বাইতুল্লাহ বিভিন্থ অংশের বর্ণনাঃ তৃতীয় কিস্তিঃ

মাকামে ইবরাহীম ও যমযম  কূপ

সংকলনেঃ মোহাম্মাদ ইস্রাফিল হোসাইন

মাকাম শব্দের আভিধানিক অর্থ, দন্ডায়মান হওয়ার জায়গা। আর মাকামে ইবরাহীম অর্থ ইবরাহীম আলাইহিস সালামের দন্ডায়মান হওয়ার জায়গা। এটি একটি বড় পাথর, যার ওপর দাঁড়িয়ে ইবরাহীম আলাইহিস সালাম কাবাঘর নির্মাণ করেছিলেন। কাবা নির্মাণ করার সময় যখন দেয়ালটি হযরত ইবরাহিম আলাইহিস সালামের শারীরিক উচ্চতার উপরে উঠে যায় তখন তিনি একটি পাথরখণ্ডের ওপর দাঁড়িয়ে নির্মাণকাজ অব্যাহত রাখার জন্য ইসমাঈল আলাইহিস সালাম নিয়ে এসেছিলেন, যাতে পিতা ইবরাহীম আলাইহিস সালাম এই পাথরের উপর দাঁড়িয়ে কা‘বাঘর নির্মাণ করতে পারেন। ইসমাঈল আলাইহিস সালাম পাথর এনে দিতেন এবং ইবরাহীম আলাইহিস সালাম তাঁর পবিত্র হাতে তা কা‘বার দেয়ালে রাখতেন। তাওয়াফের সুবিধার্থে পাথরটিকে মূল জায়গা থেকে খানিকটা পেছন দিকে সরিয়ে আনা হয়েছে। তাওয়াফেল পর এর পেছনে দু’ রাকাত নামায পড়া মুস্তাহাব।

মাকামে ইবরাহীমের বৈশিষ্টঃ

ক। মহান আল্লাহ একটি নির্দশনঃ

মাকামে ইবরাহীম হল মহান আল্লাহ একটি নির্দশন। এই পাথটির কথা মহান আল্লাহ কুরআনুর কারীমে উল্লেখ করেছেন। এ সম্পর্কি বহু সহিহ হাদিসও বর্ণিত হয়েছে। আল্লাহ মাকামে ইবরাহীম সম্পর্কে এরশাদ করেন।

*وَإِذْ جَعَلْنَا الْبَيْتَ مَثَابَةً لِّلنَّاسِ وَأَمْناً وَاتَّخِذُواْ مِن مَّقَامِ إِبْرَاهِيمَ مُصَلًّى*

অর্থঃ যখন আমি কাবা গৃহকে মানুষের জন্যে সম্মিলন স্থল ও শান্তির আলয় করলাম, আর তোমরা ইব্রাহীমের দাঁড়ানোর জায়গাকে নামাযের জায়গা বানাও। ( সুরা বাকারা ২:১২৫)

এ আয়াতের ব্যাখ্যায় মুফাসসিরগণ বলেন, কাবাঘরে আল্লাহর কুদরতের স্পষ্ট নিদর্শন রয়েছে এবং ইবরাহীম আলাইহিস সালামের নিদর্শনাবলি রয়েছে, যার মধ্যে একটি হল, পাথর যার উপর দাঁড়িয়ে তিনি কাবাঘর নির্মণ করেছিলেন এবং আজও তার পদচিহ্ন বিদ্যমান।

আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘উমর (রাঃ) বলেছেনঃ তিনটি বিষয়ে আমার অভিমত আল্লাহর অহির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়েছে। আমি বলেছিলাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমরা যদি মাকামে ইবরাহীম কে সালাতের স্থান বানাতে পারতাম! তখন এ আয়াত নাযিল হয়ঃ

 (*وَاتَّخِذُواْ مِن مَّقَامِ إِبْرَاهِيمَ مُصَلًّى* “তোমরা মাকামে ইবরাহীমকে সালাতের স্থান বানাও” (২ : ১২৫)

*(দ্বিতীয়) পর্দার আয়াত, আমি বললামঃ ইয়া রাসুলাল্লাহ! আপনি যদি আপনার সহধর্মিনীগনকে পর্দার আদেশ করতেন! কেননা, সৎ ও অসৎ সবাই তাদের সাথে কথা বলে। তখন পর্দার আয়াত নাযিল হয়।

