সাঈয়ের ওয়াজিব, সুন্নহ ও ভূলত্রুটিসমূহ

সাঈয়ের ওয়াজিব, সুন্নহ ও ভূলত্রুটিসমূহ

সংকলনেঃ মোহাম্মাদ ইস্রাফিল হোসাইন

উমরা ও হজ্জের ক্ষেত্রে সাফা এবং মারওয়াতে পাহাড়ের মাঝে সাঈ আদায় করা একটি ওয়াজিব আমল। তবে অনেকে ইহাকে ফরজও বলেছেন। মূলত সাঈ একটি ওয়াজিব আমল। সাঈ আদায়ের ক্ষেত্রে অনেক আমল আছে যেগুলো বাদ দিলে সাঈ আদায় হবে না। অর্থাৎ সাঈটি বাদ হয়ে যাবে। এমন কাজই সাঈয়ের ওয়াজিব। আমরা এমন অনেক সুন্নাহ আমল আছে যা বাদ দিলে সাঈ আদায় হবে কিন্তু সুন্নাহ সম্মত সাঈ হবে না। আবার অনেক আমল আছে যা সাঈকে প্রশ্নবিদ্ধ করে করে। অর্থাৎ সাঈ আদায় করে অনেক ভুল করে থাকে যা কাম্য নয়। ভুল যদি ওয়াজিব পর্যায় হয় তবে সাঈ বাতিল হয়ে যায় আর সুন্নাহ পর্যায় থাকলে নেকী কম হয়ে যাবে।

সাঈয়ের ওয়াজিবসমূহ হলোঃ

১। তাওয়াফ আদায়ের পরে সাঈ করা

২। সাঈ সাফা পাহাড় থেকে সাঈ শুরু করা

৩। প্রতিবারই সাফা ও মারওয়া এর মধ্যবর্তী সম্পূর্ণ দূরত্ব অতিক্রম করতে হবে

৪। সাফা এবং মারওয়াতে পাহাড়ের নির্দিষ্ট স্থানেই সাঈ করতে হবে

৫। সাত চক্র পূর্ণ করা

সাঈয়ের সুন্নাতসমূহঃ

১। অযু অবস্থায় সাঈ করা ও সতর ঢাকাঃ

২। সাফা থেকে কাবা দেখে তাকবির বলাঃ

৩। তাওয়াফ শেষে সময় ক্ষেপণ না করে সাঈ করাঃ

৪। সাঈয়ের মাঝে বেশী সময় থেমে না থাকাঃ

৫। সবুজ বাতির মধ্যবর্তী স্থানে পুরুষদের একটু দৌড়ানোঃ

৬। প্রতি চক্রেই সাফা ও মারওয়া আরহন করে দোয়া করাঃ

৭। সাঈয়ে সময় জিকির ও দোয়া করাঃ

৮। সক্ষম ব্যক্তির পায়ে হেঁটে সাঈ করা

৯। উমরা ও হজ্জে সাঈ একবারই আদায় করতে হবেঃ

সাইয়ের ভুলত্রুটি হলোঃ

১। নিয়ত ও সাঈ শুরুর ভুলঃ

২। দোয়ার সময় যে ভুল হয়ঃ

৩। ইযতিবা বা রমল করাঃ

৪। দ্রুত চলে সাঈ সম্মন্ন করাঃ

সাঈয়ের ০৫ টি ওয়াজিবঃ

১। তাওয়াফ আদায়ের পরে সাঈ করাঃ

জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ বিদায় হাজ্জে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজের বাহনে চড়ে বায়তুল্লাহ তাওয়াফ করেন এবং সাফা-মারওয়া সাঈ করেন, যাতে লোকেরা তাঁকে দেখে, তাঁর কাজের প্রতি দৃষ্টি দেয় এবং প্রয়োজনীয় বিষয়ে জিজ্ঞেস করে নেয়। কারন লোকেরা চতুর্দিক থেকে তাঁকে ঘিরে রেখেছিলো। (আবু দাউদ ১৮৮০)

আমর (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ আমি ইবন উমর (রাঃ) -কে বলতে শুনেছি। আমরা তাঁকে এমন এক ব্যক্তি সম্বন্ধে প্রশ্ন করছিলাম, যে উমরা করতে এসে কা’বার তাওয়াফ করে, কিন্তু সাফা ও মারওয়ার সাঈ করেনি। সে কি তার পরিবারের কাছে গমন (সহবাস) করবে? তিনি বললেন, যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম মক্কায় আগমন করেন, তখন তিনি সাতবার তাওয়াফ করেন এবং মাকামে ইবরাহীমের পেছনে দুই রাক’আত সালাত আদায় করেন এবং সাফা ও মারওয়া সাঈ করেন। “আর তোমাদের জন্য রাসূলুল্লাহর মধ্যে উত্তম আদর্শ রয়েছে”। (সুনানে নাসাঈ ২৯৩০)

