প্রবেশ করলাম। তিনি আমাদের বললেন, তোমরা সুসংবাদ গ্রহন করো। কেননা আমি আবূ দারদা (রাঃ) কে বলতে শুনেছি, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ শহীদ তার পরিবারের সত্তর জনেরজন্য শাফা’আত করবে এবং তার সুপারিশ কবুল করা হবে। (আবু দাউদ ২৫২২)
৫. আতা ইব্ন ইয়াযীদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, আমি আবূ হুরায়রা (রাঃ) এবং আবূ সাঈদ (রা)-এর নিকট উপবিষ্ট ছিলাম। তাঁদের একজন শাফাআতের হাদীস বর্ণনা করলেন, আর অন্যজন ছিলেন নিশ্চুপ। তিনি বলেন, তারপর ফেরেশতা এসে সুপারিশ করবেন এবং রাসূলগণ সুপারিশ করবেন, তারপর তিনি পুলসিরাতের উল্লেখ করে বললেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যাদের অনুমতি দেয়া হবে তাঁদের মধ্যে আমি-ই হবো প্রথম। তারপর যখন আল্লাহ্ তা‘আলা তাঁর সৃষ্টির বিচারকার্য থেকে অবসর গ্রহণ করবেন এবং দোযখ থেকে যাকে বের করতে ইচ্ছা করবেন তাকে বের করবেন। আল্লাহ তা‘আলা ফেরেশতা ও রাসূলগণকে আদেশ করবেন সুপারিশ করার জন্য। তখন তাঁরা তাদের চিহ্ন দ্বারা চিনে নিবেন যে, আদম সন্তানের সিজদার স্থান ব্যতীত আর সব কিছুই আগুন জ্বালিয়ে ফেলেছে। তারপর তাদের উপর ‘আবে হায়াত’ ঢেলে দেয়া হবে। তখন তারা নবজীবন লাভ করবে যেরুপ স্রোতের ধারে বীজ গজিয়ে ওঠে। (সুনানে নাসাঈ ১১৪০)
৬. রাসুল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেছেন, তিন শ্রেণীর লোক কিয়ামতের দিন সুপারিশ করবেন, নবী-রাসূরগণ, আলেম-ওলামা ও শহীদগণ”। (ইবনু মাজাহ, বাইহাকী ও বাজ্জার)
খ। ঈমানদার হতে হবেঃ
কিয়ামত দিবসে অনুষ্ঠিত শাফাআত থেকে বঞ্চিত হবে যারা প্রকাশ্য শিরক ও কুফরীর গুনাহে লিপ্ত ছিল এবং এরই উপর মৃত্যুবরণ করেছে। তাদের সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন,
إِنَّ ٱلَّذِينَ كَفَرُواْ مِنۡ أَهۡلِ ٱلۡكِتَـٰبِ وَٱلۡمُشۡرِكِينَ فِى نَارِ جَهَنَّمَ خَـٰلِدِينَ فِيہَآ
অর্থঃ আহলে কিতাবের মধ্যে যারা কাফের এবং যারা মুশরিক, তারা জাহান্নামের আগুনে স্থায়ী ভাবে থাকবে। তারাই সৃষ্টির অধম। (সূরা বায়্যিনাহ : ৬)
মহান আল্লাহ বলেন,
أَفَمَنۡ حَقَّ عَلَيۡهِ كَلِمَةُ ٱلۡعَذَابِ أَفَأَنتَ تُنقِذُ مَن فِى ٱلنَّارِ (١٩)
অর্থঃ হে নবী, সে ব্যক্তিকে কে বাঁচাতে পারে যার উপর আযাবের ফয়সালা হয়ে গেছ, তুমি কি তাকে বাঁচাতে পার যে জাহান্নামে রয়েছে? (সূরা যুমার ৩৯:১৯)।
এতে বুঝা গেল, এ সব জাহান্নামীদের জন্য কোন শাফাআতকারী নেই। নেই কোন রক্ষাকারী। তাদের ব্যাপারে কোন শাফাআত গ্রহণও করা হবে না। কারণ, তারা ঈমানশূন্য। অনেক পীরকে বলতে শুনা যায়, আখেরাতে তারা তাদের মুরিদকে ফেলে জান্নাতে যাবে না। কেমন হাস্যকর, যেখানে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বয়ং নিজের কলিজার টুকরার জিম্মাদারী নিতে পারলেন না। অথচ পীর সাহেব মুরিদদের জিম্মাদারী নিচ্ছেন। তবে মনে রাখতে হবে অলীদের শাফায়াত সত্য কিন্তু নিশ্চত নয় বা ইচ্ছাধিন। কারন ইহাতে আল্লাহকে বাধ্য করা হয় যা চুড়ান্তভাবে অন্যায়। আর যদি কেউ গাইরুল্লাহ তথা আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো কাছে শাফাআতের দু’আ বা প্রার্থনা করে তবে দাও শির্ক হবে। কারণ, দু’আ ইবাদত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “দুয়ই ইবাদত’। (তিরমিযী)। আর ইবাদত একমাত্র আল্লাহর জন্যই নির্দিষ্ট। ইবাদতে তাঁর আর কোন শরীক নেই। আর শির্ক হচ্ছে, গাইরুল্লাহকে ইবাদতে অংশীদার করার নাম।