* (তৃতীয়) আর একবার নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সহধর্মিণীগণ অভিমান সহকারে তাঁর নিকট উপস্থিত হন। তখন আমি তাদেরকে বললামঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যদি তোমাদের তালাক দেয়, তাহলে তাঁর রব তাঁকে তোমাদের পরিবর্তে তোমাদের চাইতে উত্তম স্ত্রী দান করবেন। তখন এ আয়াত নাযিল হয়।

  *(عَسَى رَبُّهُ إِن طَلَّقَكُنَّ أَن يُبْدِلَهُ أَزْوَاجًا خَيْرًا مِّنكُنَّ مُسْلِمَاتٍ مُّؤْمِنَاتٍ قَانِتَاتٍ تَائِبَاتٍ عَابِدَاتٍ سَائِحَاتٍ ثَيِّبَاتٍ وَأَبْكَارًا*

অর্থঃ যদি নবী তোমাদের সকলকে পরিত্যাগ করেন, তবে সম্ভবতঃ তাঁর পালনকর্তা তাঁকে পরিবর্তে দিবেন তোমাদের চাইতে উত্তম স্ত্রী, যারা হবে আজ্ঞাবহ, ঈমানদার, নামাযী তওবাকারিণী, এবাদতকারিণী, রোযাদার, অকুমারী ও কুমারী। (৬৬:৫) (সহিহ বুখারী ৩৯৩ ইফাঃ)

খ। এটি একটি জান্নাতী পাথরঃ

এই পাথরটি জান্নাত থেকে আগত ইয়াকূত পাথর। হাদিসের আলোকে যানা যায় হাজরে আসওয়াদ ও মাকামে ইবরাহীম এই পাথর দু’খানি জান্নাতের ইয়াকুত পাথরগুলোর মধ্য থেকে দু’টি পাথর, আল্লাহ যেগুলোকে আলোহীন করে দিয়েছেন।

আব্দুল্লাহ বিন আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট শুনেছি, তিনি বলেছেন, “হাজরে আসওয়াদ ও মাকামে ইবরাহীম জান্নাতের পদ্মরাগরাজির দুই পদ্মরাগ। আল্লাহ এ দুয়ের নূর (প্রভা) কে নিষ্প্রভ করে দিয়েছেন। যদি উভয়মণির প্রভাকে তিনি নিষ্প্রভ না করতেন, তাহলে উদয় ও অস্তাচল কে উভয়ে জ্যোতির্ময় করে রাখত।” (তিরমিযী ৮৭৮, সহীহুল জামে ১৬৩৩)

গ। মাকামে ইবরাহীমের পিছনে সালাত আদায় করাঃ

১. ‘আবদুল্লাহ ইবনু আবূ আওফা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘উমরা করতে গিয়ে বায়তুল্লাহ তাওয়াফ করলেন ও মাকামে ইবরাহীমের পিছনে দু’ রাকাআত সালাত আদায় করলেন এবং তাঁর সাথে ঐ সকল সাহাবী ছিলেন যারা তাকে লোকদের থেকে আড়াল করে ছিলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কাবার ভিতর প্রবেশ করেছিলেন কি না – জনৈক ব্যাক্তি আবূ আওফা (রাঃ) এর নিকট তা জিজ্ঞাসা করলে তিনি বললেন, না। (সহিহ বুখারী ১৫০৫ ইফাঃ)

২. আমর (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা ইবনু ‘উমর (রাঃ) কে জিজ্ঞাসা করলাম, ‘উমরাকারীর জন্য সাফা ও মারওয়া সা‘য়ী করার পূর্বে স্ত্রী সহবাস বৈধ হবে কি? তিনি বললেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়াসাল্লাম মক্কায় উপনীত হয়ে সাত চক্করে বায়তুল্লাহর তাওয়াফ সমাপ্ত করে মাকামে ইবরাহীমের পিছনে দু’ রাক‘আত সালাত আদায় করেন, তারপর সাফা ও মারওয়া সা‘য়ী করেন। এরপর ইবনু ‘উমর (রাঃ) তিলাওয়াত করেন, “তোমাদের জন্য রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মধ্যে উত্তম আদর্শ রয়েছে।” (রাবী) ‘আমর (রহঃ) বলেন, আমি জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বললেন, সাফা ও মারওয়া সা’য়ী করার পূর্বে স্ত্রী সহবাস বৈধ নয়। (সহিহ বুখারি ১৫২৫ ইফাঃ)