মন্তব্যঃ প্রতিটি হাদিসে বাইতুল্লাহ তাওয়াফের পর সাফা মারওয়া সাঈ করার কথা উল্লেখ আছে। আমলের ক্ষেত্রেও যুগ যুগ ধরে এই ধারাবাহিকতা চলে আসছে। ইসলাম আগমনের পর থেকেই প্রতি দিন উমরা ও হজ্জ আদায়কারী তাওয়াফের পর সাঈয়ের আমল করে থাকে। এই আমলের ব্যতক্রম আমল পাওয়া যায় না। তাই কোন প্রকার সন্দেহের অবকাশ নাই যে, তাওয়াফের পর দুই রাকাত সালাত আদায় করে একটু জমজমের পানি পান করেই সাত চক্কর সাই করতে হবে।

২। সাঈ সাফা পাহাড় থেকে সাঈ শুরু করাঃ

সাঈ সাফা থেকে শুরু, নাকি মারওয়া থেকে শুরু করতে হবে? এই প্রশ্নের উত্তর কোন প্রকার মতভেদ নেই। সবল যুগের সকল মুসলিম একমত সাঈ সাফা থেকে শুরু করতে হবে। কেননা, এমন আমল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রমানি। যুগ যুগ ধরে সালাফদের মাঝে প্রচলিত।

দলিলঃ

১. জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাতবার বায়তুল্লাহর তাওয়াফ করেন, এতে তিনবার রমল করেন এবং চারবার সাধারণভাবেই হেঁটে তাওয়াফ করেন। তারপর মাকামে ইবরাহীমের কাছে দাঁড়িয়ে দু’রাকাত সালাত আদায় করেন এবং পড়েনঃ

* وَاتَّخِذُواْ مِن مَّقَامِ إِبْرَاهِيمَ مُصَلًّى *

এ সময় তিনি লোকদেরকে শোনাবার জন্য উচ্চকণ্ঠে পড়েন। এরপর সেখান থেকে এসে তিনি হাজরে আসওয়াদ স্পর্শ ও চুম্বন করেন। তারপর সাফার দিকে গমন করেন এবং বলেন, আমরা তা হতে আরম্ভ করবো, আল্লাহ যা হতে আরম্ভ করেছেন। এরপর তিনি সাফা হতে আরম্ভ করে তার উপর আরোহণ করেন। সেখান থেকে তিনি বায়তুল্লাহ দেখতে পান এবং তিনি তিনবার বলেনঃ

*لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ يُحْيِي وَيُمِيتُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ*

এরপর তিনি আল্লাহু আকবর বলেন এবং আল্লাহর প্রশংসা করেন এরপর তার জন্য যা নির্ধারিত ছিল তিনি তা দিয়ে দু’আ করেন। পরে তিনি পায়ে হেঁটে নেমে এসে বাতনে মাসীলে (উপত্যকায়) এসে পৌঁছেছেন। তারপর তিনি দ্রুত হেঁটে চলেন, যাতে তাঁর পদদ্বয় উঠে যায়। পরে তিনি মারওয়া পাহাড়ে আরোহণ করেন। এখানেও বায়তুল্লাহ তাঁর দৃষ্টিগোচর হয়। এখানেও তিনি তিনবার বলেনঃ

*لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ يُحْيِي وَيُمِيتُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ*

এরপর তিনি আল্লাহকে স্মরণ করেন, সুবহানাল্লাহ ও আলহামদুলিল্লাহ বলেন, এখানে তিনি আল্লাহর ইচ্ছানুযায়ী দু’আ করলেন। দুআ করেন এবং এভাবে তিনি তাওয়াফ শেষ করেন। (সুনানে নাসাঈ ২৯৭৭ ইফাঃ)

২. জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি শুনেছি যে, রাসুলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন সাফায় গমনের ইচ্ছায় মসজিদ (অর্থাৎ তাওয়াফের স্থান) থেকে বের হলেন, তখন তিনি বললেন, আমরা সেখান থেকে আরম্ভ করব যেখান থেকে আল্লাহ্‌ তা’আলা আরম্ভ করেছেন। (সুনানে নাসাঈ ২৯৬৯)