মন্তব্যঃ এই জন্য শাফায়েতের জন্য মহান আল্লাহর নিকট দোয়া করতে হবে। তিনি যাকে ইচ্ছা তাকে শাফায়াত করারা অনুমতি দিবেন। তাই শাফায়াতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চাইলে শির্ক হবে চাইতে হবে মহান আল্লাহ নিকট। তবে এইভাবে বলা যায়, হে আল্লাহ আমি কুরআন সুন্নাহর আলোকে জানতে পেরেছি তোমার প্রিয় বান্দা মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিয়ামতে দিন তোমার অনুমতি ক্রমে বহু মুসলিমকে সুপারিশ করে জাহান্নাম থেকে জান্নাতে নিয় যাবে তুমি তাদের মধ্য আমাকেও সামিল করে দিও। আর যদি বলি হে রাসূলুল্লাহ! কিমায়তের কঠিন ময়দানে আপনি আমাকে শাফায়েক করবেন। তাহলে শির্ক কাজ হয়ে যাবে। কেননা আপনি আল্লাহ পরিবর্তে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সুপারিশ চাইলেন।
১৭। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের অবস্থা জানেনঃ
মদিনা কবর যিয়ারত গিয়ে কবরের সামনে দাড়িয়ে যদি ভাবেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের অবস্থা জানেন, আমাদের দেখছেন এবং আমাদের ফরিয়াদ শুনে মহান আল্লাহ নিকট সুপারিশও করছেন তবে সুস্পষ্ট শির্কি কাজ হবে। কেননা সকল স্থানে হাজির নাজির ও গাইবি বিষয় একমাত্র আল্লাহ জন্য প্রজোয্য। কোন সৃষ্টিকে মহান আল্লাহ তার এই সকল ক্ষমতা দান করেন না। অনেক অজ্ঞ মুসলিম বিশ্বাস করে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কবরে হুবহু দুনিয়ার মতই জীবিত যাপন করছেন এবং তিনি মারাই যাননি। তাদের এ সকল বক্তব্য সাধারন মুসলিমদের মধ্যে মহাবিভ্রান্তি তৈরি হচ্ছে। অথচ আল্লাহ্ ঘোষণা করেছেন যে, মানুষ মাত্রই মরণশীল এমন কি পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ নবী হযরত মুহম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও এর উর্দ্ধে নন। আল্লাহ্ সুবাহানাহুয়াতালা বলেনঃ
إِنَّكَ مَيِّتٌ۬ وَإِنَّہُم مَّيِّتُونَ (٣٠)
অর্থঃ নিশ্চয়ই তুমিও মারা যাবে, এবং নিশ্চয়ই তারাও মারা যাবে। (জুমার ৩৯:৩০)।
প্রতিটি মানুষই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে। আমাদের নবী মুহম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের মত একজন মানুষ ছিলেন। নিম্নের আয়াতট দুটি তার দলিল। সুরা আনকাবুদের ৫৭ নম্বর আয়াতে আল্লাহ্ সুবাহানাহুয়াতালা বলেন:
كُلُّ نَفۡسٍ۬ ذَآٮِٕقَةُ ٱلۡمَوۡتِۖ ثُمَّ إِلَيۡنَا تُرۡجَعُونَ (٥٧)
অর্থঃ প্রতিটি মানুষই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে। সবশেষে তোমাদের আমার নিকট ফিরিয়ে আনা হবে। (আনকাবুদ ২৯:৫৭)।