৩.  ইবনু ‘উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কায় উপনীত হয়ে সাত চক্করে (বায়তুল্লাহর) তাওয়াফ সম্পন্ন করে মাকামে ইবরাহীমের পিছনে দু’ রাক’আত সালাত আদায় করলেন। তারপর সাফার দিকে বেরিয়ে গেলেন। [ইবনু ‘উমর (রাঃ) বলেন] মহান আল্লাহ বলেছেনঃ “নিশ্চয়ই তোমাদের জন্য রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ।” (সহিহ বুখারি ১৫২৮ ইফাঃ)

যমযম  কূপ

যমযম পৃথিবীতে মহান আল্লাহ এক অসাধারণ নিদর্শন। পৃথিবী আল্লাহ যত নিদর্শন আছে তার মধ্য অন্যতম নিদর্শন হলে এই কূপ। একটু ভাবুনতো মক্কার কোথাও ডিপ টিউবলে পানি উঠে না। লক্ষ লক্ষ লিটার পানি আরব সাগর থেকে পরিশোধন করে মক্কাবাসিকে দিতে হয়। কিন্তু এই যমযম কূপ শত শত বছর থেকে সেই পানিহীন মক্কাকে পানি সরবরাহ করছে। তার পানি সরবরাহে কোন প্রকার কমতি নাই। কোথা থেকে কিভাবে এই পানি আসে? এ সকল প্রশ্নের একটিই উত্তর মহান আল্লাহ কুদরত। যেখানে মসজিদে হারামের পাশে কুপ খনন করেও পানির সন্ধান মেলে নাই। সেখান প্রতি দিন লক্ষ লক্ষ হাজ্জিদের পান করানোর জন্য লক্ষ লক্ষ লিটার পানি উত্তলন করা হয়। এই কূপের পানি কি শুধু হাজ্জিদের পান করান হয়? এই পানি মদীনাসহ সম্পূর্ণ সৌদি আবরে পান করার জন্য পাঠান হয়। এমন কি পৃথিবীর প্রতিটি দেশে লক্ষ লক্ষ লিটার পানি সরবরাহ করা হয়। বিশেষ করে হজ্জে মৌসুমে প্রত্যক হাজ্জিকে পানি সরবরাহ করা হয়। আবার অনেক হাজ্জির নিজের উদ্দগ্যেও পানি সংগ্রহ করে নিয়ে আসেন। কিন্তু প্রশ্ন হল যেখানে ভূগর্বে পানিরই সন্দান পাওয়া যায়না। সেখানে থেকে আবার এত পানি কি করে উত্তলন করা সম্ভব। তাই এটাই পৃথিবী বাসির হিদায়াতের জন্য একটি অনুপম দৃষ্টান্ত। যার ইচ্ছা এখান থেকে শিক্ষা নিবে তিনি নিতে পারেন।

অবস্থানঃ

যমযম কুপটি মক্কায় মসজিদুল হারামের অভ্যন্তরে অবস্থিত। এটি কাবা থেকে ২০ মি (৬৬ ফুট) পূর্বে অবস্থিত। অর্থাৎ সাফা ও মারওয়া পাহাড়ের দিকে। বর্তমানে কুয়া কাবা চত্বরে দেখা যায় না। এটি ভূগর্ভস্থ অবস্থায় রাখা হয়েছে এবং এখানে থেকে পাম্পের সাহায্যে পানি উত্তোলন করা হয়। মসজিদুল হারামের বিভিন্ন স্থানে তা সরবরাহ করা হয়।

যমযম সৃষ্টির ইতিহাসঃ

ইসলামের ইতিহাসে যমযম  কুপের উৎপত্তি নিয়ে বর্ণনা রয়েছে। আল্লাহ খলিল ইব্রাহিম আলাইহিস সালাম দ্বিতীয় স্ত্রী হাজেরা আলাইহিস সালাম  ও শিশুপুত্র ইসমাইল আলাইহিস সালাম কে আল্লাহর আদেশে মক্কার বিরান মরুভূমিতের রেখে আসেন। তার রেখে যাওয়া খাদ্য পানীয় শেষ হয়ে গেলে হাজেরা আলাইহিস সালাম পানির সন্ধানে পার্শ্ববর্তী সাফা ও মারওয়া পাহাড়দ্বয়ের মাঝে সাতবার ছোটাছুটি করেছিলেন। এসময় জিবরাঈল (আ) এর পায়ের আঘাতে মাটি ফেটে পানির ধারা বেরিয়ে আসে। ফিরে এসে এই দৃশ্য দেখে হাজেরা আলাইহিস সালাম পাথর দিয়ে পানির ধারা আবদ্ধ করলে তা কুপের রূপ নেয়। এসময় হাজেরা আলাইহিস সালাম উদগত পানির ধারাকে যমযম বা থাম থাম বলায় এই কূপের নাম হয় যমযম।