৩. জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাফার দিকে বের হয়ে বললেন, আল্লাহ তাআলা যে স্থান থেকে আরম্ভ করেছেন, আমরাও সে স্থান থেকে আরম্ভ করবো। তারপর তিনি পাঠ করেন,

* إِنَّ الصَّفَا وَالْمَرْوَةَ مِن شَعَآئِرِ اللّهِ*

অর্থঃ সাফা ও মারওয়া আল্লাহ্‌ তাআলার ‘শি’আর’ (বিশেষ) প্রতীক সমুহের অন্তর্ভুক্ত (সুরা বাকারা ২:১৫৮)। সুতরাং যারা বায়তুল্লাহ্‌র হজ্জ করবে তাদের জন্য এ দুটিতে সা’ঈ করলে কোন অপরাধ হবে না। (সুনানে নাসাঈ ২৯৭০)

মন্তব্যঃ  সাঈ সাফা পাহাড় থেকে সাঈ শুরু করলে মারওয়া পাহাড়ে গেলেই এক চক্কর গনণা করা হবে। আমার মারওয়া থেকে সাফা পাহাড়ে আসালে আরেক চক্কর হয়ে যাবে। অনেকে মনে করে থাকে সাফা থেকে মারওয়া গিয়ে আবার সাফা ফিরে আসলে এক চক্কর হবে। তাদের ধারানা ভুল। তাই সাফা থেকে শুরু করার পর সাত চক্কর পর মারওয়াতে গিয়ে সাঈ শেষ হবে।

৩।  সাফা ও মারওয়া এর মধ্যবর্তী সম্পূর্ণ দূরত্ব অতিক্রম করতে হবেঃ

সাঈ সাফা পাহাড় থেকে মারওয়া পাহাড়ে গেলেই এক চক্কর গনণা করা হবে। আবার মারওয়া থেকে সাফা পাহাড়ে আসালে আরেক চক্কর হয়ে যাবে। এখন যদি কেউ সাফা বা মারওয়া পাহাড়ের উপর না উঠে, পাহাড়ের কাছে থেকে ফিরে আসে তবে তার চক্কর সম্পূর্ণ হবে না। অর্থাৎ সাফা ও মারওয়া এর মধ্যবর্তী সম্পূর্ণ দূরত্ব অতিক্রম না করলে ঐ চক্কর কাউন্ট হবে না। তাওয়াফের অন্যতাম শর্ত হলে সাত চক্কর সাঈ করা কিন্তু কোন চক্করে যদি আংশিক সম্পন্ন হবে তবে সাত চক্ক না হয়ে কম হবে। সে ক্ষেত্র সাঈয়ের ওয়াজির সাত চক্কর সম্পন্ন হবে না বিধায় তার সাঈ বাতিল হয়ে যাবে।

৪। সাফা ও মারওয়াতে পাহাড়ের নির্দিষ্ট স্থানেই সাঈ করতে হবেঃ

সাফা থেকে মারওয়া আবার মারওয়া থেকে সাফা সাঈ করা জন্য নির্দষ্ট স্থান আছে। এই স্থান দিয়েই সাঈ করতে হবে। বর্তমানে সাঈয়ের স্থানকে একটি বিল্ডিং দ্বারা আবদ্ধ করে রাখা হয়েছে। এই বিল্ডিং টি তিল তলা বিশষ্ট করা হয়েছে যাতে করে প্রচন্ড ভীরের সময় যে যথেষ্ঠ স্থান থাকে। কাজেই সাঈ করতে হলে এই তিন তলা বিশিষ্ট বিল্ডিং এর সীমানার ভীতর থেকেই করতে হবে। এই বিল্ডিং এর যে কোন তলা দিয়েই সাঈ করলে সাঈ হয়ে যাবে। কেননা, বিল্ডিং এর বেজমেন্ট, প্রথম তলা, দ্বিতীয় তলা এবং ছাদ সম্পূর্ণটাই সাঈয়ের স্থান। বিল্ডিং এই স্থান বাদ দিয়ে এর সমান্তাল বাহিরে কোন স্থান দিয় সাঈ করলে সাঈ আদায় হবে না। যেমনঃ বিল্ডিং টির পূর্বপাশে যথেষ্ট পরিমান ফাকা জায়গা আছে যদি কেউ ভীরের কারনে বেজমেন্ট, প্রথম তলা, দ্বিতীয় তলা এবং ছাদ বাদ দিয়ে ঐ ফাকা জায়গার সাঈ করে তবে তার সাই শুদ্ধ হবে না। সাঈ কে শুদ্ধ করার অন্যতম ওয়াজিব কাজ হলো, সাফা ও মারওয়াতে পাহাড়ের নির্দিষ্ট স্থানেই সাঈ করতে হবে।