আর সূরা কাহাফে মহান আল্লাহ এরশাদ করেন, আমাদের নবী মুহম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের মত একজন মানুষ ছিলেন।
এরশাদ হচ্ছঃ
قُلۡ إِنَّمَآ أَنَا۟ بَشَرٌ۬ مِّثۡلُكُمۡ يُوحَىٰٓ إِلَىَّ أَنَّمَآ إِلَـٰهُكُمۡ إِلَـٰهٌ۬ وَٲحِدٌ۬ۖ فَمَن كَانَ يَرۡجُواْ لِقَآءَ رَبِّهِۦ فَلۡيَعۡمَلۡ عَمَلاً۬ صَـٰلِحً۬ا وَلَا يُشۡرِكۡ بِعِبَادَةِ رَبِّهِۦۤ أَحَدَۢا (١١٠)
অর্থঃ (হে রাসুল) আপনি বলে দিন, আমি তো তোমাদেরই মত এক জন মানুষ, আমার নিকট এই মর্মে ওহী করা হয় যে, তোমাদের উপাস্য এক ও একক, অতএব যে নিজ প্রতিপালকের দিদার লাভের আশাবাদী সে যেন সৎকর্ম করে এবং নিজ প্রতিপালকের ইবাদতে অন্য কাউকে শরীক না করে’। (সূরা আল্ কাহাব- ১৮:১১০)
মৃত লোক কোন অস্থায়ই জীবিত লোকদের খবর নিতে পারবে না। নবী মুহম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেহেতু মারা গিয়েছেন তাই তিনি আর আমাদের কোন প্রকারের খবর নিতে পারবেন না। কুরআনের বিভিন্ন স্থানে যা এসেছে এখানে তা বর্ণনা করছি।
إِنَّكَ لَا تُسْمِعُ الْمَوْتَى وَلَا تُسْمِعُ الصُّمَّ الدُّعَاء
অর্থঃ আপনি আহবান শোনাতে পারবেন না মৃতদেরকে এবং বধিরকেও নয়।(সুরা নাম’ল ২৭:৮০ এবং সুরা রুপ ৩০:৫২)
وَمَا يَسْتَوِي الْأَحْيَاء وَلَا الْأَمْوَاتُ إِنَّ اللَّهَ يُسْمِعُ مَن يَشَاء وَمَا أَنتَ بِمُسْمِعٍ مَّن فِي الْقُبُورِ
অর্থঃ আরও সমান নয় জীবিত ও মৃত। আল্লাহ শ্রবণ করান যাকে ইচ্ছা। আপনি কবরে শায়িতদেরকে শুনাতে সক্ষম নন। (সুরা ফাতির ৩৫:২২)]
মন্তব্যঃ এই সকল আয়াত দ্বারা বুঝা যায় যে, মৃতদেরকে শোনানোর দায়িত্ব মানুষের নয়, এটা আল্লাহ্র কাজ। তাই সর্বাবস্থায় মৃতরা শুনতে পাবে এটার সপক্ষে কোন দলীল নেই। তবে আল্লাহ্র ইচ্ছায় মাঝে মধ্যে তারা যে শুনতে পায় তার প্রমাণ আমরা পাচ্ছি এক হাদীসে, বদরের যুদ্ধের পরে কাফেরদের লাশ যখন একটি গর্তে রেখে দেয়া হলো, তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের লাশদের উদ্দেশ্য করে নাম ধরে ডেকে ডেকে বললেনঃ তোমরা কি তোমাদের মা‘বুদদের কৃত ওয়াদাকে বাস্তব পেয়েছ? আমরা তো আমাদের মা‘বুদের ওয়াদা বাস্তব পেয়েছি। সাহাবীগণ বললেনঃ রাসূল! আপনি এমন লোকদের সাথে কি কথা বলছেন যারা মরে পচে গেছে? তিনি বললেনঃ ‘আল্লাহ্র শপথ! তোমরা আমার কথা তাদের থেকে বেশী শুনতে পাচ্ছ না’। (সহিহ বুখারী ৩৭৫৭)
মহান আল্লাহ যদি কোন খবর তাকে জানান তবে ভিন্ন কথা। তাছাড়া সহিহ হাদিস দ্বারা জানা যায় আমাদের দুরুদ ও সালাম তার নিকট ফিরিস্থা দ্বারা পৌছান হয়।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, আল্লাহ তাআলার নির্ধারিত একদল ফেরেশতা রয়েছেন যারা দুনিয়াতে ঘুরে বেড়ান এবং আমার উম্মতের সালাম আমার কাছে পৌঁছে দেন। (সহিহ ইবনে হিব্বান ৯১৪, ইমাম হাকেম হাদীসটিকে সহিহ বলেছেন, মুসতাদরাকে হাকেম ৩৫৭৬, ২/৪২১ ও হাফেজ ইবনুল কায়্যিম রাহ., জালাউল আফহাম পৃ.২৪)।