যদি হাজেরা আলাইহিস সালাম থাম থাম বা যমযম না বলতেন, তবে এটি কূপ না হয়ে ঝর্ণায় পরিনত হত।

*** ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নবী‎ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ইসমাঈলের মায়ের প্রতি আল্লাহর রহম করুন। যদি তিনি তাড়াহুড়া না করতেন, তবে যমযম একটি প্রবহমান ঝরণায় পরিণত হত।(সহিহ বুখারি ৩২৬২)  বাদশাহ সৌদ বিশ্ববিদ্যালয়

সংস্কারঃ

সহিহ হাদিসের আলোকে জানা যায়, নবী‎ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামের জামানার পূর্বেই যমযম এর ব্যাপর পরিচিতি ছিল। এখানের পানি দ্বারাই মক্কার পানির চাহিদা মিটত।

আবূ যার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ আমি মক্কায় অবস্থানকালে ঘরের ছাদ ফাঁক করা হল এবং জিবরাঈল (‘আঃ) অবতরণ করলেন। এরপর তিনি আমার বক্ষ বিদারণ করলেন এবং তা যমযমের পানি দ্বারা ধুলেন, এরপর ঈমান ও হিক্‌মতে পরিপূর্ণ একটি সোনার পেয়ালা নিয়ে এলেন এবং তা আমার বুকে ঢেলে দিয়ে জোড়া লাগিয়ে দিলেন। অতঃপর আমার হাত ধরে আমাকে নিয়ে দুনিয়ার আসমানে গেলেন এবং জিবরাঈল (‘আঃ) এই আসমানের তত্ত্বাবধানকারী ফেরেশ্‌তাকে বললেন, (দরজা) খোল। তিনি বললেন কে? তিনি বললেন, আমি জিবরাঈল। (সহিহ বুখারি ১৬৩৬)

এই হাদিসে প্রমান করে যমযমের পানি পূর্ন থেকেই ভালো পানি হিসাবে মক্কাবাসির নিকট কদর ছিল। কিন্তু তখনকার সংস্কার সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যায় না। তবে ১৫৪/১৫৫ হিজরীতে (৭৭১ খৃষ্টাব্দে) খলিফা আল মনসুরের সময় এটির উপর গম্বুজ এবং মার্বেল টাইলস বসানো হয়। এর আগে এটি বালি ও পাথর দিয়ে ঘেরা অবস্থায় ছিল। পরবর্তীতে খলিফা আল মাহদি এটি আরো সংস্কার করেন। সর্বশেষ ২০১৭-২০১৮ সালে সৌদি বাদশাহ সংস্কার করেন। বাদশাহ আবদুল আজিজ ইবনে সৌদ জমজমের পূর্ব ও দক্ষিণে পানি পান করানোর জন্য দুটি স্থান নির্মাণ করেন। দক্ষিণ দিকে ৬টি এবং পূর্বদিকে ৩টি ট্যাপ লাগানো হয়। বর্তমানে কাবা ঘরের ২০ মিটার দূরে অবস্থিত এই কূপটি থেকে পাম্পের সাহায্যে প্রতিদিন ২০ লক্ষাধিক ব্যারেল পানি উত্তলিত হয়। এই কূপের পানি বণ্টনের জন্য ১৪০৩ হিজরিতে সৌদি বাদশাহের এক রাজকীয় ফরমান অনুযায়ী হজ্জ মন্ত্রণালয়ের সরাসরি তত্ত্বাবধানে ইউনিফাইড ‘জামাজেমা দফতর’ গঠিত হয়। এই দফতরে একজন প্রেসিডেন্ট ও একজন ভাইস প্রেসিডেন্টসহ মোট ১১ জন সদস্য ও ৫ শতাধিক শ্রমিক ও কর্মচারী নিয়োজিত আছেন। বাদশাহ আব্দুল্লাহ যমযম  পানি কমপ্লেক্সটি ২০১০ সালের সেপ্টেম্বরে ৭০০ মিলিয়ন রিয়াল ব্যয়ে মক্কাতে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, যা প্রতিদিন ২০০,০০০ বোতল পানি সরবরাহ করতে পারে।