৫। সাত চক্র পূর্ণ করাঃ

সাঈয়ের অন্যতাম ওয়াজিব হলে সাত চক্করে সাঈ করতে হবে। সাত চক্করের কম করলে সাঈ আদায় হবে না। কেউ যদি সাতের কম পাচ বা ছয় চক্কর আদায় করে তবে তবে তার সাঈয়ের ওয়াজিব আদায় হবে না। তাকে কাফ্ফার আদায় করে দায় মুক্ত হতে হবে।

আমর ইব্‌নু দীনার (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা ইব্‌নু ‘উমর (রাঃ)-এর নিকট জিজ্জেস করলাম, কোন ব্যক্তি ‘উমরাহ করতে গিয়ে শুধু বাইতুল্লাহ তাওয়াফ করে, আর সাফা ও মারওয়া সা’ঈ না করে, তার পক্ষে কি স্ত্রী সহবাস বৈধ হবে? তখন তিনি বললেন, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম (মক্কায়) উপনীত হয়ে বাইতুল্লাহ তাওয়াফ সাত চক্করে সমাধা করে মাকামে ইব্রাহীমের পিছনে দু’ রাক’আত সালাত আদায় করলেন, এরপর সাত চক্করে সাফা ও মারওয়া সা’য়ী করলেন। [এতটুকু বলে ইব্‌নু ‘উমর (রাঃ) বলেন] “তোমাদের জন্য রসূলুল্লাহর মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ”-(আল-আহযাবঃ ২১)।(৩৯৫)

ইব্‌নু ‘উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, বিদায় হজ্জের সময় আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম হজ্জ ও ‘উমরাহ একসাথে পালন করেছেন। তিনি হাদী পাঠান অর্থাৎ যুল-হুলাইফা হতে কুরবানীর জানোয়ার সাথে নিয়ে নেন। অত:পর আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রথমে ‘উমরাহ’র ইহ্‌রাম বাঁধেন, এরপর হজ্জের ইহ্‌রাম বাঁধেন। সাহাবীগণ তাঁর সঙ্গে ‘উমরাহ’র ও হজ্জের নিয়্যাতে তামাত্তু‘ করলেন। সাহাবীগণের কতেক হাদী সাথে নিয়ে চললেন, আর কেউ কেউ হাদী সাথে নেননি। এরপর নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম মক্কা পৌছে সাহাবীগণকে উদ্দেশ্য করে বললেনঃ তোমাদের মধ্যে যারা হাদী সাথে নিয়ে এসেছ, তাদের জন্য হজ্জ সমাপ্ত করা পর্যন্ত কোন নিষিদ্ধ জিনিস হালাল হবে না। আর তোমাদের মধ্যে যারা হাদী সাথে নিয়ে আসনি, তারা বাইতুল্লাহ এবং সাফা-মারওয়ার তাওয়াফ করে চুল কেটে হালাল হয়ে যাবে। এরপর হজ্জের ইহ্‌রাম বাঁধবে। তবে যারা কুরবানী করতে পারবে না তারা হজ্জের সময় তিনদিন এবং বাড়িতে ফিরে গিয়ে সাতদিন সওম পালন করবে। নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম মক্কা পৌঁছেই তাওয়াফ করলেন। প্রথমে হাজরে আসওয়অদ চুম্বন করলেন এবং তিন চক্কর রামল করে আর চার চক্কর স্বাভাবিকভাবে হেঁটে তাওয়াফ করলেন। বাইতুল্লাহর তাওয়াফ সম্পন্ন করে তিনি মাকামে ইব্রাহীমের নিকট দু’রাক‘আত সালাত আদায় করলেন, সালাম ফিরিয়ে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাফায় আসলেন এবং সাফামারওয়ার মাঝে সাত চক্কর সাঈ করলেন। হজ্জ সমাধান করা পর্যন্ত তিনি যা কিছু হারাম ছিল তা হতে হালাল হননি। তিনি কুরবানীর দিনে হাদী কুরবানী করলেন, সেখান হতে এসে তিনি বাইতুল্লাহর তাওয়াফ করলেন। অত:পর তাঁর উপর যা হারাম ছিল সে সব কিছু হতে তিনি হালাল হয়ে গেলেন। সাহাবীগণের মধ্যে যাঁরা হাদী সাথে নিয়ে এসেছিলেন তাঁরা সেরূপ করলেন, যেরূপ আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) করেছিলেন। (সহিহ বুখারি ১৬৯১)