মন্তব্যঃ কবর যেহেতু আখেরাতের ব্যাপার। আর আখেরাতের ব্যাপারে যতটুকু কুরআন ও হাদীসে যা এসেছে তার বাইরে কোন কিছু বলা কোন ক্রমেই ঠিক নয়। কোন সহিহ বা জাল সনদে উল্লেখ নাই যে তার সাহাবিদের সাথে মরার পরও কথা বলেছেন বা কোন সাহাবি বলেছেন যে আমাদের কর্মকান্ড দেখছেন। তাই দলিল বিহীন এই সকল ধারনা থেকে আমাদের বেচে থাকতে হবে।
১৮। কবর যিয়ারতে সময় সুরা নিসার ৬৪ নম্বর আয়াত তিলওয়াত করাঃ
সুরা নিসায় আয়াতটি হলোঃ
وَمَا أَرْسَلْنَا مِن رَّسُولٍ إِلاَّ لِيُطَاعَ بِإِذْنِ اللّهِ وَلَوْ أَنَّهُمْ إِذ ظَّلَمُواْ أَنفُسَهُمْ جَآؤُوكَ فَاسْتَغْفَرُواْ اللّهَ وَاسْتَغْفَرَ لَهُمُ الرَّسُولُ لَوَجَدُواْ اللّهَ تَوَّابًا رَّحِيمًا
অর্থঃ বস্তুতঃ আমি একমাত্র এই উদ্দেশ্যেই রসূল প্রেরণ করেছি, যাতে আল্লাহর নির্দেশানুযায়ী তাঁদের আদেশ-নিষেধ মান্য করা হয়। আর সেসব লোক যখন নিজেদের অনিষ্ট সাধন করেছিল, তখন যদি আপনার কাছে আসত অতঃপর আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করত এবং রসূলও যদি তাদেরকে ক্ষমা করিয়ে দিতেন। অবশ্যই তারা আল্লাহকে ক্ষমাকারী, মেহেরবানরূপে পেত। (সুরা নিসা ৪:৬৪)
মন্তব্যঃ এই আয়াতের শেষের দিকে বলা হয়েছে, “তখন যদি আপনার কাছে আসত অতঃপর আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করত এবং রসূলও যদি তাদেরকে ক্ষমা করিয়ে দিতেন। অবশ্যই তারা আল্লাহকে ক্ষমাকারী, মেহেরবানরূপে পেত”।
এই আয়াতের ব্যাখ্যায় তাফসিরে ইবনে কাসিরে যা বলা হয়েছে তার সার সংক্ষেপ হলো, ক্ষমাপ্রার্থনার জন্য কারো রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট আসা এবং তার জন্য তাঁর ক্ষমাপ্রার্থনা করার কথা তাঁর পার্থিব জীবনের সাথে সম্পৃক্ত। তাঁর তিরোধানের পর এই শ্রেণীর ক্ষমাপ্রার্থনা বা তাঁর অসীলায় দু’আ করা আর সম্ভব নয়।
তাওবা ও ক্ষমা প্রার্থনা তো আল্লাহর কাছেই করতে হয় এবং কেবল তাঁর কাছে করাই জরুরী ও যথেষ্ট। কিন্তু এখানে বলা হল যে, হে নবী! তারা তোমার কাছে এসে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে এবং তুমিও তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা কর। এটা এই জন্য যে, তারা বিবাদের ফায়সালা গ্রহণের জন্য অন্যের শরণাপন্ন হয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর অসম্মান করেছিল। এটা দূর করার জন্য তাঁর কাছে আসার তাকীদ করা হয়।
অনেকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জীবিত ও মৃত্যুর মধ্য পার্থক্য করে না। যা মুলত একটি কুফরি আকিদা। তারাই আয়াতের মাধ্যমে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দ্বারা ক্ষমা প্রর্থনা করে থাকে। যা মুলত একটি শির্ক আকিদা। আর যদি এমনি এমনি জরুরী মনে না করে শুধু এই আয়াতটি এই স্থানে পাঠের জন্য খাস করে নেন তবে কম পক্ষে বিদআত হবে। কেননা, এমন আমল আমাদের সালাফদের মাঝে পাওয়া যায় না।
সংকলনেঃ মোহাম্মাদ ইস্রাফিল হোসাইন। (বিএ ইন আরবি সাহিত্য ও ইসলাম শিক্ষা)
One thought on “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কবর যিয়ারতের ত্রুটিসমূহ দ্বিতীয় কিস্তি”