যমযমের পানির খাদ্য উপদানঃ

যমযম কূপের পানির কোনও রং বা গন্ধ নেই, তবে এর বিশেষ একটি স্বাদ রয়েছে। বাদশাহ সৌদ বিশ্ববিদ্যালয় যমযম কূপের পানি পরীক্ষা করেছে এবং তারা এর পুষ্টি গুণ ও উপাদান সমূহ নির্ণয় করেছে।

যমযম  পানির উপাদানসমূহঃ

খনিজের ঘনীভবন বাদশাহ সৌদ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক প্রদত্ত
খনিজঘনীভবন
mg/Loz/cu in
সোডিয়াম১৩৩৭.৭×১০−৫
ক্যালসিয়াম৯৬৫.৫×১০−৫
ম্যাগনেসিয়াম৩৮.৮৮২.২৪৭×১০−৫
পটাশিয়াম৪৩.৩২.৫০×১০−৫
বাইকার্বোনেট১৯৫.৪০.০০০১১২৯
ক্লোরাইড১৬৩.৩৯.৪৪×১০−৫
ফ্লোরাইড০.৭২৪.২×১০−৭
নাইট্রেট১২৪.৮৭.২১×১০−৫
সালফেট১২৪.০৭.১৭×১০−৫
মোট দ্রবীভূত কঠিন বস্তুর৮৩৫০.০০০৪৮৩

সহিহ হাদিসের আলোকে যমযম কুপের কিছু বৈশিষ্ট উল্লেখ করা হলোঃ

ক। যমযমের পানি পানে উপকার হয়ঃ

জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রাঃ) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছিঃ যমযমের পানি যে উপকার লাভের আশায় পান করা হবে, তা অর্জিত হবে। (ইবনে মাজাহ ৩০৬২)

খ। যমযমের পানিতে খাদ্যগুন ও রোগমুক্তি হয়ঃ

আবু যার্র (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “নিশ্চয় তা (যমযমের পানি) বরকতপূণ। তা তৃপ্তিকর খাদ্য এবং রোগনিরাময়ের ঔষধ।” (হাদিস সম্ভার ১২০১, ত্বাবারানীর ২৯৫, সহীহুল জামে ২৪৩৫)

ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “পৃথিবীর বুকে সর্বশ্রেষ্ঠ পানি হল যমযমের পানি। তাতে রয়েছে তৃপ্তির খাদ্য এবং ব্যাধির আরোগ্য।” (হাদিস সম্ভার ১২০২, ত্বাবারানীর ৩৯১২, ৮১২৯, সহীহুল জামে’ ৩৩২২)

আবূ জামরাহ যুবা’য়ী (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি মক্কায় ইব্‌নু আব্বাস (রাঃ)-এর নিকট বসতাম। একবার আমি জ্বরাক্রান্ত হই। তখন তিনি আমাকে বললেন, ‘তুমি তোমার গায়ের জ্বর যমযমের পানি দিয়ে ঠাণ্ডা কর।’ কারণ, আল্লাহ্‌র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, এটা জাহান্নামের উত্তাপ হতেই হয়ে থাকে। কাজেই তোমরা তা পানি দিয়ে ঠাণ্ডা কর অথবা বলেছেন। যমযমের পানি দিয়ে ঠাণ্ডা কর। এ বিষয়ে বর্ণনাকারী হাম্মাম সন্দেহ পোষণ করেছেন। (সহিহ বুখারি ৩২৬১)

গ। যমযমের পানি দাড়িয়ে পান করা মু্স্তাহাবঃ

ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নিশ্চয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাঁড়ানো অবস্থায় যমযমের পানি পান করতেন। (সামায়েলে তিরমিজি ১৫২, সহিহ মুসলিম ৫৪০০)

ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যমযমের পানি দাঁড়িয়ে থাকাবস্থায় পান করেছেন। (ইবনে মাজাহ ১৮৮২)

ইব্‌নু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি যমযমের পানি আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট পেশ করলাম। তিনি তা দাঁড়িয়ে পান করলেন। (রাবী’) ‘আসিম বলেন, ‘ইকরিমা (রাঃ) হলফ করে বলেছেন, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম তখন উটের পিঠে আরোহী অবস্থায়ই ছিলেন। (সহিহ বুখারি ১৬৩৭)

সংকলনেঃ মোহাম্মাদ ইস্রাফিল হোসাইন। (বিএ ইন আরবি সাহিত্য ও ইসলাম শিক্ষা)

One thought on “বাইতুল্লাহ বিভিন্থ অংশের বর্ণনাঃ তৃতীয় কিস্তিঃ

Leave a comment