সাঈয়ের ০৯ টি সুন্নাহঃ

১। অযু অবস্থায় সাঈ করা ও সতর ঢাকাঃ

২। সাফা থেকে কাবা দেখে তাকবির বলাঃ

৩। তাওয়াফ শেষে সময় ক্ষেপণ না করে সাঈ করাঃ

৪। সাঈয়ের মাঝে বেশী সময় থেমে না থাকাঃ

৫। সবুজ বাতির মধ্যবর্তী স্থানে পুরুষদের একটু দৌড়ানোঃ

৬। প্রতি চক্রেই সাফা ও মারওয়া আরহন করে দোয়া করাঃ

৭। সাঈয়ে সময় জিকির ও দোয়া করাঃ

৮। সক্ষম ব্যক্তির পায়ে হেঁটে সাঈ করা

৯। উমরা ও হজ্জে সাঈ একবারই আদায় করতে হবেঃ

সাঈয়ে সুন্নাতসমূহের বিস্তারিত বিবরণঃ

১। অযু অবস্থায় সাঈ করা ও সতর ঢাকাঃ

যে কোন ইবাদতের জন্য পরিস্কার পরিচ্চন্না থাকা উত্তম। তাওয়াফে জন্য কিছু মুসতাহীদ আলেম অজুকে শর্ত আরপ করলেও সাঈয়ের জন্য অজু শর্ত করেন নাই। বড় অপবিত্রতা থেকে মুক্ত না হয়ে তাওয়াফ করা যাবে না, কিন্তু এই অবস্থায় সাঈ আদায় করা যাবে। তাওয়াফ শেষ করে সালাত আদায় করেই সাঈ আদায় করতে হয়। তাই দেখা যায় সাঈ আদায়ের সময় অধিকাংশের অজু থাকে। এই অজুসহকারে সাঈয়ের আমল করা সুন্নাহ। যদি অজু না থাকে এবং অজুকরা কষ্টকর তবে অজু ছাড়াই সাঈ আদায় করা যায়। আর সতল ঢাকা একটি ফরজ কাজ। কোন অস্থায় সতল খোলা যাবে না। জাহেলী জামানায় অনেক অজ্ঞ লোক সতল না ঢেকে তাওয়াফ ও সাঈ আদায়  করত। কাজেই এখন শুধু সতর খোলা নয় পর্দার প্রতিও খেয়াল রেখে পোশাক পড় সাঈ আদায় করতে হবে।

২। সাফা থেকে কাবা দেখে তাকবির বলাঃ

জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাফায় আরোহণ করে যখন তিনি বায়তুল্লাহ্‌ দেখতে পান তখন তাকবীর বলেন। (সুনানে নাসাঈ ২৯৭১ হাদিসের মান সহিহ)

জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন : রাসুলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাফায় (পাহাড়ে) আরোহণ করে তিনবার তাকবীর (আল্লাহু আকবর) বলেন। এরপর তিনি বলেন,

«لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ، لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ، وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ»

(আল্লাহ্‌ ব্যতীত কোন ইলাহ নেই। তিনি একক, তাঁর কোন শরীক নেই, রাজত্ব তাঁরই, প্রশংসা তাঁরই, এবং তিনি সব কিছুতে ক্ষমতাবান।) তিনি এইরূপ তিনবার বলেন, পরে দু’আ করেন। মারওয়া পাহাড়েও তিনি এইরূপ করেন। (সুনানে নাসাঈ ২৯৭২ হাদিসের মান সহিহ)

৩। তাওয়াফ শেষে সময় ক্ষেপণ না করে সাঈ করাঃ

সহিহ হাদিসমূহের বর্ণনা থেকে জানা যায় রাসুলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাওয়াফ করে, দুই রাকাত সালাত আদায় করে, জমজমের কিছু পানি পান করেই সাঈ করেন। আমাদের সালাফদের আমলও তাই তারা উমরা বা হজ্জের সময় তাওয়াফ শেষ করেই সাঈ করে থাকেন। এই দুটি আমল পাশাপাশি আদায় আদায় করার সাথে সাথে এর প্রতিও খেয়াল রাখতে হবে যেন তাওয়াফ ও সাঈয়ের মাঝে বেশী সময় ক্ষেপন না হয়। 

৪। সাঈয়ের মাঝে বেশী সময় থেমে না থাকাঃ

সাঈ কোন কষ্টসাধ্য আমল নয়। সাফা ও মারওয়ার মধ্যবর্তী দূরত্ব ৩০০ মি (৯৮০ ফুট)। সাতবার আসা যাওয়া করার পর মোটামুটি ২.১ কিমি (১.৩ মাইল) দূরত্ব অতিক্রম করতে হয়। বেশী বয়স্ক ও মাজুর না হলে ২.১ কিমি সাধারণ গতিতে হাটা একেবারেই সহজ্জ আমল। কাজেই সাঈয়ের মাঝে বেশী সময় থেমে থাকা উচিত নয়। রাসুলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও আমাদের সালাফদের আমল এক নাগালে সাত চক্কর দিয়ে সাঈ শেষ করা।

৫। সবুজ বাতির মধ্যবর্তী স্থানে পুরুষদের একটু দৌড়ানোঃ

আবদুল্লাহ ইব্‌নু ‘উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নাবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বায়তুল্লাহ পৌঁছে প্রথম তাওয়াফ করার সময় প্রথম তিন চক্করে রামল করতেন এবং পরবর্তী চার চক্করে স্বাভাবিক গতিতে হেঁটে চলতেন। সাফা ও মারওয়ায় সাঈ করার সময় উভয় টিলার মধ্যবর্তী নিচু স্থানটুকু দ্রুতগতিতে চলতেন। (সহিহ বুখারি ১৬১৭)

‘আবদুল্লাহ ইব্‌নু ‘উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বায়তুল্লাহ পৌঁছে প্রথম তাওয়াফ করার সময় প্রথম তিন চক্করে রামল করতেন এবং পরবর্তী চার চক্করে স্বাভাবিক গতিতে হেঁটে চলতেন। সাফা ও মারওয়ায় সা‘ঈ করার সময় উভয় টিলার মধ্যবর্তী নিচু স্থানটুকু দ্রুতগতিতে চলতেন। (সহিহ মুসলিম পর্ব ১৫/৩৯ হাঃ ১২৬১)

৬। প্রতি চক্রেই সাফা ও মারওয়া আরহন করে দোয়া করাঃ

১. জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাফার দিকে গেলেন এবং তাতে আরোহণ করলেন। এরপর বায়তুল্লাহ তার দৃষ্টিগোচর হলো। এরপর তিনি মহান আল্লাহর তাওহীদ বর্ণনা করে তাকবীর পাঠ করলেন। তিনি বলেনঃ

*لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ يُحْيِي وَيُمِيتُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ*

এরপর তিনি চলতে লাগলেন যখন তাঁর পদদ্বয় উপত্যকাতে নামলো তখন সাঈ করলেন। যখন উভয় পদ ‘উপতাকা থেকে উপরে উঠে এলো, তখন তিনি হেঁটে মারওয়ায় আগমন করেন। এখানেও তাই করলেন, যা তিনি সাফা পাহাড়ে করেছিলেন। এভাবে তিনি তার তাওয়াফ শেষ করেন। (সুনানে নাসাঈ ২৯88 ইফাঃ)

২. জাবির ইব্‌ন আবদুল্লাহ্‌ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম মারওয়ায় এসে তার উপর আরোহণ করেন। তারপর বায়তুল্লাহ্‌ তাঁর দৃষ্টিগোচর হলো। তখন তিনি তিনবার বলেন,

«لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ، لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ، وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ»

(আল্লাহ্‌ ব্যতীত কোন ইলাহ নেই। তিনি একক, তাঁর কোন শরীক নেই, রাজত্ব তাঁরই, প্রশংসা তাঁরই, এবং তিনি সব কিছুতে ক্ষমতাবান।) এরপর তিনি আল্লাহ্‌কে স্মরণ (যিকির) করেন, সুবহানাল্লাহ ও আল-হামদুলিল্লাহ বলেন। তারপর তিনি আল্লাহ্‌র ইচ্ছা অনুযায়ী দু’আ করেন এবং এভাবে তিনি তাওয়াফ সম্পন্ন করেন। (সুনানে নাসাঈ ২৯৮৭ ইফাঃ)

৭। সাঈয়ে সময় জিকির ও দোয়া করাঃ

সাঈ আদায়কালে নির্দষ্ট কোন দোয়া হাদিসে বর্ণিত হয় নাই। শুধু সবুজ বাতিল স্থানে একটি দোয়া কথা হাদিসে উল্লেখ আছে। ইহা ছাড়া সাফ ও মারওয়া পাহাড়ে আরহনের পর দোয়া করা বহু সহিহ হাদিস দ্বারা প্রমানিত। সাঈ যেহেতু মহান আল্লাহ অন্যতাম নিদর্শণ তাই সাঈ করার সময় মহান আল্লাহ জিকির করা ইমানের দাবি। কাজেই এই সময় মহান আল্লাহ প্রসংশামূকল জিকির করেত থাকি। জিকিরের মাঝে বীতিতভাবে মনের আশা পূরনের জন্য শ্রেষ্ঠ দাতা মহান আল্লাহর নিকট দোয়া করে চাই। সাঈয়ের সময় সাফা মারওয়া চলাচলের পথে আজেবাযে চিন্তা না করে মহান আল্লাহ জিকির ও তার নিকটি দোয়া করে কাটানই উত্তম আমল হবে।

৮। সক্ষম ব্যক্তির পায়ে হেঁটে সাঈ করা

জাবির ইব্‌ন আব্দুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন সাফা থেকে অবতরন করতেন তখন (স্বাভাবিক) হাঁটতেন, এমনকি তাঁর পদদ্বয় উপত্যকার নিম্নভুমিতে অবতরিত হলে তিনি সা’ঈ করে তা পার হতেন। (সুনানে নাসাঈ ২৯৮৪ ইফাঃ)

ইবনে উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি যদি সাফা-মারওয়ার মাঝে সাঈ করে দৌঁড়াই তবে তা এজন্য যে, আমি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে সাঈ করতে দেখেছি। আমি যদি তা হেঁটে অতিক্রম করি তবে তা এজন্য যে, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে তা হেঁটে অতিক্রম করতে দেখেছি। আমি তো একজন অতি বৃদ্ধ। (ইবনে মাজাহ ২৯৮৮)

কাসীর ইব্‌ন জুমহান (রহঃ) থেকে বর্ণিত, আমি ইব্‌ন উমর (রাঃ) -কে দেখেছি তিনি সাফা ও মারওয়ার মধ্যস্থলে হাঁটছেন। তিনি বলেন : যদি আমি হেঁটে চলি, তা এজন্য যে, আমি রাসুলুলাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে হাঁটতে দেখেছি। আর যদি আমি দ্রুত ছুটে চলি (সা’ঈ করি), তা এজন্য যে, আমি রাসুলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে দ্রুত ছুটে চলতে দেখেছি। (সুনানে নাসাঈ ২৯৭৯ ইফাঃ)

৯। উমরা ও হজ্জে সাঈ একবারই আদায় করতে হবেঃ

তাওয়াফের ক্ষেত্র আমরা দেখেছি নফল তা্‌ওয়াফ আছে। অর্থাৎ আপনি ইচ্ছা করলে মক্কা থাকাকালীন সময় যে কোন সময় নফল তাওয়াফ করতে পারবেন। উমরা ও হজ্জের তাওয়াফ ফরজ হলেও অন্য সময় তাওয়াফ একটি নফল আমল। কিন্ত সাঈয়ের ক্ষেত্র উমরা বা হজ্জের সময় ওয়জিব হলেও নফল কোন সাঈ নাই। তাই উমরা ও হজ্জ ব্যতিত অন্য সময় সাঈ করা সুন্নাহ সম্মত আমল নয়। বরং অন্য সময় সাঈ করা একটি বিদআত আমল। ঠিক তেমনিভাবে উমরা ও হজ্জের তাওয়াফের পর মাত্র একবারই সাঈ করা হয়। বার বার বা একাধীকবার সাঈ করার কোন প্রমান পাওয়া যায় না। বরং একবারের বেশী সাঈ করতে নিষেধ করেছেন।

দলিলঃ

আবূ যুবায়র (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি জাবির (রাঃ) কে বলতে শুনেছেন যে, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাফা ও মারওয়ার মধ্যে একবারের বেশি সাঈ করেন নি। (সুনানে তিরমিজি ২৯৮৯ ইফাঃ)

আবূ যুবায়র (রহঃ) জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং তার সাহাবীগণ সাফা-মারওয়ার মাঝে একবারের অধিক সাঈ করেননি। (সহিহ মুসলিম ২৯৭৫)

জাবির ইবনু আব্দুল্লাহ (রাযি.) বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং তাঁর সাহাবীগণ সাফা-মারওয়ার মাঝে একবারই তাওয়াফ করেছেন। এটাই ছিলো তাঁর প্রথমবারের তাওয়াফ। (সুনানে আবু দাউদ ১৮৯৫)

সাঈয়ের আদায়ের ৪ টি ত্রুটিঃ

সাইয়ের ভুলত্রুটি হলোঃ

১। নিয়ত ও সাঈ শুরুর ভুলঃ

২। দোয়ার সময় যে ভুল হয়ঃ

৩। ইযতিবা বা রমল করাঃ

৪। দ্রুত চলে সাঈ সম্মন্ন করাঃ

১। নিয়ত ও সাঈ শুরুর ভুলঃ

অনেক সাঈ করার পূর্বে গদবাধা নিয়ত মুখে উচ্চারণ করে পড়ে থাকে। অন্যান্য নিয়তের মত শুধু মনে মনে নিয়ত করতে হবে। সাফা পাহাড় থেকে সাঈ শুরু করতে হবে। অনেক না জেনে মারওয়া পাহাড় থেকে সাঈ শুরু করে, এটা তাদের একটি ভুল আমল।

২। দোয়ার সময় যে ভুল হয়ঃ

অনেক মনে করে সাফা মারওয়ায় কোন প্রকার দোয়া নাই, শুধু সাঈ করতে হবে। হ্যা, সাঈতো করবই সাথে সাথে এখনে এসে দু’হাত তুলে শুধু দোয়া করতে হয়। অনেক মনে করেন হাত তুলে দোয়া নাই। হাত তুলে দোয়া করা সময় সময়ের জন্য বিদআত নয়, এই সেই স্থানগুলির একটি যেখানে হাত তুলে দোয়া করা সুন্নাহ। কোন কোন মুসলিম মনে করে, সাঈ করার সময় প্রতি চক্করের জন্য আলাদা নির্দিষ্ট দোয়া পাঠ করতে হয়। বরং প্রতি চক্কর শেষেই চাহিদামত দোয়া করা যায়, প্রতি চক্করের জন্য আলাদা নির্দিষ্ট দোয়া নাই।

৩। ইযতিবা বা রমল করাঃ

অনেক মুসলিম ভাই অজ্ঞতার কারনে সাঈ করার সময় তাওয়াফের মত রমল করে থাকেন। আগের আলোচনায় দেখেছি সাফা মারওয়া সাঈয়ের সময় সবুজ বাতি এখাকায় প্রতি চক্করেই উভয় টিলার মধ্যবর্তী নিচু স্থানটি (সবুজ আলো দ্বারা আলোকিত) দ্রুত চলতে হবে।  যেহেতু, সাঈ করার সময় রমল করতে হয় না, তাই এখানে কোন প্রকার ইযতিবা (ইহরামের কাপড় কাদের নিচে নামিয়ে দেয়) নেই। কেউ কেউ সাঈ করার সময়ও ইযতিবা করে থাকে। এটা ভুল। ইযতিবা কেবল তাওয়াফে কুদুমের (আগমণী তাওয়াফে) সময় করতে হয়।

৪। দ্রুত চলে সাঈ সম্মন্ন করাঃ

সাফা থেকে মারওয়া এবং মারওয়া থেকে সাফা পর্যন্ত সাঈ করার পুরো সময়টাতে আস্তে আস্তে চলাচল করা সুন্নাহ। দ্রুত চলে সাঈ সম্মন্ন করা একটি ভুল আমল।

জাবির ইব্‌ন আব্দুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন সাফা থেকে অবতরন করতেন তখন (স্বাভাবিক) হাঁটতেন, এমনকি তাঁর পদদ্বয় উপত্যকার নিম্নভুমিতে অবতরিত হলে তিনি সাঈ করে তা পার হতেন। (সুনানে নাসাঈ ২৯৮১)

আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বায়তুল্লাহ পৌঁছে প্রথম তাওয়াফ করার সময় প্রথম তিন চক্করে রামল করতেন এবং পরবর্তী চার চক্করে স্বাভাবিক গতিতে হেঁটে চলতেন। সাফা ও মারওয়ায় সা‘ঈ করার সময় উভয় টিলার মধ্যবর্তী নিচু স্থানটুকু দ্রুতগতিতে চলতেন। (সহিহ বুখারী ১৬১৭ আধুঃ)

উভয় টিলার মধ্যবর্তী নিচু স্থানটি এখন সবুজ আলো দ্বারা আলোকিত করা হয়েছে। তাই সাঈ করার সময় কেবল সবুজ দুই চিহ্নের মধ্যবর্তী স্থানে দ্রুত চলতে হবে। পুরুষদের জন্য সবুজ চিহ্নের মাঝে সাঈ তথা দৌড়ে না চলা একটি ভুল আমল। তবে মহিলাদের দৌড়াতে হবে না।

সংকলনেঃ মোহাম্মাদ ইস্রাফিল হোসাইন। (বিএ ইন আরবি সাহিত্য ও ইসলাম শিক্ষা)

One thought on “সাঈয়ের ওয়াজিব, সুন্নহ ও ভূলত্রুটিসমূহ

Leave a comment